ভিনদেশী পর্ব ২১+২২+২৩

#ভিনদেশী
#পার্ট:২১
#আদ্রিয়ানা নীলা

জ্যাকের থ্রেট শুনে শ্রুতি কেঁপে উঠল ।এই ছেলের উপর বিশ্বাস নেই শ্রুতির৷জ্যাক যদি বাসায় আসে আর তা যদি লুসি আর খালামণি জানে যদি তাহলে কী ভাববে।লুসির মা যেমন আদর করতে পারেন তেমনি কঠোরও।বলবে,

পড়তে এসে বিদেশী পোলাদের সাথে প্রেমপ্রীতি করো। তারপর বাবা মাকে বলে দিবি। তখন কী হবে?

শ্রুতি ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে জ্যাক ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

–ফোন রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগে?

শ্রুতি এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল,

–জ্যাক তুমি এতো রাতে কল কেনো দিয়েছো?

জ্যাক হালকা হেসে বলল,

–আমার প্রিন্সেস তো ঘুমাতে পারছিল না৷ শুধু তার প্রিন্স এর কথা ভাবছিল। প্রিন্স ও তাকে খুব মিস করছিল। তাই কল দিয়েছি৷

শ্রুতি প্রিন্সেস নামটা শুনে গা দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল৷ বুকের ভিতরে হাতুড়ি পেটানো ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। শ্রুতি কিছু বলার আগেই জ্যাক আবার বললো,

–ডিনার করছো শ্রুতি?

শ্রুতি ক্ষীণ স্বরে বলল,

–হুম।

–তুমি এখন কী করছো? আমি জানি আমার কথা ভাবছো তাই না?

এটা বলার পর ওপাশ থেকে জ্যাকের হাসির ঝংকার শোনা গেল। শ্রুতি চুপ করে থেকে জ্যাকের হাসির শব্দ শুনতে লাগলো । জ্যাকের হাসির শব্দটা শ্রুতির কাছে বেশ মধুর লাগছে। এভাবে কিছুক্ষণ কেটে গেলো৷ জ্যাক এখনো হাসছে। হঠাৎ শ্রুতি ঘোর কাটল। সে মনে মনে বলল, এসব আমি কী ভাবছি?

সে জ্যাককে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,

–এতে এতো হাসার কী আছে ? আর আমি তোমার কথা ভাবতে যাবো কেন? আমার ঘুম আসছিলো না তাই শুয়ে ছিলাম।

শ্রুতি কথা শুনে জ্যাকের হাসি থামলো না। জ্যাক হেসে হেসে বলল,

–আমারও তো ঘুম আসছে না। চোখ বন্ধ করলেই তোমার প্রতিবিম্ব চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তোমার ও মনে হয় এই অবস্থা। মানুষ সদ্য প্রেমে পড়লে এইরকমই হয়।তাই চলো সারারাত জেগে আজকে প্রেমালাপ করব।

জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতি খট করে কল টা কেটে দিল। তার রাগে কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে।লজ্জাও লাগছে। লজ্জা, রাগ একত্রে মিশ্রিত হলে যে রকম হয়। এই ছেলের মুখ এতো লাগামহীন কেন? কোনো কিছু আটকায় না।

———————

শ্রুতি বারান্দায় একটা ইজি চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছে। আর বাহিরের পরিবেশটাকে উপভোগ করছে ।হালকা হালকা তুষার পরছে। লুসিদের বাগানের বড় বড় গাছ গুলোর উপর তুষার জমেছে।শ্রুতি ভালোই লাগছে এসব কিছু।

হঠাৎ শ্রুতির পাশে কেউ ধপ করে বসলো। শ্রুতি চোখ তুলে তাকালো। দেখলো লুসি বসেছে।শ্রুতি লুসিকে ভালোভাবে পরখ করলো। লুসির চোখ মুখে কেমন একটা আনন্দের ঝলক। লুসি শ্রুতিকে খুব এক্সাইটেড হয়ে বলল,

–শ্রুতি জানো আজকে কীসের দিন?

শ্রুতি না জানার মতো করে জিজ্ঞেস করল,

-কিসের দিন?

লুসির মুখের এক্সাইটমেন্টটা কেমন চলে গেল। লুসি সন্দেহ জনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো,

–তুমি সত্যিই জানো না আজকে কী?

শ্রুতি একটু ভাবলো।শ্রুতি মনে মনে বলল,

” কই আজতো কিছুর অনুষ্ঠান নেই বা পার্টি নেই। তার তো মনে পরছে না৷ তাহলে কিসের কথা বলছে লুসি? ”

শ্রুতি কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিল,

–সত্যিই আমার মনে নেই। প্লিজ একটু বলো।

লুসি হাসি মুখে বলল,

–আজকে” সাইবার মানডে “তুমি এটা জানো না?

–ওহ,সরি আমার মনেই ছিল না।

লুসি পুনরায় উচ্ছসিত হয়ে বলল,

–তাড়াতাড়ি রেডি হয় আমরা একটু পরে শপিং করতে যাবো। অনেক কিছু কিনবো আমি। আমার শপিং করতে প্রচুর প্রচুর ভালো লাগে৷

শ্রুতি” সাইবার মানডে ” নিয়ে ভাবতে লাগলো। কিছুদিন আগে এই দিনটির কথা শুনেছিল সে। বিশ্বজুড়ে শপিংপ্রেমীদের জন্য একটি বহুল প্রতীক্ষিত বিষয় হলো ‘সাইবার মানডে’ যা সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি।এটি নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পালিত হয়। সেই অনুসারে এবার ৩১শে নভেম্বর পালিত হচ্ছে। এই দিনে সবার জন্য সুযোগ থাকে খুব কম খরচে প্রচুর জিনিস কেনার। ক্রিসমাসকে উপলক্ষ্য করে গেমিং এর জিনিস থেকে শুরু করে ল্যাপটপ পর্যন্ত সবকিছুর উপরেই থাকে দারুণ সব অফার।প্রায়ই সব পণ্যের উপর প্রায় ৮০% ছাড় দেয়া হয়।

শ্রুতির আমেরিকায় এই প্রথম স্নো ফল দেখার অভিজ্ঞতা হলো। মেঘলা মেঘলা আবহাওয়াতেই বিনা অনুমতিতেই শুরু হয়ে যায় বরফ পড়া। কখনো গুঁড়ো গুঁড়ো বরফ প্রচন্ড হাওয়ার দাপটে উড়ে এসে চোখে মুখে ঢুকে যায়। কখনো পেঁজা তুলোর মতো হাওয়ায় উড়তে থাকে। দেখে মনে হবে শিমুল তুলো উড়ছে।রাস্তায় গাড়ি নেই তেমন। মানুষের আনাগোনা ভালোই আছে৷ সবার হাতে ছাতা। চারপাশ ভরে আছে স্বর্গীয় সাদায়। বাড়িঘর, গাছপালা সবকিছু ঢেকে আছে সাদা বরফে। মনে হয় পুরো পৃথিবীটাই সাদা এক ভাস্কর্য।
তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বরফ জমে তৈরি হয় স্কি খেলার মাঠ। বিশেষ করে ঢালু পাহাড়গুলোয়। পার্কগুলোতে তৈরি করা হয় কৃত্রিম আইস স্কেটিং রিং, আইস হকি খেলার মাঠ।

শ্রুতি আর লুসি প্যাসিফিক প্লেস মলের দিকে গেল৷ কিন্তু সেখানে পৌঁছে শ্রুতি বেশ অবাক হলো । জ্যাক, আরিচ,লিও দাড়িয়ে আছে। লুসি গেল তাদের কাছে। শ্রুতি আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল । মুখে বিড়বিড় করে বলল,

–এই বলদ গুলোরে এই খানে আনা লাগে। এদের ছাড়া কী লুসির পেটের ভাত হজম হয় না৷ ফালতু যত্তসব।

শ্রুতি এখনো আগের ন্যায় দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে৷ এখনও লুসি ওদের সাথে কথা বলছে৷ শ্রুতি নিজের হাতমুজার উপর দিয়ে তালু ঘষতে ঘষতে মৃদু স্বরে বলল,
এই ঠান্ডার মধ্যে ভিতরে না গিয়ে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ড্রামা করছে। আর আমি ঠান্ডায় যে মরে যাচ্ছি তার দিকে কোনো কোনো খেয়াল নেই৷

–হেই শ্রুতি, ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন?এখানে আসো।(হঠাত্ জ্যাক বললো)

শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে একটা ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বলল,

–কতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে, আর এখন ডাকতেছে। এমনি কতদিন দিন ধরে জ্বালায়। আর এতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে তার কোনো খবর নেই।

শ্রুতি এদিক ওদিক তাকাতে থাকল৷ এমন ভান করল যে সে জ্যাকের কথা শুনেই নেই।

হঠাৎ জ্যাক শ্রুতির কাছে এসে হাত ধরে শপিং মলের ভিতরে নিয়ে যেতে লাগল। সবাই সামনে যাচ্ছে আর ওরা পিছনে। শ্রুতি নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু জ্যাক ছাড়ছেই না। শপিং মলেও মোটামুটি ভালোই ভীড় আছে। ভিতরে কোনো ঠান্ডা নেই।

লুসি ড্রেস দেখছে। আর লুসি দোকানের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।তার শপিং করতে তেমন ভালো লাগে না। পছন্দ করতে পারে না কিছু। জ্যাকেরা অন্যদিকে গেছে।

হঠাৎ শ্রুতির ইচ্ছা জাগলো শপিংমল টা একটু ঘরে দেখবে। শপিংমলটা অনেক সুন্দর।

দোকানগুলোর সামনে মানুষের ভালোই সমাগম। চেচামেচিতে পুরো শপিংমল ভরপুর।দোকানদারের সাথে দাম কষাকষিতে ব্যস্ত প্রায়ই সবাই। যে যার কাজ করছে। শ্রুতি হেঁটে হেঁটে দেখছে সবকিছু ।
হঠাৎ কেউ হ্যাঁচকা টান দিল। শ্রুতি তার বুকের উপর গিয়ে পরল। শ্রুতি বেশ ভয় পেল৷ সে এইরকম ঘটনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না।শ্রুতির নাকে হালকা সুগন্ধি বাতাসযুক্ত বাতাস এসে ধাক্কা মারল। পারফিউমের ঘ্রাণ। শ্রুতির মনে হলো, এই ঘ্রাণ তার চেনা, আগেও পেয়েছে সে। শ্রুতি একটু নড়াচড়া করে উঠতেই বুঝতে পারল,এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছে।শ্রুতির ভয় লাগলো। সে ছিটকে সরে গেল তার কাছ থেকে। অতঃপর শ্রুতি ব্যক্তিটির দিক তাকালো৷ অস্ফুটস্বরে বলল,

–জ্যাক।

জ্যাক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে একদৃষ্টিতে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে আছে।
জ্যাককে এরকম তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রুতি রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। কী ভয়টায় না পেয়েছে এই বলদের জন্য সে। জীবনে কী মেয়ে দেখেনাই নাকি। শ্রুতি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এটা চেন্জিং রুম। শ্রুতি কটমট দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে বলল,

–জ্যাক এই সব কোন ধরনের ম্যানার?তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেন?

জ্যাক এবারও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে এখনো শ্রুতির দিকে তাকানো। শ্রুতির বেশ বিরক্ত লাগলো। ছেলেটা কী পাগল হয়ে গেলো নাকি।
হঠাৎ জ্যাক শ্রুতির দিকে এক পা একপা করে এগোতে লাগলো। শ্রুতি জ্যাককে এরকম এগোতে দেখে ভয় পেয়ে এক পা একপা করে পিছাতে লাগলো।এরকম পিছাতে পিছাতে তার দেয়ালের সাথে পিট ঠেকে গেছে। আর কোথাও যাওয়ার নেই। শ্রুতি ভীতু ভীতু দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে কাপাকাপা গলায় জিজ্ঞেস করল,

–জ্যা,ক তু,মি এ,গোচ্ছো কে,ন?

জ্যাক শ্রুতির কথা উত্তর না দিয়ে একদম শ্রুতির কাছে আসল। দেয়ালের সাথে হাত চেপে ধরল৷ আর এক হাত কোমড়ে রেখে শ্রুতিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। জ্যাকের এতো কাছে এসে শ্রুতির প্রাণ যায় যায় অবস্হা। হৃৎস্পন্দন বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক শব্দ হচ্ছে। এখনই মনে হয় জানটা বেরিয়ে আসবে। হাত পা কাপছে। শ্রুতির মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। শ্রুতি জ্যাকের চোখের দিকে তাকিয়ে কেপে উঠলো। শ্বাস বন্ধ হবার মতো অবস্হা হচ্ছে তার। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জ্যাক। শ্রুতি অন্যদিকে তাকালো। এই নীল চোখজোড়ার দিকে তাকালে সেও হারিয়ে যাবে অন্য জগতে। হঠাৎ জ্যাক যা করলো তাতে শ্রুতির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম ।সে স্তব্ধ হয়ে আছে। হাত পা কাঁপা-কাঁপি বন্ধ হয়ে গেছে৷
#ভিনদেশী
#পার্ট:২২
#আদ্রিয়ানা নীলা

জ্যাক শ্রুতির অধর ছুইয়ে ছিল। জ্যাক যে এমন কাজ করবে তা শ্রুতি ভাবতেও পারে নি৷ সে স্তব্ধ হয়ে আছে। হাত পা সব স্তব্ধ হয়ে আছে। শ্রুতি বিস্ময়ই যেন কাটছে না। জ্যাক শ্রুতির এইরকম অবস্হা দেখে মুচকি হাসল। অতঃপর শ্রুতির কানের লতিতে অধর ছুইয়ে বলল,

–এইটুকুতেই এতো লজ্জা পাও, বিয়ের পর কী করবে হুম?

কানের কাছে ফিসফিস করার সময় জ্যাকের ঠোঁট দুটো বার বার শ্রুতি কানের লতিতে লাগছে। শ্রুতি কেঁপে উঠছে। জ্যাক শ্রুতির কাছ থেকে দূরে সরে গেলে শ্রুতি লজ্জায় আরও নুইয়ে গেল।শ্রুতির ইচ্ছা করছে মাটির সাথে মিশে যেতে।জ্যাকের দিকে তাকাতেও কেমন দ্বিধাবোধ হচ্ছে।লজ্জা করছে খুব। জ্যাক আর একবার শ্রুতির দিকে তাকিয়ে এক ফিচলে হাসি দিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেল।

শ্রুতি সেখানেই দাড়িয়ে রইল। আর লজ্জায় লাল,নীল হতে লাগল। হঠাৎ রিংটনের শব্দে শ্রুতি বাস্তব জগতে ফিরে এলো। ফোনের স্ক্রিনে লুসি নামটা ভেসে উঠল। শ্রুতি তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করলে ওপাশ থেকে শুনতে পলো লুসির উদ্বিগ্ন কন্ঠ।

–শ্রুতি তুমি কোথাও? আমি তোমাকে কতক্ষণ ধরে খুঁজতেছি।

–আমি আশেপাশেই আছি। তুমি কোথায়?

–আমি সেকেন্ড ফ্লোরে আছি। তাড়াতাড়ি আসো।

শ্রুতি তাড়াতাড়ি কলটা কেটে সেকেন্ড ফ্লোরে নামল। নিচে এসে দেখ লুসি একপাশে দাড়িয়ে আছে। শ্রুতি লুসির কাছে এসে বলল,

–হয়েছে তোমার শপিং করা?

–হুম হয়েছে।

লুসি শ্রুতিকে ভালো করে পরখ করতে লাগল। লুসিকে এরকম তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রুতি ভড়কে গেল৷ মনে মনে বলল,

–লুসি কিছু বুঝে ফেলে নি তো।

শ্রুতি ভয় হতে লাগল। শ্রুতি তবুও একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

–লুসি ওরকম তাকিয়ে কী দেখছো?

লুসি অবাক হয়ে বলল,

–শ্রুতি তুমি কিছু কেনো নি?

লুসির প্রশ্ন শুনে শ্রুতির ভয়টা চলে গেল। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

—না কিছু কিনে নি । চল বাসায় চলো।

লুসি অস্হির হয়ে বলল,

–না না। তোমাকে শপিং করতে হবে৷ মম আমাকে বলেছে তোমাকে প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে দিতে৷ অল্প কিছু হলেও কিন্তে হবে৷ নাহলে তোমার জন্য মম আমাকে বকবে । আমি বকা খেতে চাই না।

লুসি শ্রুতিকে টেনে নিয়ে আবার থার্ড ফ্লোরে নিয়ে গেল৷ শ্রুতি অনেকবার না বলা সত্যেও লুসি কোনো কথা শোনে নি৷
লুসি শ্রুতিকে কিছু শীতের পোশাক,এথনিক টপস ও কয়েকটা লেডিস শার্ট কিনে দিল। সব লুসি পছন্দ করে কিনেছে৷ শ্রুতি আগেই বলেছে ও ড্রেস পছন্দ করে কিনতে পারে না।

শপিং শেষ শ্রুতি আর লুসি বাসার উদ্দেশ্য যাত্রা করল। জ্যাকরা নেই তাদের সাথে। শ্রুতি লুসির কাছ থেকে জেনেছে ওদের নাকি আরও দেরি হবে। শ্রুতি শুনে খুব খুশি হয়েছে। জ্যাকের সাথে গিয়ে সে লজ্জায় পরতে চায় না।
শ্রুতি আর লুসির হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ। যা বহন করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু আশেপাশে কোনো বাস, ক্যাব নেই। দু একটা ক্যাব থাকলেও তা ভর্তি। লুসিও কোনো গাড়ি আনে নি। কারণ তুষার পাতে গাড়ি চালানো কষ্টকর।
অনেক কষ্টের পর দুজনে বাসায় এসে পৌঁছালো। শ্রুতি নিজের রুমে গিয়ে জিনিসগুলো সোফার উপরে রেখে বিছানায় শুয়ে পরল। ফ্রেশ ও হলো না। প্রচুর ক্লান্ত সে।

রাতে শ্রুতি বিছানায় শুয়ে আছে কিন্তু চোখে দু পাতায় কোনো ঘুম নেই। বার বার চোখের সামনে সকালের দৃশ্য ভেসে উঠছে না চাওয়া সত্যেও। রাতে জ্যাক অনেক বার কল করেছে। শ্রুতি রিসিভ না করেই ফোন সুইচঅফ করে রেখে দেছে। জ্যাক ভাবছে শ্রুতি হয়তো সকালের ঘটনার জন্য লজ্জায় কথা বলছে না৷ কিন্তু শ্রতি ভাবছে অন্য কথা। সে মনে করছে, জ্যাক একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে। বার বার মানা করার পরও আরও কাছে আরছে। এমনি সে জ্যাকের প্রতি দুর্বল। এরকম করলে তো আরও দুর্বল হয়ে করবে।কিছু বলতেও পারছে না। সে এখানে যার জন্য এসেছে সেই লক্ষ্য সে পূরণ করতে চায়।জ্যাকের প্রতি দুর্বলতা সে প্রকাশ করতে চায় না। নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করলেই অবহলা বেড়ে যায়। যার প্রমাণ শ্রুতি আগেই পেয়েছে।

শ্রুতি সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখল ৯ঃ৪০ বাজে। শ্রুতি নিজের চোখটা আবার কচকালো। কিন্তু না ঠিক ই তো আছে। কালকে শেষ রাতের দিকে ঘুমানোর কারনে এরকম হয়েছে তা শ্রুতি বুঝতে পারল। শ্রুতি তাড়াতাড়ি উঠে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিল। ব্যাক প্যাকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ভো দৌড় রুম থেকে। খালামণি ব্রেকফাস্ট এর কথা বললে শ্রুতি বলল ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নেবে। লুসি আগেই চলে গেছে।

শ্রুতি দ্রুত ক্যাম্পাসে ঢুকে নিজের ক্লাসে গেল। কিন্তু ক্লাসে টিচার ডুকে গেছে। প্রফেসর রিচার্ড ক্লাস নিচ্ছে। ইনি একটু গম্ভীর ধরণের মানুষ। শ্রুতি দরজার সামনে দাড়িয়ে বলল,

–May I coming Sir?

প্রফেসর রিচার্ড শ্রুতির দিকে সরু চোখে তাকালো। শ্রুতি এইরকম তাকানোর ভঙ্গি দেখে ভয় পেল।

–শুতি তুমি ১০ মিনিট লেট করেছো। তা জানো?

শ্রুতি মাথা নিচু করে বলল,

–স্যার ব্রেকফাস্ট করতে করতে দেরি হয়ে গেছে।

শ্রুতি কথাটা বলে জিভে একটা কামড় দিলো। মিথ্যা বলেছে সে। যদি বলতো যে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে। তাহলে সবাই হইহই করে হাসতো। কারণ এইখানের সবাই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে।

Early to bed and early to rise makes a
man heathy, wealthy and wise.

শ্রুতি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে।কয়েকটা ক্লাস করেই ক্যান্টিনে এসেছে। প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে তার। রাতরে ডিনার না করার কারণে ক্ষুধাটা আরও বেশি। আশেপাশের কোনো কিছুতে তার খেয়াল নেই। সে খেতে ব্যস্ত। আগে খাওয়া তারপর সব৷ এই কথাটা এখন শ্রুতির জন্য প্রযোজ্য।
হঠাত্ জ্যাক শ্রুতির কোথা থেকে এসে শ্রুতির পাশে চেয়ার টেনে বসলো। কিন্তু শ্রুতির সেই দিকে খেয়াল নেই। এক ধ্যানে খাচ্ছে। জ্যাক টেবিলের উপরে গালে হাত দিয়ে শ্রুতির খাওয়া দেখছে। শ্রুতির যে প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে সে তা বুঝতে পেরেছে। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর শ্রুতির মনোযোগ আকর্ষণের জন্য জ্যাক ব্যঙ্গ করে বলল,

–শ্রুতি তুমি যে এতো খেতে পারো জানতাম না তো? আর তোমাকে দেখে মনেও হয় না?

শ্রুতি হাতের থাকা বার্গারটাতে কামড় দিতে যাবে এর মধ্যে কারো কথা শুনে কামড় পরলো শ্রুতির হাতে।

–আউচ

জ্যাক উত্কণ্ঠিত হয়ে বলল,

–কী হয়েছে শ্রুতি?

শ্রুতি চোখমুখ খিচে রেখেছে। জোরেই কামড়টা পরেছে। জ্যাক বুঝতে পারল শ্রুতি আঙ্গুলে কামড় পরেছে সে তড়িঘড়ি করে শ্রুতি আঙ্গুলটা নিয়ে নিজের মুখে দিল। জ্যাকের শ্রুতির আঙ্গুল টা দেখে বলল,

–ঠিক ভাবে খেতে পারো না? দেখেছো একেবারে কামড়ের দাগ পরে গেছে।

শ্রুতি পিটপিট করে চোখ খুলল। এর মধ্যেই জ্যাক ওয়েটারকে বলল হালকা ঠান্ডা পানি আনতে বলল। ঠান্ডা পানি আনলে জ্যাক শ্রুতির আঙ্গুলটা তার মধ্যে ডুবিয়ে দিলো।
শ্রুতি এতক্ষণ সব খেয়াল করেছে। এই সামান্য কারণে জ্যাকের চোখ মুখে অস্হিরতা খেয়াল করছে। শ্রুতি জ্যাককে আশ্বস্ত বলল,

–জ্যাক কিছুই হয় নি। অল্প একটু ব্যথা পেয়েছি। এখন কমে গেছে। হাত ছাড়ো।

এতক্ষণ জ্যাক হাত ধরার কারণে শ্রুতির অস্বস্তি হচ্ছিল। তাই হাতটা ছাড়তে পারলো।
জ্যাক একবার শ্রুতির দিকে তাকিয়ে হাতটা ছেড়ে দিল৷

–দেখে শুনে খেতে পারো না? কত ব্যথা পেলে দেখেছো?

শ্রুতি একটা ভেঙচি কেটে বাইরে দিকে তাকিয়ে বলল,

–তোমার জন্যই এইসব হয়েছে।হঠাৎ তোমার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমার কোনো দোষ নেই।

জ্যাক হেসে বলল,

–তার মানে তুমি আমাকে ভয় পাও হুম?

শ্রুতির হঠাৎ কালকের কথা মনে পড়লো৷ ও লজ্জা পেয়ে গেলো। কোনো কথা না বলে ওখান থেকে উঠে নিজের ক্লাসের দিকে গেলো৷ জ্যাক ও শ্রুতি সাথে সাথে উঠে শ্রুতির পিছন পিছন গেলো৷
জ্যাক শ্রুতির পিছন থেকে বলল,

–উত্তরটা তো দিয়ে যাও।

শ্রুতি কোনো উত্তর দিলো না। হঠাৎ কেউ শ্রুতির পথ অবরোধ করলো৷ শ্রুতি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো ক্লেভ।
ক্লেভ হাসিমুখে বলল,

–তোমাকেই খুঁজছিলাম শুতি। কেমন আছো?

শ্রুতি ক্লেভকে একবার পরখ করে নিল। ওয়াশিংটনে আশার পর প্রথম পার্টিতে দেখেছিল। আর এই আজকে দেখলো। শ্রুতি মনে মনে বললো,

–এই পোলার রোগ আছে। কোথা থেকে হুট করে এসে হাজির হয়। আবার আমার নামটাও ঠিক মতো বলতে পারে না।

শ্রুতি মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,

–ভালো আছি। আপনি?

ক্লেভ মৃদু হেসে বলল,

–আমিও ভালো আছি।

ক্লেভ আর কিছু বলল না। ক্লেভকে কিছু বলতে না দেখে শ্রুতি বিরক্ত হলো। শ্রুতি কিছু বলতে নিবে তার আগেই ক্লেভ বললো,

–তোমার সাথে এক কাপ কফি পান করা যাবে।

শ্রুতির একটু আগেই খেয়ে আরছে৷ এখন কিছু খেতে ইচ্ছা করছে না।
হঠাৎ শ্রুতির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। শ্রুতি পিছন দিকে তাকিয়ে দেখলো জ্যাক আছে কিনা। হ্যাঁ জ্যাক তার ঠিক পিছনেই দাড়িয়ে আছে। চোখমুখে রাগের আভাস। শ্রুতি বুঝতে পারলো জ্যাক জেলাস ফিল করছে। শ্রুতিও জ্যাককে আরও একটু জ্বালানোর জন্য বললো,

–তুমি আমাকে কফি পান করার অফার দিচ্ছো তা তো আমার সৌভাগ্য। চলো যাওয়া যাক।

শ্রুতি আর ক্লেভ যেতে নিবে ক্যান্টিনে এর মধ্যে জ্যাক শ্রুতি হাত ধরে বলল,

–না ও কোথাও যাবে না।

বলেই শ্রুতির হাত ধরে নিয়ে গেলো।

জ্যাক শ্রুতিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে। শ্রুতি জ্যাকের চোখমুখ দেখে কেঁপে উঠছে। ফর্সা চোখ, মুখ রাগে রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে।জ্যাক ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

–ক্লেভের সাথে তোমার এতো কথা কিসের হ্যাঁ? আমি কফি পান করার কথা বললে কতো অজুহাত দেও৷ আর ক্লেভ বললো এতেই তুমি রাজি হয়ে গেলা কেন?

জ্যাকের প্রশ্ন শুনে শ্রুতি কী বলবে ভেবে পাচ্ছে৷ জ্যাকের দিকে তাকাতেও ভয় লাগছে। শ্রুতি মনে মনে বলল,

“কেন যে কিছু বোঝো না? মাথা মোটা হয়ে গেছিস তুই শ্রুতি৷ এখন কীভাবে এর কাছ থেকে বাঁচবি? ”

–কী হলো কথা বলছো না কেন?

জ্যাক ধমক শুনে শ্রুতির কেঁপে উঠলো৷

–তোমরা এখানে কী করছো? আমি তোমাদের খুঁজতে খুঁজতে মরতেছি।

কারো কথা শুনে জ্যাক শ্রুতির কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো লিলি সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জ্যাক লিলির পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
শ্রুতি এখনো মাথা নিচু করে আছে। লজ্জা লাগছে শ্রুতি। শ্রুতির কাছে গিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বললো,

–তোমার দুজন এখানে কী করছিলে?

লিলির প্রশ্ন শুনে শ্রুতি ভড়কে গেলো। তার মানে লিলি দেখেছে ওদের দুজনকে ওইরকম অবস্হায়। লিলি এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো,

–কই কিছু নাতো।

–কিন্তু আমি তো দেখলাম তোমরা

–তুমি কিছুই দেখো নি।

শ্রুতি লিলির হাত ধরে রুম থেকে বের করে ক্লাসে নিয়ে গেলো।
ক্লাসে শ্রুতি লিলির পাশের বেঞ্চে বসলো। লিলি এখনো সেই কী দেখেছে তা ভাবতেছে। শ্রুতি বারবার বলতেছে কীছুই দেখনি। জ্যাকের কিছু সমস্যা ছিল। তাই জিজ্ঞেস করছিল।

শ্রুতি আর কোনোদিক মনোযোগ না দিয়ে একটা বইয়ে মুখ গুজে পড়তে লাগলো। আজকে বাস্কেটবল ক্লাবে যেতে হবে না।
শ্রুতি পিছনের বেঞ্চে গিয়ে একটা বই পড়ছিল। এমন সময় তাদের ক্লাসে কেউ এসে বলল,

–শ্রুতি আছো?
#ভিনদেশী
#পার্ট:২৩
#আদ্রিয়ানা নীলা

শ্রুতি চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। স্বয়ং লিও এসেছে তাকে ডাকতে। শ্রুতি বইটা পাশে রেখে লিওর কাছে গিয়ে বলল,

–কী ব্যাপার লিও? আমাকে খুঁজতেছো কেন?

–এলিশা তোমাকে ডাকতেছে চল।

শ্রুতি অবাক হলো৷ এলিশা তাকে ডেকেছো কেন এই প্রশ্ন তার মনে জাগছে।
লিও শ্রুতিকে এলিশার কাছে নিয়ে গেল। এলিশা ক্যান্টিনে ছিলো। শ্রুতি গিয়ে এলিশার পাশে বসলো।

–এলিশা তুমি কী আমাকে ডেকেছো?

–হ্যাঁ শ্রুতি।

–কিছু বলবে?

এলিশা শ্রুতি আরও কাছে চেয়ার টেন বসলো। শ্রুতি এলিশার হাবভাব কিছুই বুঝতেছে না।

অতঃপর এলিশা অভিমানি কন্ঠে বলল,

–তুমি কী আমার উপর সেই দিনকার জন্য রেগে আছো? কথাও বলো না এখন। তোমাকে দেখাও যায় না।

শ্রুতি এলিশার কথা শুনে মৃদু হাসল। মেয়েটা এইরকমই। মনে হচ্ছে এইগুলো বলার জন্য ডেকে এনেছে।

শ্রুতি এলিশার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,

–না রাগ করব কেন। তোমার আমার বন্ধু। তোমাদের সাথে কী রাগ করে থাকা যায় হুম?

এলিশা শ্রুতির হাত সরিয়ে দিয়ে শ্রুতির দিকে ঘুরে বলল,

–তাহলে এই কয়দিন কথা বলো নি৷ দেখাও করো নি।

–তোমাদের তো আমি দেখি নি। তোমরাই তো উধাও হয়ে গিয়েছিলে।

এলিশা শ্রুতির কথাশুনে হাসল।

–তুমিও।

শ্রুতিও হাসল। বন্ধু এইরকমই হওয়া উচিত।
দুইজন ই কিছুক্ষণ মৌন হয়ে বসে থাকল। শ্রুতি একটা প্রশ্ন করতে মন চাচ্ছে এলিশাকে। কিন্তু পেরেই উঠছে না।
অবশেষে শ্রুতি বলেই ফেলল,

–আচ্ছা জ্যাকের সাথে যেই মেয়েটা সেদিন ভার্সিটিতে আরছিল না,সেই মেয়েটা কে৷ এখন তো আর দেখছি না।

–ওহহ তুমি জেসিকার কথা বলছো তাই না?

শ্রুতি মাথা নাড়ালো।

–ও তো মেক্সিকোতে চলে গিয়েছে। ও এখানে মাঝে মাঝে আসে৷ দু একদিন জ্যাকের বাসায় থেকে আবার চলে যায়। আগে এই খানেই থাকত যার কারণে আমাদের সাথে পরিচয় ৷ পরে ওর বাবা ব্যবসার জন্য মেক্সিকোতে চলে যায় পরে সেখানেই থাকে। ওর বাবারো বিশাল ব্যবসা আছে।

শ্রুতি এইসব আগেই জানতো। লুসির কাছ থেকে শুনেছে। মেয়েটার চলে যাওয়া শুনে অজ্ঞাত কারণে শ্রুতি খুশি হয়েছিল। মেয়েটাকে জ্যাকের সাথে তার একদম সহ্য হতো না।শ্রুতি ওকে একটা উপাধিও দিয়েছি “ল্যাছড়া “।
শ্রুতি আনমনেই জিজ্ঞেস করল,

–মেয়েটার সাথে জ্যাকের সম্পর্ক কী?

এলিশা শ্রুতির প্রশ্ন শুনে মিটিমিটি হাসছে। শ্রুতি এলিশার দিকে তাকালো। শ্রুতির মন চাচ্ছে এখন নিজের মাথায় একটা বারি দিতে। কী জিজ্ঞেস করল ও। এলিশা কী ভাববে৷

— জ্যাকের প্যারেন্স এর সাথে জেসিকার প্যারেন্স এর ভালো সম্পর্ক আছে। আর জ্যাক আর জেসিকা দু জন বেস্ট ফ্রেন্ড। জেসিকা এসে জ্যাকের বাসায় ই থাকে।

এই টুকু বলে থাকলো এলিশা।এলিশা এবার হেসে বলল,

— শ্রুতি তুমি তো দেখছি জ্যাকের ব্যাপারে খুব সেনসিটিভ । জ্যাকের প্রেমে পরলা নাকি?

এলিশার কথা শুনে শ্রুতি হতভম্ব হয়ে গেল। প্রেম আবার সে? সে থতমত খেয়ে উত্তর দিলো,

–আরে না। জ্যাকের সাথে অনেক ক্লোজ তো তাই জানতে ইচ্ছা করল।

–কিন্তু তোমার চোখ বলছে অন্য কথা।তুমি জ্যাক কে নিয়ে ভাবো।

–না এলিশা। তুমি একটু বেশি ভাবছো।

শ্রুতি দাড়াতে দাড়াতে বললো,

–আচ্ছা আসি। ক্লাস আছে৷

ক্লাসে শ্রুতি কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারছে না। তার মাথায় এলিশার কথা গুলো ঘুরছে। এলিশাকে সে যতই বলুক সে জ্যাককে নিয়ে ভাবে৷ কেন ভাবে সেটা সে নিজেও জানে। জ্যাকের প্রতি সে দুর্বল। কিন্তু কেন?সে কী জ্যাককে ভালোবেসে ফেলেছে। পরক্ষণেই শ্রুতি নিজেকে একটা কঠিন গালি দিল। সে এসব মূঢ় এর মতো কী ভাবছে। জীবনে একজনকে ভালোবেসে কী আর একজনকে ভালেবাসা যায়? গেলে তা খুব কঠিন৷
আর শ্রুতি এই অনুভূতিব্যূহ ভেদ করতে চায় না। জ্যাকের জন্য অনুভূতি গুলো সে চাপা দিয়েই রাখতে চায়। প্রকাশ করতে চায় না।

সারা বিশ্বে ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে।দেখতে দেখতে চলে এলো দিনটি। ধর্মীয় আর সামাজিক ব্যঞ্জনায় দিনটি যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব।এই দিনটিতে আমেরিকায় সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। দিনটিতে খ্রিষ্টানরা তাদের গির্জা, বাসা, বাগান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্রিসমাস ট্রি, মোমবাতি ও আলোকসজ্জাসহ নানা সরঞ্জামাদি দিয়ে সাজান।
শ্রুতি বারান্দায় দাড়িয়ে মানুষের আনাগোনা দেখছে। বাহিরে বের হয় নি সে। লুসি গিয়েছি। আমেরিকায় ক্রিসমাস ডে শুধু খ্রিষ্টানদের উৎসবে দিন নয়। অন্য অভিবাসীদের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারেও ক্রিসমাসের উৎসব দেখা যায়। আমেরিকান সমাজে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রজন্ম অন্যদের সঙ্গে এই উৎসবে যোগ দেয়।পরস্পরকে ইনভাইট করে, গিফ্ট দেয়।
সবাই পরস্পরের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ায় সড়কে তীব্র যানজট।শিশুরা নানা বর্ণিল রঙের পোশাক পড়েছে। তবে বেশির ভাগ ই সান্তা ক্লোজ এর পোশাক পড়েছে। লুসিদের বাড়ির আশেপাশের বাড়ি গুলো খুবই সুন্দর করে সাজিয়েছে৷ শ্রুতির এই সব দেখতে ভালোই লাগছে।রাস্তায় শিশুদের চিত্কার চেচামেচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। শ্রুতি একটু দেখার চেষ্টা করল চিত্কার করছে কেন।
শ্রুতি একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখলো কিছু বাচ্চারা মোজা জুলিয়ে রাখছে৷ এর কারণটা শ্রুতির মনে পড়লো । সান্তাক্লোজ। খুদেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এই উৎসবে তাদের প্রাপ্য উপহার নিয়ে৷ তাদের কল্পনায় যা নাকি ভগবান যীশুর দূত অর্থাৎ তাদের পরম আদরের সান্টা ক্লজ নিজে এসে দিয়ে যায়৷ যদিও শর্তসাপেক্ষে তুলনায় লক্ষ্মী ছেলেমেয়েদের জন্যই এই উপহার৷ সুতরাং এই উদ্দেশ্যে সফল হতে ‘ক্রিসমাস স্টকিং’ বা ‘বড়দিনের মোজা’ ঝুলিয়ে রাখার প্রচলন ছোটদের মধ্যে আজও প্রসিদ্ধ।অদৃশ্য সান্তা ক্লজ গোপনে উপহার সামগ্রী দিয়ে আসেন, এমন বিশ্বাস করে আনন্দ পায় শিশুরা।
শ্রুতি এই কথাটা লুসির কাছ থেকে শুনেছে। যেদিন শুনেছে সেদিন হেসেই দিয়েছিল৷ কল্পনাতে এসে উপহার দেয়া কথাটা তার কাছে অনেক ইন্টারেস্টিং লেগেছিল৷ আর আজকে এই আয়োজন দেখছে চোখের সামনে। তবুও ছোটদের এই আনন্দ তার ভালোই লাগছে দেখতে।

শ্রুতি বারান্দা আর না দাঁড়িয়ে নিচে গেল।আজকে লুসিদের বাসা জাঁকালো ভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। অনন্য উপাদেয় খাদ্য-সামগ্রীর ব্যবস্থা থাকে।শ্রুতি রান্না ঘরে গেল। লুসির মা রান্না করছে।শ্রুতিকে দেখে বলল,

–কী শ্রুতি তুমি এইখানে?লুসির সাথে যাওনি।

–না খালামণি।

-আচ্ছা তুমি এই গ্রিন টি টা তোমার খালুকে দিয়ে আসো৷ আমি এখন ব্যস্ত আছি। যেতে পারবো না।

শ্রুতি গ্রিন টি টা নিয়ে লুসির বাবার রুমে গেল। তিনি তখন কাজ করছিলেন। শ্রুতিকে দেখে বললেন,

–শ্রুতি মামনি তুমি যে।

শ্রুতি মুচকি হেসে বলল,

–খালুজি আপনার চা।

তিনি চায়ে চুমুক দিলেন। শ্রুতি বসতে বললেন।

–তা তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে মামনি?

–ভালোই

–এখানের পরিবেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে তোমার তা বুঝতে পারছি। প্রথম প্রথম এই রকম হবে৷ পরে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।

শ্রুতি মাথা নাড়ালো। আরও কিছুক্ষণ কথা বলে, শ্রুতি নিজের রুমে গেল৷

রাত ১০ঃ৩০টা বেজেছে।
শ্রুতি বিছানায় শুয়ে আছে । আজকে জ্যাক তাকে একবারও কল দেয়নি। যার দরুন শ্রুতির রাগ লাগছে। সে ফোনটা নিয়ে ফেসবুক লগ ইন করল । সবাই বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছে।শ্রুতি জ্যাকের আইডিতে ঢুকল কোনো ছবি পোস্ট করেছে কিনা দেখতে। শ্রুতি দেখল একটা ছবি পোস্ট করেছে। সবাই গোল করে বসে সবার কাঁধে হাত রাখা। এর মধ্যে আছে আরিচ, লিও, এলিশা, লুসি,জ্যাক। জেসিকাও এসেছে। সে জ্যাকের পাশে বসা। সবাই বিভিন্ন কালারের ড্রেস পড়া। মাথায় একটা লাল সাদা টুপি পড়া৷ । সবার সামনে নানা কাগজে মোড়ানো গিফ্ট।
ছবিটা দেখে শ্রুতির খুব খারাপ লাগলো। তাকে কেউ গিফ্ট দেয়নি। শুধুমাত্র লুসি, আর লিলি এসে দিয়েছে। লিলি তাকে একটা গল্পের বই আর লুসি একটা নতুন গিটার দিয়েছে। শ্রুতিও লুসিকে একটা পারফিউম সেট আর লিলিকে চকলেট দিয়েছে।
শ্রুতি ফোনটা রেখে দিল।মনটা ভালো করার জন্য বুক সেলফ থেকে নরম্যান ভিনসেণ্ট এর লেখা “The Power of Positive Thinking ” বইটা নিয়ে পড়া শুরু করল।
শ্রুতি গভীর মনোযোগে বইটা পড়ছে। দৈবাত্ তার ফোনে কল আসল। শ্রুতি বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিল। জ্যাক কল করেছে। শ্রুতি স্কিনে জ্যাকের নাম দেখে খুশি হলো। কলটা রিসিভ করতে যাবে তখন তার মনে হলো,সে কল রিসিভ করবে না। সারাদিন কল করেনি। আর এখন কল করছে। তাকে গিফ্টও দেয়নি। সেও কল ধরবে না। সে ওইরকম ই ফোনটা রেখে দিল। কিন্তু জ্যাক একের পর এক কল করতেই আছে। শ্রুতির কলটা রিসিভ করতে ইচ্ছা করছে আবার করতেও ইচ্ছা করছে করছে। সে উঠে বারান্দায় গেল।
শ্রুতি রাস্তার দিকে নজর দিতেই চোখে পরল একটা রেড কালার গাড়ি। শ্রুতি চমকে উঠল।

–এটা তো জ্যাকের গাড়ি। ও এখানে কী করছে?

(,,চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here