“মন_বুঝা_দায় পর্ব:৯ & ১০(শেষ)

গল্প:-#মন_বুঝা_দায়
পর্ব:৯ & ১০
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
যখন তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিলো তখনি আমি তোমাকে পাইনি! আর এখন আজ বাঁদে কাল চলে যাবো দুনিয়ে ছেড়ে। আর এখন এসেছো আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখতে?(এতিহা)

আল:- এতিহা তোমাকে আমি ছেড়ে যাইনি বরং তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো? তুমি ভুলে গেলে আমাকে জেলে পাঠিয়ে নিজেই ওদাও হয়ে গেছিলে।

এতিহা:- তোমাকে ছেড়ে গেছি মানে? নাকী তোমার মা আমাকে বলছে তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে। তুমি জানো সেই দিন কি কথা হইছে তোমার মায়ের সাথে আমার?

আল:- আম্মু বলছে তুমি নাকী বলেছো আমাকে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে তানা হলে আমাকে জেলে পাঠাবে!

এতিহা:- তোমার আম্মু তোমাকে এই টুকু বলছে? আর কিছু বলেনি?

আল:- নাহ আর কিছু বলেনি!

এতিহা:- আমি তো মরেই যাচ্ছি তাহলে এখন এসব লুকিয়ে রেখে কি লাভ হবে! তার চাইতে ভালো সত্যিটা বলেই দেই। সেইদিন তোমার আম্মা আমাকে রিকুয়েস্ট করছে যাতে করে তোমার কাছে আমি খারাপ হয়ে যায়। আর খারাপ হতে গেলে কি করতে হবে তোমাকে জেলে পাঠাতে হবে আর আমি সেই কাজটা করেছি। তোমার আম্মা আমাকে বলছে আমাদের বিয়েটা তো মেনে নিবেই না বরং আমাকে তোমার সাথে সংসার করতে দিবে না। আর তুমি তো মাশাআল্লাহ মায়ের খুব ভক্ত। চিন্তা করে দেখলাম নিজের কষ্ট হলেও তোমাকে সুখে রেখে দুরে সরে গেলাম।

আল:- আমি মায়ের ভক্ত ঠিক আছে তবে তোমাকে কিন্তু আমি ভালোবেসেছি। তোমাকে আমি কত খোঁজাখুঁজি করেছি কোথাও না পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছি। চার বছর পর বাড়িতে এসেছি।

এতিহা:- আর এই চার বছর আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে গেলাম। শুধু মাত্র তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য আমার অপারেশন করাইনি। ডাক্তার বলেছিলো অপারেশন করাতে কিন্তু রিক্স ছিলো যদি মারা যেতাম তাহলে তো তোমার কাছে সারা জীবন স্বার্থপর হয়ে রয়ে যেতাম।

আল:- তুমি সত্যিই একটা স্বার্থপর তানা হলে এমন ভাবে নিখোঁজ হয়ে যেতে পারে কেউ?

এতিহা:- নিখোঁজ কে হইছে তুমি নাহ আমি?

আল:- আগে ছেড়ে গেছে কে? আমি না তুমি? তুমি নিজেই তো আমাকে জেলে পাঠিয়ে নিজে ওদাও হয়ে গেছো।

এতিহা:- জেলে তো আমি পাঠাতে চাইনি কিন্তু তোমার মা আমাকে বাধ্য করছে।

আল:- মানে? কি বলছো তুমি?

এতিহা:- হ্যা যা সত্যিই তাই বলেছি। সেই দিন আমার যে ব্রেইন টিউমারের সমস্যার কথাটা তোমার মাকে বলেছি। আর বলেছিলাম যতদিন বেচে থাকবো ততদিন তোমাকে আমার সাথে আমাদের বাড়িতে থাকতে দিতে। তোমার মা এসব শোনে আমাকে বলে। আলকে দরকার হলে জেলে রাখবো তাও তোমার সাথে তোমাদের বাড়িতে রাখবো না।

আল:- বুঝতে পারছি। কিন্তু আম্মা আমাকে এতকিছু বলেনি। কিন্তু তোমাকে আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। রাসেলের সাথে দেখা হইছে তখন জানতে পারলাম তোমরা অস্ট্রলীয়া চলে গেছো।

এতিহা:- আসলে আমরা বাড়িটা বিক্রি করে দিছে আব্বু। আমার চিকিৎসার খরচ বহন করার জন্য। অনেকে জিজ্ঞেস করছে কেনো বিক্রি করতেছে তখন আব্বু বলছে সবাই অস্ট্রলীয়া চলে যাবে তাই।

আল:- তার জন্যই রাসেল আমাকে বলেছে। কিন্তু তোমাকে কোথাও খোঁজে নাহ পেয়ে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আর বাড়িতে আসি চার বছর পর।

এতিহা:- আমি তোমার দোস্ত জুয়েলের কাছ তোমার খবর জানতে চাইছি। কিন্তু জুয়েলের সাথে তোমার নাকী কোনো যোগাযোগ ছিলোনা। তবে আমার মোবাইল আর নাম্বারটা আব্বু নিয়ে গেছে। কিন্তু তোমার নাম্বারে ট্রাই করেছি আম্মুর মোবাইল দিয়ে। কিন্তু যখনি ফোন করেছি তখনি বন্ধ বলছে।

আল:- আমি বাড়িতে মোবাইল রেখে চলে গেছিলাম। জানো এতিহা তোমাকে বড্ড মিস করতাম খুব খুব তোমার কথা মনে পড়তো কিন্তু অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে যেতে কিন্তু পারিনি।

এতিহা:- আল আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখবে?

আল:- বলো কি রিকুয়েস্ট?

এতিহা:- আমার বড্ড ইচ্ছে ছিলো আবার সবাইকে এক করে দিবো। কিন্তু তা আর হলোনা। কিন্তু তুমি আমাকে কথা দাও আমার বাবা মা আর তোমার পরিবারের সবাইকে এক করে দিবে ঠিক আগের মত।

আল:- ঠিক আছে করে দিবো আর আমরা দুজনে এক সাথেই থাকবো। তখনি এতিহার চোখ বেঁয়ে পানি পড়তে আরম্ভ করছে আর বলে।

এতিহা:- আল আমার বেঁচে থাকার সম্ভবনা এক পারসেন্ট আছে কিনা জানা নেই। আমি বেচে আছি শুধু নিজের মনের জোরে কিন্তু সেই জোরটা আর পাচ্ছিনা। তখনি আল এতিহার মুখে হাত রেখে বলে।

আল:- আচ্ছা এতিহা তুমি চুপথাকো তোমার কিছু হবে না দেখবে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। আর ঠিক সবাই আমাদের ভালোবাসা দেখে হিংসা করবে। তোমার সাথে কত গল্প বাকী আছে। এতিহার চোখের পানি গুলি মুছে দিতেছি এতিহার চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে চুল গুলি কেমন পাগলের বেশ হয়ে গেছে।

এতিহা:- আল তুমি বিয়ে কবে করছো?

আল:- মানে?

এতিহা:- ঐ মেয়েটা যে দেখলে তাকে কবে বিয়ে করবে?

আল:- তুমি কি ডির্ভোস দিছো আমাকে যে আমি অন্য মেয়ে বিয়ে করবো? আমি তোমার এক রাতের ভালোবাসা নিয়ে হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারবো। আমার আর কারো ভালোবাসার কোনো দরকার নেই। তখনি ডাক্তার এসেছে এসে আমাকে বলে।

ডাক্তার:- আপনি বাহিরে যান ওনাকে এখন ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হবে।

আল:- প্লিজ ডাক্তার একটু পরে দেন চার বছর এক মাস পরে দেখা। আমাদের একটু কথা বলতে দেন প্লিজ।

ডাক্তার:- কি হোন আপনি ওনার?

আল:- হাজবেন্ট। হাজবেন্ট কথাটা শোনে ডাক্তার কিছুটা চুপ থাকেন তারপর মুচকি হেসে বলেন।

ডাক্তার:- তা এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি? আজ চার বছর পর এসেছেন আপনার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে? যার বেঁচে থাকার সম্ভবনা একদমই নেই!

আল:- সেই অনেক কথা আর আপনাকে এই টুকু বলি আমাদের সম্পর্কটা সবার মত নই দুজন দুজনকে ভালোবাসি কিন্তু মাঝে দুইটা পরিবারের দেওয়াল আছে।

ডাক্তার:- ভালোবাসার কাছে কোনো দেওয়াল টিকে থাকে না। আপনারা চাইলে দেওয়াল ভেঙ্গে তছনছ করে দিতে পারতেন। যাক আপনাকে এখন বেরিয়ে যেতে হবে। সবার আগে এখন আমার কাছে রুগি তারপরে অন্য কিছু। প্লিজ আপনি বেরিয়ে যান।

আল:- ঠিক আছে আপনি আপনার কাজ করেন। আমি বেরিয়ে আসছি আর ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে বাহিরে আসছে। আমি বসে আছি তখনি এতিহার মা আমার মাথায় হাত রেখে বলে।

এতিহার মা:- আমরা তোমাদের সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলছি আমাদের ক্ষমা করে দিস বাবা।

আল:- চাচি এমন কেনো হয়? বলেই আমার চোখ বেঁয়ে পানি পড়ছে। এতিহার মা আমার চোখের পানি গুলি মুছে দিচ্ছে। তখনি এতিহার বাবা পাশে এসে বসেছে।

এতিহার বাবা:- আমি জানি আমার প্রতি তোর অনেক রাগ আচ্ছে কিন্তু কি করবো বল? যেনে শোনে তোর লাইফটা নষ্ট করতে চাইনি তাই এতিহাকে তোর থেকে দূরে নিয়ে গেছি। তোকে কিছু কথা বলা খুব দরকার।

আল:- কি কথা?

এতিহার বাবা:- সত্যিই বলতে তখনি আম্মা এসে আমার সামনে দাঁড়িয়েছে। আর চাচা চুপ করে গেছে। আমি বসা থেকে উঠেছি।

আম্মা:- আল তোকে কখন ধরে খোঁজতেছি! আর তুই কিনা এখানে বসে আছিস?

আল:- আম্মা এতিহার ব্রেইন টিউমারটা দিন দিন বেড়ে চলছে। ডাক্তার বলছে এতিহা আর বাচবে না।

আম্মা:- কি বলিস তুই?

আল:- হ্যা! আচ্ছা আম্মা এতিহা তো তোমাকে সব বলেছে তাও কেনো তুমি এমনটা করলে? চার বছর আগে যদি আমি এসব জানতে পারতাম তাহলে আজ এই দিনটার মুখমুখি হতে হতোনা?

আম্মা:- আমাকে যে বলছে তোকে কে বলছে?

আল:- এতিহা নিজেই বলেছে।

আম্মা:- হ্যা বলেছে কিন্তু আমি তোর মা যেনে শোনে এমন একটা মেয়ের সাথে তোর সংসার করতে কি করে দিবো বল?

আল:- এতিহা যদি তোমার মেয়ে হত তাহলে তুমি এমনটা পারতে? আম্মা চুপ করে আছে কিছু বলছে না। আমি একের পর এক বলে যাচ্ছি আম্মা চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তখনি ডাক্তার এসে বলে।

ডাক্তার:- এই যে মিষ্টার আপনি আমার সাথে আসেন আপনার সাথে কিছু কথা আছে।

আল:- আমাকে বলছেন?

ডাক্তার:- হ্যা আপনাকে।

আল:- হ্যা আসছি। যাবার সময় আম্মাকে বলি আম্মা আপনি বাসায় যান আমি এতিহার কাছে থাকবো।

আম্মা:- আল রাতে তো নুসরাতের বাড়ির মানুষজন আসবে।

আল:- আম্মা বিয়েটা আর করছি না। আর তাছাড়া এতিহার সাথে তো আমার ডির্ভোস হইনি আপনি তো আমাকে মিথ্যা ডির্ভোসের কাগজ দেখিয়েছেন। আম্মা কেনো এইসব করছেন? যদি এতিহার কিছু হয়ে যায় তাহলে কি আমি সুখি হবো? আম্মা চুপচাপ চলে গেছে আমি ডাক্তারের সাথে গেলাম।

ডাক্তার:- দেখুন আপনার স্ত্রীর দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এক সাপ্তারের মধ্যে কোনো একটা হয়ে যাবে। তাই আমি বলি একটা রিক্স নিবেন কি?

আল:- রিক্স মানে বুঝলাম না?

ডাক্তার:- আমি বলি অপারেশন করাতে চাচ্ছি। আপনার শ্বশুর রাজি হচ্ছে না অপারেশন করাতে। আপনি চাইলে আমরা আগামীকাল অপারেশন করাতে পারি। আগামীকাল একজন নিউরো বিশেষজ্ঞ আসবে ওনাকে দিয়ে অপারেশন করিয়ে নিবো।

আল:- অপারেশন করালে সুস্থ হওয়ার চান্স কত পারসেন্ট? ডাক্তার চুপ করে আছে এখন আর কিছু বলছে না। তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলে।

ডাক্তার:- তিলে তিলে মরার চাইতে একটা চান্স নিলে ভালো হতো। যদি হায়াত থাকে তাহলে বেচে যাবে আর হায়াত না থাকলে তো কিছু করার নেই। আর তাছাড়া যেই স্যারের কথা বলছি ওনি অনেক ভালো একজন ডাক্তার।

আল:- ঠিক আছে আমাকে আজকের দিনটা সময় দিন। আমি ভেবে চিন্তে আপনাকে জানাবো। ডাক্তারের সাথে কথা বলে এসে দেখি এতিহার বাবা বসে আছে। আমি কাছে গিয়ে বলি। চাচা আপনি কিছু একটা বলতে চাইছেন বলেন সেইটা কি কথা?

এতিহার বাবা:- আল তুমি জানো তোমাকে তোমার মা আজকে হাসপাতালে কেনো নিয়ে এসেছে?

আল:- হ্যা আম্মা ডাক্তার দেখাবে তাই। তখনি চাচা আমাকে বলে।

এতিহার বাবা:- নাহ ঠিক তা নাহ তোমাকে হাসপাতালে আনছে এতিহার সাথে দেখা করাতে। আর ঐদিন মার্কেটে এতিহাকে পাঠিয়েছে তোমার সাথে দেখা করতে।

আল:- মানে কি বলেন আপনি?

এতিহার বাবা:- হ্যা ঠিকই বলছি। শুধু তাইনা তোমার মা তোমাদের আলাদা করতে চাইনি বরং কাছে রাখতে চাইছে। আল চুপ করে আছে তখনি এতিহার বাবা যা বলছে তা শোনে আল থমকে গেছে।
!!
চলবে,,,,,

গল্প:-#মন_বুঝা_দায় পর্ব:-(১০-শেষ)
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
আল তোমার আম্মা চেয়েছিলো তুমি আর এতিহা এক সাথে সারা জীবন থাকো কিন্তু সেইটা বেশী দেরী হয়ে গেছে। যখন তুমি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছো তখন আমি গেছিলাম তোমাদের বাড়িতে। তোমার পরিবারের সবার সাথে কথা বলেছি তখন তোমার আম্মা রাজি হইছে এতিহাকে তোমার বউ হিসাবে মেনে নিবে। আমরা সবাই সিদ্যান্ত নেই এতিহার অপারেশন করাবো কিন্তু এতিহা রাজি হইনি যার ফলে আজ এতিহার এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

আল:- চাচা যা হবার তা হয়ে গেছে কিন্তু এখন এতিহার অপারেশন করানোটা দরকার। এভাবে তিলে তিলে এতিহা শেষ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে তা কি করে মেনে নিবো বলেন?

এতিহার বাবা:- আল এখন অপারেশন করালে বাচার সম্ভবনা একদমই নেই। তাই এভাবে যতদিন বাচবে ততদিন বেচে থাকতে দেই।

আল:- কিন্তু। তখনি এতিহার মা বলে।

এতিহার মা:- আল আমি মনে করি এতিহার অপারেশন করানো দরকার। আমি বলেছি তুমি ডাক্তারকে অনুমতি দিয়ে দাও।

আল:- ঠিক আছে তাই হবে।

এতিহার বাবা:- আল আরো চিন্তা ভাবনা করে সিদ্যান্ত নিলে ভালো হত।

আল:- নাহ আর চিন্তা ভাবনার দরকার নেই। যা হবার হবে যদি ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে এতিহা বেচে যাবে আর নয়তো মরে যাবে এইটা ফাইনাল। আমি ডাক্তারকে বলে দিলাম আপনারা অপারেশন করাবার জন্য প্রস্তুতি নেন।

ডাক্তার:- ঠিক আছে আগামীকাল অপারেশন করানো হবে।

আল:- ওকে বলে এতিহার কাছে গেলাম। এতিহা ঘুমিয়ে আছে ওর কপালে ছোট্ট করে চুমু খেলাম। সব দোষ আমার আমি যদি জোর করে তোমাকে আমার সাথে রাখতাম তাহলে আজকের দিনটা দেখতে হতো না। আমার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে কিন্তু কি করার আমার চোখের পানি এতিহার গালে দুই ফুটা পড়াতেই এতিহার চোখের পাঁপড়ি নাড়া দিয়ে খুলেছে। এতিহা তাকিয়ে দেখে আমি কান্না করছি তখনি এতিহা বলে।

এতিহা:- আল তুমি কান্না করছো কেনো?

আল:- চোখে কিছু একটা পড়ছে তাই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে কথাটা বলে চোখটা মুছে দিলাম। এতিহা তুমি কেনো এমনটা করেছো?

এতিহা:- কি করবো বলো তুমি তো বেশ আমাকে ভুলে গিয়ে থাকতে পারছো। কিন্তু আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই এমনটা করেছি। আচ্ছা আমাকে একটু আদর করবে? যখনি এতিহা বলছে তখনি আমি ওর গালে কপালে অনেক গুলি আদর করে দিলাম। এতিহা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে। আল আমার খুব বাচতে ইচ্ছে করছে আমি বাচবো তো?

আল:- এতিহা তোমার কিছু হবে না তুমি বাচবে। বলেই এতিহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখছি। এতিহা আমার কপালে ছোট ছোট কিস করতেছে। আজকের রাতটা আমি এতিহার পাশে বসেই কাটিয়ে দিলাম। এতিহার মাথার চুল গুলি জট বেঁদে গেছে। আমি মাথায় তৈল দিয়ে আচরিয়ে দিচ্ছি।

এতিহা:- আল যদি আমি মরে যাই তাহলে তুমি আরেকটা বিয়ে করো কেমন? তখনি আল এতিহার মুখ চেপে ধরেছে।

আল:- তুমি মরে যাবে মানে? আমাকে একা রেখে তুমি যেতে পারবে?

এতিহা:- তুমি আমাকে একা রেখে গেছিলে কি করে? তখনি আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। এতিহা ঘুরে আমার ঠোঁটে ছোট করে কিস করে বলে। আল তোমার যাওয়া আর আমার অভিমান দুইটা সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। কিন্তু এখন তো আমি যেতে চাচ্ছিনা কিন্তু যেতে তো হবেই তাইনা?

আল:- এতিহা তোমাকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারবো না। তুমি চলে গেলে আমিও তোমার সাথে চলে আসবো।

এতিহা:- একদম নাহ তুমি চলে আসলে সবাইকে এক করবে কে? আমি চাই তুমি আমার বাবা মায়ের সাথে থাকবে আর তোমার বাবা মায়ের কাছেই আমার বাবা মাকে রাখবে। সবাই মিলে এক বাড়িতে থাকবে। তুমি বিয়ে করবে তোমার বাচ্চা কাচ্চা হবে। সবাই ওদের নিয়ে খেলা করবে। আস্তে আস্তে আমার কথা তোমার আর মনে পড়বে না। এক সময় আমাকে সবাই ভুলে যাবে যেমন ভাইয়ার আর তোমার আপু লিলির কথা সবাই ভুলে গেছে।

আল:- অনেক বলছো আর না আমি তোমাকে বউ হিসাবে পেয়েছি আর সারাজীবন তোমাকে নিয়ে থাকবো। এখন ঘুরে বসো মাথার চুলের জট অনেক লেগে আছে।

এতিহা:- থাক আর ছুটাতে হবে না এখন আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখো। আমাকে শক্ত করে এতিহা জড়িয়ে ধরে রাখছে আর আমিও। এতিহার শরীর গন্ধটা কত দিন পরে পেয়েছি খুব ইচ্ছে করছে সারাজীবন এমন ভাবে জড়িয়ে রাখি।

আল:- এতিহা তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম রাতের কথা?

এতিহা:- ঐ রাতটার কথা কি কখনো ভুলার মত? আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা যা তোমার কাছ থেকে পেয়েছি। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো এমন হাজারো রাত তোমার ভালোবাসাই সিক্ত হবো।

আল:- তুমি সুস্থ হয়ে যাবে তখন সবসময় তোমাকে খুব ভালোবাসবো। তুমি চাইলেও তোমাকে ছাড়বো না।

এতিহা:- হ্যা আমার ঠেকা লাগছে তোমাকে ছেড়ে যাইতে কিন্তু ভাগ্যের কাছে অসহায় আমরা সবাই। হয়তো আল্লাহ চাই আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার থেকে দুরে সরে যাই।

আল:- আচ্ছা তুমি কি ভাবছো আমি এত সহজে তোমাকে যেতে দিবো?

এতিহা:- বোকার মত কেনো কথা বলো? রুগটা আমার আর আমি জানি কেমনটা হবে আমার সাথে। ঠিক তখনি এতিহা কেমন কেমন করছে। হঠাত করেই কি সব শুরু করছে কিছুক্ষণের জন্য আমাদের পৃথীবিটা থমকে গেছে। তখনি এতিহা কেমন শুরু করছে আমি ডাক্তারকে ডাকতে লাগলাম। ডাক্তার দৌরে এসে এতিহাকে অক্সিজেন লাগিয়ে দিছে। আরো অনেক কিছু করতে আরম্ভ করছে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে অনেক চেষ্টার পরে ডাক্তার বলে।

ডাক্তার:- আপদত কিছুক্ষণের জন্য বিপদ মুক্ত আছে। দেখুন আল সাহেব আমরা তো বলেছি ওনার সাথে বেশী কথা বলা যাবে না। তাও কেনো কথা বলছেন। প্লিজ বাহিরে যান। এতিহার বাবা আমাকে টেনে বাহিরে নিয়ে গেছে। এতিহার মা আমাদের বাড়িতে খবর দিছে এক এক করে সবাই এসেছে। আর ঐদিকে সকল ডাক্তার বোর্ড মিটিংয়ে বসেছে। আম্মা আমাকে শান্তনা দিচ্ছে।

আম্মা:- আল যা হবার তা হবেই এই নিয়ে এমন ভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো হবে না। আমরাও চাই তুই আর এতিহা দুজনে এক সাথে থাক। বাবা ভাইয়া ভাবি সবাই আমাকে বুঝাতে লাগলো। সবার একটাই কথা এতিহা সুস্থ হয়ে যাবে কিন্তু আমার মন বলছে এতিহা আর আমার সাথে সংসার করবে না। তখনি ডাক্তার এসে বলে।

ডাক্তার:- দেখুন কন্ডিশন খুবই খারাপ আপনারা যদি দেরী করেন। তাহলে বাচানোটা একদমিই হাতের বাহিরে চলে যাবে।

আম্মা:- ঠিক আছে আপনি অপারেশন ব্যবস্থা করেন। আমরা সম্মতি দিলাম।

এতিহার বাবা:- হ্যা ডাক্তার আপনাকে অনুমতি দিলাম।

ডাক্তার:- ঠিক আছে! ডাক্তার চলে গেছে। আমরা সবাই বসে আছি এমন সময় আবার ডাক্তার এসে বলে। আল সাহেব আপনি তো ওনার স্বামী আপনি রুগির গার্জিয়ান হিসাবে এখানে সাইন করে দেন।
কাগজটা আল হাতে নিয়ে বলে।

আল:- ডাক্তার এতিহার কিছু হবে না তো?

ডাক্তার:- দেখুন আমরা আমাদের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো। বাকীটা আল্লাহ হাতে।

এতিহার বাবা:- আল সাইন করে দাও।

এতিহার মা:- হ্যা বাবা সাইন করে দাও।

আল:- নেন সাইন করে দিলাম। সাইন করার সময় বুকের বাম পাশের হার্টবির্ট বেরে গেছে। হাতা কাপাকাপি শুরু করছে। তাও সাইনটা করেছি এক মাত্র মনের জোরে। এতিহাকে অপারেশন থিয়িটারে নিয়ে গেছে। যাবার আগে ওর কপালে ছোট্ট করে কিস করে দিলাম। সবাই আল্লাহকে ডাকতে আরম্ভ করেছি। যদি আল্লাহ আমাদের এসব দেখে কিছুটা দয়া মাঁয়া হয়। প্রায় তিন ঘন্টা অপারেশন করানোর পর ডাক্তার রুম থেকে বেড়িয়েছে। সবার আগে আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি ডাক্তার এতিহা কেমন আছে?

ডাক্তার:- সরি মিস্টার আল আমাদের ক্ষমা করে দেন! কথাটা শুনা মাত্রই আমি নিচে বসে গেছি। তখন ডাক্তার বলে। আল সাহেব এতিহা আপনার সাথে কিছু কথা বলবে হয়তো আর দশ মিনিটের মতই আছে। আমি দৌরে রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি এতিহার মাথায় বেন্ডিজ করানো। আমার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলি ছেড়ে দিছে। এতিহার পাশে বসেছি এতিহা হাতটা ধরেছে।

এতিহা:- আল আমাকে ক্ষমা করে দিও আর তোমার কাছে একটা অনুরুদ তুমি আমার বাবা মাকে দেখো। আর হাঁ তুমি কিন্তু আবার বিয়ে করবে।

আল:- সব করবো কিন্তু বিয়ে করতে পারবো না।

এতিহা:- আমাকে জড়িয়ে ধরবে খুব ইচ্ছে করছে তোমার শরীর গন্ধটা নিয়ে মরতে। আমি এতিহাকে জড়িয়ে ধরেছি এতিহা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। তখন এতিহা বলে। আল আমি মরে গেলে তুমি কান্না করোনা কারণ তুমি ভেঙ্গে পড়লে আমার বাবা মা আরো ভেঙ্গে পড়বে।

আল:- এতিহা থেকে যাও প্লিজ থেকে যাও। এর মাঝে এক এক করে সবাই এসেছে। আমি এতিহাকে থাকার অনুরুদ করছি আর এতিহা আমাকে না বলেই চলে গেছে। সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে আমি একদম চুপচাপ হয়ে গেলাম। কারো সাথে কোনো কথা বলিনাই। সবার কান্নার রুল পড়ে যাচ্ছে দেখতে দেখতে এতিহার লাসটা হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম। মেহমান সবাই এসেছে সব শেষে জানা হয়ে গেছে এরপর মাটি দিয়ে দেওয়া হলো। আমি এতিহার কবেরের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম

এতিহার বাবা:- আল এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে? সন্ধা নেমে এসেছে বাড়িতে চলো? আল কিছু বলেনি আলকে সবাই টানাটানি করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। দেখতে দেখতে পাঁচদিন চলে গেছে আমার মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই। তখনি বাড়ির সবাই এসে আমাকে বলে।

আম্মা:- আল এভাবে থাকলে কি হবে। যা হবার তা হয়ে গেছে। আমরা এটার জন্য দায় আর আমরা কি বুঝতে পারতাম এতিহা তোকে ছেড়ে এমন ভাবে চলা যাবে?

এতিহার বাবা:- আল তুমি যদি এমনটা করো তাহলে আমরা কি করবো বলো?

বাবা:- আল এতিহার চলে যাওয়াটা অনেক কষ্টের বুঝতে পারছি কিন্তু এমন ভাবে থাকলে হবে?

আম্মা:- বাবা আল তুই ঠিক আগের মতই হয়ে যা প্লিজ।

আল:- ঠিক আছে তাই হবে এখন তোমরা আমাকে কথা দাও সবাই সব কিছু ভুলে ঠিক আগের মতই হয়ে যাবে? চাচা বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলে।

বাবা:- ঠিক আছে কথা দিতেছি তুই যেমনটা চাস এমনটাই হবে।

আল:- চাচা চাচি এখন থেকে আমাদের বাড়িতে থাকবে আমাদের সাথেই।

আম্মা:- ঠিক আছে তাই হবে। আজ থেকে আমরা ঠিক আগের মতই থাকবো এবার তো তুই খাওয়া দাওয়াটা কর ঠিক মতন।

আল:- ঠিক আছে তাই হবে। আমি ওয়াশ রুমে গেলাম। দরজা বন্ধ করে অনেক কান্না করেছি যা ঝড়নার পানির সাথে মিশে গেছে। দিন যাচ্ছে সময় যাচ্ছে আমিও ঠিক মত কলেজে যেতে আরম্ভ করেছি। আগের চাইতে বেশী মনোযোগী হলাম। আমার পড়া শেষ নিজেই একটা ছোট ব্যবসা আরম্ভ করেছি। প্রতিদিন দুইবার করে এতিহার কবরের পাশে বসে থাকি আর গল্প করি অনেকেই আমাকে পাগল মনে করে কিন্তু আমি তো জানি আমি কেনো এমনটা করি। বাড়িতে আসলেই চাচা চাচি বাবা মা আমার বিয়ের কথা বলে। আজ এক প্রকার আম্মা জোর করেই বলে।

আম্মা:- আল তুই বিয়ে কবে করবি বল?

আল:- আম্মা আমি তো বিয়ে করেছি। আর বিয়ে করতে চাইনা। আমার বউ এতিহা থাকবে যতদিন বেচে থাকবো ঠিক ততদিন। তাই নতুন করে আর কাওকে ভালোবাসতে পারবো না তাই বিয়ের করার কোনো মানে হইনা।

চাচা:- আল এমন ভাবে জীবন চলে না। এতিহা তো মারা গেছে আজ তিন বছর হইছে এখন তোমার বিয়ে করাটা দরকার।

আল:- আমি আর বিয়ে করতে পারবোনা।

ভাইয়া:- কেনো?

আল:- আবার বিয়ে করা মানেই সমজতা করা আরেকটা মেয়ের সাথে। আমি সেই মেয়েটাকে ভালোবাসতে পারবোনা আর দিন দিন মেয়েটি অবিহেলিত হতে থাকবে।

ভাবি:- আল এমন অনেক আছে যাদের বউ মারা যাই তারা আবার বিয়ে করে তুমিও করে নাও।

আল:- আমি তাদের মত হতে চাইনা। হয়ত সামাজিক ভাবে বিয়েটা হবে কিন্তু আমার মন কি সেই মেয়েটার জায়গা করে নিতে পারবে? যদিও পারে কিন্তু আমি চাইনা নতুন কোনো একটা মেয়ে এসে আমার মন থেকে এতিহার জায়গাটা দখল করুক। তাই দয়া করে আমাকে আমার মত করেই থাকতে দাও। সবাইকে বুঝিয়ে আমি রুমে এসে এতিহার ছবির দিকে তাকিয়ে বলি। এতিহা তুমি বলেছিলে আমি তোমাকে ভুলে যাবো! দেখছো আমি তোমাকে ভুলিনি আর কখনো ভুলতে চাইবো না। ভালো থেকো উপারে আর আমি ভালো থাকবো তোমাকে ভালোবেসে তোমার স্মৃতি গুলি নিয়ে।
!!
কিছু কথা:- এটা একটা গল্প তাই সব গল্পে হেপি ইন্ডিং হবে না কিছু গল্পে স্যাড ইন্ডিং হয়। যেমন জীবন চলার পথে সবার মাঝে সুখ থাকে না কিছু মানুষের মধ্যে কষ্টটা থাকে। তবে গল্পটাতে আমি কিছু পরিবারের ভুল বুঝার কারণে অনেকর সুন্দর জীবন অকালে হারিয়ে যায় সেইটাই তোলে ধরার চেষ্টা করেছি। সময় হারিয়ে অনেক পরিবার অনেক কিছু মেনে নেই কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে যাই যার ফলে হারিয়ে যাই নিষ্পাপ কিছু প্রান। আর সবশেষে কথা হলো যেহেতু এটা একটা গল্প তাই আপনারা সবাই গল্প মনে করেই নিবেন। গল্পটা লিখার মাঝে যদি কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে আপন মনে ক্ষমা করে দিবেন। ধন্যবাদ আমার পাশে থাকার জন্য ইনশাআল্লাহ আবারো নতুন কোনো গল্প নিয়ে হাজির হয়ে যাবো আপনাদের মাঝে। ততদিন আপনারা সবাই ভালো থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন। আর একটা কথা দয়া করে সবাই কমেন্ট বক্সে গঠন মূলক মন্তব্য করবেন আপনাদের সবার কমেন্ট গুলি আমি কিন্তু পড়ি। এখানে আজকের মত সমাপ্তি।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here