ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ৮+৯

পর্ব ৮+৯
#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-৮

আজ আবার কি অপেক্ষা করছে কে জানে?

❤️
সবাই যে যার মতো গল্পে ব্যস্ত। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যার আবছায়ায় পা রাখছে কিন্তু রাত ভাইয়ার এখনো দেখা মেলেনি।একটু আগেই ভালো আঙ্কেল ফোন করেছিল রাত ভাইয়াকে,,বলেছে আধা ঘন্টার মধ্যে চলে আসবে।রাত ভাইয়ার বাবা মার কোন মেয়ে নেই আর আমাদের বাড়িতে ও আমি একা মেয়ে,,তাই মোটামুটি সকলের আদরের ।রাত ভাইয়ার বাবা-মার একটু বেশিই আদরের।তাই আমি তাদের ভালো আঙ্কেল -আন্টি বলে ডাকি। যদি ও আমার নাম সোনালী কিন্তু যখনই দেখা হবে ভালো আঙ্কেল এক গাল হাসি দিয়ে বলে ওঠে “মিষ্টি মা” তুমি কেমন আছো? সাথে করে আনবে একটা ডেইরি মিল্ক। আজ ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এটা ওনার ডেইলি রুটিন। আমি ও কিছু কম যাই না,, চকলেট গুলো যদি ও না ফেরার দেশে চলে গেছে কিন্তু খোসা গুলো রেখেছি সযত্নে ,, উদ্দেশ্য একদিন ফুরসতে দেখাবো ভালো আঙ্কেলের জন্য জমিয়ে রাখা ভালোবাসা গুলো।

রান্না ও প্রায় শেষের দিকে,, সবাই জয়েন করেছে‌ আড্ডায় শুধু মা আর ভালো আন্টি বাদে। অন্ধকার নেমে আসায় ছাদের লাইটগুলো অন করা হলো। তখন রাত নিয়ে উদয় হলো রাত ভাইয়ার। ব্ল্যাক থ্রি কোয়াটার সাথে এস কালারের টিশার্ট পড়নে চুলগুলো ভেজা যদিও পানি পড়ছে না। তার মানে শাওয়ার নিয়েছে। বেশ সুদর্শন লাগছে বটে। আবছা অন্ধকারে ওনার ফর্সা মুখটা উজ্জ্বল বর্ন ধারন করেছে। অন্ধকারে এ যেন এক আলোর জোতি সরুপ।আর কিছু দেখবো যাবো তার আগেই চোখ পড়ল তার হাতে রাখা বক্সটার দিকে। ইচ্ছে হচ্ছিল বাক্সটা এক দৌড়ে লুফে নেই রাত ভাইয়ার হাত থেকে। কিন্তু না এই সভায় এমন আচরণ করলে মানসম্মত বলে বিবেচিত হবে ‌না।তাই ,,কাম ডাউন সোনালী নিজের লোভের দরজা তালা এঁটে দাও সোনালী। নিজেকে সান্তনা পুরস্কারে পুরুস্কৃত করে ঢায় বসে রইলাম। মনে হচ্ছে যুদ্ধে নেমেছি যার‌ প্রতি পক্ষ হচ্ছে লোভ।সে যাই হোক একটি ক্ষুদ্র প্রানি আমার পাশ থেকে বলে উঠলো:

,,রাত তুই এসে গেছিস?আয় আয় বোস।(এই প্রানিটি আর কেউ না ,, আমার ভাইয়া। বলেই আমাদের দুজনের মাঝে জায়গা করে দিল রাত ভাইয়ার বসার জন্য। তিনি ও হেলে দুলে এসে আমার পাশে বসে পড়ল)।

হাতের বক্সটি আম্মুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল :

আন্টি বাক্সটা নিন।(আম্মু ও হাসি মুখে বক্সটি নিল)

সভা বেশ জমে উঠেছে। ভাইয়া ঠিকই বলেছিল রাত ভাইয়াকে ছাড়া ঝলসা অসম্পূর্ণ।সবাই বেশ খোশ মেজাজে আছে।বিনা বাধায় সবাই যে যার ‌মনের কথা ব্যক্ত করছে। একটা সময় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বিয়ে। আপাতত এটা ভাইয়ার বিয়ে পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।রাত ভাইয়ার বিয়ের প্রসঙ্গ হয়তো উঠতো যদি না সে ভাইয়ার ৫দিনের ছোট হতো। ভালো আঙ্কেল বলল:

হ্যাঁ তাইতো,, দুই ফ্যামিলিতে এখন তো ওই বড় ।আর বিয়ের বয়স ও হয়েছে।কি বলিস আশরাফ (আমার বাবা) মেয়ে খোঁজা শুরু করবো।(কিছুটা দুষ্টু ভঙ্গিতে)

বাবাও হাসতে হাসতে বলে উঠলো:

,, হ্যাঁ হ্যাঁ মেয়ে তো খুঁজতেই হয়।

ভাইয়া কিছুটা লজ্জিত বোধ করছে। মুখটা কাচুমাচু করে আছে হয়তো কিছু বলতে চাইছে। আমি তো মনে মনে বেজায় খুশি ।হাসিও পাচ্ছে বেশ।সবাই যার জন্য মেয়ে খোঁজার কথা বলছে।সে একবছর আগেই মেয়ে ঠিক করে বসে আছে। ভাইয়া লজ্জায় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না।তাই ঠিক করলাম বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা আমিই বাধব। কারণ ভাইয়ার বিয়ে ‌নিয়ে সকলের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই ,,আম্মু তো রিতিমত বিয়ের কমিউনিটি সেন্টার ও ঠিক করে ফেলেছে।তাই অদম্য সাহস নিয়ে যেই বলতে যাবো পাশ থেকে রাত ভাইয়া ঠোটের কোনায় একটা রহস্যজনক হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলেন:

,গাইস এতো মেয়ে খোঁজার জলদি কেন ? আমার কাছে একটা ভালো অপসন আছে।

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে রাত ভাইয়ার দিকে।সবার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে কৌতুহলের ছায়া ‌। উঠবেই না কেন,, পরিবারের প্রথম সন্তানের বিয়ে,, তার জন্য মেয়ের অপসন,,কে সে ? কি করে ? পরিবার কেমন?এসব বিত্তান্ত তো জানতেই হবে। এক্ষেত্রে আমরা চিন্তা অন্যদিকে যেহেতু ভাইয়া জেরিনকে ভালোবাসে তাহলে তো ওকেই বিয়ে করতে চাইবে,, আর সেখানে রাত ভাইয়া কার না কার কথা বলে সকলের মন পরিবর্তন না করে দেয়,,,,হায় আল্লাহ কি করতে চলেছে এই লোকটি,,,

রাত ভাইয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

, আমি যার কথা বলব তাকে হয়তো অপূর্বর (আমার ভাইয়া)ও অপছন্দ হবে না। আর বেশি দুরে ও যেতে হবে না।

দফায় দফায় সবার কৌতূহল পর্ব বিশেষে বেড়েই চলেছে। কোন ‌মেয়ে যাকে ভাইয়ার ও পছন্দ হবে??বড় ভাববার বিষয়। সকলে উৎসাহের কোন শেষ নেই।সবাই জোরাজুরি শুরু করল মেয়েটির নাম শোনার জন্যে।

রাত ভাইয়া এবার হাঁটে হাঁড়ি ভাঙবে। সেটা আমি বুঝেছি ভাইয়াকে দেখে,, বিচিত্র ভঙ্গিতে মুখ করে বসে আছে।রাত ভাইয়ার এবার হাত নাড়িয়ে ইশারা করলেন সবাইকে থামতে আমার বললেন,

আচ্ছা আচ্ছা ,, বলছি।

সবাই ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে রাত ভাইয়ার দিকে ,,রাত ভাইয়া চুল ঠিক করতে করতে বলল,

,, “জেরিন”

নামটা শুনে চিন্তায় পড়ে গেল জেরিনটা আবার কে? আম্মু হঠাৎ বলল:

,, জেরিন মানে সোনালীর বান্ধবী??

আমি ঠোঁটে একটা ক্লোজ আপ হাসি এটৈ ,,

হ্যাঁ আমার বান্ধবীটা তো অনেক ভালো। ওকে আমার ভাবী ডাকতে কোনো প্রবলেম নেই।

ভালো আঙ্কেল চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে,

হ্যা,, আমি ও দেখেছি ।সেদিন আশরাফের বাসায় বিকালের আমারা কথা বলছিলাম ,, তখনই তো মিষ্টি মার সাথে এসেছিল। বেশ মিষ্টি মেয়ে কি মিষ্টি মা আমি ভুল না হলে সেই‌ মেয়েটির নাম ই তো জেরিন নাকি?(আমাক উদ্দেশ্য করে)।

আমি ও হাসি মুখে বললাম ,

,, হ্যাঁ ,, ভালো আঙ্কেল ।ওই জেরিন।

সবাই একজন আরেকজনের চোখাচোখি করছে।এর মানে হচ্ছে ,”ডাল মে কুছ কালা হে”!! এবার ডালের কালাটা বের হওয়ার পালা। আব্বু মুচকি হেসে চায়ের কাপে চুমুক ‌ দিয়ে গম্ভীর সুরে বলল,

,, মেয়ে যে ভালো তাতো আমারা জানি কিন্তু অপূর্বর কি পছন্দ হবে?

রাত ভাইয়া ,, ভাইয়ার কাধে হাত রেখে সকালের দৃষ্টির অগোচরে চোখ মেরে ভাইয়াকে জিঙ্গেস করছে ,

,,তাই তো,, কিরে মেয়ে কি পছন্দ হয়েছে? নাকি আমরা অন্য কোথাও মেয়ে খুজবো??

তাল মিলিয়ে ভালো আন্টি বলছেন,

,, হ্যাঁ রে রাত অপূ তো কোন কথাই বলছে না। তাহলে কি অপূর মেয়ে পছন্দ হলো না?? তাহলে আমরা অন্য মেয়ে,,,,,

আর কিছু বলার দরকার পড়ল না তার আগেই ভাইয়া লাজ-লজ্জা ছুড়ে ফেলে বলে দিল,

,, আমার জেরিন কেই পছন্দ । আমি ওকেই ভালোবাসি। আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই।(এক শ্বাসে সব বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখটা লজ্জায় লাল করে বসে আছে)

আমিও অবাক ,,এই যা সব বলে দিলো?? আমাকে আরো অবাক করে সবাই এক সাথে হাসতে শুরু করলো । এটা হচ্ছে বিজয়ের হাসি। কারণ সবাই ভাইয়ার মুখ থেকে এই কথা গুলোই শুনতে চাইছিল ।তাই এই বিজয়ের হাসি।সবাই বিযষয়টাতে বড্ড খুশি। আব্বু বলল বেপারে জেরিনের বাবার সাথে পড়ে কথা বলবে। এতোক্ষণে একটা জিনিস ক্লিয়ার তা হলো রাত ভাইয়ার আজকের ধামাকাটা ভাইয়ার জন্য ছিল,,

এতো কিছুর মধ্যে একটা বিষয় আমার চোখ এড়াতে পারেনি। সেটা হলো রাত ভাই মাঝে মধ্যেই আমার পায়ের দিকে এক চোখে চেয়ে ছিল।সব সময়ের মতো এবারও আমার মাথায় কিছুই ঢোকেনি আসলে কি চলছে ওনার মনে।
সবার খাওয়া প্রায় শেষ। আমার খাওয়া শেষ হওয়ায় আম্মু ফ্রিজ থেকে রসমালাই নিয়ে আসতে বলল।তাই নিচে নেমে কিচেনে গেলাম রসমালাই আনতে। বাম হাত দিয়ে ফ্রিজ খুলে ডান হাতে বাটি নিয়ে যেই পিছনে ফিরলাম ওমনি কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ব‌ পড়ব তখনই তিনি আমার কোমড়ে হাত দিয়ে সামলে নিলেন আমাকে।

আমি তো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম,

,,বাবা বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম। পড়লেই কট করে কোমড়টা ভেঙে যেতো।(নেকামি করে ) তাহলেই তো আর বিয়ে হতো না।

কানে আসলো রাত ভাইয়ার কন্ঠস্বর। হালকা গলায় বললেন,

,,বাঃ বিয়ে করার এতো সখ??
চারদিকের নিস্তব্ধতায় তার বলা প্রতিটা শব্দ আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে। আস্তে করে ওনার দিকে তাকাতেই ওনার চোখে চোখ পড়ল। কি সুন্দর দুটি চোখ,, যাকে বলে পটল চেরা চোখ,, তার উপর বড় বড় এক রাস পাপড়ি।এক অজানা নেশা তার চোখে।এই নেশার অতল গহ্বরে ডুবে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু ওনার তো ভালোবাসার মানুষ আছে।,,

নিজেকে ওনার থেকে ছাড়িয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই একটা হেচকা টান মেরে দেয়ালের সাথে মিশে নিয়ে ওনার দুই হাত দেয়ালে ঠেকিয়ে আমাকে লক করে ফেললেন।গোলগো চোখে চেয়ে আছি কারণ আমি জানতে চাই কি হচ্ছে এখানে? কেন হচ্ছে? হঠাৎ পায়ে কারো উষ্ণ পরশে আমি কেঁপে উঠলাম।রাত ভাইয়া ওনার পা দিয়ে চেপে ধরেছে আমার পা। উনি এখন আমার একদম কাছে বলতে পারেন আমার কলিজার উপর উঠে আছেন। ওনার বুকের ধকধক শব্দে কেঁপে উঠছে আমার পুরো শরীর। আমি স্টেচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

উনি মুখটা কানের কাছে এনে বললেন,

,, তুই নূপুর পড়েছিল কেন?
এমন একটা মুহূর্তে এই কথাটা খুবই বেমানান ‌। আমি ঢায় দাড়িয়ে আছি। মুখের খিল ভেঙে কোনো কথা বেরোলো না।

উনি আবার বললেন,

কিরে বললি না তো?

ওনার এক হাত পকেটে গুজতে দেখে পাশ কাটিয়ে দিলাম দৌড় আর বললাম,

আপনাকে কেন বলব??আর পেছনে তাকাইনি,,হয়তো লজ্জা পাবো তাই….

বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। গায়ের ওনাটা পাশে রেখে বাম হাতে পানির বোতলটা নিয়ে পানি খাচ্ছি। আর ভাবছি,,

রাত ভাইয়া যেমনি হোক ,, মানুষটার মনটা অনেক ভালো। মাথায় বুদ্ধি ও বেশ কিভাবে ভাইয়ার বেপারটা মেনেজ করে নিল। তবে ভালোই হয়েছে ওদের বিয়েটা হলে অনেক মজাই হবে। জেরিন আর আমি এক বাড়িতে থাকতে পারব। আরো কতো কি,,,,ওহো,,,আই এম সো এক্সাইটেড,,। কিন্তু রাত ভাইয়া??ওনার ওই চাওনি বারবার আমায় কোনো কিছুর ইঙ্গিত দেয়। তবে ওনার ভালোবাসার মানুষের কথা মনে পড়লেই আমি কেন অশান্ত হয়ে পড়ি?উনি বা কেন আমাদের ভার্সিটিতে জয়েন করলেন?সিহাব ভাইয়া বা কোথায়?রিয়াদ ভাইয়া কি বলতে চাইছিল? রাতের সেই অগ্যাত ব্যাক্তি কে?
উহহহ,,, মাথায় হাজারো প্রশ্ন এই সব কিছুর উত্তর আছে একজন ব্যক্তির কাছে,,রাত ভাইয়ার কাছে,, কিন্তু ওনার কাছে গেলেই আর কিছু বলতে পারিনা।কাল বলব,, হ্যাঁ কাল বলবই,,,,

#পর্ব-৯

,,কাল বলব,, হ্যাঁ কাল বলবি,,,,

,, সকালে উঠে প্লেনের গতিতে রেডি হচ্ছি,, কোথায় ভেবেছি ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে রাত ভাইয়াকে সব জিজ্ঞেস করব ,,সে আর হোলো কোথায় শিক্ষক মানুষ তার কি আর লেট করে ভার্সিটিতে যাওয়া মানায়??তিনি হয়তো এখন ভার্সিটিতে আছেন। তার উপর আবার ওনার যেই টাইম সেন্স ,,, আর আমি?? আমি এখন ও বাসায় । না না ,, তাড়াতাড়ি কর সোনালী,,এসব হচ্ছে কাল রাতে দেড়ি করে ঘুমানোর ফল।যার ফলে সব কাজেই লেট হয়ে গেল।

ওড়নাটা গলায় ঝুলিয়ে,, চুলগুলো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকে নিলাম। ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে দৌড়,,আজ আর ব্রেকফাস্টের টাইম নাই।

আজকাল আর রিকশা পেতে ঝামেলা পোহাতে হয় না। ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে কোথা থেকে সেই রিকশাওয়ালা হাজির হয়।তবে এতে আমার ও কোনো প্রবলেম নেই। কারণ আমার অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় না।আর কিভাবে আসলো বা কে পাঠালো তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই,,আম তো খাচ্ছি আমের আঁটি গুনে কি হবে??আজ প্রচন্ড গরম,, সূর্যের যেন আজ একটু বেশিই মায়া হয়েছে একানার মানুষের উপর। আমি তো ঘেমে একাকার।৫৭মিনিট পড় একটা বড় গেটের সামনে এসে থামল রিকশা ।এটা অবশ্য আমার চেনা গেট। হ্যাঁ এটাই ভার্সিটির গেট। জেরিন বেচারি ক্লাস মিস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য। ভাড়া মিটিয়ে সোজা জেরিনের কাছে হাজির। হাতের কব্জি ধরে ঝাকুনি দিয়ে বললাম,

,,সরি রে দোস্ত,,।,, ঘুম থেকে উঠটে দেরি হয়ে গেছে তাই।

অভিমান ভরা মুখে জোরপূর্বক একটা মুচকি হাসি টেনে বলল,

,, হয়েছে আর সরি বলতে হবে না।এটা তোমার রেগুলার ঘটনা। একবার যাই না তোদের বাড়ি,, তোকে একদম টাইট দিয়ে দেব।(খিলখিল করে হেসে)

সাথে আমি হেসে বলছি,

,,চল এখন,,, খুব তাড়াতাড়িই তো আসছিস তখন না হয় সব হবে।(ক্লাসের দিকে যেতে যেতে)।

বারবার উকি ঝুকি দিচ্ছি এদিক ওদিক।চোখ দিয়ে হাতরাচ্ছি । হাজার স্টুডেন্ট এর ভীড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি । যদি কোথাও রাত ভাইয়ার দেখা মেলে । ওনাকে যে আমার বড্ড দরকার। কিন্তু উনি কি আজ ভার্সিটিতে আসেনি? এখন রাত ভাইয়ার ক্লাস নাতো?দেখি তো জেরিনকে জিজ্ঞেস করে,,যেই বলা সেই কাজ,,ঠাসস করে জিজ্ঞেস করলাম,

আচ্ছা এখন কার‌ ক্লাস বলতো?

জেরিন কিছুটা স্বাভাবিক ভাবেই বললো,

,,এখন তো লিমা ম্যামের ক্লাস।

“লিমা” নামটা শুনে আমি একটু অবাক হলাম আর অধীর আগ্রহে চেয়ে আছি জেরিনের দিকে,,খুজছি একটি নাম। হঠাৎ ই দুজন একসাথে বলে উঠলাম,

“ঠিক আছে” ম্যাম????(বলেই দুজনে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছি)।

এর একটা যথার্থ কারন আছে বটে।ইনি হয়তো পাঁচ দিন নাওয়া খাওয়া বন্ধ রাখতে পারেন কিন্তু “ঠিক আছে” বলা না। আকাশ মাটির ভুবনে এই একজন “ঠিক আছে” বলা ব্যাক্তি।এ নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই।তবে ভদ্র মহিলার কানে এখন ও খবরটি পৌঁছায়নি। আড়ালে আবডালে ওনার ডাক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে “ঠিক আছে” ম্যাম বা মিস “ঠিক আছে”।

ক্লাসে ঢুকেছি আমরা।ম্যাম ও ক্লাসে উপস্থিত। ক্লাসের প্রথম দিন থেকেই ম্যামের আকর্ষণ একটু অন্যরকম আমার প্রতি।তাই খেয়াল টাও একটু বেশি করেন। ওনার ব্যাগটা পাশে রেখে বইটা খুলে শুরু করলেন পড়ানো।

থেমে থেমে একটু পর পর মিট মিট করে হেসে দিচ্ছি।এর পিছনে কিছু গুপ্ত ঘটনা আছে যেটা আমি জানতে দিতে চাইছিলাম না তাই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টায় আছি। কিন্তু ভদ্র মহিলার চোখ এড়িয়নি আমার হাসি,, হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে বললেন,

,, সোনালী কি বেপার? আমি পড়াচ্ছি আর তুমি হাসছো কেন?

এইতো ফেঁসে গেলাম । এখন কি বলব?? পাশের একটা মেয়েকে টুক করে ফাঁসিয়ে দিলাম,

,, আসলে ম্যাম,, ওরা হাসাহাসি করছে দেখে আমার ও হাসি পেয়ে গেল।

“সোনালী ” বেশ একটা বিশ্বস্ত প্রানি এই মহিলার কাছে ।তাই সকালের উদ্দেশ্যে বললেন,

,,সবাই পড়ায় মনোযোগ দেও ।এন্ড ডোন্ট লাফিং,, নাহলে আমি রেগে যাবে।

আমার এবার আরো বেশি হাসি পেল।,,কি আজব মানুষ,, রাগ করবেন সেটাও আগে থেকে সতর্ক করছেন। তবে সব কথা যেমন সব জায়গায় বলা যায় না ঠিক তেমনি সময় আর ব্যাক্তি ভেদে হাসিকে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।তাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলাম।

দীর্ঘ ১ঘন্টার মানসিক চাপের পরে ক্লাস শেষ হলো।এই মানসিক চাপটা ছিল না হাসতে পারার।ম্যাম বেরোতেই ক্লাসে সাড়া পরল “কয়বার”??

,,৮৭ বার,,

আসলে আমি গুনছিলাম ম্যাম একঘন্টায় কতোবার “ঠিক আছে ” বলে।তাই উনি যখন ঠিক আছে বলছেন আমি তখন হাসি আটকাতে রাখতে পারছিলাম না।এতো হাসির আওয়াজ ভেদ করে ফোনের টুং টাং রিংটোন কানে আসলো। একটা ম্যাসেজ,,

“এখনি পার্কিং এ আয়”

আমার আর বুঝতে দেড়ি হলো না ম্যাসেজটি রাত ভাইয়ার এটা বুঝতে। কোনো রকম ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দৌড় পার্কিংয়ের দিকে। বেশি লোক নেই পার্কিংয়ে,, বেশ ফাঁকা। একটা ডেসিং লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রাআত ভাইয়া।কফি কালার শার্ট সাথে ব্ল্যাক পেন্ট ,, চুল গুলো হাল্কা এলোমেলো। পকেটে বাম হাত দিয়ে ‌ডান হাতে ফোন টিপছে।

,,,ইশশশশ,, ইচ্ছে হচ্ছে সোজা গিয়ে একটা কিস করে দেই গোলাপী ঠোটে,,সাধে কি বলি চকলেট কেক। কন্ট্রোল সোনালী,, কন্ট্রোল।

ফোন টিপতে টিপতে রাত ভাইয়া বললেন,

সোনালী ,, গাড়িতে ওঠ।

উনিতো ফোন টিপছেন তাহলে আমি এসেছি বুঝলেন কিভাবে ??

উনি আবার বললেন,

,,তোর উপস্থিতি বুঝতে আমার তোর দিকে তাকাতে হয়না ,, গাড়িতে ওঠ তুই।

,,কি আজব ?? আমার মনের কথা বুঝলেন কিভাবে? লোকটাকে যতই দেখছি অবাক হচ্ছি। গাড়ির ফ্রন্ট সিটে গিয়ে বসলাম।উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। কিন্তু আমরা কোথায় যাচ্ছি??

ড্রাইভ করতে করতে বললেন,

কিছু বলবি?

একটু ইতস্তত বোধ করে আবার জিজ্ঞেস করলাম,

,, আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?

এবার আমার দিকে এক পলক চেয়ে ব্রেক কষলেন ,,এটা ছিল একটা রেস্টুরেন্ট। এখানে এলাম কেন?কি জানি এনার মাথায় কি চলছে,, আচ্ছা ওনার গালফ্রেন্ডের সাথে দেখা করাতে আনলেন??,,কি জানি??শেষে কি এটাই বাকি ছিল??

,, চলবে,,,?

****এমন একজন ম্যাডাম আমার কলেজে আছেন।আর এই পুরো ঘটনাটা সত্যি । সবার কেমন লাগবে জানিনা। কিন্তু খুব লিখতে ইচ্ছে হলো তাই লিখলাম। ধন্যবাদ গাইস গল্পটা পড়ার জন্য।****

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here