ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -০৫

#ভালোবাসি_প্রিয় (০৫)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-” মামাজান কি এহোনেই চলে যাবি খালাম্মা?”

-” হ্যাঁ।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করেই র‌ওনা হবেন। আমার মোটামুটি সব রান্না শেষ। তুই খাবার গুলো ডাইনিং টেবিলে নিয়ে রাখ‌। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। শরীরের উপর দিয়ে আজ বড্ড ধকল গেছে। তারপর আবার বেটা এখন ও বাড়ি ফিরলো না।কি যে করবো এই বেটাকে নিয়ে?”

-” আপনারে কত্তো করে ক‌ই রান্ধাবারা আমি করি, আপনে করতে দেন না।আপনাগোর কি টেহা পয়সার অভাব আছে? ইচ্ছা করলেই চার পাঁচ টা বান্দী,দাসী রাখতি পারেন। কিন্তু তা না অরে নিজির কাজ নিজি করতেই ভালোবাসেন আপনে। আবার কত্তো করে ক‌ইছি বৃত্ত ভাইজানরে বিয়া দেন।তাও দিবেন না।সব কাজ বাজ একা হাতে করবেন তাইলে ধকল আপনার উপর দিয়া যাইবো না তো কি জামিলার উপর দিয়া যাইবো?”

-” তোকে কতো বার বলেছি তুই এসব ভাষায় কথা বলবি না।তোকে স্কুলে ভর্তি করেছি, পড়াশোনা শিখাচ্ছি কি এই ভাষায় কথা বলার জন্য। তুই নিজেকে কেন কাজের মেয়ে ভাবিস জামিলা?আমি কি তোকে কাজের মেয়ের মতো রাখি?আমরা সবাই তোকে অনেক ভালবাসি ।তোকে আমাদের পরিবারের একজন সদস্য মনে করি। কিন্তু আমার মনে হয় তুই আমাদের কে তোর পরিবার ভাবতে পারিস না। সবসময় আমাদের কে এড়িয়ে চলিস।”

-” ঝর্না আবরার কথাটা বলার সাথে সাথেই জামিলা ঝর্না আবরার কে জরিয়ে ধরে বললো, আপনি এতো ভালো কেন খালাম্মা? মাঝে মাঝে আমার আফসোস হয় আপনি কেন আমার গর্ভধারিনী মা হলেন না?বাপ,মা ম’রা একটা অসহায় মেয়েকে গ্ৰাম থেকে নিয়ে এসে নতুন একটা জীবন দিয়েছিলেন। কখনো আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দেন নি। এজন্যই আমার ভয় হয় খালাম্মা। নিজেকে এই পরিবারের একজন মনে করতে গিয়ে আপনি যদি আমাকে লোভী মনে করে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন?তাহলে আমি ম”রে”ই যাবো।এই বাসা ,এই পরিবারের লোকজন ছাড়া জামিলার কোন অস্তিত্ব নেই খালাম্মা।জামিলা এই পরিবার কে , পরিবারের লোকজন কে খুব ভালোবাসে খালাম্মা। আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ খালাম্মা,আমাকে কখনো এই বাসা তাড়িয়ে দিবেন না।”

-“ঠিক আছে দিবো না । তবে একটা কথা মনে রাখবি ,নিজেকে কখনো ছোট করে দেখবি না।এখন যা তো তাড়াতাড়ি খাবার রেডি কর। ভাইজানের তাড়া আছে।”

-“ঠিক আছে খালাম্মা। এক্ষুনি যাচ্ছি।

___________________________________

-” একি ভাইজান! খাচ্ছেন না কেন? রান্না কি ভালো হয় নি? ”

-“খেতে ইচ্ছে করছে না ।”

-” কেন ভাইজান?আমি কতো কষ্ট করে আপনার পছন্দের লুচি ,ছোলার ডাল,ইলিশ মাছের ঝোল, সরষে পাবদা ,আলু আর ট্যাংরা মাছের ঝোল,গরুর কলিজা ভুনা,খাশির মাংস ,পোলাও ,পায়েস করেছি‌।অল্প অল্প করে হলেও সব গুলো রেসিপি ট্রাই করুন ভাইজান।”

-” এসব খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না ঝর্না।এসব রেসিপি যে আমার মেয়েটার খুব পছন্দের ছিল।ওকে রেখে কিভাবে এসব খাবার আমি খাবো বল তো?আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল তোর বুবু এসব রেসিপি বাসায় তৈরি করে না।যবে থেকে মেয়েটার এই অবস্থা হয়েছে , আমাদের যেন সুখ , শান্তি সব বিলীন হয়ে গিয়েছে। চোখের সামনে মেয়েটার কষ্ট সহ্য হয় না। তোর বুবু দিন রাত আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেন,রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে দোয়া করে মেয়েটাকে সুস্থ করে দেওয়ার জন্য। ভালোবাসা খুব খারাপ জিনিস রে ঝর্না। ভালোবাসা আমার মেয়েটাকে ভালো থাকতে দিলো না,বলতে বলতে চোখের পানি ফেললেন আতাউর রহমান।”

-” ভাইজান যা হবার হয়েছে। মেয়েটার সাথে সাথে আপনি যদি এই রকম পাগলামি করেন ,তাহলে বুবুকে কে সামলাবে?কম তো চিকিৎসা হলো না মেয়েটার। তবু ও কেন যে ভালো হচ্ছে না আল্লাহ জানেন?”

-“আর একবার শেষ চেষ্টা করে দেখবো। কানাডা থেকে নামকরা একজন ডক্টর আসছেন। ডক্টর হিসেবে অনেক প্রশংসা শুনেছি। এজন্যই একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।প্রয়োজনে ডক্টরের হাতে পায়ে ধরে বলবো আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে দিতে। আমি এখন উঠি রে।মেয়েটার জন্য বড্ড খারাপ লাগছে। মেয়েটাকে একবার চোখের দেখা দেখে বাসায় ফিরবো।”

-” এক্ষুনি চলে যাবেন ভাইজান?”

হ্যাঁ।কিন্তু বৃত্ত বাবার সাথে তো দেখা হলো না।বৃত্ত কখন আসবে?”

-” বেটার তো এতোক্ষণে চলে আসার কথা।কেন যে আসছে না।জামিলা আমার ফোন টা দে তো কল করে দেখি,বেটা এখন কোথায় আছে।”

-“ঠিক আছে খালাম্মা।আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”

__________________________________

-“এই মুহূর্তে আমি কোন গল্পের নায়ক হলে তোমাকে কি বলতাম জানো?”

-” না। দোয়া ছোট করে জবাব দিলো।”

-” আমাকে কি তোমার ড্রাইভার মনে হয়?”

-” মানে?”

-” এটাই গল্পের নায়কদের কমন ডায়লগ।হা হা হা হা। এই দেড় ফুট তুমি ফেসবুকে গল্প পড়ো না? আমার মন বলছে তুমি নিশ্চয় গল্প পড়ো না। ফেসবুকে গল্প পড়লে গল্পের লেখিকাগন তোমাকে রোমান্টিক বানিয়ে দিতো।এতো ঝগড়াটে হতে না তুমি। অবশ্য পড়বেই বা কিভাবে? তোমার মতো গেঁয়ো থার্ড ক্লাস মেয়েরা স্মার্টফোনের কি বোঝে? তোমাদের এতো টাকা ও নেই স্মার্টফোন কেনার। সামান্য একটা স্মার্ট ফোন নেই সে আবার এসেছে নামকরা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে। তুমি যদি কিছু মনে না করো আমার বাসায় একটা দামি ফোন আছে, শুধু ডিসপ্লেতে একটু সমস্যা আছে। তুমি যদি চাও আমি ঐ ফোন টা তোমাকে দান করতে পারি।অবশ্য ফোন মেরামত বাবদ কিছু টাকা খরচ হবে। সমস্যা নেই টাকাটা আমি দিয়ে দিবো।”

-” দোয়া অপমানবোধ করলে ও টপিক চেন্জ করার জন্য বললো আপনি নিশ্চয় গল্প পড়েন?”

-” ফালতু কাজে সময় নষ্ট করি না আমি।”

-” তাহলে কিভাবে বুঝলেন ফেসবুকে গল্প পড়ে সবাই রোমান্টিক হয়?”

-” বৃত্ত কিছু বলার আগেই দেখলো ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে‌ , স্ক্রিনে মম নামের সাথে বৃত্ত আর ঝর্না আবরারের হাসিমাখা ছবি ভেসে উঠেছে।বৃত্ত ফোন রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে বললো,বেটা কোথায় তুমি?ফিরতে এতো লেট হচ্ছে কেন?”

-” সো সরি মম। একটা জরুরী কাজে আটকে গেছি।ফিরতে একটু লেট হবে মম। তুমি টেনশন করো না। আমি এখন আর ছোট নেই মম। আমি নিজের কেয়ার করতে শিখেছি।”

-” তোমার ফুফা এসেছেন।”

-” বড় ফুফা?”

-” হ্যাঁ।তবে বেশি সময় থাকবে না আমাদের এইখানে। তোমার আপুর সাথে দেখা করতে ‌যাবে।তোমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবে?”

-” ঠিক আছে মম,আসছি আমি।”

-” আচ্ছা বেটা সাবধানে এসো।বাই। লাভ ইউ।”

-” বাই লাভ ইউ টু।”

-” ফোন রেখে বৃত্ত দোয়া কে জিজ্ঞেস করলো,এই দেড় ফুট তোমাদের বাস স্ট্যান্ড আর কতো দূরে?যেতে কি বেশি টাইম লাগবে? আমার একটু তাড়া আছে।”

-” এই তো আর পাঁচ মিনিট মতো লাগবে।”

-” বাসায় ফিরে অবশ্যই আমার ফোন খরচ ,আর গাড়িতে যাতায়াত খরচ দিয়ে দিবা । ঠিক আছে।”

-” আচ্ছা দিয়ে দিবো। আপনি এখানেই গাড়ি থামান। সামনেই বাসস্ট্যান্ড। আমি এইটুকু হেঁটে চলে যেতে পারবো।গ্ৰামের লোকজন আপনার গাড়ি থেকে নামতে দেখলে ভালো চোখে দেখবে না।আজ আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন । তার জন্য আমি আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ। আপনার এ ঋণ আমি কখনো ভুলবো না‌।ধন্যবাদ আপনাকে।তবে মানুষ কে মানুষ ভাবতে শিখুন মিস্টার আশিয়ান আবরার বৃত্ত। আল্লাহ আমাদের যা দিয়েছেন এতেই আমরা সন্তুষ্ট।হয়তো আপনাদের মতো বিশাল অট্টালিকা,টাকা , পয়সার পাহাড় নেই আমাদের , তবু ও আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুখে আছি আমরা,বলেই দোয়া গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল।”

-” দোয়া গাড়ি থেকে নেমে যেতেই বৃত্ত পিছনের সিটে কিছু একটা জ্বলজ্বল করতে দেখে অবাক হয়ে গেল।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here