ভালোবাসি তোমায় বেশ পর্ব -১৮ ও শেষ

#ভালোবাসি_তোমায়_বেশ
#অন্তিম_পর্ব
#লেখক_দিগন্ত
বিদিশা ও মাহিন একসাথে পাশাপাশি বসে আসে। বিদিশা খুব জরুরি একটা কথা বলতে চায়। কিন্তু মাহিন ফোনে কারো সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। একসময় বিরক্ত হয়ে বিদিশা উঠে যেতে চাইলে মাহিন তার হাত ধরে ফেলে। ফোনটা কে*টে দিয়ে বলে,
-“জানো বিদি কি হয়েছে? সাগরের বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। এক্সিডেন্টে সাগরের সাথে একটা মেয়েও নাকি ছিল। মেয়েটার স্পট ডেথ হয়েছে। যদিওবা সাগর বেচে আছে তবুও ওর পায়ে অনেক বেশি আঘাত লাগায় সে পঙ্গু হয়ে গেছে। এছাড়া যেই মেয়েটা মারা গেছে তার বাবা নাকি সাগরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সত্যি আমার খুব খারাপ লাগছে সাগরের জন্য। জানি ও অনেক অন্যায় করেছে কিন্তু ছিল তো আমারই বন্ধু।”

বিদিশারও সাগরের জন্য খারাপ লাগে কথাগুলো শুনে। সে বলে,
-“আমাদের একবার সাগর ভাইয়াকে দেখতে যাওয়া উচিৎ।”

মাহিন বেশ অভিমান করেই বলে,
-“তোমার এখনো সাগরের প্রতি এত টান।”

-“মাহিন তুমিও না। এতে জেলাস হওয়ার কি আছে। আমি তো শুধু মানবিকতার খাতিরেই বলছিলাম।”

-“আচ্ছা আমি বুঝতে পেরেছি।”

-“তোমাকে মিরার ব্যাপারে একটা কথা বলার ছিল।”

-“হ্যাঁ বলো।”

-“মিরা না তোমার বন্ধু নিহানকে ভালোবাসে। নিহান আজ বিয়ের কার্ড দিয়ে গেছে। মেয়েটা পাগলের মতো কাঁদছিল। তুমি যদি একটু…”

-“না বিদিশা আমাকে এই ব্যাপারে কিছু করতে বলিও না। আমি পারব না। নিহানের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আমি এখন কি করতে পারি বলো?”

-“নিজের বোনের জন্য কিছু একটা তো করতে পারবে।”

-“না পারব না।”

-“ঠিক আছে তাহলে আমিও আর তোমার সাথে কথা বলব না। এটাই ফাইনাল। ব্যাস।”

-“বিদি আমার কথাটা তো শোন।”

বিদিশা কোন কথা না শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
_____________
মিরা খুব সুন্দর করে সাজছে। আজ যে নিহানের বিয়ে। নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে খেতে যাচ্ছে ভাবতেই মিরার বুকটা ফে*টে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখেছে সে।

মিরা আয়নায় দাঁড়িয়ে খুব খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে দেখছিল। গত কয়েকদিন থেকে চিন্তায় আর দুঃখে অনেক শুকিয়ে গেছে সে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। রূপের জৌলুশ কমেছে। যেই রূপ নিয়ে এত গর্ব ছিল সেই রূপেরই যত্ন করতে ভুলে গেছে মিরা।

হঠাৎ বিদিশা এসে মিরার কাধ স্পর্শ করে বলে,
-“তোমার আজকে যাওয়ার দরকার নেই মিরা। এমনিতে অনেক কষ্ট পেয়েছ আর কষ্ট সহ্য করতে হবে না।”

মিরা জোরপূর্বক হেসে বলে ,
-“না ভাবি। আমি তো আজ যাবোই। আমার সাথে যা হয়েছে একদম ঠিক হয়েছে। সব আমার করা অন্যায়ের শাস্তি। আমি তো তোমাকে, নিহান স্যারকে কম অপমান করিনি। বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে বিচার করেছি। তাই তো আল্লাহ আজ এভাবে আমায় শিক্ষা দিলেন।”

বিদিশার খুব রাগ হচ্ছিল মাহিনের উপর। মাহিন চাইলেই কিছু করতে পারত। অথচ বড় ভাই হয়েও নিজের বোনের দুঃখ কিভাবে দেখেও না দেখার ভান করে আছে। বিদিশা মিরাকে বলে,
-“এবার আমাকেই তোমার জন্য কিছু করতে হবে। তোমার ভাই কোন কর্মের নয়। তুমি এসো আমার সাথে।”

বলেই মিরাকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। মাহিন দূর থেকে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিল আর হাসছিল। বলছিল,
-“তোমরা এসব করে কোন লাভ পাবেনা। যা হওয়ার সেটা তো হবেই।”

বিদিশা ও মিরা এসে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বিয়ে হয়ে গেছে। মিরা আর নিজের চোখের জল সামলাতে না পেরে কেঁদেই দেয়।

আর তখনই মিরা এমন কিছু দেখে যা তাকে অবাকের চরম শিখরে আরোহন করায়। আজ বিয়ে তো হয়েছে কিন্তু নিহানের নয় তার বড় ভাইয়ের।

বরবেশে নিহানের বড় ভাইকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই বেশ অবাক হয় সে। কিছুক্ষণ পরেই নিহানকে দেখতে পায়। নিহান হলুদ কালারের একটা পাঞ্জাবি পড়ে মিরার দিকেই আসছিল।

মিরার কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে নিহান। বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলে,
-“এত লেইট করে এলে যে? বিয়ে তো শেষ হয়ে গেল। আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?”

মিরা ও বিদিশা বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে আছে। মিরা বলে,
-“আজকে আপনার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলনা? আপনি তো আপনার বিয়ের কার্ড দিয়ে এসেছিলেন। তাহলে আপনার ভাইয়ের বিয়ে হলো কেন?”

মিরার কথা শুনে নিহান অবাক হওয়ার নাটক করে বলে,
-“কই নাতো। আমি তো ভাইয়ের বিয়ের কার্ডই দিয়ে এসেছিলাম। তোমার বুঝতে ভুল হয়েছ। এখন খেতে এসো। আমি ঐদিকে যাচ্ছি।”

বলেই নিহান মিটিমিটি হেসে চলে যায়। মিরা বিদিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“এসব কি হচ্ছে ভাবি? তুমি কি কিছু বুঝতে পারছ?”

বিদিশা বলে,
-“আমি সবটাই বুঝতে পারছি মিরা। এসব তোমার গুণধর ভাইয়ের কীর্তি। তিনিই তো বিয়ের কার্ডের ব্যাপারে আমাকে বলেছিলেন যে, এটা নাকি নিহানের বিয়ের কার্ড। আমি এবার মাহিনকে দেখে নেব। তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। তুমি নিহানের কাছে যাও। আজ নিজের মনের কথা ওকে বলেই দাও। নাহলে যদি সত্যি সত্যি অন্য কেউ এসে ওকে তোমার কাছ থেকে নিয়ে যায় তাহলে?”

-“তুমি ঠিক বলেছ ভাবি। আমি চললাম নিহানের কাছে।”

বলেই মিরা নিহানের দিকে যেতে থাকে।
.
নিহান ফোনে মাহিনের সাথে কথা বলছিল। দুই বন্ধু হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। মাহিন বলে,
-“আমার বোন টাকে তো ভালোই জব্দ করলি। কি লাভ পেলি এসব করে?”

-“মিরা আমাকে অনেক অপমান করেছিল তাই এইটুকু কষ্ট ওর পাওনা ছিল। তাছাড়া তুই তো জানিস খুব সহজে কোন কিছু পেয়ে গেলে সেটার কোন মূল্য থাকে না। তাই আমি চেয়েছিলাম মিরা আমার মূল্যটা বুঝুক। যাইহোক তুই যে ভাই হয়েও নিজের বোনকে ঠকিয়ে আমাকে সাহায্য করে নিজের বন্ধুত্বের মান রেখেছিস তাই তোকে ধন্যবাদ।”

-“এসব ধন্যবাদ দিয়ে কাজ নেই। এই প্রথম আর শেষ তোকে সাহায্য করলাম। এরপর যদি আমার বোনকে আর বিন্দুমাত্র কষ্ট দিস, কিংবা ওর চোখের এক ফোটা জলের কারণ তুই হোস তাহলে কিন্তু আমি তোকে ছা°ড়ব না। মাইন্ড ইট।”

-“ওকে।”

নিহান ফোনটা কে*টে দিতেই একটা মেয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ায়। মেয়েটাকে দেখে নিহান চিনতে পারে না। মেয়েটা নিহানের সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলে,
-“হাই আমি তানভী। আমি আপনার নতুন ভাবির কাজিন হই। আপনার সাথে একটু কথা বলতে এলাম।”

নিহান সৌজন্যতার কারণে জোরপূর্বক হেসে কিছু কথা বলে। তন্মধ্যে মিরা সেখানে চলে আসে। নিহানকে এভাবে অন্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখা হিংসায় জ্ব-লে পু/ড়ে যায় মিরা। নিহানের কাছে গিয়ে বলে,
-“এক্সকিউজ মি স্যার। একটু এদিকে আসুন আপনার সাথে জরুরি কথা আছে।”

নিহান মিরার কথামতো বাধ্য ছেলের মতো তার পিছনে যেতে থাকে।

মিরা একটু দূরে গিয়ে নিহানকে বলে,
-“আমি আপনাকে ভালোবাসি স্যার। আপনি কি আমাকে বিয়ে করে নিজের বউ হওয়ার সুযোগ দেবেন?”

নিহানের চোখ বড়বড় হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“কিন্তু তোমার তো ফর্সা,লম্বা, সিক্স প্যাক ছেলে পছন্দ। যার একটাও আমি নই। আমার মতো কালো ভূতকে বিয়ে করে তোমার কি লাভ?”

-“প্লিজ স্যার এসব বলে আর আমায় লজ্জা দেবেন না। আমি আমার কাজের জন্য যথেষ্ট অনুতপ্ত।”

নিহান আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মিরাকে জড়িয়ে ধরে। বলে,
-“ঠিক আছে। আমি তোমার পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেব। আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি। #ভালোবাসি_তোমায়_বেশ”
___________
দীর্ঘ ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে। সাগর এতদিন জেলে ছিল। আজ জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছে। সাগর পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় এখন ক্রাচ ছাড়া হাটতে পারে না। নিজের কাজের জন্য যথেষ্ট অনুতপ্ত সে। আজ বাড়িতে ফিরে সর্বপ্রথম সিদ্ধান্ত নেয় লাবণীর সাথে দেখা করবে। লাবণীর সাথে সবকিছু ঠিক করে নিবে।

যেই ভাবা সেই কাজ সাগর লাবণীর খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। লাবণী নিজের বাড়ি ছেড়ে এখন হোস্টেলে থাকে। লাবণীর পরিবার তার গর্ভবতী হওয়ার ব্যাপারে জানতে পেরেই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

সাগর লাবণীর কাছে এসে তার অতীতের সব ভুলের জন্য ক্ষমা চায়। কিন্তু লাবণী ক্ষমা করতে পারে না। এভাবে দু-তিনদিন লাবণীর পিছনে ঘোরার পর লাবণী রাজি হয়। সাগর লাবণীকে বলে,
-“এবার আমি আর কোন ভুল করব না। আমি তোমাকে বিয়ে করে নেব। তারপর আমাদের সন্তানকে নিয়ে আমরা ছোট সংসারে থাকব। আল্লাহর কাছে নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইব। তিনি নিশ্চয়ই আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।”
________________
আজ নিহান ও মিরার বিয়ে হয়ে গেল।বাড়ির মেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় সবটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে। বিদিশা মাহিনের জন্য কফি নিয়ে আসে। মাহিন শোফায় বসে কাজ করছিল। বিদিশা বলে,
-“আজকাল খুব ব্যস্ত তুমি। আমাকে একটুও সময় দাওনা।”

-“হ্যাঁ অফিসের কাজ একটু বেড়েছে।”

-“জানি এসব অযুহাত। আসলে আমাকে তুমি আর ভালোই বাসোনা।”

-“কি যে বলছ। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।”

-“সে তো বুঝতেই…”

সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই বিদিশার বমি পেয়ে যায়। বিদিশা বাত রুম গিয়ে বমি করে। বিদিশা বাইরে আসার পর মাহিন জিজ্ঞাসা করে,
-“কি হয়েছে কি সমস্যা?”

বিদিশা লজ্জালজ্জা মুখ করে বলে,
-“মনে হয় আমি মা হতে চলেছি। আমাদের সন্তান আসতে চলেছে পৃথিবীতে। প্রেগ্ন্যাসি কিট তো তাই বলছে।”

মাহিন লাফিয়ে ওঠে। বিদিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“তুমি জানো না তুমি আজ আমাকে কত আনন্দ দিলে। আমি বাবা হতে চলেছি…উফ..ভালোবাসি খুব ভালোবাসি তোমায় বিদি। #ভালোবাসি_তোমায়_বেশ”
(সমাপ্ত)
[আজ ২০২২ এর শেষ দিনে এই গল্পটাও শেষ করে দিলাম। আগামীকাল নতুন বছরের শুরুতেই নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো। যাইহোক গল্পটা আপনাদের কেমন লাগল কমেন্ট করে জানাবেন। গল্পটাকে ১০ এর মধ্যে কত দেবেন আর গল্পে আপনার প্রিয় চরিত্র কোনটা সেটাও বলবেন। এছাড়া গল্প সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিতে পারেন। কোন ভুল হলে ধরিয়ে দেবে যাতে সেই ভুল পরবর্তী গল্পে শুধরে নিতে পারি।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here