মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ১২

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১২

★আদিত্যরা এখনো শপিং মলেই আছে।পুরো শপিং মলে শুধু এখন ওরা ছয়জন। সবাই যার যার মতো শপিং করছে। নিলা সেই কখন থেকে একটার পর একটা কুর্তি দেখে দেখেই যাচ্ছে। কিন্তু একটাও সিলেক্ট করতে পারছে না। আবির দূর থেকে এসব দেখে বাঁকা হেসে নিলার কাছে এসে পেছন থেকে একটু ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
–নিড এনি হেল্প মিস কচি বিয়াইন? তুমি চাইলে বান্দা তোমার হেল্প করতে পারে। আমি আবার অনেক হেল্পফুল বয়। স্পেশালি সুন্দরী মেয়েদের ক্ষেত্রে। মেয়েদের সব ধরনের হেল্প করতে আমি রাত দুইটার সময়ও প্রস্তুত থাকি। তোমারও কোন হেল্প দরকার হলে রাত দুইটার সময়ও আমাকে ডাকতে পারো।আই ওন্ট মাইন্ড।

নিলা চোখ গরম করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–ছিহ্ অসভ্য লোক একটা। আপনি জানতো, আমার কোন হেল্প লাগবে না।
কথাটা বলে নিলা ওখান থেকে সরে গেল।
আবির পেছন থেকে বলে উঠলো।
–ভালাই কা তো জামানাই নাই।

নিলা আবার আরেক দোকানে গিয়েও এটা ওটা দেখছে, কিন্তু কিছু সিলেক্ট করতে পারছে না। এটা দেখে আবির মাথা ঝাকিয়ে হাসলো। তারপর নিলার পাশে গিয়ে নিলার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে গাইতে শুরু করলো।

♬ল্যারকি কিউ নাজানে কিউ ল্যারকো ছি নেহি হোতি
♬ল্যারকি কিউ নাজানে কিউ ল্যারকো ছি নেহি হতি
♬ সোচতি হে জিয়াদা, কাম ও সামাঝ তি হে
♬ দিল কুছ কেহতা হে, কুছ অর হি কারতি হে
♬ল্যারকি কিউ নাজানে কিউ ল্যারকো ছি নেহি হতি
♬ল্যারকি কিউ নাজানে কিউ ল্যারকো ছি নেহি হতি

(আবির নিলার সাামনে এসে নিলার দিকে মুখ করে উল্টো দিকে হাঁটতে হাঁটতে নিলার সামনে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে গাইলো)
♬পেয়ার উসেভি হে মাগার,শুরুয়াত তুমহি ছে চাহে
♬ খুদমে উলঝি উলঝি হে,পার বাালোকো ছুলঝায়ে
♬ সাবছে আলাগ হো তুম ইয়ে কেহকে
♬ পাস তুমহারে আয়ে
♬ অর কুছ দিন মে তুম্মে আলাগ ছা
♬ কুছভি না উসকো ভায়ে
♬ তুম হে বাদাল নে কো পাস ও আতি হে
♬ তুম হে মিটানে কো জাল বিছাতি হে

♬ বাতো বাতো মে তুম হে পাছাতি হে
♬ পেহলে হাসাতি হে ফির বারা রুলাতি হে
♬ল্যারকি কিউ নাজানে কিউ ল্যারকো ছি নেহি হতি
♬ল্যারকি কিউ নাজানে কিউ ল্যারকো ছি নেহি হতি
(নিলা এবার আবিরের পায়ের ওপর নিজের পা মেরে দিল।আবির ব্যাথা পেয়ে নিজের পা ধরে লাফাতে লাগলো। নিলা বিজয়ের হাসি দিয়ে গেয়ে উঠলো)
♬ হেই.ইতনা হি খুদছে খুশ হো তো
♬ পিছে কিউ আতে হো
♬ ফুল কাভি তো হাজার তফে
♬ আখির কিউ লাতে হো
♬ বিখরা বিখরা বে মতলব ছা
♬ টুটা ফুটা জিনা
♬ অর কেহ তে হো আলাগ ছে হে হাম
♬ টান কে আপনা সিনা

♬ জিনে কা তুমকো ঢাং সিখলা তি হে
♬ তুম হে জানোয়ার সে ইনসা বানাতি হে
♬ উসকে বিনা এক পাল রেহনা সাকোগে তুম
♬ উসকো পাতাহে এ কেহনা সাকোগে তুম
♬ ইসলিয়ে ল্যারকিয়া ল্যারকো ছি নেহি হতি
♬ ইসলিয়ে ল্যারকিয়া ল্যারকো ছি নেহি হতি

(নিলা দেখলো আবির সুন্দর একটা ফিমেল সেলসম্যান এর দিকে তাকিয়ে আছে। নিলা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে গেয়ে উঠলো)
♬ল্যারকো কা কেয়া হে,কিসি ভি মোর পে ও মুরযায়ে
♬আভি কিসি কে হে,আভি কিসি অরসে ও জুরযায়ে

(আবির নিলার হাত ধরে টান দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গাইলো)
♬ ইক হা কেহনে কো কিতনা টেহলাতি হে
♬ থাক যাতে হে হাম ও জি বেহলাতি হে

(নিলা আবিরকে হালকা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে গেয়ে উঠলো)
♬ ও সারমাতি হে তাভি ছুপাতি হে
♬ ল্যারকি যো হা কেহদে উসে নিভাতি হে
♬ ইসলিয়ে ল্যারকিয়া ল্যারকো ছি নেহি হতি
♬ ইসলিয়ে ল্যারকিয়া ল্যারকো ছি নেহি হতি

(আবির)
♬ না না ল্যারকি কিউ,,

(নিলা আবিরকে সুযোগ না দিয়ে গেয়েই যাচ্ছে)
♬ ইসলিয়ে ল্যারকিয়া ল্যারকো ছি নেহি হতি
♬ ইসলিয়ে ল্যারকিয়া ল্যারকো ছি নেহি হতি
(সংক্ষিপ্ত)

নিলা যেন থামছেই না। আবির নিলার সাথে পেরেই উঠছে না। শেষমেশ আবির ফট করে দুই হাতে নিলার মুখটা ধরে, নিলার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো।নিলাকে থামানোর এটাই বেস্ট উপায় ভাবলো আবির। আকস্মিক এমন এ্যাকশনে নিলা পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল। পুরো শরীর যেন জমে বরফ হয়ে গেল। নিলা চোখ দুটো বড়সড় করে কেমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। দুই মিনিট পর আবির নিলাকে ছেড়ে দিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে বাঁকা হেসে বললো।
–ওয়াও ইটস ডিফারেন্ট। আই লাইক ইট।😉
কথাটা বলে আবির চোখ টিপ মেরে শিস বাজাতে বাজাতে ওখান থেকে চলে গেছে। আর নিলা ওভাবেই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ওর সাথে এইমাত্র কি হয়ে গেল সেটাই ভাবার চেষ্টা করছে।
__

বিহান ফোনে কথা বলছিল। ফোনে ভালো করে নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় বিহান একটু সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। চেঞ্জিং রুমের সামনে দিয়ে যেতে নিলেই হঠাৎ কেউ বিহানের হাত ধরে টান দিয়ে চেঞ্জিং রুমের ভেতরে টেনে নিল। ভেতরে নিয়ে রুমের দরজাটা আটকে দিল। বিহান একটু চমকে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো আয়াত মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বিহান চোয়াল শক্ত করে বললো।
–এইছব কি ধরনের কাজ বাজ? দিনে দিনে কি আপনার জোচ্চর মায়ের লাহান লাজ শরম ছব বেইচ্চা খাইতাচেন?

আয়াত বলে উঠলো।
–সবসময় মায়ের কথা না বললে কি হয়না আপনার? যাগ্গে ওসব কথা ছাড়ুন। দেখুন তো আমাকে কেমন লাগছে? আসলে এই শাড়িটা আমার ওপর মানিয়েছে কিনা সেটাই দেখার জন্য আপনাকে এনেছি। একটু দেখে বলুন না কেমন লাগছে আমাকে?
আয়াত শাড়ির আচল সহ হাত উঁচু করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিহানকে দেখাতে লাগলো।

বিহান ভ্রু কুঁচকে বললো।
–আমারে কি আপনার সেলসম্যান মনে অয় নি?খারায় খারায় আপনের উপরে কমেন্ট করুম।এইছব ছ্যাঁচড়ামি আমার ছামনে করবেন না কইয়া দিলাম। অন্য কাউরে গিয়া এইছব মাঞ্জা দেখান গা।
কথাটা বলে বিহান চলে যেতে নিলেই, আয়াত বিহানের সামনে এসে দুই হাত উঁচু করে বিহানকে আটকালো।তারপর আস্তে আস্তে বিহানের ঘাড়ে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো।
–আপনাকে দেখাবো নাতো কাকে দেখাবো? আপনিই তো আমার সব। আমার হবু জীবন সাথী। আমাকে কিসে মানাবে সেটাতো আপনিই দেখবেন তাইনা?

বিহানের রাগ এবার সীমা ছাড়িয়ে গেল। বিহান আয়াতের হাত শক্ত করে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
–ব্যাস, বহুত হইচে।মিছ আয়াত ইসলাম। একবারই কইতাচি। ভালা কইরা কানের পর্দা খুইল্যা হুইন্যা নিয়েন।আর মাথার ভিতরে ফেভিকল দিয়া চিপকাইয়া লইয়েন। বারবার কইতাম না। আপনি যেই ফ্যান্টাসি দুনিয়ার ঘুইরা বেরান,আমি ছেই জগতের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আপনে যেটা চাইতাচেন এইডা কহনোই ছম্ভম না।কোনভাবেই না। আমি আপনার কোন ফেইরিটেল দুনিয়ার রাজকুমার না। আপনার দুনিয়া, আর আমার দুনিয়া আকাশ পাতাল তফাৎ। আপনি হইলেন আপনার মায়ের রাজকুমারী, আদরের দুলালী।আর আমি হইলাম রাস্তার জংলী কুত্তা। এইছব প্রেম ভালোবাছার আজাইরা ক্যাচাল আমার লাইগ্যা না। আমার ভিতরে কোন দিল নাইক্যা। আছে খালি দাও দাও কইরা জলন্ত আগুন। যে আগুনে আপনে পুইরা ছাই হইয়া জাইবেন। তাই ভালোয় ভালোয় কইতাছি আমার পিছা ছাইরা দেন। নাইলে আমি ভুইলা যামু যে আপনে আদির বইন। কথাটা মনে রাইখেন। আর আপনার মায়ের পছন্দ করা কোন রাজকুমার কে বিয়া কইরা খুছি থাহেন।
একটানা কথাগুলো বলে বিহান আয়াত কে রেখে হনহন করে চলে গেল।

আর আয়াত হতভম্বের মতো ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো, তোমার আগুনে পুড়তে রাজি। তবুও তোমাকে ছাড়তে রাজি না। এ জীবনে তা সম্ভব না। কখনোই না। আমিও দেখি তুমি কতো পোড়াতে পারো।

নূর নিজের থেকেও বড়ো সাইজের একগাদা টেডি কিনে ভরে ফেলেছে। আদিত্যের গার্ডসরা সেই টেডি গুলো নিয়ে যাচ্ছে। আর আদিত্য নূরকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে। নূর আদিত্যের কোলে পা দোলাচ্ছে আর টেডিগুলো দেখছে। একসময় সবাই বাইরে এসে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল
___

রাত ১১টা
নূর বিছানার উপর চারিদিকে বড়ো বড়ো টেডি গুলো ছড়িয়ে রেখেছে। আর তাদের নিয়ে খেলছে। টেডিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থেকে তাদের সাথে একা একাই কথা বলছে। আদিত্য কোনরকমে নিজের জন্য একটু জায়গা বের করে শুয়ে পড়লো। নূরকে এভাবে টেডিকে জড়িয়ে ধরে শুতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মনে মনে ভাবলো, নূর হয়তো আজ আর ওর বুকে ঘুমাবে না। নূরকে বুকে নিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে। আজ কিভাবে ঘুমাবো আমি? কি করার আছে আর? মেয়েটা টেডির সাথে কত খুশী ভাবে আছে। ও ওভাবেই থাক। কথাগুলো ভেবে আদিত্য চোখ বন্ধ করে জোরপূর্বক ঘুৃমানোর চেষ্টা করলো।

নূর অনেকক্ষণ ধরে টেডিগুলোকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। কিন্তু কেন জানি ওর ঘুম আসছে না। কেমন জানি উসখুস লাগছে। নূর কতক্ষণ এপাশ ওপাশ করে একেক বার একেকটা টেডি নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। নাহ কিছুতেই ঘুম আসছে না। নূর এবারে মাথাটা একটু উঁচু করে টেডির ওইপাশে শুয়ে থাকা আদিত্যর দিকে তাকালো। একবার আদিত্যর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার টেডির দিকে তাকাচ্ছে। শেষমেশ মাঝখানে থাকা টেডিটাকে সরিয়ে নিচে ফেলে দিল নূর।তারপর আদিত্যের কাছে ঘেঁষে গিয়ে, আদিত্যের বুকের ওপরে থাকা ওর হাতটা সরিয়ে দিল। আদিত্যের হাতটা সরিয়ে দিয়ে নিজে ওর বুকে মাথা রেখে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। হ্যাঁ এখন অনেক ভালো লাগছে ওর। কেন জানি হিরোর বুকে অনেক ভালো লাগে ওর। মনে হয় এটা শুধু ওর জায়গা। শুধু ওরই হক আছে এইখানে। হিরোর শরীর থেকে অনেক সুন্দর একটা ঘ্রাণ পায় নূর। নূর আদিত্যের বুকে নাক লাগিয়ে ঘ্রাণ টা ভালো করে টেনে নেয়। মনে মনে ভাবে,আচ্ছা ঘ্রাণ কি খাওয়া যায়? খাওয়া গেলে হিরোর ঘ্রাণ টা খেয়ে ফেলতাম। নিশ্চয় অনেক ইয়াম্মি হবে।কাল হিরোকে জিজ্ঞেস করবো ঘ্রাণ খাওয়া যায় নাকি। এসব ভেবে নূর হাসিমুখে আদিত্যর বুকে মুখ ঘষে চোখ বন্ধ করে আরামে ঘুমিয়ে পরে।

চোখ বন্ধ করা অবস্থায়ই আদিত্যের ঠোঁট জোড়ায় ভেসে উঠলো একরাশ প্রশান্তির হাসি। এটার জন্যই তো ও কখন থেকে অপেক্ষা করছিল। আদিত্য দুই হাত দিয়ে নূরকে নিজের সাথে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নিয়ে, সেও শান্তির ঘুম দিল।

চলবে….
(জানি আজ একটু ছোট হয়ে গেছে। বাসায় একটু ব্যাস্ত ছিলাম। তাই এইটুকুই লিখতে পেরেছি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here