মহব্বত পর্ব -০১

🍁🍁🍁

মিথিলার রাগে দুঃখে নিজের মাথা নিজেরই ফাটাতে মন চাচ্ছে। কার সাথে বিয়ে হলো?তার নাম কি? কি করে? কেমন দেখতে? কোথায় থাকে? এর একটা প্রশ্নের উত্তর ওর জানা নেই। কিছু ভালো লাগছে না ওর সব কিছু বিরক্ত লাগছে। অতিরিক্ত রাগে, বাবা-মা’র ওপর অভিমানে চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। কিছু ভাবতে পাড়ছে না ওর আর ড্রায়ার থেকে স্লিপিং পিল খুঁজে একটা খেয়ে নিলো। এখন ঘুমাতে না পড়লে মাথায় প্রশ্নরা গিজগিজ করবে মাথা ব্যাথা করবে। স্লিপিং পিল খেয়ে বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে পড়লো চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়তেই আছে।……

_★_অতীত_★_

তিন ঘন্টার এক্স বয়ফ্রেন্ডকে বিদায় দিয়ে বাসায় ডুকতেই মিথিলা অবাক হয়ে গেলো। তিন ঘন্টার এক্স বয়ফ্রেন্ড বলার কারণ ও আছে। কেননা তিন ঘন্টা আগে জিসান মিথিলাকে কলেজের সবার সামনে প্রপোজ করে আর মিথিলা অস্থিরতার সাথে সেটা একেসেপ্ট করে পরে জিসানকে বুঝিয়ে বলবে ও রিলেশন করবে না। তাই সবার সামনে সিনক্রিয়েট না করে প্রপোজাল একসেপ্ট করে নেই। মিথিলা জিসানকে একা পেয়ে যখন বুঝিয়ে বলতে যাবে। কিন্তু তার আগেই জিসানের বন্ধুরা জিসান আর মিথিলাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় ট্রিড নিবে তাই এতো কিছুর মধ্যে মিথিলা জিসানকে কথাটা বলতেই পারেনি। খাওয়া দাওয়া শেষে যখন জিসান মিথিলাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাইকে উঠতে বলে তখন মিথিলা বলল

– ‘আমরা হেটে যায় আসলে এখান থেকে আমার বাসা বেশি দূরেও নই আর আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল’ (মিথিলা)

-ওহ ওকে চল আর এই তোমার আপনি আগে টা আগে বন্ধ করো (জিসান)

মিথিলা জিসানের কথার উত্তর না দিয়ে বলল

-‘দেখুন আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই প্লিজ কিছু মনে করবে না আমি রিলেশন করতে চাই না’ (মিথিলা)

মিথিলার কথা শুনে জিসানের পা থমকে গেলো জিসানকে দাড়িয়ে যেতে দেখে মিথিলাও দাড়িয়ে গেলো

-মানে? তাহলে আমাকে সবার সামনে একসেপ্ট করলে কেনো? (জিসান)

-দেখুন আমাকে ভুল বুঝবেনা আমি আসলে আপনাকে সবার একসেপ্ট করেছি কারণ সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাইছিলাম না। আর এটা আপনার জন্য আপমানজনক ছিল কেনো না আপনি কলেজের সিনিয়র + টপারও আমি যদি সবার সামনে রিজেক্ট করতাম তাহলে আপনাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করতো তাই এমনটা করেছি (মিথিলা)

জিসান দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে হালকা হেসে বলল

-আচ্ছা তুমি কি কাউকে ভালোবাসো বা আমি কি কোনো দিক দিয়ে খারাপ (জিসান)

-না না কি বলছেন ভাইয়া এগুলা আপনি অনেক ভালো আর আমার প্রেম ট্রেম ভালো লাগে না তাই (মিথিলা)

-‘ওহ তাহলে কি বিয়ে ও ভালো লাগে না তোমার?’ (জিসান)

-‘হুম পবিত্র সম্পর্ক ভালো লাগে ‘(মিথিলা)

জিসান কিছু বলবে তার আগে মিথিলা আবার বলল

-‘আপনাকে আর কষ্ট করে আসা লাগবে না কেউ দেখলে খারাপ ভাববে ‘(মিথিলা)

-‘ওকে কলেজে দেখা হচ্ছে’ (জিসান)

-‘হুম’ (মিথিলা)

জিসান আর আগোলো না মিথিলার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো যত দু্র মিথিলাকে দেখা যায়। মিথিলা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো। জিসানের দৃষ্টির সীমানার বাইরে আসতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো মনে হচ্ছে এতোক্ষনে প্রাণ ফিরে পেলো। ভেবেছিল জিসান ওভার রিয়াক্ট করবে কিন্তু তেমন কিছু হলো না। তাই মনের আনন্দে বাসায় আসলো। কিন্তু বাসায় ডুকতেই চমকে গেলো। বাসায় আত্নীয়-স্বজনরা। মিথিলা ভাবতে লাগলো আজ কোনো অকেইশন আছে কি না কিন্তু মাথায় এমন কিছুই আসলো না। এদের মাঝে কিছু অচেনা মুখও আবিষ্কার করলো। মিথিলাকে দেখে মিথিলার মা আফরোজা বেগম দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে হেসে বলল

-‘আই মা চল আমার সাথে ‘

মিথিলা ভরকে গেলো তার মায়ের বিহেভিয়ারে। কি হচ্ছে কিছু মাথায় আসছে না। তাই চুপচাপ মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে রুমে এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মিথিলা কৌতুহল আর দমাতে না পেড়ে বলল

-‘আম্মু বাসায় কি হচ্ছে? আজ কোনো অকেইশন আছে? কই সকালে কলেজে যাওয়ার সময় তো এমন কিছু বলো নি? তাহলে এখন কিসের….. (মিথিলা)

মিথিলার কথা শেষ করতে না দিয়ে আফরোজা বেগম তারা দিয়ে রাগ নিয়ে মিথিলার ওয়েবড্রাবে কিছু খুজতে খুজতে বলল

-‘তোমাকে এতো কিছু জানতে হবে না শুধু জেনে রাখো আজ তোমার বিয়ে’

মিথিলার মাথায় জেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো কানে শুধু একটা কথায় বাজতে লাগলো তা হলো ‘আজ তোমার বিয়ে’

মিথিলি অবাক হয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল

-‘আম্মু এগুলা কি বলছ? তুমি আমার সাথে ফান করছো তাই না? (মিথিলা)

আফরোজা বেগম কাংক্ষীত জিনিসটি পেয়ে গিয়ে মিথিলার হাতে দিয়ে শান্ত চোখে বলল

-এখন ফান করার সময় না আম্মু যাও ফ্রেশ হয়ে এটা পড়ে আসো (আফরোজা বেগম)

মিথিলা কি বলবে? কি হচ্ছে বা হবে তা সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কিছু বুজতে পারছে না। তাই তদ্ভব হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়ের মনের কথা বুঝতে পেরে আফরোজা বেগম বলল

-‘এখনই এতো ঘাবড়ানোর কিছু নাই এখন তোকে নিয়ে যাবে না এখানেই থাকবি তুই! এই দেখ কত দেরি হচ্ছে যা যা তারাতাড়ি রেডি হয়ে নে এখনি কাজি আসবে’

মিথিলা কাজির কথা শুনে বুক কেঁপে উঠল ধীর কন্ঠে বলল

-‘আম্মু তোমরা হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিলে কে….

মিথিলার কথা শেষ করতে না দিয়ে আফরোজা বেগম তারা

-‘বিয়েটা হয়ে যাক তোর সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। আর তুই তো আমাদের আগেই জানিয়েছিস তোর পছন্দের কেউ নাই তাহলে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়?

-‘আম্মু তুমি হুট করে বলছ আমার বিয়ে আমার মেন্টাল প্রিপারেশন থাকাটাও তো প্রয়োজন এভাবে হুট করে বললে হয়’

-‘হ্যাঁ আর এখনি তো আর তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না শুধু কাবিন করে রাখতে চাইছে আর কোনো কথা নয় যা এই থ্রি-পিস পড়ে আই’

একপ্রকার ঠেলে মিথিলাকে রেডি করালো। চোখের পলকে বিয়েটাও সম্পন্ন হয়ে গেলো। মিথিলাকে যখন ‘কবুল’ বলতে বলা হয়েছিল তখন তিন অক্ষরের শব্দটা মিথিলার কাছে পৃথিবী সমান ভারী মনে হচ্ছিল। কবুল বলার পর থেকে মিথিলা পাথরের মত বসে আছে কোনো দিকে মন নাই ওর যখন মিথিলার মা আফরোজা বেগম মিথিলাকে খাইয়ে দেন তখন খেতে ইচ্ছা না করলেও মুখ বুঝে খেয়ে নেয় সেই সকালে খেয়েছিল আর এখন সন্ধ্যা খুদা তো লাগবেই। আস্তে আস্তে বাসা খালি হতে থাকলো। মিথিলা সুযোগ বুঝে রুমে চলে আসে। রুমের দরজা লাগিয়ে। রাগে মাথা চেপে দাঁড়িয়ে আছে মিথিলা।

মিথিলার রাগে দুঃখে নিজের মাথা নিজেরই ফাটাতে মন চাচ্ছে। কার সাথে বিয়ে হলো?তার নাম কি? কি করে? কেমন দেখতে? কোথায় থাকে? এর একটা প্রশ্নের উত্তর ওর জানা নেই। কিছু ভালো লাগছে না ওর সব কিছু বিরক্ত লাগছে। অতিরিক্ত রাগে, বাবা-মা’র ওপর অভিমানে চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। কিছু ভাবতে পাড়ছে না ওর আর ড্রায়ার থেকে স্লিপিং পিল খুঁজে একটা খেয়ে নিলো। এখন ঘুমাতে না পড়লে মাথায় প্রশ্নরা গিজগিজ করবে মাথা ব্যাথা করবে। স্লিপিং পিল খেয়ে বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে পড়লো চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়তেই আছে।……

_★_বর্তমান_★_
.
.
মাঝরাতে মিথিলার মনে হলো কেউ মিথিলাকে লতার মতো জড়িয়ে ধরে আছে। নড়তে গেলোও পারলো না ঘুমের ঔষধ খাওয়াই চোখ খুলতে চেয়েও খুলতে পারলো না। কিন্তু অনুভব করলো কানে এসে কেউ ঘোর লাগা কন্ঠে ফিসফিস করে বলল

-Welcome to my life Mrs. Fayaz Arham. my queen Be ready for romantic punishment

মিথিলার কানে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল।

#চলবে কি?

#তাসনিম_তামান্না
#মহব্বত
সূচনা পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here