ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -০৪

#ভালোবাসি_প্রিয় (০৪)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-“হেই মিস দেড় ফুট চোখ খোল।চোখ খোল বলছি।ও মাই গড!ম”রে গেল নাকি। শ্বাস চলছে কি না চেক করতে পারলে বুঝতে পারতাম ম”রে গেছে নাকি বেঁচে আছে? কিন্তু তিনি তো আবার বোরকাওয়ালি। গায়ে টাচ করলে তার আবার ফোস্কা পড়তে পারে।বৃত্ত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। বারবার দোয়া কে ডেকে চলেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। কয়েকবার ডাকার পরেও দোয়ার কোন রেসপন্স না পেয়ে বৃত্ত গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে হিজাবের উপর দিয়েই দোয়ার চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো।”

-“চোখে মুখে পানির ছিটা পড়তেই দোয়ার জ্ঞান ফিরে আসলো। দোয়ার জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পেল বৃত্তের হাঁটুর উপর দোয়ার মাথা রাখা ।বৃত্ত দোয়ার দিকে ঝুঁকে অনবরত তাকে ডেকে চলেছে। তাৎক্ষণিক দোয়া নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে সম্পূর্ণ ঠিক আছে ।তবে পায়ে ব্যাথায় টনটন করছে।তার কোন ক্ষতি হয় নি দেখে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে নিলো। কিন্তু বৃত্ত তো চলে গিয়েছিল ,তাহলে এখানে ও কি করছে?আর লোকগুলো কোথায় চলে গেল? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো দোয়া।”

-“দোয়ার ভাবনার মাঝেই বৃত্ত বললো,তুমি দেখতে দেড় ফুট হলেও তোমার ওজন তো দেড় মণের ও বেশি।মনে হচ্ছে আমার হাঁটুর উপর কোন হাতির মাথা রাখা হয়েছে । এবার দয়া করে ওঠে আমাকে উদ্ধার করো।”

-“দুঃখিত! দোয়া ছোট করে জবাব দিলো।”

-” থাক ,আর জুতো মে”রে গরু দান করার কোন প্রয়োজন নেই।”

-“আমি শুধু মাত্র আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, আমি তো বলিনি আমার মাথা আপনার হাঁটুতে রাখতে। তাছাড়া আমার এই অবস্থার জন্য আপনি দায়ী। আমার তো মনে হয় এটা আপনার ষড়যন্ত্র।ঐ লোকগুলো আপনার ভাড়া করা লোক।আপনি আমার কাছে ভালো সাজার জন্য এই সম্পূর্ণ নাটক করেছেন। সেদিন যদি নাচে আমার নাম না লিখাতেন তাহলে আজ আমার এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না। কেন করলেন এমন? আমাকে মা”রা”র যখন এতোই ইচ্ছা এই মানুষ রুপি পশুদের হাতে তুলে না দিয়ে অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করতেন।আর এখন সিনেমায় মতো নিজে গুন্ডা পাঠিয়ে নিজেই হিরো হয়ে আমাকে বাঁচাতে এসেছেন।”

-” হা,হা,হা ,হা। আমি তোমার কাছে ভালো সাজতে চেয়েছি? তোমার মতো থার্ড ক্লাস, গেঁয়ো,দেড় ফুট মেয়ের কাছে?হাউ ফানি। তোমার কোন আইডিয়া নেয় এই আশিয়ান আবরার বৃত্তের জন্য কতো মেয়ে পাগল? আমার শুধু একটা ইশারায় তারা তাদের সর্বত্র বিলিয়ে দিতে রাজি।আর সেই বৃত্ত কি না তোমার সামনে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে চাইবে? তবে একটা কথা মনে রেখ আমরা যা চোখের সামনে দেখি কখনো কখনো সেটা সত্য নাও হতে পারে। সেদিন তোমাকে যদি বলতাম নাচে তোমার নাম আমি লিখি নি। তুমি কি বিশ্বাস করতে ? করতে না। তোমার নাম আমি ন‌ই বি…. বৃত্ত বাকি টা বলার আগেই কয়েক জন পুলিশ এসে বৃত্তকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। তোমার জন্যেই আজ রতন পাশা ধরা পড়লো।রতন পাশার অপরাধ একটা নয়।সে একজন কন্টাক্ট কিলার,সাথে একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাছাড়া নারী পাচারকারীদের সাথে ও জরিত। অনেক দিন যাবৎ রতন পাশার খোঁজ করছিলো পুলিশ। কিন্তু রতন পাশা অনেক চতুর লোক।পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়ে ছিল। তুমি যদি ঠিক টাইমে আমাদের ইনফর্ম না করতে তাহলে আজ ও রতন পাশা আমাদের নাগালের বাইরে চলে যেত। থ্যাংকস এগেইন।”

-“ইটস ওকে। তবে রতন পাশা যেহেতু একজন কন্টাক্ট কিলার নিশ্চয় ও কারো থেকে সুপারি পেয়েছে এই মেয়েকে মা”রা”র জন্য।কে বা কারা ওকে সুপারি দিয়েছে এটা জানার দায়িত্ব আপনাদের।আশা করি রতন পাশার পাশাপাশি আসল অপরাধী ও সাজা পাবে।”

-” অফ কোর্স।আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।

-” দোয়া পুলিশ দেখে অনেকটা ঘাবড়ে গেছিল।যা পুলিশের নজর এড়ায়নি। দোয়া কে স্বাভাবিক করতে একজন পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করলো,আর ইউ ওকে ম্যাম? আমরা কি আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দিবো? আমাদের সাথে যেতে আপনার সমস্যা হলে আমি মহিলা কন্সটেবল কে ইনফর্ম করছি,তারা আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছে দিবে।
আমাদের কে ভয় পাওয়ার কিছু নেই ম্যাম‌। চলুন আমাদের সাথে। আমাদের মহিলা কন্সটেবল এসে গেছে।”

-” দোয়া কিছু বলার আগেই বৃত্ত বললো,তার কোন প্রয়োজন নেই অফিসার।ও আমার পরিচিত, আমার জুনিয়র।আমরা এক‌ই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করছি। আপনারা টেনশন করবেন না।আমি নিজ দায়িত্বে ওকে ওর গন্তব্যে পৌঁছে দিবো।”

-“ঠিক আছে। তাহলে আমরা আসি বলে বৃত্তের সাথে হ্যান্ডশেক করে পুলিশ অফিসার চলে গেল।”

-” পুলিশ যেতেই বৃত্ত বললো, এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো এটা আমার কোন নাটক না। নিশ্চয় তোমার কোন শত্রু তোমার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে। তোমার এক্স ও হতে পারে।”

-” এক্স এর কথা শুনে দোয়া বৃত্তের দিকে কটমট চোখে তাকাতেই বৃত্ত বললো, জাষ্ট ফর ফান।তবে তুমি যদি মনে করো তোমার আমার শত্রুতা এখানেই শেষ ।তাহলে আমি বলবো এইটা তোমার ভুল ধারণা। তোমার আমার শত্রুতা কখনোই শেষ হবার নয়।আজ তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে ও আমি তাকে সাহায্য করতাম। ইনফ্যাক্ট তুমি আমাকে যতটা খারাপ মনে করো আমি কিন্তু ততটা খারাপ নয়। তোমার আব্বা আম্মা নিশ্চয় অনেক টেনশন করছেন,এই নাও ফোন বাসায় একটা কল করে জানিয়ে দাও।”

-” হুম ধন্যবাদ। দোয়া বৃত্তের থেকে ফোন নিয়ে কল করার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হলো। মনে হচ্ছে ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি ফোনকলের অপেক্ষায় ছিল। আসসালামুয়ালাইকুম আব্বা।”

-” ওয়ালাইকুমুস সালাম। দোয়া মা কোথায় তুই? তুই জানিস আমরা কতো চিন্তা করছি তোর জন্য বলতে বলতে বলতে গলা ভিজে এলো দোয়ার বাবার।”

-“আমি ঠিক আছি আব্বা।অটো পাচ্ছিলাম না তাই একটু দেরি হয়েছে। আপনি একদম চিন্তা করবেন না।”

-” তুই এখন কোথায় আছিস মা? আমি তোর ভার্সিটি তে গেছিলাম।তোকে অনেক খুঁজেছি মা।পরে তোর দেখা না পেয়ে চলে এসেছি। ভেবেছিলাম তুই হয়তো বাড়ি ফিরে এসেছিস। কিন্তু বাড়ি ফিরে দেখি তুই নেই। তোকে ছাড়া বাড়িটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।তোর আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তুই বল কোথায় আছিস আমি এক্ষুনি আসছি।”

-“আপনি এমনিতেই অসুস্থ। তারপর আবার জার্নি করেছেন। আপনার এতো দূর আসার প্রয়োজন নেই আব্বা। আমার পরিচিত একটা লোকের সাথে আসছি আমি। আপনি বরং বাসস্ট্যান্ডে থাকুন। আমি আসছি।”

-“ঠিক আছে মা। সাবধানে আসিস ।”

-“দোয়া কথা বলা শেষ করে বৃত্তের হাতে ফোন দিতেই বৃত্ত বললো, ও মাই গড!দিলে তো আমার ফোনের ব্যালান্স শেষ করে। এজন্যই তো গ্ৰামের মানুষ একটা প্রবাদ বলে , “বসতে দিলে খাবার চায়,আর খাবার দিলে শোবার চায়।” এতো দিন পরে আজ বুঝতে পারলাম এই প্রবাদের মানে।”

-” কতো টাকা খরচ হয়েছে বলুন আমি বাসায় ফিরে রিচার্জ করে দিবো।”

-” সেটা সময় বলে দেবে।এখন বেশি কথা না বলে গাড়িতে ওঠো।”

-” দোয়া বাধ্য মেয়ের মতো পিছনের সিটে গিয়ে বসে পড়লো।যা দেখে বৃত্ত বললো,

-“পিছনের সিটে বসলে? অবশ্য তোমার মতো থার্ড ক্লাস’ গেঁয়ো ‌’দেড় ফুট মেয়ের কোন যোগ্যতা নেই আশিয়ান আবরার বৃত্তের পাশাপাশি বসার। তাছাড়া আমি কোন গল্পের নায়ক ন‌ই।এই মুহূর্তে আমি যদি কোন গল্পের নায়ক হলে তোমাকে কি বলতাম জানো?”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here