ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব -১৪

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#লেখকঃmahin_al_islam
#পর্বঃ১৪

এসব ভাবতে ছিলাম হঠাৎ করে কে জানি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল এবং চোখে হাত দিয়ে রাখলো।

আমি অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম কারণ হসপিটালে এই সময় আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরবে আর আমার চোখে কে বা হাত দিয়ে রাখবে

আমি অনেক চেষ্টা করতেছি চোখ থেকে হাত দুটোর জন্য কিন্তু পারতেছি না বুঝলাম না

আমার জানামতে কেউ এখানে আমার পরিচিত নেই কিন্তু এটা কে হতে পারে

তারপর অনেকটা শক্তি কাটিয়ে হাত দ্রুত সরিয়ে পিছনে ঘুরে আমি তো একদম অবাক এটা কিভাবে সম্ভব

আমিঃ আরে তুই এখানে তাও আবার আমি তো কিছুই বুঝতে পারতেছি না তুই কোথা থেকে আসলি আমাকে দেখলে কিভাবে যে আমি এখানে

রুহিঃ ডক্টরের কাছে এসেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে দেখলাম তুই এখানে দাঁড়িয়ে কাকে যেন খোঁজাখুঁজি করতেছিস তো ভাবলাম তোকে একটু সারপ্রাইজ দেয়

আমিঃ সত্যিই আমি অনেক সারপ্রাইজ হয়েছি তোকে এখানে দেখে কত দিন পর তোকে দেখলাম জানিস

রুহিঃ তুই জানিস আমি তোকে কত মিস করতাম প্রতিদিন ভাবতাম তোকে যদি আবার সেই আগের মতো কাছে পেতাম মনের কথা সব খুলে বলতাম কিন্তু আগের মত আর হয় না রে

আমিঃ হুম,, এখন মনের কষ্টগুলো মনেই রেখে দিতে হয় বলার মতো কাউকে পাই না জানিস মাঝে মাঝে যখন তোর কথা মনে হয় তখন চোখ দিয়ে আপনি আপনি পানি চলে আসে জানিস কত কথা বলতাম আমরা আর আজকে দেখা পর্যন্ত হয় না ভাগ্যো

রুহিঃ আচ্ছা আর কান্না করতে হবে না এখন বল তুই কানে কেন

আমিঃ আমার ছোট ভাইকে আছে না ওর অপারেশন করেছি আর ওকে নিয়ে অনেক টেনশনে আছি আমার জীবনে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে রে

রুহিঃ বলিস কি কি হয়েছিল ভাইয়ের

আমিঃ লিভারের সমস্যা হয়েছিল রে ওর পিছনে সারাদিন থাকতে হয় এখন,,, আচ্ছা এসব বাদ দে তোর স্বামী এখানে এসেছে তোর সাথে নাকি তুই একা এসেছি আর বাচ্চা-কাচ্চা কি নিছিস নাকি এখনো

রুহিঃ তোর দুলাভাই একটা কাজের চাপে আমার সাথে আসতে পারেনি আমার একটা মেয়ে আছে

আমিঃ কই তোর মেয়ে এখানে আসে নি তোর সাথে

রুহিঃ নারে এত করে বললাম আয় কিন্তু আসলো না ওর দিদার সাথে খেলা খেলতেছে

আমিঃ অনেক কিউট তোর বাচ্চাটা তাইনা

রুহিঃ হ্যাঁ একদম তোর মতো

আমিঃ এখন কি বাসায় চলে যাচ্ছিস নাকি অন্য কোথাও যাবি

রুহি: এখন বাসায় চলে যাব অন্য কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে রে তোকে সময় দিতে পারলাম না

আমিঃ ধুর পাগলী এটা কোন কথা হলো এটা তো প্রতিটা মেয়ের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে বিয়ের পর তার জীবনটা পুরাই পাল্টে যায় তার ইচ্ছামত কিছুই হয় না বুঝছিস

রুহিঃ আর থেকে তো তুই দেখি ভালো বুঝিস আচ্ছা আজকে আছি রে আর এই যে আমার বাড়ি ঠিকানা একদিন সময় করে চলে আসিস আড্ডা দিব

আমিঃ ওকে তাহলে আমিও আসি

তারপর আমার সেই প্রিয় বেস্ট বান্ধবী টা চলে গেল আর আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি

কত আড্ডা দিতাম দুজন একসাথে কত কথা বলতাম

কিন্তু আজকে এতটা দূরত্ব বেড়ে গেছে যে তার সাথে বসে যে কিছু কথা বলব সেই সময়টাও নেই

আমার খুব কান্না পাচ্ছে অতীতের কথাগুলো ভেবে কত আড্ডা দিতাম কত কথা বলতাম আমরা কত হাসাহাসি করতাম কিন্তু সময়ের সাথে সব কিছু পাল্টে যাচ্ছে

জাপানি স্কুল লাইফের একটা করে বেস্ট বান্ধবী ছিলোনা তারাই বোঝে বেস্ট বান্ধবীর মর্ম

যখন সেই বান্ধবীর সাথে দেখা হয় কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয় না,,, কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখের লোনা জল গুলো গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে

ভালো থাকিস বন্ধু,, স্কুল লাইফ টা যদি আবার ফিরে পেতাম,, তাহলে সারাক্ষণ তোর সাথে আড্ডা দিতাম,, কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আমি আপনার সাথে এরকম করাটা দিতে পারবোনা স্কুল রাতে চলে যাওয়ার পর এখন বুঝতে পারতেছি স্কুল লাভটা কী ছিল কিন্তু যখন স্কুলে ছিলাম তখন একটুও ভালো লাগছে না শুধু বলতাম কবে যে কলেজ যাব কিন্তু যখন কলেজ গেলাম রে পাগলি স্কুল লাইফ টা যেটি ছিল তার মর্ম বুঝতে পারলাম,, আচ্ছা মানুষের সাথে কেনো এরকম হয়,, আমার অনেক জোরে জোরে কান্না পাচ্ছে কিন্তু কান্না করতে পারতাছিনা এটাই হয়তো জীবন,, একসময় তাদের ছাড়া এক মুহূর্ত কাটতো না এখন তাদেরকে ছাড়া বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে হচ্ছে,

স্কুল লাইফের স্মৃতি গুলোর সবথেকে বেটার হয়

আমি কখনো পারব না আমার স্কুল লাইফের সেই স্মৃতিগুলো ভুলে যেতে,,, ভালবাসি বন্ধু ভালবাসি বন্ধু ভালবাসি😭😭

হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল উনি তো এখনো আসলেন না ব্যাপার কি তার মানে কি উনি আমাকে ফেলে চলে গেলেন

আমি আর কিছুই ভাবতে পারতেছিনা আমার মাথাব্যথা শুরু করে দিয়েছে,

আমি চুপচাপ ভাইয়ার কেবিনে চলে গেলাম গিয়ে দেখি আম্মু শুয়ে পড়ছে ভাইয়া শুয়ে আছে

আমাকে কেবিনে ঢুকতে দেখে

আম্মুঃ কিরে মামা কোথায় গিয়েছিলি এতক্ষন লাগলো যে

আমিঃ আম্মু রুহি এসেছিল ওর সাথে দেখা হলো তাই ওর সাথে একটু আড্ডা দিলাম

আম্মুঃ কি বলিস কেবিন একটু নিয়ে আসতে অনেকদিন থেকে মেয়েটার সাথে কথা হয় না একটু কথা বলতাম

আমিঃ আম্মু অনেক বিজি এমনিতেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই বাসায় চলে গেল

আম্মুঃ উহহহ

আমিঃ আজকেও কি আমাকে বাসায় চলে যেতে হবে

আম্মুঃ বাসা যে কোন কাজ নেই এখানেই থাক আজকে কিছু গল্প পড়ি মা মেয়ে মিলে

তারপর আম্মুর সাথে গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি আম্মুর সাথে

খেয়ালই করিনি

সকাল বেলা,,,

যখন আমার ঘুম ভাঙলো দেখি আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছি,,

তারপর আমি বিছানা থেকে উঠে হসপিটালের ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম

ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি আম্মু উঠে গেছে

আমিঃ আচ্ছা আম্মু তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি কিছু নিয়ে আসি দোকান থেকে

আম্মুঃ ওকে

দোকান যাওয়ার পথে আমার খেয়াল হলো উনি কি তাহলে কালকে রাতে আসেনি

ওনার কথা মনে পড়তেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল

যে মানুষটা আমাকে ছাড়তেই চাইছিল না সেই মানুষটা এখন বলতো আমাকে দেখতে এলো না

আনমনে রাস্তার একপাশ দিয়ে হেটেই চলছি দোকানের দিকে

এখনো সকাল তো তাই রাস্তায় তেমন কোনো গাড়ি নেই,, মানুষজন ও তেমন নেই একদম ফাঁকা হয়ে পথে রাস্তাটা

মাঝে মাঝে কয়েকটা দোকান খোলা আর দোকানের মধ্যে 2_1 জন আড্ডা দিচ্ছে সকালবেলা

পরিবেশটা একদম মনমুগ্ধকর অনেক ভালো লাগতেছে সূর্যমামা উঁকি দিচ্ছে,, সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে লাগতেছে খুব ভালো লাগতেছে অনুভূতিটা অন্য রকম

গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছি আমি উদ্দেশ্য দোকানে গিয়ে কিছু কিনে আনব

আনমনে হাঁটতে ছিলাম হঠাৎ করে ওষুধ খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই কেউ আমাকে ধরে ফেলে কিন্তু লোকটাকে আমি দেখতে পেলাম না কারণ আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছি,,

চোখ দুটো মিটমিট করে খুলে লোকটার দিকে তাকিয়ে তো আমি অবাক এটা কিভাবে হতে পারে আমি স্বপ্নের জগতে আছি নাতো,,,

নাকি আমার চোখ থেকে এখনো ঘুমের রেশ টা কাটেনি যার ফলে এরকমটা দেখতেছি

আমার এটা বিশ্বাস হচ্ছে না তাই নিজের গায়ে নিজেই চিমটি কাটলাম না এটা তো সত্যি

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here