ভালোবাসার হাতছানি পর্ব ৩

#ভালোবাসার_হাতছানি
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
#পর্ব-০৩
এদিকে নিজের রুমে বসে আছে আরহাম,মনটা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে।
– আচ্ছা আমি আবার একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললাম নাতো?নাহ বাড়াবাড়ি কেন হবে!ওই অহংকারী মেয়েটা এটাই ডিজার্ভ করে।সো যা করেছি একদম ঠিক করেছি
– কি রে একা একা কি বিড়বিড় করছিস?
– (চমকে উঠে)ওহ তুই!ও কিছু না এমনিই…
– কি এত ভাবছিলি বলতো
– আরে তেমন কিছু না,বাদ দেতো
– আচ্ছা বাদ দিলাম,এখন চলতো আমার সাথে
– কোথায়?
– একমাত্র শালা বাবুর সাথে গল্প করব
– তোর শালা তুই গল্প কর না,আমাকে আবার এসবের মধ্যে টানছিস কেন?
– আরে আমার শালা মানেতো তোরও শালা তাই..
– কি বললি তুই?
– সরি সরি মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে আমার শালা ভবিষ্যতে তোর সম্বন্ধীওতো হতে পারে তাইনা?
– শালা খবিস,লাত্থি খাওয়ার খুব শখ হইছে না?
– রাগ করছিস কেন দোস্ত?শ্রুতির ছোট বোনটা কিন্তু দেখতে শুনতে ওর থেকেও সুন্দরী
– (বিড়বিড় করে)হ্যাঁ পুরোই হুরপরী কিন্তু অহংকারী পরী
– কি রে,আবার কি বিড়বিড় করছিস?চল…
– হুম চল…

– এই যে শ্রাবণ,পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ও হচ্ছে আমার বেস্টফ্রেণ্ড(আকাশ)
– ও হাই…(শ্রাবণ)
– হ্যালো..(আরহাম)
– তোমরা কথা বল,আমি একটু আসছি(আকাশ)
(আকাশ চলে গেল)
– ও..তারমানে তুমি…আরহাম রাইট?
– হ্যাঁ কিন্তু আপনি আমাকে…
– চিনলাম কিভাবে তাইতো?আরে এসে পর্যন্ত তোমার নামে এতকিছু শুনেছি যে…
– ভাল কিছু নিশ্চয় শোনেননি
– আরে না সেরকম কিছু না
– এত ফরমালিটিজ দেখানোর দরকার নেই,আমি জানি সবাই আমার ব্যাপারে কি ভাবে
– আমারতো মনে হচ্ছে তুমিই এখন ফর্মালিটিজ দেখাচ্ছো
– মানে?
– মানে আমার মনে হয় আমি বয়সে তোমার থেকে ছোটই হব তবুও তুমি করে বলছি কারণ তুমি আকাশ ভাইয়ার ফ্রেণ্ড।আমি যেহেতু ভাইয়াকে তুমি করে বলি তাই তোমাকেও…
– ইটস ওকে আমি কিছু মনে করিনি
– আর তাছাড়া সম্পর্কের দিক দিয়েতো আমি আকাশ ভাইয়ার ছোট,তাহলে শুধু শুধু আপনি আপনি করে ফর্মালিটি কেন দেখাচ্ছো?
– উফস!সরি ভুল হয়ে গেছে
– হুম আচ্ছা তোমার শ্রেয়ার সাথে পরিচয় হয়েছে?
– হয়নি আবার,ওই অহংকারী মেয়ের সাথে…(মনে মনে)
– কি ভাবছো?ওহ সরি,তুমি হয়তো জানো না শ্রেয়া হচ্ছে আমাদের তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট,ও আমাদের সবারই খুব আদরের
– ওহ (এই আদর দিয়েইতো বাঁদর বানিয়ে ফেলেছো)
– চল তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই
– আরে না না..
– কি না না করছো,আর কয়েকদিন পরেইতো আমরা আত্মীয় হয়ে যাব।এখনো যদি পরিচিত না হই তাহলে আর কখন?
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে,কোথায় যেতে হবে চলো
(শ্রাবণ আরহামকে নিয়ে কটেজের বাইরের দিকে চলে গেল।শ্রেয়া তখন কর্ণারের দিকের একটা বেঞ্চে মিনিকে কোলে নিয়ে বসে আছে।শ্রাবণ শ্রেয়ার পাশে গিয়ে বসল)
– তুই এখনও এখানে বসে আছিস?দেখি মিনিকে আমার কাছে দে
– মিনিকে ভাইয়ার কোলে দিয়ে দিলাম
– আরে আরহাম এইদিকে এসো…
– আস্তে আস্তে শ্রেয়ার সামনে এসে দাঁড়ালাম,ওকে দেখে কেমন যেন আনইজি ফিল হচ্ছে,মনে হচ্ছে ওরও সেম অবস্থা
– আরহাম,ও হচ্ছে শ্রেয়া
– শ্রেয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম,Hi,I’m Arham
– একবার ভাইয়ার দিকে তাকালাম
– এখনও ভাব নিচ্ছে,আচ্ছা অহংকারী মেয়েতো!(মনে মনে)
– হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?হাতটা মেলা…
– ভাইয়ার কথা শুনে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম
– ওর নরম হাতের স্পর্শ পেতেই অন্যরকম একটা অনুভূতি হল।হাতটা ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু হঠাৎ আকাশের ডাকে ছাড়তে বাধ্য হলাম(আরহাম)
– আরহাম,একবার এদিকে আয়।বাবা ডাকছে(আকাশ)
– দাঁড়া আসছি।sorry guys I have to go right now,পরে আড্ডা দিব ওকে?(আরহাম)
– ইটস ওকে,সি ইউ(শ্রাবণ)
(আরহাম চলে গেল)
– উনি কে ভাইয়া?
– কেন রে?ছেলেটাকে কি তোর পছন্দ হয়েছে?
– ভাইয়া!!!
– আরে আরে লজ্জা পাওয়ার কি আছে,পছন্দ হলে বল আমি সব ঠিক করে দিব
– ভাইয়া…ভালো হচ্ছে না কিন্তু…
– ওকে ওকে আই এ্যাম সরি,প্লিজ রাগ করিস না
– হুম
– ও হচ্ছে আরহাম,আকাশ ভাইয়ার বেস্টফ্রেণ্ড আর মাহতাব আঙ্কেলের ছোট ছেলে
– ও…
– কি রে আব্বুকে কি বলব?
– কি?
– একসাথে দুই বোনের বিয়ের ব্যবস্থা করতে…
– মানে?
– মানে শ্রুতিরতো বিয়ে হচ্ছেই,তুই যদি বলিস তাহলে তোর আর আরহামেরটাও…
– ভাইয়া!!!আজ আর তোকে ছাড়ব না,পালাচ্ছিস কোথায়?দাঁড়া বলছি…
– না বাবা,আমার কি আর সেই সাহস আছে!আমি বাবা পালাই,বাবাকে গিয়ে খুশির খবরটা দিয়ে আসি
– ভাইয়া..ভালো হচ্ছে না কিন্তু,একবার যদি ধরতে পারি তাহলে…
– তুই চেষ্টা করতে থাক,আমি বাবা পালাই

(পরদিন)
আরহামের পয়েন্ট অফ ভিউ…
ডিনার শেষে রুমে বসে আছি।আজ সারাদিন যা যা ঘটেছে সেসব নিয়েই চিন্তা করছি…
কেন জানি মনে হচ্ছে শ্রেয়ার সাথে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি,মনে কেন হবে!মেয়েটার সাথে সত্যি সত্যিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি and I am very sure about that.ওতো আমাকে চিনতোই না,সো আমাকে পাত্তা দেবে না এটাইতো স্বাভাবিক।আমি শুধু শুধুই মেয়েটাকে এতগুলো কথা শোনালাম!
আর তাছাড়া আজ সারাদিন ধরে মেয়েটার এ্যাক্টিভিটিজ খুব ভাল করে অবজার্ভ করেছি।মেয়েটা কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলে না!বেশির ভাগ সময়ই সবার থেকে আলাদা হয়ে আপন মনে কি যেন ভাবে।খুব ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার তবে মেয়েটার কোন একটা প্রবলেমতো আছেই,কিছু একটাতো আছেই যার জন্যে আমার ওর ব্যাপারে খটকা লাগছে…
সে যাই হোক আপাতত শ্রেয়াকে সরি বলতে হবে,তাহলে হয়তো এই গিল্টি ফিলিংস কিছুটা হলেও দূর হবে…

কিন্তু কিভাবে কি করব বুঝছি না,ভাবতে ভাবতেই ছাদে চলে গেলাম।দূর থেকেই দেখলাম শ্রেয়ার কাজিনরা ছাদে বসে আছে But as usual শ্রেয়া সবার থেকে বেশ দূরে ছাদের এক কোণে বেড়ালটাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এই বেড়ালটাকে দেখে খুব হিংসে হচ্ছে,বেটা যে কি পরিমাণ লাকি ও নিজেও জানে না কারণ শ্রেয়া সবসময় ওকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াই।ইশ!বেটাকে যদি একবার হাতের নাগালে পেতাম…
হঠাৎই বুদ্ধিটা মাথায় আসলো,চুপচাপ নিচে নেমে আসলাম।একটা কাগজে কনফেশনটা লিখে ওর রুমে রেখে চলে আসলাম,আসার সময় দেখলাম শ্রেয়া ওর রুমের দিকেই যাচ্ছে।আমি চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম…
.
আপুর বিয়ের আর মাত্র কয়েকদিন বাঁকি,আমরা সব কাজিনরা আর আপুর কয়েকজন ফ্রেণ্ড স্টেজ পারফরমেন্স নিয়ে খুবই বিজি।গায়ে হলুদ আর মেহেদী উৎসব দুই দিনে দুটো পারফরমেন্স আছে আমাদের,সবাই এখন তাই প্র‍্যাক্টিস নিয়ে খুবই ব্যস্ত।আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি,প্র‍্যাক্টিস শেষ করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেছে তাই ডিনার শেষ করেই নিজের রুমে চলে আসলাম।আমার কাজিনগুলো যারা আমার সাথে রুম শেয়ার করছে সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে।রুমে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই জিনিসটা আমার চোখে পড়ল।
একটা হলুদ খাম আর তার উপরে বেশ বড় বড় করে লেখা…
“দুনিয়ার সবচেয়ে শান্ত-শিষ্ট,চুপচাপ মেয়েটার জন্য”
আর তার ঠিক নিচেই ছোট্ট করে আমার নাম লেখা!
কিন্তু…আমাকে কেউ লেটার কেন দিতে যাবে?নিশ্চয় কেউ ভুল করে লিখে ফেলেছে…
কিন্তু…ভুল কি করে হবে?এখানেতো স্পষ্ট করে আমার নাম লেখা আছে!তাহলে…
ইয়ার শ্রেয়া,এতকিছু চিন্তা না করে চিঠিটা খুলে ফেল না,তাহলেইতো বোঝা যাবে ঘটনাটা কি আর কে লিখেছে…
যেই ভাবা সেই কাজ ঝটপট চিঠিটা খুলে ফেললাম।
“I’m sorry.সেদিন একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি,আপনাকে সেদিন কথাগুলো ওভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি।
যাই হোক এখনতো আমরা দুজন দুজনকে বেশ ভালোভাবেই চিনি তাইনা?সো এখন কি আমরা ফ্রেণ্ড হতে পারি না?
আচ্ছা ফ্রেণ্ড হতে যদি না চান দেন ইটস ওকে বাট এক কাপ কফি অথবা একটা কোণ আইসক্রিমতো একসাথে খাওয়াই যায় কি বলেন?Just as a compensation you know,don’t take it otherwise…
আমার প্রস্তাবে যদি রাজি থাকেন তাহলে জবাবটা আপনার রুমের সামনে রাখা ফ্লাওয়ার ভাসটাতে রেখে দিয়েন।আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকব।
“আরহাম”

(আরহামের পয়েন্ট অফ ভিউ)
আধা ঘণ্টার উপরে হয়ে গেছে শ্রেয়া রুমের মধ্যে গেছে।এতক্ষণেতো চিঠিটা পড়ে ফেলার কথা,তাহলে এখনো জবাব দিচ্ছে না কেন?আর কতক্ষণ ওর রুমের সামনে ঘুরঘুর করব?কেউ দেখে ফেললে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে…
আচ্ছা ওকি চিঠিটা পড়েছে?চিঠি পড়ে আবার রেগে গেল নাতো?
ধুর ছাই কি হচ্ছে কিছুইতো বুঝতে পারছি না,কি যে করি?মাথায় যে কিছুই ঢুকছে না…
আরো ঘণ্টা খানেক ওয়েট করে নিজের রুমে চলে আসলাম।অবশ্য না এসে আর কোন উপায়ও ছিল না,সবাই ছাদ থেকে নামতে শুরু করেছিল তাই ওখানে ওয়েট করাটা বেশ রিস্কি হয়ে যাচ্ছিল…
.
চিঠিটা পড়ার পর কতক্ষণ ওভাবেই বসে ছিলাম,কি করব বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু কিছু একটাতো করতেই হবে,এটলিস্ট আমার সম্পর্কে উনার ভুল ধারণাটাতো ভাঙতে হবে।অনেক্ষণ চিন্তা করার পর একটা উত্তর লিখে ফেললাম কিন্তু চিঠিটা রাখতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।
কেন জানি মনে হচ্ছে উনি রুমের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছেন।জানিনা আমার ধারণা সত্যি নাকি মিথ্যা কিন্তু এই মুহুর্তে সত্য মিথ্যা যাচাই করার ইচ্ছে বা সাহস কোনটাই আমার নেই।তাই চুপটি করে বসে আছি
কিছুক্ষণ পরে সবাই যখন রুমে চলে আসলো,তখনই এক ফাঁকে চিঠিটা ফ্লাওয়ার ভাসটার মধ্যে চুপিচুপি রেখে চলে আসলাম। এখন শুধু কালকের জন্যে অপেক্ষা,উত্তরটা পড়ার পর উনার রিয়্যাকশনটা কেমন হয় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে…
.
(আরহামের পয়েন্ট অফ ভিউ)
সারারাত টেনশনে ঘুমাতে পারিনি,শ্রেয়ার উত্তর কি হবে ভাবতে ভাবতেই রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে।ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই উঠতে দেরি হয়ে গেল।ঘুম ভাঙতেই পড়ি কি মরি করে ছুটলাম শ্রেয়ার রুমের দিকে।ফ্লাওয়ার ভাসটার মধ্যে চিঠিটা দেখেই মনটা ভাল হয়ে গেল।ঝটপট তুলে নিয়েই রুমের দিকে দৌঁড় দিলাম।
আসার সময় দেখলাম করিডোরের এক কোণে আকাশ আর শ্রুতি দাঁড়িয়ে আছে।ওদেরকে দেখে মনে হচ্ছে খুব সিরিয়াস কোন ব্যাপারে কথা বলছে,আমাকে দেখার সাথে সাথেই কিছুই হয়নি এমন বিহেভ করতে লাগলো!
যাই হোক একটা শুকনো হাসি দিয়ে আমি চলে আসলাম,আসার আগে আড় চোখে দেখলাম দুজনে আবারও কেমন যেন সিরিয়াস হয়ে গেছে
রুমে এসেই চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলাম…
“আপনার সরি একসেপ্ট করলাম বাট ফ্রেণ্ডশিপের প্রপোজাল!একটু বেশিই তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না?
যাই হোক কফি আর আইসক্রিম দুটোই কিন্তু আমার অনেক পছন্দ,তাই কম্পেনসেশন দিতে চাইলে দুটোরই ট্রিট দিতে হবে কিন্তু…
আর হ্যাঁ টাইম আর প্লেসটা কিন্তু আমি ঠিক করব।So just keep waiting…”
“শ্রেয়া”
চিঠিটা পড়তেই মনটা ভাল হয়ে গেল,ঝটপট রেডি হয়ে বাইরে চলে আসলাম।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শ্রেয়াকে খুঁজে বের করতে হবে,আমার যে আর তর সইছে না…
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here