ভালোবাসি বলে দাও পর্ব -০৮+৯

#ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat

8.

সেদিন বাড়ি ফিরে বাবার গলা ধরে অনেক সত্য মিথ্যার কান্না কেঁদেছিলাম আমি, কারন আমি কোনভাবেই চাই না এভাবে হঠকারিতায় নেওয়া একটা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমার বিয়েটা বাবা অন্য কারোর সাথে দিয়ে দিক!
সত্যি বলতে আমার মন কি চাই সেটা কি আমি নিজেই জানি? জানি না! জানলে হয়তো এতো সম্পর্কের জটিলতা আর এতো দ্বিধাবোধ জন্মাতো না কোনভাবেই।
তারপর কয়েকটা দিন কেটে গেল অনায়াশেই। আরিশ ভাইয়ার কঠিন-তরল এর মুড সুয়িং এ আমাকে নাজেহাল হতে হলো। আর আসন্ন এইচএসসি এক্সামের ঠেলায় ওনার আমার ওপর নজরদারি বেড়ে গেল। বেশ কয়েকদিন হলো ফোন থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ওনাকে কল করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ টুকু আছে আর তাছাড়া এই ফোনটাও বর্তমানে পুরোনোটার মতোই অচল।
মাঝে মাঝে ওনার প্রতি রাগটাও তীব্র হয় কিন্তু পরে মনে হয় উনি যা করছেন আমার ভালোর জন্যই।

এভাবেই সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল আরিশ ভাইয়ার বাসায় গিয়ে। আমি বাবা মা সহ সবাইকে ফুপি কাল ফোন করে দাওয়াত দিয়েছেন ফুপার কোম্পানির সাফল্যের জন্য। অনেকখন ফুপির বাসায় এসে সানাকে কম কম পাত্তা দিয়ে ফুপির পিছনে আঠার মতো চিপকে আছি।
আমার আর ফুপির মাঝে এমন মা মেয়ের মতো সম্পর্ক কবে হয়ে গেল আমি সত্যিই জানি না আর কখনো জানতেও চাই না। তবে এ বাসায় এসে সকাল থেকে আরিশ ভাইয়াকে দেখিনি একটিবারের জন্যও। তিনি কি বাসায় নেই?

চিকেনটা কষা করে কড়াই থেকে দু পিস চিকেন ফুপি আমাকে তুলে দিয়েছে। আমি চিকেনের টুকরো মুখে পুরে ফুপিকে কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলাম,
‘তা ফুপি, আমার টিচারকে আজ বাসায় দেখছিনা উনি কই? ‘

ফুপি চিকেনে পরিমান মতো জল দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলল,
‘আর বলিস না, সেই কোন সকালে বেরিয়েছে ফারিনের সাথে। এখনো ফিরছে না। মেয়েটা জোর করে ওকে নিয়ে বেরিয়েছে নয়তো আরিশের শরীরটা আজ ভালো নেই, ওর যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না, যাবে না বলে কিন্তু কিন্তু করছিল। ‘

আমি হাত থেকে বাটিটা শব্দ করে রাখলাম। রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘তোমার ছেলে শুধু আমাকেই রাগ দেখাতে পারে আর আমাকেই ধমক দিতে পারে। ফারিন আপুর বেলায় সাত খু/ন মাফ। কই উনি তো কখনো আপুকে বকা ঝকা দেন না। ‘

ফুপি আমার কথা শুনে হাসলো, ফুপির আমার কথাতে হাসি পেলেও আমার হাসি পাচ্ছে না, কেন জানি না একটু একটু কান্না পাচ্ছে।

সানা পিছন থেকে কথায় ফোড়ন কাটতেই নিজেকে সংযত করলাম।
‘ভাইয়ার সাথে ফারিন আপুর বিয়ে হলে না জানি ভাইয়া আপুকে কিভাবে সহ্য করবে। ‘

আমার রাগ হলো ভীষন। রেগে তিরতির করে বললাম,

‘ তখন বউ পেয়ে তো দুনিয়া ভুলে যাবেন। সব পুরুষরই এক। যেমন আমার টুইটুই ফুপা আমার ফুপিকে ছাড়া কিছু চেনে না তেমন। উনিও তখন ফারিন আপুকে পেলে আর কাওকে চিনবেন না। ‘

ফুপি আমার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললেন,
‘ফারিনের সাথেই যে আরিশের বিয়ে হবে এমনটা কোন কথা আছে? যা হবার পরে দেখা যাবে। ‘

আমি মুখ ভাঙচি দিয়ে বললাম,
‘তোমার ছেলের জন্য ওরকমই একজনের দরকার আছে ফুপি, খালি আমার ওপর অত্যাচার করে। হিটলার একটা।’

কথাটা বলে চলে যেতে নিলে সানা পিছন পিছন এলো। দুজনে মিলে সোফায় বসে ফারিন আপুকে নিয়ে গজগজ করছি ঠিক সেই মুহূর্তে ওনারা এলেন। আরিশ ভাইয়ার চোখ মুখ লাল ভীষন রকম তবে তা জ্বর নাকি রাগে বোঝা দায়। ফারিন আপুকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে। ওনার মাথায় একটা বিরাট বেলি ফুলের মালা, হাতেও বেলি ফুলের চুড়ি। ওনাকে দেখতে সুন্দর লাগছে ভীষন। নারীর সৌন্দর্য যে পুরুষকে আকৃষ্ট করতেই যথেষ্ট তা বলতে দ্বিধা নেই। উনি এসে সানার পাশে বসলেন, ওনার আর আরিশ ভাইয়ার গল্প করতে লাগলেন যে এই করেছেন ওই করেছেন,ওখানে গিয়েছেন এসব। আরিশ ভাইয়া নাকি এসব নিজে হাতে ওনাকে মালাটা পরিয়ে দিয়েছেন। ফারিন আপু সানার হাতে একটা বেলি ফুলের মালা দিয়ে বললেন,
‘নে এটা তোর। ‘

সানা আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
‘আরুরটা কই ফারিন আপু? ‘

ফারিন আপুর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার জন্য কিছু আনেননি। নিজেকে বারবার ওনার সামনে অপমানিত হতে দেখে আমার ভালো লাগে না মোটেও, ওনার কিছু বলার আগেই আমি নম্র ভাবে বলে উঠলাম,
‘বেলিফুল আমার ভালো লাগে না সানা। ‘

কথাটা বলে উঠে গেলাম সেখান থেকে। সানা আমার কথাতে ভারী অবাক হলো। কাঠগোলাপের পাশাপাশি গোলাপ আর বেলি দুটোই আমার প্রিয়। আমার বাসার বাগানে সেগুলোকে আমি কতো যত্ন করি তা বোধহয় আমার চোদ্দ গোষ্ঠীর সবাই জানে তবে মাঝে মাঝে কারোর কাছে তা অজানা থাকাই ভালো।
আরিশ ভাইয়া পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছেন আর সবটা নিরবে দেখছেন। আমি ওনার দিকে একবার তাকালাম। ওনার চোখ মুখের করুন অবস্থা দেখে খারাপ লাগলো বেশ। সেখান থেকে উঠে যাওয়ার আগে বলে এলাম,
‘আপনার জ্বরটা বোধহয় বেড়েছে। ওষুধ খেয়ে নিন। আর বেশি শরীর খারাপ করলে আজকে পড়াতে আসার দরকার নেই। সামনেই তো ফাইনাল এক্সাম,আমার সেল্ফ স্টাডির দরকার।’

কথাটা বলে আমি সেখান থেকে চলে এলাম, ফারিন আপুর গলা দূর থেকে শুনতে পেলাম, পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলাম তিনি আরিশ ভাইয়ার হাতটা ধরে টেনে টেনে সোফায় বসিয়ে ওনার কপালে হাত দিয়ে জ্বর চেক করছেন। আমি ঘরে চলে এলাম। তাদের দুনিয়াদারি দেখা ছাড়াও এই পৃথিবীতে আমার জন্য অনেক কাজ আছে আর আমার বোধহয় সেগুলো নিয়েই বেশি ভাবা উচিত!

/

অনেক অনেক রান্নার আয়োজনে ফুপি হাঁপিয়ে পড়েছে প্রায়। আম্মু হাতে হাতে অনেক সাহায্য করেছ আর আমি সারাটা সময় ঘরেই বসে ছিলাম তার একটাই কারন ফারিন আপু। টেবিলে সবাই বসে আছে, আরিশ ভাইয়া ছাড়া, তিনি তার ঘরে ঘুমাচ্ছেন। ফারিন আপুর কথানুযায়ী তিনি ভাইয়াকে জ্বরের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছেন। কোন কারণবশত আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না, সবকিছু নিয়ে বিতৃষ্ণা সহ এক চাপা কষ্ট অনুভব করছি বারবার। কথায় কথায় বাবা বলে উঠলেন,
‘ আরিশের তো এখন ইন্টারশিপ চলছে তো, এরপর কি দেশের বাইরে গিয়ে হায়ার স্টাডি করবে নাকি এখানেই বিয়ে করে ওয়েল সেটেল্ড হবে? ‘

কথাটা শোনামাত্রই আপনা আপনিই আমার চোখ ফারিন আপুর দিকে ঘুরে গেল, উনি বেশ একটা লজ্জা লজ্জা ভাব নিচ্ছেন যেন আজকেই তাদের বিয়ের পাকা কথা। ওনার এমন বেহায়াপনা দেখে আমি দৃষ্টি সরিয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম।
ফুপি কথার মাঝে বলে উঠল,
‘ সত্যি বলতে আমার ছেলে কি চাই তা ছেলের বাপকে জিজ্ঞাসা না করাই ভালো, সে তার অফিস নিয়ে ব্যাস্ত, আমার সাথে কথা বলার সময় অবধি পান না তিনি। ‘

কথাটা শুনে সবাই চাপা হাসি হাসলো, ফুপি আর ফুপা এখনো আগের মতোই রয়েছেন, একদম প্রানবন্ত আর মন খুলে কথা বলেন। আর ফুপা বেশ রসিক মানুষ।

ফুপা বলে উঠলো,
‘আমার ছেলে কি চাই আমি জানি না ঠিকই কিন্তু সে হয়তো মনে মনে কাওকে পছন্দও করে রাখতে পারে। পরে হয়তো সময় হলে বলবে। ‘

কথাটা শুনতেই ফারিন আপু বেশ লজ্জা পেয়ে না খেয়ে উঠে গেলেন যেন আরিশ ভাইয়া তাকে সবার সামনে ওনার প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশ করেছেন। আমি ওনার এমন ব্যাবহারে অবাক হলাম সাথে এখানে উপস্থিত সবাই। ফারিন আপু যেতেই আম্মু ধীর গতিতে বললেন,
‘আমি যদি খুব ভুল না হয় ফারিন আরিশকে পছন্দ করে, যতোই হোক দুজনে সমবয়সী প্রায়।’

আম্মুর এমন কথাতে বাবা ধমক দিয়ে বললেন,
‘ আহ আফসানা, ছোটদের সামনে এসব কি! ‘

বাবার এমন কথাতে সবাই চুপ হয়ে গেল, ফারিন আপুকে বোধহয় আমি সহ আর সবাই ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি। ফুপি কথা ঘোরাতে বলল,
‘ আমি কিন্তু আমার আরুর বিয়ে দেবো এক রাজপুত্রের সাথে যে আমার আরুকে অনেক ভালোবাসে। ‘

‘ভালোবাসে’ আর ‘ ভালোবাসবে’ কথা দুটোর মধ্যে আকাশ পাতাল অফাত। ফুপি যেভাবে বললেন তাতে মনে হলো কেও আমাকে ভীষনরকম ভালোবাসে। হয়তো তারে আমি চোখে দেখিনি অথবা হয়তো সে আমার খুব কাছেই আছে। সত্যিই কি আমাকেও কেও ভালোবাসবে এমন ভাবে?
তবে এই ভাবনা গুলো আমার কল্পনাতীত তাই কখনো ভাবিনি আগে।

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘ দূর ফুপি কি যে বলোনা। আমি তো বিয়েই করবোনা। আমি তোমাদের সাথেই থাকবো সবসময়। ‘

ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
‘চিন্তা নেই তোকে আমি আমার সাথেই রেখে দেবো আমার মেয়ে করে। সে তুই চাস আর না চাস। ‘

আমি কথার তৎপরতা না বুঝেই ফুপির দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘সত্যি তো! আমি কিন্তু তোমার সাথেই থাকবো। ‘

ফুপি হেসে বললেন,
‘তিন সত্যি! ‘

/

কিছুখন আগে বাসায় এলাম, এখন রাত আটটা বাজে প্রায়, আরিশ ভাইয়ার জ্বর বিশেষ কিছু কমেনি। আসার আগে ওনার সাথে আমার আর কথা হয়নি। বইগুলো চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়াশোনার এক বিরাট পরিবেশ গড়ে তুলেছি কিন্তু পড়াশোনা নামের পাখিটা বারবার ফাকি দিয়ে পালাচ্ছে, সহজে তা নাগালে আসছে না। ফোনটার দিকে তাকালাম আমি, হঠাৎ কি মনে হতেই আমি গ্যালারি চেক করলাম, বার করলাম এই ফোনের সর্বপ্রথম ফটো। ছবিটার আর একটা কপি করে রেখেছি আমি অন্য এক ফোল্ডারে, যদি কোনভাবে এটা ডিলিট হয়ে যায় তো অন্যটা থেকে যাবে।
ওনার সাথে আমার আর কোন ছবি নেই তার সাথে এটাই আমার প্রথম ছবি। উনি কি প্রানবন্ত হয়ে হাসছেন আর আমি গোমরামুখী। ছবিটা এখন দেখে অফশোষ হয় ভীষন, ছবিটা দেখি আর বুঝি যে গোমরামুখে আমাকে মানায় না ঠিক। মনে হয় ‘ইশ সেদিন যদি একটু হেসে ছবিটা তুলতাম! ‘

আমাদের দুজনের বিপরীত প্রতিচ্ছবি ছবিটাতে ললফুটে উঠেছে। ফটোটা বেশ কিছুখন ধরে জুম করে তো কখনো জুম আউট করে দেখছি। তখনই দরজার ধাক্কার আওয়াজে চমকে উঠলাম আমি। দ্রুত ফোন বন্ধ করে দরজা খুলতেই দেখলাম আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। আমি আম্মুকে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
“বাবা কি ডাকছে আমাকে? ‘

আম্মু মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘আরিশ এসেছে। ছেলেটার জ্বর কমেনি। একদম রাগাবী না এমনিতেই অসুস্থ। আমি ওকে আসতে বলছি। ‘

আম্মু চলে যেতে নিলেই আমি প্রশ্ন করলাম,
‘উনি কি এই এতো রাতে জ্বর অবস্থায় আমাকে পড়াতে এসেছেন? ‘

আম্মু আমার কথা নাচক করে বললেন,
‘ কি করতে এসেছে জানি না, তোকে জানাতে বলল কথাটা। তোর বাবা ওকে এখন বকাবকি করছে এই জ্বর নিয়ে আসার জন্য। ‘

কথাটা বলে আম্মু চলে গেল আর তার সাথে ফেলে গেল আমার কপালে এই সূক্ষ চিন্তার ভাজ।

খাটের ওপর ছড়ানোছিটানো বই গুলো অল্পবিস্তর গুছিয়ে রাখতে রাখতেই উনি এলেন। আমি ওড়নাটা ঠিক করে বললাম,
‘আপনার তো শরীর খারাপ আপনি আসতে গেলেন কেন? ‘

ওনার হাতে একটা ছোট্ট প্লাস্টিক। উনি বরাবরের মতো আমার কথার কোন উত্তর দিলেন না সোজা আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন আর বললেন,
‘হাত দাও।’

ওনার জ্বর এর মাঝে বলা আড়ষ্ট কথাগুলো আমার শুনতেও কষ্ট হচ্ছে। ওনাকে কোনমতেই রাগাবো না আমি। ওনার সামনে হাত বাড়িয়ে দিতেই উনি প্যাকেট থেকে বেলি ফুলের একটা আধা চ্যাপটানো মালা আমার হাতে পরিয়ে দিলেন, ফুলগুলোর অবস্থা দেখে আমার স্পষ্ট ধারনা তৈরি হলো যে তিনি এগুলো সদ্য কিনে আনেননি, সকালে কিনেছেন। আমি লক্ষ করলাম ওনার শরীর মৃদু কাঁপছে। উনি কাঁপা কাঁপা হাতে আমার হাতটা ধরলেন,ওনার হাতটা গরম, উনি হাতটা ধরে মালাটা আমার হাতে পরিয়ে দিলেন, আমার বুকের ভিতর এক অজানা বেদনার মোচড় দিয়ে উঠলো, আমি ওনার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি। ওনাকে দেখে আমি নিজেই দূর্বল হয়ে পড়ছি যেন, ওনার শরীরের কম্পনের মাত্রা বাড়তেই আমি কম্পিত ধ্বনিতে বললাম,
‘আরিশ ভাইয়া! আরিশ ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন? ‘

উনি সুতোর গিটটা কোনরকমে লাগিয়ে দিয়ে দুপাশে মাথা নাড়ালেন যার অর্থ উনি ঠিক নেই। জীবনে এই প্রথম আমি কোন উত্তর ওনাকে কোন রকম ভনিতা ছাড়াই সহজ ভাবেই দিতে দেখলাম। আমার কন্ঠস্বর কাঁপছে, ওনাকে ছোঁয়ার সাহস পাচ্ছি না আমি। উনার অবস্থা বেশি খারাপ হবার পূর্বেই আমি ঘর থেকে চিৎকার দিলাম,
‘আম্মু একটু এই রুমে ওষুধ নিয়ে এসো না, আরিশ ভাইয়া কাঁপছেন। ‘

ততখনে উনি আমার বেডের ওপর বসে পড়েছেন। ওনার কপালে হাত দিতেই উনি আধোআধো কন্ঠে ধমক দিতে ভুললেন না,
‘আর কখনো ভুলেওবলবে না যে তুমি ফুল ভালোবাসো না কারন আমার আরু পাখি নিজেই একটা ফুল। বুঝলে স্টুপিড! ‘

আমি ওনার অমন কথা শুনে এবার ভয়ে কেঁদেই ফেললাম, ওনাকে আমি কখনো এভাবে কথা বলতে দেখিনি। ওনাকে কোনরকমে হাত দিয়ে সামলে রেখে আমি ক্রমাগত হাক ছাড়লাম তাদেরকে জলদি আসার জন্য। মুহূর্তের মধ্যেই বাবা আর আম্মু এলেন, ততখনে উনি জ্ঞান হারিয়েছেন, ওনাকে শক্ত করে ধরে আছি আমি, হাতে ওনার দেওয়া সেই বেলি ফুলের মাথা আর তার মিষ্টি ঘ্রাণে ম ম করছে আমার শরীর আর আমার শরীরে ভর ছেড়ে জ্বরে পুড়ছে ওনার শরীর।

#চলবে,,, #ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat

9.

ওনার পায়ের কাছে বসে আছি আমি, নির্বিকারে ওনার দিকে চেয়ে আছি, ওনার এখনো জ্ঞান ফেরেননি তবে শরীরে জ্বরটা আর নেই। আপনাআপনিই আমার চোখ দিয়ে জল গড়ালো তবে তা রাগে। ওনার কারনে বারবার কেন আমাকে অপ্রত্যাশিত ভাবে ফারিন আপুর থেকে কথা শুনতে হয়। আপু আমার থেকে বয়সে বড়ো, তার মুখের ওপর জবাব দিলেই আমি হয়ে গেলাম ঠোঁট কা/টা বে/য়া/দ/প মেয়ে। কিছুখন আগে উনি ফোন করেই এসব কথাই আমাকে শুনিয়েছেন।
নেহাত আরিশ ভাইয়ার শরীর খারাপ হওয়ার দরুন আমি কেবল একনাগাড়ে শুনে গেছি ওনার কথা, তবে যখন উনি বললেন যে আমার জন্য নাকি ওনাদের দুজনের সম্পর্কের মাঝে এতো জটিলতা তখন আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, না পেরে বলে উঠলাম,

‘নিজেকে কি ভাবো তুমি? বুয়েটিয়ান আর বয়সে বড়ো বলে যা খুশি তাই বলে যাবে? আমি তোমার থেকে বয়সে ছোট তাই সব দোষ আমার? তোমার আর আরিশ ভাইয়ার সম্পর্ক নিয়ে আমি কখনো কিছু বলেছি তোমাকে? বিয়ে করে নাও তাকে, এতোই যদি তাকে নিয়ে ভয় হয়। ‘

আমার এমন কথা শুনতেই উনি আমাকে ‘বেয়াদপ’ বলে সম্মোহন করতেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম। তবে হঠাৎ করে ওনার এমন ভাবে ব্যাবহার করার কারন বুঝে উঠতে পারলাম না আমি।

ওনার কাছে বেশ অনেকবার অপমানিত হয়েছি আমি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে, কিন্তু বার বার একই জিনিস সহ্য করা যায় না। আমার চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে রিতিমত। নিরবে এক চাপা কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছি আমি, তা বোঝার মতো কেও নেই। ওনার দিকে তাকালাম আমি, উনি এখনো ঘুমাচ্ছেন। ওনার অগোচরে এতো কিছু হয়ে গেল উনি তা জানতেও পারলেন না।

হাতের দিকে তাকাতেই দেখলাম বেলি ফুলের মালাটা এখনো হাতেই রয়েছে, তার ঘ্রাণ এখনো আগের মতোই তাজা। আমি একটানে মালাটা ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করলেও সফল হলাম না, হাতের বেশ কিছু জায়গায় সুতোর টানে লাল লাল দাগ হয়ে গেছে। আমি তাতেও দমে গেলাম না, অবশেষে একটা জোরপূর্বক টান দিতেই সুঁতোটা ছিঁড়ে গেল আর আমি বেশ শব্দ করেই আহহ করে উঠলাম, হাতটা কেটে গেল সুঁতোর ধারে। আমি মালাটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলাম। আমার চোখের জল নিমেষেই যেন মিলিয়ে গেল আমার রাগের তোড়ে। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি। ভোর চারটে হবে হবে প্রায়। ফুপিও এসেছেন বারোটার দিকে, আর সানাও। আমি কাওকে আমার আর ফারিন আপূর এই ঠান্ডা লড়াই সমন্ধে আচ অবধি করতে দিইনি। জেদ দেখিয়ে ওনার পায়ের কাছে বসে আছি আমি তবে রাগটা এবার মাত্রাতিরিক্ত হতেই আর সহ্য হলো না। ফোনে থাকা ওনার আর আমার ছবিটা ডিলিট করতে দুটো বার ও ভাবলাম না, রাগ হলে আর মাথা কাজ করে না আমার আর হলোও তাই।

হাতটা কেটে যাওয়াই জ্বালা করছে বেশ। আমি নিজেকেই নিজে তেজ দেখিয়ে বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে। এবার থেকে ওনার সাথে দূরত্ব বজায় করে চলবো আমি যাতে ফারিন আপুর মতো দ্বিতীয়বার আর কেও আমাকে এমন অকথ্য ভাষায় কথা না শোনাতে পারে।

/

মন খারাপ হলেই আমি কাঠগোলাপ গাছের নীচে বসে থাকি বরাবর, আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলো না। ভোর পাঁচটা বাজে প্রায়, আজান দিয়েছে অনেকখন। আশরাফ চাচা নামাজ পড়তে ওঠেন, তবে আমাকে দেখতে পাননি। এত ভোরে দেখলে হয়তো বকাঝকা করতেন। আমি হাটুতে মুখ গুঁজে মন খারাপ করে বসে আছি। মনে পড়ে ওনার আগের বারের জন্মদিনের কথা। উনি কখনোই জন্মদিন সেলিব্রেট করতে চান না। ওনার ২৩ তম জন্মদিনের পর থেকে উনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন যে চাইলেও এই জীবনে আমার থেকে বড়ো এলিয়েন এর দেখা উনি পাবেন না। যে সেদিনের কথা ভাবলেও আমার হাসি পাই।

২২শে জুলাই, ২০২১,

আজ সেই বিখ্যাত হিটলার মানুষটার জন্মদিন। আর দিনটা একটু ঝাকানাকা চমকপ্রদ না হলে হয়? আরিশ ভাইয়া নিজের জন্মদিন নিয়ে এতো নাচানাচি করেন না, কেক অবধি কাটেন না তবে শুধু সেদিন কোনরকম জোর করেই ফুপি বেশ ঘটা করে রান্না করেন। সকলকে ফুপি রাতে দাওয়াত দেওয়াই আমাদের রাতে তাদের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু রাত অবধি অপেক্ষা কে করে!
উনি আমাকে প্রতিবার সারপ্রাইজ দেন তাই আমিও ঠিক করেছিলাম যে ওনার জন্মদিনে ওনাকে বউ সাজিয়ে আমি নিজেকে সারপ্রাইজ দেবো😇।

দুপুর বেলায় সি এন জি ধরে কাওকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে ফুপির বাসায় এলাম। ফুপি আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেছিলো। আমি ফুপির কাছ থেকে জানলাম যে উনি নিজের ঘরেই আছেন।
আমি চুপিসারে গিয়ে ওনার ঘরে আলতো করে উঁকি দিতেই উনি কিভাবে আমার উপস্থিতি বুঝলেন তা আজও আমার বোধগম্য হলো না। উনি ওনার মুখের সামনে একটা বই ধরে রেখে ধমকের সুরে ডেকে উঠলেন,
‘এই মেয়ে! ‘

উনি বুঝতে পেরেছেন ভেবে চোখ মুখ কুঁচকে একরাশ ধমকে খাওয়ার মতো মনোবল নিয়ে ওনার ঘরে ঢুকলাম। ভীষন সুগন্ধি যুক্ত একটা অর্কিডের রুম ফ্রেশনারের ঘ্রাণ ভেসে আসছে আমার নাকে। আচ্ছা ওনার ঘরটা এতো পরিপাটি কি করে? কই আমার ঘর তো এতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে না।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই দেখলাম উনি আধাশোয়া থেকে উঠে বসে আমার দিক জহুরির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘ ঘরে না ঢুকে উঁকি দিচ্ছিলে কেন? ‘

ওনার এমন কথাতে আমি ভড়কে গেলাম না কারন আমি ওনার ধমক খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ রুপে প্রস্তুত। কোন রকম আমতা আমতা ছাড়াই আমি পরিষ্কার আর তেজী কন্ঠে আর বেশ নম্র ভাবে বললাম,
‘শুভ জন্মদিন আরিশ ভাইয়া। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো হিটলার ভাই। ‘
বলে ওনার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলাম। উনি আমার হাসি দেখে আর রাগ করে থাকতে পারলেন না হয়তো।

ওনার কপালের ভাজ প্রসারিত হলো আর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘হমম। ‘

ওনার হমম শুনে বেশ অপ্রস্তুত হলাম। এ কেমন মানুষ যে যার নিজের জন্মদিন নিয়ে কোন মাতামাতি নেই। আমি যে কাজে এসেছি সেটা হাসিল না করে যাচ্ছি না এমনটা ভেবে ওনার কাছে অকপট স্বীকারউক্তি করলাম,
‘আজ আপনার মতো এমন একটা নিম পাতার ফ্যাক্টরির জন্মদিন বলে কথা, আমি চাই আজ আপনি আমার একটা ইচ্ছা পূরন করুন। ‘

উনি চোখ বাকিয়ে বোকা বোকা ভান করে বলল,
‘যে জন্মদিনের উইশে থ্যাঙ্কিউ হিসাবে যেখানে পাল্টা রিটার্ন গিফ্ট দিতে হয় এমন উইশ আমার লাগবে না। ইউ মে গো নাও। ‘

আমি নাছোড়বান্দা হয়ে বললাম,
‘একদম না। আমি চাই আপনি আজকে আমার কথা রাখুন। আর আপনি আজ অবধি আমি যা চেয়েছি তাই করেছেন তাহলে আজকের টা কেন নয়?’

কথাটা ওনার বেশ গায়ে লাগলো যেন তাই আমিও সেভাবে বললাম, উনি না পেরে বাধ্য হয়ে বললেন,
‘ স্টুপিড! কি চাই বলো। ‘

আমি ওনার দিক তাকিয়ে আমার বত্রিশটা দাঁত বার করে একটা হাসি দিতেই উনি বিরক্ত হয়ে তাকালেন।
আমি ওনাকে উদ্দেশ্যে করে বললাম,
‘বেশি কিছু না, আপনাকে সাজিয়ে গুছিয়ে আমি একটা ছবি তুলবো। ‘

উনি ভাবলেশহীন হয়ে বললেন,
‘ঠিক আছে বিকালে রেডি হয়ে থেকো বাইরে কোথাও যাবো তখন একটা তুলে নিও। এখন যাও, আমি পড়ছি। ‘

আমি ওনার হাত থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে বললাম,
‘আপনাকে নিজে কে সাজতে বলেছে হ্যাঁ! আমি সাজিয়ে দেবো আপনাকে! আর নো মোর ওয়ার্ডস! ‘

কথাটা বলে আমার ব্যাগ থেকে একটা টেডি বেয়ার ওয়ালা ব্যান্ড, লাল টকটকে একটা লিপস্টিক, কাজল সহ আরও সাজসরঞ্জাম বার করতে গেলেই উনি একটা গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে বললেন,
‘আরু পাখি কি হচ্ছে এসব? ‘

আমি ওনার দিক মুখ চেপে হেসে বললাম,
‘নো মোর ওয়ার্ডস। একদম চুপ। ‘

উনি সেদিন হাজার চেষ্টাতেও আমাকে আটকাতে পারেননি। ওনার ওপর আমি আমার মেকআপ টিউটোরিয়াল অ্যাপ্লাই করেছিলাম সেদিন। কিন্তু ছবি তুলতে দেননি উনি। আমি ফোন নিয়ে ছবি তুলতে গেলেই উনি আমার হাতটা শক্ত করে চেঁপে ধরে আমাকে দেওয়ালে ঠেলে দিতেই আমি দেওয়ালের সাথে আটকে গেলাম, উনি আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার চোখে রাগের আভা দেখিনি সেদিন। কেন জানি না মনে হচ্ছিল উনি আমাকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে চাইছিলেন। আমি ওনার দিক চেয়ে আছি, ওনার ঠোঁটে লিপস্টিক আর চুলে ঝুটিতে দেওয়া টেডি বেয়ার যুক্ত গার্ডার দেখে আমার পেট ফাটা হাসি হাসতে ইচ্ছা করলো কিন্তু হাসলে নিজের আর্টিস্টিক দিককে অসম্মান করা হয়। উনি আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন দেখে আমি বলে উঠলাম,
‘আপনাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে দেখতে! ‘

উনি জবাব দিলেন না, বেশ কিছুখন তাকিয়ে থেকে উনি নিজে থেকেই সরে গেলেন। আমার খুশি হতে লাগলো বেশ। উনি আমার এই এলিয়েন টাইপ আবদার টাও রেখেছেন। উনি ওয়াশরুম চলে গেলেন ফ্রেশ হতে। আমি বাইরে থেকে চিৎকার দিয়ে বললাম,
‘আরিশ ভাইয়া আসছে বছর আবার হবে! ‘

উনি রাগে গজগজ করছ বলেছিলেন,
‘আমিও একদিন সবকিছু সুদে আসলে উসুল করবো না হলে আমিও আবরার আরিশ না। সেদিন তুমি শুধু সহ্য করতে পারলেই হলো। ‘

কথাটা মনে হতেই আমার সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো। আমি সত্যিই জানি না ওনার আমার সম্পর্কটা ঠিক কেমন।

‘আমি আর ওনার ধারে কাছেও যাবো না। ‘

কথাটা বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম আমি। হাটুতে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে একপাশ ফিরে তাকাতেই আমার চোখের কোনা বেয়ে জল গড়ালো। তখনই কেও যেন পিছন থেকে উনি বলে উঠলেন,
‘আরুপাখি কি করছো এখানে? ‘

আমি কথাটা শুনে ধড়ফড় করে চোখটা মুছে নিলাম তবে কিছু বললাম না। আমি জবাব না দিতেই উনি এবার আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি ওনার দিকে এখনো তাকালাম না। উনি জবাব না পেয়ে আমার হাত ধরে টেনে তুললেন। আমি মাথা নীচু করে আছি। উনি রাসভারী কন্ঠে বললেন,
‘কাঁদছো কেন? ‘

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। উনি কি করে বুঝলেন আমি কাঁদছি?
আমি হতবিহ্বল হয়ে ওনার দিকে চেয়ে আছি, ওনাকে বেশ প্রানবন্ত লাগছে। কালকে রাতের ভেঙে পড়া আরিশ ভাইয়া আর এই ভোরের আরিশ ভাইয়ার মাঝে হাজারো তফাত। উনি আমার ঘোর ভাঙাতে তুড়ি মেরে বললেন,
‘ কেও কিছু বলেছে? ‘

ওনার মুখ এর দিকে তাকিয়ে আপনাআপনিই মাথা নাড়ালাম আমি।

ওনার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছি, হাজারো রাগ অভিমানের মাঝেও ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে। কিন্তু কেন?

আমার উত্তর না পেয়ে উনি আমার বাম হাতটা নিয়ে ওনার হাতের মুঠোয় থাকা একটা ফুল দিয়ে বানানো আঙটি পরিয়ে দিতেই শরীরের মধ্যে শিহরন বয়ে গেল। সবকিছু কেমন অদ্ভুত লাগছে না? উনি আমার হাতে আঙটিটা পরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
‘যেদিন আমার সামর্থ্য হবে সেদিন আরও ভালো কিছু দেবো। এখন এটা নিয়ে খুশি থাকো। ‘

আমি মুগ্ধ নয়নে ওনার দিকে চেয়ে রইলাম অনেকখন আর বলে উঠলাম,
‘আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন আরিশ ভইয়া? ‘

কথাটা বলা মাত্রই বাম হাতে বেশ ব্যাথা পেতেই আমার ঘোর ভাঙলো ওনার কথায়।

‘এই মেয়ে হাত কাটলো কি করে তোমার? নিজের খেয়াল রাখো না কেন? এতো অগোছালো কেন তুমি? ‘

আমার ঘোর ভাঙলো, বুঝলাম এতখন আমি যা ভেবেছি সব কল্পনা। ওনি ধমকাচ্ছেন আমাকে। তবে আমার বলা শেষ কথাটা কি উনি শুনতে পেয়েছেন? আমি ওনার দিকে ছলছল চোখে তাকালাম। উনি আমার হাতটার দিকে তাকিয়ে আছেন একইভাবে আর মাঝে মাঝে ফু দিয়ে দিচ্ছেন যেন তিনি ব্যাথা পেয়েছেন। আমার হাতে আমার আরিশ ভাইয়ার দেওয়া কল্পনার ফুলের আঙটিটাও নেই। সবকিছু মিলিয়ে আমার সহ্য ক্ষমতার উর্ধে গেল অনুভূতি গুলো। আমি না পেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতেই আরিশ আমার দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘কি করে কাটলো হাতটা? রাতে তো ঠিকই ছিল! কি হয়েছে বলো? ‘

আমি ছলছল চোখে তাকাতেই যেন উনিও ভেঙে পড়লেন, ওনার দৃষ্টিতে এক অদ্ভুত অনুভূতি দেখে আমার ফারিন আপুর বলা কথাটা মনে পড়ে যেতেই আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে গেলাম।
আর গম্ভীর ভাবে বললাম,
‘আমাকে নিয়ে আপনার এতো না ভাবলেও চলবে। আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন। আর এর থেকে বেশি কিছু চাই না আমার! ‘

উনি তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। আমি ওনাকে ছেড়ে চলে এলাম।
তবে চলে আসার আগে ওনার বুক পকেটে রাখা ঝরে যাওয়া কাঠগোলাপ আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। আচ্ছা উনি কি আমার জন্যই ওটা কুঁড়িয়েছেন?

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here