ভোরের শিশির পর্ব ২

#ভোরের_শিশির
#সাহিরাহ_আনজুম_ইউশা
পার্ট:২

রাদিকা মিটমিট করে চোখ খোলে দেখে মাহিন তার দিকে ঝুঁকে আছে।মাহিনকে এই অবস্হায় দেখে রাদিকা ঘাবরে যায়।মাহিন রাদিকার সেন্স ফিরতে দেখে রাগান্বিত হয়ে বলে কি বুজে তুমি ছেলেগুলোর কাছ থেকে চকলেট খেতে গেলে।
তোমার কোনো আইডিয়া আছে তারা তোমার সাথে কি করত।

রাদিকা চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায় তার সাথে কি হয়েছে।চকলেট খাওয়ার পর সে সেন্স হারানোটায় তার মস্তিষ্কে আছে ।কি এমন হয়েছে যার জন্য মাহিন তাকে বকা দিচ্ছে।রাদিকাকে চুপ তাকতে দেখে মাহিনের রাগ আরো তিব্র হয়।মেয়েটাকে কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে লেইট করে।মাহিন কর্কশ কন্ঠে বলে স্টুপিডের মত চুপ আছো কেনো?

রাদিকা মাহিনের ধমকে হালকা কেপেঁ ওঠে।মিহি কন্ঠে বলে ওরা আমাকে খাওয়ার জন্য বলেছে।আর আম্মা বলেছে কেউ কিছু খাওয়ার জন্য দিলে খেতে হয়।

মাহিন রাদিকার বাচ্চা সুলভ কথা শুনে রাগটা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।মাহিন শান্ত কন্ঠে বলল অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কিছু খেতে নেই সেটা বলেনি।
রাদিকা মাথায় নেড়ে না বলল।মাহিন পানির বোতল রাদিকার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল পানি খাও দেখে পিপাঁসিত মনে হচ্ছে।রাদিকা বোতল হাতে নিয়ে প্রশ্নোচুক্ষে বলল ওদের কি লাভ আমাকে চকলেট খায়িয়ে?শুধু শুধু তাদের টাকা নষ্ট হয়েছে।

মাহিন রাদিকার এমন প্রশ্নে অবাক না হয়ে পারল না।সেও অবাক হয়ে বলল তোমার কি এই বিষয়ে কোনো আইডিয়া নেই।

রাদিকা ছোট করে উত্তর দিল না।

মাহিন কি বলে তাকে বুজাবে তার কোনো শব্দভান্ডার তাে কাছে নেই।রাদিকাকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করার জন্য বলল তোমাকে তারা চড়া দামে পাচার করতে চায়।

রাদিকা মাহিনের উত্তর শুনে মনে মনে শপথ করে মরে গেলেও কারো কাছ থেকে কিছু খাবে না।

সূর্যটা তার নিত্য দিনের নিয়ম অনুযায়ি পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে।সূর্যের কিরণের তেজ ক্রমে ক্রমে কমছে।দক্ষিণা বাতাসে গাছপালার পাতাগুলো আপন গতিতে নড়ছে।রুহি রাদিকার কাছে এসে বলল তোমাকে আম্মু ডাকছে।রাদিকা কিছু না বলে যেতে লাগলো।রুহির মা রানু চেয়ারা বসে আয়েশ করে পান চিবুচ্ছে।রাদিকাকে দেখে তিনি বাজকায় গলায় বলেন তুই মিমকে ধাক্কা দিলি কেনো?

রাদিকা অপরাধীর মত বলে মিম আমাকে আগেই ধাক্কা দিয়েছে।তাই আমি কি বসে থাকব,শুধু শুধু কেনো আমাকে সে ধাক্কা দিবে।

রানু রাদিকার হাত চেপে ধরে বলে নবাবজাদী আমাদের এখানে খেয়ে থেকে আমাদের বাড়ির মেয়ের মারবি।রুহি লাঠিটা আনত।
রাদিকা ভয়ে কেপেঁ ওঠল।রুহি মোটা লাঠি এনে রানুর হাতে দিল।রানু রাদিকার চুলের মুটি ধরে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে মারতে লাগলো।রাদিকার তেরো বছর জিবনে তাকে কেউ মারেনি।সুন্দর হওয়াই সবাই তাকে আদর করত।গ্রামের লোকেরা তাকে রুপবতী বলেই ডাকত।রাদিকার নরম দেহ মার সহ্য করতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।কেউ রাদিকাকে এই পাষাণ মহিলা থেকে বাচাঁতে আসলো না।

________________________________________________

রাত নয়টায় মাহিন বাড়িতে আসে।কিছু মহিলাকে ফিসফিস করতে দেখে তাদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে আপনারা কি বলছেন,বাড়িতে কি কিছু হয়েছে।

তাদের মধ্য থেকে একজন বলে ছোট আপা আজ নতুন কাজের বুয়ার মেয়েকে মারছে।

কেনো ?

মহিলাটি কিছু গোপন করে বলল আমরা কেউ কিছু জানি না।

মাহিনও তাদের কোনো প্রশ্ন না করে রাদিকার রুমের দিকে যেতে লাগল।মাহিন চলে যেতেই একজন মহিলা বলে ওঠল তুই কি পাগল হয়ছিস ,আমরা ওদের বাড়িতে কাজ করি তাই আমাদের উচিত সব বিষয়ে চুপ থাকা।

আরেক জন তার কথায় তাল মিলিয়ে বলল হ্যাঁ তুই ঠিকেই বলেছিস,ছোট আপা জানলে আমার চাকরিটা খাবে।

মাহিন মলম নিয়ে রাদিকার পাশে বসে আছে।মেয়েটি মার খেয়ে শুকনো পাতার মত চুপসে গেছে।মাহিন আলতো করে রাদিকার গালে মলম লাগাতেই রাদিকা ব্যাথায় কুকিঁয়ে ওঠেই মাহিনের হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।মাহিন রাদিকার স্পর্সে শিহরিত হয়ে ওঠল।তার নিজের কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগছে।পড়া শুনা করা অবস্হায় সে অনেক মেয়ের সাথে ওঠা বসা করেছে।তাদের সাথে প্রয়োজনে হ্যানশিপও করেছে।কিন্ত তার এমন অনুভূতি কখন হয়নি।কেমন যেন সে ঘোরের মাঝে পড়ে যাচ্ছে।রাদিকার কাপাঁ কাপাঁ ঠোঁট তাকে আরো ঘোরের মাঝে ফেলছে।মাহিনের পক্ষে রাদিকার পাশে থাকাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।সে ভালো ভাবেই বুজতে পারছে এই মূহুর্তে নিজেকে কন্টোল করতে পারবে না।তাই বিলম্ব না করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে চলে আসে।

মাহিন নিচে এসে দেখেন তার ছোট কাকি হাসতে হাসতে তার মায়ের সাথে কথা বলছে।দপ করে তার মাথায় রাগ ওঠে যায়।নিজের রাগটা কিছুটা কন্টোল করে বলে কাকি আপনি রাদিকাকে মারলেন কেনো?

মাহিনের কথা রানুর কর্ণে প্রবেশ করতেই তিনি বলেন ছেলের কথা শুন মিমকে মারলে মারব না তো কি আদর করব।

আপনার দয়া বলতে কিছুই নেই,এভাবে তো কেউ পাগলকেও মারে না।

রানু মুখ থেকে পিচকি ফেলে বলল তুমি কি আমাকে এখন শিখাবে কিভাবে মারতে হয়?

না কাকি শিখাব কেনো?মার শিখাই সাইকোরা।কাকি আপনি সময় তাকতে ডাক্টারের কাছে যান তা না হলে এই সাইকো প্রবলেমটা বাড়তে বাড়তে অকালে আপনার সন্তানরা প্রাণ হারাবে।

রানু মাহিনের আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে দেখলে তোমার ছেলে আমাকে সাইকো বলল।

মাহিনের কাছে এই মহিলার ন্যাকামি জাস্ট অসহ্য লাগে।তাই সে স্ব স্হান ত্যাগ করল।
রাদিকার মা কাজ শেষ করে মেয়েটার পাশে বসল।রাদিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল মারে আমাকে মাপ করে দিছ।আমার কিছুই করার নেই।দুনিয়াতে গরিবকে দেখার জন্য কেউ নেই।

মাহিনের চোখে ঘুম নেই।সে বিছানার এপাশ ওপাশ করে বেলকনিতে দাড়াঁয়।আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে নিজে তো দিব্বি ঘুমাচ্ছ।আর দিকে আমার ঘুম কেড়ে নিলে।পিচ্চি হয়ে আমার মনে ভালো ভাবেই প্রেম নামক অনুভূতি ঢুকিয়ে দিলে।এর জন্য তোমাকে শাস্তি ফেলেই হবে রাদিকা।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here