ভ্যাম্পায়ার_বর পর্ব ২৯+৩০

#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_২৯
#M_Sonali

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে এসে লাগতেই ঘুম ভেঙে গেল চাঁদনীর। ও চোখ মুখ ডলে উঠে বসলো। তার পরেই মনে পড়ে গেল ওই দরজাটার কথা। যে দরজাটা শুধু দিনের বেলায় দৃশ্যমান হয়। কথাটা মনে পরতেই দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো চাঁদনী। তারপর সোজা বাইরের রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেওয়ালের দিকে তাকাল। আর তাকাতে ভীষণ অবাক হয়ে গেল সে। সত্যিই সূর্যের আলো ফোটার সাথে সাথে দরজাটা একদম দৃশ্যমান হয়ে গেছে। যেখানে কাল রাতে শুধুই দেওয়াল ছিল। আজকে সেখানে একটা অদ্ভুত রকমের দরজা রয়েছে। যে দরজার উপরে নানা রকমের কারুকাজ করা। যেন অনেক বছর আগের কোন দৃশ্য আঁকানো। চাঁদনী দরজাটার কাছে এগিয়ে যেতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে এলো। তারপর রুমে এসে দ্রুতো ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়ল। দাঁত ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজেকে আয়নার সামনে দেখে নিল। হ্যাঁ এখন অনেকটাই ফ্রেশ লাগছে ওকে। তারপর মোবাইলটা হাতে নিয়ে সেটা একদম সুইচ অফ করে দিয়ে বিছানার পাশে রেখে দ্রুত চলে গেল ওই রুমে। এখন সে দরজা খুলে ভিতরে যাবে, সেটা যেভাবেই হোক। গুটিগুটি পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতে থাকল। কিন্তু কোনভাবেই দরজাটা খোলা যাচ্ছেনা। এমন মনে হচ্ছে যেন দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দেওয়া। কিন্তু এ বাসায় তো ও ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দেবে কে? কথাটা মনে হতেই আবার চিন্তা করল নিশ্চয়ই বাইরে কোথাও লক করা আছে। যেটা খুলে ভিতরে যেতে হবে। চাঁদনী দরজাটায় হাত বুলিয়ে পাগলের মত খুঁজতে লাগল লক করা কোথায় আছে। কিন্তু কোনভাবেই লক করার মতো কোন কিছুই খুঁজে পেল না দরজায়। ও ভীষণ অবাক হলো। প্রতিটা দরজার বাইরে থেকে এবং ভেতর থেকে লক করার মত কিছু একটা থাকে, কিন্তু এটাতে নেই কেন? কথাটা ভেবেই কয়েক পা পিছিয়ে এল চাঁদনী। তারপর গভীর মনোযোগ দিয়ে দরজাটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

এভাবে বেশ কিছুক্ষন দেখার পরে খেয়াল করল দরজাটার ঠিক মাঝ বরাবর খোদাই করে কোন একটা কিছু লেখা। লেখাটা এমন ভাবে পেঁচিয়ে লেখা হয়েছে যে ঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না ওটা আসলে কি লেখা। চাঁদনী লেখাটা ভালভাবে বোঝার জন্য একটু কাছে এগিয়ে গিয়ে মনোযোগ সহকারে লেখাটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো। আর তখনি ও বুঝতে পারল ওটা কেউ একজনের নাম হবে। আরো একটু ভালো করে দেখাতেই বুঝতে পারলো নামটা “চন্দ্রিকা” লেখা। নামটা যেন ভীষন ভাবে মাথার মধ্যে আঘাত করলো চাঁদনীর। কোন একটা টেনশনে পড়ে গেল সে। বার বার মনে হতে লাগল এই নামটা ও এর আগেও কোথাও শুনেছে।নামটার সাথে ভীষন ভাবে পরিচিত ও। কিন্ত কোথায় শুনেছে সেটা কিছুতেই মনে করতে পারল না। অনেক চেষ্টা করেও যখন নামটা মনে করতে পারল না! তখন সেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দরজা খুলে ভেতরে ঢোকার জন্য চেষ্টা করতে লাগল। এটা ভেবেই ঠিক লেখাটার মাঝ বরাবর হাত দিয়ে স্পর্শ করার জন্য এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে কেউ একজন ওর নাম ধরে ডেকে উঠল।

— চাঁদনী কেমন আছো?

পিছন থেকে নিজের নাম ধরে কোন এক আগুন্তকের গলা শুনতেই সামনে আর না এগিয়ে পিছন দিকে ফিরে তাকাল চাঁদনী। তাকাতেই দেখল বেশ ফর্সা, লম্বা পাতলা করে সুন্দর একটি মেয়ে মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চেহারা ভীষণ মায়াবী ও সুন্দরী।

মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো চাঁদনী। ওকে ভ্রু কুঁচকাতে দেখে মেয়েটি একটা হাসি দিয়ে ওর কাছে এগিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে বললো,

— কেমন আছে চাঁদনী?

মেয়েটির প্রশ্নের উত্তরে চাঁদনী নিজের হাতটা ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,

— কে আপনি? আমাকে কিভাবে চেনেন? এখানে এলেন কি ভাবে।

চাঁদনীর প্রশ্নে এবার বেশ শব্দ করে হেসে দিল মেয়েটি। মেয়েটির হাসিটাও ভীষণ মায়াবী এবং ভীষণ সুন্দর। চাঁদনী একনজরে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। একটু হেসে নিয়ে মেয়েটি আবারও ওর হাতটা ধরে বলল,

— তুমিতো অনেক প্রশ্ন করো! আমাকে কথা বলতে না দিলে আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিব কিভাবে? আমি মিতু। আজ থেকে তোমার নতুন বন্ধু ভাবতে পারো আমায়। আগামী দুই মাস আমি তোমার সাথে এখানেই থাকবো। তোমাকে কম্পানি দিতে!

মেয়েদের কথাগুলো যেন কেন বিশ্বাস হচ্ছেনা চাঁদনীর। বারবার মনে হচ্ছে এমন একটা জায়গায় কে’ই বা থাকতে আসতে পারে। যেখানে ওর চারপাশে এতো বিপদ। তাই মেয়েটির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— আমি আপনাকে চিনতে পারছিনা। আর কী বলছেন এসব আবোল-তাবোল! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি এখানে এলেন কিভাবে?

ওর প্রশ্নে মিতু আবারো শব্দ করে হেসে দিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে গিয়ে পাশের সোফায় বসল। তারপর বলল,

— এখানে বস আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি! এত উত্তেজিত হইওনা চাঁদনী। আমি সত্যিই তোমার বন্ধু। আর আগামী দুই মাস তোমার সাথে এখানে থাকবো। যাতে তোমার একা একা ফিল না হয়।

— কিন্তু আপনি এখানে,,,!

এতটুকু বলতেই চাঁদনীকে আবারো থামিয়ে দিয়ে মিতু বলে উঠলো,

— এই মেয়ে তুমি সেই কখন থেকে আমাকে আপনি আপনি করছ কেন? আমি তো তোমার সমবয়সীই হবো হয়তো! তাহলে তুমি করে বলতে পারো না? তুমি করে বল। আর তাছাড়া বন্ধুর সাথে কি কেউ কখনো আপনি করে কথা বলে? তুমি আমাকে তুমি অথবা তুই করে বলবে কেমন! তারপর আমি তোমার সব কথার উত্তর দেবো। এবার বল কি বলবে?

ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো চাঁদ নী। তারপর মুচকি হেসে এবার শান্ত গলায় বলে উঠল,

— আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে তুমি করে বলব। এবার বলো তুমি আসলে কে? আর এখানেই বা এলে কি করে? এর আগে কখনো তোমাকে দেখেছি বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।

— হ্যাঁ এর আগে তুমি আমাকে কখনো দেখনি। আর আমিও তোমাকে কখনো দেখিনি। তবে তোমার কথা অনেক শুনেছি। আমি মিতু আর তোমার বোন শ্রাবনীর খুব ক্লোজ বান্ধবী। শ্রাবণীই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে। তোমার দেখাশোনা করার জন্য। ওর কাছে শুনলাম তুমি নাকি অনেকদিন হল এখানে একদম একা থাকো। যে কারণে তোমার ভালো লাগে না। তুমি এখান থেকে বের হতে চাও। কিন্তু তোমার কিছু বিপদের কারণে তুমি এখান থেকে বের হতে পারছো না। তাই এই দুই মাস তোমার সাথে থাকার জন্য শ্রাবণী আমাকে পাঠিয়েছে। আমাকে তুমি নিজের বোন ভাবতে পারো।

মিতুর কথা শুনে বেশ উত্তেজিত হয়ে চাঁদনী বললো,

— আচ্ছা মিতু আপু, শ্রাবণী আপু কেমন আছে? ওকে দেখি না অনেকদিন হয়ে গেল। ওর কি একটুও আমার কথা মনে পড়ে না? কখনো আমার সাথে একটু দেখা করতে আসে না। তোমাকে এখানে রেখে গেল অথচ আমার সাথে একটু দেখাও করে গেল না। তুমি শ্রাবণী আপুকে আসতে বলো প্লিজ। আমি ওকে দেখতে চাই। অনেকদিন হলো ওকে দেখি না।

— সরি চাঁদনী এখনতো শ্রাবণী আপু এখানে আসতে পারবে না। কারণ তুমি হয়তো এতদিনে ভালোভাবে জেনে গেছ, বুঝতে পেরেছ যে তোমার বর শ্রাবণের মত শ্রাবণী ও একজন ভ্যাম্পায়ার। তাই তার এখন তোমার সামনে আসা সম্ভব নয়। ওরা যদি তোমার সামনে আসে তাহলে তোমার অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে। যে রিক্সটা তারা কোনোভাবেই নিতে চায় না। আর সে জন্যই আমি এসেছি তোমার সাথে থাকার জন্য।

মিতুর কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো চাঁদনী। তারপর কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,

— আচ্ছা মিতু আপু, তুমি যখন এত কিছু জানো। তাহলে নিশ্চয়ই এটাও জানো যে শ্রাবণ আর শ্রাবনী আপুর মাঝে আসলে সম্পর্কটা কি? আমার কেন যেন মনে হয় ওরা দুজন দুজনকে চেনে। আর শ্রাবণী আপু যদি সত্যিই কোন ভ্যাম্পায়ার হয় তাহলে তো অবশ্যই শ্রাবণের সাথে ওনার কোন কালেকশন আছে। আমারই বা এমন কি বিপদ আছে তাদের থেকে? আমি কোন কিছু বুঝতে পারছিনা। তুমি যদি এসব জানো তাহলে আমাকে সবকিছু খুলে বল প্লিজ। আমি সব জানতে চাই।

— শ্রাবণী আপু আর শ্রাবণ ভাইয়ের মধ্যে কানেকশন আছে। তারা দুজন আপন দুই ভাই বোন। শ্রাবণী আপু এবং শ্রাবণ ভাইয়া দুজন জমজ ভাইবোন। আর তারা দুজনেই পিওর ভ্যাম্পায়ার। তাদের থেকে তোমার কি বিপদ আছে সেটা আমি এখন বলতে পারব না। তবে এখন তারা তোমার সামনে আসতে পারবেনা চাঁদনী। তাতে তোমার ক্ষতি হবে। তবে দুই মাস পর যখন তোমার পঁচিশ বছর পূর্ণ হবে। তখন তুমি সব কিছুই জানতে পারবে। তোমাকে সব কিছুই বলা হবে। তোমার জীবনের সকল রহস্য উদঘাটন হবে সেদিন। তাই এ কদিন তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে।

মিতুর থেকে কোন উত্তর না পেয়ে যেন মনটা ভেঙে গেল চাঁদনীর। অনেক আশা করেছিল যে শ্রাবণ ওকে কিছু না বললেও মিতু অবশ্যই বলবে। কিন্তু মিতুও ওকে সেই নিরাষ’ই করলো। তবে মিতুর সাথে কথা বলতে বলতে ঐ দরজার কথাটা ভুলে গেলো চাঁদনী।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_৩০
#M_Sonali

এক মাস ২৫ দিন পর,,,
দুজনে হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে একসাথে ছাদের ওপর উঠে যাচ্ছে চাঁদনী ও মিতু। দুজনকেই অনেক বেশী খুশী দেখাচ্ছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ছাদে উঠার জন্য পা বাড়িয়েছে তারা। গত ১ মাস ২৫ দিনের মাঝে মিতুর সাথে বেশ গভির সম্পর্ক গড়ে উঠেছে চাঁদনীর। শ্রাবণীর পর মিতুকেই সে নিজের বোনের মত ভালবাসতে শুরু করেছে। আর মিতুও তাই। দুজনে মিলে ছাদের দরজার কাছে পৌঁছতেই ফোনটা বেজে উঠল চাঁদনীর। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে শ্রাবণের নাম্বার ভেসে উঠেছে। বেশ অবাক হলো চাঁদনী। কারণ ইদানীং খুব প্রয়োজন ছাড়া শ্রাবণ কখনো ফোন করে না। তাই হালকা ভ্রু কুঁচকে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে গম্ভির গলায় বললো,

— হ্যালো,,!

ওপাশ থেকে উত্তেজিত কন্ঠে শ্রাবণ বলে উঠলো,

— চাঁদনী ভুল করেও এখন ছাদে উঠবে না তোমরা। এই মুহূর্তে ছাদ থেকে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দাও। তোমরা দুজনেই এখন ছাদে উঠলে ভীষন বিপদে পড়বে।

শ্রাবণের বলা হঠাৎ এমন কথা শুনে বেশ রাগ হল ওর। মনে মনে বলল ” এই লোকটা পেয়েছে কি! যখন যা খুশি তাই বলবে আর সবকিছুই মেনে নিতে হবে? আমরা তো প্রতিদিন’ই ছাদের উপর ঘোরাফেরা করি, কই কখনো তো কোনো বিপদ হয়নি। তাহলে আজকে কেন হঠাৎ এই ভাবে বলছে উনি? নাকি মিতুকে দেখে হিংসা হচ্ছে তার?” কথাগুলো ভেবে বেশ কড়া গলায় বললো,

— আমাকে সব সময় এভাবে আদেশ করবেন না। আমার খুব বিরক্ত লাগে। এখন আমাদের মনটা ভীষণ ভালো আছে। তাই আমি চাই না আপনার কথা শুনে মনটা খারাপ করতে।

কথাগুলো বলেই শ্রাবণের আর একটা কথাও না শুনে ফোনটা কেটে দিলো চাঁদনী। তারপর মিতুর হাত ধরে আবারো ছাদে ওঠার জন্য পা বাড়ালো। তখনই ওর হাতটা টেনে ধরে মিতু বললো,

–কি হয়েছে চাঁদনী, শ্রাবণ ভাইয়া কি বলল? আর তুমি এভাবে রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিলে কেন?

ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে হাত ধরে ছাদে উঠতে উঠতে বলল,

— সে কথা পরে হবে আগে চলো ছাদে যাওয়া যাক।

কথা বলতে বলতেই ছাদের উপর চলে গেল ওরা। তখনই মিতু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

— কিন্তু আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে শ্রাবণ ভাইয়া কিছু বলেছে। যার কারণে তুমি রাগ হয়ে ফোন কেটে দিলে। প্লিজ বল না ভাইয়া কি বলল? যে তুমি এভাবে রেগে গেলে?

— আর বলো না উনি ফোন দিয়ে বলছে আমাদের নাকি ছাদে উঠলে বিপদ হবে। তুমিই বলতো ছাদে এমন কি বিপদ হবে আমাদের? আশেপাশের প্রকৃতি আবহাওয়া কত সুন্দর আজ। তোমার মনে হয় এখানে বিপদের কিছু আছে?

ওর কথার উত্তরে মিতু কিছু বলবে তার আগেই কিছু একটার বিকট শব্দ শুনে দুজন মিলে আকাশের দিকে ফিরে তাকাল ওরা। আর তখনই দেখল বাঁদুরের মতো দেখতে বিশাল আকারের দুটি জিনিস ওদের দিকে ধেয়ে আসছে। তাদেরকে দেখতে অসম্ভব হিশ্র এবং ভয়ঙ্কর লাগছে। ব্যাপারটা ভালো করে খেয়াল হতেই দুজনের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো যেন। ওরা বুঝতে পারলো শ্রাবণ এই বিপদের কথাই বলেছে। এই মুহূর্তে কি করা উচিত কোনো কিছুই যেন মাথায় আসছে না ওদের।চাঁদনী কোনো কিছু না বলে হা করে সে দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু মিতু কিছু একটা ভেবে চাঁদনীর হাত ধরে বলে উঠলো,

— চাঁদনী আর এক মুহূর্তে দেরি নয়, তাড়াতাড়ি চলো আমাদের বাসার ভিতরে যেতে হবে।

কথাটা বলেই চাঁদনীর হাত ধরে ছাদের দরজার দিকে দৌড় লাগালো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না ওদের। তার আগেই ওই ভ্যাম্পায়ার দুটো এসে ওদের সামনে দাঁড়ানো, এবং নিজেদের আসল রূপে ফিরে আসলো। অসম্ভব ভয়ঙ্কর দেখতে লাগছে তাদের। তাদের চোখ দুটোর দিকে তাকাতেই যেন হৃদয় কেঁপে উঠল চাঁদনী এবং মিতুর। তাদের চোখ দুটো অসম্ভব লাল টকটকে ধারণ করেছে। যেন জ্বলজ্বল করে জ্বলছে সেগুলো। মুখের মধ্যে থেকে দুজনের দুটি করে ধারালো চিকন লম্বা দাঁত বেড়িয়ে এসেছে। অসম্ভব হিংস্র হয়ে উঠেছে তাদের চেহারা। হাতের মুঠো শক্ত করে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো তারা। দুজনের এখন কি করা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারছে না মিতু ও চাঁদনী। একপা একপা করে পিছন দিকে পিছাতে লাগলো ওরা। ভয়ে যেন হাত-পা কাঁপছে ওদের।

এভাবে পিছিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হলো না মিতু আর চাঁদনীর। ঐ ভ্যাম্পায়ার দুটো সোজা গিয়ে চাঁদনীকে দুদিক থেকে ধরে ফেলল। মিতু ওদেরকে বাধা দিতে গেলে ওকে এমন ভাবে ধাক্কা দিলো যে, ও ছিটকে গিয়ে ছাদের কোনার সাথে মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল। তারপর চাঁদনীকে দুই পাশ থেকে আটকে ধরে ওর গলায় নিজেদের দাঁত বসানোর জন্য অগ্রসর হল ভ্যাম্পায়ার দুটো। সেই মুহূর্তে বাতাসের বেগে কোথা থেকে যেন শ্রাবণ ছুটে এসে ভ্যাম্পায়ার দুজনকে দুদিকে ছুড়ে ফেলে দিল। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল যে চাঁদনী যেন নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। তারপরে ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই শ্রাবণ ঠাশ করে ওর গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে রাগি গলায় বলল,

–এই মূহূর্তে ছাদ থেকে নেমে ঐ অদ্ভুত রুমে চলে যাও। দেখো গিয়ে ঐ রুমের দরজা খুলে আছে তোমার জন্যে।

এর আগে শ্রাবণ ওকে ধমক দিলেও কোনদিনও এভাবে গায়ে হাত তুলেনি। শ্রাবণের হাতের থাপ্পর খেয়ে যেন থমকে গিয়েছে চাঁদনী। কিন্তু এখন রাগ দেখানোর বা অভিমান করার সময় নয়। তাই ওর কথামতো ছাদের দরজার দিকে দৌড় দিল চাঁদনী। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছাতেই ওর মনে পরল মিতুর কথা। ওকে এভাবে রেখে তো একদমই যেতে পারবে না সে। তাই মিতুর কাছে আবার এগিয়ে যেতে লাগল সে। তখনই ঐ ভ্যাম্পায়ার দুজন আবারও আক্রমণ করার জন্য দুপাশ থেকে এগিয়ে আসতে লাগলো। শ্রাবণ এসে ওর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

— মিতুকে নিয়ে ভেবো না। ওকে আমি সামলে নিচ্ছি। তোমাকে যেটা বললাম সেটা করো। তা নাহলে তোমার বিপদ আরো বাড়বে। যদি এখানে শ্রাবণী চলে আসে তাহলে তোমাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না আমার। যাও চাঁদনী।

শ্রাবণের কথার কোন অর্থই বুঝতে পারল না চাঁদনী। শ্রাবণী আসলে কি এমন বিপদ হবে ওর? এটার যেন কোনো উত্তর নেই ওর কাছে। কিন্তু তবুও শ্রাবণের কথা মত দেরি না করে দ্রুত ছাদ থেকে নিচে নেমে গেল। আর সত্যি করেই গিয়ে দেখল ওই অদ্ভুত রুমের দরজাটা একদম খুলে রয়েছে। যেন ওর জন্যেই খুলে আছে সেটা। তবে রুমের মাঝের কোন কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভিতরটা যেন আলোকিত হয়ে আছে। শুধুই আলো ভিতরের কোন কিছুই দেখা যায় না। ও আর কোন কিছু না ভেবে দ্রুত সেই দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল। আর ঢুকতেই তিক্ষ্ম আলোকরশ্মি চোখে লাগল ওর।যার ফলে চোখ বন্ধ করতে বাধ্য হল। তারপর যখন চোখ খুললো তখন সামনের দৃশ্য দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেল ও।

চারিদিকে ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো ও এখন ঠিক ঐ রুমটাতে দাঁড়িয়ে আছে, যে রুমটায় এর আগেও এসেছিল সে। যে রুমে কোনো দরজা নেই। চারিদিকে শুধু দেওয়াল আর দেওয়াল। আর সেই দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে ওর কিছু অদ্ভুত ছবি। যে ছবি গুলোর কিছু দেখলে মনে হয় ওর নিজের ছবি। আর কিছু দেখলে মনে হয় যে অবিকল ওর মত দেখতে হলেও সেটা অন্য কেউ। চারিদিকটা ভালো ভাবে দেখে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল চাঁদনী। কি হচ্ছে কিছুই যেন বুঝতে পারছেনা সে। চারিদিকে দেখতে দেখতে হঠাৎ ওর চোখ আটকে গেল ফ্লোরে পড়ে থাকা ভাঙ্গা কাঁচের টোকরার দিকে। এই সেই ভাঙা কাঁচ যেটাতে পা লেগে কেটে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল চাঁদনী। আর জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে শ্রাবণের রুমে আবিষ্কার করেছিল সে। চাঁদনী গুটিগুটি পায়ে কাঁচগুলোর কাছে এগিয়ে গেল। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে সেগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। দেখল সেখানে কয়েক ফোঁটা রক্তও লেগে আছে। সেগুলো এখনও একদম তাজা। দেখে মনে হচ্ছে যেন একটু আগের পড়ে থাকা রক্ত এটা।

ভীষণ অবাক হলো চাঁদনী। কারণ এটা তো প্রায় তিন মাসের বেশি সময় আগের রক্ত। তাহলে এখনো কিভাবে একদম তাজা হয়ে থাকতে পারে? কথাটা ভেবেই রক্তটা নিজের হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো সে। আর তখনি আশ্চর্য জনকভাবে রক্তটা ওর হাতের সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল । যেনো ওর শরীরে ফিরে গেলো সেটা। এবার আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো চাঁদনী। সে ফ্লোর থেকে উঠে দাড়িয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। ভয়ে যেনো বুকটা ধুকপুক করছে তার।

তখনই চাঁদনী খেয়াল করলো ওর গলায় থাকা লকেট হঠাৎ করেই ভীষণভাবে আলোকিত হয়ে উঠল। আগের চাইতে যেন আরো বেশী আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে সেটা। সেটা একবার জ্বলছে তো একবার নিভে যাচ্ছে। যেন সেটা থেকে কোন ইঙ্গিত আসছে চাঁদনী প্রতি। ও বুঝতে পারল না এমন হওয়ার কারণ কি? কিন্তু ওটার দিকে তাকিয়ে যেন ভয়টা আরো বেড়ে গেল তার। তখনই খেয়াল করলো, হঠাৎ করেই একটা দেওয়াল ভেদ করে সেখান থেকে আলোকরশ্মি আসতে লাগল। চাঁদনী বুঝতে পারল এখান দিয়ে হয়ত দরজার সৃষ্টি হয়েছে। সে কোন কিছু না ভেবে দ্রুত সেই আলোর দিকে দৌড় লাগালো। তারপরে আলোর ভেতরে ঢুকতেই আবারো চোখ দুটো বুজে আসলো তার। একটু পরে যখন চোখ খুলে তাকালো তখন দেখল ওর সামনে আহত অবস্থায় শ্রাবন পড়ে থেকে কাতরাচ্ছে। আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে কান্না করছে মিতু। ও আর দেরি না করে ছুটে চলে গেল শ্রাবণ এর পাশে। সেখানে যেতেই শ্রাবণ ওর গলার লকেট টা স্পর্শ করল। আর সেটা থেকে নীল রঙের আলোকরশ্মি ছড়িয়ে পড়তে লাগলো শ্রাবণের পুরো শরীরে। ধীরে ধীরে শ্রাবণের শরীরের সব ক্ষত গুলো মুছে গিয়ে আবারও আগের মত স্বাভাবিক হতে শুরু করল। চাঁদনী চুপ করে সেসব দেখতে লাগল। কোন কিছু বলল না সে। বা কোন কিছু করলোও না। কারণ এর আগেও চাঁদনী দেখেছে শ্রাবণের শক্তি এই লকেট থেকে ফিরে আসে। আর এতদিন পর নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সামনে পেয়ে তার মুখের ভাষাও যেন হারিয়ে গিয়েছে। তার ওপর এখন সে অসুস্থ সেটাও আবার চাঁদনীর দোষে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আগামী পর্বে রহস্য খুলবে ইনশাআল্লাহ। এতদিন গল্পটা না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আমি অনেক বেশি অসুস্থ ছিলাম। এখনো পুরপুরি সুস্থ হই নাই। তার ওপর দেশের এমন পরিস্থিতিতে গল্প লেখার মত কোন ইচ্ছা ছিল না আমার। কেমন হচ্ছে জানাবেন সবাই। ধন্যবাদ
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here