ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ৩৭+৩৮

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৩৭
#সুলতানা_সিমা

বিকালের দিকে ড্রয়িংরুমে বসে বসে টিভি দেখছিলো শামু। কলিং বেল বেজে উঠতেই টিভি অফ করে গিয়ে দরজা খুললো। এই সময়ে নীলকে দেখে সে থম মেরে গেলো। ব্ল্যাক জিন্স হোয়াইট ব্লেজার পড়া,হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, সিল্কি চুল গুলা খাড়া করে রাখা। শামু নীলকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে অবাকের স্বরে বলল “নীল ভাই তুমি? তুমি সত্যি এসেছো তো?” নীল মৃদু হেসে বলল”
_হ্যাঁ আমি এসেছি। ভেতরে ঢুকতে দিবেনা?
_আরে আসো আসো। এতো বড় বিজনেসম্যান আমাদের বাড়িতে এসেছেন, ভিতরে কেমনে আসতে দেইনা। মাম্মা, মাম্মা দেখে যাও কে এসেছে।” নীল রুমে ঢুকে সোফায় বসতে বসতে বলল”
_আন্টি কই?
_জানিনা,নামাজ পড়ছে হয়তো, আসরের আজান দিলোনা একটু আগে?
_অহ তুমি নামাজ পড়োনা?” শামু মৃদুস্বরে বলল”
_পড়ি তো,মাঝে মাঝে মিস হয় আরকি। তুমি বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
_আরে না না আমি কিছু খাবোনা।
_কিছু একটা খাও।
_ওকে, তাহলে কফি।”

শামু চলে গেলো কিচেনে। এতোদিন পরে নীলকে দেখে তাঁর মনের আকাশে রংধনু উঠেছে। অন্য রকম ফিলিংস হচ্ছে। নীলের হাসি, নীলের কথা বলা, নীলের কণ্ঠস্বর, নীলের সবকিছুই এখনো শামুকে আকৃষ্ট করে। এইতো দুবছর আগে নীলের মা শামুকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, শামুকে নাকি উনার ছেলের বউ বানাতে চান। প্রস্তাব আসার পরে তো খুশিতে শামু আত্মহারা হয়ে গেছিলো। সে নীলের বউ হবে ভাবলেই তাঁর শিরায় শিরায় শীতল স্রোত বয়ে যায়। শামুর মাও রাজি হন। কিন্তু বাধ সাধে নীল। সে বলে সে এখন বিয়ে করবেনা। শামু বুঝতে পারে নীল তাঁকে সরাসরি না বলতে পারছেনা, তাই এখন বিয়ে করবেনা বলে দিয়েছে। তবে এতে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়নি। শামুর সাথে নীলের সম্পর্ক আগের মতই আছে। নীল তাঁকে এখনো আগের চোখে দেখে। জাস্ট কাজিন। প্রয়োজন ছাড়া কখনো শামুকে একটা কলও দেয়না। দুইটা কফি নিয়ে শামু আসলো। নীলের হাতে কফি তোলে দিয়ে সে বসলো। নীল কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল”

_এখন কী করো? বিয়ে টিয়ে করছো না যে?
_আমার স্বপ্নটা পূরণ হোক তারপর বিয়ে করে নিবো।
_কী স্বপ্ন তোমার?
_এক্ট্রেস হওয়া। “শামুর কথা শুনে কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে যায় নীলের। কিছুটা গম্ভীর গলায় বলে”
_হুম ভালো। বাট এই প্রফেশন টা আমি সাপোর্ট করিনা।
_কেন।
_জানিনা কেন, ভালো লাগেনা আরকি।
_আমার তো অনেক ভালো লাগে।
_আচ্ছা আন্টিকে ডাক দাও। নামাজ হয়তো শেষ হয়েছে।” শামু তাঁর মাকে ডেকে আনলো। নীল তাঁদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে তাঁর ফোনে কল এলো, তাঁর মা অনেক অসুস্থ তারাতাড়ি যেন দেশে যায়। শামুর মাও যেতে চাইলেন। নীল বারণ করলো না তাঁদের রেডি হতে বলে চলে গেলো সে।

_কী সাংঘাতিক মেয়ে, এভাবে তোকে নাকে ধরে বাদর নাচ নাচালো? ” শাওনের কথায় দিহান ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বলল”
_আমি তো এটা ভাবছি, এই মেয়ের বাবা মা এই মেয়েকে সামলায় কেমনে?
_তাও ঠিক বলেছিস আমারও তাই মনে হয়েছে, তুই খোঁজে দেখ গিয়ে, এই মেয়েটার বাপ নাম্বার ওয়ান খাটাস হবে ?
_যাই বলিস মেয়েটা কিন্তু অনেক কিউট। এতো বজ্জাতি করার পরেও ইচ্ছে করছিলো একবার কোলে নিয়ে আদর করি।
_ভাগ্যিস আইসক্রিম পেয়ে কান্না থামিয়ে দিছিলো, নয়তো তোর অবস্থা শেষ ছিলো দোস্ত।” দিহান আর শাওন বসে কথা বলছিলো, তখন নীল এসে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো। এসে আলমারি খুলে জামা বের করে লাগেজে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল”
_দোস্ত তোরা সব কাজ শেষ করে চলে যাস। আমাকে এক্ষনি দেশে যেতে হবে, আম্মুর অবস্থা খুব খারাপ।
_কী বলিস আন্টির আবার হঠাৎ করে কী হলো?[শাওন]
_জানিনা ভালো থাকিস তোরা। বাই।” নীল দিহান আর শাওনকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাগেজ নিয়ে একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। শাওন আর দিহান চিন্তিত মুখে বসে থাকলো। হঠাৎ এভাবে উনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, খারাপ কিছু হয়নি তো?

নীল রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে নিচে আসতেই দেখে শামুর মা আর সে লাগেজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। নীল গাড়িতে উঠে এক সেকেন্ডও দেরি করলোনা ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলল। কাজের ছেলেটা ফোনে কেঁদে কেঁদে বলছে,দুদিন থেকে নাকি উনি অসুস্থ। সে কলকাতা এসেছে হলো দুদিন। দুদিন থেকে অসুস্থ মানে উনি অনেক কষ্টে আছেন। মায়ের কষ্টটা দেখতে পারেনা নীল। তাঁর মাকে যেন গিয়ে সুস্থ পায় এই দোয়া করছে সে।

______________________________

মেঘের কালো চাদরে ঢেকে গেছে সুনীল আকাশ। আজ মনে হয় আকাশটা খুব কাঁদবে। নিজের বিষন্নতার ফোঁটায় ভিজিয়ে দিবে এই নিষ্ঠুর ভূমি। তারপর রাত কেটে গেলে আবার হেসে উঠবে সূর্যের সাথে। কত সুখী সে, কত রং বদলায়। যেমন রং বদলায় কিছু মানুষের মন। আচ্ছা, সত্যিই কী মানুষ রং বদলাতে পারে? নাকি শুধু রং বদলানোর নাটক করে বেড়ায়? চোখের পানিটা মুছে ড্রাইভ করতে মন দিলো অরিন। সেদিন জেল থেকে পালিয়ে সে একটা বৃদ্ধা মহিলার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তারপর তার মামাতো বোন মহীনিকে ফোন দেয়। মহীনি তাঁর স্বামীকে পাঠিয়ে তাঁকে কলকাতা আনায়। মহীনির শাশুড়ী,ননদ খুব বজ্জাত। তাই ওইদিনই এখান থেকে এসে তাঁর মামা তাঁকে নিয়ে যান। তাঁর মামারাও কলকাতায় থাকেন। এখানে আসার পরে তাঁর মামাদের জোরাজুরিতে আবার লেখাপড়া শুরু করে। তাঁর বড় মামা (মহীনির বাবা) তাঁর লেখাপড়ার দ্বায়িত্ব নেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে একটা কোম্পানিতে জব করে। তাঁর মামাদের সহযোগিতায় ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে রেস্টুরেন্ট দেয়। রেস্টুরেন্টের আয়ের টাকা আর তাঁর জমা টাকা দিয়েই আস্তে আস্তে লোন পরিশোধ করে ফেলে। তার বছরখানেক পরে সে ডাক্তার হয়ে যায়। তাঁর জীবন বদলে যায়, সব জায়গায় তাঁর নাম দাম সব হয়। তবুও সে সুখী নয়,দিহানের স্মৃতিগুলো তাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায়। বাহির থেকে সে শুধুই একজন শক্ত মানুষ, কিন্তু ভেতর তাঁর ঘুনে ধরা বাঁশের মতো ক্ষয়ে গেছে। তবুও সব সময় তাঁর মুখে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলে থাকে। ভালো থাকা নাটকে সে একজন নিখুঁত অভিনেত্রী। কিন্তু মাথার নিচের বালিশের কাছে সে খুবই খারাপ মেঘলা আকাশ, যে প্রতিরাতে তাঁকে ভিজিয়ে দেয় সে কী করে তাঁর কাছে প্রিয় হবে।

এতোকিছুর পরেও অরিন ভাবে, পালিয়ে এসে সে ভালোই করেছে। সেদিন যদি সে পালিয়ে আসতোনা আজ হয়তো এতোদূর আসতে পারতো না। সারাজীবন মানুষের কাছে মাথা নিচু করে থাকতে হতো। শুনতো হতো সে রাস্তার মেয়ে,বস্তির মেয়ে। দেখতে হতো নিজের সন্তানের প্রতি মানুষের অবহেলা। আজ অন্য কারও পরিচয়ে তাঁর পরিচয় দিতে হয়না। সে নিজের পরিচয়ে নিজেই পরিচিত। উপরওয়ালা যা করেন হয়তো মঙ্গলের জন্যই করেন। তাই হয়তো তাঁর জীবনে একটা বেইমান বন্ধু আর পাষাণ স্বামী পাঠিয়েছিলেন।

দুইতলার একটা বাসার সামনে গাড়ি থামালো অরিন। এটা তাঁর বড় মামার বাসা। ছোট মামা আলাদা বাসায় থাকেন। সে তাঁর বড় মামার কাছে থাকে, তিনি তাঁকে যেতে দেননা। এই মানুষটা তার জন্য এতোকিছু করেছেন যা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। তাই সেও এভাবে ফেলে যেতে পারেনা। বুক ছিড়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখের পানিটা মুছে গাড়ি থেকে নামলো অরিন। কলিং বেল বাজাতেই তাঁর মামা এসে দরজা খুলে দিলেন। তাঁর মামী নেই মারা গেছেন। মামাতো দুইভাই দুজনই দেশের বাইরে থাকেন নিজের পরিবার নিয়ে। মামার সাথে সৌজন্যমূলক কথা বলে নিজের রুমে গেলো অরিন। খাটের উপর চোখ পড়তেই চোখটা শীতল হয়ে গেলো অরিনের। তাঁর ফুটফুটে মেয়েটি পুরো খাট জুড়ে বই ছড়িয়ে রাখছে। খাটের মাঝখানে বসে উবু হয়ে বসে লিখছে সে। অরিন এসে হাতের ব্যাগটা রেখে মেয়েকে কোলে তুলে বলল”

_অজনি মামনিটা কী করে? “অজনি তাঁর টানা টানা ডাগর চোখে মায়ের দিকে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে, পরে আবার চোখ নামিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকল। অরিন গাল টিপে বলল”
_আজ বুঝি কারও সাথে ঝগড়া হয়েছে?
_মাম্মাম নানু আজ আমায় বকেছে।
_কেন কেন আমার মেয়েকে বকবে কেন?
_জানো মাম্মাম, আজ না একটা লোক আমার আইসক্রিম খেয়ে ফেলছে, তাই আমি কান্না করছিলাম। এজন্য নানুভাই খুব বকেছে।
_হা হা হা তোমার আইসক্রিম খেয়ে ফেলছে? ওকে সবাইকে বকে দিবো। তুমি বসো মাম্মাম ফ্রেশ হয়ে আসছি।” অরিন অজনিকে রেখে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় গেলো। তানভীকে ফোন দিতে হবে। গত একবছর থেকে তাঁর সৎমাকে সে টাকা পাঠায়। তন্দ্রাকে বিয়ে দিয়েছেন তিন বছর হলো, ছেলে নাকি অনেক ভালো জব করে। কিন্তু তন্দ্রা তাঁর মায়ের খোঁজ রাখেনা। তাঁদের সাথে যোগাযোগও নাকি করেনা। উনি অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকেন চিকিৎসার টাকা পাননা। অরিন খবর নিয়ে এসব জানতে পেরে পরিবারের দ্বায়িত্ব সে নেয়। এখন প্রতি মাসে উনাদের টাকা পাঠাতে হয়। উনিও এখন অরিনের সাথে এমনভাবে কথা বলেন যেন অরিন উনার পেটের সন্তান। অরিন বুঝতে পারে এইসব কিছু হচ্ছে অরিনের টাকা। নয়তো সারাজীবন কই ছিলো এ ভালোবাসা? ঘরের কাজ করাবেন বলে তাঁর মামাদের বাড়িতেও আসতে দিতেন মা তাঁকে। তানভীকে ফোন দিয়ে জেনে নিলো টাকা পেয়েছে কিনা। তারপর রুমে এসে দেখলো তাঁর মেয়ে তাঁর ব্যাগের জিনিসপত্র বের করে করে খাটের উপর রাখছে। অরিন সব কিছু আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে বলল”

_তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে। আমরা কাল ঘুরতে যাবো।
_না আমি যাবো না।
_কেন? তুমি না ঘুরতে যাবা বললা?” অজনি কিছু বলল না চুপ করে থাকলো। ওঁর বয়স তিন বছর থেকে সে চুপচাপ থাকে। যেন ভেতরে ভেতরে কোনো প্রশ্নের জবাব খুঁজে বেড়ায়। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বলল”
_মাম্মাম আমার পাপা নাই কেন?
_নাই তো নাই। এতো কথা বলিস কেন চুপচাপ বসে থাক।” অরিন ধমক দিয়ে অজনিকে কোল থেকে নামিয়ে টাস করে খাটে রেখে বারান্দায় চলে যায়। চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে গাল বেয়ে পরলো। কথা বলতে শিখেছে থেকে অজনি এই একটা কথা বেশি বলে। তাঁর পাপা নাই কেন? অরিন পারেনা ফিরে যেতে। অনেক বার চেয়েছে সব ভুলে আবার দিহানের কাছে ফিরে যেতে। কিন্তু দিহানের এমন নিষ্ঠুরতা, লুপার এমন ধোঁকা দেওয়া, লারার এমন বেইমানি সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। দিহানের পায়ে ধরে মিনতি করেছে, একটা বার বিশ্বাস করতে বার বার বলেছে। কিন্তু দিহান শুনেনি। তাকে যখন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে ঘর থেকে বের করছিলো লারা লুপা একটুও নড়েনি। নিজের মানুষদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলো সবাই। কারো চোখ ছিলোনা তাঁর দিকে। চিৎকার করে কেঁদেছিল সে কিন্তু কারো হৃদয় স্পর্শ করনি তাঁর আর্তনাদ। এতো অবহেলা এতো বড় ধোঁকা খাওয়ার পরেও আবার ফিরে যেতে তাঁর মন আগায় না। কিন্তু এতোকিছুর পরেও তাঁর পাষাণ স্বামীকে সে ভালোবাসে, খুব ভালোবাসে। দিহানের একটু ছোঁয়া পেতে মনটা ব্যাকুল হয়ে থাকে। একটাবার দিহানকে দেখার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করে। এই পাষাণ মানুষটা যে তাঁর রক্তে মিশে আছে। কী করে ভুলে যাবে সে তাঁকে। চোখের পানি মুছে রুমে এসে দেখলো অজনি ঠোঁট উল্টে কাঁদছে। অরিন অজনিকে কোলে নিয়ে চোখের পানিটা মুছে গালে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে সেও কাঁদতে লাগল।

_______________________

নীল তাঁর মায়ের হাঁত ধরে বসে নিরবে কেঁদে যাচ্ছে। শামুর মা নীলের মায়ের এক পাশে বসে আছেন, শামু উনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ হলো তাঁরা এসেছে। ফ্লাইটে করে আসায় খুব তারাতাড়ি এসে গেছে তাঁরা। এসেছে থেকে নীল চোখের পানি ঝরাচ্ছে। তাঁর মা ছাড়া কেউ নেই এই পৃথীবিতে। যদি উনার কিছু হয়ে যায় সে মরেই যাবে। নীলের এমন মেয়েলী কান্ড দেখে তাঁর মা বিরক্ত হলেন। শীর্ণ গলায় বললেন” নীল তুই মেয়েদের মতো কান্না করা শিখলি কবে থেকে। এবার থামবি?” থামবি কথাটা একটু ধমক দিয়ে বললেন তিনি। নীল চোখের পানিটা মুছে তাঁর মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে “একদিনের জন্য কোথায় গেলেই তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো, নিজের খেয়াল রাখতে পারোনা?” নীলের গাল ছুঁয়ে তাঁর মা মোলায়েম গলায় বললেন” আমার এতো বড় ছেলে থাকতে ঘরে একটা বউ নাই। বউ থাকলে তো আমার খেয়াল রাখতে পারতো।
_হুম তুমি মেয়ে দেখো আমি বিয়ে করবো। ” ছেলের কথায় মৃদু হাসলেন তিনি। মেয়ে তো উনি ঠিক করেই রাখছেন। ছেলে বিয়েতে রাজি হলেই বিয়ে দিয়ে দিবেন বলে বসে আছেন। নীল তাঁর মাকে উঠে বসালো। নীলের মা বললেন তিনি আজই বাসায় চলে যাবেন। নীল তাঁর মাকে বুঝাতে না পেরে ডক্টরের সাথে কথা বলতে যায়। নার্সকে জিজ্ঞেস করে ডক্টর নিলার কেবিন কোনটা জেনে নেয়। কেবিনে ঢুকেই নীল থমকে গেলো। টেবিলে বসে আছে তাঁর খুব চেনা একটি মানুষ। যে মানুষটাকে সে একসময় পাগলের মতো ভালোবাসার সত্ত্বেও দূরে ঠেলে দিয়েছিলো। কুকড়ানো চুল গুলা খুলে রাখা,চোখে আগের মতোই চশমা, গায়ে সাদা অ্যাপ্রোন পরা। খুব মনোযোগ দিয়ে কাগজপত্র দেখছে লুপা। নীল ইতস্তত হয়ে গেলো। লুপার সামনে যাওয়ার ইচ্ছে হলোনা। শামুকে বলল” মনে হয় ভুল কেবিনে চলে এসেছি চলো।” শামু নড়লো না সে খুব মনোযোগ দিয়ে লুপাকে দেখছে। তাঁর স্মরণ শক্তি খুব ভালো একবার কাউকে দেখলে সে তাঁকে মনে রেখে ফেলে। তাই লুপাকেও চিনতে তাঁর খুব একটা দেরি হলোনা। উত্তেজিত গলায় বলল” এটা লুপা না?”

একটা রিপোর্ট দেখছিলো লুপা। কারো মুখে এমন কথা শুনে চোখ তুলে চাইলো সে। নীল আর একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ৪৪০ ভোল্টের ঝাটকা খেল। কতো বছর পরে নীলকে দেখছে সে। মনে হচ্ছে কতো যোগ পরে দেখছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছেনা, সত্যি নীল এসেছে তো? অপলক দৃষ্টিতে লুপা তাকিয়ে থাকলো। তাঁর চোখে তৃষ্ণা,কষ্ট,অবাক সবকিছু মিশে আছে। এতোদিন পরে এভাবে হুট করে নীল তাঁর চোখের সামনে আসবে ভাবতেই পারেনি লুপা। ৩০-২৯ বছর বয়সে এসেও নীল সেই আগের মতোই আছে। ২৪-২৫ বছরের নীলের মতোই আকর্ষণীয়। সব আগের মতোই আছে শুধু তাঁর পাশে একটা মানুষ হয়ে গেছে। আচ্ছা এটা তাঁর বউ নয়তো? ভাবতেই লুপার কলিজাটা মুছড় দিয়ে উঠল। শামু নীলকে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে আসলো। লুপার তৃষ্ণার্ত চোখ এখনো নীলকে দেখে যাচ্ছে। এই পাষাণ নীল একদিন তাঁর কান্না দেখে বলেছিলো। যে মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলে সে কান্না করতে পারেনা এসব ন্যাকামি আমার সামনে করবে না। এই পাষাণ মানুষটা তাঁর থেকে দূরে থাকবে বলে নিজের বাসাটাও বদলে দিয়েছিলো। বেহায়ার মতো বার বার ভালোবাসা চাইতো বলে তাঁকে নির্লজ্জ বেহায়া বলে ডেকেছিলো। লুপার চোখ ছলছল হয়ে এলো তবে তা নীলের চোখে পড়লো না। নীল মুখ ঘুরিয়ে আছে। শামু বলল”

_চিনতে পেরেছো আমায় আমি শামু। ” লুপা না সূচক মাথা নাড়ায়। শামু বলে “ওই যে রেস্টুরেন্টে একদিন দেখা হয়েছিলো। মনে নেই?” লুপার মনে পড়লো সেদিনের কথা। জোরপূর্বক হাসি হেসে বলল” অহ মনে পড়েছে। বসুন না আপানারা।” শামু বসল নীলেকেও বসালো। এই ফাঁকে লুপা তাঁর ভিজে আসা চোখ মুছে নিলো। নীল ইতস্তত হয়ে বলল”
_আব,,,আসলে আমরা ডক্টর নিলার কাছে এসেছিলাম।
_হুম বলুন।
_উনি কই আমাদের উনাকে দরকার।” লুপা কী বলবে বুঝতে পারলো না। এখানে তাঁকে ডক্টর লুপা থেকে নিলা নামেই সবাই জানে। নিলা নামটা তাঁর নিজেরই রাখা। কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে সে লুপা না বলে নিলা বলে দেয়। এভাবেই আস্তে আস্তে সে নিলা নামে পরিচিত। নীলের একটা কল এলো ফোন বের করে কল কেটে দিয়ে ফোনটা টেবিলে রেখে বলল” আব,,,,ডক্টর নিলা কী আজ আসেন নি?” লুপা বলল” উনার বদলে আমি আছি। যা বলার আমাকেই বলুন।” নীল একটু নড়েচড়ে বসলো তাঁকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখানে তাঁর অস্বস্থি হচ্ছে। নীল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল”
_আমি আমার মাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাইছি। আপনি আসুন একটু দেখুন উনাকে নেওয়া যাবে কিনা।” লুপা মনে মনে হাসলো। প্রথমে তুমি তারপর তুই আবার তুমি এখন আবার আপনি। নীল উঠে যেতে লাগলো। যেন তাঁর এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে। একটাবারের জন্যেও লুপার দিকে চোখ তুলে তাকাল না। লুপা একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীল শামুর পিছু পিছু যেতে লাগলো। নীল আর শামু খুব কাছাকাছি হাঁটছে লুপা তাঁদের পিছু পিছু। নীল শামুকে এতো কাছাকাছি দেখে লুপার ভেতরটা দুমরেমুচড়ে যাচ্ছে। একটা ভুল, শুধুমাত্র একটা ভুলের কারণে আজ এতোদিন দিন ধরে পুড়ে আসছে সে। নীলকে ভুলতে পারেনি আজও। ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলোনা তাঁর আর নীলের মধ্যে। চোখাচোখি,খোঁচাখুঁচি আর কয়েকদিনের বন্ধুত্ব। এইটুকু সম্পর্কই তো ছিলো, এর বেশি কিছু না। তবুও সে পারেনা নীলকে ভুলে যেতে। তাঁর বাবা মা যখন তাকে বিয়ের কথা বলে তখন নীলের মায়ার অদৃশ্য সুতোর টানে সে এগুতে পারেনা। আর বার বার পরিবারের বিয়ের জন্য না বলাতে তাঁকে অনেক বকাও শুনতে হয়। বুক ছিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো লুপার। কেবিনে ঢুকে লুপা দেখলো কাল থেকে যাকে সে নিজেই সেবা করে যাচ্ছে উনার কাছে নিয়ে এসেছে নীল। তারমানে উনি নীলের মা? কখনো উনাকে দেখেনি তাই চিনতে পারেনি সে। নীলের মাকে লুপা বলল” কেমন লাগছে এখন?” উনি মৃদু হেসে বললেন “আমার ছেলে এসে গেছে রোগবালাই সব দৌড়ে পালিয়ে গেছে। ওঁরা আমার ছেলেকে ভয় পায়।” মায়ের কথা শুনে নীল কিঞ্চিৎ হাসলো। উনাকে চেক করে লুপা বলল” আজ যেতে পারেন আপনারা কিন্তু উনাকে বেশি মানুষিক চাপ নিতে দিবেন না।” নীলের মা হেসে বললেন” আর কোনোকিছু নিয়ে টেনশন করবো না, আমার ছেলের বউ আমায় টেনশন করতে দিবেইনা।” লুপা জোরপূর্বক হেসে বলল” এখন না গেলে হয়না? সকালে যান।” নীল বলল” না এখনি যেতে হবে।” নীল নিচের দিকে তাকিয়ে বলল কথাটা। লুপা নীলের দিকে তাকিয়ে বলল” রাত ১২টা বাজতে চলছে কাল যান।” নীল আগের মতোই থেকেই বলল”সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা আমরা যেতে পারবো।” লুপা শুকনো ঢোক গিলে কান্না আটকাতে চেষ্টা করলো। তারপর নীলের মাকে বলল” সময় মতো অষুধ খাবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন। আসছি আমি।” লুপা দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসলো। এখানে তাঁর শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। নীল তাহলে সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলছে? হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো নীলের সাথে আজ দেখা হয়ে গেলো। আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো তাঁর আশপাশ। কিন্তু কেন? কেন খারাপ লাগছে তাঁর? এমনটাতো হওয়ারই কথা। নীল তো তার এমন কেউ ছিলোনা যে নীল তাঁকে বিয়ে করবে?

নীল তাঁর মাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো হসপিটাল থেকে। নীলের মা ড্রাইভার কে ফোন দিয়ে গাড়ি নিয়ে আসতে বলেন, ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। শামু তাঁর মা এ নীলের মা পিছনে বসেছেন। নীল সামনে বসলো। নীলের মা নীলকে বললেন” নীল তোর বড় ফুপিকে একটা কল দিয়ে বল কাল সকাল যেন আমাদের বাসায় চলে আসে। তোর পাত্রী দেখাবো।” উনার কথা শুনে নীলের কপাল কুঁচকে গেলো। তাঁর মা কোনো রকম আবার শামুকে তাঁর জন্য পাত্রী করছেন নাতো? বিরক্ত হলো নীল। শামুকে বিয়ে করাটা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। শামুর কোনোকিছু তাঁর পছন্দের ভিতরে পরেনা। শামুর মুখে লজ্জার হাসি। ফর্সা চেহারায় লজ্জার আভা ফুটে লাল হয়ে গেছে। নীলের মা আবার বললেন” কী রে বললাম না ফোন দে?” আমাবস্যার অন্ধকার নেমে আছে নীলের মুখে। পকেটে হাত দিয়ে দেখলো ফোন পকেটে নাই। চট করে মনে পড়ে গেলো লুপার টেবিলের উপর ফোন রাখছিলো। নীল ড্রাইভারকে বলল” ড্রাইভার গাড়ি ঘুরাও আমি ফোন ফেলে আসছি।” ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে আবার হসপিটালের সামনে থামালো।

নীল গাড়ি থেকে নেমে লুপার কেবিনে গেলো। লুপা কেবিনে নাই টেবিলে থাকিয়ে দেখল যেভাবে ফোন রেখে গেছিলো ওভাবেই আছে। ফোন নিয়ে চলে আসতে গিয়েও থেমে গেলো নীল। কারো কান্নার শব্দ আসছে। নীল কান পেতে লক্ষ্য করলো শব্দটা কই থেকে আসছে। শব্দ অনুসরণ করে কেবিনের বারান্দায় গিয়ে থমকে গেলো নীল। লুপা হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে। শব্দ চেপে রাখতে চাইছে কিন্তু পারছেনা ভেতভেতর ফেটে যেন শব্দ বেরিয়ে আসছে। লুপার সামনে ছোট একটা টেবিলে নীলের ছবি রাখা। ছবিটা দেখে নীলের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। তারমানে লুপা তাকে আজও ভালোবাসে? শুকনো একটা ঢোক গিলে নিঃশব্দে চলে এলো নীল। লুপার জন্য তাঁদের সুন্দর পরিবারটা নষ্ট হয়েছে দেখে লুপার প্রতি তাঁর একটা রাগ জমে গেছিলো। ওই মূহুর্তে লুপাকে খুব খারাপ মনে হয়েছিলো তাঁর কাছে। একদিকে দিহানের কষ্ট অন্যদিকে তাঁদের পরিবারের আলাদা হওয়া দেখে সব কিছুর জন্য লুপাকে দোষী মনে হচ্ছিলো তাঁর কাছে। তাই সে দূরে চলে এসেছিলো লুপার থেকে। তবুও লুপার জন্য মাঝে মাঝে মনটা ছটফট করে। নীলের বুকটা চিনচিন ব্যথা করছে। লুপা কী এভাবে প্রতিদিন কাঁদে? নাকি আজ কাঁদছে? গাড়িতে উঠার সময় একবার পিছন ফিরে থাকালো নীল। কেন জানি মনে হচ্ছে খুব কাছের একটা জিনিস ফেলে যাচ্ছে সে।

__________________________

ভোরের চমৎকার আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়তেই। জগিংয়ে নামলো দিহান ও শাওন। বাতাসের স্নিগ্ধ ছোঁয়া গাছের পাতা ছুঁয়ে এসে গায়ে লাগছে। এ যেন হৃদয় ছোঁয়া ভালো লাগার অনুভূতি। অনেকক্ষণ জগিংয়ের পড়ে শাওন থমকে গেলো। দিহানকে বলল” দিহান দেখ, ওই মেয়েটা ওই আইসক্রিম না?” শাওনের কথায় দিহান তাকিয়ে দেখে এটা সেই পিচ্চি মেয়ে। সাদা একটা ফ্রক পড়া শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের উপর হাঁটছে, হাতে দুইটা বেলুন ধরে আছে। যেন বেলুন গুলা তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। সাদা রংয়ের পরিটাকে কোলে নেওয়ার খুব লোভ হলো দিহানের। শাওনকে বলল” চল একটু কথা বলে আসি।” শাওন আর দিহান গিয়ে অজনির সামনে দাঁড়ালো। অজনি তাঁদের দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। কিছু না বলে স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলো। দিহান অজনির সামনে বসলো মনে মনে ভয় লাগছে কাল যা বেজ্জতি হয়েছে আজ যেন না হয়। দিহান অজনিকে কোমল গলায় বলল” নাম কী তোমার?” শাওন দিহানের সামনে বসলো। অজনির হাতের বেলুনের সুতোয় টান দিয়ে নামিয়ে, হাতে বেলুন ধরে মিষ্টি করে বলল” এতো সকাল সকাল বেলুন পেলা কই? বাসা থেকে নিয়ে এসেছো?” অজনি তাঁর ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকলো। কিছুই বলছেনা। দিহান বলল” তুমি একা এসেছো এখানে?” দিহান শাওন একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে, অজনি কোনো উত্তর দিচ্ছেনা। শাওন কথা বলতে বলতে হঠাৎ টাস করে বেলুন ফাটিয়ে দিলো। জিভে কামড় দিয়ে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর দিকে তাকালো। অজনি সেদিনের মতো প্রথমে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে তারপর ভ্যা করে কেঁদে দিলো। দিহানের কলিজা ভয়ে লাফিয়ে উঠলো। অজনি চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে। এই মেয়েটা মনে হয়ে কান্না ছাড়া কিছুই পারেনা। পার্কের সবাই একে একে দৌড়ে এদিকে আসতেছে। শাওন চারিদিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল” দিহান পালায়ায়ায়ায়ায়া।” শাওন আর দিহান উঠে দিলো দৌড়। পিছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। দৌড়াতে দৌড়াতে শাওন বলল” আল্লাহ এবারের মতো ইজ্জত বাঁচাও। একটা ফকিরকে দুই টাকার দশটা নোট দান করবো। আমিন।”
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৩৮
#সুলতানা_সিমা

অজনির কান্নার বেগ বেড়েই চলছে। এভাবে একটা বাচ্চার কান্না দেখলে কে না ছুটে আসে। অরিন মানুষ টেলে এসে অজনিকে কোলে নিলো। এতো মানুষ জড়ো করেছে তাঁর মেয়ে। পুরো পার্কের মানুষ চলে এসেছে। অরিন অজনিকে কোলে নিতেই অজনি কান্না থামিয়ে দিলো, কিন্তু তাঁর ফোঁপানো বন্ধ হলোনা। অজনিকে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো অরিন। তারপর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে কোমল গলায় বলল” কাঁদো কেন তুমি? কী হইছে?” অজনি আবার কেঁদে দিলো। অরিন স্নেহ মাখা গলায় বলল” কী হইছে মাম্মাম কে বলো। না বললে বুঝবো কেমনে?
_আমার বেলুন ফাটিয়ে দিছে।
_কে তোমার বেলুন ফাটিয়ে দিছে? আর সেজন্য তুমি কান্না করছো কেন? তুমি মাম্মাম কে ডাক দিবা।
_তুমি তো বলেছো মানুষের সামনে কথা না বলতে। নয়তো সবাই পঁচা বলবে।” অরিন অবাক হলো। আজ থেকে দুয়েক মাস আগে অজনিকে নিয়ে হসপিটাল গেছিলো। রুগী দেখার সময় অজনি বকবক করছিল। তাই অরিন বলছিল বাইরের মানুষদের সামনে কথা বলনা, লোকে পঁচা বলবে। ব্যস। এই কথাটা এখনো তাঁর মনে আছে। অরিন অজনির কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বলল”

_তখন তুমি যেখানে ছিলে ওখানে অনেক পেশেন্ট ছিলো। তুমি কথা বললে তাঁরা বিরক্ত হতো,তাই চুপ থাকতে বলছিলাম। সবার সামনে তো চুপ থাকতে বলিনি।” অজনি ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকলো। অজনিকে কোলে নিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো অরিন। অজনির কর্মকান্ড গুলা তাঁকে খুব আনন্দ দেয়। জীবনের সব কষ্ট ভুলে যায় তাঁর এই ছোট পরিটার দিকে তাকিয়ে। এটা যে শুধু তাঁর কলিজা না। এটা তাঁর দিহানের অংশ। তাঁর ভালোবাসার স্বামীর ভালোবাসার ফসল।

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রেস্তোরাঁর সামনে এসে থাকলো দিহান আর শাওন। হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাচ্ছে দুজন। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে হো হো হেসে উঠে দিহান। এইটুকু মেয়ের ভয়ে তাঁরা দৌঁড়ানি খায়, সত্যিই এটা হাস্যকর ব্যাপার। শাওন অবাক হয়ে তাকালো দিহানের দিকে। কতোদিন পরে দিহানকে এভাবে হাসতে দেখলো। এই হাসির পেছনে কোনো কষ্ট লুকিয়ে নেই, শুধু সুখ ঝরে পরছে। শাওনের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। তাঁর কলিজার বন্ধুটা এভাবে খুশিতে হাসছে দেখে তাঁর নিজেরও খুশি লাগছে। ভিতরে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো দুজন। আজ একটা মিটিং আছে। ১০টার আগে তাঁদের পৌঁছাতে হবে। শাওন ড্রাইভ করছে আর দিহান সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। শাওন চোখ ফিরিয়ে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কিছুক্ষণ পরে আবার তাকালো। দিহানের চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে কানের পাশ ছোঁয়ে গেলো। শাওনের বুকটা ধুক করে উঠল। প্রতিদিন প্রতিরাত দিহানের কান্না দেখতে হয় তাঁকে। দিহানের কাছের বন্ধু হয়েও দিহানের জন্য কিছু করতে পারছেনা দেখে খারাপ লাগে তাঁর। ব্যথিত গলায় শাওন বললো”

_দোস্ত প্লিজ কাঁদবি না। দেখবি অরিন ফিরে আসবে।” চট করে মাথা তোলে চোখটা মুছে নিলো দিহান। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চেষ্টা করলো। শাওন বলল”
_দেখ এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি তোকে একা ফেলে চলে যাবো। বললাম তো ফিরে আসবে অরিন।” দিহান কান্নাজড়িত গলায় বলল ”
_সেটা তো এতো বছর ধরে বলে যাচ্ছিস তোরা। কই অরিন? আসেনা কেন ফিরে? “একটু থেমে চোখের পানিটা মুছে আবার বলল” আজ আমারও একটা বাচ্চা থাকতো। ফুটফুটে,মায়াবতী রাজকন্যা। যাকে দেখলে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। যাকে স্পর্শ করলে হৃদয়ের গভীরে গিয়ে সুখের দোলা লাগে। যার মুখ দেখলে পৃথীবির সব কষ্ট উড়ে যায়। মনটা নেচে উঠে অজানা সুখে। আচ্ছা শাওন, এই মেয়েটা কী আমার বাচ্চা হলে পারতো না। জানিস,এতোকিছুর পরেও না আমি এই বাচ্চা মেয়েটার উপর রাগ করতে পারিনা। ও যা করে সব কেন জানি আমার ভালো লাগে। কোলে নেওয়ার লোভ হয়।” দিহানের কথা শেষ হতেই শাওন গাড়ি থামিয়ে দিলো। তারপর মৃদুস্বরে বলল”

_কোলে নিবি?” শাওনের কথায় কপাল কুঁচকে তাকাল দিহান। শাওন আঙুল দিয়ে রাস্তার দিকে দেখালো। সেই ছোট এঞ্জেলটা একজন বৃদ্ধ লোকের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে ঝুলছে স্কুল ব্যাগ। কালো স্কার্ট আর সাদা শার্ট দিহানের চোখ জুড়িয়ে গেলো। এতো বেশি কিউট লাগছে ইচ্ছে করছে কোলে নিয়ে ছোট ছোট গালে চুমু এঁকে ভরিয়ে দিক। সাথে সাথে দিহানের সব কষ্ট যেন উড়ে গেলো। মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠল। কে বলবে মাত্রই কেঁদেছে সে। শাওন মৃদু হাসলো। দিহান শাওনকে বলল
_চল যাই। একটু কথা বলে আসি। এখনতো ওঁর সাথে কেউ আছে। ভ্যা ভ্যা করলেও দৌঁড়ানি খেতে হবে না।
_কিন্তু দিহান আমাদের মিটিংয়ের সময় চলে যাবে।
_তাহলে থাক তুই আমি যাচ্ছি।” দিহান গাড়ি থেকে নেমে গেলো। শাওন পিছন থেকে বলল” আরে দিহান মিটিংটা আমাদের জন্য ইম্পর্টেন্ট।
_আরে গোল্লায় যাক সব।” দিহান দৌড়ে চলে গেল। না পারতে শাওনও নেমে আসলো। দিহান অজনির সামনে এসে দাঁড়ালো ওঁরা মনে হয় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। দিহান রাস্তায় উঁকিঝুঁকি করছে, যেন সেও গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। অজনি শাওন আর দিহানকে দেখেই বলে উঠল” নানুভাই নানুভাই, সেদিন তুমি ওয়াসরুমে গেছিলা তখন এই লোকটা আমার আইসক্রিম খাইছে। [শাওনকে দেখিয়ে] আর সকালে এই লোকটা আমার বেলুন ফাটাইছে। ” অরিনের মামা কপাল কুঁচকে রাগি লুকে তাকালেন। শাওন দিহানের কানের কাছে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে বলল” দিহান মনে হয় হাতের লাঠি দিয়ে মাঝ রাস্তায় ফেলে পিঠাবে।” দিহান জোরপূর্বক হাসি হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বলল” আসলে বাচ্চাদের সব কথা বিশ্বাস করতে নাই।” উনি আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে রইলেন। দিহানের কিছুটা ভয় লাগলো। তবুও মনে কিছুটা সাহস জুগিয়ে বললো “আসলে বাচ্চাটা অনেক কিউট তো, তাই ওঁর সাথে খেলা করতে ইচ্ছে করে। এজন্যই বার বার ছুটে আসি। আপনি কিছু মনে,,,,।” দিহানের কথা কেড়ে নিয়ে শাওন বলল” আচ্ছা আংকেল এই বাচ্চাটার বাপ কী খাটাস?” শাওনের কথায় অরিনের মামার কপালের ভাঁজ বিলিন হয়ে গেলো। মুখটা গম্ভীর করে বললেন “ওঁর বাবা নেই।” দিহানের কলিজাটা মুছড় দিয়ে উঠল। বাবা নেই শব্দটা যেন ওর বুকে এসে সুচের মতো বিঁধলো। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলল” আংকেল আমি কী একবার কোলে নিতে পারি?” দিহানের কথা শেষ হতেই উনাদের গাড়ি চলে আসলো। অরিনের মামা গাড়িতে উঠে গেলেন। দিহানের কথা যেন উনি শোনেননি। দিহান গাড়ির গ্লাসের দিকে ঝুঁকে কাতর গলায় বলল” আংকেল প্লিজ আমাকে খারাপ ভাববেন না। আমি সত্যি বলছি,বাচ্চাটার প্রতি আমার দূবর্লতা কাজ করে তাই কোলে নিতে বলছি। আপনার বাসার এড্রেসটা দিবেন প্লিজ? আমি আপনাদের বাসায় না হয় একদিন ঘুরে আসবো।” অরিনের মামার কেন জানি খুব মায়া হলো। উনার বাসার এড্রেস দিয়ে বললেন” আমার বাসায় একদিন দাওয়াত রইলো। এখন যেতে হবে ওঁর স্কুল শুরু হয়ে যাবে।” উনারা চলে গেলেন। দিহানের মনটা খুশিতে নাগিন ডান্স দিচ্ছে। বাসার এড্রেস পেয়ে গেছে মানে সে প্রতিদিন একবার এই এঞ্জেল কে দেখবে,ছোঁবে,কোলে নিবে। ইস, ভাবলেই কেমন সুখ সুখ লাগে। ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠল দিহান। এই মূহুর্তে তাঁর থেকে সুখী মানুষ দুটি আছে বলে মনে হচ্ছেনা।

___________________

মাঝে মাঝে মন খারাপের কারণটা আমাদের জানা থাকে না। ভেতরটা হঠাৎ করে কেঁদে উঠে। কোনো কারণ ছাড়াই খুব কান্না পায়। চারপাশের সবকিছু বিরক্তিকর মনে হয়। প্রিয় জিনিসগুলাও অপ্রিয় লাগে। মন খারাপের কারণ খোঁজতে লাগলে মাথা ভনভন করে উঠে। কাঁদতে মন চায়। মনে হয় কাঁদলে ভেতরে শান্তি আসবে। নীল এখন এইরকম একটা সময় পার করছে। কাল রাত থেকে নীলের মনটা খারাপ হয়ে আছে। ভেতরটা বার বার কেঁদে উঠছে । খুব অশান্তি লাগছে তাঁর। সে জানেনা হঠাৎ করে কেন এমন লাগছে। ক্লান্ত শরীর এলিয়ে রেখেছে বিছানায়, তবুও সারারাতে ঘুম এসে উঁকি দেয়নি চোখে। বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াসরুমে গেলো নীল। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখলো তাঁর ফুপি বসে আছেন সোফায়। শামুর মা আর তাঁর মাও আছেন। সারারাত না ঘুমানোর কারণে নীলের চোখ লাল হয়ে আছে। নীলকে দেখে নীলের ফুপি বললেন”

_কী রে তোর চোখ এতো লাল কেন?” নীল কোন কথা বলল না। তাঁর ফুপির সামনে বসলো। চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে তাঁর মন খারাপ। নীলের ফুপি বললেন”
_মন খারাপ তোর?” নীল না সম্মতি মাথা নাড়াল। তারপর ভারি গলায় বলল” কেমন আছো? কখন এলে?”
_এইতো অঅনেকক্ষণ হলো।” নীলের ফুপিকে তাঁর মা ইশারা দিলেন । নীলের ফুপি ইশারায় হুম সম্মতি দিলেন। নীল বুঝলো কিছু শুধু দেখেই গেলো। নীলের ফুপি গলাটা একটু পরিষ্কার করে বললেন”
_শামু মেয়েটা কিন্তু অনেক মিষ্টি। আমরা শামুকে তোর জন্য পাত্রী হিসাবে পছন্দ করেছি। তুই কিন্তু না বলতে পারবি না।” নীল উনাদের কথায় একটুও অবাক হলোনা। সে আগে থেকেই আঁচ করেছিলো শামুকে তাঁর মা আবারও পাত্রী হিসাবে পছন্দ করেছেন।। একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে নিলো নীল। গম্ভীর গলায় বললো”
_ফুপি আমি এখন বিয়ে করবো না। মানে করবো, কিন্তু এখন না।
_তারমানে তুই আমাকে মিথ্যে বলেছিস?” ধারালো গলায় বললেন নীলের মা। নীল শান্ত গলায় বলল”
_আমি মিথ্যে বলেনি, কিন্তু আমাকে একটু সময় তো দিবে তাইনা? ” নীলের মা মুখটা অন্ধকার করে বসে থাকলেন উনার মুখে বিষন্নতার চাপ। নীলের কলিজাটা মুছড় দিয়ে উঠে। মায়ের মলিন মুখ দেখতে পারেনা সে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল”
_ওকে তোমরা যেটা ভালো মনে করো সেটা করো।
_তুই এভাবে বললে তো আমরা আগুতে পারিনা নীল। তুই ক্লিয়ারলি কিছু বল। “নীলের ফুপির কথায় নীল কিঞ্চিৎ রাগান্বিত স্বরে বলল ”
_আমি আর কী ক্লিয়ারলি বলবো। তোমরা তো সব ঠিক করে ফেলেছো তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন।” নীল রাগে ফ্লোরে তাকিয়ে ফুঁসতে লাগলো। শামুর মা এখানে না থাকলে আরও কিছু বলতো। কিন্তু উনার সামনে উনার মেয়ের এসব কথা বলা ঠিক হবেনা।” নীল তাঁর মাকে কিছু বলতে উনার দিকে তাকালো। তাঁর মা আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতেছেন। দৃশ্যটা নীলের বুকের গভীরে গিয়ে আঘাত করলো। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলল”
_ওকে, বিয়ে ঠিক করো আমি রাজি।” কথাটা বলে নীল উঠে চলে গেলো উপরে। তাঁর মাকে সে কষ্ট দিতে চায়না। মায়ের অবাধ্য ছেলে সে কখনোই ছিলোনা আর আগামীতেও হতে চায় না। কিন্তু তাঁর মন যে অন্য কোথাও আটকে আছে। সেটা কী ফিরিয়ে আনতে পারবে?

_________________________

জিহান বাসায় এসেছে প্রায় আধা ঘণ্টা মতোই হবে। কিন্তু এখনো লারার কোনো খোঁজ নেই। বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হলো জিহান। মনে মনে লারাকে বকতে বকতে তাঁকে খোঁজতে লাগলো। এই মেয়েটা একটা মাথা মোটা। তাঁকে না দেখলে যে জিহানের কিছু ভালো লাগেনা, এটা কী সে জানেনা? তাঁর বাবার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো তাঁরা তাহানকে নিয়ে খেলা করছে। তাহান হলো লারা আর জিহানের ছেলে। কিছুদিন আগে তাঁর চারবছর পূর্ণ হলো। এক সাথে থাকতে থাকতে লারাকে সে ভালোবেসে ফেলেছিলো। যখন শুনলো লারা সব করেছে লুপার কথায়,তখন লারাকে নিজের করে না নিয়ে থাকতে পারেনি। সারা বাসা খোঁজে না পেয়ে ছাদে গেলো জিহান। ছাদের এক পাশে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে লারা। জিহান ছাদে পা রাখতেই তীব্র রোদ এসে তাঁর গা ছোঁয়ে দিলো। ঘামে ভিজে শীতল শরীরে গরম এসে ভির করলো। মনে হচ্ছে আগুন তাঁর গা ঘেঁষে গেছে। জিহান লারার কাঁধে হাত দিলো। লারা তৎক্ষণাৎ চোখের পানি মুছে পিছন ফিরে তাকালো। রোদে তাঁর দুধে আলতা চামড়া লাল হয়ে গেছে। জিহান তাঁর বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে লারার বাম চোখের কোণের রয়ে যাওয়া জল মুছে দিয়ে বলল”

_এই রোদের মধ্যে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? চেহারার কী হাল হয়েছে। আসো ঘরে আসো।” জিহান লারার হাত ধরে টান দিলো লারা নড়লোনা। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। জিহান বললো”
_আচ্ছা তুমি কাঁদলে কী আমার খারাপ লাগেনা? রোজ রোজ যে এভাবে কাঁদো,আমার যে কষ্ট হয় বুঝনা?” লারা ডুকরে কেঁদে উঠল। জিহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল ”
_আপনি আরেকটু খোঁজ নিয়ে দেখুন না প্লিজ।
_আর কতো খোঁজ নেব লারা? ছয় বছর থেকে খোঁজ নিয়ে আসছি।
_আমার কষ্ট হয়,খুব কষ্ট হয় ওর জন্য। ওকে তো আমি নিজের বোন ভাবতাম। আমি জানি ও আমার উপর অভিমান করে আছে। ও ভাব্বে হয়তো আমি খুন করে ওকে ফাসিয়ে দিয়েছি। আমার না নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। আমি যদি ওকে পিস্তল না দিতাম দিহান ওকে সন্দেহ করতে পারতো না। ও প্রেগন্যান্ট ছিলো আমি তো জানতামই না। ওই অবস্থায় ও কেমনে কী করেছে ভাবলেই কলিজা শুকিয়ে যায়।
_লারা কান্না থামাও প্লিজ। প্রতিদিন কী সব শুরু করো বলোতো? আসো নিচে আসো আমার ক্ষিধে লাগছে।
_আপনারা খুব পাষাণ,আপনাদের কারো মন কাঁদেনা ওর জন্য।
_লারা কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য। কিন্তু কম চেষ্টা কী করেছি বলো? এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে ওকে খোঁজা হয়নি। আমি না হয় পেলাম না দিহান তো ওকে তন্নতন্ন করে খোঁজেছে। সে কী পেয়েছে তাঁকে বলো?” লারা স্থির হয়ে গেলো। কিন্তু তাঁর শরীর এখনো ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে। বাইরের কান্না থামালেও ভিতরের কান্না থামাতে পারছেনা। জিহান আর কথা আগালো না কোলে তোলে নিয়ে আসলো রুমে। লারা এখন জিহানের কথা শুনবেনা,তা জিহান জানে। অরিনকে খোঁজতে খোঁজতে জিহান ক্লান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পায়নি অরিনের খোঁজ। ওই যে বলেনা, হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খোঁজে পাওয়া যায় কিন্তু যে নিজে থেকে হারায় তাঁকে খোঁজে পাওয়া যায়না। কথাটা আসলেই সত্যি। অরিন তো নিজে থেকে হারিয়েছে, ওকে কেমনে পাবে তাইলে?

চলবে……..।
চলবে……।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here