ভোরের শিশির পর্ব ৩

#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:৩

মাহিনদের বাড়িতে আজ অনুষ্ঠান হওয়াই প্রবেশদ্বারে ডেকোরেটর তৈরি মনাকর্ষক গেইট স্হাপন করা হয়েছে।চারপাশ আলোকসজ্জায় সজ্জিত।বিভিন্ন স্হানে স্হানে ফুলের তোড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে।পুষ্প অনুষ্ঠানের শোভা-সুন্দর এবং দীপ্তি বাড়িয়ে দিয়েছে।ফুলের তোড়া যে স্হানে রাখা হয়েছে সে স্হান সৌন্দর্য ও মনোহারিতা প্রদান করছে।সন্ধ্যা থেকে অতিথিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।সব বাচ্চারা নতুন পোশাক পরে দৌড়া দৌড়ি শুরু করছে।রাদিকাও গোসল করে কালো ড্রেস পরিধান করল।তার ছোট ট্রিনের বক্স থেকে ফেরিওয়ালা থেকে কেনা সাজের জিনিস নিয়ে সাজতে লাগলো।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক , চোখে কাজল,কানে ড্রেসের সাথে মিলিয়ে কানের দোল পড়ল।হাতে কালো রেশমি চুড়ি।ঘন কালো চুলগুলো আচঁড়িয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে রাখল।সব মিলিয়ে তাকে ছোট পরির মত লাগছে।রাদিকা রুম থেকে বের হয়ে অতিথিদের জন্য রাখা চেয়ারে বসে।সে শুনেছে এখানে রাত দশটায় নাচ গান হবে।কিছু অতিথিরা রাদিকার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে।একজন মহিলা রাদিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল তুমি কে ?
আরেক মহিলা বলে ওঠল দেখে তো বড় লোকের মনে হচ্ছে,এই মেয়ে তোমার বাসা কোথায়?
কেউ কেউ কানে কানে বলছে মেয়েটা দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।সবাই তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন সে পুষ্প পরি।রানুর কাছে রাদিকার এত প্রশংসা সহ্য হচ্ছে না।অকস্মাৎ রানু রাদিকার হাত ধরে টানতে টানতে বলল ওঠ এখান থেকে তর সাহস তো কম না।ছোট লোক হয়ে এখানে বসেছিস।রানুর কথাই এক মহিলা বলল মেয়েটাকে ওঠাচ্ছ কেনো?
রানু মৃদ হেসে বলল বুয়ার মেয়েদের এখানে বসার যোগ্যতা নেই । মহিলারা রাদিকার এতটুকু পরিচয়ে অবাক হলেও পরক্ষনে তারা আর কিছু বলেনি।তাদের মতেও গরিবের এখানে বসার যোগ্যতা নেই।

রাদিকা সেখান থেকে চলে এসে দূরে গাছে হেলান দিয়ে দাড়িঁয়ে রইল।সবার আগে গিয়েছিল সামনের চেয়ারে বসে নাচ দেখবে বলে কিন্তু তা হলো না।রাদিকার এই মূহুর্তে তার মায়ের কোলে মাথা রেখে দুঃখ দূর করতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু তা সম্ভব না।তার মা এই বাড়িতে আসার পর থেকে তাকে একবারও সময় দেয়নি।সর্বদায় কিচেনে রান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকে।রাদিকার ইচ্ছা হয় আড়ালিয়া গ্রামের নদীতে সাতঁরাতে।তার বান্ধবিদের সাথে কানাঁমাছি,লুকোচুরি খেলতে।কিন্তু এটা কখনও সম্ভব না।মাঝে মাঝে তার ইচ্ছা হয় তার মাকে ছেড়ে তার গ্রামে চলে যেতে।তার ভাবনার মাঝে মাহিন এসে বলে এখানে কি করছ?অনুষ্ঠান দেখবে না।

মাহিন যেন কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিলো।রাদিকার কষ্টটা আরো তিব্র হয়ে ওঠে। তার চোখ দেখে মনে হচ্ছে এখনিই বারি বর্ষণ হবে।মাহিন বিষয়টা খেয়াল করে বললো কি হয়েছে এভাবে কালো মেঘের মত মুখ করলে কেনো।রাদিকা নিজেকে শক্ত করে বলল কিছুই হয়নি।

তাহলে এখানে চুপটি মেরে দাড়িঁয়ে আছো কেনো?

কি করব তাহলে,আমার জন্য সেখানে কোনো জায়গায় নেই।

মাহিন রাদিকার মন খারাপের বিষয়টা আচঁ করতে পেরে বলল এই জন্যই কি মুডটা অফ।

রাদিকা কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িঁয়ে থাকে।মাহিন পলকহীন ভাবে অভিমানী মেয়েটার দিকে দৃষ্টি দেয়।চারপাশের পুষ্পের মাঝে রাদিকাকে তার কাছে নিতান্তই পুষ্প পরি লাগছে।ভোরে শিশির বিন্দুর ন্যায় যেন তার সৌন্দর্য ঝকঝক করছে।মাহিন ভাবনা জগতে থেকে দুই পা রাদিকার দিকে বাড়ালো।এমনিই তার পা কাদায় পড়ে একাকার হয়ে যায়।কাদা পানির কিছু ছিঁটা মাহিনের মুখে এসে পড়ে।রাদিকা এই অবস্হায় দেখে খিলখিল করে হেসে ওঠল।মাহিন বিরক্ত হয়ে রাদিকার দিকে তাকায়। রাদিকার খিলখিল হাসি দেখে তার বিরক্তভাব নিমিশেয় হাওয়া হয়ে যায়।রাদিকার হাস্যজ্জ্বল দাতঁগুলো তার কাছে শিলাদানা,বিন্যস্ত মুক্তামালা,বাবুনা পুষ্পের ন্যায় মনে হচ্ছে।তার হাসিতে যেন জাদু আছে।মাহিনকে রাদিকার হাসি যেন চম্বুকের ন্যায় টানছে।

রাদিকার মায়াবী হাসি দেখে মাহিনের মাথা দুষ্ট বুদ্ধি আসে।ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল আমার এই অবস্হা দেখে খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা।তোমাকে এর জন্য শাস্তি পেতেই হবে।

রাদিকা মাহিনের মুখে শাস্তি শুনে তার হাসি চেপে শুকনো ঢোক গিলে বলল আমার ভুল হয়েছে,আর হাসব না।দয়া করে মাপ করে দিন।

তা বললে হবে না,তুমি তোমার ওড়না দাও।

রাদিকা লজ্জায় মাথা নত করে বলে ওড়না দিয়ে কি করবেন?

আমার মুখ মুচব,না দিলে তোমাকে এই কাদায় ফেলে দিব।

রাদিকা ভয়ে লজ্জায় উল্টো দিকে ফিরে মাহিনকে ওড়নাটা এগিয়ে দেয়।মাহিনের কাছে রাদিকার লজ্জামাখা মুখটা দারুন লাগছে।কিভাবে বড়দের মত লজ্জা পেয়েছে।মাহিন ওড়না নিয়ে তার মুখশ্রী মুচতে লাগলো।রাদিকার ওড়না থেকে মনমুগ্ধকর ঘ্রান তাকে উম্মাদ প্রমিকের মত বানিয়ে দিচ্ছে।তার মাথাই প্রশ্ন জাগছে এটা কি রাদিকার গায়ের ঘ্রান না, কোনো পারফিউমের।পারফিউম সে কোথায় পাবে হয়ত এটায় তার গায়ের ঘ্রান।মাহিন তার কার্য শেষ করে ওড়নাটা রাদিকার হাতে দিয়ে দেয়।

চল তোমাকে অনুষ্ঠানে নিয়ে যায়।

রাদিকা মাহিনের এমন কথায় প্রত্ত্যরে বলল আমার জন্য কোনো জায়গা নেই।

আমার সাথে চল আমি জায়গা দিচ্ছি।

মাহিন রাদিকাকে সামনের চেয়ারে তার মায়ের সাথে বসিয়ে দেয়।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাওয়াই কেউ রাদিকার দিকে খেয়াল করিনি।মাহিন সেখান থেকে চলে আসার সময় তার ফ্রেন্ড নাজমুল বলল কি দুস্ত দেখে মনে হচ্ছে ডাল মে কুচ কালা হে।

মাহিন মৃদ হেসে বলল কালা নেহি বল পেয়ার হে।

তো দুস্ত কত দিন হল এই পিচ্চির সাথে প্রেম করছিস।

প্রেম করব কেনো!আমি তাকে প্রেম শিখাব আর সে অন্যকে ভালোবাসবে তা হতে দিব না।

অন্যকে ভালোবাসবে কেনো তুই শিখাবি তকেই ভালোবাসবে।

মাহিন শার্টের হাতার বোতম খোলতে খোলতে বলল এই প্রেম টেমের মাঝে আমি নাই বয়স হলে বিয়ে করে ফেলব।

নাজমুল শব্দ করে হেসে বলল আইডিয়াটা দারুন।

________________________________________________

সকালের ব্রেকফাস্টে মাছের তরকারি ভালো না হওয়াই মাহিনের বাবা তরকারি ফ্লোরে ফেলে বলল কে এই তরকারি রান্না করছে তাকে এখনিই আমার সামনে চাই।

হাবিবুর রহমানের এমন কথা ও কন্ডে সব বুয়ারা ভয়ে কাপঁতে লাগলো।বড় লোকদের এই একটা দোষ তরকারি ভালো না হলে ফেলে দেয় । একবারও ভাবে না বুয়ারা কত কষ্ট করে তা রান্না করেছে।রাদিকার মা কাপঁতে কাপঁতে এসে বলল বড় সাহেব আমি রান্না করেছি।

হাবিবুর রহমান টেবিলে জুড়ে বাড়ি দিয়ে বলে নেক্সট নাইমে এমন করে উল্টা পাল্টা রান্না করলে চাকরি থেকে চাটায় করব।রাদিকার মা ভেজা কন্ঠে বলল আর হবে না বড় সাহেব।

হাবিবুর রহমান হনহন করে স্হান ত্যাগ করে।রাদিকার মা রুমে এসে ফুপিঁয়ে কেদেঁ ওঠে।সারা দিন কাজ করলেও সে কারো মুখ থেকে প্রশংসার বাণী শুনতে পায়নি।আর ভুল হলেই কথা শুনাতে ভুল করে না।এই বাড়িতে আসার পর থেকেই তার কঠুকথা শুনতেই হচ্ছে।রাদিকার মা চোখের পানি মুচে বলে আর না অনেক হয়েছে ।রাদিকাও এখানে সুখে নেই।আড়ালিয়া গ্রামে চলে গিয়ে স্বামীর বিটে জমিতে চাষ করে মেয়েকে নিয়ে খাব।তবুও তাদের কঠু কথা শুনব না।এই শহর আমাদের মত গরিবের জন্য না বরং ধনীদের জন্য তৈরি হয়েছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here