ভালোবাসা বারণ পর্ব -১৮

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
রিক্সা থেকে সে দেখতে পায় কয়েক পা দূরে একটা মোমবাতি জ্বালচ্ছে। পথের মাঝে এমন মোমবাতি দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় ঈশা। এদিক ওদিক তাকিয়ে ঈশা কাউকে দেখতে না পেয়ে রিক্সা থেকে নেমে পরে। রিক্সা থেকে নামতেই ঈশা ঐ মোমবাতির দিকে এগিয়ে যায়। মোমবাতির আলো মিট মিট করছে। ঈশা মোমবাতির কাছে আসতেই ধুম করে ল্যাম্পষ্টের আলো নিভে যায়। মনে হলো লোডসেটিং হয়েছে। ল্যাম্পষ্টের আলো নিভে যাওয়ার কয়েক‌ মিনিট পর কতগুলো ফানুস ঈশার দৃষ্টি কাড়ে। ঈশা দেখতে পেলো রংবেরং এর ফানুসে আকাশ ছেয়ে গেছে। হঠাৎ করে ঈশা আকাশ থেকে মাটির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখতে পেলো তার সামনে ভিশন সুন্দর করে একটা কেক সাজানো আছে। কেকটায় সুন্দর করে সাজিয়ে তার নামটি লিখা আছে। ঈশার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। এতোটা আনন্দ হচ্ছে তার যা প্রকাশের ভাষা নেই। ঈশার হাস্যজ্বল চেহারা ও ছলছল চোখ জোড়া এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজে চলেছে কোনো এক বিশেষ জনকে। যে বিশেষ জন তার জন্মদিনটি মনে রেখেছে। যে বিশেষ জন তাকে জন্মদিনে সব চাইতে বড় একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে। এতোটা চমৎকার উপহার তার জীবনে ২য় বার আগে কখনও আসেনি। হঠাৎ করে ঈশার কানে ভেসে এলো শুভেচ্ছার ধনি। ঈশা তার সকল কলিগকে এক সাথে দেখে চমকে যায়। সবাই এক সাথে তাকে উইস করছে। তার জন্মদিনে এরকম সারপ্রাইজ পাবে কখনও কল্পনা করেনি সে। ঈশা মুখের উপর হাত চেপে ধরে নিজের আনন্দ জানান দিচ্ছে। অনু ঈশার কাছে এসে বলতে লাগলো

— কিরে কেমন লাগছে তোর? সারপ্রাইজ টা কিন্তু মারাক্তক সুন্দর হয়েছে!

ঈশা মৃদু হেসে জবাব দিল

— হুম। কিন্তু এই সব করলো কে? তোরা সবাই মিলে এই‌ প্লান করেছিস তাই না! আমার জন্মদিন তো আমার নিজেরই মাথায় ছিলো না। তোরা যে মনে রেখেছি তাও অনেক।

— সরি রে আমাদের ও মনে ছিলো না। এই সব প্লান আমরা করিনি। এই সব কিছু করেছে একজন বিশেষ মানুষ। যাকে তুই খুব ভালো করে চিনিস ও জানিস।

অনুর কথায় ঈশা অবাক না হয়ে পারলো না। কার কথা বলছে অনু? এই সব কিছু একজন বিশেষ মানুষ করেছে মানে কি? আমার তো কোনো বিশেষ মানুষ নেই। আর বাকি রইলো অয়ন চৌধুরীর কথা! সে এই সব কোনো দিন না আগে কখনও করেছে আর না এখন করবে। আসলে ওনার নামটা মনে আসাই ভুল হয়েছে। অয়ন চৌধুরী সারপ্রাইজলি অপমান করতে পারে। ভালোবাসা বা কোনো ভালো কিছু উপহার হিসেবে দেয়া তার কাজ নয়। ঈশা বেশ কৌতূহল নিয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে জ্বিগাসা করলো

— আমার তো কোনো বিশেষ কেউ নেই। কে করেছে এসব? পরিস্কার করে বল।

— হিহি বলবো কেনো? নিজেই দেখে নে।

অনু ঈশাকের ইশারা করে সামনের দিকে তাকাতে বলল। ঈশা অনুর কথা মতো সামনের দিকে তাকাতে দেখতে পায় একজন লোক অন্ধকারে মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটির ফেইস দেখা যাচ্ছে না। ঈশা একটু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। লোকটা অদ্ভুত রকম ভাবে দাড়িয়ে আছে। না ঈশার দিকে আসছে আর না ঈশার থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সে। ঈশা ধৈর্য্য ধারণ করে পারছে না। ভিশন কৌতুহল তার মনে। কে হতে পারে এই লোক? বার বার মনের মধ্যে এই একি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। ঈশা সবাইকে অবাক করে দিয়ে দৌড়ে ছুটে আসল লোকটির দিকে। অন্ধকারে নিজেকে ঢেকে রাখা মানুষটি চায় না তার পরিচয় সবাই জানুক। ঈশা লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে বলছে

— কে আপনি? আমি আপনাকে দেখতে চাই।

লোকটি ঈশার কথার কোনো জবাব দিলো না। নিশ্চুপ হয়ে আছে সে। ঈশা আবারও বলতে লাগলো

— আমি আপনাকে দেখতে চাই। নিজেকে আড়াল করে আছেন কেনো? সবার সামনে আসার সাহস নেই আপনার? এতোটা ভীতু কেনো আপনি? কথা বলুন। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। কে আপনি আর কি আপনার উদ্দেশ্য? কি জন্য আমাকে এই উপহার দিয়েছেন?

লোকটি এখনও কোনো জবাব দিলো না। অফিসের সকল লোক নিরবে তাকিয়ে আছে ঈশা আর ঐ লোকটির দিকে। সবাই জানলেও ঈশা জানে না এই লোকটি কে হতে পারে। ঈশা লোকটির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে আলোতে। আলোতে এনে ঈশা যখন লোকটির চেহারাটা দেখলো! সঙ্গে সঙ্গে হাত ছেড়ে দিলো সে।

— এই লোকটি তা হলে এই সব করেছে?

ঈশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে। সামনে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি সত্যি বিশেষ কেউ। ঈশা তার সামনে দেখতে পেলো অয়ন চৌধুরীকে। ইয়েস সেই অয়ন চৌধুরী যে তাকে রাস্তার মেয়ে বলেছে। এই সেই অয়ন চৌধুরী যে দিনের পর দিন তাকে নোংরা কথা শুনিয়েছে। এই সেই বিশেষ মানুষ যে কিনা ঈশাকে কাঁদিয়েছে। ঈশার মনকে ভেঙ্গে দিয়েছে বারংবার। ঈশা অয়নের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলছে

— এতো সুন্দর সারপ্রাইজ কি করে দেন আপনি? মানে সত্যি আমি সারপ্রাইজড হয়ে যাই আপনার কাজ গুলোতে। এতোটা সারপ্রাইজ হয়ে যাই যে! পরবর্তীতে সারপ্রাইজ নামক শব্দটা শোনার পরে খুশি হওয়ার থেকে ভয়ে আতকে উঠতে হয় আমায়।

ঈশার কথাগুলো নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে শুনছে অয়ন। অয়নকে নিশ্চুপ দেখে ঈশা আবারও বলতে লাগলো

— তা মিস্টায় অয়ন চৌধুরী আমি‌ কি জানতে পারি এই সব নাটক কি জন্য করা হচ্ছে? কি প্রমান করার জন্য এসব করছেন‌ আপনি?

অয়ন মাথাটা উঁচু করে এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখে মিছক‌ হাসির রেখা এঁকে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলছে অয়ন

— না,‌ না কিছু প্রকাশ করতে বা কোনো নাটক করছি না আমি। তোমার জন্মদিনে একটু সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আর বিশেষ করে তোমার মুখে একটু হাসি দেখার……..

অয়ন কে সম্পূর্ণ কথা বলার সুযোগ দিলো না ঈশা। ঈশা বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো অয়নের কথা শুনে। ঈশা হেসে হেসে বলল

— আচ্ছা তাই। মানে আমার মুখের হাসি দেখার জন্য আপনি এতো কিছু করেছেন।‌ বিশ্বাস করুন‌ মিস্টার অয়ন চৌধুরী আপনার আসল রূপ কোনটা তা‌ ভিশন জানতে ইচ্ছে করে আমার। যে লোকটা দিনের পর দিন আমাকে কাঁদিয়েছে আজ সে বলছে আমার মুখের হাসি দেখার জন্য…. বাই দ্যা ওয়েহ ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।

* ঈশা কথা শেষ করতেই চলে যেতে লাগলো। অয়ন ঈশাকে চলে যেতে দেখে ধুম করে ঈশার হাত ধরে ফেলে। ঈশা আবারও বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকালো অয়নের দিকে। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বেশ বিরক্ত নিয়ে বলতে লাগলো

— আমি এই জিনিসটা একটুও পছন্দ করি না।

— হুম আর কেনো পছন্দ করেন না তাও জানি।

ঈশা চিৎকার করে বলতে লাগলো

— হ্যাঁ আপনার জন্য আমার খুশি মুখটা আবার মলিন হয়ে গেছে। আপনি না থাকলে আমি নিজের মতো করে খুশিতে থাকতাম।

— ঠিক আছে ঈশা। আমার কথা বাদ‌ দাও একটি বার ওদের কথা ভেবে বাধ্য হয়ে হলেও কেকটা কেটে যাও। কথা দিচ্ছি আমি এখান থেকে এখনি চলে যাচ্ছি।

কথাটা বেশ হাস্যজ্বল মুখে বলল অয়ন। ঈশার একটু খারাপ লাগছে অয়নের জন্য। এই ভাবে বলাটা কি উচিত হলো? অয়ন চলে যেতেই সবাই ঈশাকে ঘিরে ধরে। ঈশা সবাইকে নিয়ে নিজের জন্মদিন উদযাপন করে।

* অয়ন হাসি মুখে নিজের গাড়ির দিকে চলে আসে। বেশ আফসোস হচ্ছে তার। ইশশশ যদি ঈশার সামনে না যেতাম তবে হয়তো ওর মুখে এই হাসিটাই থাকতো। কি করবো? আজ যে বড্ড ইচ্ছে করছিলো ওর হাত ধরে এক সাথে কেক কাটবো। কিন্তু তা আর হলো না। আর হবে কি করে? নিজের হাতেই‌ তো তা বন্ধ করে দিয়েছি। কারো প্রতারণার শিকার হয় আমি অন্যকে বিশ্বাস করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।

— কিরে এখানে একা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ওখানে চল সবাই কত ইনজয় করছে আর তুই এখানে একা।

ইফতি অয়নের কাঁধের উপর হাত রেখে বলল কথাটা। অয়ন ইফতির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিলো

— উফফফ করুক না ইনজয়। ওদের আনন্দকে আমি মাটি করতে চাই না। তাই এখানে একা বসে আছি।

— মানে? কি হয়েছে?

অয়নের কথা বোধগম্য হলো না ইফতির। অয়ন ইফতিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বলল

— শোন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসছি।

— সেকি কোথায় যাচ্ছিস তুই? এই অয়ন শোন আমাদের তো………

অয়ন ইফতির কথা না শুনে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। আসলে অয়ন চায় না তার বুকের দহন অন্যকারো কাছে প্রকাশ পাক। অয়ন বাসায় এসে সবার অগোচরে নিজের রুমে চলে আসে। রুমে আসতেই অয়ন………………………

#চলবে………………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here