#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#পর্ব_১৭
#লেখক_দিগন্ত
মিরা যখন বিপদের মধ্যে ছিল তখন নিহান চলে আসে তার ত্রাণকর্তা হয়ে। নিহান এসে সেখানে উপস্থিত সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
-“এখানে তোমরা কি করছ এসব? একটা মেয়ের উপর এরকম অত্যাচারের কারণ কি?”
লাবণী বলে,
-“আপনি আর বেশি কথা বলবেন না। আপনার চরিত্র কেমন সেটা আমাদের জানা হয়ে গেছে। টিচার হয়ে স্টুডেন্টদের সাথে…ছি ভাবতেও লজ্জা করে।”
-“তোমরা মুখ সামলে কথা বলো।”(নিহান)
-“আপনি কেমন টিচার নিজেকে সামলাতে পারেন না।”(এলিনা)
সবকিছু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। নিহান এবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। সে ভার্সিটির উপাচার্যকে ফোন করে। ভার্সিটির উপাচার্য এসে সব ঘটনা শোনেন। এলিনা, লাবণী সহ বাকি সবাই মিরার বিপক্ষে কথা বলতে থাকে।
উপাচার্য বলেন,
-“আমি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেখছি কি হয়৷ ততদিন পর্যন্ত মিরাকে বহিষ্কার করা হলো। আর নিহান আপনিও আর ক্লাস নিতে পারবেন না। যেহেতু এরকম একটা বদনাম বেরিয়ে গেছে। যা আমাদের ভার্সিটির রেপুটেশনের জন্য ক্ষতিকর।”
উপাচার্যের কথা শুনে এলিনা, লাবণী সবাই আনন্দ পায়। দূরে দাঁড়িয়ে সাগরও এই ঘটনায় মজা নিতে থাকে।
নিহান অসহায়ভাবে মিরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-“সরি তোমার হয়ে কিছু করতে পারলাম না।”
-“আপনি সরি বলবেন না স্যার৷ আপনার কিছু করার ছিল না। শুধু শুধু আমার জন্য আপনি ফেসে গেলেন।”
মিরা মন খারাপ করে চলে আসে। তার চোখের জল বাধ মানতে চাইছে না। দুফোটা জল নিরবে ফেলে মিরা।
___________
লাবণী প্রেগ্ন্যাসির কিট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকদিন থেকেই তার শরীর কেমন যেন করছে। বমি, মাথা ব্যাথা এসবের কারণ সে বুঝছিল না। আজ নিশ্চিত হলো কি কারণে এমন হচ্ছিল।
লাবণী প্রেগ্ন্যাসির কিটের মাধ্যমে বুঝতে পারল সে প্রেগন্যান্ট! আর এই বাচ্চা সাগরের। লাবণী সাগরকে কিভাবে ব্যাপারটা বলবে সেটা ভেবে পাচ্ছিল না। এছাড়া তার পরিবারও যে ব্যাপারটা মেনে নেবে না সেটা লাবণী জানে।
লাবণী হতাশ হয়ে বসে ছিল। সে ভেবে নিয়েছে আজ যে করেই হোক সাগরকে সবকিছু বলবে। সাগর তো তাকে ভালোবাসে। নিশ্চয়ই এত বড় একটা খুশির খবর পেয়ে সাগর লাবণীকে বিয়ে করে নেবে। এমনটাই ভাবছিল লাবণী।
অন্যদিকে, সাগর ও এলিনা একসাথে বসে আছে পার্কের মধ্যে। এলিনা কথায় কথায় জিজ্ঞাসা করে,
-“কয়দিন থেকে দেখছি ঐ লাবণী মেয়েটার সাথে তুমি বেশ ঘনিষ্ঠ হচ্ছো। ব্যাপারটা কিন্তু আমার একদম ভালো লাগছে না।”
-“লাবণীর কথা বলছ। আরে ও তো শুধু আমার টাইম পাস ছিল। ওর কথা বাদ দাও। কাজ মিটে গেলে ওকে দূরে ছু°ড়ে দেব। যেমন করে মিরাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি।”
এলিনা ব্যাথাতুর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
-“কখনো আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিবে না তো?”
-“আরে কার সাথে কার তুলনা। আমি যদি প্রকৃতপক্ষে কাউকে ভালোবাসি সেটা তো তুমি। তোমাকে আমি ছাড়ব না। তোমাকেই বিয়ে করে নেব। আমি ভাবছি তোমার বাবার কাছে বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে যাবো। তোমার বাবা রাজি হবে তো?”
-“আমার ড্যাডি আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি বললে ঠিক রাজি হবে।”
হঠাৎ করে সাগরের ফোন বেজে ওঠে। এলিনা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“কে ফোন করল? উফ এত ঝামেলা।”
সাগর ফোন বের করে দেখে লাবণী ফোন করেছে। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
-“এই মেয়েটা কেন কল করেছে। বেকার বিরক্ত করে।”
ফোন রিসিভ করতেই লাবণী বলে,
-“সাগর কোথায় তুমি? আমার সাথে দেখা করো তোমাকে অনেক জরুরি কিছু জানানোর আছে।”
সাগর কিছু বলার আগেই লাবণী কে*টে দেয়। সাগর এলিনাকে বলে,
-“লাবণী আমার সাথে দেখা করতে চাইছে। দেখে আছি কি সমস্যা।”
এলিনা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“এই লাবণীকে এবার তুমি একটা উচিৎ জবাব দাও। ওকে ছেড়ে দাও তো।”
-“অবশ্যই। আজকেই আমি ওর সাথে সবকিছু শেষ করে দেব।”
বলেই সাগর চলে যায়। এলিনা তৃপ্তির হাসি হাসে।
সাগর লাবণীর সাথে এসে দেখা করে। লাবণী সাগরকে দেখে বলে,
-“তুমি এসেছো।”
-“হ্যাঁ এখন আমার সময় নষ্ট না করে বলো কি কারণে ডেকেছ।”
-“তোমাকে একটা খুশির খবর দিতে চাই। জানি তুমি বাবা হতে চলেছ।”
-“হোয়াট? আর ইউ ক্রেইজি?”
-“আরে না। আমি আজ প্রেগ্ন্যাসির কিট দিয়ে সিউর হয়ে গেছি।”
-“এটা আমার বাচ্চা না। আমি এর দায়িত্ব নিতে পারব না। আমাদের মধ্যে তো কিছুই হয়নি।”
-“এরকম মিথ্যা কথা বলছ কেন? সেদিনই তো…”
-“আমাকে একদম মিথ্যা অপবাদ দেবে না। আমি তোমার সন্তানের বাবা নই। তোমার মতো ক্যারেক্টরলেস মেয়ের সাথে আমি আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাইনা।”
সাগর যেতে নিলেই লাবণী তার পা ধরে। বলে,
-“প্লিজ আমাকে এভাবে ছেড়ে যেওনা। এটা তোমারই সন্তান। তুমি এভাবে অস্বীকার করতে পারো না।”
সাগর লাবণীকে রেখে চলে যায়। লাবণী কাঁদতে থাকে।
__________
সাগর ও এলিনা পার্টিতে এসেছে। লাবণীর ব্যাপারটা নিয়ে এমনিতেই সাগরের মন ভালো নেই। তাই সে অনেক বেশি নেশা করে ফেলে। এলিনা সাগরকে এত নেশা করতে বারণ করে কিন্তু কে শোনে কার কথা।
পার্টি থেকে বের হয়ে এলিনা বলে,
-“আমি তো আজ গাড়ি আনিনি। তোমার বাইকে করে যাই চলো।”
সাগর বলে,
-“আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি আনছি।”
সাগর বাইক নিয়ে আসে। এলিনা বাইরে উঠে যায়।
বাইক চলতে শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই সাগরের নেশা উঠে যায় অনেক বেশি। এলিনা বলে,
-“তুমি ঠিক আছো তো? ড্রাইভ করতে পারবে?”
-“হুম।”
কিন্তু হঠাৎ একটি ট্রাক চলে আসে। সাগর ড্রাংক থাকায় গাড়ি সামলাতে না পেরে ট্রাকের সাথে ধা*ক্কা খায়। মুহূর্তেই দূরে ছিটকে যায় দুজনে।
দূর্ঘটনার ফলে এলিনা ও সাগর খুব মারাত্মকভাবে আহত হয়। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার এলিনাকে মৃত ঘোষণা করে। সাগরের অবস্থাও আশঙ্কাজনক ছিল। বিশেষ করে পায়ে খুব বেশি আঘাত পেয়েছে সাগর।
_____________
লাবণী মিরার কাছে এসে অনবরত কাঁদছে আর ক্ষমা চাইছে। একপর্যায়ে মিরার পায়ের কাছে পড়ে। মিরা লাবণীকে টেনে তুলে বলে,
-“আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি নিজেও তো সাগরের কথায় ভুলে ভাবির সাথে অনেক অন্যায় করেছিলাম। সেখানে তোকে দোষ দেই কিভাবে?”
লাবণী বলে,
-“কিন্তু আমি যে প্রেগন্যান্ট। এখন কি হবে আমার? আমার পরিবার জানলে আমাকে মে*রেই ফেলবে।”
-“এ ব্যাপারে আমি তোকে সাহায্য করতে পারব না। তুই এত বড় একটা অন্যায় করেছিস। বিয়ের আগেই…এটা করা তোর মোটেও উচিৎ হয়নি।”
-“আমি ভাবছি বাচ্চাটা ন*ষ্ট করে দেব।”
-“একটা পাপ তো করেছিস নতুন করে পাপ করার কি খুব দরকার? এই পৃথিবীতে তো কত দম্পত্তি আছে যাদের কোন সন্তান নেই তাদের কাউকে দিলেও তো হয়।”
লাবণী বলে,
-“তুই একদম ঠিক বলেছিস।”
__________
মিরা বাড়িতে ফিরেই এমন খবর পাবে ভাবতে পারেনি। নিহান বিয়ের কার্ড দিয়ে গেছে। কিছুদিন পরেই তার বিয়ে।
অথচ মিরা এই ক’দিনে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। মিরার চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে। মিরার চোখের জল দেখে নেয় বিদিশা। সে এসে মিরাকে প্রশ্ন করে,
-“এভাবে কাঁদছ কেন মিরা?”
মিরা বিদিশাকে সবকিছু বলে। আরো বলে,
-“আমি নিহানকে অনেক অপমান করেছি। জানি ও কোনদিন আমাকে মানবে না। আমার সাথে বোধহয় এটাই ঠিক হচ্ছে।”
বিদিশা মিরাকে বলে,
-“দেখবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
(চলবে)
[আপনাদের কাছে একটা সাজেশন চাই। আপনারাই বলুন মিরার সাথে নিহানের বিয়ে দেওয়া উচিৎ হবে কিনা? আপনারা যা বলবেন তাই করব। কারণ আপনারাই বলেছিলেন মিরাকে তার কাজের শিক্ষা দেওয়া উচিৎ।]