#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_১০
#M_Sonali
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে গত এক ঘন্টা ধরে। হঠাৎ করে চারিদিকে অন্ধকার মেঘ হয়ে এসে এভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গাছের পাতাগুলো সব ভিজে যেনো নতুন হয়ে উঠেছে। সেই সাথে রাস্তাঘাট একদম কাদা কাদা হয়ে আছে। বৃষ্টির শব্দ কানে আসতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে চাঁদনী সে নিজেও জানে না। ছোটবেলা থেকেই ওর বৃষ্টির শব্দ শুনলেই ঘুম আসে। ওর এই অভ্যাসটা কখনো পাল্টাতে পারেনি ও। আজ অফিসে এসেও তার বিপরীত কিছু হয়নি। গত এক ঘন্টা ধরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে সে। আর তার সামনে চেয়ারের উপর বসে হাতের উপর মুখটা রেখে একনজরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ।
এদিকে ঘড়িতে বেলা তিনটা বেজে গেছে। শ্রাবণের খুব ইচ্ছে করছে ওকে জাগিয়ে লাঞ্চ করতে বলার জন্য। কিন্তু ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখে আর ঘুম ভাঙ্গানোর একটুও ইচ্ছে নেই এখন ওর। এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে যেন আরো বেশি নিষ্পাপ লাগছে চাঁদনীকে। একদম ঘুমন্ত পরীর মত। উপরে ফ্যান চলছে, আর তার বাতাসে চাঁদনীর চুলগুলো বারবার ওর মুখের ওপর পড়ছে। এটা যেন ভীষন ভাবে বিরক্ত করছে শ্রাবণকে। সে চাঁদনীকে এক নজরে তাকিয়ে থেকে দেখতে চায়। কিন্তু এই চুলগুলো বারেবারে মুখ ঢেকে দিয়ে যেন পর্দা সৃষ্টি করছে ওদের মাঝে। তাই বেশ বিরক্তি নিয়ে আলতো করে চাঁদনীর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল। তারপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে এক নজরে আবারো তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। মনে মনে বলল,
— কে বলেছিল তোমায় এভাবে কাজ ফেলে রেখে ঘুমানোর জন্য? নাকি আমাকে পাগল করার জন্য এমন শুরু করেছো তুমি? আমি যত চাইছি তোমার থেকে দূরে সরে থেকে তোমার কাছে অচেনা হয়ে থাকতে! তুমি যেনো ততোঁই আমাকে আরো কাছে টেনে নিচ্ছো তোমার এই নিষ্পাপ মুখটার দ্বারা, পাগল করে ফেলেছ। তুমি কি জানো কতটা কষ্টে তোমার থেকে দূরে সরে আছি আমি? এখন যে তোমার কাছে আসা কোনভাবেই সম্ভব নয় আমার। নাহ তোমাকে আর এভাবে ঘুমোতে দেওয়া যাবে না। নইলে আমি কি করে বসবো নিজেও জানি না। ঘায়েল করে ফেলছো তুমি আমায়, তোমার এই ঘুমন্ত চেহারায়। এই জন্যেই হয়তো কোনো এক কবি বলেগেছেন, “যে নারী ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর, সে’ই আসলে প্রকৃত সুন্দরী।”
কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ালো শ্রাবণ। তারপর চেয়ারটা আগের জায়গায় ঠিক করে রেখে হালকা কাশি দিয়ে গম্ভীর গলায় বেশ ধমকের সুরে বলে উঠল,
— মিস চাঁদনী, ও হ্যালো আমি তোমাকে বলছি। ঘুম হয়ে থাকলে এখন উঠো।
শ্রাবণের ধমকে ঘুমের মধ্যে থেকে ধরফরিয়ে উঠে বসলো চাঁদনী।তারপর এদিকে ওদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে শুকনো ঢোক গিলে ওর দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালো। চাঁদনীকে ভয় পেতে দেখে মনে মনে ভীষণ হাসি পেল ওর। কিন্তু হাসিটা আটকে রেখে গম্ভীর গলায় বলল,
— আচ্ছা তোমাকে কি এখানে চাকরি টা আমি ঘুমানোর জন্য দিয়েছি? নাকি কাজ করার জন্য দিয়েছি? বলি সারারাত জেগে কি চুরি ডাকাতি করেছো নাকি যে অফিসে এসে এমন নাক ডেকে ঘুমাতে হয়? এভাবে ঘুমালে কিন্তু তোমার চাকরিটা আমি খেয়ে দেবো। তখন কিন্তু আমাকে আবার দোষ দিতে পারবে না!
শ্রাবণের এমন ধমক খেয়ে ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ালো চাঁদনী। তারপর চোখ দুটো ঢলে নিয়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল,
— সরি স্যার আসলে ছোটবেলা থেকে বৃষ্টির শব্দ শুনলে আমার আপনা থেকে ঘুম চলে আসে। শত চেষ্টা করেও ঘুম কে আটকে রাখতে পারি না। আজকেও তার বিপরীত হয়নি! বৃষ্টির শব্দ শুনতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি না। এরপর থেকে আর এমন হবে না। প্লিজ স্যার আপনি আমার চাকরি টা খেয়ে দেবেন না। আপনার দরকার হলে অন্য কিছু খান, আপেল খান ভাত খান রুটি খান যা খুশি তাই খান কিন্তু আমার চাকরিটা খাবেন না প্লিজ স্যার।
ওর এমন উল্টাপাল্টা কথা শুনে রাগি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো শ্রাবণ। তার পর দাঁত কিড়মিড় করে ধমক দিয়ে বলল,
— এই মেয়ে তুমি কি পাগল? এসব কি বলছ আবোল-তাবোল তখন থেকে? নাকি ঘুম থেকে উঠে মাথার কয়েকটা তার ছিড়ে গেছে। চাকরি খাওয়ার সাথে ভাত রুটি ফল এসব খাবার তুলনা হল কোথা থেকে হুহহ?
— না মানে স্যার আপনি তো একটু আগে বলছিলেন আমার চাকরি টা কে খেয়ে দেবেন। তাই আমি ভেবেছি আপনার হয়তো অনেক ক্ষুদা লেগেছে, আর কিছু না পেয়ে আমার চাকরিটা খেতে চাইছেন। সেজন্য বললাম আপনি আমার চাকরিটা না খেয়ে ফল অথবা ভাত রুটি খান। আমি কি কিছু ভুল বলেছি স্যার?
কথাটা বলেই দাঁত দিয়ে নিজের নখ কাটতে লাগল চাঁদনী। ওর এমন কথা শুনে বেক্কলের মত ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো শ্রাবণ। তারপর ওর মুখের কাছে মুখ এনে বেশ ধমকের সুরে বলল,
— বেশি উল্টোপাল্টা বকবক করলে অন্য কিছু নয় আমি তোমাকেই খেয়ে ফেলবো। তাই বেশি বকবক করে আমার মাথা না খেয়ে এখন যাও লাঞ্চ করে এসো। অনেক বেলা হয়ে গেছে ঘড়ির দিকে তাকাও একবার। এত দেরিতে লাঞ্চ করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে তুমি। যাও লাঞ্চ করে আসো আমি এখানেই আছি।
— কিন্তু আমি তো আজকে তাড়াহুড়োতে খাবার আনতে ভুলে গেছি স্যার!
ওর কথা শুনে ধপ করে চেয়ারে বসে পরলো শ্রাবন। তারপর রাগী গলায় বলে উঠল,
–তাহলে আর দেরী করছ কেন, এতক্ষণ তো আমার মাথাটা কথার দ্বারা চিবিয়ে খাচ্ছিলে! এখন আমাকেই খেয়ে লাঞ্চটা সেরে ফেলো।
— কিন্তু স্যার মানুষকে তো খাওয়া যায় না। আপনাকে কি খাওয়া সম্ভব বলেন? আমার না সত্যিই অনেক ক্ষুদা লেগেছে কিন্তু আপনাকে দেখেতো মনে হচ্ছে না খাওয়া যাবে। মনে হচ্ছে খুব তেতো লাগবে আপনাকে।
ওর এমন উত্তর শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল শ্রাবণ। এ মেয়ে বলে কি এসব? কি বলছে তখন থেকে আবোল তাবোল। নাকি ঘুম থেকে উঠে পাগল টাগল হয়ে গেল? কথাগুলো ভেবে উঠে দাড়ালো। তারপর চাঁদনীর দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলল,
— এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছো নাকি তুমি? কখন থেকে কি আবোল তাবোল বলছ এসব? নাকি আমার সাথে দুষ্টুমি করছ? আসলে তোমাকে যতটা বোকাসোকা মনে হয় তুমি ততটা বোকা নয়। বরং দুষ্টু নাম্বার ওয়ান তুমি। না হলে এসব কথা বলতে পারতে না আমায়। এক থাপ্পড় দিয়ে চাপার যে কয়টা দাঁত আছে সব গুলো ফেলে দেবো। তারপর দেখব কিভাবে খাবার খাও। এখানে চুপ করে বসো আমি তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছি, আমাকে খেতে হবে না।
শ্রাবণের কথা শুনে আর কোন কিছু না বলে চুপ করে নিজের চেয়ারে বসে দাঁত দিয়ে নিজের নখ কাটতে লাগল চাঁদনী। শ্রাবণ মনে মনে ভীষণ হাসলো ওর কান্ড দেখে। সত্যিই এই মেয়েটা ওকে পাগল করে ছাড়বে। পাগল করার জন্যই হয়তো এতো আয়োজন তার। মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ডেস্ক থেকে বেরিয়ে গেল শ্রাবণ ওর জন্য খাবার আনতে। কিছুক্ষণের মাঝেই এক প্যাকেট বিরিয়ানি আর এক বোতল পানি নিয়ে ফিরে আসলো। তারপর ওর সামনে দিয়ে বলল,
— এই নিন ম্যাডাম এটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন। নইলে আপনি সত্যি সত্যিই আমাকে কখন খেয়ে ফেলবেন তার কোনো ধারণা নেই আমার।
ওর কথার উত্তরে কোন কিছুই বলল না চাঁদনী। দ্রুত প্যাকেটটা হাতে নিয়ে হাতটা ধুয়ে গপাগপ খেতে শুরু করল। সত্যিই ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে ওর। সকালে তাড়াহুড়ো করে অফিসে আসার কারণে ভালোভাবে খেয়ে আসতে পারেনি। তাই অসম্ভব খিদা লেগেছে। খেতে খেতে এক প্লেট বিরিয়ানি সাবাড় করে ফেলল চাঁদনী। তারপর হাত মুখ ধুয়ে পানি খেয়ে বড় করে একটা ঢেকুর তুললো। ওর এই সমস্ত কান্ডা কারখানাই চুপ করে বসে থেকে দেখছিলো শ্রাবণ। সব দেখছে আর মনে মনে ভাবছে,
— তোমাকে যতটা ভোলাভালা আর কিছু না বোঝা অবুঝ ভেবেছিলাম আমি! তুমি ততটা ও তেমন নয় চাঁদনী। বরং তুমি যে একটা দুষ্টুর শিরোমণি সেটা আজকে খুব ভালোভাবেই টের পাচ্ছি। সেই সাথে এটাও বুঝলাম যে তুমি আমাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে জ্বালিয়ে। তবে তোমার এই নতুন রুপের প্রেমে’ই নতুন করে পরলাম আমি। আমার দুষ্টুপাখি,,,!
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_১১
#M_Sonali
— স্যার আপনি নিজের কাজ ফেলে রেখে এভাবে ছোঁচা মানুষের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? এখন আমার যদি পেট খারাপ হয় তাহলে সে দায় কে নেবে বলুনতো?
হঠাৎ চাঁদনীর মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনে বেশ চমকে উঠল শ্রাবণ। ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কি বলতে চাও তুমি?
— কি আবার বলবো স্যার? আপনি ভাবুন আমি কখন থেকে বিরিয়ানি খাচ্ছি আর আপনি আমার সামনে বসে এমন ছোঁচা লোকের মতো হা করে তাকিয়ে আছেন। এর কারনে কি আমার পেট খারাপ হবে না বলেন? এভাবে কেউ কোনদিন কারো খাওয়ার দিকে নজর দেয়! আপনার যদি এত ক্ষুধা লেগে থাকে তাহলে আরেক প্যাকেট বিরিয়ানি নিজের জন্য আনতে পারতেন। আমারটাতে নজর দিলেন কেন?
কথাগুলো বলতে বলতে বিরিয়ানির খালি প্যাকেট টা শ্রাবণের হাতে ধরিয়ে দিল চাঁদনী। ওর এমন কথা শুনে আর কান্ড দেখে যেন অবাক এর শীর্ষে পৌঁছে গেল শ্রাবণ। কি বলবে কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছেনা সে। ভীষণ রাগ হচ্ছে চাঁদনীর ওপর। কারন ও একপ্রকার অপমান’ই করছে তাকে। সেটা জেনে হোক বা না জেনে। এমনিতেই ওর অসম্ভব রাগ।’ যদিও এখন অব্দি চাঁদনীর সাথে তেমন একটা রাগ দেখায়নি সে। কিন্তু এবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারল না। বেশ জোরেশোরেই রেগে গিয়ে হাতের বিরিয়ানির খালি প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে দাঁড়িয়ে রাগি গলায় ধমক দিয়ে বলল,
— হাউ ডেয়ার ইউ? ইউ ব্লাডি ফুল! কি ভাবো তুমি নিজেকে হ্যাঁ? কখন থেকে যা নয় তা বলে যাচ্ছ! আমাকে চেনো তুমি কে আমি জানো সেটা? তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলতে? আমাকে অপমান করতে? কে বলেছে তোমায় আমি তোমার খাওয়ার দিকে ছোঁচার মত তাকিয়ে ছিলাম? আর এটা কোন ধরনের ভাষা হুম?
শ্রাবণের ধমকে হালকা কেঁপে উঠল চাঁদনী। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নিজের নখ কাটতে লাগলো। কিছু বলার সাহস এখন নেই ওর। ও বুঝতে পেরেছে কথায় কথায় বড় বেশি ভুল করে ফেলেছে। আসলে ঘুম থেকে ওঠার পর কি করছে কি বলছে কোন খেয়াল’ই নেই ওর। যেন মাথা ঠিক ছিল না এতক্ষন। তার ওপর অতিরিক্ত ক্ষুধা লেগে যাওয়ায় এমন আবোলতাবোল কথা বলে ফেলেছে সে। কিন্তু শ্রাবন তো আর সেটা বুঝবে না। ও তো ভুল করেছে তার শাস্তি পেতেই হবে ওকে। সেই শাস্তির ভয়েই চুপচাপ দাঁড়িয়ে নখ খেতে লাগল সে।
ওর কাছ থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে যেনো রাগটা আরো মাথায় চড়ে বসলো শ্রাবণের। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। কিন্তু না এ রাগ যেন কন্ট্রোল হওয়ার না। ছোটবেলা থেকেই ওর অসম্ভব রাগ। এই ভালো থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই এত রেগে যায় যে নিজের রাগ কন্ট্রোল করা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। তখন ওর আসল চেহারাটা সামনে চলে আসে। কিন্তু শ্রাবণ এখন প্রানপনে চেষ্টা করছে নিজের রাগটাকে দাবিয়ে রাখতে। কিন্তু তারপরেও চেষ্টা করেও পারছেনা। তার ওপর চাঁদনীর থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে যেন রাগ টা আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে তার। এখন রাগ কে কন্ট্রোল করার একটাই উপায় আছে, কিন্তু সেটা কিভাবে করবে এটা নিয়ে আরো বেশি চিন্তায় পড়ে গেল শ্রাবণ। কিন্তু এভাবে রাগ না কন্ট্রোল করলে আরও বেশি বিপদ হয়ে যাবে। তাই কোন কিছু না ভেবে দ্রুত চাঁদনীর কাছে এগিয়ে গেল সে। ওকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে চাঁদনী এবার চিৎকার দেওয়ার মতো অবস্থা হলো। ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেছে সে। কারণ শ্রাবনের চোখ দুটো যেন আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে। রাগের কারনে সুন্দর মুখটা অসম্ভব হিশ্র লাগছে। ফর্সা ধবধবে মুখ টা একদম লাল টকটকে রূপ ধারণ করেছে। এতোটুকু একটি বিষয়ে যে এ পরিমাণ কেউ রেগে যেতে পারে সেটা ধারনার বাইরে ছিল চাঁদনীর।
ভয়ে চোখ বন্ধ করে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দেওয়ার জন্য মুখ খুলল চাঁদনী। সাথে সাথে অনুভব করলো ওর মুখটাকে কেউ ভীষণ ভাবে আঁকড়ে ধরেছে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য চোখ মেলে তাকাল সে। খেয়াল করল শ্রাবণ নিজের ঠোট দিয়ে ওর ঠোট দুটো আঁকড়ে ধরেছে। সেইসাথে বা হাত দিয়ে ওর কোমরটাও এমন ভাবে ধরেছে যে নড়াচড়া করার শক্তি টাও ওর নেই। ব্যাপারটা টের পেতেই নিজেকে ছাড়ানোর জন্য শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে লাগলো সে। কিন্তু শ্রাবণের কাছে যেন ও একটি মশার মত। ওর শক্তির সাথে কোনভাবেই পেরে উঠছেনা সে। শ্রাবণ বা হাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে, নিজের চোখ বন্ধ করে চুপ করে ওর ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরে আছে নিজের ঠোটে। আর ডান হাত দিয়ে ওর গলায় থাকা লকেটটা হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে আছে। ঐ লকেট টা থেকে নীল রঙের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়ছে শ্রাবণের হাতের প্রতিটা রগ এবং শিরায়-উপশিরায়। যেটা শুধু ও নিজেই বুঝতে পারছে। চাঁদনী কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না।
এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। শ্রাবণের হাতের মুঠোয় থাকা লকেট টার আলো ধিরে ধিরে নিভে যেতে লাগল। সেই সাথে শ্রাবণের শিরা উপশিরাও আগের মত ঠিক হয়ে গেল। সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার পর চাঁদনীকে আলতো করে ছেড়ে দিলো সে। তারপর দুই তিন পা পিছিয়ে গিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়ালো। চোখটা এখনো বন্ধ তার। শান্তভাবে দাঁড়িয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো সে।
কারণ শ্রাবণ ভেবেছিলো এই ঘটনার পর চাঁদনী হয়তো অনেক বেশি রিয়েক্ট করবে, রাগারাগি করবে। এমন কি গালাগালিও করবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। বরং চাঁদনী একদম চুপচাপ বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন ওর উপর দিয়ে কোন এক ঝড় বয়ে গিয়েছে। আর ও সেটা চোখ ডুবিয়ে দেখছে। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অসম্ভব হাসি পেল শ্রাবণের। কিন্তু হাসিটাকে মনের মাঝে লুকিয়ে রেখে বেশ ঝাঝালো গলায় বললো,
— এই মেয়ে এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে কি দেখছ হ্যাঁ? চুপচাপ নিজের জায়গায় গিয়ে বসে কাজ করতে শুরু করো। আজকে তো কোনো কাজই করলে না। শুধু ঘুম পেরে সব সময় নষ্ট করে ফেললে। সাথে আমাকেও রাগিয়ে দিলে।
ওর কথার উত্তরে চাঁদনী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ পিটপিট করে বলল,
— স্যার আমি কোথায়? আর একটু আগে আমার সাথে কি হলো এটা? একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ? আমার মাথায় না কোনকিছুই ঢুকছে না। আপনি কি করলেন এটা আমার সাথে? এর আগে তো কখনো কেউ এমন কিছু করেনি। আর আপনার এই ছোয়ায় আমার মাঝে যে কি একটা হলো। এর মানে কি বলুন না স্যার?
ওর এমন কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লো শ্রাবণ। এ মেয়ে বলে কি! ওকে বুঝিয়ে দিতে বলছে কিস এর মানে কি? নিজের মাথায় বারি দিয়ে শ্রাবণ মনে মনে ভাবলো, ও তো ভুলে গেছে যে চাঁদনী সারা জীবন এক বাড়ির মধ্যে বাবার সাথে থেকে বড় হয়েছে। ও হয়তো এসব কোন কিছুই বোঝে না। এমনটা ভেবে ভিষন রাগ হতে লাগলো ওর নিজের উপর। আবার অসম্ভব হাসিও পেল। মনে মনে ভাবলো, “যাক ভালই হয়েছে ওকে জ্বালিয়ে মজা পাওয়া যাবে। সাথে ভালবাসলেও বুঝবে না ও।”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
গত তিন দিন হল আমি অসম্ভব অসুস্থ। জ্বর ঠান্ডা মাথা ব্যথা এবং সারা শরীর ব্যথায় অবস্থা ভীষণ নাজেহাল। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে। ঔষধ খেয়েও কাজ হচ্ছে না। গল্প একদমই লেখা সম্ভব হচ্ছেনা। একটু গত কালকে লিখে রেখে ছিলাম আর আজকে একটু লিখে অনেক কষ্টে পোস্ট করলাম। আবার সুস্থ হলে পোস্ট করব ইনশাআল্লাহ। ফোনের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখ জ্বালা করে পানি পড়ছে।😢😢
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
শ্রাবণ রে তুই তো গেলি😁😁😁