ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ১৬+১৭

পর্ব ১৭+১৮
#ভালো তোকে বাসতেই হবে❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-১৭

,,”এই যা,,, কতোটা লেট হয়ে গেল।(উঠে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম)”।

❤️
ভার্সিটির পাশে একটা লেক আছে বেশির ভাগ ছেলে মেয়েদের জনপ্রিয় আড্ডা স্থল। বসার কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় নেই যে যার মতো ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসে পড়ে। বড়ো বড়ো বট গাছ আছে তাই রোদটাও বেশি বিরক্ত করতে পারে না। এখানে দুজন ঝালমুড়িওয়ালা ও প্রতিদিন রুটিন করে এখানে বসে।কেনা বেচাও জমজমাট। আমি আর জেরিন ও আয়েশ করে বসেছি ঝালমুড়ি নিয়ে। কদিন পড়েই জেরিনের বিয়ে ঠিক হয়েছে । দুএকদিনের মধ্যে তো আরো তোর জোর শুরু হয়ে যাবে,, বিয়ের আগে আর এমন সুযোগ হবে কিনা কে জানে??তাই এই আড্ডার আসর। জেরিন জমিয়ে ঝালমুড়ি চিবুচ্ছে,,আমি দু এক বার মুখে দিচ্ছি আর এদিকে ওদিকে চোখ বুলাচ্ছি।,,বলা তো যায় না কে কোথা থেকে চলে আসে?? এখানে আমি রাত ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করছি। অল্প কিছুদিন হয়েছে উনি ভার্সিটিতে জয়েন করেছন। কিন্তু ভার্সিটি মোটামুটি এখন ওনার আয়ত্তেই আছে বলা চলে। কিভাবে কি করেন কে জানে?? সিনিয়র কোনো ভাই ও ওনার উপরে কথা বলার সাহস করে না।বেশ একটা নেতা নেতা ভাব। কিছু চামচেও পালে বটে,,আমি তো প্রায়শই আমাদের আশেপাশে দেখি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন,, আকাশ আর হৃদয়।,, দুজনই আমার সিনিয়র তাই কিছু বলতে ও পাড়ি না। তার উপর তো রাত ভাইয়ার প্যারা আছেই।যে দেখছি এদের কেউ এখানে আছে কিনা??,,,না নেই‌। কিছুটা বিস্মিত চেহারায় এই চিন্তাগুলো করছি ,, জেরিনের ঝালমুড়ি চিবানোর মাঝে একটু ফুরসৎ পেয়ে আমার দিকে তাকালো। কিছুটা চিন্তিত দেখে ঝালমুড়ি চিবানো বাদ দিয়ে প্রশ্নের পাল্লা ছুটালো,,

,,,কিরে বললি এখানে বসে আড্ডা দিবি আর অনায়েসে ৫–৬ প্যাকেট ঝালমুড়ি ঝেড়ে দিবি,,, এখন কি হলো??,, আড্ডা তো বহু দুরের বস্তু ,,তুই তো ঠিক করে ঝালমুড়িটাই খাচ্ছিস না,, ব্যাপারটা কি ??(আর এক দফা ঝালমুড়ি মুখে পুড়তে পুড়তে),, খুলে বলতো??

আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে ৩–৪ বার টপাটপ মুখে ঝালমুড়ি পড়লাম আর চিবুতে চিবুতে বলছি,,

,,,”নষনরমদথৃ,,,,,

কিছু বুঝলেন নাতো,,?? জেরিন ও কিছু বোঝেনি,,তাই খাওয়া থামিয়ে আমাকে দুচারটে ঝাড়ি দিয়ে হাসতে হাসতে বলছে,,,

,,,,”আরে হাদারাম!!,, মুখের খাবারটা পেটে চালান করে তারপর আমার প্রশ্নের উত্তর দে,,,,,!!

মোটামুটি সবটাই পেটে চলে গেছে এবার একটা ছোট ঢেকুর দিয়ে বললাম,,

,, “শোন জেরি,, ভালো করে দেখে নিলাম কোথাও রাত ভাইয়ার চামচেগুলো ওঁত পেতে আছে কিনা,,??আর এখন রিল্যাক্সে আড্ডা দেব,,কারন নো প্যারা ইজ হেয়ার বেবি,,.”

জেরিন আমার কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো,,ভ্রু কুঁচকে রহস্যজনক হাসি দিয়ে বলছে,,

,,”শুধু কি তাই সোনু?? আমার তো অন্যকিছু সন্দেহ হচ্ছে,,!! কোথাও আবার রাত ভাইয়াকে তো খুজছিস না???”

ওর কথায় আমি একটু ইতস্তত বোধ করলাম,, কেন জানিনা বেশ একটা উথালপাথাল সৃষ্টি হয় ওনার নামটা শোনামাত্র,, কিন্তু আমি এখানে বাওর কাছে কোনোটাই প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না।তাই সব উৎসাহ গলা ওবদি দাবিয়ে রেখে শক্ত গলায় বলছি,,

,,,”জেরু এসব কি বলছিস?? আমি কেন ওনাকে খুঁজতে যাব??”

ওর আকার ইঙ্গিতের কোনো পরিবর্তন হলো না,,কথার মাঝে আরো রস এনে ওর কনুই দিয়ে একটা গুতো দিয়ে বলছে,,

,,,”কেন সে তো তুমিই ভালো জান!!,, সামথিং সামথিং,,,অ্যঅ,,,,

আমি নিজেও মানি ওর কথাগুলো সত্যি কিন্তু মোটেও চাইছি না এই সত্যি কথাগুলোকে প্রাধান্য দিতে,,সরল গলিয়ে বললাম,,

,,,”দেখ জেরু তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই কিছুই তোর কাছে লুকোতে চাই না।এই ভার্সিটিতে এমন মেয়ে পাওয়া মুশকিল যে কিনা রাত ভাইয়াকে অপছন্দ করে ,, আমিও তার ব্যাতিক্রম না,, কিন্তু যেখানে পুরোপুরি ক্লিয়ার যে উনি অন্য কাউকে ভালোবাসে,, সোনালী সেখানে কোনো ডাউট রাখতে চায় না,, সো ফরগেট ইট,,!!

জেরিন ঝালমুড়ি ছেড়ে মূর্তিমানের মতো সরল দৃষ্টিতে আমার বলা কথাগুলোয় মনোযোগ দিয়েছে। তবে মুখ দেখে বুঝলাম আমার কথায় ও কোনো অমত প্রকাশ করছে না।তবে চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে,,

,,”বুঝলি তো সোনু,,রাত ভাইয়ার ভালোবাসার মানুষটি কে আমি তা জানি না। কিন্তু তোর প্রতি আমি ওনার অন্যরকম টান দেখেছি,, ওনার চোখে তোর জন্য বিশেষ একটি জায়গা দেখেছি,,আর অন্য কাউকে ভালোবাসা তো দূরের কথা ,, সামনে পিছনে , উপর নিচে সব রকমভাবে তোকে ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকাতেও দেখিনি।

ওর পুরো কথাগুলো আমি হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম,, হয়তো কথাগুলো একটা ও ফেলনা না তারপরও এই মুহূর্তে জেরিনের জন্য শুধু একটা কথাই আছে আমার শব্দ ভান্ডারে সেটাই বললাম,

,, আমার মতে উনি এসব করন শুধু ভাইয়ার জন্য,,,আমি ভাইয়ার বোন তাই একটু কেয়ার করে। তাছাড়া,,,,,,,,

আর কিছু বলার আগেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে আমি আঁতকে উঠলাম,,ভুত দেখার মতো ভয় বিরাজ করছে আমার মুখে,,, প্রাথমিক অবস্থায় লোকটিকে দেখে আমার অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছিল,,। জেরিন ও আমার ভয়ার্ত মুখটা দেখে আমার কাঁধে হাত দিয়ে অবাক কন্ঠে বলছে,,

,,,,,কি হলো,,?এতো ভয় পাচ্ছিস কেন??

আমি ছানাবড়া চোখে তাকিয়ে আছি,,মনে ভয় শুধু একটাই সেদিনের অপমানের বদলা যদি অন্য কোনো ভাবে নেয়??,, জেরিনের সব কথাই আমার মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে ঠিক কিন্তু কোন উত্তর ফেরত পাঠাচ্ছে না।তাই আমার ও কোনো হেলদোল না দেখে আমার চাউনিকে লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাল,,,। বেশ রোগা পাতলা একটা ছেলে ধবধবে সাদা একটা শার্ট তার পড়নে,ডান হাতটা কষে বেন্ডেজ করে কাধের সাথে ঝুলিয়ে রাখা,, সম্ভবত ভেঙেছে। মুখটা মলিন করে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে,,,এই আলোচ্য ব্যাক্তিটা ছিল সিহাব ভাইয়া।

জেরিন ও দেখে খুব হকচকিয়ে গেল। আমাকে সামলাবে কি ও তো নিজেই একটা ভিতুর ডিম,,আমাকে এখনো নজরে পড়ে নি ভাবে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম,, ওদিকে জেরিনের হাল বেহাল,, সেকেন্ডে পাঁচবার করে পলক ফেলছে,, কানের পাশ থেকে ঈষৎ ঘাম বেয়ে পড়ছে বেশ ভয় পেয়েছে,,তাই তাড়াতাড়ি জেরিনকে ঝাকিয়ে (বলতে পারেন কিছুটা হরলিক্সের মতো ঝাঁকিয়ে) মৃদু স্বরে বলছি,,

,, উনি এখনো আমাদের দেখেননি,, আর শোন আমরা ভার্সিটির থেকে বেশ কাছেই আছি চল একটা একশন দেখিয়ে দেই,,!!

জেরিন অবাক চিত্তে বলল,,

,,”কি একশন??

একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে,,

,,”চল পালাই”

যেই বলা সেই কাজ,, দিলাম এক দৌড়ে,,,,

দৌড়ে প্রায় ভার্সিটির সামনে এসে একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা খেলাম। পড়ব পড়ব কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম।চোখ উল্টে একটু ভাবলাম,,যদি খাম্বার সাথে ধাক্কা খেতাম তাহলে এতোক্ষণে আমার নাক, মুখ, মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যেত,, আর খাম্বা কবে থেকে নরম হওয়া শুরু হলো??সিটি করপোরেশনের নেতারা কি তুলোর খাম্বার ব্যবস্থা করেছে??কি জানি ??এসব কৌতুহল মেটাতে সামনে তাকালাম,,মোট কথা হলো আমি ধাক্কাটা খেয়েছি বিশাল দেহি এক বালকের সাথে ,, তিনি হলেন রাত ভাইয়া।ওনাকে দেখে ভরসা পেলাম।

কিন্তু এই ব্যাক্তি আমার গা জ্বালা ধরানো কথা বলতে দুবার ভাবে না,, শুরু করলেন মহাভারত,,

,,”কিরে সোনালী তোদের পেছনে কি পাগলা কুকুর পড়েছে,, এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন??(সাবলীল ভাষায়)

কিন্তু ওনার কথা শুনে আমার গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।আর ওনাকে দেখে স্বস্তি পেয়েছি এটা ওনাকে জানতে দিলে ভাবের মাত্রাটা বেড়ে যেতে পারে। তাই আমি ও শুরু করলাম রামায়ণ,,

,,না ভাইয়া ,,লকডাউনে বাসায় থেকে মোটা হয়ে গেছি তো তাই দৌড়ে দৌড়ে জগিং করছি।আপনিও করবেন নাকি?? তাহলে আমাদের সাথে জয়েন করতে পারেন,!!

রাত ভাইয়া চোখমুখ কুচকে,,একটু ভাব নিয়ে বললেন,,

,,”ভাগ্যেস মোটা হয়ে যাচ্ছিস তাই ক্যাম্পাসে দৌড়াদৌড়ি করছিস,,পেট ভারি হলে হয়তো সারা রাস্তায় হামাগুড়ি দিতি,,।(বলেই হাসতে লাগলেন)

ওনার হাসিতে আমার মুখে বিষন্নতা ফুটে ওঠার কথা কিন্তু এখানে হচ্ছে উল্টো,, ওনার হাসিটা একদম পাগল করা। দেখলেই ইচ্ছে হয় গাল দুটো ধরে টেনে দেই।এসব পাগলের প্রলাপ ভাবছি আর ওনার দিকে অপলকে চেয়ে আছি।

উনি আমার চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে ঠাস ঠাস করে বলছেন,,

,,কি হলো??

আমি একটু ধরফড়িয়ে সাবলীল হলাম আর আমতা আমতা করে বললাম,,

,,ন ন না না ,, কিছু হয়নি।তো আপনি এখন এখানে?? ক্লাস নাকি??

উনি আবার কঠিন হয়ে উঠলেন,,

,,না,, আর ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।

,,,চটপট বলে ফেলে (কথা শোনার কোনো আগ্রহ নেই বললেই চলে)

,, আন্টি ফোন করেছিল,,বলেছে তোকে আর জেরিন ভাবীকে নিয়ে বাসায় যেতে। ভাবীর বাসায় নাকি ফোন করে বলে দিয়েছে আন্টি।

জেরিনকে ভাবী বলা নিয়ে ‌জেরিনের তীব্র প্রতিবাদ।”ভাবী “শব্দটা দিয়ে নাকি বিবাহিত বিবাহিত গন্ধ আসে ।আর বিয়ের বাকি মাত্র দু সপ্তাহ হলেও তার ধারণা বিয়ের আগে মুহূর্ত পর্যন্ত সে অবিবাহিত।তাই ভাবী বলা সে বরখাস্ত করবে না তাই প্রতিবাদী কন্ঠে গর্জে উঠলো,

,, শোনেন রাত ভাইয়া আমি এখনো বিয়েটা করে ফেলিনি।তাই কারো ভাবীও হইনি। আর তাই ভাবী বলার প্রশ্নই ওঠে না।

,,, জেরিনের এমন রুপ দেখে রাত ভাইয়া কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলেন আর বললেন,,

,,”হয়নি তাতে কি কদিন পরে তো হবে ?

ও একটু শান্ত ভাষায় ফিরল চট করে রেগে ওঠা ওর স্বভাব,, মুহূর্তেই আবার সেই রাগ বিলিন হয়ে যায়।ও এখন‌ বলল,,

,,”এখনো হয় নি তো??হোক তার ডাকবেন মন প্রাণ ভরে ডাকবেন। কেমন?(একটা কোমল হাসি দিয়ে)

রাত ভাইয়া এক পলক আমার দিকে তাকালো,,আমি ইশারায় বললাম ,,”ও যা বলছে বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে।”

উনিও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বললেন,,

,, ওকে,,! আচ্ছা একগন চল,, তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।কি নাকি খুব জরুরি কাজ আছে চল চল,,

আমরা ও আর তর্কে না জরিয়ে ওনার পিছু নিলাম,,,,।

#পর্ব-১৮

,, আমরা ও আর তর্কে না জরিয়ে ওনার পিছু নিলাম,,!

❤️
দু পা এগোনোর আগেই কোথা থেকে অপূর্ব ভাইয়ার আগমন ঘটল।দুপাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে এসে হাজির।আমরা অবাক হলেও রাত ভাইয়া স্বাভাবিকভাবেই ব্যবহার করছে ,, হয়তো উনি জানতেন যে অপূর্ব ভাইয়া আসবে। তবে আমি একটু অবাক হয়ে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলাম,,

,,”কিরে তুই এখানে??

সে এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক ।ভ্রু কুঁচকে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,,

,,,”কেন এখানে আসা কি বারন??আর আমার বোনকে নিতে আমি যে কোনো সময় আসতে পারি!!”

আমি একটু বাঁকা হাসি দিয়ে বললাম,,

,,, ও তাই বুঝি,,??,,আগে তো দেখিনি বোনের জন্য এতো দরদ,, আদৌও বোনের জন্য আসলি না হবু বউয়ের জন্য আসলি সেটাই তো বুঝতে পারছি না,,,!!”

রাত ভাইয়া একটু বিক্ষিপ্ত ভাবে চোখ পাকাল অপূর্ব ভাইয়ার দিকে।আর বললেন,,

,,,”বন্ধু এবার তো সত্যিটা প্রকাশ করো..!!”

অপূর্ব ভাইয়া লজ্জায় পড়ে গেছে ,, এর সাথে সাথে জেরিন ও লজ্জায় মাথা নিচু করে মুচকি হাসছে।রাত ভাইয়া সাথে আমি মুখ টিপে টিপে বেশ জোরালো হাসি দিচ্ছি। অপূর্ব ভাইয়ার হয়তো মনে হয়েছে এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা দরকার।তাই সরল কন্ঠে আর সাবলীল চাহনিতে বললেন,,

,, আপনারা কি দয়া করে গাড়িতে উঠবেন,,,? নাকি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হেসে দিন পার করে দেবেন,,??আর একটা কথা,,আমি যদি আমার হবু বউকে নিয়ে আসি তাতে কারো কোনো প্রবলেম আছে??(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

আমি চোখ পিটপিট করে
,,,”আমাদের কোনো প্রবলেম নেই ,, তুই শুধু মেনে নিলেই হলো,,দেটস ইট,,!!”(আমি কথাটি বলেই গাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম,,, আমার ‌সাথে সাথে সবাই ও গাড়ির দিকে রওনা হলো ‌)

সবাই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি,,। সমস্যা হলো বসা নিয়ে।রাত ভাইয়া ড্রাইভ করবে। তো সে বসবে ড্রাইভিং সিটে ,, অন্যদিকে ভাইয়া বসবে জেরিনের সাথে ।মধ্যস্ত আমি কোথায় বসবো?? আমাকে বসতে হবে রাত ভাইয়ার সাথে ফ্রন্ট সিটে।সবার হুমকির মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে বসতে হলো রাত ভাইয়ার পাশে।এমন নয় যে ওনার পাশে আগে কখনো বলিনি,,,বসেছি,, অনেকবারই বসেছি। তবে প্রতি পদে পদে ওনার প্রতি দূর্বলতা আমার বেয়ে চলেছে। অন্যদিকে ওনার আছে ভালোবাসার মানুষ,, যদিও কখনও দেখার সুযোগ হয়নি তারপরও। ওনার মুখ থেকে শুনেছি ওনি একটা মেয়ের প্রতি বেশ দুর্বল। তাকে নাকি ভালো ও বাসে। তাহলে আমি এখানে দুর্বলতা দেখিয়ে কি হবো,,??,,, “মডার্ন দেবদাসী”??(ভাবতেই একটু হাসি পেয়ে গেল)

গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,

,,,বুঝলে জেরিন ,,!!,, তোমার বান্ধবী বোধ হয় পাগল হয়ে গেছে,,,

আমি অবাক ,,হতবাক,, বিস্মিত সবকিছু হয়ে বসে আছি। পাগল ,,??আর আমি ?? কখন হলাম??আর আমি নিজেও জানি না যে আমি পাগল হয়ে গেছি??,, তাবে যতদূর জানি,,পাগলেরা নিজেরাও জানে না যে তারা পাগল,,তবে এ যাত্রায় সত্যিই আমি পাগল হইনি,, তাহলে এই ব্যক্তি এসব কি বলছে,,??

পেছনের সিটে থেকে জেরিন বলে উঠলো,,কি বলছেন ভাইয়া??সোনু ,, আবার পাগল হলো কবে(জেরিনের কন্ঠে অবাক করা জড়তা ছিল,, যদিও সামনে থেকে ওর অঙ্গভঙ্গি কিছু দেখিনি)

আমার ও একই প্রশ্ন ছিল যদিও মুখে কিছু বলিনি ,, শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

উনি স্তব্ধতার দুয়ার খুলে তুমুল বেগে হাসছেন আর বলছেন,,

,,দেখছো না একা একা কেমন পাগলের মতো হাসছে,,

আমার এবার রাগ হলো ,,, জেরিন কিছু বলার আগেই ,,ওনার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললাম,,

,,,”নিজেকে দেখে কি মনোবিজ্ঞানী মনে হয়?? মানুষ নিজের মনে মনে কিছু ভেবে ও হাসতে পারবে না?? তাহলেই পাগল হয়ে যাবে??

উনি আড় চোখে আমার দিকে একবার তাকিয়ে সরল কন্ঠে আর শক্ত চাহনিতে প্রশ্ন নিক্ষেপ করলেন,,

,,,”আচ্ছা তাই বুঝি??তা কি এমন কথা ??,,যেটা ভেবে হাসিও পায়,, আমরা ও শুনে হাসতে চাই??

অপূর্ব ভাইয়া মধ্যে থেকে টপ করে বলে দিলেন,,

,,”হ্যাঁ রে সোনু ,,বল,,কি কথা??

আমি পড়ে গেলাম মহা মুশকিলে,,কি ভাবছিলাম আমি??,, ,,”মর্ডান দেবদাসী”,, এটা বললে কি এই সমাজে মান সম্মান টিকবে??,,উফফ,,কি যে ভাবতে গেলাম,,সবার সামনে এটা বলাও যায় না,,কি যে করিস না সোনা,,?? এখন আর ভেবে কি হবে,,যা ভাবার তা তো ভেবেই ফেলেছি,,।

ভাবাভাবির দমকল থামিয়ে,, লজ্জিত কন্ঠে,,মাথা হাফ নিচু করে আমতা আমতা কন্ঠে বললাম,,

,,”আ আ আমি আবার কি ককি ভাবব??কিছুই ভাবিনি।

রাত ‌ভাইয়া কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,,

,,,”তাহলেই বুঝ??কি ভাবুক মেয়ে??

আমি আর কিছু বললাম না‌। সবটা শুনে মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছি।কিছু বলে আর দ্বিতীয়বার অপমানিত হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।এই গাড়িতে আমি বাদে সবাই বেশ আনন্দেই আছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় কি আমাকে অপমান না করতে পারলে রাত ভাইয়ার সব শান্তি।তাই মুখে কুলুপ এঁটে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম বাসার অপেক্ষায়। সবাই কথায় ব্যস্ত কিন্তু আমি চুপচাপ বসে আছি ‌। অপূর্ব ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে কথা বললে শুধু তার জবাব দেওয়া ছাড়া। হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষলেন রাত ভাইয়া‌। আমার সাথে সাথে বাকিরাও অবাক।এটা তো বাসা না তাহলে গাড়ি থামলো কেন??

ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে রাত ভাইয়াকে বলল,,

,,কিরে আমরা তো বাসায় যাচ্ছিলাম তাহলে এখানে গাড়ি থামালি কেন??

উনি একটা অপূর্ব হাসি দিয়ে‌ পাশের একটা দোকানের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললেন,,

,, আইসক্রিম খাবো। তোরা গাড়িতে বস ,, আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।(বলেই গাড়ির দরজা খুলে আইসক্রিম আনতে গেলেন)

আমার এখন বেশ ভালো লাগছে আইসক্রিম খেতে পারব তাই। কিন্তু মুহূর্তেই আবার মত‌ বদল করলাম।কারন এই মাত্র যে আমাকে অপমান করেছে তার আইসক্রিম আমি কিছুতেই খাব না। পাঁচ মিনিট বাদেই রাত ভাইয়া আইসক্রিম সমেত ফিরলেন।দেয়নি আর ভাইয়া আইসক্রিম নিয়ে ব্যস্ত‌।রাত ভাইয়া একটা আইসক্রিম আমার দিকে এগিয়ে দিল বললেন,,

,,,”নে,,এটা তোর।”

আমি অভিমানী কন্ঠে বললাম,,

,,না আমি খাবো না।”

রাত ভাইয়া আমার দিকে অবুঝ বালকের ন্যায় তাকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,,

,,”রাগ করে না সোনা,,!!”

আমি ওনার এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।তাই চমকে উঠে বললাম,,

,,”কি বললেন??সোনা??”

উনি স্বাভাবিক হয়ে বললেন,,

,,”হ্যাঁ,, এতে এতো চমকানোর কি আছে??তোর নাম সোনালী তাইতো”

আমিও বোকার মতো বললাম ,,

,, হ্যাঁ,,তো কি হয়েছে??

উনি লজিক দেখিয়ে বললেন,,

,, সোনালীর লী টা কেটে দিয়েছি ।এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে??নে আইসক্রিম খা।

আমি ও ওনার ফালতু লজিক মেনে মনকে সান্তনা দিতে আইসক্রিম খেতে শুরু করলাম আর উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

কিছুক্ষণ বাদেই পৌঁছলাম বাসায় ‌।রাত ভাইয়াও আমাদের বাসায় ঢুকলেন অপূর্ব ভাইয়ার জোরাজুরিতে। বাসার কলিং বেল বাজাতেই আম্মু হাসি মুখে দরজা খুললেন। জেরিনকে দেখে অত্যন্ত খুশি। সবাইকে ভেতরে ডাকলেন। সকলেই হাসি‌মুখে বড় তৃপ্তি নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। আম্মু জেরিনকে নিয়ে তার রুমে গেলেন আর অপূর্ব ভাইয়া রাত ভাইয়াকে নিয়ে নিজের রুমে। আমার ও ভালো লাগছে না তাই আমি আমার রুমে চলে গেলাম।ব্যাগটা কাধ থেকে রাখলাম ,, বেশ বিরক্তিকর অনুভব আসছে তাই বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। সম্ভবত ২মিনিট চোখ বন্ধ রাখার পরপরই কারো নিঃশ্বাসের গরম হাওয়া আমার মুখে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে,,হালকা আবছা ছায়ার অস্তিত্ব জো অনুভব করছি। ইচ্ছে ছিল আরো পাঁচ মিনিট এমন চোখ বন্ধ রাখবো কিন্তু তার কি আর জো আছে? আদৌও কোনো ব্যক্তি আমার উপরে ঝুকে পড়েছে কিনা আর কেই বা ঝুঁকেছে তা দেখার তীব্র আগ্রহ জেগে উঠেছে আমার মনে।তাই শত বিরক্তি থাকা সত্ত্বেও চোখ মেলে তাকালাম,,। তাকানোর সাথে সাথে আমি যা দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। ওখানে রাত ভাইয়া ঝুঁকে ছিলেন আমার দিকে।উনি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ‌। কিছু মাথায় ঢুকছে না। আমি চোখ মেলে তাকালেও ওনার কোনো হেলদোল দেখছি না। আমি একটু নড়ে চড়ে উঠলাম।রাত ভাইয়ার সাথে সাথে যেন হুশে ফিরলেন। আমি উঠে বসেই রাত ভাইয়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলাম,,

,,কি হলো রাত ভাইয়া আপনি আমার রুমে কি করছেন ,,?আর আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন??

উনি কোনো উত্তর দিলেন না ওপাশ থেকে আম্মু বলে উঠলেন,,

আমি দেখতে বলেছি ,,তুই আবার ঘুমিয়ে পড়লি কিনা তাই।

আমি একটু স্বাভাবিক হলাম আর আম্মুর উদ্দেশ্যে বললাম,,

,, না ঘুমাইনি বল কি হয়েছে??আর সবাই ভেতরে আসো

আম্মু বেশ উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে এলেন আমার দিকে সাথে ভাইয়া আর জেরিন ও আছে।আর তাদের হাতে একগাদা জুয়েলারি বক্স।আম্মু আমার পাশে এসে বলল,,

,,”কাল বাদে পরশুই থেকেই তো শপিংয়ে বেড়িয়ে পরতে হবে তাই আগে থেকে জুয়েলারি কোনটা কার পছন্দ আর কি কি কিনতে হবে তা দেখার জন্য চলে এসেছি ,,”।

,,,, চলবে,,?❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here