ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ২১+২২

পর্ব ২১+২২
#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-২১

,,”আর হাসতে হবে না আমি আগেই জানতাম প্রিতি আপুর চুলে কে চুইংগাম লাগিয়েছে,,”

❤️
আমি হেসেই চলেছি।ওর কথা দিয়ে আজ যেন হাসির ফোয়ারা ভেসে আসছে তাই আমার হাসি থামছে না।তবে আমার হাসিতে জেরিন বিরক্ত হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। বরং উপভোগ করছে।একটু বাদেই ঠাসসসস,,,করে একটা আওয়াজ এলো ফোনের ওপাশ থেকে। জেরিন লাফিয়ে উঠলো বলে আমার ধারণা।

বিরক্ত গলায় একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে শুধু বলে গেল,,

,,,”হমমম,,, আবার কি যেন ভাঙল। আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অন্যের বাসায় এসে কেউ এমন বিহেভ করে?? ভাগ্যিস জানেনা তুই কাজটা করেছিস,,না হলে এতোক্ষণে তোর বাসায় পৌছে যেত তোকে তেড়ে মারতে।।”(বলেই হাসতে শুরু করলো)

ওদিকে আমার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে।হাসি থামিয়ে তোয়ালেটা বারান্দায় শুকোতে দিয়ে,, বারান্দার দোলনায় বসতে বসতে চঞ্চল গলায় বললাম,,

,,জানিস তো জেরি,,চিপকুর এই অবস্থাটা সামনে থেকে দেখার ভাগ্য হলো না,, বড়ই কষ্ট,,!!”

জেরিন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলো,,

,,,”ওরে সোনুরে,, ভাগ্যিস দেখিস নি,,।নাহলে এই কান্ড দেখে তুই ও বিরক্ত হতি।”(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল)

পা তুলে আরাম করে বসে বললাম,,

,,,”সে তুই যা বলিস,, পাগলি হতাম আর ছাগলই হতাম ,, দেখার আফসোসটা রয়ে গেল।”

আবার ঠাসস করে শব্দ হলো। জেরিন রুমের দিকে হাটা দিতে দিতে বলল,,

,,”এখন রাখিরে,,দেখি গিয়ে আবার কি ভাঙলো,,!!বাই,,!!”

টুতটুত,,,আমি বাই বলার আগেই ফোনটা কেটে গেল। এখন এই ফোনটার আর কোনো কাজ নেই ।তাই হাতে রাখতে বিরক্ত লাগছে।তাই একটু ঝুঁকে বিছানায় ফোনটা ছুড়ে মারলাম। চুল মুছলেও ঠিক করে মোছা হয়নি কথায় কথায়।তাই দু এক ফোঁটা টুপটাপ পানি চুল থেকে আমার ঘাড় বেয়ে জামা ভিজিয়ে দিচ্ছে। আবহাওয়া বেশ শীতল। ঠান্ডা বাতাসে বাহির থেকে শো শো,, আওয়াজ হচ্ছে। আমার গায়েও লাগছে‌।সবকিছুই যেন ঠান্ডা শুধু প্রিতি আপু ছাড়া।রাত ভাইয়া কি করে ভালোবাসার মানুষটির কথা ভুলে ওই চিপকুর সাথে চিপকে থাকে? তাকে তো আমি ভালো বলেই জানতাম।তবে এই রাত ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড কে?? আমাদের কলেজে পড়ে অথচ আমি তাকে চিনি না। জেরিনের তো এক কথা রাত ভাইয়ার যত কেয়ার সব আমাকে ঘিরে।সে আমাকেই পছন্দ করেন। কিন্তু এমন কিছু তো আমার মনে হয়না।(রুমে ঢুকতে ঢুকতে) বড্ড প্যাঁচালো এই লোকটা,,একটু অদ্ভুত ও বটে।একটা জোরালো ক্লু পেলেই হয়তো খুঁজে পেতাম তার গার্লফ্রেন্ডকে। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার আমি ওনার প্রতি খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছি।তাই হয়তো রাত ভাইয়ার পাশে চিপকুকে দেখলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি।না আমাকে শক্ত হতে হবে। এখন না হয় রাত ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড দৃষ্টির অন্তরালে,, কিন্তু একসময় তো সে সামনে আসবে তখন তো তাকে প্রিতি আপুর মতো জব্দ করতে পারব না। রাত ভাইয়ার জন্য আমার ছোটবেলা থেকেই দুর্বলতা ছিল। এখনও আছে বোই কি,,!! রাত ভাইয়ার সামনে সেটা প্রকাশ না করলেও নিজের বিবেকের থেকে তো লুকানো সম্ভব না। তাই আগে থেকে মানুষিক ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।(নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে গেল।)

আম্মু ডাকছে,,, বিছানা ছেড়ে নিচে গেলাম। রাতের খাওয়া দাওয়া একদম শেষ করে রুমে ফিরলাম।লাইটটা বন্ধ করলাম । অন্ধকার রুমে আমি একা শুয়ে আছি।আর দু তিন দিন বাদেই বিয়ের জমজমাট আয়োজন শুরু হবে। অনেক অনেক আত্মীয় স্বজনে ভড়ে যাবে বাড়ি। তখন হয়তো এমন ছড়িয়ে ঘুমতে পারব না। বাড়িতে বড় কোন অনুষ্ঠান হলে এমনই হয়। শোয়ার জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও পরে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেদিন যে আমায় নুপুর দিয়ে গেল।সে কোন মানুষ না ভুত না অন্যকিছু তাও আর জানা হলো না তবে তার প্রতিটি স্পর্শ কেমন যেন খুব চেনা চেনা লাগে। ঘুমিয়ে থাকলেও আমার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা প্রবল। এসব ভাবতে এখন বিরক্ত লাগছে।একটু ঘুমানোর চেষ্টা করা দরকার। নয়তো ভাইয়ার বিয়ের আগে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়বে।এ আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না।




এসবের মাঝেই কেটে গেল এক সপ্তাহ।চলে এলো ভাইয়ার মেহেন্দির দিন।এই অনুষ্ঠানটা জেরিনের বাসাতেই হবে।তাই সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়তে হবে। ইতিমধ্যে বাড়ি চিড়িয়াখানায় পরিণত হয়েছে। তফাত এটুকুই ওখানে থাকে বিচিত্র ধরনের জীবজন্তু আর আমাদের বাড়িতে এসেছে বিচিত্র রকমের লোকজন।

আম্মুকে দেখাই যায় না এ দুদিন ধরে। বেশ ব্যস্ত। একশোবার ডাকলে হয়তো বাড়ির কোনো এক কোনা থেকে ঝাঁঝালো গলায় চেঁচিয়ে ওঠে,,,

,,,”কি হয়েছে সোনালী,,!! দেখেছিস না আমি কাজ করছি।!!”

আমি বেশ এনজয় করি এই মোমেন্টস গুলো ‌। আম্মুকে এতো অস্থির আগে কখনো দেখিনি।এই প্রথম বলেই হয়তো এতো মজা লাগছে।রাত ভাইয়া এই দুদিন ধরে আমাদের বাসায় থাকে।ভাইযার জোরাজুরিতেই থাকে ,, তার নাকি খুব নার্ভাস ফিল হয়।রাত ভাইয়া সাথে থাকলে নাকি সে ভরসা পায়। তবে রাত ভাইয়া আমাকে হেনস্থা করতে বিরাম দেয় না।এই তো কাল,,,,

সকালে খেতে বসেছি। কোত্থেকে ঢুলতে ভুলতে এসে বসলো আমার পাশের চেয়ারটা।একটু বাদেই নিজে খাচ্ছে আর আর আমার দিকে আড় চোখে চেয়ে বলছে,,

,,”এতো খাস না। এমনিতেই তো আলু হয়েছিস এবার খেয়ে খেয়ে মিষ্টি কুমড়া হোস না।”!!

আমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম রাত ভাইয়ার দিকে। কিন্তু সে খাওয়ায় ব্যস্ত আমার দিকে তাকানোর সময় কোই তার??

আমার ইগোতে লেগেছিল। আমি একটু গোলুমোলু তাই কি খাওয়া নিয়ে ও গোটা শুনবো?? খাওয়া বন্ধ করে বসে আছি।একটু বাদেই রাত ভাইয়া পাশ থেকে বলে উঠলো,,

কিরে ,,তুই কি খাবি ?? নাকি আমি তোর ভাগের টাও খেয়ে নেব,,,সোনা??(বলেই একটা চমৎকার হাসি দিলেন)

সকালের ঘুম ঘুম চোখে ,, অগোছালো চুল আর খোঁচাখোঁচা দাঁড়িয়ে হাসিটা বেশ মানিয়েছে।এটা মন ভালো করে দেওয়ার মতো হাসি।আর সোনা বলে ডাকটা যেন রাগ ভাঙানোর অদ্ভুত কৌশল।জানি এটা মিথ্যে কিন্তু মন যে মানে না,,,।তাই ইগো সাইডে রেখে আবার খাওয়া শুরু করলাম।

বর্তমান,,,

সবাই প্রায় তৈরি হয়ে গেছে। আমি ও রেডি। যেহেতু আমি মেকআপ করি না তাই আমার রেডি হতে বেশি সময় লাগেনা। নীল রঙের একটা গোল জামার সাথে সাদা রঙের ওড়না। চুলগুলো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকে নিলা। এটা আমার কমন চুল বাঁধার স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছে।সে যাই হোক, হালকা লিপস্টিক আর কাজলে নিজেকে সাজিয়ে নিলাম। এবার শুধু বেড়িয়ে পরার পালা।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি।,, মাঝখানে দাড়িয়ে পড়লাম,, বাঁধ সাধলো একজোড়া চোখ। বেশ মায়া ছিল ওই চোখ জোড়ায়।চোখ তো মনের কথা বলে। তবে এই চোখ পড়ার ইচ্ছে থাকলেও ক্ষমতা আমার নেই। থাকলে হয়তো এতক্ষণে পড়ে মুখস্থ করে ফেলতাম।এনার চোখজোড়া পড়ার ভিশন ইচ্ছা আমার।উফফ,,, এখন আমার বিরক্ত লাগছে।চোখ যখন পড়তেই পাড়ব না তো চোখে চোখ রেখে কি লাভ।সড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি চোখ। কিন্তু পারছি না ।মনে হচ্ছে আরো তীব্রভাবে আহত করছে আমায়। ফর্সা গায়ে নীল রঙের পাঞ্জাবিটা অসাধারণ লাগছে।কেমন যেন আমার সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছি।একটু চাঞ্চল্যকর ভঙ্গিতে রাত ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।ইশশশ,,,বলাই হয়নি এতোক্ষণ আমি রাত ভাইয়ার চোখে মায়ায় পড়েছিলাম।চাপা গলায় বললাম,,

,,”রাত ভাইয়া আমাকে ফলো করছেন নাকি ,,?(ভ্রু নাচিয়ে)।

রাত ভাইয়া হকচকিয়ে উঠলেন,,চড়া গলায় বলে উঠলেন,,

,,,”তুই কোন রাজ্যের রাজকুমারী রে ,,যে তোকে ফলো করবো??(ভ্রু কুঁচকে)।

,,,”আসলে ভাইয়া আমরা যে আজ একদম এক রঙের পোশাক পরছি এটা কি খেয়াল করেছেন,,!! আবার আপনিও তাকিয়ে ছিলেন ,,, বেশ আগ্রহ নিয়ে,, একরকম ড্রেস পড়াটা নিতান্তই কাকতালীয় হতে পারে।তবে তাকিয়ে থাকাটাকে কি বলবেন,,,??(কথাটা আমি রাত ভাইয়াকে চমকানোর জন্য যদিও বলেছিলাম,, কিন্তু চমকেছেন বলে মনে হচ্ছে না)‌!!”

রাত ভাইয়া উৎসাহ নিয়ে আমার দিকে তাকালেন।ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,,

,,”জানিস তো হুমায়ূন আহমেদের মতে,,

,,”ধবধবে সাদা ব্লাউজ আর নীল শাড়ি পড়লে মেয়েদের মাঝে একধরনের আকাশ আকাশ ভাব চলে আসে,,!!”

,,”তবে এখানে না আছে শাড়ি না আছে ব্লাউজ, তবুও সেই অংশটা খোঁজার চেষ্টা করছিলাম সোনা,,!”

খুব আগ্রহ দেখিয়ে বললাম,,

,,পেলেন??

সহজ গলায় বললেন,,

,,”পেয়েও গেছিলাম,, কিন্তু মাঝখানে এলো ডালপালার মতো তোর চুলগুলো,,!!”(বলেই হাসলেন)।

যত সহজ ভাবী ইনি ততো অদ্ভুত। এখন লোকটাকে দেখে আমার গা জ্বালা করছে।উনি একদম স্বাভাবিক হলেন। এখন ওনাকে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না এতোক্ষণ এতো হাসাহাসি করছিলেন‌। আমাদের বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে।রাত ভাইয়ার অনেক কাজ। আমাকে অর্ডার দিলেন ভাইয়ার রুম থেকে যেন তার ফোনটা নিয়ে আসি। হুকুম তামিল করতে উপস্থিত হলাম রাত ভাইয়ার রুমে। অনেকক্ষণ খোঁজার পরেও পেলাম না। ভাবলাম একটা কল করি ,, আমার কাছে তো নাম্বার ও আছে। ফোনটা অন করে ডায়ার করলাম রাত ভাইয়ার নাম্বার। ফোনটা বালিশের তলায় বাজছে,, দৌড়ে গেলাম আনতে। ফোনের ডিসপ্লেতে নামটা দেখে আমার চক্ষু কপালে উঠলো। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে পড়লাম বিছানায়।ভাবছি এটা কি সত্যি??চোখ কচলে আবার তাকালাম ।,না,, আমি ভুল দেখিনি। আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো?? একটা চিমটি কাটলাম।

,,”আআআহহহ,,না এটাই বাস্তব।”

রাত ভাইয়ার ফোনের স্ক্রিনে আমার নাম্বারটা ❤️,,”My Life ,,”❤️লিখে সেভ করা। আবার আমার একটা ফোটোও আছে।তাহলে কি রাত ভাইয়া আমাকেই ভালোবাসে?? নাহলে এসবের মানে কি??চোখ বন্ধ করে ভাবছি,,সেদিন রিয়াদ ভাইয়াও কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু পারেননি বলতে। আমাকে জানতেই হবে। কিন্তু কিভাবে আমার কাছে তো ওনার নাম্বার ও নেই। তাহলে,,,? অস্থিরতা বেড়ে চলেছে,, ক্রমশ ঢোক গিলছি,,গলা শুকিয়ে যাচ্ছে,,।সাইট টেবিলের উপর থেকে পানির বোতল নিয়ে কয়েক ঢোক গিলে নিলাম ,,। এবার একটু আরাম বোধ হচ্ছে।দুইয়ে দুইয়ে চার আমাকে করতেই হবে। জেরিনের সঙ্গে কথা বলা দরকার,,ওর কাছে রিয়াদ ভাইয়ার নাম্বার পেলেও পাওয়া যেতে পারে। ফোন করব? না,, সরাসরি কথা বলতে হবে।

একটা বাচ্চার হাতে রাত ভাইয়ার ফোনটা পাঠিয়ে দিলাম ।এই মুহূর্তে আমি তার সামনে যেতে ইচ্ছুক না। উঠে পড়লাম গাড়িতে । মনে একটাই চিন্তা,,

,,রাত ভাইয়ার মনে কি চলছে তার পুরোটাই আমায় জানতে হবে,,!!”

#পর্ব-২২

,,রাত ভাইয়ার মনে কি চলছে তার পুরোটাই আমায় জানতে হবে,,!

❤️
সকলের মত আমি ও গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।রাত ভাইয়া অপূর্ব ভাইয়ার সাথে সামনের গাড়িতে।এ গাড়িতে রয়েছি আমি , আম্মু, ভালো আন্টি,, আরও কিছু গেস্ট। আমার মধ্যে বিভিন্ন চিন্তার বিরাজ।এতো বড় একটা ঘটনা ওদিকে আমি কাউকে বলতেও পারছি না। পেট ফুলে ঢোল হাওয়ায় পালা।আর একটু ফুললেই বাস্ট হতে পারে।তাই জলদি জেরিনের বাসায় পৌঁছানোর দরকার। বেশ উত্তেজনা কাজ করছে আমার মাঝে।ক্রমশ পা নাড়িয়ে যাচ্ছি। ঠোঁট গুলো ও শুকিয়ে যাচ্ছে ।তাই বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছি। লিপস্টিক যেটুকু দিয়ে ছিলাম তা অনেক আগেই পেটে চলে গেছে । হয়তো হজম ও হয়ে গেছে। কিন্তু লিপস্টিক আছে না গেছে তা দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার ‌। আমার উদ্দেশ্য রাত ভাইয়া কি সত্যিই আমাকে ভালবাসে কিনা তা জানা।

গাড়ি চলছে তার নিজের গতিতে,, আমার অস্থিরতা ঘূর্ণিঝড় আমফানের মতো আরো শক্তিশালী হচ্ছে।এই অতিপরিচিত রাস্তাটা যেন আমার একদম অচেনা লাগছে। সকালের উপস্থিতিতে ও নিজেকে একা লাগছে।মনে হচ্ছে সেকেন্ড পরিবর্তিত হয়েছে মিনিটে আর মিনিট , ঘন্টায়। আমার পাশেই বসা ভালো আন্টি ‌। ভালো আন্টি শান্ত গলায় বলছেন,,

,,”মিষ্টি মা??”

কথাটা এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। আমি চিন্তা দমিয়ে রাখতে ঠোঁট কামড়ে যাচ্ছি। ভালো আন্টি এবার সিরিয়াস হয়ে আমার দিকে ঘুরলেন। হাতটা আমার গালে রেখে চিন্তিত গলায় বললেন,,

,,,”মিষ্টি মা ,,?? তুই কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত?? তখন থেকে দেখছি কেমন অদ্ভুত আচরণ করছিস।”

এবার কথা কানে না নিয়ে কোনো উপায় নেই। একজন যখন আপনার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করবে তখন প্রশ্নের উত্তর না জানলেও উত্তর দেওয়ার অদম্য ইচ্ছা জেগে উঠে। আমার ঠিক তেমন,, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়া যাবেনা না। কারন বলব কি??

,,”ভালো আন্টি আমি তোমার হবু পুত্র বধু কিনা সেটা জানার উত্তেজনা আমায় জাঁকিয়ে ধরেছে,,!!”(মনে মনে)

এটা কি বলা যায়??না শুনতে ভালো লাগে??তাই একটু কথা সাজিয়ে নিজেকে শান্ত করে ঠান্ডা গলায় বললাম,,

,,”না না ভালো আন্টি,, তেমন কিছু না। আসলে ভালো আন্টি বুঝলে তো ,, বান্ধবী আর ভাইয়ের বিয়ে একসাথে তো ,,তাই আমি একটু বেশিই এক্সাইটেড।”

ভালো আন্টি বোধহয় আমার যুক্তিতে খুশি হলেন সবকটা দাঁত বের করে একটা ক্লোজ আপ হাসি দিলেন। এক্সাইটেড গলায় বললেন,,

,,”জানিস মিষ্টি মা আমার ও একই অবস্থা আমিও বেশ এক্সাইটেড।।”

এরপর সব ইতিহাস,,, ভালো আন্টি সেই যে শুরু করল গাড়ি থেকে নামার আগে পর্যন্ত ননস্টপ রেডিও থেরাপি দিলেন।এ রেডিও সেই রেডিও না ,,এতো কথার রেডিও। যথেষ্ট চিন্তা আর বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।কে নামল না ,না নামল সেদিকে মাথা ঘামানোর সময় নেই। আমি তো দৌড় দিলাম জেরিনের রুমে।

জেরিন সবে মাত্র শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো চুল মুছতে মুছতে। দরজা লক করা। আমি গিয়ে দুমদাম দরজা ধাক্কা দিচ্ছি। জেরিন চেঁচিয়ে উঠলো,,,,,

,,,”ওফফফ,,,কে এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছে??

ওর চেঁচামেচিতে আমার আর ও মাথা খারাপ হচ্ছে। এপাশ থেকে আমি হুমকির স্বরে গর্জে উঠলাম,,,

,,”এই ইডিয়ট আমি,,,। তুই কি দরজা খুলবি নাকি ভেঙে ফেলব??

জেরিন জিভে কামড় দিয়ে দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিল । ড্যাবড্যাবে চোখে অসহায় ভাবে তাকাল আমার দিকে । কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে,,

,,,”কিকিরে কি হহয়েছে,,? তুই এমন সাইক্লোনের মতো করছিস কেন??

সাইক্লোনের মতো?? ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম।ও আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বসাল বিছানায়। নিজেও বসল, পাশ থেকে পানির গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,,

,,”নে পানি খা,, তারপর বল কি হয়েছে??

আমি ও পানিটা খেয়ে শান্ত হয়ে বসলাম।কথা যেন টগবগিয়ে ফুটছে। তার মধ্যে থেকে টপ করে একটা কথা পারলাম,,

,,,,”জেরি,,,রাত ভাইয়া বোধহয় আমাকে ভালোবাসে,,!!”(বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম)

আমার কথা শুনে জেরিন একদম পাথর হয়ে গেল। এমনকি চোখের পলক ও ফেলছে না। আমি সজোরে ওকে ঝাঁকুনি দিলাম। জেরিন কিছুটা হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালো। মুহুর্তে মুখে হাসির রেখা টেনে আমার চোখে চোখ রেখে বলল,,

,,,সোনু সত্যি??

আমি একটু অন্য ভঙ্গিতে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,,

,,,জেরি আমি সিওর না।আজ কি দেখেছি জানিস,,,?

ও উদ্বিগ্ন গলায় বলল,,

,”,কি হয়েছে বলল?”আর অপেক্ষা করাস না,, নাহলে দেখবি উত্তেজনায় হার্ট এ্যাটাক হয়ে যাবে।”

আমি একে একে পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। জেরিন হা করে তাকিয়ে আছে । মশা ঢুকেছে বইকি ,,হজম ও হয়তো হয়ে গেছে ‌। বেচারা খুব বড় একটা শকড্ পেয়েছে।এই শকডে্ বেচারার স্মৃতি শক্তি না চলে যায় ‌। খুব বড় রিক্স।না এত বড় রিক্স নেওয়া যায় না।ওর কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকুনি দিয়ে ডাকতে লাগলাম,,

,,,”জেরি তুই আছিস ??না টপকে গেছিস??”(বলে উপড়ে তাকালাম)

জেরিন স্বাভাবিক হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলছে,,

,,সোনু তুই কি বলছিস?? বিয়ের আগেই আমার বরটাকে বিধবা করবি নাকি??

ওর কথা শুনে দুজনেই রুম কাঁপিয়ে হাসছি। আমি এবার একটু নারমাল হলাম। অস্থিরতা কমেছে অনেকটা। আমি এবার সিরিয়াস হলাম,,।বসা থেকে উঠে দাড়ালাম আর জেরিনকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,

,,”দেরি সত্যিটা জানতে আমাদের রিয়াদ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে হবে।এই রহস্য থেকে পর্দা উনিই উঠাতে পারবেন।”

জেরিন একটু অবাক হলো। অবাক নয়নে চশমা পড়তে পড়তে বলল,,

কি বলছিস তুই আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। এখানে রিয়াদ ভাইয়া আসলো কোথা থেকে??”

আমি সরল গলায় বললাম,,

,,,তোর মনে আছে জেরি যেদিন রিয়াদ ভাইয়া আমাদের সাথে কথা বলতে এসেছিল??সে তার কথা শেষ করতে পারেনি। তার শেষ কথাটা ছিল ,,”আমি জানতাম না যে তুমি কার ভালোবা,,”এখানে উনি হয়তো ভালোবাসার কথা বলতে চাইছিলেন। আমি সিওর যে উনি ই জানেন । এখন বল তোর কাছে ওনার নাম্বার আছে কিনা??”

ও ঝটপট উত্তর দিল,,

,,হ্যাঁ,,দাঁড়া দিচ্ছি‌।‌‌‍‌

জেরিন বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে নাম্বার বের করে ডায়াল করল। আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,,

,,”নে সোনু রিং বাজাচ্ছে।”

আমি ফোনটা কানে ধরলাম,,একটু বাদেই ফোন ধরল রিয়াদ ভাইয়া। গম্ভীর গলায় ওপাশ থেকে বলে উঠলো,,

,,”আসসালামুয়ালাইকুম,,,কে বলছেন?”

আমি মিষ্টি করে সালামের উত্তর দিলাম,,

,,”ওয়ালাইকুমুস আসসালাম,,ভাইয়া আমি সোনালী বলছিলাম ,,চিনতে পেরেছেন??”

উনি ছোট করে একটা হাসি দিয়ে বললেন,,

,, হ্যাঁ চিনতে পেরেছি । আচ্ছা কেমন আছো তুমি?আর হঠাৎ কি মনে করে আমায় স্বরন করলে??

আমি একটু স্বাভাবিক সরল করে প্রশ্ন করলাম,,

,,”ভালো আছি ভাইয়া কিছু কথা জানার ছিল তাই আপনার শরনাপন্ন হলাম “”

, মিষ্টি করে বললেন,,

,,”আরে এতো ফর্মালিটির দরকার নেই
। তুমি যা জানার ,,বল আমায়।”

পাশ থেকে জেরিন বলল ফোনটা লাউড স্পিকারে দিতে। দিলাম। আমি অতি সহজভাবে বললাম,,

,, আচ্ছা ভাইয়া সেদিন আপনি বলতে চাইছিলেন যে,, আপনি আগে জানতেন না যে আমি কার ভালোবা,,, এটুকু বলে আর বলতে পারেন নি। আপনি আসলে কি বলতে চাইছিলেন ?? প্লীজ একটু বলবেন ??”

রিয়াদ ভাইয়া একটু হেসে বললেন,,

,,”ও এটা নিশ্চয়ই বলব,, আসলে তুমি যে রাত ভাইয়া আমি মিন রাত স্যারের ভালোবাসার মানুষ সেটা আমি জানতাম না। যেদিন তোমায় প্রোপোজ করতে যাই সেদিন প্রথম জানতে পারি। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি,,সেদিন তুমি যাওয়ার পড় দুটো ছেলে আমার নিয়ে যায়।তারা একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে গিয়েছিল। আমি একটা চেয়ারে বসে ছিলাম। তারা দুজন বললেন,,রাত স্যার নাকি আমার সাথে কি কথা বলবে।একটু পরেই রাত স্যার আসলেন।আর তার ভালোবাসার কথা বললেন‌।উনি তোমায় অনেক ভালোবাসেন। রিতিমত ছোটবেলা থেকেই ।সেদিন হয়তো খেয়াল করেছ ভার্সিটির সব ছেলেমেয়ে তোমার দিকে অস্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে ছিল। সেদিন রাত স্যার প্রতিটি ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে সবাইকে ওয়ারনিং দিয়ে এসেছে।যেন কোন ছেলে তোমার দিকে চোখ তুলে না তাকায়।যে তাকাবে তাকে টুকরো টুকরো করে দেবে। সেদিন সিহাব ভাইয়াকে ও তুলে নিয়ে বেধারাম পিটিয়েছে।ইভেন তোমার সেফটির জন্য ই নাকি উনি ভার্সিটিতে জয়েন করেছেন।এমন আরও অনেক ছোট বড় বিষয়ে উনি তোমার খেয়াল করে। একদিন সময় করে সব বলব। তুমি সত্যিই খুব লাকি ওনার মতো একজনকে পেয়ে।,,”

রিয়াদ ভাইয়া কথা গুলো আমার কানে বাজছে।”ভালোবাসা”হ্যাঁ মানে সত্যিই রাত ভাইয়া আমায় ভালোবাসে। আমার নয়ন থেকে দু ফোঁটা অশ্রু পড়ে গেল। এটা ছিল আনন্দ অশ্রু।ওপাশ থেকে রিয়াদ ভাইয়া বলছেন,,

,, হ্যালো সোনালী ,, তুমি কি শুনতে পারছো??

আমার মাথায় একটা সয়তানি বুদ্ধি কাজ করছে। আমাকে এতো দিন কষ্ট দেওয়া?? দেখাচ্ছি মজা।

,,”মিস্টার রাত এবার বুঝবে এই সোনালী কি জিনিস!! হাড়ে হাড়ে টের পাবেন!!”

চলবে??❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here