মন পাড়ায় পর্ব ১৮+১৯

#মন_পাড়ায়
#পর্ব_১৮
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

দূর থেকেই জানাব তোমায় হৃদয়ের আখ্যান
মেঘের খামে লিখে পাঠাবো ভালোবাসার উপাখ্যান।’

প্রভা অর্কের দিকে তাকিয়ে রইলো বিস্ময় নিয়ে। আবার চোখ নামিয়ে এক পা পিছনে যেতে নিলেই অর্ক প্রভার পিঠে হাত রেখে বলল, “আমার থেকে সবাই দূর যেতে চাও কেন শুধু? একদিকে সৈকত অন্যদিকে তুমি।”

প্রভা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অর্কের দিকে। সে বুঝতে পারছে যে সৈকতের জন্য অর্কের কষ্ট লাগছে। কিন্তু তার ভীষণ অস্বস্তি লাগছে অর্কের কাছে আসায়। যা তার মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

অর্ক প্রভার মুখে অস্বস্তিপূর্ণতা স্পষ্ট দেখতে পারলো। সে প্রভাকে ছেড়ে এক পা পিছিয়ে গেল। মৃদু কন্ঠে বলল, “সরি, একটু আগে সৈকতের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল….সরি।”

অর্ক হাঁটতে শুরু করল। প্রভা হাঁটল না। সে সেখানেই দাঁড়িয়েই বলল, “চলুন ফেরত যাই।”

অর্ক ফিরে তাকালো প্রভার দিকে। তার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল, “তুমি বলেছিলে সামনে ছোট একটা বিল আছে। গন্তব্য না দেখা পর্যন্ত যাওয়া হচ্ছে না।”

প্রভা নিজের হাতের দিকে তাকালো। ছাড়াতে চাইলো। কিন্তু অর্ক তো তার স্বামী, কোন কারণ দেখাবে তার অস্বস্তির?
প্রভা হাঁটতে শুরু করলো। ভাবলো এখন অর্ক হাত ছাড়বে সে ছাড়লো না।

তাকে হাত ছাড়তে বলতে চায় কিন্তু কোন বাহানায়? এটা যে এখনো সে তার প্রথম স্বামীকে ভালোবাসে? তার ছাড়া অন্যকোনো পুরুষের ছোঁয়ায় তার অস্বস্তি লাগে। সে যতই বিশ্বাসঘাতক হোক না কেন তার সাথে আটবছরের সংসার ছিলো। সে শুরু থেকেই ইন্ট্রোভার্ট ধরনের। ভীষণ লাজুক তাই কখনো বেশি মানুষের সাথে কথা হয় নি। গার্লস স্কুল ও কলেজে থাকায় কোনো ছেলের সাথেই তার পরিচয় ছিলো না। এমনকি নিজের কাজিনদের সাথে কথা বলতেও লজ্জা লাগতো। বিনয় ছিলো তার প্রথম পুরুষ, যাকে সে ভালোবেসেছে। বিয়ের পর থেকেই বিনয়ের প্রতি বিন্দু বিন্দু করে ভালোবাসার সমুদ্র তৈরি করেছে। সে জায়গাটা অন্যকাওকে কীভাবে দেয় সে?
তবুও অর্ক তার হাত ধরতে চাইলে সে মানা করতে পারে না। অধিকার আছে তার প্রভার উপর। অর্ক চাইলেই তার সাথে জোরজবরদস্তি করতে পারতো। সে তার স্বামী, কিছু বলতেও পারতো না সে। কিন্তু অর্ক এমনটা করলো না। পরক্ষণেই মনে পড়লো তার, অর্ক তো তাকে ঘৃণা করে তাই তার উপর অধিকার না জমানোটাই স্বাভাবিক। সে তো শুধু তার সাথে তার ভালোবাসার মানুষের জন্য, নূহার জন্য। আর রইলো হাতের কথা। সম্ভবত ধরে ভুলে গেছে। তাই ছাড়ছে না।

প্রভা অর্কের সাথে পথ চললো। সে জ্যোৎস্নাময় রাতের সৌন্দর্যটা বোধহয় আরও বেড়ে গেল।
.
.
বাসে উঠে বসলো সৈকত ও ঝিনুক। ঝিনুককে রাগান্বিত দেখাচ্ছে। সে মুখ ফুলিয়ে জানালার ওপারে তাকিয়ে আছে। বাস ছেড়েছে। অনেকক্ষণ যাবৎ সৈকত ঝিনুকের রাগ খেয়াল করছিলো। অবশেষে জিজ্ঞেস করে নিলো, “মেডাম মুখ ফুলিয়ে আছেন কেন?”

ঝিনুক যেন সৈকতের এই প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিলো। প্রশ্নটা করতেই সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলল, “অর্ক ভাইয়ার সাথে এইভাবে কথা বললে কেন?”

সৈকত অপ্রভাবিত হলো এই প্রশ্নে। তার হাসি হাসি মুখখানা বিরক্তি ভাব ধারণ করলো। সে সামনে তাকিয়ে বলল, “স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছি।”

“স্বাভাবিকভাবে? এই তোমার স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার ধরণ?”

“আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার দখল দিও না ঝিনুক।”

“দিব, দিব, দিব। একশোবার দিব। আমি তোমার বউ। আমি না দিলে কে দখল দিবে শুনি?”

সৈকত সাথে সাথে ঝিনুকের দিকে তাকালো। ভ্রু নাচিয়ে বলল, “আবার বলো তো কী বললে? আমার বউ তাই না? তাহলে মিসেস বউ বাকি সময় আমার বউপনা কোথায় উড়ে যায়?”

ঝিনুক ভ্রু কুঁচকে তাকালো সৈকতের দিকে। মুখ ফুলিয়ে সিটে আবার পিঠ ঠেকিয়ে হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে নিলো বলল, “ফালতু একটা।”

সৈকত হেসে দিলো। বলল, “উওর না থাকলে এমনই হয়।”

ঝিনুক আবারও রাগে সৈকতের দিকে তাকিয়ে জানালা খুলে দিলো। যা সৈকত উঠে বন্ধ করে দিলো। ঝিনুক আবারও খুলে দিলো, সৈকত বন্ধ করলো। অবশেষে সৈকত জানালা বন্ধ করার পর যখন ঝিনুক আবার তা খুলতে যাবে তখন সৈকত তাকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিলো। বলল, “এইবার খুলে দেখাও।”

ঝিনুক নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করা করলো খুব। না পেরে বলল, “ছাড়, নাহয় এখন চিৎকার করব।”

“আমি মানা করেছি না’কি? যা ইচ্ছা কর। তুমি না একটু আগে বলেছিলে তুমি আমার বউ। বউকে জড়িয়ে ধরতে কী সমস্যা? আর বেশি সমস্যা হলে খালুকে একটা ফোন দিলেই হবে।”

খালুর কথা শুনে ঝিনুক নড়াচড়া করা বন্ধ করে দিলো। বাধ্য মেয়ের মতো সৈকতের কথা মানল।
সৈকত হেসে আশেপাশে তাকাতে শুরু করল।
বাতি বন্ধ ছিলো। কিন্তু বাহিরের আলো একটু পর পর উঁকি মারছিল। সৈকত দেখল তাদের পাশের সিটের এক লোক তাদের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। সে বলল, “আংকেল আমি আমার বউকে বুকে নিয়েছি এইখানে এইভাবে তাকিয়ে থাকার কী আছে? আপনার বউ থাকলে আপনিও নিন। আমি কিছু মনে করব না।”

ঝিনুক লজ্জায় মরে যাচ্ছিলো যেন। এই ছেলেটার লজ্জা শরম নেই বললেই চলে।
ঝিনুক সৈকতের জ্যাকেটের ভেতর মুখ লুকিয়ে নিলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে সে অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ে ঝিনুক।
.
.
অর্ক হাত ছাড়ছেই না। তারা চলে এসেছে একটি ছোট বিলের পাড়ে। তবুও অর্ক তার হাত ছাড়লো না। উল্টো আগের থেকে শক্ত করে ধরলো যেন। প্রভা তাকিয়ে আছে তার হাতের দিকে। যে হাত অর্ক ধরে রেখেছে। তা ছাড়ার অপেক্ষায় সে। অথচ অর্কের হাত ছাড়ার নাম নেই।

বিলের পাশটায় যেয়ে অর্ক বলল, “অসম্ভব সুন্দর জায়গাটি।”

প্রভা সামনে তাকালো। মুহূর্তে তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। বিলের পানিতে চন্দ্রমার প্রতিচ্ছবি এসে বিরাজ করেছে। চারপাশে গাছ-গোছালিতে ভরা, অন্ধকার রাত্রি। সে অন্ধকার রাতে একরাশ জ্যোৎস্না এসে পড়ছে জলে, যা দেখতে লাগছে অসাধারণ।

সে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। বিস্মিত কান্ড ঘটলো, প্রভাও অর্কের হাতটা ধরলো। অন্যহাত দিয়ে অর্কের কনুই ধরলো। অর্কের কাঁধে মাথাটা রাখলো। একরাশ মোহ নিয়ে দৃশ্যটা উপভোগ করছিল।

অর্ক চমকে উঠলো। তার হৃদয়ে অদ্ভুত এক শিহরণ হলো তার হৃদয়ে। স্পন্দনের গতি হলো অস্বাভাবিক। সে পাশে তাকাল, প্রভাকে দেখলো। চন্দ্রমার একরাশ জ্যোৎস্না তার মুখে এসে পড়ছে। তাকে মোহময় দেখাচ্ছে। এই দৃশ্যের কাছে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য তুচ্ছ। তার ঠোঁটের কোণে নিজ অজান্তেই হাসির রেখা এঁকে উঠলো। সে তাকিয়েই রইলো প্রভার দিকে, আর প্রভা তার সামনের দৃশ্যের দিকে।

তার এই হাসিটা বেশিক্ষণের জন্য স্থির রইলো না। প্রভা বলল, “দেখ না এই জায়গাটা কত সুন্দর! আমার জন্মদিনের রাতে আমরা এখানে এসে জ্যোৎস্না বিলাস করব, ঠিকাছে বিনয়?”

অর্কের মনে হল তার হৃদয়টা কেউ চেপে ধরে রেখেছে। এতটা কষ্ট! এতটা ব্যাথা!

অর্ক কেশে বলল, “আমি অর্ক বিনয় না।”

চমকে উঠে মাথা তুললো প্রভা। বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো অর্কের দিকে। হুস ফিরে আসার সাথে সাথে অর্ককে ছেড়ে পিছিয়ে গেল। ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা গেল তাকে। সে আশেপাশে তাকাতে শুরু করলো। বলল, “ক্ষমা করবেন আমি……আমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। আবারও ক্ষমা চাইছি। চলুন বাড়িতে ফেরত যাই।”

উওর না নিয়েই চলে গেল প্রভা। একবার ফিরে অর্কের দিকে তাকালও না। অর্ক সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। প্রভা ফিরে এলো না। অর্ক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
.
.
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাজল তিনটা। সৈকত তার মা’কে কল দিয়েছিল দরজা খোলার জন্য। কিন্তু দরজাটা খুলল তার বাবা। তার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলো তার মা। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
সেই মুহূর্তেই সৈকত বুঝতে পারলো এখন বড় কোনো এক তামাশা হতে যাচ্ছে এই মধ্যরাতে।

সৈকতের গালে একটা চড় বসিয়ে রাগান্বিত স্বরে সৈকতের বাবা বলল, “তুই ফাইজলামি পেয়েছিস? এত দামী বাইক আমার অনুমতি ছাড়া কীভাবে বিক্রি করলি তুই?”

সৈকত উওর দিলো না। মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
সৈকতের দাদিমা বলল, “আহা তোর ছেলে কী এখনো বাচ্চা না’কি? বউয়ের সামনে কেউ এত বড় ছেলেকে মারে?”

“বয়স হিসেবে কাজও তো করতে হয় আম্মা। আমি আর ওর ভাই দিনরাত খেটে টাকা কামাই করব আর এই সাহেবজাদা বসে বসে উড়াবেন।” আবার সৈকতের মা’য়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “কী বলেছিলে ও বাইক নিয়ে গেছে ওর শশুড়বাড়িতে। কই বাইক কই? বেয়াই সাহেব ফোন দিয়ে বলে দিয়ে বলেছিল ওরা বাস দিয়ে আসছে। জিজ্ঞেস করায় তো জানা গেল সে বাইক নিয়ে যায় নি। এখন এত আরামে বলছে যে বিক্রি করে দিয়েছে। ছেলেকে তো শিখিয়েছ শুধু টাকা উড়ানো। নিজে ছোট পরিবার থেকে আসছ দেখে এখন……. ”

সামনে কিছু বলার আগেই সৈকত উঁচু স্বরে বলল, “মিস্টার মাহমুদ,” ঝিনুক অবাক হয়ে তাকালো সৈকতের দিকে। সে আসলে তার বাবাকে নামে ডাকছে! সৈকত তার কথা শেষ করলো, “আপনার বাইকের টাকা আমি আপনাকে চারমাসে ফেরত দিয়ে দিব। কিন্তু আপনি আমার মায়ের সঙ্গে এইভাবে কথা বলার সাহস করবেন না, নাহয় আমি ভুলে যাব যে আপনি সম্পর্কে আমার পিতা হন।”
বলেই সৈকত চলে গেল। ঝিনুক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সৈকতের দিকে। সে আগে কখনো সৈকতকে এতটা রাগে দেখে নি। এই প্রথম। আর এই বিষয়টা তার জঘন্য লাগলো।

সৈকতের বাবা বললেন, “কী বানিয়েছ ছেলেকে দেখেছ তুমি? নিজের বা….বাবার সাথে কোন ছেলে এভাবে কথা বলে?”
ঝিনুক সৈকতের মা’য়ের দিকে একপলক তাকালো। সে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। সে বলল, “আংকেল প্লিজ মনে নিয়েন না কথাগুলো। ওর হঠাৎ কী হলো আমিও বুঝতে পারছি না। আমি কথা বলছি ওর সাথে।”

“বুঝাও একটু যদি জ্ঞান বুদ্ধি হয়। ওর মা তো ভালো শিক্ষা দেয় না তুমি যদি বুঝাতে পারো।” বলেই চলে গেল। ঝিনুক নিজের রুমে এসে দেখে সৈকত হাত মুখ ধুঁয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতেছে। সে উঁচু স্বরে বলল, “তোমার মাথা খারাপ? নিজের বাবার সাথে এত বাজে ভাবে কথা বলে কেউ?”

সৈকত উওর না দিয়ে বিছানার কাছে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু একটা করছিলো ঝিনুক ফোনটা নিয়ে বিছানার উপরই ছুঁড়ে মারলো। বলল, “যখন আমাদের কাছে কিছু থাকে তার কদর হয় না তো, তাদেরকে জিজ্ঞেস কর যাদের বাবা-মা কেউ নেই। তোমার এত ভালো বাবা আর ভাই আছে অথচ তোমার কাছে তাদের মূল্য নেই। আর আংকেল ভুল কী বলেছে তারা এত কষ্ট করে টাকা কামায় আর তুমি তা উড়িয়ে দিচ্ছো? বাইক বিক্রি করে টাকা কী করেছ? মেয়েদের উপর লুটিয়ে এসেছ না’কি?”

সৈকত বিস্ময় নিয়ে তাকালো ঝিনুকের দিকে। ঝিনুক আবারও বলল, “আংকেল সত্যি কথা বলেছে দেখে গায়ে লেগেছে তোমার?”

সৈকত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল, “না আমার মা’কে উল্টাপাল্টা বলছিলো দেখে গায়ে লেগেছে আমার। আমি আমার মা’কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি এই পৃথিবীতে। উনার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তাকে আমি ছাড়ব না। তোমাকেও না। উনি নিজের জন্য কিছু বলে না দেখে এই না যে তার কষ্ট হয় না। কষ্ট সবার হয়। কিন্তু সবাই নিজেরটাই দেখে। আর তোমার মতো যারা তারা সবচেয়ে বেশি। আমার বাবা আর ভাইও তোমার মতোই।”

“আমার মতো মানে?”

“তোমার মতো মানে তোমার মতো সেলফিশ মানুষ। যে শুধু নিজেরটা ভাবে ও নিজেরটা বুঝে।”

“সৈকত বেশি হয়ে যাচ্ছে।” ঝিনুক উঁচু স্বরে বলল।

সৈকত উওর দিলো, “তুমি সারাটা জীবন নিজের কষ্ট গুণতে গুণতে শেষ হয়ে গেলে। ঠিকাছে তোমার মা-বাবা নেই কিন্তু তোমার খালামণি আর খালু যে তার ছেলে মেয়ে থেকে বেশি তোমাকে ভালোবাসে তার কী?”

“সৈকত এক কথায় অন্য কথা নিবে না।”

“তুমি নিজে যা দেখতে চাও শুধু তাই দেখ। তোমার ভাই যে তোমার প্রতি এত ওভার প্রটেক্টিভ তা বুঝতে চাও না। আমার প্রতি একটা তথ্য পেয়ে এত সহজে ব্রেকাপ করে নিলে একবারও জানতেও চাইলে আসল সত্যি কী?”

“আমি খোঁজ নিয়ে প্রমাণ পেয়েছি।”

“এমনকি যে বোন তোমাকে এত ভালোবাসে তার কষ্টটাও তুমি দেখতে পাও না, নাহয় দেখেও বুঝতে পারও না। আমি এত বোকা মানুষ আমার জীবনে দেখি নি।”

“হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি আপির প্রতি আমার ভালোবাসাতে প্রশ্ন তুলছো?”

“আর তুমি আমাকে বলছ আমি কোন মেয়ের উপর টাকা লুটিয়ে এসেছি? আমি তো এটাও বলতে পারতাম তোমার তোমার সো কল্ড ভাইয়ের উপর ফিলিংস আসছে দেখে আমাকে দোষ দিয়ে তার সাথে প্রেম……” কথাটা শেষ করার পূর্বেই ঝিনুক জোরে এক থাপ্পড় দিলো সৈকতের গালে। সৈকত ঝিনুকের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “ব্যাথা লাগে তাই না? সবারই এমন মন থাকে, সবারই কষ্ট হয়। শুধু সবাই নিজের কষ্টকেই প্রাধান্য দেয়। এই পৃথিবীতে সব কষ্ট আছে, শুধু তোমার একার নয়। তুমি যা বুঝ সব সঠিক হবে তা ঠিক নয়। সবারই কষ্ট হয়। শুধু নিজের দিক থেকে ভাবলে হয় না, আমাদের সাথে যারা যুক্ত তাদের সবার দিক থেকে ভাবতে হয় আমাদের।”

সৈকত তোয়ালেটা বিছানায় রেখে দরজার দিকে এগোল। মাঝে থেমে গেল। পিছনে তাকিয়ে বলল, “তুমি সেই ঝিনুক না যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। তুমি আমার সে ঝিনুককে তোমার মাঝে হারিয়ে দিয়েছ। প্লিজ আই বেগ ইউ, ডোন্ট মেক মি আনলাভ ইউ। বিকজ দেন আই উইল হেইট মাইসেল্ফ।”

সৈকত চলে গেল। ঝিনুক বসে পরলো বিছানায়। চোখ বন্ধ করে নিলো। তার দম যেন আটকে আসছে।
#মন_পাড়ায়
#পর্ব_১৯
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

বিনয়,
তোকে হয়তো প্রিয় বলার অধিকারটা এখন আর আমার নেই। আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি যাকে তুই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতি। আর তাকেও যার কারণে তুই আজ আমাদের সাথে নেই। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি, আবারও।

এখন মধ্যরাত। আমি এই মুহূর্তে তোকে এই চিঠিটা লিখছি। তোর কী আমাদের বন্ধুত্বের দিনগুলোর কথা মনে পড়ত তুই যখন ছিলি এই পৃথিবীতে? আমার অনেক বন্ধু ছিলো কিন্তু এর মাঝে শুধু তুই আমাকে বুঝতি। আমার কাওকে নিজের মনের কথা বলতে অসহ্য লাগতো, তুই এই সমাধান বের করেছিলি। আমাদের জন্য এক গোপন জায়গা করেছিলি যেখানে আমরা চিঠির দ্বারা নিজ স্বীকারোক্তি লিখে রাখব। যা কেউ জানবে না। শুধু তুই আর আমি। আজ এগারো বছর পর আমি আরেক স্বীকারোক্তি লিখছি। হয়তো তুই কখনো এর জন্য আমায় ক্ষমা করবি না। আমি নিজেও হয়তো নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না।

তেরো বছর আগে, তোরা অনেক রাগ করেছিলি আমার উপর নতুন বছর তোদের সাথে পালন না করে দেশে গিয়েছিলাম আমার খালার কাছে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার। উনি তো সুস্থ হয়ে যায় আমি সেখানেই আটকে যাই। খালা, খালু, কাজিন কেউও আসতে দেয় নি। ভীষণ রাগ হচ্ছিল সেদিন। ঢাকায় থাকলে হয়তো নতুন বছর তোদের সাথে উৎযাপন করতে পারতাম আর সেখানে কিছুই করতে পারি নি। তোরা অবশ্য সারারাত ফোন দিয়ে জ্বালিয়েছিলি তাই ঘুমও হয় নি। ঘুম না হওয়ার ভীষণ বিরক্ত লাগছিল আমার। তোদের উপর, খালার উপর, নিজের উপরও। সকালে উঠে জ্যাকেটটা নিয়ে বেরিয়ে যাই অচেনা পথে।। কুয়াশার চাদরে ঢেকেছিল চারপাশ। সবকিছু দেখা যাচ্ছিলো তবুও অস্পষ্ট। আমি গান শুনছিলাম হেডফোনে।

তুমি আমি কাছাকাছি আছি বলে
এ জীবন হয়েছে মধুময়,
যদি তুমি দুরে কখনো যাও চলে
শুধু মরন হবে আর কিছু নয় ।
তোমায় ছেড়ে বহুদুরে যাব কোথায়
এক জীবনে এত প্রেম পাব কোথায়……

আমি পথ চলছিলাম। নতুন বছরের সকালটা উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ আশেপাশে তাকিয়ে পথ চলতে চলতে থেমে গেলাম। দুই পা পিছিয়ে যেয়ে আমার বামদিকে তাকালাম। পুকুরের সামনে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো হলুদ রঙের জামা পরে। সকালের কুহেলিকা যেন তার গাল ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। তার চোখগুলোতে ছিলো মুগ্ধতা। সে একবার তাকাচ্ছিল পুকুরের দিকে, একবার আকাশের দিকে আবার পুকুরের আশেপাশে। ও পুকুরের সিঁড়ির কাছে বসল, হাতটা জলে ছোঁয়াতেই কেঁপে উঠলো। হাতটা উঠিয়ে নিজেই হাসলো।
বিশ্বাস কর, এত সুন্দর হাসি আমি জীবনেও দেখি নি। কারও হাসি এতটা সুন্দর হতে পারে আমার কল্পনার বাহিরে ছিলো। ওর সৌন্দর্য যেন হাজারোগুণ বেড়ে গেল। একটি হাসি ওর সৌন্দর্যটাই পাল্টে দিলো।সে কাঁপানো শীতের মাঝেও বসন্তের হাওয়ার মতো ছিলো হাসি। ওর চোখদুটোয় ছিলো অজানা উষ্ণতা। হঠাৎ আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। মুহূর্তে আমার বিরক্তি মিশে গেল গ্রামের হাওয়ায়। হেডফোনে গান চলছিলো,
“সুখের সাগরে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
দু’জনে একসাথে ভেসে যাই,
ভেসে ভেসে ভালোবেসে
সারাটা জীবন থাকতে চাই ।
তোমায় ছেড়ে বহুদুরে যাব কোথায়
এক জীবনে এত প্রেম পাব কোথায়…..”
গানটা যেন আমার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। আমার বুকের কাঁপুনি বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি ওর সাথে এক অচেনা সাগরে ভেসে যেতে চাইছিলাম।
আমি এক পা আর নড়তে পারলাম না। ওর দিকে আমার চোখ আটকে রইল। আমার বুকের কাঁপুনি কমলো না। কিন্তু স্পন্দন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেল। হঠাৎ করে কেউ একজন ডাক দিলো উঁচু স্বরে, ‘প্রভা…..’
ওর নাম প্রভা…..
অনেকগুলো অর্থ আছে প্রভার। কিন্তু আমার কাছে সে মুহূর্তে প্রভার অর্থ ছিলো উজ্জ্বলতা। যা ওর সাথে সম্পূর্ণ যায়। ও ভোরের উজ্জ্বলতার মতো।
প্রভার সমবয়সী এক মেয়ে এলো। প্রভার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তুই এইখানে আর আমি তোকে খুঁজতেছি। জলদি আয় মা তোকে খুঁজছে। আর বলেছে যেন ঝিনুককে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে নাস্তা করিয়ে দিতে। ওর তো আবার তোর হাতে খাওয়ার অভ্যাস।’
প্রভা নামক মেয়েটা হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘চলো আপু।’
ওর কন্ঠ এত মিষ্টি কেন?
ওর এই কন্ঠে গান শোনার ভীষণ লোভ জাগলো আমার মনে।
আর ওরা চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকেও তাকিয়ে রইলাম। তাকিয়ে রইলাম যতক্ষণ না পর্যন্ত ও মিশে না গেল সে কুয়াশায়। কুয়াশায় মিলিয়ে যাওয়ার পরও তাকিয়ে রইলাম আমি। তাকিয়ে রইলাম সে কুয়াশার দিকে। কী হয়েছিলো আমি। নিজেও জানি না।
শুধু জানি আমি সে পথের দিকে তাকিয়েই ছিলাম।

আমার খালাতো ভাই রাজিয়ুন, তুই তো চিনতি। ওকে এসে জিজ্ঞেস করায় ও প্রভা নামে কাওকে চিনল না। আমি ওকে নিয়ে পুরো গ্রামে ঘুরালাম শুধু প্রভাকে খোঁজার জন্য। ও আমাকে মুখে কিছু না বললেও আমি নিশ্চিত মনে মনে আমাকগুলো গালি দিয়েছে। ওকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরাচ্ছিলাম।

অবশেষে এলো সে মুহূর্ত। ও আমার সামনে ছিলো, ঠিক সে হাসি নিয়ে। একটি বাচ্চা ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছিলো। ইশশ কেউ এত সুন্দর কীভাবে হাসে!

রাজিয়ুন প্রভাকে দেখে বলল, ‘ও আচ্ছা তুই জুঁইয়ের ফুফাতো তো বোনের কথা বলছিলি? ও প্রতি বছরে শুধু আসে এই সময়। বছরের শেষের দিকে আসে ও জানুয়ারির এক বা দুই তারিখেই চলে যায়। জুঁই বলেছিল ওর ফুফাতো বোন সবসময়ই জন্মদিন ওর নানুর সাথে কাটায়। এই কয়দিনের মাঝেই হয়তো ওর জন্মদিন।”
আমি তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওকে পাঠালাম জুঁই থেকে তথ্য বের করতে।
রাজিয়ুন ঠিক ছিলো প্রভার জন্মদিন জানুয়ারির ১ তারিখে। সেদিন ও পনেরোতম জন্মদিন ছিলো।

আমি নতুন বছরের সকালে, ওর জন্মদিনে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি উপহার পেলাম। অন্তত তখন তাই মনে হয়েছিলো।

০১ জানুয়ারি, এই দিনটি আমার জন্য বিশেষ হয়ে গেল। আমি প্রতিবছর এই দিনটির অপেক্ষা করতাম শুধু। গ্রামে যেতাম, ওকে দূর থেকে দেখতাম কিন্তু কখনো কথা বলতাম না। এমন না যে আমি ওর ঠিকানা নিতে পারতাম না। চাইলেই আমি ওর ঠিকানা নিয়ে ওকে দেখে আসতে পারতাম, ওর সাথে কথা বলতে পারতাম কিন্তু সারাটা বছর অপেক্ষার আনন্দটা তখন আর পেতাম না। অপেক্ষায় আলাদা এক অনুভূতি আছে সে অনুভূতি অনুভব করার ধৈর্য সবার থাকে না। এত জলদি সে অনুভূতি নষ্ট করার ইচ্ছা আমার ছিলো না। আমি শুধু কল্পনা করতাম ও কতটুকু পরিবর্তন হবে এই এক বছরে, ওর হাসি কতটুকু পরিবর্তন হবে!
ও পরিবর্তন হতো কিন্তু ওর হাসি না।
ওর হাসি আজও পরিবর্তন হয় নি। আগের মতোই। সুন্দর, স্নিগ্ধ, মায়াময়।

যেদিন ওর আঠারোতম জন্মদিন সেদিন শেষ ওকে দেখেছিলাম। বছরের মাঝে বাবা হঠাৎ আবদার করলো যে আমাকে বিদেশে পড়াতে চায়। তুই তো জানিস, এই পৃথিবীতে আমি বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। উনার কোনো কথা আমি মানা করতে পারি না। ভেবেছিলাম এসে বাবাকে বলে ওর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব। আমি তো ভাবি নি যে ভাগ্য আমার সাথে এত বড় খেলা খেলবে। তোর বিয়ের পরেরদিন শিপন যখন বিয়ের ছবিগুলো দেয় ওকে দেখে আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে আমার হৃদপিণ্ডে আঘাত করছে।
আমি অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার সময়ও ভাবি নি ও যদি অন্যকারো হয়ে যায় তাহলে আমি কষ্ট পাব। ভেবেছিলাম ওকে দেখতে আমার ভালো লাগে শুধু কিন্তু সেদিন বুঝতে পারলাম অনুভূতিটা শুধু ভালোলাগার না ভালোবাসার।
ব্যাপারটা আজব! ওকে আমি শুধু চারদিন দেখেছিলাম।
শুধু চারদিন…….
ওর পনেরো বছর থেকে আঠারো বছর প্রতিদিন ওর জন্মদিনে। একটা মানুষের প্রতি চারদিনে এতটা জড়িত কেউ হতে পারে না। কেউ চারদিনে কারও জীবনের এত গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হতে পারে না। কেউ চারদিনে জীবনের এক অংশ দখল করতে পারে না। কেউ চারদিনে আমার প্রথম ভালোবাসার উপাধি গ্রহণ করতে পারে না।
যেখানে সামনের মানুষটা তা জানেই না।

এরপর আমার জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে কাউকে ওর জন্য নিজের জীবনে স্থান দিতে পারি নি। তোর মনে আছে তুই যখন ওর সাথে কথা বলতে বলতি আমি কখনো ওর সাথে কথা বলতে চাইতাম না। কারণটা আমি ওকে ভালোবাসতাম। কিন্তু ওর থেকে বেশি তুই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলি। আর ও ছিলো অন্যকারো। ওর স্বামী তুই না হলেও আমি কখনো ওর জীবনে আসতাম না। কারণ কোনো দম্পতির মাঝে আসাটা বেমানান!
ও অন্যকারো এটা আমার মানতেই হতো।

নূহা আমার জীবনে আসে। যে আমাকে আবার জীবন বাঁচতে শিখিয়েছে। বাবা ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করার পর থেকেই ও আমার যত্ন নিতো, অনেক সময় দিত। আর ওর এত মিষ্টি স্বভাবে কে না মন হারতে বাধ্য বল? আমিও হেরে গেছি ওর কাছে। আবার ভালোবেসেছি। তবে দেরি হয়েছে বটে, দুটোবছর লেগে গেছে।

আমি বাংলাদেশে ফেরার পর যখন তুই প্রভাকে আমার সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছিলি, তখন ও সাদা রঙের জামদানী পরা ছিলো, চোখে কাজল মাখা ছিলো আর হাতে ক’টা চুড়ি। ব্যাস এতটুকুই। তবুও ওকে অসম্ভব সুন্দর লেগেছিলো। ওকে একপলক দেখতেই আমার হৃদয়ে যেন শীতলতা ছড়িয়ে গেল। হৃদয়ের স্পন্দন আরও বাড়লো। দ্রুত হলো।
আমার তখন নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছিলো। আমি কীভাবে প্রভার প্রতি অনুভূতি রাখতে পারি? এটা উচিত ছিলো না। ও অন্যকারো ছিলো আর আমি অন্যকারো। আমি নূহাকে ভালোবাসি তাহলে প্রভাকে দেখলে এমন অনুভূতি কেন? হয়তো হৃদয়ের এক কোণে ও লুকিয়ে ছিলো তাই।
আমরা মন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও নিজেকে পারি। কাওকে ভালোবাসাটা হয়তো নিজের বশে থাকে না কিন্তু সে ভালোবাসার নামে তুমি অন্যায় কর বা না কর সেটা তোমার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সে একপলক দেখার পর আর কখনো আমি ওর দিকে তাকাই নি। শুধু এইজন্য না যে ও তোর স্ত্রী, বরং এইজন্যও যে ভয় লাগতো আমার আবারও ওর প্রেমে পড়ার ভয়, আবারও সেই কষ্ট উপভোগ করার ভয়।
ওর সাথে কথা বললেও অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলেছি। যতদিন না পর্যন্ত ও নূহা ও তোর অবৈধ সম্পর্কের নালিশ জানাতে আমার কাছে এসেছিলো।

এইটা আমি বিশ্বাস কীভাবে করি বল? তুই আমার এত বছরের বন্ধু আর নূহা আমার ভালোবাসা। তোদের আমি খুব কাছের থেকে জেনেছি, বুঝেছি, চিনেছি। তোরা কখনো এমন করবি না আমার বিশ্বাস আছে। হ্যাঁ, আমি প্রভাকে ভালোবেসেছি। কিন্তু ওকে কখনো চেনার সুযোগ পাই নি। নূহার মতো ওকে আমার চেনে ভালোবাসার সময় হয় নি। আর ওর মায়ায় জড়িয়ে আমি আমার বন্ধুত্ব ও ভালোবাসায় প্রশ্ন তুলতে পারতাম না।

এই মধ্যরাতে হঠাৎ এইসব কেন লিখছি?
কারণ আমি আবারও ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। যার জন্য আবারও আমার নিজেকে ঘৃণা হয়। যে তোদের দুইজনকে আমার জীবন থেকে নিয়ে গেছে তাকে আমি আবার কীভাবে ভালোবাসতে পারি? যে তোদের দুইজনের উপর এত জঘন্য আরোপ লাগিয়েছে তাকে আবারও আমি কীভাবে ভালোবাসতে পারি?
আবারও?
হয়তো কখনো ওকে ভালোবাসা বন্ধই করি নি। হৃদয়ের এক কোণে হয়তো বন্দী ছিলো ও সবসময়। যেদিন ভোরে আবার ওকে সে প্রভাতে ছাদে দেখি সেদিন মনটা আপনা-আপনি সে ভালোবাসাটাকে মুক্ত করে দেয়। আমি বারবার চাই সে ভালোবাসাকে আবারও বন্দী করতে কিন্তু পারছি না।

আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় ওকে ভালোবাসতে।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় যখন ওর হাত ধরতে ভালো লাগে তাই।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় ওর কৃষ্ণাঙ্গ কেশে যখন ডুবে থাকতে ইচ্ছে হয়।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় যখন ওর চোখে ডুব দিলে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ি আমি।
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয় যখন ওর চোখে তোর
জন্য ভালোবাসা দেখি।
ঘৃণা হয়, কষ্ট হয়, ঈর্ষা হয়।

মাফ করে দিস ভাই, আমি তোর ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছি বলে।

ইতি
তোর অননুগত বন্ধু
অর্ক

চলবে……

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here