ভ্রান্তির অগোচরে পর্ব ১৫

#ভ্রান্তির_অগোচরে
লেখা আশিকা জামান
পার্ট ১৫

ইদানীং কনস্ট্রিপেশন বড্ড বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে গেছে। দিনের ম্যাক্স টাইম ওয়াশরুমেই দৌড়াইতে হয়। সথে খাওয়া দাওয়ার রুচিটাও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। রিমুর আম্মু যথাসাধ্য ওর খাওয়াদাওয়ার প্রতি খেয়াল রাখে। সাথে রিমুর এক্সট্রা কেয়ারতো আছেই। কিন্তু এইভাবে অন্যের ঘাড়ে বসে,
বসে আর কতদিন। ১ মাসতো প্রায় হয়ে এলো। রিমুর বাবার সামর্থ্য আর কত ছোটখাটো সরকারি চাকরী করে দিন চলে। সাথে রিমুর বড় ভাই বাউণ্ডুলে গোছের বিয়ে করেছে ঠিকি কিন্তু সংসারের দায়িত্ব নিতে চরম অনীহা। উল্টো বউ ছেলে নিয়ে বাবার ভরসায় দিনাতিপাত করে। বউ এর কথায় উঠে আর বসে সাথে দিনে দুইবার অশান্তি না লাগালে যেন পেটের ভাত হজমই হয় না। তবে বর্তমান অশান্তির কারণ হিসেবে মিমকেই ঢালাওভাবে দায়ী করা যায়। ওরা কিছুতেই চায়না নিজেদের এত সমস্যার মাঝে আরেকটা উটকো ঝামেলাকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে। রিমুর ভাবী সুযোগ পেলেই ওকে খোঁচা মেরে কথা বলে।
এসবের প্রতিবাদ রিমু করতে গেলেই একদফা ঝগড়ার সৃষ্টি হচ্ছে।
মিমের ও আর ইচ্ছে নেই এইভাবে নিজের জন্য অন্যকাউকে কষ্ট দিতে। কয়েক যায়গায় চাকরীর ইন্টারভিউ দিয়েছে। এক যায়গায় না একযায়গায় ব্যাবস্থা হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এরপর ছোটখাটো একটা বাসা নিয়ে সংসার সাজাবে। ছোট্ট সংসার! ওর আর পুচকো বাবাটার সংসার। সেখানে শুধু বাবাটা আর ওর রাজত্ব। ওদের আর কোন টেনশান থাকবেনা তখন। সারা ঘর জুড়ে শুধু পুচকোটার আধিপত্য! পুচকোটা যখন ওকে মাম্মা মাম্মা করে ডাকবে তখন ওর কেমন লাগবে? ইশ্ ভাবা যায় ওর ও একটা পুচকো হবে। এলোপাথাড়ি স্বপ্নিল ভাবনায় মিম নিজের মাঝে নিজের হারাতে লাগলো। মাঝেমাঝে আবার পেটে হাত দিয়ে পুচকোর সাথে কথা বলাও হচ্ছে।
রিমুর চিৎকারে মিমের ভাবন ঘরে খিলটা,বেশ জোড়েসোড়েই লেগে গেল। একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিমুর দিকে তাকায়,
” হয়েছেটা কি, ভরদুপুরে ষাড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?”
রিমু মিমের দিকে আড়চোখে আপাদমস্তক তাকায়।
” আচ্ছা, মা ছেলে মিলে বুঝি যুক্তিপরামর্শ চলছিল। আমি এসে বোধ হয় বিরক্ত করলাম।মহারাণীর কপালের ভাজ দেখলে কিন্তু আবার আমি চরম ভয় পাই।”

” হ্যা সে একটু ব্যাঘাত ঘটিয়েছিস বটে। আচ্ছা তুই সবসময় কেন বলিস আমার ছেলে হবে? তোর এই ছেলে ছেলে বলায় এখন থেকে আমার কল্পনায় শুধু ছেলেই ধরা দেয়।
ধুর আমার এতো সাধের মেয়ের চেহারা কিছুতেই কল্পনায় আঁকতে পারিনা । এটা মনে হয় সংক্রামক রোগ। আর বাহকটা হচ্ছে তোর আজাইরা ভবিষ্যৎবাণি”

রিমু হি হি করে হাসতে লাগলো।
” আচ্ছা আমি কি কোন হাসির কথা বলেছি। তুই চেঁচাচ্ছিলি কেন সেটা আগে বল।”
মিম আবারো বিরক্তিবোধ করলো।

” আচ্ছা যা আরেকটা,ভবিষ্যৎ বাণী করি। ছেলে হওয়ার পর তোর আরেকটা গুলুমুলু মেয়ে হবে দেখিস!”

কথাটা শোনামাত্র বিরহ ব্যাথায় হৃদয়জুড়ে তুমুলবেগে ঝড় বয়ে গেল।
চোখের কোণে জল টপটপ করে পড়তে লাগলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় রিমু বুঝে উঠতে পারেনা ওকে কি বলে শান্তনা দেয়া উচিৎ। এই কথাটা যে কেন ও বলতে গেলো? মিমকে এভাবে কাঁদতে দেখে ওর বুকের ভেতর কেমন যেন একটা অস্বস্তি হতে লাগলো।

রিমু ওর হাতে ধরা খামটা মিমের দিকে এগিয়ে দেয়।
” মিম, এক্সট্রেমলি সরি। তোকে এইভাবে কষ্ট দিতে আমি চাইনিরে। খামটা খুলে দেখ, তোর কষ্টের দিন কিছুটা লাঘব হবে। প্লিজ অতীত মুছে ফেলে সামনের দিকে তাকা। যারা তোর মুল্য দেইনি তাদের কথা ভেবে কেন অহেতুক কষ্ট পাচ্ছিস।”

মিম চোখ মুছে হাতে ধরা খামটা হাতে তুলে নেয়। এপোয়েন্টমেন্ট লেটার!
অন্বেষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চাকরীটা তবে হয়েই গেলো। আনন্দে মিম রিমুকে জড়িয়ে ধরে। অন্তত মাথা গোজার একটা ঠাইতো এবার হবে। বাচ্চাকে নিয়ে বড্ড শান্তিতেই থাকবে ও হয়তো ওকে ওর ফ্যামিলির মতো লাক্সারিয়াস লাইফ দিতে পারবেনা। তাতে কি সুখতো দিতে পারবে। পরক্ষণেই মনটা বিষিয়ে উঠে কিসের ফ্যামিলি? কার ফ্যামিলি? ওর বাচ্চার ফ্যামিলি বলতে শুধু ও। আর কার প্রয়োজন নেই।
ঘুণাক্ষরেও কাউকে কোনদিন ওর আর ওর বাচ্চার হদিস জানতে দেবেনা।

————————————————————————————————————————————

” তোমাকে আমি একটা কথা বলবো বলবো করে আর বলে উঠতে পারিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বলতেই হবে?”

সোহেল চৌধুরী অফিসের ফাইল ক্লোজ করে স্ত্রীর মুখপানে তাকালেন। অন্যদিনের থেকে শিউলিকে একটু বেশীই চিন্তাগ্রস্ত লাগছে। সংসারের বেড়াজাল এখন আর ভালোলাগেনা। মিম চলে যাবার পর পুরো বাড়িটাই কেমন খালি খালি লাগে। ভাল কথাও শুনতে বড্ড কটু আর বেসুরো শোনায়। এখনো অতিমাত্রায় বিরক্ত লাগছে তবুও না শোনে উপায় নেই।
” বলো কি বলবে?”
শিউলি অন্যদিনের মতো কোন ভণিতা ছাড়াই সরাসরি বলতে লাগলো।
” সবুজ বেশ কতোদিন যাবৎ ফোন করে বাড়াবাড়িরকম ভাবে মিমের কথা জিজ্ঞেস করছিলো। আমি এটা সেটা বলে ওকে কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু এরপর থেকে মিমের সাথে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলো। বারবার বলতো মিমের ফোন বন্ধ কেন? ওকে বলো আমার সাথে কথা বলতে?”?
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সোহেল চৌধুরী বলে উঠলেন,
” তা তুমি কি বললে?”
” আমি কি বলবো তুমিই বল? এখন যদি আমি ওকে বলি যে মেঘ এতো এতো কান্ড ঘটিয়েছে। তাহলেতো ও পড়াশোনা সব গোল্লায় দিয়ে দেখবে দুই একদিনের মধ্যেই চলে এসেছে।”

” কেন তুমিতো সেটাই চাও। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক এটাই তো তোমার কাম্য ছিলো তাইনা! হঠাৎ ওর পড়াশুনো নিয়ে এইভাবে সিন্সেয়ার হয়ে উঠার বিষয়টা আমার কাছে কেমন জানি ভুতের মুখে রাম নাম মনে হচ্ছে।”

স্বামীর দিক থেকে শুরুতেই এইভাবে সুক্ষ্ম খোঁচা ধেয়ে আসবে এটা,বোধ হয় শিউলির কাম্য @ছিলোনা। আহত দৃষ্টিতে কপট রাগ দেখাতেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো আপাতত।
” তোমরা সমস্যা কি? যেইটা বলি সেইটাতেই উনার খোঁচা। এই বয়সে এসেও আমার খোঁচাও খেতে হয়। হায়রে কপাল!”

” নেহাৎ কপালকে দোষে লাভ নেই। তুমি সবুজকে কি বলেছো সেটা আগে বলো। এইসব হাংকিপাংকি প্যাঁচাল রেখে আসল কথাটা বলো।”
“আমি বলেছি মিম কাউকে কিছু না বলে বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে। আমরা অনেক খোজেও ওর কোন হদিস পাইনি। ব্যাস,এইটুকুও আরতো কি কিছুনা।”
সোহেল চৌধুরী রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মনে হচ্ছে দুই চোখের অগ্নিতে এখনি ভষ্ম করে দিতে পারলে বোধ হয় ভালো হতো।
” কেন চলে গেছে সেই কারনটাওতো বলার দরকার ছিলো। বললেনা কেন মেঘকে বাচানোর ধান্দাটাকি এখনো মাথায় ঘুরে? ”

” তাহলে আমি কি খুনোখুনি লাগিয়ে দিব। অদ্ভুত যুক্তি! ছেলেটা একা একা বিদেশ বিভুইএ পড়ে আছে ও কি এতোটা ধকল নিতে পারবে? ছেলেটা আসলেওতো ওকে বুঝিয়ে বলা যাবে সবটা তাইনা।”

স্ত্রীর যুক্তির পিছে অন্য কোন যুক্তি
দাড় করানোর ইচ্ছে আপাতত উনার নেই। এই মুহুর্তে স্ত্রীর সঙ্গ ও উনার কাছে বিরক্ত লাগছে
। নিঃশ্বব্দে উঠে চলে আসেন। অনেকদিন দূর আকাশের তারা গোনা হয়না।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here