মধুবালা পর্ব ১৯+২০

#মধুবালা
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১৯

আরমান এসে গেছে। মধুকে রাতের খাবারের আয়োজন করতে বলে গোসলে ঢুকেছে সে। এদিকে তাঁকে ফিরতে দেখতে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো মধুর। বুক ধড়ফড় শুরু হলো। বলা বাহুল্য, তাঁর ভয়ের কারণটা অবশ্যই আশরাফি। হাতে পায়ে ধরেও ফিরে যেতে রাজি করাতে পারে নি মধু। এসেছে অবধি একইরকমভাবে জেদ ধরে বসে আছে। মধুর মুখ থেক স্বীকারোক্তি না শোনা পর্যন্ত কিছুতেই এখান থেকে যাবে না সে। নিরুপায় হয়ে সোহাগকে খবর দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো মধু। কিন্তু ফোন করার পর জানতে পারলো তাদের দুই বন্ধুকে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে এখানে চলে এসেছে আশরাফি। উপরন্তু আশরাফির নাম শুনতেই রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারালো সে। ক্রুদ্ধ কণ্ঠে মধুকে জানালো ভুলেও যেন আজকে বাসায় না ফেরে আশরাফি। ফিরলেই তাঁকে জুতোপেটা করা হবে। মধুকেও সেই উপদেশ দেওয়া হল। ক্ষিপ্তস্বরে জানালো, জুতো মেরে বিদায় করো বেহায়াটাকে। তারপর ওর শিক্ষা হবে!’

ফোন কেটে দিলো মধু। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুনরায় ঘরে ফিরে গেলো সে। খাটের ওপর আধোশোয়া হয়ে গুনগুন করছে আশরাফি। গানের সাথে তালমিলিয়ে আবার আঙুলও নাচাচ্ছে । মধুর বিছানাটাকে একেবারে রাজসিংহাসনের মত দখল করেছে সে। মধু আড়চোখে সেদিকে একবার তাকিয়ে আলনা থেকে কিছু খোঁজার বাহানা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। পাত্তা না পেয়ে মৃদু শীস দিলো আশরাফি। তৎক্ষণাৎ জ্বলে উঠলো মধু। সোহাগের কথাগুলো তখনো মাথা থেকে সরাতে পারে নি সে। তারওপর আরমান বাড়িতে আছে জানার পরেও আশরাফির ছেলেমানুষি আচরণ বেশ বিরক্ত করলো তাঁকে। দাঁতেদাঁত চেপে বললো,’খবরদার যদি একটা শব্দ করেছো। একদম খাটের নিচে ঢুকিয়ে বসিয়ে রাখবো। তারপর দেখবো কেমন শীস বাজাও!’

চুপ হয়ে গেলো আশরাফি। বাধ্য ছেলের মতন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো সে। তারপরই আবার মিনমিন করে বললো,’ঠান্ডা লাগছে মেহের। সেই কখন তোমাকে চাদরের কথা বলেছি কই দিলে না তো?’ জবাবে মধু অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ফের মুখে আঙুল দিলো সে। অতঃপর আরো কিছুক্ষণ মৌনমুখে বসে রইলো।

সুলেখা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে বললো,’মধুমা তোমাকে নিচে ডাকছে!’

-‘তুই যা, আমি আসছি।’ সংক্ষিপ্ত জবাব মধুর।সুলেখা চলে গেলে আলমারি থেকে একটা রঙীন চাদর করে আশরাফির দিকে ছুঁড়ে দিলো সে। গম্ভীর গলায় বললো,’এই নাও ধরো তোমার চাদর। আর যদি কিছুর কিছুর জন্যে বলেছো তো খবর আছে! তোমার ফরমায়েশ খাটার জন্য আমি এখান বসে নেই। অনেক কাজ আছে আমার।’ কথা শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো সে।
আশরাফি তখন চাদরটা নেড়ে চেড়ে দেখছিলো। দেখা শেষে বাধা দিয়ে বললো,’কিন্তু এই চাদরে তো হবে না!’

-‘হবে না মানে?’ মধু ভ্রু কুঁচকালো।

আশরাফি দুষ্টু হেসে বললো,’জ্যান্ত চাদর লাগবে।’

সিরিয়াস মুহূর্তে মশকরা! মেজাজ চটে গেলো মধুর। চাদরটা কেড়ে নেওয়ার জন্য তেড়ে আসছিলো সে কিন্তু মাঝপথেই অঘটন ঘটলো। তাড়াহুড়ার দরুণ পরিহিত শাড়ির সাথে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলো সে! কিন্তু না শেষমেশ ঠাঁই হলো গিয়ে একেবারে আশরাফির বক্ষদেশে! অতঃপর দুহাতে তাঁকে জড়িয়ে ধরে, তাঁর সর্বাঙ্গ জ্বালা ধরিয়ে বিজয়ীর ভঙ্গিতে হাসলো আশরাফি। হাসতেই হাসতেই বললো,’কারেক্ট! একদম ঠিক জায়গায় এসে পড়েছো!’ অপ্রত্যাশিত পরাজয়ে ক্ষণকালের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেলো মধু। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে।
আশরাফি ঠাট্টার সুরে বললো,’যেই জ্যান্ত চাদর চাইলাম অমনি একেবারে বুকে এসে পড়লে? উদ্দেশ্যটা কি হ্যাঁ? তোমার ভারে যদি আমার হাড়গোড় ভাঙ্গতো?’

-‘বেশ হতো। ছাড়ো আমাকে।’ ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করে দিলো মধু। কিন্তু আশরাফির শক্ত হাতের বাঁধনে নড়বার জো নেই তাঁর। রাগে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে বললো,’ছাড়ো বলছি!’

আশরাফি ঠোঁট কামড়ালো। মুচকি হেসে বললো,’ছাড়তে পারি। কিন্তু আমাকে একটা শর্ত আছে!’

-‘আমি তোমার কোন শর্ত মানবো না।’

মধুর জবাবে আশরাফির চেহারায় তেমন কোন পরিবর্তন হলো না। সে আগেই ধারণা করে রেখেছিলো এমন কিছুই বলবে মধু। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,’ফ্রিতে যদি একটা খুন করা যেতো তবে আমি কাকে খুন করতাম বলতে পারবে?’

জবাবটা মধুর জানাই ছিলো। গম্ভীর মুখে বললো,’আমাকে!’

আশরাফি জিভ কাটলো। বাচ্চা ছেলের মত দুদিকে মাথা নাড়িয়ে অনেকটা চুমু দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো,’নাআ! নাআ! তোমাকে কেন মারতে যাবো? তুমি হচ্ছো গিয়ে আমার ময়না পাখি। সোনা ময়না! তোমাকে তো শুধু আদর করবো। খুন করবো তো তোমার বাবাকে।’ কথা শেষ চুমু দেওয়া ভঙ্গিতে পুনরায় ঠোঁট দুটো গোল করলো সে। মধু চোখ রাঙালো। হাসি চাপতে গিয়েও হো হো করে হেসে ফেললো আশরাফি। হাসতে হাসতেই বললো,’ঠিক আছে। আমার কোন শর্ত মানতে হবে না তোমাকে। আমার পাওনা আমি জোর করে আদায় করে নিতে জানি।’

-‘ছাড়ো বলছি!’ ধমক দিলো মধু। আশরাফি তাঁর রাগের পাত্তা না দিয়ে পূর্বের তুলনায় আরো বেশি করে ঝাপটে ধরে বললো,’বলো,আই লাভ ইউ! তবে ছাড়বো।’ ত্বরিতে মুখ ঘুরিয়ে নিলো মধু। প্রতিবার করে বললো,’জীবনেও না!’

সোজা কথায় কাজ হবে না বুঝতে পেরে আশরাফি মুচকি হাসলো। খোঁচা মেরে বললো,’ঠিক আছে বলার দরকার নেই! চুপ করে থাকো। আমি এভাবেই তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকি। কতদিন পর কাছে পেয়েছি! একটু আদর সোহাগ না হলে কি চলে? তোমার ঐ আরমানও এসে দেখুক একঘরে কি করছি আমরা! আমার তো ভালোই লাগছে!’ শেষটায় কোমরের চাপ বাড়িয়ে দিলো সে। মধু নিরুপায় হয়ে বললো,’বলছি, বলছি। আগে ছাড়ো।’

-‘উহু! আগে বলো।’

-‘বেশ বলবো না।’, রাগে ঠোঁট ফোলালো মধু।

যদিও আশরাফি জানে ছাড়া পেয়েই মধু পল্টি নেমে তথাপি ছেড়ে দিলো সে। তার এই প্রিয়তমাটি বড়ই শক্ত ধাঁচের! ভাঙবে তবুও মচকাবে না।
তবুও মনের ভেতর কিঞ্চিৎ আশা ছিলো মধু হয়ত বলবে। কিন্তু না!
ছাড়া পেয়ে তড়িৎগতিতে উঠে দাঁড়ালো মধু। রহস্যজনক হাসি ফুটে উঠলো মুখে। এই হাসির মানে আশরাফি অজানা নয়! তাঁকে ধোকা দেওয়া হয়েছে বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে। বিরক্ত কন্ঠে বললো,’পারো তো কেবল আমার সঙ্গেই!’

মধু ভেংচি কেটে বললো,’হাদারাম!’

-‘ঘুরেফিরে এই হাদারামের কাছেই আসতে হবে।’

-‘আমার বয়েই গেছে!’, ফের ভেংচি কাটলো মধু।

মধুর কাছ থেকে কথা আদায় করে নেওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে ভেতরে ভেতরে মনঃক্ষুণ্ণ হলো আশরাফি! মুখ বিকৃত করে অবজ্ঞাসুরে বললো,’হ্যাঁ! এখন তো বয়ে যাবেই! যাও, যাও! তোমার ঐ হরিদাস পালের কাছে যাও! সেবা করো তাঁর। এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
বহু কষ্টে হাসি চেপে বেরিয়ে এলো মধু। মাঝে মাঝে আশরাফির এইসব ছেলেমানুষি কথাবার্তা ভালোই লাগে তাঁর! কিন্তু বুঝতে দেয় না! এদিকে সে বেরিয়ে যাওয়ার আশরাফি রাগে দুঃখে কিছুক্ষণ আরমানকে বকাবকি করে ফের আগের মত শুয়ে পড়লো।


আরমানকে খাবার দিয়ে সুলেখার কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো মধু। আজ রাতে আর কোনভাবেই নিজের ঘরে যাবে না সে। তার দৃঢ় বিশ্বাস একা পেলে তাঁর কাছ থেকে সব কথা আদায় করে নেবে আশরাফি। তখন আর কোন কিছুতেই শান্ত করা যাবে না তাঁকে। সেই ভয়েই মধুর পালিয়ে বেড়ানো। কিন্তু মাঝরাতেই ছটফট শুরু হয়ে গেলো তাঁর। আশরাফিকে একা ঘরে অভুক্ত রেখে এসেছে সে। কি জানি! তার অপেক্ষা করতে করতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে কি না! অন্ধকারে চুপিচুপি উঠে গেলো। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। বাতি জ্বালালো না।

শুয়ে পড়েছে আশরাফি। সে জেগে আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য ধীরে ধীরে খাটের পাশে গিয়ে বসলো মধু। রীতিমত অবাক হলো সে। আশরাফি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে! মধু কিছুতেই ভেবে পেলো না এরকম একটা জঘন্য জায়গায় কি করে একটা মানুষ এমন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে! অথচ নিচের ঘরগুলোর চেহারা একেবারে অন্যরকম! তারই মত কিছু পুরুষ নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে মেয়েদের শরীর নিয়ে! হয়ত আরমানও আছে তাদের দলে! আর এই মানুষটা কিনা দিব্যি ঘুমাচ্ছে! আশ্চর্য!
আশরাফির নিদ্রাহীন ক্লান্ত রাতের খবর না জানে বলেই মধুর অবাকের মাত্রাটা এত বেশি! কতদিন বাদে বুকের ওপর থেকে বোঝা নেমে গেছে আশরাফির! হালকা লাগছে নিজেকে! তাইতো মধুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে।
তাঁর ঘুমন্ত মুখ পানে চেয়ে নিরবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মধু। আপন মনেই হাসলো সে। ইউনিভার্সিটি নামকরা একজন প্রফেসর কি না একটা পতিতা মেয়ের ঘরে ঘুমাচ্ছে এই খবর জানাজানি হলে চারদিকে ধিক্কার পড়ে যাবে! মান সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না। অথচ এই নিয়ে কোন মাথাব্যথাই নেই পাগলটার। সে বসে আছে মধুকে ফিরে পাওয়ার জেদ ধরে! ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেকে জীবনটাকে তামাশা বানাতে চাইছে! কি করে তাঁকে ফেরাবে মধু! কি করে তাঁকে বোঝাবে সে যা চাইছে তা অসম্ভব!

নিরবে আশরাফির বুকের ওপর মাথাটা এলিয়ে দিলো মধু। আলতো করে চুমু খেয়ে তাঁর শরীরের ঘ্রাণ নিলো। বিষন্ন, আর্দ্র কণ্ঠে বললো,’কেন তুমি এত অবুঝ বলোতো? কেন তুমি এত স্বার্থপর? কেন তুমি কেবল নিজের সুখের কথাই ভাবো? তোমাকে কেউ ছোট করলে যে আমার কতটা কষ্ট হয় কেন তুমি সেটা বুঝতে পারো না? এমনিতেই আমার জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে তোমাকে। আজ তোমার বন্ধুরা বলছে কাল জানাজানি হলে অন্যলোকে বলবে! আমি কি করে তোমার অসম্মান সহ্য করবো? তুমি আমাকে এই কোন পরীক্ষায় ফেললে? ‘

বলতে বলতেই কেঁদে ফেললো সে। বুকের ওপর শক্ত কিছুর নড়াচড়া টের পেয়ে সচেতন হলো আশরাফি। ঘুমঘুম চোখে ডাক দিলো সে,’মেহের?’

মধু অভিমানে, গ্লানিতে মাথা ঝাঁকিয়ে কান্নাস্বরে বললো,’মেহের নয়। বলো মধু!.. মেহের মরে গেছে।’

-‘কক্ষনো না!’

মধুর কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। অভিযোগের সুরে বললো, ‘তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম বলেই বুঝি এভাবে আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানানোর পণ করেছো ? নিজের ক্ষতি করে আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছো? কেন? তারচেয়ে বরং একবারেই মেরে ফেলো না!’

আশরাফি হাসলো। মধুর অভিমানের বিপরীতে কিছু বলতে যাচ্ছিলো সে, মধু তড়িঘড়ি করে তাঁর ডান হাতটা নিজের মাথায় রেখে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,’আমি কিছুতেই তোমার সেই আশা পূরণ হতে দেবো না। আমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করে তুমি আর কখনো এখানে আসবে না। যদি আসো তবে আমার মরা মুখ দেখবে!’

ঝট করে হাতের বাধন আলগা হয়ে গেলো আশরাফির। বিস্ফোরিত নয়নে অবাক হয়ে মধুর দিকে চেয়ে রইলো সে। মূর্তির মতোন জমে গেলো একেবারে। ক্ষণকাল চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বললো,’তবে আগে কেন মরলে না? কেন এখানে পড়ে রয়েছো? এখানে পড়ে থাকার চেয়ে তো মরে যাওয়াও ভালো।’

-‘তারমানে আমি মরি বাঁচি তাতে তোমার কিচ্ছু আসে যায় না। তুমি আসবেই, তাইতো?’

-‘তুমি আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলে আর আসার প্রয়োজন পড়বে না।’

জবাব না দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো মধু। শেষচেষ্টা বলতে এইটুকুই ছিলো! এবার কি হবে? কি করবে মধু? কি করে আশরাফিকে বোঝাবে সে? হাতের মুঠোয় আশরাফির শার্ট খামচে ধরে পাগলের মত কান্না শুরু করে দিলো সে। বাধা দিলো না আশরাফি। অনেক দিনের জমানো কান্না সব বেরিয়ে আসুক। বুকের ভার নেমে যাক! মধু কাঁদতেই কাঁদতেই ব্যাকুল হয়ে বললো,’তুমি চলে যাও প্লিজ। আমাকে আমার মত থাকতে দাও!’ আশরাফি জবাব দিলো না। সস্নেহে ডান হাতটা মধুর মাথায় রাখলো কেবল!
.#মধুবালা
অরিত্রিকা আহানা
#পর্বঃ২০

মুখোমুখি বসে আছে সোহাগ, আশরাফি এবং নাইম। আশরাফির চোখে উৎকন্ঠা! বন্ধুরা তাঁর কথাগুলো বিশ্বাস করেছে কিনা সেটা নিয়ে টেনশনে আছে। বাকি দুজনের মুখ গম্ভীর। বোঝাই যাচ্ছে ইতোপূর্বে আশরাফির বলা কথাগুলো ঠিক হজম করে উঠতে পারে নি তারা। দুজনেই গভীর চিন্তায় নিমগ্ন! আশরাফির বুকের ভেতরটা ঘড়ির কাটার মত টিকটিক করছে! বন্ধুরা কিছু বলছে না কেন?
নিরবতা সোহাগই প্রথম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,’নীলাকে কি জবাব দিবি?’

কিঞ্চিৎ ভরসা পেলো আশরাফি। তবে অস্বস্তি পুরো গেলো না। আসল ভয় নাঈমকে নিয়ে। একটা না একটা খুঁত সে বের করবেই। তারওপর মেহেরকে তো সহ্যই করতে পারে না। তাঁর সূচালো দৃষ্টির বিপরীত একটুখানি হাসলো আশরাফি। সোহাগের কথার জবাবে আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,’ওকে আমি ম্যানেজ করে নিতে পারবো। তোরা দুজন শুধু আমার পাশে থাকলেই হবে।’

জবাব দিলো না সোহাগ। যদিও ভেতরে ভেতরে তাঁর কোন আপত্তি নেই তথাপি নাঈমের বক্তব্য শোনার অপেক্ষা রইলো। নাঈম ভেবেচিন্তে সঠিক জবাব দিতে পারবে।

নাঈম পূর্বের মতই গম্ভীর মুখে বসে আছে। মধুর বিয়ে হয় নি কথাটা সে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাঁর ধারণা আবারো নতুন করে কোন খেলা খেলছে মধু। এমনিতেও সে আগে একবার আশরাফিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো সে। এত সহজে তাঁর ওপর বিশ্বাস করা যায় না। হতে পারে টাকার জন্যই আরমানকে ছেড়ে এখন আবার আশরাফিকে ধরার পায়তারা করছে! বিচিত্র কিছু নয়!

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নাঈম। আশরাফির মা, বাবা কেউ নেই। মেহের চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্ট পেয়েছে সে। নাঈম চায় না তাঁর বন্ধুটিকে নতুন করে আবার কোন কষ্ট পাক। সে চায় তাঁর বন্ধুটি যেন সবসময় ভালো থাকে। এমন একজনকে নিজের জীবন সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেয়, যে তাঁর সমস্ত সুখ, দুঃখে একান্ত আপন জনের মত পাশে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু মেহেরের ওপর সেই বিশ্বাসটা নেই নাঈমের। একমাত্র নীলাই পারতো আশরাফির পুরোনো দুঃখগুলো দূর করে তাঁর সঙ্গে সুস্থ একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে। পাগলের মত ভালোবাসে আশরাফিকে মেয়েটা। অথচ আশরাফি? সবচেয়ে বড় অবিচারটা কিনা তার সঙ্গেই করছে। চুপ করে রইলো সে। আশরাফি বন্ধুর চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো,’কিছু বলছিস না যে?’

-‘আমি আর কি বলবো? তোর লাইফ, তোর ডিসিশন।’, হতাশ শোনালো নাঈমের কন্ঠস্বর।

আশরাফি বুঝলো এসব অভিমানের কথা। পুনরায় নরম গলায় বললো,’প্লিজ দোস্ত। মেহেরের কথাটা একবার ভাব?’

-‘ওর কথা ভাবার জন্য আমি বসে নেই রাফি। একান্তই যদি কাউকে নিয়ে ভাবতে হয় তাহলে আমি তোর কথা ভাববো। কারণ তুই আমার বন্ধু। ওর কথা কেন আমি ভাবতে যাবো?’, রুক্ষস্বরে জবাব দিলো নাঈম।

আশরাফি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,’ঠিক আছে আমার জন্যই নাহয় ওর একটু কথা ভাবলি?’

-‘সেটা তো ভাবছিই। আর সেইজন্যই বলছি, ঐ মেয়ে কোন দিন থেকেই তোর উপযুক্ত নয়।’

-‘আমি তো তোকে বলেছি আরমানের সঙ্গে ওর বিয়ে হয় নি। ওকে জোর করে আটকে রেখেছে শয়তানটা।’

-‘ওকে দেখে কিন্তু আমার একবারও মনে হয় নি আরমান ওকে জোর করে আটকে রেখেছে। জোর করেই যদি আটকে রাখে তবে কেন আরমানকে ও নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিলো?’

আশরাফি অসহায় চোখে সোহাগের দিকে চাইলো। সোহাগও বিভ্রান্ত! নাঈমের যুক্তিটা ফেলে দেওয়ার মতন নয়।

নাঈম গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,’তুই ওর ভালোবাসায় অন্ধ। তাই ওর সব কাজ তোর কাছে জাস্টিফাইড। কিন্তু সবার কাছে এমনটা নাও হতে পারে। তুই তো গিয়েছিলি ওর বাপের কাছে কই তিনি তো মেয়ের অবস্থার কথা জানার পরেও একবারও মেয়েকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন নি? কেন বলেন নি জানিস?’

-‘সমাজের ভয়ে।’

নাঈম ব্যঙ্গাত্মক হাসলো। বললো,’ওসব বাহানা। সবাই তোর মত বোকা নয়। উনি ঠিকই বুঝেছেন উনার মেয়ে কেমন!’

আশরাফি হতাশমুখে চেয়ে রইলো। সেদিন মধুর ওখান ফিরে ইরতিয়াজ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলো সে। ভেবেছিলো নিজের মেয়ে ঐ নোংরা জায়গায় আছে শুনলে তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাবা হিসেবে নিশ্চয়ই সহযোগিতা করবেন তিনি। কিন্তু হলো তাঁর উল্টো। সামাজিকভাবে ছোট হওয়ার ভয়ে তিনি তাঁর জীবিত কন্যাকে উল্টো মৃত বলে ঘোষণা দিলেন। বিস্ময়ে, রাগে, হতবম্ভ হয়ে গিয়েছিলো আশরাফি!
আপন জন্মদাতা পিতা কি করে এতটা স্বার্থপর হতে পারে? এতদিন মা বাবা না থাকায় নিজেকে হতভাগা ভাবতো সে কিন্তু মেহের তো তাঁর চাইতেও বেশি হতভাগা। ওর তো বাবা থেকেও নেই!
ইরিতিয়াজ চৌধুরীর প্রতি একরাশ ঘৃণা আর ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে এসেছিলো আশরাফি। মনে মনে হাজার বার থুতু নিক্ষেপ করেছিলো লোকটার নির্লজ্জ, নিষ্ঠুর স্বার্থপরতার প্রতি! কিন্তু আফসোস এর চেয়ে বেশি কিছুই করতে পারলো না সে। কারণ শত হলেও লোকটা মেহেরের বাবা!

বন্ধুর বিষণ্ণ মুখপানে চেয়ে নাঈম মোলায়েম কন্ঠে বললো,’মেহেরের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন সম্পর্ক নেই। কোন শত্রুতাও নেই। যেটুকু চিনি সেটা কেবল তোর খাতিরে।
তাই আমার কাছে যেটা যুক্তিসঙ্গত, যেটা ঠিক আমি সেটাই বলেছি। বিশ্বাস কর, তুই আবার একই ভুল করছিস রাফি। ওই মেয়ে আবারো বড়সড় একটা ব্লাফ দেবে তোকে।’

-‘কেন তোর এসব মনে হচ্ছে?’, অধৈর্য, মৌন শোনালো আশরাফি কণ্ঠস্বর।

-‘কারণ ঐ মেয়ে ঘর করার মতন মেয়ে নয়। তুই নিজেই ভেবে দেখ, তোর সঙ্গে ভালোবাসার নাটক করে শেষে বিয়ে করলো গিয়ে বাবার পছন্দের পাত্রকে। সেই ছেলে মারা যাবার পর নতুন করে আরমান। তারপর আবার ঘুরে ফিরে তোর কাছেই আসতে চাইছে। আমি নিশ্চিত ঐ মেয়েই তোকে কথাগুলো বলার জন্য সুলেখাকে শিখিয়ে দিয়েছে! খোঁজ নিলে দেখা যাবে সত্যিই আরমানের বিয়ে হয়ে গিয়েছে ওর!’

-‘ও তো এখনো বলছে আরমানের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে। ওকে যেন ওর মত থাকতে দেই। আমার কাছে ফিরে আসার কথা তো একবারও বলে নি।’

-‘এসব করে তোর কাছে মহৎ হতে চাইছে। জানে নিজমুখে বললে তুই সন্দেহ করবি তাই।’

-‘তুই আমাকে কি করতে বলছিস?’

-‘নাথিং। আমার যা বলার ছিলো বলে দিয়েছি। তুই কি করবি সেটা তোর ব্যপার। আফটার অল, আমরা কেবল তোর বন্ধু, গার্জিয়ান নই। তোর ব্যপারে মতামত দেওয়ার অধিকার হয়ত আমাদের আছে কিন্তু সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই।’

মধুকে নিয়ে প্রতিনিয়ত নাঈমের এমন গা ছাড়া কথাবার্তাগুলো আর সহ্য করতে পারছিলো না আশরাফি। চুলের মুঠো শক্ত করে চেপে ধরে অধৈর্য কন্ঠে বললো,’একটা মেয়ে ভাগ্যের দোষে নোংরা একটা জায়গায় গিয়ে পড়েছে। তাই বলে ওর কষ্টের কোন দাম নেই? তোরা কি চাস ও মরে যাক?’

-‘ভাগ্যের দোষে? ভাগ্যের দোষে তোকে ছেড়ে গিয়েছে? আশ্চর্য! তুই এটা বললি? আই কা’ন্ট বিলিভ দিজ!, হতবিহ্বল শোনালো নাইমের কণ্ঠস্বর। বিস্মিত কন্ঠে বললো,’অথচ তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো বলে আজ পর্যন্ত ঐ মেয়েকে ক্ষমা করতে পারি নি আমি। কারণ তোর কষ্টগুলো নিজের চোখে দেখেছি। কিন্তু এখন তো দেখছি যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। তুই তো সব ভুলে গিয়েছিস! ঐ মেয়ে তোর সঙ্গে কি কি করেছে সব ভুলে গেছিস তুই। বাহ! ভালো। মহৎ প্রেমিক! খুব ভালো।’, শেষটায় অনেকটা ঠাট্টার মত শোনালো নাঈমের কণ্ঠস্বর।

রাগতে গিয়েও নিজেকে শান্ত করে নিলো আশরাফি। তিরস্কারটা গায়ে মাখলো না। বন্ধুর রাগটা ঠিক কোনজায়গায় এবার বোধহয় বুঝতে পেরেছে সে। চোখ বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে একটাই প্রার্থনা করলো সে তাঁর বন্ধুটি যেন সারাজীবন এমনই থাকে। তাঁকে যেন কোনদিন আশরাফির মত কষ্ট সহ্য করতে না হয়। নতুবা সেও বুঝতো ,কেন মেহেরকে ব্রোথেলে দেখে আশরাফির রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে! কেন তাঁকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত ছটফট করছে আশরাফি? কেন এতকিছুর পরেও পাগলের মতন মেহেরকেই চায় সে! কিন্তু তবুও আশরাফি কক্ষনো চাইবে না তাঁর বন্ধুর জীবনে কখনো এমনটা ঘটুক। কারণ, এই যন্ত্রণা বড় মারাত্মক! মৌমাছির হুলের মত প্রতিনিয়ত দংশন করে। এখনো নাঈম পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখি মানুষ! কারণ ভালোবাসার যন্ত্রণা তাঁকে উপলব্ধি করতে হয় নি। সারাজীবন যেন এমনটাই থাকে!’

নাঈমের কথার জবাবে শান্ত সুরে বললো,’যাকে নিয়ে তোদের এত অভিযোগ সে কিন্তু মুখ বুঝে সব মেনে নিয়েছে। একবারও আমার কাছে ফিরে আসার কথা বলেনি। আমি ওর গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছি তবুও সত্যিটা স্বীকার করে নি। অথচ তোরাও জানিস ও যদি মুখফুটে একবার ফিরে আসার কথা বলতো পৃথিবীর অন্য কারো কথা শোনার প্রয়োজন আমার পড়তো না। এর পরেও কেন তোর মনে হয় ওর মহৎ সাজতে চাইছে?’

নাঈম হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,’আমি আর এই বিষয়ে কিছুই বলবো না। তুই হয়ত আমার ওপরে বিরক্ত হচ্ছিস কিন্তু বিশ্বাস কর, তুই যদি ওকে নিয়ে সত্যি সুখে থাকতে পারিস আমার কোন দ
আপত্তি নেই। কিন্তু আমার ভয় হয়! আবারো যদি আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে?

এই প্রশ্নের জবাবে আশরাফির তড়িৎগতিতে উত্তর দিয়ে বললো,’ঘটবে না। কারণ আমি জানি, মেহের এখনো আমাকেই ভালোবাসে!’


-‘আমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু অপহরণের মামলা করেছে সে।’ হুঙ্কারর দিয়ে উঠলো আরমান। ভয়ে কেঁপে উঠলো মধু। ‘সে’বলতে আশরাফিকেই বুঝিয়েছে আরমান। এত করে তাঁকে বারণ করে দেওয়ার পরেও ঘুরেফিরে সাপের লেজে পা দিয়েছে আশরাফি। আরমানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে।
আরমানের চোখজোড়া ভয়ানক লাল হয়ে আছে। নির্দেশের সুরে বললো,’জিনিসপত্র গোছাও। আজই বাড়ি ছাড়বো আমরা!’

-‘কিন্তু যাবো কোথায়?’,অবাক হলো মধু।

-‘নতুন একটা বাড়ি জোগাড় হয়েছে।’ গম্ভীর গলায় জবাব দিলো আরমান। তাঁর ভেতরে রক্ত টগবগ করছে। সামনে পেলে এইমুহূর্তেই আশরাফিকে খুন করতো সে। ইতোমধ্যে লোকও লাগিয়ে দিয়েছে তাঁকে মারার জন্য। মধু এসব জানে কিচ্ছু না। কিন্তু আরমানের কথাবার্তায় সন্দেহ হচ্ছে তাঁর। আরমান মানুষ ভালো নয়! মধুর সঙ্গে কিছু না করলেও এই ঘটনার পরে আশরাফিকে সে ছেড়ে দেবে না। তাই আগে থেকেই সাবধান করে দিতে হবে আশরাগি। এদিকে আরমানও আছে অন্য চিন্তায়। এখন আর মধুকেও বিশ্বাস করতে পারছে না সে। কি জানি আশরাফির সাথে হয়ত সেও জড়িয়ে আছ! অতএব বুঝে শুনে কাজ করতে হবে। নতুন বাড়ির ঠিকানাটা এইমুহূর্তে বলা যাবে না মধুকে। মধুও জিজ্ঞেস করলো না।
সুলেখাকে নিয়ে চুপচাপ ঘরে চলে এলো। আরমানকে নিয়ে অনেক বেশি ভয় হচ্ছে তাঁর। লোকটা যদি সত্যি সত্যি আশরাফির কোন ক্ষতি করে দেয়?
অসহ্য লাগছে মধুর! যাওয়ার সময় আশরাফির হাতে পায়ে ধরার বাকি রেখেছিলো সে। কত করে বুঝিয়েছে এবার গেলে আর যেন কখনো এখানে না আসে। মধুর কথা যেন মাথা থেকে ফেলে দেয়! কিন্তু যেই কপাল যে মাথা! ঘুরেফিরে নিজের মর্জিমতনই কাজ করেছে আশরাফি। সুলেখা কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,’এবার কি হবে মধুমা?’

মধু জবাব না দিয়ে বললো,’কি আর হবে। মরণ ছাড়া দেখছি আমার আর উপায় নেই।’

অতঃপর সুলেখাকে দরজার বাইরে পাহারায় বসিয়ে আশরাফিকে ফোন করলো সে। দুবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো আশরাফির। ‘ব্যস্ত আছি’ বলে সঙ্গে সঙ্গে ফোনটাও কেটে দিলো। মধুর টেনশনে হাত পা কাঁপছে। বুক ধড়ফড় করছে! আশরাফি নিজেও জানে না কতটা ভয়ঙ্কর খেলায় নিজেকে জড়িয়েছে সে। পুনরায় ফোন করলো।

আশরাফি রিসিভ করে নরম গলায় বললো,’ব্যস্ত আছি তো। ফ্রি হয়েই ফোন দিচ্ছি তোমাকে!’

সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ করে উঠলো,’খবরদার ফোন রাখবে না বলছি। কথা আছে তোমার সঙ্গে!’

আশরাফি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ক্লান্ত স্বরে বললো,’আচ্ছা রাখবো না। বলো কি বলবে?’

-‘আরমানের নামে মামলা করেছো কেন তুমি?’

-‘তুমি আমাকে বাধ্য করেছো।’

-‘আমি?’ অবাক হলো মধু। তারপর না থেমেই বললো,’আমি তোমাকে বলেছি তুমি ওর নামে মামলা করো?’

-‘না বলো নি। কিন্তু তুমি যদি ভালোয় ভালোয় আমার সঙ্গে ফিরে আসতে রাজি হতে তাহলে আর এই ঝামেলাটা হতো না। দরকার হলে আমি আরমানকে টাকা দিয়ে দিতাম! ওর মুখবন্ধ থাকতো।’

-‘তুমি ওর নামে মামলা করলে যে আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো এই কথা তোমাকে কে বলেছে?’

-‘কেউ বলা লাগে না। ও একবার জেলে গেলেই তোমার সব নাটক শেষ হয়ে যাবে।’

-‘ও যে তোমাকে মারার জন্য লোক লাগিয়েছে সেটা জানো?’, আন্দাজেই ঢিলটা ছুঁড়লো মধু।

-‘তাই নাকি?’ হাসলো আশরাফি।
মধু অসহ্য রাগে, অভিমানে ফুঁপিয়ে উঠে বললো,’তুমি কি চাও? আমি মরে যাই?’

আশরাফি ফের হাসলো। বললো,’এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার সঙ্গে সোহাগ আছে, নাঈমও আছে। মারা এত সোজা নাকি? এনিওয়ে কান্না শেষ হলে ফোনটা রাখো। আমার হাতে এখন সময় নেই।’

-‘কোন মহৎ কাজটা করছো শুনি?’

-‘সেটা একটু পরই বুঝতে পারবে।’ ফোন রেখে দিলো আশরাফি। মধু হতবম্ভ হয়ে বসে রইলো। আবার নতুন করে কি ঝামেলা বাঁধানো চেষ্টা করছে আশরাফি? উফ! ভয়ে দমবন্ধ হয়ে আসছে মধুর! চোখবন্ধ করে প্রার্থনা করলো সে,’ইয়া আল্লাহ! তুমি ওকে রক্ষা করো। ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়।’
.
.
.
চলবে
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here