মধুবালা পর্ব ১৩+১৪

#মধুবালা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৩

সপ্তাহ খানেক বাদে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করা হলো আশরাফিকে। হাতে পায়ের প্লাস্টার যদিও খোলা হয় নি কিন্তু এখন হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে পারে সে। ডাক্তারের নিষেধ ফ্র‍্যাকচার সম্পূর্ণ সেরে না উঠার আগ পর্যন্ত প্লাস্টার খোলা যাবে না। সময় মত হস্পিটালে গিয়ে খুলিয়ে আসতে হবে। এর মাঝে অবশ্য বেশ কয়েকবার চেকাপসহ, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সব প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়া হয়েছে।

জ্ঞান ফেরার পর হস্পিটালে যতদিন ছিলো প্রায়ই প্রতিদিনই অধীর আগ্রহে মধুর অপেক্ষা করে বসে থাকতো আশরাফি। কিন্তু একদিনও গেলো না মধু! মাঝখানে একদিন সোহাগের কাছ থেকে ফোন করে খবর নিলো কেবল। তারপর আর কোন যোগাযোগ হয় নি।
সোহাগ অবশ্য ফোনটা আশরাফিকেই দিতে চেয়েছিলো কিন্তু অভিমানে কথা বললো না আশরাফি! মধুও জোরাজুরি করে নি। যাবতীয় কথাবার্তা সোহাগের সাথেই সেরে ফোন রেখে দিয়েছিলো সে। রাগ করে আশরাফিও জানার চেষ্টা করলো না। কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই সমস্ত রাগ উধাও! ফের অস্থির হয়ে পড়লো সে। রোজ একবার করে মেহেরের খবর জানতে চাইতো সোহাগের কাছে। আর প্রতিদিনই সোহাগ হতাশমুখে না-সূচক উত্তর দিতো। অভিমানের পাহাড় জমতে জমতে পর্বত হয়ে গেলো আশরাফির কিন্তু মধুর খোঁজ জানা গেলো না!


বাসায় ফেরার দুদিনের মাথায়-ই নীলা তাঁর বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে দেখা করতে এলো আশরাফির সঙ্গে। অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে হস্পিটালেও গিয়েছিলো সে কিন্তু আশরাফির সাথে কথা বলার সুযোগ হয় নি। কড়া ঘুমের ইঞ্জেকশনের দেওয়ার ফলে সেদিন বেঘোরে ঘুমিয়ে ছিলো আশরাফি ।

সোহাগ এবং নাঈম দুজনে বাসায় ছিলো। দরজা খুলে নীলাকে দেখে প্রথমে অবাক হলো সোহাগ। চিনতে পারলো না। নীলার কাছ থেকে পরিচয় জানার পর হাসিমুখেই ভেতরে আসার আহ্বান জানালো তাদেরকে।

সবার প্রথমে ভেতরে ঢুকলো নীলা। ভেতরে ঢুকেই সালাম দিলো সে। তারপর একে একে সবাই ভেতরে ঢুকলো।
আশরাফি তখন খাটের ওপর আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো। ওদেরকে দেখে হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে বললো,’আরে তোমরা? কেমন আছো সবাই?’
একসঙ্গে সম্মতিসূচক জবাব দিলো সবাই,’ভালো আছি স্যার।’ কেবল নীলাই চুপ করে রইলো। বিষন্ন মুখে আশরাফির দিকে চেয়ে রইলো সে। আশরাফি চোখে চোখে পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো। আশরাফি বসতে ইশারা করলো সবাইকে। খাটের পাশে ছোট সোফায় বসতে বসতে একটা ছাত্র জিজ্ঞেস করলো,’অ্যাক্সিডেন্ট হলো কি করে স্যার?’

আশরাফি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাসলো। ছেলেটার প্রশ্নের জবাবে বললো,’অ্যাক্সিডেন্টলি অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। সেসব বাদ দাও। তোমাদের কি খবর? পড়াশোনা ঠিকমত চলছে তো?’

তারপর বেশ কিছুক্ষণ গল্প গুজবে হলো! তারপর ছাত্রছাত্রীদের বাসায় ফেরার পালা। একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো। নীলা গেলো না। সবার বেরিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করলো সে। সবাই বেরিয়ে গেলে খানিকটা তড়িঘড়ি করে বললো,’একটা কথা জিজ্ঞেস করবো স্যার?’

অবাক হলো আশরাফি। এতক্ষণ বোবার মত চুপচাপ বসে ছিলো নীলা। হঠাৎ সবাইকে লুকিয়ে কি জিজ্ঞেস করতে চায় সে? আশরাফি বিস্মিত কন্ঠে বললো,’কি কথা?’

নীলা সময় নষ্ট করলো না। দ্বিধা সংকোচ ভুলে এতদিনের চেপে রাখা প্রশ্নটা করেই ফেললো সে,’আপনি ব্রোথেলে কেন গিয়েছিলেন স্যার? আমি জানি কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে যাওয়ার মত লোক আপনি নন। কিন্তু কথাটা কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছিলাম না, তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করতে হলো।’

আশরাফি চুপচাপ শুনছিলো নীলার কথা। তার বলা শেষ হলে মুচকি হেসে বললো,’সব কথা কি সবাইকে বলা যায় নীলা? আমরা সবাই কি সবার ভেতরের কথা জানি ‘

মুখটা ছোট হয়ে গেলো নীলার। এই প্রশ্নটার জবাব না পেলে যে কিছুতেই শান্তি হবে তাঁর! হাজার চেষ্টা করেও আশরাফির ব্রোথেলে যাওয়ার ঘটনাটা মাথা থেকে সরাতে পারে নি সে। কিন্তু আশরাফি কথা শুনে বেশ বুঝতে পারলো জবাবটা নীলার কাছ থেকে এড়িয়ে যেতে চাইছে সে! চোখে পানি চলে এলো নীলার।দুচোখ ঝাপিয়ে আকস্মিক কান্না পেয়ে গেলো তাঁর! কিন্তু কেন পেলো সে বুঝতে পারলো না। বোঝার চেষ্টাও করলো না। চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো সে। মৌনমুখে বললো,’ঠিক আছে। আমি তাহলে আসি স্যার!’
তার অশ্রুসজল চোখদুটো নজরে এড়ালো না আশরাফির। পুনরায় ডাক দিলো সে,’নীলা শোনো?’

পিছু ফিরলো নীলা। ছলছল চোখে জিজ্ঞেস করলো,’জি?’

-‘বসো। তোমার প্রশ্নের জবাব দেবো।’

হঠাৎ আশরাফির ডিসিশন চেইঞ্জের কারণ বুঝতে পারলো না নীলা। বোকার মতন চেয়ে থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সে। আশরাফি মুচকি হেসে বললো,’ভেবেছিলাম বলবো না। কিন্তু পরে ভাবলাম কথাগুলো না বোঝার মতন ছোট তুমি নও। যদি কথাগুলো আমার পার্সনাল কিন্তু তোমাকে বলা যায়।’

নীলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,’বাইরে সবাইকে অপেক্ষা করছে। ওদেরকে বলে আসি?’

-‘এসো।’

সবাইকে অপেক্ষা করতে বলে তাড়াতাড়ি ফিরে এলো নীলা। আশরাফির মুখ থেকে কারণটা শোনার জন্য তর সইছিলো না তাঁর। ভেতরে ঢুকেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,’জি বলুন স্যার!’

তার আগ্রহ দেখে ভেতরে ভেতরে অবাক হলেও চেপে গেলো আশরাফি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’আমার ব্রোথেলে যাওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ হলো এক কাণ্ডজ্ঞানহীন, মূর্খ, মূঢ়চিত্ত, নিষ্ঠুর মেয়ের ভালোবাসা!’ কথার শেষ করে নীলার রিয়েকশন দেখার জন্য তাঁর মুখের দিকে চাইলো সে। নীলার চোখে একসাথে বিস্ময়, কৌতুহল এবং হতাশার সংমিশ্রণ! চোখ সরিয়ে নিলো আশরাফি। পূর্বের কথার রেশ ধরে বললো,’ওর নাম মেহের! ভার্সিটি লাইফের প্রেম আমাদের। তারপর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায় মেহেরের। মেহের অবশ্য রাজি ছিলো না কিন্তু নিরুপায় হয়ে বিয়েটা করতে হয়েছিলো ওকে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বিয়েরদিন রাতেই ওর প্রথম স্বামী মারা যায়। মৃগী রোগ ছিলো। বিষয়টা তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন গোপন করে গেছিলো তাঁর বাবা কাছে। তারপর আবার বিয়ে হয় মেহেরের। আমি যেই ব্রোথেলে গিয়েছিলাম সেখানকার মালিক ওর দ্বিতীয় স্বামী।’ কথাশেষ করে পুনরায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আশরাফি। নীলা হতবাক, বিমূঢ়, বাকরুদ্ধ! সহজ কথাগুলোর ভেতরে লুকিয়ে অসংখ্য রহস্যের গন্ধ পেলো সে! আরো কিছু শোনার অপেক্ষায় আশরাফির মুখের দিকে চেয়ে রইলো। আশরাফি তাঁর জিজ্ঞাসু দৃষ্টির বিপরীতে মুচকি হেসে বললো,’শেষ! এইটুকুই কাহিনী!’

মানসিক প্রশান্তি হলো না নীলার। আরো অনেক কিছু শুনতে ইচ্ছে করছে তাঁর! কিন্তু জিজ্ঞেস করতে সংকোচ হলো। তথাপি একটা কথা জিজ্ঞেস না করে পারলো না। সেটা হচ্ছে আশরাফি এখনো নীলাকে ভালোবাসে কি না।’

জবাবে আশরাফি নিঃসংকোচে বললো,’বাসি!’

-‘কিন্তু এটা তো অন্যায়। তাঁর অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। আপনার সরে আসা উচিৎ।’

আশরাফি মুচকি হেসে বললো,’ন্যায় অন্যায় বোঝার মত জ্ঞান আমার আছে নীলা! আমি কখনোই তাঁকে অসম্মান করি নি! বারবারই সরে আসতে চেয়েছি। কিন্তু মাথার ভেতর একগাদা প্রশ্ন কিলবিল করছে। সেগুলোর উত্তর জানতেই বারবার তাঁর কাছে ছুটে যাই।’

নীলা থতমত খেয়ে গেলো। কিঞ্চিৎ লজ্জায়, বিব্রত কন্ঠে বললো,’আমার মনে হলো আপনি ভুল করছেন তাই বললাম। অন্যকিছু মিন করে বলি নি।’

আশরাফি ফের হাসলো। বললো,’বুঝতে পেরেছি আমি। তোমার মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে তোমার কাছে!’

-‘প্রশ্ন?’

-‘হ্যাঁ প্রশ্ন। আমার কাছে মেহেরের সম্পর্কে জানার পর আর কি কিছু জানতে ইচ্ছে করছে তোমার? যেমন ধরো, মেহের দ্বিতীয় বিয়েটা কেন করলো? কেন সে আমার কাছে ফিরে এলো না? একটা ব্রোথেলের ওনারকেই কেন বিয়ে করতে হলো তাঁর? এসব কিছু। তারপর ধরো, সে আমাকে এখনো ভালোবাসে কি না কিংবা আমার কাছে ফিরে আসতে চায় কি না।’

জবাবে নীলা যা বললো তাতে ইতোপূর্বে তাঁকে নিয়ে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সমস্ত সংশয় দূর হয়ে গেলো আশরাফির। নীলার জন্য দুঃখবোধ করলো সে। ভুল করেছে মেয়েটা! মারাত্মক ভুল! সে এমন একজনকে ভালোবেসে বসে আছে যে কোনদিন তাঁকে ভালোবাসতেই পারবে না, নিজের সমস্ত ভালোবাসা অপাত্রে দান করে দেউলিয়া হয়ে গেছে সে! আর কাউকে ভালোবাসার ক্ষমতা তাঁর নেই!

আশরাফিকে করা নীলার প্রশ্নটা ছিলো মেহের আশরাফিকে ফিরে পেতে চায় কি না? প্রশ্নটা করার সময় নীলার চোখেমুখের অস্থিরতাই সবকিছু পরিষ্কার করে দিলো আশরাফির কাছে। তাঁর বুঝতে বাকি রইলো না কেন নীলা সবকিছু বাদদিয়ে ঠিক এই প্রশ্নটাই বেছে নিয়েছে?
তথাপি সিউর হওয়ার জন্য নীলার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করলো সে,’ডু ইউ লাভ সামওয়ান? ইজ ইট মি?’

তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো নীলার হৃদপিন্ডটা! আতংকে, ভয়ে, ফ্যাকাশে হয়ে গেলো তাঁর ফর্সা মুখটা। হাতের মুঠোয় আঙ্গুল প্যাচিয়ে কাচুমাচু করলো সে। আশরাফি সেদিকে একবার তাকিয়ে খুব সহজ গলাতেই বললো,’ভালোবাসাটা কোন অন্যায় কিছু নয় নীলা। কিন্তু তুমি যাকে ভালোবেসেছো সে তোমার জন্য রাইট চয়েস নয়। অ্যাম অ্যাবসলিউটলি আ রং পার্সন ফর ইউ!’

নীলা মাথা হেট করে বসে রইলো। এভাবে আশরাফির কাছে ধরা পড়ে যাবে সে ভাবতেই পারে নি। লজ্জায়,গ্লানিতে ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। আশরাফি তাঁর আনত মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’সহজ হও নীলা। আমি খুব ফ্র‍্যাংকলি তোমার সঙ্গে বিষয়টা আলোচনা করতে চাইছি। তোমার যদি কিছু বলার থাকে তুমি বলতে পারো।’

তারপরেও বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো না। ধীরে ধীরে সহজ হওয়ার চেষ্টা করলো সে। মুখ তুলে তাকালো। বিষন্ন কন্ঠে বললো,সবাই কি সঠিক মানুষকে ভালোবাসতে পারে? আপনিও তো ভুল মানুষকে ভালোবেসেছেন।’

-‘আমার পরিণতিটা কি খুব ভালো মনে হচ্ছে তোমার কাছে?’

-‘সবার পরিনতি তো আর একরকম হয় না।’

-‘সেটা অবশ্য ঠিক। কিন্তু একতরফা ভালোবাসার পরিনতি সবসময়ই অসম্পূর্ণ। সমস্তটাই যন্ত্রণা!’

এই কথার জবাবে নীলা তাঁকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে বললো,’কিন্তু আমি সেই যন্ত্রণা ভোগ করতে চাই। আপনার আমাকে ভালোবাসতে হবে না। আপনি শুধু আমাকে ভালোবাসার সুযোগ করে দিলেই হবে। কি জানি হয়ত আমাদের দুজনের এই যন্ত্রণায় ধরণটাই একদিন কাছে নিয়ে আসবে আমাদের। আর যদি না আনে তাতেও আপত্তি নেই আমার। আমি আপনাকে কোনকিছু নিয়ে জোর করবো না।’

-‘কেন শুধুশুধু কষ্ট বাড়াতে চাইছো নীলা? এখনো সময় আছে নিজেকে শোধরাও। একটা ভুল মানুষকে ভালোবেসে সারাজীবন কষ্ট পাওয়ার চেয়ে সময় থাকতে তাঁকে ভুলে যাওয়া উচিৎ।’

-‘একই কথাটা যদি আমি আপনাকে বলি?”

-‘আমার কথা আলাদা। সেই সুযোগ আমার আর নেই! অনেক আগেই ফতুর হয়ে গেছি আমি! কিন্তু তুমি চাইলেই নিজেকে বদলাতে পারো।’

নীলা হাসলো। বললো,’কে বলেছে আমি চাইলেই নিজেকে বদলাতে পারি? মোটেই পারবো না। আপনি একজনকে কেন হাজার জনকে ভালোবাসলেও আমি কেবল আপনাকেই ভালোবাসবো। আমাদের দুজনের যন্ত্রণার ধরণ যেমন একই তেমনি ভালোবাসার ধরণটাও ঠিক একরকম!’ জবাবে আশরাফি নিরুত্তরভাবে চেয়ে রইলো নীলার মুখের দিকে। প্রতিউত্তরে কিছু বলার মতন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলো না সে। কথা শেষ করে বেরিয়ে গেলো নীলা। চোখ বন্ধ করে ক্লান্ত নিশ্বাস ছাড়লো আশরাফি। বড্ড আফসোস হচ্ছে তাঁর! কি! অদ্ভুত পৃথিবী! চারদিকে ভালোবাসার ছড়াছড়ি অথচ হাত বাড়িয়ে গ্রহন করার ক্ষমতা কারো নেই!
.
.#মধুবালা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৪

পাশাপাশি বসে আছে নাঈম এবং সোহাগ। গতকাল নীলা চলে যাওয়ার পর সারারাত আশরাফিকে বুঝিয়েছে দুই বন্ধু। যেহেতু আড়াল থেকে নীলা এবং আশরাফির কথোপকথন খানিকটা শুনেছে তাঁরা তাই নীলা কি চায় সেটা বেশ বুঝতে পারলো। মেয়েটাকে তাদেরও ভালোই পছন্দ হয়েছে। তাই ওর সঙ্গে কোনভাবে আশরাফি একটা গতি করে দিতে চাইছে দুজনে!

বিয়ে করতে হলে সবসময় ভালোবাসা থাকা জরুরি নয়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমেও একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। নীলা এবং আশরাফির মাঝে সেই শ্রদ্ধাবোধ আছে! তাই আশরাফির উচিৎ নিজেকে একটা সুযোগ দেওয়া। এভাবে সঙ্গী ছাড়া কারো জীবন চলতে পারে না। জীবনে দুঃখ,দুর্দশা, হতাশা, গ্লানি আসতেই পারে কিন্তু তাই বলে নিজেকে একজায়গায় থামিয়ে রাখার মধ্যে কোনপ্রকার স্বার্থকতা নেই। সময় থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবটাই শুনলো আশরাফি। কিন্তু হ্যাঁ না হ্যাঁ না কিছুই জবাব দিলো না। উদ্ভান্তের মত চেয়ে ছিলো কেবল!


অনেকক্ষণ যাবত টানা বেজে চলে মধুর ছোট বাটন ফোনখানা। রিসিভ করছে না সে। মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে। সমস্ত দিন বিছানায় শুয়ে শুয়েই কাটিয়েছে। নাওয়া খাওয়া কিছুই হয় নি। সবেমাত্র ভাতের থালা নিয়ে বসেছিলো ঠিক তখনি ফোনটা বেজে উঠলো।
বিরক্ত হয়ে প্রথমে গা করলো না মধু। কিন্তু লাগাতর বেজেই চললো। অগত্যা খাবারের থালাটা কোলে নিয়েই ফোন রিসিভ করলো সে। নাম্বারটা অপরিচিত, কিন্তু কন্ঠটা নয়। ওপাশের মানুষটা ‘হ্যালো’ বলতেই মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল রক্তের একটা স্পন্দন বসে গেলো। কতদিন পর আবার মানুষটার গলা শুনলো! আবেগে গলার স্বর রুদ্ধ হয়ে এলো তাঁর। সারাদিনে বিষন্নতা নিমিষেই উবে গেলো। পাছে তার আনন্দটুকু আশরাফির কাছে ধরা পড়ে যায় সেই ভয়ে ফোন কানে দিয়েই নিঃশব্দে বসে রইলো। ওপাশ থেকে আশরাফি কোন জবাব না পেয়ে নরম গলায় বললো,’কেমন আছো মেহের?’

-‘ভালো আছি। কেন ফোন করেছো?’

-‘আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞেস করবে না?’

আশরাফির ভারী, বিষণ্ণ কন্ঠস্বর শুনে মধুর ভেতরে লুকিয়ে থাকা চাপা কষ্টটাকে পুনরায় জাগিয়ে দিলো। তথাপি নিজেকে সংযত করে নিলো সে। পূর্ববৎ দৃঢ়কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’কেমন আছো?’

-‘জানার বোধহয় খুব একটা আগ্রহ নেই তোমার।’

মনে মনে দুঃখ পেলো মধু। কিন্তু জবাব দিলো না। আশরাফি পুনরায় মলিন গলায় বললো,’ঠিক আছে। আমি কেমন আছি সেটা নাহয় জানতে চাও না কিন্তু একটু স্বাভাবিকভাবে তো কথা বলতে পারো?’

আর্দ্র হয়ে এলো মধুর কন্ঠস্বর। অনুতপ্ত কণ্ঠে বললো,’আমি স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছি।’

-‘বলছো না। তুমি আমার সঙ্গে খুব খারাপ ভাবে কথা বলছো।’

-‘তোমার যদি তেমন মনে হয় তবে আমার কিছুই করার নেই।’

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আশরাফি। মধুর কথার জবাবে কোনরকম প্রতিবাদ না করে বললো,’তোমাকে একটা কথা জানানোর ফোন করেছি।’

-‘কি?’

-‘আমি বিয়ে করছি!’

বোধকরি, কথাটা অসম্ভব ভেবেই বিশেষ গুরুত্ব দিলো না মধু। উদাসীন কন্ঠে বললো,’কবে?’

-‘এখনো কিছু ঠিক হয় নি। কিন্তু পাত্রী স্থির!’

তখনো কথাটা ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারলো না মধু। কিন্তু আচমকাই বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়ে গেলো। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’তাই নাকি?’

-‘হ্যাঁ। আমার ছাত্রী নীলা।’

প্রবল ধাক্কা খেলো মধু! ইতোপূর্বে যেই ভয়ের কথা ক্ষণকালের জন্যেও মস্তিষ্কের কোন ক্ষুদ্রতম পরিসরে উদয় হয় নি আজ হঠাৎ করেই সেই ভয় একমুহূর্তই তাঁর সমস্ত ত্যাগ,সংযম, আত্মবিশ্বাসের পাহাড়টাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো। মুহূর্তকালের জন্য কোন কথা বলতে পারলো না। থমকে গেলো! গোটা পৃথিবীটাকে মিথ্যে মনে হলো!

আশরাফি তার জবাবের অপেক্ষায় অধীরভাবে অপেক্ষা করেছিলো। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে অধৈর্য কন্ঠে বললো,’কি হলো মেহের? কথা বলছো না কেন?’

বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে আত্মসংবরণ করে নিলো মধু। জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,’ভালোই তো। বিয়ে করছো এ তো খুশির খবর। তা হঠাৎ এই সুমতির কারণ?’

-‘হাঁপিয়ে গেছি মেহের। ভীষণ হাঁপিয়ে গেছি। আর পারছি না।’

তাচ্ছিল্যসের সুরে হাসলো মধু। কই সে তো হাঁপায় নি? সেতো আজও মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসে মানুষটাকে। হাঁপিয়ে যাওয়া? এসব মিথ্যে বাহানা! নিজের ভেতরের সমস্ত হতাশা, রাগ, অভিমান গিয়ে আশরাফির ওপর জমা হলো। বিদ্রুপের সুরে বললো,’কিসে হাঁপিয়েছো শুনি?’

প্রশ্নটার জবাব সাথে সাথেই দিলো না আশরাফি। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,’কিসে যে হাঁপিয়েছি সেটা তো তুমি খুব ভালো করেই জানো মেহের!’

-‘না জানি না। জানার জন্যই প্রশ্নটা করেছি।’

-‘বেশ! তাহলে শোনো, তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে হাঁপিয়ে গেছি আমি। এই যন্ত্রণা আমার ভেতরটাকে প্রতিটা মুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে! আমি আর নিতে পারছি না! মাঝে মাঝে মনে হয় এবার বোধহয় সত্যিই চোখ বন্ধ করে কারো কাধে মাথাটা এলিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো! আর কিছু না হোক অন্তত একটুখানি সান্ত্বনা যদি পাওয়া যেত।’

-‘মিথ্যে কথা। কেবলমাত্র সান্ত্বনা খুঁজে বেড়ানোর জন্য কেউ বিয়ে করে না।’

আশরাফি হাসলো। তাঁর হাসিতে জোর নেই! কন্ঠে তেজ নেই। ভীষণ পরিশ্রান্ত, নিস্তেজ কন্ঠস্বর। ক্লান্ত নিশ্বাস ছেড়ে বললো,’তুমি কি রাগ করেছো মেহের?

থতমত খেয়ে গেলো মধুর। বিব্রত কন্ঠে বললো,’রাগ? রাগ করতে যাবো কেন? তুমি সত্যিটা স্বীকার করতে চাইছো না তাই বললাম।’

-‘তুমি ভালো করেই জানো তোমার কাছে মিথ্যে বলার মত ক্ষমতা আমার নেই।’

-‘বিয়েটা তাহলে সত্যিই করছো?’

-‘পালানোর মত যদি কোন পথ খুঁজে না পাই তবে হ্যাঁ!’

-‘ও!’ নিচের ঠোঁটটা সজোরে কামড়ে ধরলো মধু। টলমল করতে থাকা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো ভাতের থালায় ওপর। দাঁতের চাপে রক্তজমা হলো ঠোঁটে কিন্তু ‘উহ’ পর্যন্ত করলো না। তাঁর ভেতরে যেই যন্ত্রণার আগুন জ্বলছে তার তুলনায় এই সামান্য ব্যথা সত্যিই নগন্য! এর চেয়ে হাজারগুন বেশি ব্যথা হৃদয় নামক বস্তুটাকে হচ্ছে! কিন্তু মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারছে না।

ক্ষণকাল চুপ থেকে আশরাফি বললো,’তোমাকে দ্বিতীয়বার দেখার পর ভেবেছিলাম এই জীবনে আমার আর বিয়ে করা হবে না। কিন্তু পরে ভাবলাম একবার চেষ্টা করে দেখি। শুনেছি, পুরুষমানুষ চাইলে পারে না এমন কিছু নেই!’

-‘ঠিকই বলেছো। পুরুষ মানুষ চাইলেই সব পারে। আসলে মেয়েমানুষের জাতটাই বড্ড বিশ্রী, বেহায়া! একবার ভালোবেসেছে তো জন্মের মত ডুবেছে।’

তাচ্ছিল্যভরে হাসলো আশরাফি। পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ শান্ত কন্ঠে বললো,’হাসালে মেহের! আমাকে ভালোবেসে তুমি ডুবেছো? কবে, কখন,কোথায়?’ জবাব না দিয়ে নিঃশব্দে ফুঁপিয়ে উঠলো মেহের। চাইলেও উত্তরটা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। নির্মম বাস্তবতার কাছে আরো একবার নিষ্ঠুর ভাবে পরাজিত হলো তার বুকভর্তি ভালোবাসা !
আশরাফি ফের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিষণ্ণ মলিন কন্ঠে বললো,’সত্যিই যদি কেউ ডুবে থাকে সে আমি ডুবেছি মেহের। তুমি নও। কারণ আমার মতো যন্ত্রণা তোমাকে ভোগ করতে হয় নি। হ্যাঁ, একথা হয়ত ঠিক যে আমি বিয়ে না করলে তোমার হয়ত কিছুটা আত্মতৃপ্তি হতো। স্বামীকে গর্ব করে বলতে পারবে কেউ একজন সারাজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করেছিলো। কিন্তু আমি? আমার তো কোনদিকেই শান্তি নেই। আমি তো বিয়ে করলেও তোমাকে পাবো না, না করলেও পাবো না। তবে তুমি কি করে ডুবলে মেহের? একূলওকূল দুকূলেই তো আমি হতভাগা ডুবলাম!’

-‘তুমি বিয়ে করলেও আমার কোন ক্ষতি নেই, না করলেও আমার কোন আত্মতৃপ্তি নেই। সুতরাং এসব অর্থহীন কথা বলার কোন মানে হয় না। আমি জাস্ট কথার কথা বলেছি। নিজের কথা নয়।’

ফের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেলো। ফোন কানে দিয়ে চুপ করে রইলো আশরাফি। মধুর ভেতরটা তখন নিদারুণ যন্ত্রণায় জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছিলো। হতাশায় বুকের ভেতর জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেলো। নারীসুলভ ঈর্ষায় বিষাক্ত হয়ে গেলো সমস্ত শরীরটা। আশরাফি চুপ থাকাটা সেই জ্বালাটাকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিলো। শীতল কন্ঠে বললো,’রাখছি আমি।’

-‘তোমার কষ্ট হচ্ছে মেহের। আমি বিয়ে করবো শুনে সহ্য করতে পারছো না তুমি।’

করুণমুখে হাসলো মেহের! এতক্ষণে তবে তাঁর কষ্টে খবর মিলেছে! চাপা অভিমানে বুক ভার হয়ে এলো তাঁর! নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,’মোটেও না। আমার কষ্ট হতে যাবে কেন?’

-‘কারণ তুমি এখনো আমাকেই ভালোবাসো।’

-‘এককথা বারবার বলতে ভালো লাগে না। রাখছি আমি।’

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আশরাফি। হতাশ কন্ঠে বললো,’ঠিক আছে রাখো। কিন্তু তার আগে আমি কি করবো সেটা বলে দাও? সোহাগ, নাঈম দুজনেই আমাকে হুমকি দিয়েছে আমি বিয়ে না করলে বাড়ি ছাড়বে ওরা। আর কোন সম্পর্ক রাখবে না আমার সাথে! আমি নাকি পরস্ত্রীলোভী! অন্যের বউকে নাকি জোর করে নিজের কাছে আটকে রাখতে চাইছি। ওরা তোমাকে আমার পর ভাবছে মেহের..!’ শেষের কথাগুলো বলার সময় ধরে এলো আশরাফির গলা। কথা শেষ করতে পারলো না সে চাপা কষ্টে কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে এলো। ওপাশ থেকে মেহের তখন শক্ত কণ্ঠে বললো,’তো করো না বিয়ে! আমি কি আটকে রেখেছি? নাকি আমার বলার ওপর কি কিছু নির্ভর করে আছে?’

-‘এতদিনেও সেটা বুঝতে পারো নি?’

অভিমানে, যন্ত্রণায় মধুর চোখের পানি টপটপ করে গড়িয়ে পড়লো। জ্বালাভরা কন্ঠে বললো,’না পারি নি। এতদিন যা জেনে এসেছি সব ভুল। আজকে সমস্তটা একেবারে জলের মতন পরিষ্কার!’

-‘আমি বিয়ে করবো বলেছি বলেই আজ সব ভুল হয়ে গেলো?’

আশরাফি যুক্তির বিপরীতে পাল্টা যুক্তি খুঁজে পেলো না মধু। মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো তাঁর। না পারছে সহ্য করতে না পারছে কিছু বলতে! হতাশা তাঁকে মতিচ্ছন্ন করে দিলো। রাগত কণ্ঠে বললো,’তোমার যা ইচ্ছে ভাবো। আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। আমি ফোন রাখছি। একটুপর আরমান খেতে আসবে। ওর খাবার রেডি করবো।’

কথা শেষ করে ফোন কেটে দিলো মধু। সম্মুখের ভাতের থালাটাকে ঠেলে সরিয়ে দিলো সে। খাবার আর মুখ রচলো না। হাত ধুয়ে উঠে গেলো। বলা বাহুল্য, শেষে আরমানের কথাটা সে ইচ্ছাকৃত ভাবেই আশরাফিকে আঘাত করার জন্য বলেছে। তাঁর নিজের মধ্যে যেই ঈর্ষার আগুন জ্বলছিলো সেই আগুনের তাপ আশরাফি মধ্যেও ব্যাপ্ত করবার বৃথা প্রয়াস বলা চলে। কিন্তু প্রতিউত্তরে আশরাফি নির্বিকার মনোভাব সেই আগুনের শিখাকে দাবানলের মত তাঁর-ই সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে দিলো। বেদনার মত বুকের মধ্যে বাজতে শুরু করলো সমস্তটা। বাঁধভাঙা,উদ্বেলিত ক্রন্দনে ভেঙ্গে পড়লো সে। আশরাফি অন্য কারো হয়ে যাবে ভাবতেই বুকের ভেতরটা দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করলো!
অথচ এতদিন যাবত সে নিজেই তাই চেয়ে এসেছে! মনেপ্রাণে প্রার্থণা করে এসেছে আশরাফি যেন তাঁকে ভুলতে পারে, নিজের মত করে বাঁচতে শিখে, হৃদয়ের শূন্যস্থান পূরণের জন্য কে যেন নতুন কাউকে বেছে নেয় কিন্তু আজ যখন সেটা সত্যিই ঘটতে চলছে তখন আর সহ্য করতে পারলো আত্মবঞ্চনাকারী, নির্বোধ নারী হৃদয়। প্রবল অধিকারবোধ জেগে উঠলো বুকের ভেতর। সবকিছু ভেঙ্গেগুড়িয়ে তছনছ করে দিতে মন চাইলো।
নারী হৃদয়ের নিগূঢ় তাৎপর্য বাস্তবিকই বড় দুর্বোধ্য। অধিকার ছেড়ে দেওয়ার মধ্যেও একধরনের প্রচ্ছন্ন অধিকার বোধ কাজ করে এদের। নতুবা স্বেচ্ছায় যেই অধিকার মধু ছেড়ে দিয়েছিলো সেই অধিকার অন্য কারো হয়ে যাবে শুনে এত কষ্ট কেন হচ্ছে তাঁর? কেন যন্ত্রণায় সমস্ত হৃদয় জ্বলছে?
তার কারণ এই যন্ত্রণার পুরোটাই তাঁর একান্ত আপন, একান্ত নিজের মানুষটার প্রতি তীব্র ভালোবাসা এবং অধিকারবোধের বহিঃপ্রকাশ! চাইলেও আজ আর এই সত্যটা অস্বীকার করতে পারলো না মধু।
.
.
.
চলবে
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here