#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন
পর্ব— ৭
আপুূদের গল্পের আসরে নানা রকম গল্প হচ্ছে কিন্তু আমার মাথায় আপাতত হাসনাত আর ইস্পা চলছে.. কি এমন বলবে ওই শাঁকচুন্নি যে এইসময় ডাকলো… শেষে অস্হির হয়ে দাড়িয়ে গেলাম.. মেঘলা আপু হালকা ব্রু কুঁচকে বলল কোথায় যাস??
আমি হালকা ঢুক গিলে বললাম— ওয়াসরুমে… সানিয়া মুখ বাকিয়ে বলল– তুৃমি কয় বার যাও.. আমি রেগে বললাম— তাহলে এখানে বসে থাকি আর তোর কোলে করে দি..
সে তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে বলল আরে যাও যাও..
আমি আস্তেআস্তে হাসনাত ভাইয়ের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম.. রুম অন্ধকার!! জানালার পাশে মনে হলো কেউ যেন বসে আছে.. আমার মেজাজ সপ্তআাসমানে.. এই ইস্পাকে আনি কিমা বানিয়ে খেয়ে ফেলব..শাঁকচুন্নি, ডাইনী,, রাতের বেলায় পর পুরুষের সাথে তোর এতো কিষের আলগা পিরিত. এইভাবে রুমের লাইট অফ করে ওর কেন বসে থাকতে হবে.ফাজিল মেয়ে. এইসব ভাবতে ভাবতে যেই আমি রুমের লাইট জ্বালালাম.. আমি পুরা বেকুপ বনে গেলাম.. কোলবালিশটাকে জানালার পাশে বসাই রাখা হয়েছে আর কাথাটা এমন ভাবে দেওয়া হয়েছে অন্ধকারে যেকেউ ভাববে এইটা একটা মেয়ে..
আমি রাগে দাত কটমটিয়ে ওঠলাম..
হাসনাত ভাই.. বলি যেই আমি চিৎকার করতে যাব.. পিছনথেকে হাসনাত ভাই বলে ওঠলো— আমি এইখানে…
আমি নাক ফুলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে– বালিশ এইটা এইখানে কেন…
সে মুচকি হেসে খাটে বসতে বসতে বলল– কেন?? কোন সমস্যা,, আমার রুম আমার বালিশ.. আমার মর্জি..
আমি মুখ ভেঙ্গিয়ে যেই চলে আসবো সে আবার ঢেকে বলল– তুই আমার রুমে কেন??মুখে তার দুষ্টু হাসি..
আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম— আমার মর্জি.. আমার নানার বাড়ি যেইখানে ইচ্ছা যাব আপনার কি..
সে হালকা ব্রু উচিয়ে”” কিয়া বাত “” বলে হাত উচালো..আমি মুখ ভেঙ্গিয়ে বেরিয়ে গেলাম.. হঠাৎ ডেসিংটেবিলের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক!!!.. হাসনাত ভাই হাসতেছে!!!! এতো সুন্দর ওনার হাসি.. আমি যেন আর একদফা ক্রাশ খেলাম.. কর্নারের দাতটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে.. মাথা নিচু করে লাজুক হাসি দিচ্ছে!! জিঙ্গেস করার লোভটা যেন থেকেই গেল.. কিন্তু সাহস হলো না গিয়ে জিঙ্গেস করার…বেরিয়ে রুমে চলে গেলাম….
সকালে সবাই অতিরিক্ত বিজি আজকে ইষা আপুর গায়ে হলুদ.. আমরা সবাই নানা কাজে সাহায্য করছি.. তাও যেন কাজ শেষ হওয়ার কোন নাম ই নাই..
হঠাৎ ইফতি ভাইয়ের আগমন.. ব্লু গেন্জির সাথে লুঙ্গী পড়ে আসছে সে..
আমি দুপাশে মাথা নাড়ালাম.. এই পোলা এতো গাধা কেন?? কোথায় সুন্দর ড্রেস পড়ে ইফ্ফাতকে ইমপ্রেস করবে তা না.. সে আছে তার তালে..
আমি তার সামনে গিয়ে ব্রু উঁচিয়ে তাকালাম.. সে অবাক হয়ে তাকালো তখন আমি আমার বাকি ভাইগুলোর দিকে তাকালাম.. সবগুলো দেখি লুঙ্গী ডান্স এর জন্য লুঙ্গি পড়ে বসে আছে.. আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম— আজকে কি লুঙ্গী দিবস?? নাকি লুঙ্গি ডান্স দিবা তোমরা??
তারা দাত কেলিয়ে হেসে বলল– আরে এইটা হলো আরাম!!! তোদের প্লাজুর মতো এইবলে সিয়াম গিট্টু টাইট করে লাগিয়ে নিল.. তখন আলভী পাশ থেকে বলি ওঠলো— বেটা টাইট করে লাগা.. খুলি যাবে.. তারপর তোর মানচিত্র দৃশ্যমান..
ওরা খিলখিলিয়ে হেসে একটা অন্যটার গায়ের ওপর পড়লো তখন সিয়াম মুখ গোমড়া করে বলল– আর তোদের যে ঘুমালে লুঙ্গি আকাশে বাতাসে তারপর নিজের মুখের ওপর উঠি বসি থাকে তার বেলায় কি??তারপর সবকয়টার আরেকদফা হাসি.. মনে হচ্ছে যেন লাফিং গ্যাস খাইয়েছে এদের। ভাতের সাথে মিক্স করে…
হঠাৎ হাসনাতভাই কে দেখলাম আমি।। আপনাআপনি ওয়াও বেরিয়ে গেল আমার মুখ থেকে.. শার্টের সাথে লুঙ্গি পড়েছে সে. তামিল ফ্লিমের নায়কের মতো হেটে আসতেছে!! . আপনাআপনি আমার মুখ হা হয়ে গেল..
এতো কিউট কেন সে. আর সে পৌছানোর আগে তার স্মেল নাকে আসে.ই. আমার সামনে দাড়িয়ে ব্রু কুঁচকে বলল– কিরে,,, টিউবলাইট এইভাবে কি দেখস..
আমি আনমনে বললাম— আপনি লুঙ্গী ও পরেন..
সে ব্রু নাচিয়ে বলল– তো কি পরতাম?? প্লাজু..
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম— ছোটবেলায় মুখে কি মধুর জায়গায় চিরতার রস খাওয়ার দিছিলো.. তারপর মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললাম— ঐ যে দেখতে একরকম তাই..
সে একই ভাবে হেসেবলল– আমাকে কি খাইয়েছিল তো আমি জানি না.. তবে তোকে প্রথম আমি আমার আন্গুল চুষতে দিয়েছিলাম.. তাও আবার আধৌয়া.. নাকে আন্গুল দিয়ে সেইটা তোর মুখে পুরে দিয়েছিলাম..যাতে আমার মতো হুস.
*– ওয়েক.. ছি.. ছেছচোর।। এইবলে আমি চলে এলাম আর ভাইগুলো একটা আরএকটাকে ধাক্কিয়ে হাসাহাসি..
এই পোলার মুখ দিয়ে ভালো কথা বেরই হয় না।। শুধু ওর ওল্টাপাল্টা কথা..ইচ্ছা করছে একমুঠো লবন খাইয়ে দি ওরে… আমি আর পুরোদিন ভাত খাইতে পারলাম না.. সে বারবার দেখাচ্ছে কিভাবে খাইয়েছিল আমাকে.. আর আমার পেটের ভিতর মুচড় দিচ্ছে শেষে না খেয়ে ওঠে গেলাম…
এই বদের হাড্ডিকে আমিও খাইতে দিব না. দেখলাম মামি খাবার বেড়েছে হাসনাত ভাইয়ের জন্য.
আমি মরিচ আর লবন ইচ্ছামতো মিশিয়ে রেখে দিলাম.. মুখে তৃপ্তির হাসি হেসে আশেপাশে ঘুরতে লাগলাম.. হঠাৎ দেখলাম হাসনাত ভাই ইফতি ভাইকে কোথাথেকে এনে বসিয়ে দিল. আর ইফতি ভাই খাবার মুখে দিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলল.. বেচারা না পারছে গিলতে না পারছে বের করে দিতে. সামনে মামি. মামির সামনে তার রান্না করা খাবার বের করে দেওয়া অভদ্রতা.. সে কোনভাবে আর একটু খেল..ঝালে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে.. আমি হাসনাত ভাইয়ের দিকে তাকাতেই তিনি আমাকে চোখ টিপ দিল.. আমি রাগে তার দিকে তাকালাম.. এতো বড় হিটলার দুনিয়াতে কি থাকে!!! ইচ্ছা করতেছে চাপাতি বানায় চাবিয়ে চাবিয়ে খায় ফেলি.এিই ইতরটাকে. না হয় মুখের ভিতর গ্যাসের বেলুন দিয়ে তারে উরাই দি… আমি দাত কটমটিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইফতি ভাইয়ের মুখে কয়েকটা মিষ্টি একসাথে ডুকিয়ে দিয়ে বলল– শোন ইফতি,,, পাগল থেকে দূরে থাকবি ঠিক আছে??
আমি নাক ফুলিয়ে তার দিকে তাকালাম..
পাগলটা হলি তুই শালা.. তোরে আমি হাতপা বেধে রোস্ট করে খেয়ে ফেলবো..
হঠাৎ মুনিরা আমার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল– এইযে,,, রোদপাখি.. চিকেন রোস্ট খাওগা.. হাসনাত রোস্ট মজা নাই..
আমি ব্রু কুচকে বললাম— আমি কি বলছি নাকি।। আমি ওই ফাজিলকে খাবো…
তখন ইফফাত আমার কাধে হাত রেখে বলল– ওনারে ই তো খাইতে মন চায় তোমার.. তারপর ইফতি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল– ওনার আবার কি হলো…আমি মুখ কাচুমাচু করে সবটা বললাম.. সে আমার দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে বলল– দোষ তোমরা করবা আর শাস্তি অন্যকে দিবা কেন..এইবলে সে আমার আর কোন কথা না শুনে দ্রুত সেইদিকে প্রস্হান করলো..
সানিয়া আমার কাধের ওপর হাত দিয়ে বলল– ওর আবার কি হলো…
আমি মৃদু হেসে— পিয়ার কা বোখার চাড় গাইয়া ওসে…
মুনিয়া— হা.. কি??
সানিয়া—- ভালোবাসা বিন্দু বিন্দু জমে সাগর হচ্ছে!!! আাহা….
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম… তারপর আমিও সেইদিকে প্রস্হান করলাম.. এতো সুন্দর সিন না দেখলে জিবনটাই মিস…
ইফতি ভাই আহ আহ করে নিজেকে কন্ট্রোল করছে.. বেচারার বোধহয় ঝালে এ্যালার্জি.. চেহারার অবস্হা খারাপ হয়ে গেছে .. এই হাসনাততাকে ইচ্ছা করতেছে মরিচের পুকুরে গোসল করাতে আমি.. বেটা ইবিলিশ ..
ইফ্ফাত এক গ্লাস সরবত এগিয়ে দিল তার দিকে.. তারপর কানের পাশে চুলগুলো গুজে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল– ভাইয়া,, এইটা খেলে ঝাল কমে যাবে…
ভাইয়া ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে দিল.. তারপর আলতো করে গ্লাসটা নিল. আমি স্পষ্ট দেখছি ইফ্ফাতের হাত কাঁপছে সাথে ভাইয়ার.. ভাইয়া পরপর কয়েকটা ডুক গিলো এক চুমুকেই শেষ করে দিল.. তারপর ওর দিকে তাকালো. ও উৎসুক দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকাই আছে. ভাইয়ার ঝাল কমে নি.. ওনার চেহারা দেখে বোঝা যায়.. কিন্তু মৃদু হেসে বলল– সত্যি তোমার হাতে ম্যাজিক আছে.. ঝাল চলে গেছে.. ইফ্ফাত যেন এইবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল.. তারপর আবার বলল– আপনি জানি কিসে পড়েন???
আমার হাসতে গিয়ে কাশি চলে আসছে. তাড়াতাড়ি নিজেকে কন্ট্রোল করলাম আমি.. এই মেয়ে কথা না জানলে আমার থেকে জিঙ্গেস করতি আমি শিখিয়ে দিতাম তোরে.. যা জানে তা আবার ও জিঙ্গেস করতেছে সে..
আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া নরমাল হয়ে বলল– চট্রগ্রাম ইউনিভার্সিটি.. রসায়নে..ফোর্থ সেমিস্টার..
তখন ইফ্ফাত ওহ বলে কিছুখন চুপ করে রইলো তারপর আবার জিঙ্গেস করলো আপনার রেজাল্ট কেমন হয়??
আমি মাথায় হাত দিয়ে দিলাম. —-গাধি.. মানুষকি এইসব বলে.. তুইকি ওর জন্য মেয়ে দেখতেছস.. যে এইসব জিঙ্গেস করতেছোস..যখন এইসব বিরবির করছিলাম হঠাৎ সুমা আমার পিছনে দাড়িয়ে বলল– গাধি না.. লক্ষীবল..ও একটু ছোট আরকি..
আমি মুখ ভেঙ্গিয়ে বললাম— হ.. তোর ভাইয়ের মেয়ে না.. তাই ওর দিকে টানতেছস.. আরো টানগা..
ও হাসি দিয়ে বলল– দেখনা কি বলে.. আমিও হাসি দিলাম. তারপর আবার ওদের দিকে তাকালাম…
ইফতীভাই সুন্দর করে বসে বলল– জি,,, ফাস্টক্লাস আসছে আমার.. আমি পড়াশোনা করতে ভালোবাসি..
ইফ্ফাত — আর.. আর কি ভালো লাগে.. এই বলে নিজের চুলগুলো আবার বামকানের নিচে গুঁজে দিল সে..
ইফতীভাই সেইদিকে তাকিয়ে বলল– লম্বা সিল্কি চুল যখন কারো সুন্দর মুখটি ছোয়ে দেয়. আর মুখের ওপর আলোছায়ার খেলা চলে তা দেখতে অনেক সুন্দর…
ইফ্ফাত চমকে তাকালো তার দিকে.. দুজনের ঘোর লাগানো দৃষ্টি.. হঠাৎ সুনান ভাই কাবাবে হাড্ডি হয়ে টানতে টানতে ভাইয়াকে নিয়ে গেল..
সুমা—- কাবাব মে ছোট হাড্ডি ইয়ার..
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম ইয়ার হাড্ডি না শুধু। পুরো একটা বড় হাড্ডি।। তাও আবার গলায় আটকায় এমন..
তারপর আমি ওরে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম.. ড্রেস পড়ে রেডি হতে হবে..
ইষা আপুর রুমে গিয়ে আমি বেকুব বনে গেলাম.. এই মেয়ে নিজে নিজে নাকি সাজবে.. সুমা ব্রু কুঁচকে বলল– কেন??
আমি মুখ বাকিয়ে বললাম— তার প্রানপ্রিয় হাপপেন্ট নাকি তাকে বলেছে কোন পার্লারে না যেতে তাই সে সব একা একা করবে.. মেহেদীও একা পড়ে বসে আছে…
মুনিরা আমাকে ঝাঁকিয়ে বলল– ওইটা হাসবেন্ড হবে না??
আমি মৃদু হেসে বললাম— নাহ.. যেহেতু ওর সব স্বাধীনতা শোষন করে হাল্ফ করে দিচ্ছে তাই সেইটা হাপপেন্ট..
ওরা খিলখিলিয়ে হেসে দিল তারপর বলল– আমরা তো তোমার ফুলপ্যান্টের অপেক্ষায় আছি যাও রেডি হও..
আমি যেতে যেতে ওদের বললাম— হু.. হা করি থাক…
রেডি হতে গিয়ে দেখলাম সানিয়া নায়িকা সেজে চোখে মাসকারা দিচ্ছে.. আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম— হাসনাত নাকি মাসকারা লাইক করে না.. সাথে আইলাইনার ও.. সে তাড়াতাড়ি মুছে ফেলল.আর আমি হেসে দিলাম..
খয়েরী আর কালো কাতান শাড়ির সাথে চুলগুলো খোলা রেখে রেডি হয়ে গেলাম. আয়নায় নিজেকে দেখে হঠাৎ হাসনাতভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল.. সে মানা করেছিল আমাকে..
তারপর নিজেকে নিজেকে হু কেয়ারস বুঝিয়ে বেরিয়ে গেলাম..
চলবে