পর্ব ১৫+১৬
#ভালো তোকে বাসতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব_১৫
,,”সেটা ভাবতেই আমার হাত পা অসার হয়ে যাচ্ছে।রাগে মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,,
❤️
লোকটা কি ভাবে কি করে কিছুই আমার মাথায় ঢোকে না।এতো কিছুর মাঝে একবার ও প্রিতি আপুর দেখা মেলে নি। আমাদের খাওয়া দাওয়ার সময় ও ওনাকে দেখিনি। একটা ব্যাপার ভাবতেই মনটা শীতল হয়ে যায়। সেটা হলো ,,, আমি যে ইচ্ছে করে সরবতটা ঢেলে দিয়েছি এটা রাত ভাইয়ার বোধগম্য হয়নি। আবার আর একটা বিষয় ভাবলেই শরীরে অস্থিরতা বাড়তে থাকে,,,”রাত ভাইয়ার মুখোমুখি হলে সে আবার কি করে বসে।এই সবকিছুর মাঝে মজার ঘটনা হলো ,,রাগী লুক হোক আর হাসিখুশি,, ওনার মুখটা দেখলেই এক অজানা অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু ওনার কর্মকান্ডের বিন্দুমাত্র ও আমার মাথায় ঢোকে না।
বড়রা সবাই গাড়িতে উঠে পড়েছে। তাদের গাড়ি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। আমরা
যেই গাড়িতে উঠতে যাব ঠিক তখন আরো এক বিপত্তি এসে হাজির।এক অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন আসল অপূর্ব ভাইয়ার ফোনে। তাকে নাকি এখনি কোথাও যেতে হবে। তার একজন ফ্রেন্ড এসে পিক করবে।রাত ভাইয়াকেও বেশ স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার ভয় লাগছে ,, কোথাও ঝড়ের পূর্বের শান্তি নয়তো??নির্বাক বচনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছি,, অপূর্ব ভাইয়ার বন্ধুর জন্য। তবে বেশ অপেক্ষা করতে হয়নি।৫ মিনিট বাদেই বাইক নিয়ে হাজির হলো এক যুবক।ইনিই হলেন মাননীয় ভাইয়ার বন্ধু। আমি আগেও দেখেছি ওনাকে।আমি দেখে সালাম দিলাম।উনিও মিষ্টি করে উত্তর দিয়ে ভাইয়াকে নিয়ে বের হলেন। ওদিকে রাত ভাইয়া ড্রাইভারকে বলে দিল এখান থেকে রিকশা নিয়ে বাসায় চলে যেতে।উনি নাকি নিজেই ড্রাইভ করবে। কিন্তু টেনশনে আমার অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।ভাইয়াটাই বা কেমন মানুষ ,,?? নিজের যুবতী বোনকে কেউ এইভাবে বন্ধুর ভর্সায় ফেলে চলে যায়??(ভেঙচি কেটে)।
রাত ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলেন ।আমিও গুটি গুটি পায়ে বেক সিটের দরজাটা খোলার সাথে সাথে রাত ভাইয়া গর্জে উঠলেন,
,,”এই আমাকে কি তোর ড্রাইভার মনে হচ্ছে??যে পেছনে গিয়ে বসছিস।”
হঠাৎ করে এমন গর্জন শুনে আমি একটু কেঁপে উঠলাম।আর চরণের গতি বদলে ছোট ছোট পা ফেলে গাড়ির সামনের সিটে গিয়ে বসলাম। জানালার দিকে মুখ করে বসে আছি।রাত ভাইয়াও কোনো কথা না বলে ড্রাইভিং করে চলেছে। বাইরের আবহাওয়াটা আজ মনো মুগ্ধকর । আকাশে ভাঙা ভাঙা মেঘ। হালকা আলোয় সবকিছু বেশ ঘোলাটে। চুপিচুপি এক পলক রাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কিন্তু ওনার কোনো হেলদোল নেই। পাশে একটা জলজ্যান্ত মানুষ বসে আছে এমন কোনো ধ্যান ধারণা ওনার মধ্যে তো দুরের কথা ওনার আশেপাশে ও দেখছি না। আবার মুখ ঘুরালাম বাইরের দিকে। হালকা ঠান্ডা হাওয়ায় আমার খোলা চুলগুলো উড়ছে। স্পর্শ করছে দেহের প্রতিটি স্পন্দন। চুলগুলো বাধার চেষ্টায়
হাত ডুবিয়ে দিলাম চুলের গহীনে।এমন সময় মনে হচ্ছে আমি হাত নাড়তে পারছি না। কিভাবে পারব??হাতি যদি আমার মতো একটা টিয়া পাখির ডানা ধরে থাকে,,তাহলে আমি কি করে ডানা ঝাপটানো?? ওনার দিকে তাকালাম । উনি চোখের ইশারায়,,, চুল বাঁধতে বারন করলেন।কি আর করার ,, চুল খুলেই বসে রইলাম। আকাশের ভাঙা মেঘগুলো বন্ধু করে একত্রিত হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো ঝড়ে পড়বে মাটিতে।রাত ভাইয়ার প্রতি ভয়টা কমে ভালো লাগায় পরিনত হয়েছে।মনে ভাবনার পসরা জমেছে,,
,,” এখন ওনার চোখ কি বলছে??চোখ দিয়ে চোখ পড়ার অভিজ্ঞতা বুনতে চাইছে মন,, চোখের কি দোষ বলো,,??সে তো ভালো লাগায় বস!!চোখ যদিও পড়তে পারি ,, চোখের নেই দন্দ ,, তার আর কি দোষ ,, চোখকে তুমি করেছো বন্ধ!! ভাবতেও বিরক্ত লাগে ,,এই রাতে লোকটা চোখে সানগ্লাস সেটেছে!!(চরম বিরক্তি নিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরলাম।)
একটু বাদেই গাড়িটা থামালেন।গাড়ি থামতে দেখেই রাত ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,
,,”ভাইয়া এখানে গাড়ি থামালেন কেন?? আমরা তো বাসায় যাচ্ছিলাম ,,তাই না??
উনি কোনো কথা বলেন না,, শুধু গাড়ি থেকে নেমে পাঞ্জাবির কলার ঠিক করতে করতে আমার দিকে এসে দরজাটা খুলে দিলেন আর বললেন,
,,”নাম সোনালী,, বাসায় একটু পড়ে যাব।”
আমি আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম,,
,,”রাত ভাইয়া আমরা কোথায় এসেছি আর এলামই বা কেন??(নামতে নামতে)
উনি আমার দিকে তাকালেন আর বললেন,
,,”এতো বকবক করছিস কেন ? মুখে তালাটা বোধহয় নষ্ট হয়েছে। নতুন একটা তালা কিনে লাগিয়ে রাখিস।(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে),,কি হলো??,,চল,,।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে,, ওনার কথায় রাগ লাগেনি আমার। কারণ ওসব কিছু তো আমার কানে প্রবেশ করেনি। আমি তো রাত ভাইয়াকে দেখতে ব্যস্ত। অন্ধকারে পাশের চায়ের দোকানের আবছা আলোয় ওনার ফর্সা মুখটা রুপোর জ্যোতির মত অপূর্ব লাগছে।কফি কালারের পাঞ্জাবিটাও তাল মিলিয়ে শোভা বাড়াচ্ছে এই সৌন্দর্যের। ছেলেরা ও এতোটা সুন্দর হয় তা এই ব্যাক্তি কে না দেখলে জানতাম ই না।এইরকম একটা ছেলে সামনে থাকলে আর এমন একটা রোমান্টিক আবহাওয়া আর কি চাই??,, শুধু দুঃখ একটাই ,, আমার পাশের হ্যান্ডসাম ছেলেটা অন্য কারো বয়ফ্রেন্ড।এটা ভেবে আমার মাটির মধ্যে ঢুকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
রাত ভাইয়া এবার আমার হাত ধরে টানছেন আর বলছেন,
,,কিরে নামছিস না কেন ?? এক্ষুনি নাম বলছি,,নয়তো কি হতে পারে তা তুই ভালোই জানিস”(বড় বড় চোখ করে ,, আমার দিকে ঠোঁট উঁচু করে)
আমি ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবতায় ফিরলাম। তাড়াতাড়ি নেমে পরলাম গাড়ি থেকে। নয়তো উনি যেমন লোক কখন কি করে বসবে তখন লজ্জায় আমার মাটিতে মিশে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। নামতেই চোখে পড়ল একটা চায়ের দোকান। বেশি লোক নেই।একজন বসে আছে। একজন মধ্যবয়সী লোক খুব সযত্নে চা বানাচ্ছেন।রাত ভাইয়া আমার কানের কাছে এসে আস্তে আস্তে বললেন,,
,,”চল,, ঠান্ডা আমেজে গরম গরম চা খাবো।”
আমার বেশ ভালো লাগলো বিষয়টা। স্নিগ্ধ হাওয়ার সাথে গরম ধোঁয়া ওড়ানো চা। ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং। অসম্ভব খুশি নিয়ে পা বাড়ালাম তার পিছনে। দোকানের সামনে গিয়ে দুটো চায়ের অর্ডার দিল রাত ভাইয়া। লোকটি বেশ পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে চা বানাতে ব্যস্ত। একটু বাদে ,,বাদে ভাইয়া একটা কাপ নিজের হাতে নিলেন অন্যটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।রাত ভাইয়ার সব কিছুতেই যেন এক অন্য রকম মাধুর্য কাজ করে। যেমন এই মুহূর্তে চায়ের কাপটা ধরে মৃদু গতিতে ফু চালিয়ে যাচ্ছে চায়ে। সাথে ছোট ছোট চুমুক দিয়ে চায়ের স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।। আমি যে ওনার দিকে এমন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তা হয়তো তার খেয়ালই নেই।
চায়ের সিপ গিলতে গিলতে রাত ভাইয়া একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলছেন,
,,”আমি সবই দেখছি।তাই এভাবে তাকিয়ে থাকিস না,, লজ্জা করে!! ছেলে হয়েছি তো কি হয়েছে?? (অসাধারণ একটা হাসি দিয়ে)
সাথে সাথে আমার মুখে রাগ চেয়ে গেল,, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছি,,
,,” আ আমি আপনার দিকে তাকালাম কোই??নিজেকে কি বিশ্বের সেরা সুন্দর ছেলে ভাবেন?? হা,,,,হ,,….
মন ভরে একটু ঝগড়া করব ওজন তার ও কোনো জো নেই।প্রকৃতিও রাত ভাইয়ার সহায়। তাইতো ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে পড়ল।দু এক ফোঁটা বৃষ্টির জল গায়ে পড়তেই দৌড় দিলাম গাড়ির দিকে। ভেবে ছিলাম রাত ভাইয়াও বোধ হয় আমার পেছনে আসছেন। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে রাত ভাইয়াকে পেলাম না। তিনি সেই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন আকাশের দিকে মুখ তুলে দু হাত ছড়িয়ে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা অনুভব করছেন। অপরুপ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে এখন। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।
তবে এভাবে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে সেই কথা হুস ফিরল আমার। জলদি রাত ভাইয়াকে ডাক লাগালাম,
,,,”রাত ভাইয়া…….!! এখন বৃষ্টিতে ভিজেন না। ঠান্ডা লাগবে যে।”(গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছি)
আমার চেঁচামেচি শুনে দোকানদারের টাকা মিটিয়ে গাড়ির সামনে এসে মাথা ঝাড়া দিলেন। ওনার ভেজা চুলের প্রতিটি ফোটা আমার অঙ্গের শিহরণ জাগিয়ে দিল।ওনাকে দেখে আমি শুধু অবাক হচ্ছি। কেমন বাচ্চাদের মতো আচরণ করছেন উনি। দেখে হাসতে বাধ্য হলাম। আমি ও খিলখিল করে হেসে চলেছি। বাইরে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ সাথে আমাদের হাসির আওয়াজ সব মিলে একাকার হয়ে যাচ্ছে,,,।
#পর্ব-১৬
,,”বাইরে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আর সাথে আমাদের হাসির আওয়াজ সব মিলে একাকার হয়ে যাচ্ছে,,,”
❤️
রাত ভাইয়াকে আজ দেখে অন্যরকম লাগছে,,।এমন করে রাত ভাইয়াকে আমি হয়তো ছোটবেলায় দেখেছি!!হয়তো–বললাম এই জন্য যে অতো আগের কথা আমার আবছা আবছা মনে আছে ,, পুরোপুরি নয় তাই!! তবে মনে হচ্ছে স্বপ্নের সাগরে বিরাজমান আমি।তাই ভালোলাগা তো কাজ করবেই। তার আর দোষ কি বল..??রাত ভাইয়ার মাথাটা বেশ ভেজা ,, হয়তো ঠান্ডা লেগে যেতে পারে?? আবার বৃষ্টির যে কটা ফোটা রাত ভাইয়াকে ছুঁয়েছে তারা অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছে রাত ভাইয়ার মুখে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ও যেন তার সৌন্দর্য বাড়াতে উঠে পড়ে লেগেছে। ওদের দেখে আমার নিজের বড় হিংসা হচ্ছে। হিংসার আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাতে হাতে তুলে নিলাম ওড়নার এক পাশ । হয়তো উনি এতে বাধা দিতে পারেন,, কিন্তু দেখিই না হয়।রাত ভাইয়ার দিকে ঝুঁকে ওড়না দিয়ে ওনার মাথাটা আর মুখটা হালকাপাতলা মুছে দিলাম।উনি অবাক চোখে আমার পানে চেয়ে আছেন,, আমি এমন কিছু করবো উনি এসব আশাই করেন নি। এটা ওনার মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তবে এই জর্জেট ওড়নার বড় সমস্যা কিছু ঠিক করে মোছা যায় না। তবে যেটুকু মুছেছি তাতেই হবে। প্রথমে উনি বাধা দেবে মনে করলেও পড়ে ওনার দিক থেকে কোনো বাধা আসেনি। এতে আমি আরো খুশি।
,, মিনিট দশেক পড়ে বৃষ্টির অস্থিরতা কোমলমতি রুপ ধারণ করলো। এখন বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। এতোক্ষণ আমরা এখানেই গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম বৃষ্টি কমার। এখন যেহেতু বৃষ্টি দয়া দেখালো তখন তো বাসায় ফেরার সময় এসেছে তাই রাত ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিলেন। চিরচেনা সেই বাসার পথে। রাস্তায় উনিও কোন কথা বলেননি আর আমি ও।
আমরা বাসার বেশ কাছেই তাই বাসায় পৌছতে বেশি সময় লাগেনি।রাত ভাইয়া আমাকে বাসার সামনে ড্রোপ করে গাড়ি নিয়ে ছুটলেন বাসায়। আমি ও বাসায় এসে নিজের রুমে গেলাম ফ্রেশ হবো তাই। এখন বৃষ্টি হলেও সারাদিনের ভ্যাপসা গরমে আমি অস্থির ।তাই ব্যাগটা আর ওড়নাটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম। ভালো করে একটা শাওয়ার নিলাম । প্রায় আধঘণ্টা তো হবেই। এখন বেশ ভালো লাগছে। হঠাৎ মনে পড়ল রাত ভাইয়ার দেওয়া সেই ব্যাগটার কথা –যেখানে ছিল অনেক চকলেট আরো অনেক কিছু। কিন্তু আমার কাছে চকলেটাই বেশি প্রায়োরিটি পাচ্ছে। এমন একটা ফুরফুরে আবহাওয়া চকলেট বিহীন হতেই পারে না,,!!তাই দৌড়ে আলমারির দরজা খুলে ব্যাগটা বের করলাম তারপর বেছে বড়সড় সাইজের একটা চকলেট তুলে নিলাম।ব্যাগকে তার আগের জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আমি বান্দাবাসী হলাম। খোপা করা চুলগুলো খুলে দিলে চকলেট হাতে বেশ আয়েশ করে বসেছি বারান্দার দোলনাটায়। আমার গুড বুকের মধ্যে এটা একটা ভালো লাগার জায়গা।তাই সময় পেলেই এখানে এসে বসে সারাদিনের ক্লান্তি উপভোগ করি। কি আজব !! ক্লান্তি ও একটা উপভোগ করার জিনিস??,,,আমি বলব হ্যাঁ,,। সারাদিন অনেক কাজ করে যখন নিজেকে সময় দিবেন তখন যে একটা প্রশান্তি কাজ করে একেই আমি আমার ভাষায় ক্লান্তি উপভোগ করা বলি।আজ আর সারাদিনের কথা ভেবে এই মুহূর্তটাকে নষ্ট করতে চাইছি না। জীবন তো এমনই কখনো ভালো আবার কখনো খারাপ অনুভূতি মিলেমিশে তৈরি হওয়া কিছুক্ষণ মাত্র।
,,”আর মাত্র দু সপ্তাহ পরে জেরিন আর অপূর্ব ভাইয়ার বিয়ে। শুরু হবে এক নতুন পথচলা। কেমন হবে তা এখনো কিছু আঁচ করতে পারছিনা। জেরিন কি আমাদের বন্ধুত্বটা ভুলে ভাবীগিরি ফলাবে ??,, নাকি আমার সেই আগের জেরিন হয়েই থাকবে?? এসব এখন জানার কোনো মাধ্যম নেই আমার কাছে। তবে যদি ডোরেমনের টাইম মেশিন থাকতো তাহলে হয়তো দেখে আসতাম,,??কাল থেকেই বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে যাবে । আমার জন্য তো ডাবল মজা ,, একদিকে বান্ধবীর বিয়ে তো অন্যদিকে ভাইয়ার,,! এখানের কোনো সম্পর্কই আমার ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। দুদিকেই আমার কোমর বেঁধে কাজ করতে হবে । তাই আজ ভালো করে রেস্ট নিয়ে নেই।””(হাতের চকলেটটা শেষ করে,,উঠে বিছানা গিয়ে শুয়ে পরলাম)
,, বাইরের হলকা বাতাসের ঠান্ডায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েই বেশ ঘুম পেয়ে গেল।আর আমি বিতরন করলাম ঘুমের রাজ্যে।
,, নিস্তব্ধ রাত,, আমি এখন ঘুমের রাজ্যের মধ্যে পথে অবস্থান করছি। হঠাৎ মনে হচ্ছে এই ঠান্ডার থেকে ও কিছুটা বেশি ঠান্ডা হালকা করে ছুঁয়ে যাচ্ছে আমার কপাল। আমি একটু কাতরতা দেখিয়ে হালকা নড়েচড়ে আবার নিস্তেজ হয়ে গেলাম।একটু পরে আবার মনে মনে হচ্ছে কেউ তার ঠান্ডা হাতে ছুয়ে যাচ্ছে আমার মুখ,,তাই এবার মনে হচ্ছে উঠতে হয়। ঘুমঘুম চোখে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলাম,, কিন্তু কাওকে দেখতে পেলাম না সেখানে।জানালাটা খোলা একটু বাদে বাদে সেখান থেকে সো সো ,,, করে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করছে রুমে ,,তাই দেখে মনে হচ্ছে ওখান থেকে আসা বাতাসের তাড়নায় কাতর আমি। আবার গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লাম।
,, সকাল ৯টা বেজে গেছে,,সবে ঘুম ভাঙল আমার,,আজ ও ক্লাস আছে ইম্পর্ট্যান্ট,,ইশশশ কি লেট হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি রেডি হচ্ছি আর আম্মুর মাথায় সব দোষ ঢেলে দিয়েছি,,
,, আম্মু তুমি আমাকে আরো আগে উঠাবা না??(বিরক্তি দেখিয়ে)
আম্মু ঝাঝালো সুরে চেঁচিয়ে বলছেন,
,,ও,,, সারারাত ফোন টিপবা আর সকালে না উঠতে পারলে সব দোষ আমার??
,,লও ঠেলা,,,আমি কখন সারারাত জেগে ফোন টিপলাম??(মনে মনে)
আম্মু আবার বললেন,
,, বড়দের কথা না শুনে নিজের মতো চললে এমন তো হবেই।
আমার এখন খুব রাগ লাগছে,,দাতে দাঁত চেপে কপাল কুঁচকে বললাম,
,, আম্মু আমি কখন কথা শুনলাম না?? আর আমাকে তুমি দেখেছো রাত জেগে ফোন টিপতে??
,,আমি তোর মা ,,আমার দেখার দরকার পড়ে না।(দাঁতে দাঁত চেপে)।
ও,,, সবই যদি নিজে ভেবে নাও তাহলে আর আমার বলার বলার কি আছে??(বিরবিরিয়ে)
আম্মু চোখ মুখ উল্টে,,
,,কিরে এখন আবার কি বিরবির করছিস??(ভ্রু কুঁচকে),,আর শোন আমি তোর ময়লা জামা কাপড় নিতে এসেছি,, কোথায় দে সব,,(সাবলীল ভাবে)
আমি ও মনে করলাম সব দিয়ে এনাকে এখান থেকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচি নাহলে কথায় কথায় আর আজ ভার্সিটিতে যাওয়া হবেনা।তাই সব খুঁজতে শুরু করলাম।সব পেয়ে ও গেছি শুধু কাল রাতের ওড়নাটা বাদে।ওড়না খুঁজতে খুঁজতে,,
,, আম্মু কালকে যে ওড়নাটা পড়েছিলাম সেটা তো খুঁজে পাচ্ছি না!!
আম্মু ও খুঁজতে লাগল আমার সাথে ,, আলমারির দরজা খুলছে আর বলছে,,
,,কিরে সোনালী ??,, কোথায় রেখেছিস বলতো??(বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট মুখে)
আমার ও এখন বিরক্ত লাগছে,,একে তো ভার্সিটিতে যাওয়ায় লেট হয়ে যাচ্ছে আবার তার মধ্যে এই ঝামেলা ওড়না,, কোথায় গেছে কে জানে?? বিরক্তি নিয়ে বলছি,,
,, আম্মু আমি তো বিছানায় রেখেছিলাম,, এখন তো দেখছি না। কোথায় গেল ওড়নাটা??(গালে হাত দিয়ে) আচ্ছা আম্মু আমি খুঁজে পেলে তোমাকে দিয়ে আসব,, তুমি এখন যাও,, আমার ভার্সিটিতে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে,,প্লিজ,,,,??
আমার অনুরোধে মোটামুটি গলে গেল আম্মু ,,তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল।তবে আমি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।আর বিছানায় একটু বসলাম। কিন্তু চিন্তা একটাই,,
,, আমার স্পষ্ট মনে আছে যে কাল রাতে ওড়নাটা আমি বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে ঢুকেছিলাম,, তাহলে ওড়নাটা কোথায় গেল??”
ভারতে ভাবতে চোখ পড়ল ঘড়ির কাঁটায়,,সময় দেখে আমার চোখ ছানাবড়া ডহয়ে গেল,,
,,”এই যা,,, কতোটা লেট হয়ে গেল।(উঠে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম)
,,, চলবে,,,,??❤️