ভ্যাম্পায়ার_বর পর্ব ৩৩+৩৪

#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_৩৩
#M_Sonali

দরজায় এতটা জোরে জোরে শব্দ হচ্ছে যে রুমের মাঝে চুপ করে বসে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভীষণভাবে দোটানায় পড়ে গেছে সে। এক মন বলছে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখতে বাইরে কি আছে! তো আরেক মন নিষেধ করছে শ্রাবণ মানা করে গেছে তাই। কি করবে কোনো কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না তার। তবুও গুটিগুটি পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে যেতে লাগল সে। আর কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করতে লাগল, “দরজার বাইরে কে আছে? কে বারবার এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছে?” কিন্তু না বাইরে থেকে কোন সারা শব্দ মিলল না। সেই তখন থেকে শুধু দরজায় বারি পড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আর ওর কন্ঠ শোনার পর যেন এবার শব্দটি আরো দ্বিগুণ গতিতে বেড়ে চলল। এবার আর চাঁদনীর সম্ভব হচ্ছে না চুপ করে রুমের মধ্যে বসে থাকা। সে মনে মনে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। দরজা খুলে দেখবে বাইরে কি আছে। এতে যা হওয়ার হবে ওর।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। সে গুটি গুটি পায়ে রুমের দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজার ছিটকিনিটায় হাত রাখতেই, হঠাৎ করেই কেন জানিনা ওর বারবার মনে হতে লাগল যে শ্রাবণ ওকে মানা করছে দরজা খুলতে। কিন্তু স্পষ্ট কিছুই শুনতে পেলোনা ও। তাই সেদিকে তোয়াক্কা না করে ছিটকিনি খুলে দরজা খোলার সাথে সাথে যেন শরীর শিউরে উঠল ওর। সামনেই রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে শ্রাবণ। তার থেকে কিছুটা দূরে অজ্ঞান অবস্থায় পরে আছে শ্রাবণী। ওর অবস্থাও ভীষন করুন। আর ওদেরকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সাত আটটা ভয়ংকর দেখতে লোক। তাদের দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা সবাই খারাপ ভ্যাম্পায়ার।

শ্রাবণের এমন অবস্থা দেখে আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা চাঁদনী। কোন কিছু না ভেবে পাগলের মতো ছুটে চলে গেলো ওর কাছে। তারপর ওর মাথাটা তুলে নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে পাগলের মতো ডাকতে লাগল। কিন্তু ওর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ওর অবস্থা ভীষণ করুন। চোখ মেলে তাকানোর শক্তিও যেনো নেই। চাঁদনী কে এমন পাগলামো করতে দেখে আশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভ্যাম্পায়ার গুলো বিকট শব্দে বিশ্রীভাবে হাসতে লাগল। তাদের এমন হাসি দেখে যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল চাঁদনীর। পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল ভয়ে। এখন তার কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছে না সে। শেষ সম্বলটুকু যেন হারিয়ে ফেলেছে সে। তবে শ্রাবণের এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে কোনভাবেই নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা সে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলতে। ভীষণ রাগ হচ্ছে মনে মনে।

ওই ভ্যাম্পায়ারদের বিকট শব্দের হাসি যেন একদম কাঁটার মতো বিদছে চাঁদনীর কানে। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার। সে কোন কিছু না ভেবে শ্রাবনের মাথাটা নিজের কোন থেকে নিচে নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে হুংকার ছেড়ে বলে উঠলো,

— তোরা কী ভেবেছিস! আমার শ্রাবণকে এভাবে আহত করে, আমায় মেরে ফেলতে পারবি? আমার সমস্ত শক্তি হাসিল করতে পারবি? তোদের সেই স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হবে না। আমি তোদের একটা একটা করে মারব শয়তানের দল। তোদের সাহস হয় কিভাবে শ্রাবণকে এভাবে আহত করার?

চাঁদনীর এমন হুংকার দেওয়া কথা শুনে ওই ভ্যাম্পায়ারদের হাসির শব্দ যেন আরো দ্বিগুন গতিতে বেড়ে গেল। ওদের মধ্যে থেকে একজন সামনে এগিয়ে এসে বলে উঠলো,

— বাহ, ভ্যাম্পায়ার কুইনের মেয়ের তো দেখছি অনেক সাহস। এখন অব্দি কোন শক্তি না পেলেও সে এমন ভাব করছে যেন তুরি বাজিয়ে আমাদের মেরে ফেলতে পারবে। তুই কি ভেবেছিস আমাদের মেরে ফেলা এতই সহজ? আরে তুই তো এখনো কোনো শক্তি’ই পাস নি! কারণ তোর পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়ার এখনো দুদিন বাকি। আর আমরা তার আগেই তোকে মেরে ফেলতে এসেছি। আজকে আমাদের হাতে তোর মৃত্যু হবে। আর তোর মায়ের থেকে পাওয়া তোর সমস্ত শক্তি আমাদের হয়ে যাবে।

কথাগুলো বলে আবারো নিকট শব্দে হাসতে শুরু করলো ওরা। কিন্তু চাঁদনী এতে দমে গেল না। বা একটু ভয়ও পেল না। কেন জানি না বিপদ দেকে অনেক বেশি সাহসী মনে হচ্ছে নিজেকে ওর। মনে হচ্ছে নিজের মাঝে অনেক বেশি শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। কোন কিছু না ভেবে হুঙ্কার ছেড়ে সামনে এগিয়ে গেল চাঁদনী। সাথে সাথে চারিপাশে থেকে ওকে ঘিরে ধরলো সব ভ্যাম্পায়ার গুলো। সবার সাথে একসাথে পেড়ে উঠতে না পেরে হুংকার দিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দূরে ছিটকে ফেলল সবাইকে। সাথে সাথে সবাই উড়ে গিয়ে দেওয়ালের সাথে বারি খেয়ে নিচে পড়ে গেল। এবং সবাই অবাকও হলো ভীষণ। কারণ চাঁদনীর মাঝে এত শক্তি হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলো। কোনো কিছুই যেন ভাবনাতে নেই তাদের। কারণ ওর ২৫ বছর পূর্ন না হলে এত শক্তি কোনো ভাবেই আসার কথা নয় ওর মাঝে।

সবাই বেশ কিছুক্ষন ওকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আবারো উঠে দাড়িয়ে ওর দিকে আসতে লাগল। এবার চারিদিক থেকে একসাথে আটক করলো চাঁদনীকে। চাঁদনী ও নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ওদের সাথে লড়ে যেতে লাগল। ওর খেয়ালই নেই কি করছে কাদের সাথে লড়ছে। কেন জানিনা ওর শরীরে অসম্ভব শক্তি অনুভব করছে। যে শক্তির দ্বারা লড়াই করে চলেছে এভাবে। বেশ অনেকটা সময় ধরে লড়াই চলার পর চাঁদনী অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গেল। ওর একার তুলনায় ভ্যাম্পায়ার অনেক বেশি থাকায় একা একা পেরে উঠছেনা সে।

যখন চাঁদনী কোন ভাবে পেড়ে উঠছিল না ঐ ভ্যাম্পায়ারদের সাথে। তখন কি মনে করে হাঁটু গেড়ে চুপ করে বসে পড়লো। তারপর নিজের লকেটটা দুই হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কি যেন ভাবতে লাগলো। সাথে সাথে ওর শরীরের ভেতর থেকে নীল রঙের এক আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। যে রশ্মির কারণে একে একে সব ভ্যাম্পায়ার গুলো ভয়ে পিছিয়ে গেল। কেউ আর ওর কাছে এগিয়ে আসার সাহস করতে পারল না। সেই আলোকরশ্মি শ্রাবণী এবং শ্রাবণ এর মুখে পড়তেই ওদের জ্ঞান ফিরে আসলো। ওরা চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে দুজনেই বেশ অবাক হয়ে গেল।

সে আলোকরশ্মি টা এতই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল যে সে আলোকরশ্মির কারণে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে লাগল ভ্যাম্পায়ার গুলোর। এতে তারা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি নিজেদের বাদুড়ের রুপ নিয়ে সেখান থেকে উড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু শ্রাবণ শ্রাবণী দুজনেই একসাথে চুপ করে বসে থেকে অবাক দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে রইল। সেই আলোকরশ্মির ওদের শরীরে পরায় শরীরের সব ক্ষতগুলো পূরণ হয়ে আগের মত স্বাভাবিক হতে লাগল। এভাবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর সবকিছুই একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল। শ্রাবণ এবং শ্রাবনী দুজনে একদম সুস্থ হয়ে গেল। সেই সাথে চাঁদনী ও নিজের আগের রূপে ফিরে এলো। ওর মাঝে সবকিছুই যেন ঠিক হয়ে গেল। আগের মত একদম স্বাভাবিক মানুষে রূপান্তরিত হলো চাঁদনী।

সবকিছু স্বাভাবিক হতেই মাথা ঘুরে জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই পড়ে গেল চাঁদনী। সাথে সাথে শ্রাবণ এবং শ্রাবণী দুজনেই এগিয়ে এসে ওকে ধরে ফেলল। তারপর শ্রাবণ ওকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। এবং দুজনেই ভীষণ অবাক হলো। কারণে 25 বছর পূর্ণ হওয়ার এখনো দুই দিন বাকি। তাহলে দুদিন আগেই ওর মাঝে এত শক্তির আবির্ভাব হল কি ভাবে? কোন কিছু যেন মাথায় ঢুকছে না তাদের। তবে এটা ভেবে ভীষণ ভালো লাগছে যে এই সময় চাঁদনীর শক্তি ফিরে এসেছে। নইলে আজ অনেক বড় বিপদ হয়ে যেত। ঐ ভ্যাম্পায়ার দের হাত থেকে কোনভাবেই চাঁদনীকে আর বাঁচানো সম্ভব হতো না ওদের। সাথে নিজেদেরও ধ্বংস হতে হতো। এসব কথা মনে মনে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ শ্রাবণের একটা জিনিস খেয়াল হলো। ও ভ্রু কুঁচকে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— কি ব্যাপার শ্রাবণী তুমি এভাবে চাঁদনীর সামনে বসে থাকতে পারছো কিভাবে? তোমার মাঝে কোন রকম কোন অনুভুতি দেখতে পাচ্ছি না কেনো? এখন তো তোমার ওর রক্তের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার কথা। ওর রক্ত খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তুমি তেমন কিছুই করছো না এটা কিভাবে সম্ভব?

ওর কথায় নিজেও বেশ অবাক হল শ্রাবণী। সত্যি তো ওর মাঝে তো এখন তেমন কিছুই হচ্ছেনা। কিন্তু এরকমটা তো হওয়ার কথা না। ও কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে? কথাটা মনে মনে ভেবেই ভীষণ অবাক হলো দুজনেই। তারপরে শ্রাবণী বলে উঠলো,

— আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে চাঁদনী তার নিজের সমস্ত শক্তি ফিরে পেয়েছে। তাই ওর রক্তের প্রতি আমার আর কোনো আকর্ষণ কাজ করছে না। আর সে যদি শক্তি ফিরে না’ই পেতো, তাহলে এত গুলো ভ্যাম্পায়ারের সাথে একা লড়াই করতো কিভাবে? যেখানে আমরা দুজন ওদের সাথে পেরে উঠিনি!

ওর কথায় সহমত হয়ে শ্রাবণ মাথা নাড়ালো। কিন্তু চাঁদনীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ওদের মাথায় কাজ করছে না।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_৩৪
#M_Sonali

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। এখন অব্দি চাঁদনীর জ্ঞান ফেরেনি। এবার ভীষণ টেনশনে পড়ে গেছে শ্রাবণ এবং শ্রাবণী। এখান থেকে যে চাঁদনীকে বের করে অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখাবে সে উপায়ও নেই। তাই ভীষন টেনশনে পড়ে গেছে ওরা। তখন কিছু একটা ভেবে রুম থেকে উঠে চলে গেল শ্রাবণ। তারপর পাশের রুমের ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে নিয়ে ফিরে আসলো। কিছু একটা ভেবে সেই ঠান্ডা বরফ পানিটা চাঁদনীর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞান ফিরে এলো চাঁদনীর।

ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকিয়ে সামনে শ্রাবণ ও শ্রাবণী কে একদম সুস্থ অবস্থায় দেখে মনটা যেন খুশি হয়ে গেল চাঁদনীর। কিন্তু ও চোখ মেলে তাকানোর পর ওর চোখ দুটোর দিকে তাকাতেই ভীষণ অবাক হয়ে গেল শ্রাবন ও শ্রাবণী। কারণ ওর চোখটা স্বাভাবিকের তুলনায় অসম্ভব নীল রঙ ধারণ করেছে। ঠিক শ্রাবণ যখন ভ্যাম্পায়ার রূপে আসে তখন ওর চোখটা যেমন লাগে ঠিক তেমন। শ্রাবণ আর শ্রাবণীর বুঝতে বাকি রইলো না যে চাঁদনী তার সম্পূর্ণ শক্তি ফিরে পেয়েছে। সে এখন আর কোনো সাধারণ মানুষ নয়। বরং ভ্যাম্পায়ারের চাইতেও ভীষন শক্তিশালী এক মানবী। যে সব দিক থেকে একজন মানুষ হওয়া সত্যেও তার মাঝে বিরাজ করছে এক অলৌকিক শক্তি। যে শক্তির সাথে পেরে ওঠার ক্ষমতা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কারো নাই।

ওদের দুজনকে বেশ ভালোভাবে কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে আবারও চোখটা বন্ধ করে ফেললো চাঁদনী। তারপর বেশ কিছুটা সময় নিয়ে চোখ মেলে তাকাতেই ওর চোখটা আবার আগের মত স্বাভাবিক রুপে ফিরে এলো। ধীরেধীরে উঠে বসলো। তারপর শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলে উঠলো,

— আপনারা দুজন ঠিক আছেন তো?

ওর প্রশ্নের উত্তরে মুচকি হাসল শ্রাবণ। তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

— যেখানে আমার বউয়ের মত এত মিষ্টি এবং অসীম শক্তিশালী একটা মেয়ে আছে আমাদের পাশে! সেখানে কি আমরা ঠিক না থেকে, থাকতে পারি?

ওর কথার উত্তরে ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে, ওর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চাঁদনী বলে উঠলো,

— আপু তুমি ঠিক আছোতো? কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হল। এতদিন কেন আসনি আমার সামনে? তুমি জানো কত্ত মিস করেছি আমি তোমায়?

— জানি চাঁদনী। আমিও যে তোমাকে বড্ড মিস করেছি। কিন্তু কি করবো বলো, পরিস্থিতির শিকার হয়ে তোমার সামনে আসতে পারেনি। আসলে আমি’ই যে তোমার মৃত্যুর কারণ হয়ে যেতাম। তুমি তো এখন সবই জানো। শ্রাবণ ভাইয়া তো তোমাকে সব খুলে বলেছে তাই না?

— না আপু আমার কাছে এখনো অনেক কিছুই ধোঁয়াশা। আমি অনেক কিছুই জানিনা। আমার মাঝে এই শক্তি কিভাবে এলো? আর আমি এত শক্তিশালী’ই বা কিভাবে হয়ে উঠলাম হঠাৎ? ওই রুমের মাঝে আমার যে ছবিগুলো আছে সেগুলোর মানেই বা কি? ঐ রুমটা’ই বা কিসের? আর আমার এই লকেটের রহস্যটা কি? এতগুলো ভ্যাম্পায়ার কেন আমার পিছনে পড়ে আছে? আমাকে মারার জন্য! সবকিছু জানতে চাই আমি। প্লিজ তোমরা আমাকে সবকিছু খুলে বল!

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণী কিছু বলার আগেই ওকে চুপ করিয়ে দিয়ে শ্রাবণ ওর হাতটা ধরে বলে উঠলো,

— আজকে তোমাকে সব কিছু খুলে বলবো চাঁদনী। আজকে আর কোন বাধা নেই তোমার জানতে। কিন্তু তার আগে তুমি উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও। তোমার শরীর এখন অনেক দুর্বল। এভাবে হঠাৎ করে তোমার শরীরে শক্তি চলে আসার কারণে হয়তো তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। তাই তোমার এখন যতটা সম্ভব সুস্থতার প্রয়োজন। এসো আমার সাথে হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নেবে।

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী আর কোনো বারণ করল না। সে জানে শ্রাবণ যা বলবে তার ভালোর জন্যেই বলবে। তাই চুপচাপ ভাল মেয়ের মত ওর কথা অনুযায়ী ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। একটুপর ওয়াশরুম থেকে ফ্রোশ হয়ে এসে টেবিলে রাখা খাবারগুলো খেয়ে নিল। তারপর ওদের দুজনকে একসাথে জিগ্যেস করবো,

— নিন, আমি খেয়ে নিয়েছি। আর এখন নিজেকে যথেষ্ট সুস্থ মনে হচ্ছে। প্লিজ আপনারা আর দেরি করবেন না। আমাকে সব কিছু খুলে বলুন। আমার যে সব জানার জন্য পাগল পাগল লাগছে। আমি আর এভাবে সবকিছু না জেনে থাকতে পারছি না।

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণী এবং শ্রাবণ দুজনে দুই পাশ থেকে ওর দুই হাত ধরে নিয়ে সেই রুমের দরজার সামনে চলে গেল। সাথে সাথে দরজাটা খুলে ভেতরে রুমটা ফুটে উঠল। চাঁদনী বেশ অবাক হলো। কারণ এর আগে যখন ও দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিল তখন এখান থেকে একটা আলোকরশ্মি আসছিল। যেটা পার হয়ে রুমে প্রবেশ করেছিল সে। কিন্তু আজকে তেমন কোনো কিছুই হলো না। সবকিছুই স্বাভাবিক।

রুমের ভেতরে প্রবেশ করে আরো বেশি অবাক হলো চাঁদনী। কেননা এখন সেই আগের মতো রুমের মাঝে শুধু দেওয়াল দেখা যাচ্ছে না। বরং এখন দরজাটাও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সাথে আশেপাশে থাকা ছবিগুলো একদম স্পষ্ট। চাঁদনীর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সেই ছবির সামনে দাঁড় করালো ওরা দুজন। তারপরে শ্রাবণ ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলল,

— বলতো চাঁদপাখি, এই ছবিটা কার?

চাঁদনী বেশ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে তাৎক্ষণাত বলল,

— এটা আবার কার ছবি শ্রাবণ! এখানে তো বোঝাই যাচ্ছে এটা আমার ছবি। অবিকল আমার মতোই দেখতে এটা। তবে আমি এখনো মনে করতে পারছি না যে, এই ছবিটা আমি কবে উঠেছিলাম! কিন্তু কেন জানি না সময় সময় আমার মনে হয় যে এটা আমি নই। হয়তো আমার মত দেখতে অন্য কেউ!

— হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছ চাঁদ পাখি। এটা তুমি নয়, এটা তোমার মা। আর আমার ফুঁপি, ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কুইন চন্দ্রীকা।

ওর কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো চাঁদনী। বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠল,

— আমার মা, ভ্যাম্পায়ার কুইন চন্দ্রীকা? এসব আপনি কি বলছেন শ্রাবণ?

— হ্যা চাঁদ পাখি, তুমি কোন সাধারণ মায়ের মেয়ে নও। বরং তুমি ভ্যাম্পায়ার কুইন চন্দ্রীকা, সবচাইতে শক্তিশালী একজন ভ্যাম্পায়ারের মেয়ে। কিন্তু তোমার বাবা ছিল একজন সাধারণ মানুষ। আর সেজন্যই তোমার এত শক্তি আর তোমার মাকেও দেখতে অবিকল তোমার মতোই। যে কারনে এই ছবিটা দেখে তুমি বুঝতে পারো নি এটা তুমি নাকি অন্য কেউ।

শ্রাবণের কথার উত্তরে ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে ছবিটার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে রইল চাঁদনী। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে ওর মা একজন ভ্যাম্পায়ার ছিল। আর দেখতে অবিকল ওর মত ছিলো। ছোট বেলা থেকে আজ অব্দি কখনো নিজের মাকে দেখেনি চাঁদনী। সবসময় ওর বাবার কাছে জানতে চাইতো, ওর মা কোথায়, ওর মাকে দেখতে কেমন ছিল। কিন্তু ওর বাবা তখনই মনটা খারাপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতো, “তোমার মা আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই। কিন্তু যখন তুমি তোমার মায়ের সম্পর্কে জানতে পারবে তখন তাকে তুমি এক নজর হলেও দেখতে পারবে। বাস্তবে না হলেও ছবিতে। এখন আর আমাকে এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন করোনা চাঁদনী।” এভাবে প্রতি বারই ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যেতেন ওর বাবা। আজ তার কারণ বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছে চাঁদনী। কিন্তু তবুও যেন মাথার মাঝে নানা রকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ওর। ওর সেই মনের অবস্থা বুঝতে পেরে শ্রাবণ ওর হাতটা ধরে নিয়ে গিয়ে বিছানার ওপর বসালো। তারপর বলতে শুরু করল,

— আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। তখন আমাদের ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে ছিলো খুশি ও আনন্দের জোয়ার। কুইন চন্দ্রিকা ছিলেন ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সবচেয়ে আদরের এবং সবচাইতে শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার। আমার বাবা তার বড় ভাই হওয়া সত্ত্বেও, তাঁর শক্তি সবচেয়ে বেশি ছিল। সেটার কারণ ছিল আমার দাদু। কারণ সে মারা যাওয়ার আগে তার সমস্ত শক্তি তার তার একমাত্র মেয়ে চন্দ্রীকাকে দিয়ে যায়। আর এই সমস্ত শক্তি তোলা ছিল তোমার গলার এই লকেট টার মাঝে। যতক্ষণ এই লকেটটা কুইন চন্দ্রীকার গলায় থাকবে, ততক্ষণ পুরা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সকলের শক্তি থাকবে এ লকেট এর মাঝে। তবে এ লকেটটা যদি উনি ছাড়া অন্য কেউ নিয়ে নিতো তাহলে এটার সব শক্তি নষ্ট হয়ে যেত। তাই এই লকেটটা সব সময় পড়ে থাকতে হত কুইন চন্দ্রিকা কে। এবং ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কেউ যদি কখনো শত্রুদের থেকে আহত হতো, তাহলে এইটা থেকে নীল আলোকরশ্মি বের হয়ে তাদের সুস্থ করে তুলতো। আর এই লকেটটা তখন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে কোন শত্রুর ক্ষমতা ছিলনা তখন ভ্যাম্পায়ার কুইনের কাছে এসে এটাকে হাসিল করা। কারণ তারা ধ্বংস হয়ে যেত ভ্যাম্পায়ার কুইন এর সাথে যুদ্ধ করতে আসলে। তাই কখনো কেউ সাহস পেত না। এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। আমার বাবার ছোট বোন ছিল তোমার মা কুইন চন্দ্রীকা। অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি তাকে। একদিন কুইন চন্দ্রিকা মানুষ রূপে মানুষের মাঝে বেড়াতে আসে। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সবাই ভ্যাম্পায়ার হলেও কখনো কোন মানুষের ক্ষতি করতো না তারা। কখনো কোনো ভালো মানুষকে মেরে তার রক্ত খেতো না। হ্যাঁ মাঝে মাঝে মানুষের মাঝে এসে তাদের রক্ত ঠিকই খাওয়া হতো। কিন্তু কোনো ভালো মানুষকে মেরে নয়। বরং খারাপ কাউকে পেলে তাদের রক্ত চুষে তাদের মেরে ফেলা হতো।

এভাবে ভ্যাম্পায়ার কুইনের আসা-যাওয়া চলতে থাকে মানুষের মাঝে। আর চলতে চলতেই তোমার বাবার সাথে একদিন দেখা হয় তার। জানিনা কিভাবে সেদিন তোমার বাবা তাকে দেখেই চিনে ফেলে ছিল যে সে একজন ভ্যাম্পায়ার কন্যা। কিন্তু সে ভয় পায়নি, বরং এভাবে তাদের মাঝে এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। আর সেই সম্পর্কটা একসময় রুপ নেয় ভালোবাসার। এটা যখন ভাম্পায়ার রাজ্যে সবার জানাজানি হয়, তখন আমার বাবা এই বিয়েতে না করে দেন। তিনি রাজি হয়নি একজন মানুষের সাথে তার আদরের ছোট বোন ভ্যাম্পায়ার কুইনের বিয়ে দিতে। কেননা পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সকলের শক্তি ছিল কুইন চন্দ্রিকার হাতে। কিন্তু কুইন চন্দ্রীকা পাগল হয়ে যায় তোমার বাবার জন্য। তাকে সে বিয়ে করেই ছাড়বে এমনটা জানিয়ে দেয় আমার বাবাকে। শেষে আর কোন উপায় না পেয়ে আমার বাবা ও রাজি হয়ে যায়। সে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার বাবার সাথে কুইন চন্দ্রীকার বিয়ে দেয়। বেশ ভাল ভাবেই চলছিল সব কিছু। কিন্তু শত্রু চারিদিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলেছিল। এটা বুঝতে পারেনি তারা। তোমার বাবার পরিবারের সবাই জানত যে তোমার মা একজন ভ্যাম্পায়ার। কিন্তু কখনো তারা কোনো প্রতিবাদ করেনি। কেননা তারা জানত যে কুইন চন্দ্রীকা ভ্যাম্পায়ার হলেও অনেক ভালো ছিলো। কখনো কারো কোনো ক্ষতি করেনি সে। আর তাছাড়া তোমার বাবা ছিল একজন সাইন্টিস্ট।

আমি তখন অনেক ছোট। কিন্তু আমি দেখেছি আমার ফুঁপি মানে তোমার মা কুইন চন্দ্রিকা কে। সে অনেক ভালবাসতেন আমায় তারপর একসময় তুমি ওনার পেটে আসো। আর যখনই তুমি তার পেটে আসো তখনই চারিপাশ থেকে শত্রুর আক্রমণ করে ওনার ওপর। কারণ সবাই জানত যে ওনার পেট থেকে যে বাচ্চা হবে সেই হবে কুইনের সকল শক্তির অধিকারী। আর তার কাছেই থাকবে পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের শক্তি। কিন্তু সে একজন মানুষের সন্তান হওয়ায় তার শক্তি এত তাড়াতাড়ি পূর্ণতা পাবে না। তবে এই বাচ্চার রক্ত চুষে যদি সব খারাপ ভ্যাম্পায়ারেরা মেরে ফেলতে পারে। সাথে তারা উদ্ধার করতে পারে এই লকেটটা। তাহলে সব শক্তির অধিকারী হবে তারা। তখন খারাপ ভ্যাম্পায়ারেরা হয়ে যাবে সব চাইতে শক্তিশালী। তখন সব ভালো ভ্যাম্পায়ারদের মেরে ফেলে তারা রাজত্ব করবে পুরা পৃথিবীতে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

কাল বিকেল থেকে ঝড় হওয়ার কারণে কারেন্ট ছিলো না। আর গল্প লেখার মত কোনো স্পেসও পাইনি। তাই গল্প দিতে দেরি হলো। যদি সময় পাই তাহলে রাতে আরেক পার্ট দেওয়ার ট্রাই করবো ইনশাআল্লাহ। গল্প লিখে রি-চেক করার সময় হয়না। তাই বানানে ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। ধন্যবাদ
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

গল্পটা আর দুই পর্ব হবে হয়তো। কেমন হচ্ছে জানাবেন সবাই। ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here