ভ্যাম্পায়ার_বর পর্ব ৩৫+শেষ

#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_৩৫
#M_Sonali

মনোযোগ সহকারে শ্রাবণের প্রতিটি কথা শুনল চাঁদনী। সাথে দু চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল তার। সে বুঝতে পারল তাকে বাঁচানোর জন্যই হয়তো তার বাবা-মা মারা গিয়েছে। মায়ের কথা মনে পড়তেই একটি প্রশ্ন মনের মাঝে উকি দিয়ে উঠল চাঁদনীর। সে সাথে সাথে শ্রাবণকে প্রশ্ন করে বলে উঠলো,

— আচ্ছা আমার মা যখন একজন ভ্যাম্পায়ার কুইন ছিলেন। সাথে আমার বংশের সবাইও ভ্যাম্পায়ার। তাহলে আমিও কি এখন তাদের মত একজন ভ্যাম্পায়ারে রূপান্তরিত হয়েছি? আমিও কি এখন থেকে মানুষের রক্ত খাব?

ওর কথার উত্তরে হেসে ফেললো শ্রাবণ। তারপর ওর দু গালে হাত দিয়ে আলতো করে ধরে মিষ্টি সুরে বলে উঠল,

— আরে পাগলি মেয়ে, তুমি যদি সত্যিই ভ্যাম্পায়ার হতে, আর মানুষের রক্ত চুষে খেতে তাহলে কি এখন আমাদের সামনে বসে বসে এভাবে প্রশ্ন করতে নাকি? তুমি এখনো একজন মানুষই আছো। আর সারা জীবন মানুষ হয়েই থেকে যাবে। তবে তুমি আর পাঁচটা মানুষের মতো কোনো সাধারণ মানুষ নয়। তোমার মাঝে বিশেষ ধরনের ভ্যাম্পায়ারের শক্তি আছে। যেটা শুধুমাত্র তোমার প্রয়োজনের ক্ষেত্রে দেখা যাবে। তাছাড়া তুমি সবসময়ই একজন সাধারন মানুষের মত।

ওর কথায় কিছুক্ষন চুপ করে থেকে চিন্তা করল চাঁদনী। তারপর আবার শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

— আচ্ছা আমার মা যখন এতই শক্তিশালী ছিলেন। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কুইন ছিলেন! ওনার শক্তির সাথে কেউ পেরে উঠতেন না। তাহলে উনি মারা গেল কিভাবে? ওনার তো এভাবে মৃত্যু হওয়ার কোন কথা নয়!

চাঁদনীর প্রশ্নের উত্তরে চুপ করে মন খারাপ করে বসে রইলো শ্রাবণ। তখনই শ্রাবণী পাশ থেকে বলতে শুরু করলো,

— হ্যা তুমি ঠিক বলেছ চাঁদনী। তোমার মায়ের কোনভাবেই কারো হাতে মৃত্যু হওয়া সম্ভব ছিলো না। কিন্তু তোমার মা একজন ভ্যাম্পায়ার কুইন হয়ে একটি মানুষের সাথে বিয়ে হবার কারণে অভিশপ্ত হন। তাঁর অনেক শক্তি হারিয়ে ফেলেন সেই অভিশাপে। তবে নিয়ম অনুযায়ী তার ছেলে বা মেয়ে একমাত্র তার শক্তির অধিকারী হতে পারতো। যেমন তুমি হয়েছো। তার ছেলে বা মেয়ে কখনোই কোনো মানুষ হতো না। সে হো আমাদের মত এজন ভ্যাম্পায়ার। কিন্তু কুইন চন্দ্রীকা কখনোই চায়নি তাঁর সন্তান তার মতো একজন ভ্যাম্পায়ার হোক। তাই সে নিজের জীবনের বিনিময়ে তোমাকে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার মতো শক্তি প্রদান করে গেছে। কিন্তু তবুও তুমি তার সব শক্তির অধিকারী। বরং তার চাইতেও বেশি শক্তিশালী। শুধুমাত্র ভ্যাম্পায়ার হবে না, তুমিও তোমার বাবার মত মানুষ। তুমি জন্মের কিছুক্ষণ পরেই তোমার মা মারা যান।

এতোটুকু বলে থেমে গেল শ্রাবণী। ওর কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে শ্রাবণ বলতে শুরু করল,

— আর ফুপি মারা যাওয়ার আগে তোমার সব দায়িত্ব তোমার বাবার হাতে দেওয়ার পাশাপাশি আমার হাতে ও দিয়ে যান। আমাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন তিনি। এমনকি তোমার বাবাও। ফুঁপি শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে আমার হাত ধরে আমায় বলেছিল যে, “আমার মেয়ের দায়িত্ব এখন থেকে তোমার শ্রাবণ। বড় হলে ওকে তুমি বিয়ে করে ফেলো। আর ওকে নিজের জীবন সাথী হিসেবে গ্রহণ করে নিও।” তখন থেকেই তোমার সাথে আমার পথ চলা। প্রতিটা মুহূর্তে আমি তোমার সাথে থাকতাম। তবে তোমার চোখের আড়ালে। তোমাকে সব বিপদ থেকে প্রটেক্ট করতাম।

— কিন্তু এ কথাগুলো আমাকে এতদিন কেন জানাননি আপনারা? আব্বু’ই বা কেন আমাকে এসব কিছু বলেনি কখনো? কেন সব সময় আমার কাছ থেকে এগুলো সব লুকিয়ে গেছেন? কেনই বা এত দিন পর আমাকে এখন সব সত্যিটা বলছেন? এতদিন কেন বলেননি?

এতগুলো প্রশ্ন শ্রাবণের দিকে ছুড়ে দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল চাঁদনী। ওর প্রশ্নের উত্তরে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল শ্রাবণ। তারপর ওর হাতটা ধরে আবারো সেই ছবিগুলোর সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। মৃদু কন্ঠে বলতে শুরু করলো,

— তোমার 25 বছর পূর্ণ হওয়ার আগে যদি তোমার কাছে সব সত্যি কথা বলে দেওয়া হতো। তাহলে তুমি আর কোন মানুষ হয়ে থাকতে পারতে না। তুমি একজন ভ্যাম্পায়ার এ পরিণত হতে। আর তোমার সেই ভ্যাম্পায়ার রূপ মানুষের জন্য ভীষন ক্ষতিকর হয়ে যেত। তুমি আমাদের মতো কোনো ভালো ভ্যাম্পায়ার হয়ে থাকতে পারতে না। এমনিতে ভালো থাকলেও কোনো মানুষ তোমার চোখের সামনে আসলে তুমি সহ্য করতে পারতে না। তাদের রক্ত চুষে মেরে ফেলতে। এমনটাই বলে গিয়েছিল ফুঁপি। কারণ ফুঁপি একজন মানুষকে বিয়ে করায় অভিশপ্ত হয়ে গিয়ে ছিল। আর সেই অভিশাপ যেন তোমার উপর না পড়ে তাই এতদিন তোমার কাছে সবকিছু লুকিয়ে গিয়েছি আমরা। তোমাকে সবকিছুর হাত থেকে প্রোটেক্ট করেছি। শুধুমাত্র তোমার ভালোর জন্য চাঁদপাখি।

শ্রাবণের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছেনা চাঁদনী। তাই আচমকাই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে। ওর এমন কান্ডে বেশ অবাক হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো শ্রাবণ। শ্রাবণী বেশ লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসে সেখান থেকে বেরিয়ে অন্য রুমে চলে গেল। ও চলে যেতেই চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি সুরে শ্রাবণ বলতে লাগলো,

— এই পাগলি এভাবে কাদছো কেনো তুমি? আমিতো আছি! তুমি একদম চিন্তা করবে না আর কেউ না থাকলেও আমি থাকবো তোমার পাশে সারাটা জীবন। তোমার ঢাল হয়ে।

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী ওর বুক থেকে মুখ তুলে ছোট বাচ্চাদের মত নিজের চোখ দুটো কোচলে নিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,

— আমি আপনাকে শুধু শুধু ভুল বুঝেছি শ্রাবণ। অনেক খারাপ আচরণ করেছি আপনার সাথে। আমি তো এসব কিছুই জানতাম না। জানলে হয়তো এরকম ব্যবহার করতাম না আপনার সাথে। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ!

ওর এমন বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে কথা বলা দেখে শ্রাবণের মনে মনে ভীষণ হাসি পেল। কিন্তু হাসি টাকে লুকিয়ে রেখে মুখটা গম্ভীর করে, গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

— আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিতে পারি! কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। তুমি যদি শর্তটা মানো তাহলে তুমি আমার কাছ থেকে ক্ষমা পাবে। বল শর্তে রাজি?

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী আবার ওর ঠোট উল্টিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে অভিমানী গলায় বলল,

— বলুন কি শর্ত মানতে হবে?

— তেমন কিছু না, আমি তো তোমার স্বামী হই। আর স্বামী হওয়া সত্ত্বেও এখন অব্দি তোমার থেকে আমি কোনো ভালবাসা পাইনি। তাই আমি চাই তুমি আমাকে এখন অনেকগুলো ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবে। বল রাজি?

কথাটা বলেই দুষ্টুমির হাসি দিয়ে ভ্রু নাচাতে লাগলো শ্রাবণ। ওর এমন কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল চাঁদনী। সে লজ্জা মাখা মুখ করে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,

— আপনি না খুব খারাপ। যান আপনার সাথে কথাই বলব না আমি।

কথাটা বলেই দৌড়ে পালানোর জন্য রুম থেকে বের হওয়ার জন্য সামনে এগোতে নিলো চাঁদনী। তখনই ওর ডান হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিল শ্রাবণ। তারপর বুকের মাঝে শক্ত করে ধরে রেখে বললো,

— অনেক ভালোবাসি চাঁদ পাখি। অসম্ভব ভালোবাসি আমি তোমায়। তুমি জানো না তুমি আমার কি! আমার সবটা জুড়ে শুধু তোমার বিচরণ। তোমাকে ছাড়া কোন কিছু কল্পনাও করতে পারি না আমি। বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি আমি তোমায় চাঁদপাখি।

চাঁদনী পরম আবেশে ওর বুকে মাথা গুঁজে রইলো। কোন কথা বলল না। এটা যে তার সবচাইতে শান্তির জায়গা। আজ যেন পৃথিবীর সব চাইতে সুখী মানুষ নিজেকে মনে হচ্ছে চাঁদনীর। তার ভ্যাম্পায়ার বরের এমন পাগলামো ভালবাসা পেয়ে।

———————

তিন দিন পর,,,
এই তিন দিনের মাঝে সব কিছুই বদলে গেছে। চাঁদনী আর শ্রাবণ স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রীর মতো নিজেদের জীবন শুরু করেছে। শ্রাবণীও ওদের আশেপাশেই থাকে সবসময়। শ্রাবণ সবসময় ওর সাথে হাসিখুশি থাকলেও তার মনে শান্তি নেই। নানা রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনের মাঝে সারাক্ষণ। কারণ শ্রাবণ বেশ ভালোভাবেই জানে ওই খারাপ ভ্যাম্পায়াররা থেমে থাকবে না। তারা আবারও ওদের উপর হামলা করবেই করবে। চাঁদনীর শক্তি কেরে নেওয়ারও চেষ্টা অবশ্যই করবে। কিন্তু চাঁদনী এখন নিজের সম্পূর্ণ শক্তি ফিরে পেয়েছে। তাই একটু হলেও চিন্তা মুক্ত সবাই।

দুপুরে খাবার পর ঘুমিয়ে পরেছে চাঁদনী। পাশেই বসে আছে শ্রাবন। এক নজরে সে তাকিয়ে আছে নিজের প্রিয়সীর দিকে। যেনো শত হাজার বছর ধরে তাকিয়ে থাকলেও মন ভরবে না তার। ঘুমন্ত অবস্থাতেও যে কাউকে এতটা মায়াবী লাগে জানা ছিলো না শ্রাবণের। এভাবেই কেটে গেলো বেশ অনেকটা সময়। হঠাৎ শ্রাবণের মনে হতে লাগলো শ্রাবণী ওকে ডাকছে। তার কোনো বিপদ হয়েছে। কথাটা মনে হতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো শ্রাবণ। একবার ভাবলো চাঁদনীকে ডাকবে। কিন্তু ওর ঘুম ভাঙানোর ইচ্ছা হলো না তার। তাই সে একাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো শ্রাবণীর কি হয়েছে তা জানতে।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_৩৬_শেষ_পার্ট
#M_Sonali

শ্রাবনীর রুম থেকে শুরু করে পুরো বাসার প্রতিটা রুমে পাগলের মত শ্রাবণীকে খুঁজে বেড়িয়েছে শ্রাবণ। কিন্তু কোথাও ওকে খুঁজে পাচ্ছে না। ওর চিহ্নমাত্র নেই বাসার কোথাও। কিছুক্ষণ আগেও শ্রাবণের মনের মাঝে ওর ডাক ভেসে আসছিলো। যেনো বিপদে পরে চিৎকার করে ডাকছিলো ওকে শ্রাবণী। কিন্তু এখন আর ওর ডাক শোনা যাচ্ছে না। বারবার মনের মাঝে একটা ভয়ংকর আশঙ্কা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে শ্রাবণের। মনটা বারে বারে ভীত হয়ে পড়ছে তার। পুরো বাসায় যখন খুঁজে না পেলো, তখন আর দেরি না করে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো সে। মনে মনে ভাবল হয়তো ছাদে আছে শ্রাবণী। খুব দ্রুত ছাদে উঠে গেল সে। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতেই সামনের দৃশ্য দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেল সে। সাথে ভয়ও পেলো ভীষণ।

কারণ সামনেই অজ্ঞান অবস্থায় নিচে পড়ে রয়েছে শ্রাবণী। সারা শরীরে রক্তাক্ত অবস্থা তার। সারা শরীরে যেন ধারালো নখের খামচি এবং সরু দাঁতের চিহ্ন বসে আছে। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একাধিক হিংশ্র ভ্যাম্পায়ার। আর সবার মাঝখানে বিচ্ছিরি ভ্যাম্পায়ার চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিতু। মিতু কে এই রূপে দেখতেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো শ্রাবণের। ভাবতেও পারেনি মিতুকে কখনো এই রূপে সামনে দেখবে সে। শ্রাবণ বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

— মিতু তুমি এখানে? এমন রুপে? আমি তো কল্পনাও করতে পারছিনা যে তোমার এতটা ভালো মানুষের রূপে আড়ালে এমন একটা হিংস্র ভয়ানক রূপ ছিল। যেটা আমরা কেউই এতদিন বুঝতে পারিনি!

ওর কথার উত্তরে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো মিতু। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে যেন হাসতে লাগল সে। এমন ভয়ানক হাসি হয়তো এর আগে আর কেউ শোনেনি। শরীর হিম করা সেই হাসি থামিয়ে দাঁতের সাথে দাঁত কিড়মিড় করে বলতে লাগল,

— তো তোদের কি মনে হয়? আমি তোদের সামনে আমার নিজের রুপে এসে নিজেকে এত তাড়াতাড়ি ধরা দিয়ে দেখাবো? আজকে সুযোগ বুঝে তোদের সামনে এভাবে এসেছি। আর আজকে তোরা সবাই মরবি আমার হাতে। তোর বোনের মত। প্রথমে ছলনায় ফেলে ওকে মেরেছি। এবার তোকে মারবো। আর শেষে মারব তোর চাঁদনীকে। তারপর আমিই হবো পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কুইন। সব চাইতে শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার।

কথাগুলো বলেই আবার অট্ট হাসিতে হাসতে শুরু করলো মিতু। ওর সাথে তাল মিলিয়ে পিছনে থাকা ভ্যাম্পায়ার গুলোও হাসতে লাগল। তারপর শ্রাবণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবাই মিলে আক্রমণ করল ওর উপর। শ্রাবণ একা কোনো ভাবেই পেরে উঠছে না ওদের সাথে। তার ওপর আচমকা আক্রমণ করায় আরো বেশি নাজেহাল সে। তখনই কোথা থেকে যেন ঝড়ের গতিতে চাঁদনী এসে সবাইকে ছিটকে ফেলে দিলো বহুদূরে। সবাই এদিক ওদিকে ছিটকে পড়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো। মিতু দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো। আরো বেশি হিংস্র হয়ে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। সবার সাথে ভীষণ ভাবে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। যেন কেউ কারো থেকে শক্তিতে কম নয়। সবার শক্তি অসম্ভব পাওয়ারফুল।

এভাবে বেশ অনেকটা সময় ধরে ওদের মাঝে ভীষণভাবে যুদ্ধ চলতে লাগল। অনেকগুলো ভ্যাম্পায়ার হওয়ায় চাঁদনী এবং শ্রাবণ একা কোনোভাবেই ওদের সাথে পেরে উঠছেনা। চাঁদনীর এত বেশি শক্তি হওয়া সত্ত্বেও কেন জানি না ওদের সাথে পেরে উঠছেনা কিছুতেই। চারপাশ থেকে ওদেরকে ভীষণভাবে আক্রমণ করে ধরেছে সবাই। শ্রাবণের অবস্থাও অনেকটা নাজেহাল। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে তার। ঐ খারাপ ভ্যাম্পায়ার দের নখ এবং দাঁতের আচড়ে।

ওই খারাপ ভ্যাম্পায়ার গুলো যে হয়রান হয়ে যায়নি তা কিন্তু নয়। তারাও ভীষণভাবে হয়রান হয়ে গেছে ওদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে। কারণ চাঁদনীর শক্তির কাছে টিকে থাকা খুব কঠিন ওদের। তবুও নিজেদের সম্পূর্ণ চেষ্টা দিয়ে লড়াই করে চলেছে ওদের সাথে। আর একটাই উদ্দেশ্য, আজকে যেভাবেই হোক শ্রাবণ চাঁদনী এবং শ্রাবণী কে মেরে ওদের সব শক্তি নিজেদের করে নিয়ে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে ভয়ানক হিংস্র ও সব চাইতে শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার হয়ে ওঠা।

এভাবে অনেকটা সময় ধরে যুদ্ধ করার পর সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। আর তখনই শ্রাবণ এবং চাঁদনী দুজন হাত ধরে একসাথে দাঁড়িয়ে রইলো। চাঁদনী ওর দিকে তাকাতেই যেন আঁতকে উঠল। ওর সারাটা শরীর রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত। হঠাৎ চাঁদনীর কি হলো, সে চোখ বন্ধ করে নিলো। আর তখনি শ্রাবণের শরীরের মাঝে একটা ঝাকি দিয়ে উঠল। সাথে সাথে চাঁদনীর শরীর থেকে নীল রঙের এক তীক্ষ্ণ আলোকরশ্মি বেরিয়ে শ্রাবণের শরীরে প্রবেশ করতে লাগলো। এভাবে বেশ কিছুক্ষন চলার পর, চাঁদনী অজ্ঞান হয়ে নিচে পরে গেল।

চাঁদনীকে অজ্ঞান হয়ে পড়তে দেখে সকল ভ্যাম্পায়াররা ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। তাদের মাথায় যেন কোন কিছুই ঢুকছেনা এখন। তখনই মিতু চাঁদনীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে দাড়িয়ে থাকা শ্রাবণের দিকে তাকালো। আর তখনই যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো তার। কারণ শ্রাবনকে এখন আগের চাইতেও অনেক বেশি হিংস্র লাগছে। ওর পুরো শরীর এখন গাঢ় নীল রঙ ধারণ করেছে। চোখ দুটো যেন হাজার ভোল্টের লাইটের মত নীল আলো ছড়াচ্ছে। হাতের নখ গুলো ভীষণ বড় বড় হয়ে গেছে দাঁতগুলোও ভিষন সরু এবং ধারালো হয়ে গেছে। অসম্ভব হিংশ্র লাগছে দেখতে তাকে। কোনো ভ্যাম্পায়ার এর এমন রূপ এর আগে কোন দিনও দেখেনি মিতু বা অন্যকেউ। সবাই যেন আঁতকে উঠল ওর এমন শক্তিশালী ভয়ানক রূপ দেখে।

কিন্তু তবুও হার মেনে নেওয়ার পাত্রী নয় মিতু। সে আবারও উঠে দাঁড়িয়ে নিজের হিংস্র ভ্যাম্পায়ার রুপ নিয়ে বাকি সবাইকে একসাথে নিয়ে এগিয়ে আসলো ওর দিকে। তবে যখনই শ্রাবণকে আক্রমন করার জন্য ওর ওপর হামলা করল তখন’ই ওকে স্পর্শ করার আগেই সবাই চারিদিকে ছিটকে পড়ল। এবং সাথে সাথে সবার শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে কেটে পরে গেলো। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মৃত্যু হলো তাদের। কিন্তু মিতুর তেমন কিছুই হলো না। সে শুধু পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে।আশেপাশের সবার অবস্থা দেখে ভয়ে শিউরে উঠলো তার শরীর। সব সাহস যেন এক মিনিটের মধ্যে কোথাও উধাও হয়ে গেল তার। ভয়ে ভয়ে সামনে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আরো একদফা ভয় পেয়ে গেলো সে। কেননা শ্রাবণ এখন আগের মত স্বাভাবিক রূপে ফিরে গেছে। আর ওর পাশে চাঁদনী দাঁড়িয়ে আছে নীল রঙের ভয়ংকর চোখ দিয়ে ওর দিকে হিংশ্র ভাবে তাকিয়ে। চাঁদনীকে দেখে ভয়ে পিছন দিকে ছেচরিয়ে ছেচরিয়ে পেছাতে লাগলো মিতু। তখন ওরা দুজনে দ্রুত দিকে ওকে দু পাশ থেকে ঘিরে ফেলে ওর দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

— এখন তোর সঙ্গিদের মত তোরও একই অবস্থা হতো। কিন্তু তোকে আমি মারিনি একটা কারণে। কারন তোর কাছ থেকে সব সত্যিটা জানার আছে আমার। এতদিন চাঁদনীর সাথে থেকেও কেন ওর কোন ক্ষতি করিস নি তুই? কেনই বা ওর শক্তি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করিস নি? আর মানুষরূপে এতদিন এভাবে আমাদের চোখের আড়ালে থাকার কারনটা কি? সব সত্যি কথা বল মিতু। না হলে তোকে এখনই ওদের মতোই অবস্থা করবো।

শ্রাবণের ধমকে কেঁপে উঠল মিতু। কাঁপা কাঁপা গলায় আগের মত মানুষের রূপে স্বাভাবিক হয়ে ফিরে এসে বলতে লাগলো,

— আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও। আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাদের সাথে এমন টা করে। আমি আর কোনদিনও তোমাদের কোনো কাজে বাধা দিব না। তোমাদের শক্তি কেরে নেওয়ারও চেষ্টা করবো না। আজ থেকে ভাল হয়ে যাব। ফিরে যাবো নিজের জায়গায়। আর কখনো তোমাদের সামনে আসব না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও তোমরা। আমার ভুল হয়ে গেছে।

কিন্তু এ ভাবে আকুতি-মিনতি করার পরেও ওকে বিশ্বাস করল না কেউই। বরং চাঁদনী হিংস্র রূপ নিয়ে ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে গর্জন করে বলে উঠলো,

— জানিস তো তুমি, সবাইকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু কোন বিশ্বাসঘাতক কে কখনো বিশ্বাস করা যায় না। তুই তো আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ছিস। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে তুই কেন এতদিন আমার সাথে বান্ধবীর মতো ঘুরে বেরিয়েছিস। তোকে আমি নিজের বোনের মত ভালবেসে ছিলাম। কিন্তু তুই কেন এমনটা করলি? আর এতদিন মানুষের রূপে থাকলিই বা কি করে। আমি তো তোর চোখে সেদিন জলও দেখেছিলাম। কোন ভাম্পায়ার তো কান্না করতে পারে না! তাহলে তোর চোখে জল আসলো কোথা থেকে? সবকিছু সত্যি করে বল বলছি। নইলে এখানেই মেরে ফেলবো তোকে।

চাঁদনীর এমন হিংস্রভাবে কথা বলা শুনে ভয়ে কুঁকড়ে ওঠলো মিতু। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

— আমার আসল নাম মিতু নয়, আমার আসল নাম ইভানা। আর আমার বয়সও তোমরা যেমন ভাবো তেমন নয়। আমার বয়স ১০০ বছরের কাছাকাছি। তোমার মা চন্দ্রীকার সব চাইতে কাছের বান্ধবী ছিলাম আমি। আর সব চাইতে বড় শত্রুও।

মিতুর কথা শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো চাঁদনীর। সে মিতুর হাত ছেড়ে দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

–আমার মায়ের বান্ধবী মানে? তোমায় দেখেতো তেমন মনে হয় না! যে তোমার বয়স এত হবে। তাহলে তুমি যেটা বলছো সেটা বিশ্বাস করবো কিভাবে আমরা?

— বিশ্বাস না হলে ও এটাই সত্যি। ছোটবেলা থেকেই আমি ভীষণ স্বপ্ন দেখতাম পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কুইন হওয়ার। আর সেই স্বপ্নের হাত ধরে আমি চন্দ্রীকার সাথে ভালো বন্ধুত্ব করি। ও ভীষন বিশ্বাস করত আমায়। ভালবাসত অনেক। ওর সাথে বন্ধুত্ব করে সবসময় সুজগের অপেক্ষায় থাকতাম ওর গলার লকেট ছিনিয়ে নেওয়ার। কিন্তু কখনো চেষ্টা করে পেরে উঠতাম না। কারণ ও ছিল ভীষন শক্তিশালী। আর সেই লকেটের মাঝে সমস্ত ভ্যাম্পায়ার দের শক্তি থাকায় ততটা সাহসও পেতাম না সেটাতে হাত দেওয়ায়। এভাবে অনেক দিন পেরিয়ে যায়। একসময় চন্দ্রিকা একটি মানুষের প্রেমে পড়ে এবং তাকে বিয়ে করে। তখন ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে অনেকেই রেগে যায় তার ওপর। তখন আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম সেই। কারণ সেই সুযোগে হয়তো আমি ওর গলার লকেট টা নিয়ে শক্তিশালী হতে পারব। কিন্তু আমার সব আশায় পানি ঢেলে দিয়ে ও সন্তান সম্ভাবনা হলো। আর ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সবাই ওকে মেনে নিল। আমি পরে জানতে পারলাম যে ওর পেটের বাচ্চা হবে ওর সমস্ত শক্তির অধিকারী। বরং ওর চাইতে একটু বেশি শক্তিশালী। কিন্তু চন্দ্রিকা আমার প্রিয় বান্ধবী হওয়ায়, ও আমার সাথে সবকিছু শেয়ার করত। আমায় বলেছিল ওর মেয়ে যতদিন না ২৫ বছরের হয়ে যাবে, ততদিন সে নিজের শক্তি ফিরে পাবে না। বরং একজন মানুষ রুপে থাকবে।

সেদিন ওর এই কথাগুলো শুনে আমি এতটাই খুশি এবং উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম যে, মুখ ফসকে ওর কাছে বলে ফেলেছিলাম, “তাহলে তো ভালোই হবে আমি তোর বাচ্চার থেকে খুব সহজেই সমস্ত শক্তি কেড়ে নিতে পারবো।” কথাটা বলে সেদিন জিভে কামড় দিয়ে ছিলাম আমি। কিন্তু চন্দ্রিকা ঠিক ধরে ফেলেছিল আমায়। সে আমাকে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকে যদিও আমি নানাভাবে ইয়ার্কির কথা বলে ওর কাছ থেকে সব কাটিয়ে নেই। কিন্তু তবুও ও বুঝে গিয়েছিল যে আমি ওর আসল শত্রু। তার পরদিন হঠাৎ করেই চন্দিকাকে হারিয়ে ফেলি। ওকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি সব জায়গায়। কিন্তু কোথাও পায়নি। সেই সময়টাতে ও এই বাড়িতে এসে থাকতো। কিন্তু এই বাড়িটা খবর শুধুমাত্র চন্দ্রিকা আর ওর স্বামী ছাড়া আর কেউ জানত না। তাই আমি এখানের খবর পাইনি। পাগলের মতো খুজে ও কোন লাভ হয়নি। তবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের একটা নিয়ম ছিল, কোন ভ্যাম্পায়ার মেয়ে যদি প্রেগনেন্ট হোতো, তাহলে আড়াই বছরের আগে সে বাচ্চা প্রসব করত না। তাই আমি ভেবেছিলাম যে সকলের মত চন্দ্রীকাও আড়াই বছরের আগে বাচ্চা প্রসব করবেনা। সেই অনুযায়ী তোমার এখন ২৩ বছর হওয়ার কথা।কিন্তু আমি জানতাম না যে ও সাধরন মানুষের মত ১০ মাসেই বাচ্চা প্রসব করেছে।

একনাগাড়ে এতোটুকু বলে থামল মিতু। ওকে থামতে দেখে চাঁদনী আবারও প্রশ্ন করে উঠলো,

— তারপর, তারপর কি হলো? তুমি কিভাবে জানলে যে আমি কোথায় আছি? আর আমার উপর আক্রমণ করলে না কেন?

ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিতু আবার বলতে শুরু করল,

— আমি তোমার খোঁজ তত দিন অব্দি পাইনি যতদিন তুমি তোমার বাবার কাছে ছিলে। জানিনা কোন অদৃশ্য শক্তি তোমায় আড়াল করে রেখেছিলো আমাদের চোখের আড়ালে। কিন্তু সেদিন খোঁজ পাওয়ার সাথে সাথে তোমাকে হত্যা করার জন্য ছুটে যায় আমার দুজন সহযোগী ভ্যাম্পায়ার। কারণ আমরা জানতাম তখন তোমার 22 বছর চলছে। যে কারণে তোমাকে আমরা সহজেই হত্যা করতে পারব। আর তোমার শক্তি ও ছিনিয়ে নিতে পারব। তবে তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে এই শ্রাবণের জন্য। সে তোমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে ছিল সেদিন। আর কোথায় রেখেছিলো সেটাও আমার অজানা।

এতোটুকু বলতেই মিতুকে থামিয়ে দিয়ে এবার শ্রাবণ প্রশ্ন করে উঠলো,

— কিন্তু তাই যদি হবে তাহলে তুমি সাধারণ মানুষ হওয়ার অভিনয় করেছিলে কেন? কেনইবা শ্রাবণী তোমাকে বাঁচানোর পর ওর বান্ধবী হওয়ার নাটক করেছিলে?আমাদের সামনে মানুষ হয়েই বা কেনো থাকলে তুমি?

— কারণ আমি যখন কোনভাবেই চাঁদনীর খবর পাচ্ছিলাম না। তখন আমি মনে মনে একটা প্ল্যান করি। কারণ আমাকে কেউ চিনত না। তাই শ্রাবণীর সাথে নিজেরই সহযোগী ভ্যাম্পায়ার দিয়ে আক্রমণ করার অভিনয় করে ওর বন্ধু হই। ওর থেকে সবকিছু জানার চেষ্টা করি চাঁদনীর ব্যাপারে। কিন্তু চাঁদনী কোথায় আছে এসবের কোনো কিছুই বলে না আমাকে। ওর খবরগুলো সব সময় প্রোটেক্ট করে গেছে। তাই আমি সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকি। আর সেই সুযোগটা আমার কাছে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে। একদিন শ্রাবণী নিজে গিয়ে বলে ও আমাকে চাঁদনীর কাছে নিয়ে আসবে। সেদিন ওর এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলাম আমি। তারপর থেকেই এখানে এসে চাঁদনীর সাথে মানুষ রূপে থাকতে শুরু করি। আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকি কিভাবে ওর গলা থেকে ঐ লকেট টা নেওয়া যায়। আমার ধারণা ছিল ওর শক্তি পেতে এখনো পুরো দুই বছর বাকি। তাই খুব একটা গুরুত্ব দেইনি, যে ধীরেসুস্থে কেরে নেওয়া যাবে। কিন্তু আমার সব ধারণাকে ভুল করে দিয়ে যখন আমি জানতে পারলাম ওর 25 বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র 5 দিন বাকি! তখন যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তাই আমি আমার ভ্যাম্পায়ারদের খবর দিলাম ওকে আক্রমণ করতে। এর মাঝে যে ওর উপর আক্রমণ করার জন্য চেষ্টা করি নি তেমন কিন্তু নয়। আমি বহুবার চাঁদনী ঘুমিয়ে থাকলে ওর উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছি। এমনকি জেগে থাকলেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রতিবারই কোন এক অজানা শক্তি ওকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। সেটা হয়তো ওর গলার ঐ লকেটের কারণে। আর ওর শক্তি ফিরে পাওয়ার সময় হয়ে যাওয়ার কারণে। তারপর যখন তোমাকে আঘাত করতে পারলাম তখন চাঁদনী ঢাল হয়ে ওর সমস্ত শক্তি ফিরে পেয়ে বাঁচিয়ে নিল তোমায়। আমাকে আবারো হারিয়ে দিল। এত নাটক করেও নিজের উদ্যেশে সফল হতে পারলাম না আমি।

কথাগুলো বলেই রাগে কটমট করতে লাগলো মিতু। ওর সমস্ত কথা শুনে এবার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চাঁদনী ঠাস করে একটা চড় মেরে দিল ওর গালে। তারপর দাঁত কিড়মিড় করে রাগি গলায় বলল,

— তুই শুধু একটা বিশ্বাসঘাতক’ই নয় বরং খারাপ এর চাইতেও ভীষণ খারাপ তুই। তোর মত ভ্যাম্পায়ার কে কখনোই ক্ষমা করা যায় না। কারণ তুই কোন না কোনভাবে আবার আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবি। তাই এই রিস্ক আমি কোনভাবেই নেবো না। তোকে তোর প্রাপ্য শাস্তি অবশ্যই দেবো আমি।

কথাটা বলেই মিতুকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা মনে মনে কল্পনা করে মিতুর মাথার উপর হাত রাখল চাঁদনী। সাথে সাথে চোখের পলকে ও একটা পাথরের মূর্তি তে পরিণত হলো। একটা নীল রঙের পাথরের মূর্তি। একদম নিখুঁত ভাবে তৈরি করা একদম মিতুর মতোই দেখতে। ওকে এমনটা করতে দেখে শ্রাবণ কয়েকটা পিছিয়ে গিয়ে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

— চাঁদনী তুমি এটা কিভাবে করলে? এমন কোন শক্তি তো আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কারো ছিল না কখোনো? এমনকি ফুঁপি চন্দ্রীকারও ছিল না। তাহলে তুমি এই শক্তি কোথায় পেলে?

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী মুচকি হেসে আবার চোখ বন্ধ করে মিতুর পাথর হওয়া শরীরে স্পর্শ করে কিছু একটা পড়ল। সাথে সাথে সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল মূর্তিটা। তারপর চোখ খুলে মুচকি হেসে বলল,

— এটা আমার একটা সিক্রেট শক্তি বলতে পারো। আমার মাঝে এমন আরো অনেক শক্তি হয়তো লুকোনো আছে। যা সবারই অজানা এমন কি আমারও। এটার বিষয়ে তোমার না জানলেও চলবে। যখন প্রয়োজন হবে তখন আপনাআপনি সব বুঝতে পারবে। এখন চলো রুমে যাওয়া যাক। আর শ্রাবণী আপুকেও তো ঠিক করতে হবে তাইনা?

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ আর কিছু বলল না। সোজা গিয়ে শ্রাবণী কে কোলে তুলে নিল। তারপর রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। চাঁদনি আর দেরি না করে ওর মাথার কাছে বসে ওর মাথার উপর নিজের একটা হাত রেখে আরেক হাত দিয়ে গলার লকেট স্পর্শ করে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা পড়তে লাগলো। তখনই সাড়া শরীর নীল রঙের আলো ছড়িয়ে পরল শ্রাবণীর। একটু পরেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেল সে। সুস্থ হতেই কি কি হয়েছিল সবকিছু জানতে চাইল শ্রাবণী। চাঁদনী একে একে সব কিছু খুলে বলল তার কাছে। তখন সবাই মিলে মিতুর জন্য অনেক আফসোস করলো। কারণ তারা মিতুকে অনেক ভালবেসে ছিল। কিন্তু ও যে এতটা বাজে এবং খারাপ একটা ভ্যাম্পায়ার ছিল সেটা কারো কল্পনায়ও ছিল না। সব শেষ হয়ে গেলে ওদের আবারো সুখের জীবন শুরু হলো। যে জীবনে কোনো শত্রু নেই। নেই কোনো বিপদ। শুধুই রয়েছে ভালবাসা আর ভালবাসা।

***********সমাপ্ত***********

গল্পটা এত দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আসলে সারাদিন তেমন সময় পাইনি লেখার। তাই এই মুহূর্তে সময় পেতেই লিখে ফেললাম। পুরো গল্পটা পড়ে কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন সবাই। যারা এতদিন কমেন্ট করেননি, তারা আজকে কমেন্ট করবেন আশা করি। ধন্যবাদ সবাইকে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here