ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ১

,,,, বিছানায় বসে ফোন ঘাটা ঘাটি করছিলাম। হঠাৎ ই তড়িঘড়ি করে একটা ছেলে আমার রুমে ঢুকে পরল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার পাশে বসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক। কিন্তু এই স্মেলটা?এটা আমার খুব পরিচিত।
আলতো করে তার ঠোঁট দিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে দিলেন । আমি কেঁপে উঠলাম। হঠাৎ ই হুসে ফিরলাম।

…কে এই ছেলে?আর আমার রুমেই বা কি করছে??

আমি এখনো ঠিক করে চেহারাই দেখিনি। হঠাৎ বললাম:

,,, ছাড়ুন বলছি,, কে আপনি??আর আপনার সাহসই বা হয় কি করে আমার রুমে এভাবে ঢোকার??আর আমাকে জড়িয়ে ধরার সাহসই বা হয় কি করে?(বিরক্তি নিয়ে)।

,, ছেলেটি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দুই বাহু ধরে ঝাকি দিয়ে :

,,, তুই আমাকে চিনতে পারছিস না ,,সোনালী??? আমি তোর রাত ভাইয়া।আগে তো রাত ভাইয়া বলতে অঙ্গান ছিলি আর এখন চিনতেই পরছিস না??

,,,”রাত” নামটা শুনেই আমার বুকটা ছেদ করে উঠল। নামটা আমার খুব পরিচিত। এই তবে সেই প্রতারক?? কেন এসেছেন এতো বছর পর?? কি চাই?? আমি তাকে ছাড়া বাজতে শিখে গেছি। যে দিন ছেড়ে গিয়ে ছিলো আমায়?? এখন আবার কেন….? অভিমানের পাল্লাটা বড্ড ভাড়ী ।তাই নিজেকে সংযত করে::

,, ছাড়ুন আমাকে,, আর রাত,,? হ্যাঁ,, এই নামের একজনকে আমি চিনতাম কিন্তু এখন সে আমার কাছে একজন অগগ্যত ব্যাক্তি ছাড়া আর কিছু না। সো যাস্ট লিভ মি,,,(চেঁচিয়ে)।

.. (হালকা হাসি দিয়ে )তুই আর বদলালি না কবে ভদ্র হবি তুই??

,, আপনাকে আমি ছাড়তে বলেছি আর চলে যান এখান থেকে..। শুনতে পেয়েছেন?? চলে যান।।(আবার ও চেঁচিয়ে)

,, শোন সোনালী আমার রাগ উঠাস না।আর আমার রাগের মূল্য তোকে কিভাবে দিতে হতে পারে সেটা তোর অজানা না।(রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)।

,,, আপনার রাগের বিন্দুমাত্র কেয়ার আমি করি না।আই ডোন্ট কেয়ার এন্ড গেট লস্ট।

,, চোখে রাগ স্পষ্ট ।ডান হাতটা আমার চুলের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে,,বাম হাত দিয়ে আমার কোমর চেপে ধরে,,,দাঁড়া দেখাচ্ছি তোর ডোন্ট কেয়ার,,বলেই আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে রাগ জেরে দিচ্ছেন।

,,,উমম,,উমম,,,, ছোটাছুটি শুরু করে দিলাম কিন্তু এসব বৃথা চেষ্টা । এই হাতির সামনে আমি নিতান্তই তুচ্ছ প্রানী। কিন্তু কেন যেন ভালো লাগছে ।আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি । না আমার দুর্বল হলে চলবে না। এতোক্ষণে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা। আমি আবার ছোটাছুটি শুরু করলাম। হয়তো উনি আমার মনের ভাষা বুঝতে পেরেছে।তাই ছেড়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আমিও ঢিট। আমি যতো কষ্ট পেয়েছি তা তো এনাকেও ফিল করাব।

,, কি শুরু করেছেন এসব? আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমাকে দেখে কি আপনার বউ বলে মনে হচ্ছে??

,, বউই তো বানাতে চাই ,, সঠিক সময়ের অপেক্ষা।

,, উনি কি বললেন আমার মাথায় কিছু ঢুকল না।সব মাথার উপর দিয়ে গেল।

,, আচ্ছা আপনার কি কানে সমস্যা আছে??

,, না তো কেন??(প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে)।

.. তাহলে বোধহয় আপনার কানে ময়লা জমেছে। এতদিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন হয়তো ঠিক করে কান পরিষ্কার করার সময় পান নায়।। একটা কাজ করেন,, আজ ববসায় গিয়ে ৪/৫টা কটনবাড নিয়ে বসবেন ।আর কানটা ভালো করে পরিষ্কার করবেন। কান ঠিক থাকলে হয়তো এতক্ষণে এতো কথা শোনার পর এখানে থাকতেন না। চলে যেতেন।

,,, শোন তুই আগে হারপিক দিয়ে তোর মুখ পরিষ্কার কর। ব্যবহার এতো জঘন্য হয়েছে কেন??যাই হোক পড়ে দেখা হবে।,,বাই।

উনি আর কোন কথা না বলে উঠে হনহন করে চলে গেলেন। আমি এবার সস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। আবার আধশোয়া হয়ে কপালে হাত দিয়ে ,,,

.. আমি সোনালী বোন্যা,,এই বাড়ির বড় মেয়ে । আমার বড় আমান ভাইয়া। এবার English-এ অনার্স করছি।আর এই যে ছেলেটা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল,,,ইনি হলেন,, “প্রান্ত রহমান রাত”।ভাইঢয়ার ছোট বেলার বন্ধু।এনাদের বাসা আমাদের বাসার পাশেই। ভাইয়ার বন্ধু হওয়ার সূত্রে তার আসা যাওয়া। ওনাদের ফেমিলির সাথে আমাদের ফেমিলির ভালো সম্পর্ক। তবে ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি এনার আমার প্রতি দুর্বলতা।আর কেয়ার ও বড্ড বেশি। আমিও তাকে খুব পছন্দ করতাম। আমার কোন কথা উনি ফেলতেন না। কিন্তু হঠাৎ উনি বিদেশে চলে গেলেন । কারণটা ওনার কেরিয়ারের ইমপ্রুভমেন্ট,,। ওনার চলে যাওয়াতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু বলে না,,, সময় আর নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না,, ঠিক তেমনি আমি ও তাকে ভূলে গেলাম।আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল। বেশ অনেক সময় কেটে গেছে,,,,

,,,আজ স্বপ্নের মতো এই ঘটনা.,,,,,,

,,, পরদিন সকালে রেডি হলাম ভার্সিটি যাব। আম্মুর কাছে বিদায় নিলাম। বাইরে দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য। কিন্তু না রিকশারা বোধ হয় আজ হরতাল করেছে।,,,, এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আর ভার্সিটিতে যাওয়া হবে না।তাই দেরি না করে সামনে হাটছি যদি কোন রিকশা পাই,,,,,।

..,, হঠাৎ একটা বাইকের আওয়াজে পেছনে তাকাই।কালো জিন্স আর শার্ট ইন করা,,হাতা ফোল্ড করা। বাম হাতে ঘড়ি,, আর ব্ল্যাক সুজ পুরো ফর্মাল লুক। দেখে মনে হচ্ছে আমার স্বপ্নের রাজকুমার আসছে। আমি আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভালো করে দেখতেই দেখি,, এতো রাত ভাইয়া। আমি ভয় পেলাম। আবার যেন কি কর,,,? কিন্তু সাদা চামড়ার উপর কালো রংটা যেন খেলে উঠেছে। আমি এসব কি ভাবছি?? না না আরো শক্ত হতে হবে আমাকে।

,,বি সট্রোং সোনালী।

বাইকটা আমার সামনে এসে দাড়ালো।রাত ভাইয়া বাম হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে:

,, কিরে সোনালী ভার্সিটি যাচ্ছিস?আয় আমি তোকে পৌঁছে দিচ্ছি।

,, আমি একাই যেতে পারি । আপনাকে পৌঁছে দিতে হবে না।

,,,তুই আবার আমার কথা শুনছিস না??কাল ভালো ভাবেই বুঝেছিস আমার রাগের মাসুল তোকে কিভাবে গুনতে হবে।কাল যেটা বন্ধ রুমে হয়েছে আজ সেটা খোলা রাস্তায় করাবি নাকি??(চোখ টিপ মেরে আমার দিকে ঝুঁকে)

,,,,,,(আমি ভয়ে ভয়ে),,না না না,,রাত ভাইয়া আমি উঠছি।দেখেন আমি উঠছি।(কাল তো কেউ দেখেনি কিন্তু এই খোলা রাস্তায় এসব হলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না)…..

,,,#ভালো তোকে বাসাতেই হবে
#পরিধি রহমান বিথি
#পর্ব-১

,,,,,,,,, চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here