ভালোবাসি প্রিয় পর্ব ৬+৭

#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৬
#সুলতানা_সিমা

_তুমিইইইইই?
_আপনিইইইইই? আপনি এখানে কি করছেন?
_আগে বল তুমি এখানে কেন? এখন বউয়ের অধিকার চাইতে আমার বাসা পর্যন্ত চলে এসেছো?
_আপনার বাসা মানে এটা আপনার বাসা?
_এই মেয়ে একদম ড্রামা করবে না। তোমাকে আমি হারে হারে চিনি। তুমি জেনে শুনেই এখানে এসেছো।

_কি হয়েছে?” পিছন থেকে লুপার গলা শুনে পিছন ঘুরে তাকালো দিহান। দিহান একটু সরায় দরজার ওপাশে দাঁড়ানো অরিনকে দেখতে পেল লুপা। অরিনকে দেখা মাত্রই দৌড়ে এসে অরিনকে জড়িয়ে ধরলো “দোস্ত তুই এসেছিস? জানিস আমার কতটা মন খারাপ হয়েছিল তুই আসবি না শুনে?” লুপার কথায় কিঞ্চিৎ হাসে অরিন। দিহান হা হয়ে লুপা আর অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। লুপা দিহানকে বলল “ভাইয়া বলেছিলাম না আমার একটা ফ্রেন্ড আসবে এটাই সে।” লুপার কথায় দিহান আবারও শকড খেল। তাহলে তো এই মেয়ে আগে থেকেই দিহানকে চিনত? লুপা অরিনকে ভেতরে নিয়ে আসলো। দিহান এখনো শকডের উপর আছে। এই মেয়েটা কোনো বড়সড় জাল পাতছে যার ফাঁদে তারা সবাই পড়বে। দিহানের মাথায় এখন একটাই বিষয় ঘুরছে। কি কারণে এই মেয়েটা তাকে বিয়ে করছে?

লুপা অরিনকে নিয়ে আসলো উপরে। দিশা, দিয়া,ইশি রেডি হচ্ছিলো। লুপা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো”
_হাই গাইজ শি ইজ মাই বেস্টফ্রেন্ড অরিন” লুপার কথায় সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে অরিনকে। অরিন গ্রিন কালার একটা ড্রেস পড়েছে। ড্রেসটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা একেবারে কম দামি কিন্তু নতুন। পায়ে দু’শটাকা দামের একটা জুতা। হাতে গলায় কানে কিছুই নেই। হাতে একটা শপিং ব্যাগ। মনে হয় লুপার জন্য কিছু আনছে। দিশা কিঞ্চিৎ হেসে বললো”
_ভালো আছ অরিন?
_ জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
_আমিও ভালো।
_বস এসে এখানে। তোমার কপালে রক্ত জমে আছে মনে হচ্ছে কি হয়েছে? [ইশি]
_মাথা ঘুরে পরে গেছিলাম।” সবার সাথে পরিচয় করিয়ে লুপা অরিনকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তার বড় আম্মু মেজো আম্মু ও তার আম্মু সবাই একটা রুমে সোফায় বসে ছিল। সাথে অনেক মহিলাও ছিলেন। লুপা অরিনকে নিয়ে সেখানে আসলো। ওরা এসে দাঁড়াতেই সবাই তাদের দিকে তাকালো। লুপা বললো”
_আম্মু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অরিন।
_ ভালো আছ অরিন?
_জ্বি খালা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ভালো তো?
পাশ থেকে একজন মহিলা জোরে হেসে উঠলেন। অরিন বোকা ভনে গেল। হঠাৎ করে এভাবে হাসার কারণ কি হতে পারে তার মাথায় আসেনা। হাসি থামিয়ে মহিলা বললেন”

_খালা বলে বেশির ভাগ বুয়ারা ডাকে তাই এই ডাক টা যে কারও মুখে শুনলে আমার তাকে বুয়া বুয়া লাগে।” দিহানের আম্মু উনাকে কিছু বলতে চান তার আগে লুপার আম্মু হাত চেপে ধরে ইশারায় বাঁধা দেন। ঝামেলা করে লাভ নেই এদের সাথে। দিহানের আম্মু লুপার আম্মুকে কানেকানে কি যেন বললেন। লুপার আম্মু দাঁড়িয়ে বললেন “আপনারা বসেন আমি একটু আসছি। লুপা তুই আমার সাথে আয়। অরিন তুমি একটু এখানে থাক মা লুপার সাথে আমার কথা আছে।” অরিন দাঁড়িয়ে থাকলো। লুপাকে নিয়ে তার আম্মু চলে গেলেন। অরিনকে দিহানের আম্মু বসতে বললেন অরিন বসলো না। টি-টেবিলের ওপর নাস্তার বাটি রাখা। মনে হয় উনাদের নাস্তা দেওয়া হইছিলো। মুরুব্বি টাইপ একজন মহিলা অরিনকে বললেন “এই মেয়ে এগুলা একটু কিচেনে রেখে আস তো।” দিহানের আম্মু ও তার বড়মা বাঁধা দিলেন। অরিন বললো “জ্বি না আন্টি। ঠিক আছে আমি রেখে আসতে পারবো।”

অরিন বাটির ট্রে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। এসে পড়লো মহা বিপদে। কিচেন কোন দিকে সে জানে না। অরিন চারিদিকে চোখ বুলালো। সব দিকে চোখ বুলিয়ে অরিন একটা জিনিস আবিষ্কার করলো। এখানে একটা মানুষও গরিব নাই। সেটা তাদের পোশাক দেখেই বুঝা যাচ্ছে। অরিন একবার নিজের জামার দিকে তাকালো। তারপর আবার সবার দিকে তাকালো। সবাই কতো দামি দামি জামা পড়েছে আর সে? ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটু এগুয় । কাকে জিজ্ঞেস করবে কিচেন কোন দিকে। নার্ভাস ফিল করছে সে।

_তুমি আসবা বলে শপিং করতে গেলা। আর এখন বলছ তুমি আসতে পারবা না?” এমন কথা কানে আসতেই পাশ ফিরে তাকাল অরিন। কেউ একজন দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। অরিন একটু এগিয়ে গিয়ে বললো “এক্সকিউজ মি”। দিহান পিছন ঘুরে তাকাল। অরিনকে দেখে সাথে সাথে ফোন টা কেটে দেয়। অরিন এসেছে থেকে টেনশনে তার জান বেরিয়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ ধরে সে অরিনেকে হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছে। অরিনের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে তার পাশে চেয়ারের ওপর রেখে অরিনের হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে একটু আড়ালে গেলো। অরিনকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো ” সত্যি করে বল এবাড়িতে আসার উদ্দেশ্য কি?কার লোক তুমি? কে পাঠিয়েছে তোমায়?” অরিন নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করছে। ছটফট করতে করতে বললো “ছাড়ুন আমায় নয়তো চিল্লিয়ে সবাইকে জড়ো করবো।” দিহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো “অনেক হুমকি দিয়েছ আমায়। আর না। কি ভাবো তুমি আমি বুঝিনা? তুমি যে অনেক বড় একটা প্ল্যান করে আছ আমাদের পরিবারকে বরবাদ করতে তা আমি বুঝে গেছি। বল কার হয়ে কাজ করছো?
_ছাড়ুন আমায় নয়তো সত্যি সত্যি চিল্লাব।
_চিল্লাও যত খুশি চিল্লাও। মান সম্মানের ভয় করে আমি আমার নিজের পরিবারকে বরবাদ করতে পারব না।
_ছেড়ে দিন প্লিজ হাতে খুব লাগছে বিশ্বাস করুন।
_ তোমার মতো স্বাংগাতিক মেয়েকে বিশ্বাস করতে বলছো?
_আমি মিথ্যে বলছি না।
দিহান অরিনের হাত আরও জোরে চেপে ধরলো। অরিন ব্যথায় “আহহহ” বলে আর্তনাদ করে উঠলো।
দিহান বললো ” এসব নাটক আমার সামনে করবা না। ভালই ভালই বল কার হয়ে তুমি কাজ করছ? আমার পরিবারের সাথে তোমার কিসের শত্রুতা?
_আগে ছাড়ুন তারপর বলছি।
_আমায় বোকা পাইছ? তোমায় ছেড়ে দেই আর তুমি দৌড়ে পালাও?
_আপনি তো বোকাই। বোকা না হলে এতো বড় ছেলের পেন্টের চেইন খোলা থাকে?” দিহান তৎক্ষনাৎ অরিনকে ছেড়ে দিয়ে দুহাত দিয়ে অণ্ডকোষ বরাবর চেপে ধরলো। অরিন ভোঁ মেরে দৌড়ে পালাল। দিহান হাত সরিয়ে তাকিয়ে দেখল তার চেইন লাগানোই আছে খোলা নয়। দিহান বিরবির করে বলল “এতো সহজে আমাকে বোকা বানিয়ে গেল? এর বদলা তো আমি নিবই নিব?

লুপার খুব গর্ব হচ্ছে নিজের মায়ের প্রতি। ওর মা ওকে ঢেকে এনে কত সুন্দর করে বলে গেলেন। অরিনকে তোর একটা ভালো ড্রেস পড়তে দে। সাথে একটু সাজিয়েও দিবি। মানুষজন কেউ কিছু বলে ফেললে পরে মেয়েটা লজ্জা পাবে।” লুপা অরিনকে খুঁজে পাচ্ছে না অরিন কই গেল কে জানে। অরিনকে খুঁজতে এসে তার চোখ আটকে গেল নীল পাঞ্জাবী পড়া শাওনের দিকে। কত সুন্দর লাগছে তাকে। লুপা এমন ভাবে শাওনের দিকে তাকাচ্ছে যেন চোখ দিয়ে শাওনকে গিলে খেতে পারলে খেয়ে ফেলত। শাওনের ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। লুপার ইচ্ছে করছে শাওনকে ধরে গিয়ে দু’য়েকটা চুমু দিয়ে আসতে। লুপা এক ধ্যানে শাওনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে কল্পনায় হারিয়ে গেছে। শাওনের সাথে নদীতে নৌকায় চড়ছে সে। শাওন বৈঠা বাইছে লুপা তার কোলে বসে সেও বৈঠা ধরে আছে। শাওন মাঝে মাঝে তার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিচ্ছে। সে চোখ বন্ধ করে তা উপভোগ করছে।

শাওনকে নিয়ে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিল লুপা হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে সে পড়ে যেতে লাগে কিন্তু পড়ে না তার আগেই তাকে ধরে ফেলে অরিন। অরিনের ধাক্কা খেয়ে হুস আসে তার। সামনে তাকিয়ে দেখল শাওন নাই চলে গেছে। অরিনকে বলল”

_কুত্তি সেই কখন থেকে তোকে খুঁজছি কই ছিলি তুই?
_এইতো একটু এদিকেই ছিলাম। তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি অথচ তুই শুনছিস না।
_খেয়াল করিনি চল আমার সাথে।
_কই?
_আগে আয়।” ” লুপা অরিনকে টেনে নিয়ে গেল তার রুমে। অরিনের হাতে একটা ড্রেস ও কিছু গহনা দিয়ে বলল। “এগুলা পরে আয় তারাতাড়ি একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে ।” অরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। সে অপমান বোধ করছে। চোখের কোনে জল জমে গেল। লুপা বুঝে গেল অরিন বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি তাই সে অরিনের হাতে হাত রেখে বলল “তুই কি ভাবছিস? এই যে এত এত মেয়ে এসেছে এখানে সবাই ওদের জামা পড়ে আছে? উহু। অর্ধেক মেয়েদের আমি গিফট করেছি।(মিথ্যে বলল) তুই না পড়লে কিন্তু আমি সত্যি কষ্ট পাব।” লুপা অরিনকে টেনে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পরে অরিন ওয়াসরুম থেকে বের হল। মেরুন রঙের লং ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে অরিনকে। লুপা অরিনকে সাজিয়ে দিল। সাজানোর পরে লুপা অরিনের দিকে হা করে তাকিয়ে তাকল। অরিনকে চিনাই যাচ্ছে না। অবাকের স্বরে লুপা বলল

“ওরে অরিন তোরে ত একদম পরি লাগছে রে। কি সুন্দর টানা টানা চোখ তোর। পাতলা ঠোঁট,সরু নাক,তোকে একদম নাইকাদের মত লাগছে।” অরিন বলল “তোর গ্যাস দেওয়া শেষ হলে আমায় ছাড় এবার।” লুপা অরিনকে নিয়ে বাইরে চলে আসলো। একটু পরেই অনুষ্ঠান শুরু হল। দিশা ইশি লুপাকে টেনে নিয়ে গেলো। অরিন একা একটা কোনে দাঁড়িয়ে থাকলো। দূর থেকে দেখতে লাগলো কতো সুন্দর একটা পরিবার। সবার মুখে খুশির ঝলমলে ঝিলিক। লুপা কেক কেটে সবার আগে তার বড় আব্বু ও বড় আম্মুকে খাওয়াল। তারপর একে একে তার পরিবারের সবাইকে। লুপা অরিনকে ডাক দিল অরিন মাথা নেড়ে বুঝাল সে এখানেই ঠিক আছে। সবাইকে কেক দেওয়া হল । লুপা অরিনের জন্য একপিচ কেক এনে বললো “নে হা কর।” অরিন ছোট এক বাইট খেল। তারপর লুপার দিকে বারিয়ে দিল লুপা এক বাইট নিল। লুপা কেক মুখে ঢুকাতেই শাওন বলল “আমার নজর লাগছে তোমার ডাইরিয়া হবে লুপা।” লুপা বমির মত করে বলল “ওয়াক”। নীল শাওনকে বললো ” দোস্ত তুই বললি ডাইরিয়া হবে এখন তো প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে” লুপা রাগে হাতের অবশিষ্ট কেক টুকু নীলের মুখে মাখিয়ে দিয়ে অরিনকে নিয়ে কটকট করে চলে গেল। নীলের চোখ মুখ সব কেক দিয়ে লেপে আছে কেক ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শাওন তারাতাড়ি ক্যামেরা অন করে ভিডিও করছে আর হাসছে। দিহান এসে নীলকে দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে “আহহহহহহ” শাওন আরও জোরে হেসে উঠে। দিহান বলে “এইটা কে?” বলেই জোরে সেও হেসে উঠে। তারপর নীলকে বলে “নীল তোকে একদম বিলাইর মত লাগছে ভাই বিশ্বাস কর।” শাওন হাসতে হাসতে বলল “কেক এর হলুদ অংশ টুকু দেখে মনে হচ্ছে কেউ এর মুখে টয়লেট সেরে দিছে।” নীল এবার ক্ষেপে গেলো। শাওনকে ধরে তার মুখ থেকে শাওনের মুখে মুখ লাগিয়ে ঘঁষে ঘঁষে কেক লাগাতে লাগলো। শাওন বার বার মুখ সরিয়ে নিচ্ছে নীল দুহাতে চেপে শাওনের মুখ এনে তার মুখ লাগিয়ে ঘঁষা দিচ্ছে। দিশা আর ইশি এসে জিজ্ঞেস করল “ভাইয়া কি হইছে?” দিহান বলল “নীল শাওনকে লিপকিস দিতে চাচ্ছে।” দিহানের কথা শুনে দিশা আর ইশির চোখ কপালে উঠে গেল। ইশি মুখ বাকিয়ে বলল “ছিঃ নীল ভাইয়া একজন গে?” কথাটা নীলের কানে যেতেই নীল থেমে গেল। রক্তিম চোখে ইশির দিকে তাকাল। দিশা বলল “নীল ভাইয়া তুমি শাওন ভাইয়াকে রেপ করতে চাইছ? ছিঃ।” দিশা কথাটা জোরে জোরে বলছিল সেটা তাদের বড়মার কান পর্যন্ত পৌছায়। উনি এসে বলেন “কিরে কে কাকে কি করতে চাইছে?” ইশি বলল ” আম্মু নীল ভাইয়া শাওন ভাইয়াকে রেপ করার চেষ্টা করছে।” উনি হতভম্ব হয়ে গেলেন। নীলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন নীল তার রক্তিম চোখে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করছে। উনি ইশিকে বললেন ”
_এসব কি বলছিস এসব হয় নাকি?
_আম্মু নীল ভাইয়া গে।
_গে কি?
শাওন আর দিহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। দিশা তার বড় মাকে নিয়ে চলে আসল। নীলকে সে কিছুতেই তার পরিবারের কাছে খারাপ করে তুলে ধরতে পারবে না। নীল যেমনই হোক নীলের সম্মান টা তার কাছে অনেক। সে যে সেই ছোট থেকে নীল কে ভালোবাসে। শুধু বলতে পারেনা নীলের সামনে দাঁড়িয়ে। কারন নীল তার ভাইয়ের বন্ধু।

কিছুক্ষণ পরে সব মেহমান রা একে একে চলে যায়। অরিন লুপার থেকে বিদায় নেয়। লুপা কিছুতেই তাকে ছাড়বে না। অনেক বুঝিয়ে লুপাকে মানাল। আজ না গেলে তার সৎ মা তাকে কেটে ফেলবে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসল। গেটের বাইরে পা রাখতেই তার কানে এল,,,,,,,,,,,,।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৭
#সুলতানা_সিমা

মাত্র দু’শ টাকার একটা বই নিয়ে এসে পেট পুড়ে খেয়েও গেলা আবার ফ্রিতে একটা জামাও পেলা।” এমন তীক্ষ্ণ কথা কানে আসতেই পা থেমে গেল অরিনের। পিছনে থাকিয়ে দেখল দিহান পকেটে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটায় অরিন শুধু অপমানবোধ করল না কষ্টও পেল অনেক। ভিতর ফেটে কান্না আসছে তার। সত্যিই তো মাত্র দু’শ টাকার একটা বই নিয়ে এসে দাওয়াত খেল আবার সাথে জামাও একটা নিল। কতবার করে লুপাকে বলছিল আমি নিবনা ড্রেস টা। লুপা রাগ কান্না করে দেয় তাই বাধ্য হয়ে সে ড্রেসটা নেয়। দিহান এগিয়ে এসে অরিনের সামনে দাঁড়াল। তারপর অরিনকে বলল”
_তোমাকে কেন জানি আমার কাছে এরকম ড্রেসেও ক্ষেত ক্ষেত লাগছে। আচ্ছা তুমি কি বস্তিতে থাক?
_,,,,,,,(নিশ্চুপ)
_যাক ভাল হয়েছে দিপা তোমাকে একটা ভাল ড্রেস পড়তে দিয়েছে। নয়তো অনুষ্ঠানের সুন্দর্যই নষ্ট হয়ে যেত। যা পড়ে আসছিলা।”
দিহানের সব কথা গিয়ে অরিনের কলিজায় বিষাক্ত তীরের মতো লাগছে। অরিন ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চেষ্টা করছে। দিহানের খুব মজা লাগছে অরিনের এমন বিষাদময় চেহারা দেখতে। তার প্রতিশোধ নিতে পারছে ভেবে আরও শান্তি লাগছে। অরিন নিজেকে অনেক কষ্ট করে সামলিয়ে বলল”

_কে বলেছে আমি ফ্রিতে ড্রেস পেয়েছি? এটা আমার শশুড় বাড়ি না? এই বাড়ির সব কিছুর উপর আমার হক আছে। এই ড্রেসটার উপরও আমার হক ছিল।
_হা হা হা তোমার মত একটা বস্তির মেয়েকে এই বাড়ির বউ বানাব আমরা?
_অলরেডি তো বানিয়েই দিছেন। এখন যদি আমি আপনার বাড়ির মানুষদের বলি, আপনি আমায় বিয়ে করে বউ বলে অশিকার করছেন, তাহলে কিন্তু,,,

_ওয়েট ওয়েট তুমি কি এখন আমাকে এই ভয় দেখাচ্ছ যে আমার বাড়ির সবাইকে এবিষয়ে বলে দিয়ে আমার ঘরে উঠবে? হা হা হা তাহলে শুনে নাও। তোমাকে আমার পরিবারের কেউই মানবে না। কজ তুমি কোনো দিকেই আমার যোগ্য নও। না তোমার ফ্যামিলি স্টাটাস না তোমার সুন্দর্য না তোমার চলাফেরা। কোনো কিছুই আমার ধারে কাছেও আসে না। তুমি জান আমি যাকে ভালবাসি তার ফ্যামিলি স্টাটাস কেমন? অনেক ভালো পরিবারের মেয়ে সে। তোমার মতো মিডেল ক্লাস না। আর সে দেখতেও অনেক সুন্দর সমাজে কিভাবে চলতে হয় সেটাও তার জানা আছে। তোমার মতো ফকিন্নি বেশে কোথাও যায়না।”

অরিনের চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলো না। গাল বেয়ে দু’ফুটা জল গড়িয়ে পরলো। মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। অরিনের কান্না দেখে দিহানের বুকের ভেতর মুচড় দিয়ে উঠে। অরিনের কান্না দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন? সে তো এটাই চেয়েছিল। অরিনকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই তো এতটা কথা বলল। অরিন কষ্ট পেয়েছে তাহলে সে কেন খুশি নয়? অরিন চোখের পানিটা মুছে চলে যেতে লাগে। দু এক কদম গিয়ে থেমে যায়। পিছন ঘুরে দিহানকে বলে ”

_তিনটা জিনিস কখনো ধরে রাখা যায়না। টাকা,সুন্দর্য,সম্মান। এই তিনটা জিনিস তুচ্ছ কারনেও হারিয়ে যায়। আজ আছে তো কাল নেই। তাই অহংকার করবেন না। অহংকার সৃষ্টিকর্তার চাদর। উনার চাদর নিয়ে টানাটানি করলে উনি বরদাশ করেননা সব পতন করে দেন।”

কথাগুলা বলেই অরিন চলে যেতে গিয়ে আবারও থেমে যায়। তবে এবার চোখগুলা মারবেলের মতো করে বড় বড় করে থামছে। তৎক্ষনাৎ পিছন ঘুরে তাকাল দিহান এখনো দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। অরিন বলল
_আপনি দেখছি সত্যি সত্যি বোকা। পেন্টের চেইন খোলা কেন?” দিহান রেগে গেল। এই মেয়েটা পেয়েছে কি সব সময় শুধু এই কথা বলে তাকে বোকা বানাতে চায়। রাগে নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো ”
_হ্যা খুলে রাখছি তুমি দেখবা বলে।
_ছিঃ কি জঘন্য কথাবার্তা বলেন আপনি। চেইন লাগান। না জানি কার কার সামনে এভাবে ঘুরে বেড়াইছেন।
_তুমি একটা সেই লেবেলের স্বাংগাতিক মেয়ে তোমাকে আমি হারে হারে চিনি। তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে কর তাইনা? তাহলে তোমার থেকে দ্বীগুন চালাক আমি। এসব বলে বোকা বানাতে পারবা না আর।
_আপনি চালাক। আপনার দাদা চালাক। দাদার দাদাও চালাক। এবার প্লিজ চেইন টা লাগান।
_বললাম না খুলে রাখছি। আমি ইচ্ছে করে এভাবে রাখছি। আমার শখ লাগে খুলে রাখতে তাই রাখছি। তাতে তোমার কিছু আসে যায়?

অরিন ফোনটা বের করে বলল ” আমি কিন্তু আপনার ছবি তুলে নেটে ছেড়ে দিব” দিহান দু পা ফাক করে,দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলল তুল না তুল আমি ভয় পাই নাকি?” অরিন একটা ছবি তুলল। তারপর চলে গেল। দিহান পিছন থেকে চেচিয়ে বলল “আরে যাও যাও তোমার মত মেয়েকে আমার চিনা আছে। একবার ধোকা দিছ এটাই অনেক। দিহান চৌধুরীকে বার বার ধোকা দেওয়া সহজ কথা নয়।”

দিহান রুমে চলে আসল। রুমে আসতেই তন্দ্রার কল এল। তন্দ্রার সাথে কথা বলে বলে জামা চেঞ্জ করে খাটে শুয়ে পরল। সে খেয়ালই করেনি যে সত্যি সত্যি তার চেইন খুলা ছিল।

দিশা, ইশি, শাওন,নীল,লুপা ছাদে বসে গল্প করছে। রুহান আর দিয়াও ছিল ওরা চলে গেছে একটু আগে। এখানে এই পাচঁটা মানুষের মধ্যে কেউই ভেতর থেকে সুখি নয়। সবারই ভেতরে ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রণা। নীল লুপাকে,লুপা শাওনকে,শাওন দিশাকে,দিশা নীলকে ভালোবাসে।

এরা কেউ জানেনা তারা যাকে ভালোবাসে সে মানুষটা কাকে ভালোবাসে। শুধু ইশি জানে সে যে মানুষটাকে ভালোবাসে সেই মানুষটা কাকে ভালোবাসে। কারণ ইশি যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ নয়। তারই আপন চাচাতো ভাই দিহান। সেই ছোট্ট থেকে ভালোবাসে দিহানকে শুধু মুখ ফুটে বলার সাহস পায়নি কারন দিহান তাকে সবসময় বোনের চোখে দেখেছে। দিহান আর তন্দ্রার সম্পর্ক যখন সবাই মেনে নেয়নি তখন দিহান এসে দিশা আর ইশির হেল্প চেয়েছিল। নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ের ঘটকালি নিজে করা কতটা বেদনাদায়ক সেটা সে তখন বুঝেছিল।

সবাই চুপচাপ বসে ছিল। সবার নিরবতা ভেঙে লুপা বলল “শাওন ভাইয়া আমার জন্মদিন উপলক্ষে একটা গান গেয়ে শুনান না প্লিজ।” শাওন কিছু বলার আগেই নীল বলল “আমি শুনাচ্ছি”।
লুপা বলল “আমার না হার্টঅ্যাটাক করার কোনো শখ নেই। আপনি চুপচাপ বসে থাকুন। শাওন ভাইয়া প্লিজ একটা গান গান্না প্লিজ।
_ওকে গাইব তবে আমার সাথে যে কাউকে গাইতে হবে।
_আমি আছি আমি আছি চিন্তা করিস না। [নীল]
_আপনাকে না আমি নিষেধ করছি তারপরও আপনি বেহায়ার মত গাইতে চান কেন?
_তুমিই বা বেহায়ার মতো বারবার নিষেধ করেছো কেন?
_কারণ আপনার কাউকা গান শুনে আমি অজ্ঞান হতে চাইনা।
_লুপা চুপ কর তুই। নীল ভাইয়া তুমিও গাও ওর কথা কানে নিওনা।[দিশা]
_ওরে দিশা উম্মম্মমা।(নীল ফ্লাইং কিস দিল। দিশা লজ্জায় লাল হয়ে গেল)

_ওকে ওকে স্টার্ট কর। [দিশা]
_ওয়েট আগে দিহান আসুক। আমি দিহানকে কল দিচ্ছি।”ইশি ফোন হাতে নিয়ে দিহানের নাম্বারে ডায়েল করল। দিহানের নাম্বার ওয়েটিং দেখাচ্ছে। ইশি রাগে নাক ফুলিয়ে বলল ” ফালতু একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে আমাদের দিহানও ফালতু হয়ে যাচ্ছে। এখানে আমরা সবাই এখানে আছি আর ও ওর ন্যাকা জিএফয়ের জন্য এসবের ধারে কাছেও আসছেনা।
_একটা ভালো মেয়ে পেতাম তাহলে ভাইয়াকে জোর করে ধরিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতাম। এই ন্যাকা তন্দ্রাকে আমার মোটেও ভালো লাগেনা। [দিশা]
_আপু ওই যে আমার ফ্রেন্ড অরিন আছে না? ও কিন্তু খুব ভালো মেয়ে। ওকে নিয়ে আসি।
_দূর! পাগল নাকি? একদম ক্ষেত একটা মেয়ে। তারপর অতটা সুন্দরও না।ভাইয়ার সাথে একদম মানাবে না। আমাদের বাড়িতে এই প্রথম আসল। কিভাবে এসেছে দেখছিস? আমাদের পরিবারে এমন মেয়েকে বউ করে আনলে লোকে কি বলবে? এই মেয়েটাকে নিয়ে ভাইয়া সমাজে চলবে কি করে?[দিশা]”

“দিশার কথা শুনে লুপার মুখ কালো হয়ে যায়। অরিনকে নিয়ে এরকম কথা শুনতে তার খারাপ লাগছে। লুপার গোমড়া মুখ দেখে নীলের খারাপ লাগলো তাই সে দিশাকে বলল”

_দিশা কাউকে নিয়ে এভাবে কিছু বলা ঠিক না। হ্যা বাড়ির বউ দেখতে অসুন্দর হলে লোকে নানান কথা বলে। কিন্তু বাড়িতে যখন একটা খারাপ বউয়ের কারণে অশান্তি নেমে আসে তখন কিন্তু সমাজ সেই অশান্তির ভাগ নিতে এগিয়ে আসবে না। আর রইল ক্ষেত কথাটা। আমি দেখেছি মেয়েটাকে। মেয়েটা মোটেও ক্ষেত নয় শুধু গায়ের রংটা একটু চাপা। আর টাকা না হলে কিন্তু তোমাকে আমাকে সবাইকেই ক্ষেত লাগবে। কারন মানুষের সুন্দর্য আর স্মার্টতা ফুটিয়ে তুলে একমাত্র জামা কাপড় আর কিছুই না। আরেকটা জিনিস আছে সেটা হল মানুষের সুন্দর ব্যবহার। তুমি যতই সুন্দর হও তোমার ব্যবহার ভাল না থাকলে তুমি কারও কাছে মনের মত সুন্দর নও।

নীলের কথা শুনে দিশা মাথা নিচু করে বসে থাকে। নীল আর বসে থাকেনা উঠে চলে যায় সাথে শাওন ও উঠে যায়। নীল ও শাওনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে দিশা।

চলবে….।
চলবে….।
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here