মায়ার বাঁধন পর্ব -১৯+২০

#মায়ার_বাঁধন
১৯.
নীরা দুর্বল পায়ে এগিয়ে যায়। যত এগোচ্ছে ক্রমেই তার শরীর ঝিমিয়ে আসছে। অসাড়তা ঘিরে ধরছে প্রকটভাবে।
মন অস্থিরতায় ক্ষীণ হয়ে আসছে। ছাদের দরজা অব্দি এসে থমকে দাড়ায় সে। নাহ, তারপক্ষে এখন নিচে যাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। অভিমানে নাকি শঙ্কায়? বোঝা দায়। কিন্তু সে যাবে না কিছুতেই যাবে না। নীরা পুনরায় ঘুরে দাড়ায়। যত্র এগিয়ে এসে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাড়ায়।
গাল ফুলিয়ে অদূরে দৃষ্টি ফেলে। সে আজ কিছুতেই তুরানের ডাকে সাড়া দেবে না। কিছুতেই না।

হাতের ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রেখে দেয় তুরান। পরপরই শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খুলতে খুলতে বিরক্তি নিয়ে বের হয় ঘর থেকে। আশেপাশে সর্বত্র খুঁজেও নীরার হদিস মেলে না। অবশেষে পা বাড়ায় ছাদের পানে। সে নিশ্চিত নীরা সেখানেই আছে।


কিঞ্চিৎ হাঁপিয়ে গেছে তুরান। বেশ কতগুলো সিঁড়ি ভেঙে ছাদে আসতে হয়। তাছাড়া আজকে দিনটা অনেক ধকল গেছে তার। ক্লান্তিতে এখন আর পা চলতেই চাইছে না কিন্তু তার সমস্ত ক্লান্তি নিঃশেষ হয় এক সন্ধ্যামালতীর দর্শনে। খোলা চুল, নীলচে পোশাক, ওড়নার দুরন্তপনা সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত মোহিনীয়তার বেষ্টনী। তুরান ধীরুজ পায়ে এগিয়ে আসে। একেবারে নীরার পেছন ঘেঁষে দাড়ায়। আলতো স্পর্শে কাঁধে হাত রাখে। চমকে ওঠে নীরা। পেছন ঘুরে ঝটপট। ধাক্কা লাগে তুরানের সঙ্গে। আরেকদফা ধড়ফড়িয়ে উঠে সে। পেছতে নিলে দেখা যায় পেছনে আর অবশিষ্ট জায়গা নেই। নীরা একবার পেছনে রেলিংয়ে তো আরেকবার তুরানের মুখপানে দৃষ্টি নড়চড় করে। তুরান শান্ত, সাবলীল ভঙ্গিতে দাড়িয়ে। নীরার ছটফটানি দেখে মনে মনে মজা পাচ্ছে বেশ। ওপরে ওপরে কন্ঠে গম্ভীরতা এনে বলল,

-“ডেকেছিলাম যে!”

নীরা নিশ্চুপ। নত মস্তকে চঞ্চল চোখে এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘোরাতে ব্যস্ত। অকস্মাৎ তুরান এক কান্ড ঘটিয়ে বসে। নীরার ছোট্ট, কোমলীয় মুখশ্রী নিজের শক্তপোক্ত হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নেয়। চমকিত নীরা বিষয়াবৃত হয়ে তাকিয়ে পড়ে। তুরানের দৃষ্টি করুণ। নীরা সেই করুণ দৃষ্টিকে পড়ার চেষ্টা করে। বেশিক্ষণ সুযোগ হয় না। তুরান আগেই মুখ খোলে। অতি নম্র কন্ঠে বলে,

-“রেগে আছো?”

নীরা মাথা দোলায়। যার অর্থ রেগে নেই। তুরান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পুনরায় বলে,

-“তাহলে, অভিমান করেছ?”

নীরা এবারেও একই ভঙ্গিতে মাথা দোলায়। তুরান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নীরার মুখটা আরও একটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে অসহায় কন্ঠে বলে,

-“সরি।”

নীরা দ্বিগুণ বিস্মিত। সবকিছু কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তার। একেবারেই অবিশ্বাস্য। তুরান ফের মুখ খোলে।

-“ক্যাম্পাসটা আমার জন্য একটা কর্মক্ষেত্র। আমি একজন রাজনীতিবিদ। আমার কর্মের শুরু থেকে শেষ ওই ক্যাম্পাসেই হয়। আমার কর্মজীবনে আমি আমার পারসোনাল লাইফ ক্রিয়েট করে জটিলতা বাড়াতে চাই না। এখন না বুঝলেও ধীরে ধীরে এসব বিষয়ে তুমি নিজে থেকেই অবগত হয়ে যাবে। আশা করি আর কোনো ভুল ধারণা জন্মাবে না তোমার আমাকে ঘিরে।”

নীরা মোহিত হয়ে তুরানের কথাগুলো শ্রবণ করছিল। হঠাৎ কী হলো তার চাপা পড়া অভিমান গুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। এক ঝটকায় তুরানের হাতজোড়া সরিয়ে দিল নিজের সংস্পর্শ থেকে। গাল ফুলিয়ে বলল,

-“তাই না ছাই! নিজেকে বিবাহিত গণ্য করলে মেয়েদের হিরো হয়ে চলা হবে কী করে? এজন্যই যত বাহানা।”

তুরান ভ্রু কুঁচকে ফেলে। নির্নিমেষ চেয়ে বলে,
-“ভীষণ জানো দেখছি।”
-“হুম, জানব না। বর হ্যান্ডসাম হলে অনেক কিছুই না চাইতেও জানতে হয়।”
-“বেশ,তা আর কী কী জানো বলো দেখি আমিও একটু শুনি?”

তুরান কথা বলতে বলতে নীরার দিকে কিছুটা ঝুলে এসেছে। কথার ব্যস্ততায় শুরুতে খেয়াল না করলেও বিষয়টি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে দূরে সরে যায় নীরা। আমতা আমতা করে বলে,

-“আ…আর…কিচ্ছু জানি না আমি।”
-“তাই বুঝি?”
-“হুম, তাই।”
-“তাহলে এইমাত্র যে বললে?”
-“না চাইতেই বেড়িয়ে গেছে, ভুলে।”

তুরান কিয়ৎক্ষণ শিথিল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নীরার ভীত মুখশ্রীতে। অকস্মাৎ হু হা শব্দ তুলে হেসে ওঠে। নীরা ফের চমকায়। অপলক চেয়ে থাকে তুরানের মুখপানে। কী প্রাণবন্ত সেই হাসি। নীরার হৃদয়ের ঝড় হাওয়া বইয়ে ছাড়ছে। নীরার নিশ্বাস আটকে আসছে যেন। লাজলজ্জা, ভীতি-শঙ্কা, মান-অভিমান ভুলে সে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে তুরানের প্রফুল্ল চিত্তে। খুঁজে নেয় এক টুকরো শান্তির স্থল।

—–
বারংবার রঙ নম্বর থেকে মিসড কল আসায় চরম বিরক্ত নয়ন। কপাল কুঁচকে নিরেট দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে ফোনের স্কিনে। কী অদ্ভুত পাবলিক! বারংবার মিসড কল দিচ্ছে অথচ কল ব্যাক করলে রিসিভ করছে না। অতিষ্ঠ হয়ে মনে মনে কিছু অকথ্য ভাষায় কথা শুনিয়েছে নয়ন এই নম্বরের মালিককে। উপায়ন্তর না পেয়ে এখন ওত পেতে বসে আছে রিন বাজতেই চেপে ধরবে বাটন। শুনিয়ে দেবে কিছু শক্ত বাক্য।

তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শেষমেশ কাঙ্খিত সময় এলো। নয়ন মিসড কল রিসিভ করে নিতে সক্ষম হলো। কিন্তু লাভের লাভ কিচ্ছু হলো না। সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে গেল। সেই সঙ্গে ফোনের সুইচড অফ হয়ে গেল। নয়ন যতবারই ডায়াল করেছে নম্বর বন্ধ। সে বেশ বুঝতে পারছে এটা কেউ ইচ্ছেকৃত ভাবে করছে। এখন উপায় একটাই নম্বর ব্লক লিস্টে ফেলে দেওয়া। কিন্তু এটা করলে সে তো কখনোই অজ্ঞাত ব্যক্তির হদিস খুঁজে পাবে না। তাছাড়া সে যে অন্য নম্বর ইউজ করে নয়নকে ডিস্টার্ব করবে না তার কী গ্যারান্টি আছে? অতিষ্ঠ হয়ে ফোনটা বিছানায় আছড়ে ফেলল নয়ন। দু-হাতে চোখ ঢেকে শুয়ে পড়ল।

—–
-“কই বললে না তো?”

-“কী বলতাম?”

-“ওই যে বর হ্যান্ডসাম হলে যেমন অনেক কিছু না চাইতেও জানতে হয় তাহলে বউ সুন্দরী হলে কী করতে হয়?”

নীরার হাত থেকে চিরুনি খসে পড়ল। শুতে যাওয়ার আগে চুল বেঁধে প্রিপেয়ার্ড হতে চাইছিল সে। তার আর হলো না।
তুরান তার দুষ্টুমি আবার স্টার্ট করে দিয়েছে। এই নিয়ে হয়তো বিশ বার এই এক কথা জিজ্ঞেস করে করে নীরার মা’থা খে’য়ে নিয়েছে। মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলতেই তার যত কারসাজি। প্রতিবারেই এই একটি প্রশ্নে নীরা তুমুল লজ্জায় নেতিয়ে পড়ছে। তা দেখে চরম মজা নিচ্ছে তুরান। ইচ্ছে জাগছে নীরার টমেটোর মতো লজ্জামাখা বদন খানিতে টুক করে চুমু একে দিতে।

প্রতিবারের মতো এবারেও নীরার অবস্থা করুণ। লজ্জায় মাথা নত করতে করতে চিবুক ছুয়েছে গলদেশ। চোখের দৃষ্টি মেঝেতে পড়ে থাকা চিরুনিতে। চিরুনিটা নিচে পড়ে সে যেন দ্বিগুণ অস্বস্তিতে আছে। তুলতেও পারছে না। সহসা কাঁধে গরম কিছুর অস্তিত্ব টের পেতেই দৃষ্টি উঁচিয়ে তাকায় সে। সরাসরি তার দৃষ্টি গিয়ে ঠেকে আয়নাতে। আয়নার মধ্যে থেকে স্পষ্ট দেখতে পারছে তুরান তার পেছনে। তাদের মধ্যে দুরত্ব একেবারেই সামান্য। যার ফলে তুরানের নিশ্বাস তার কাঁধে আঁছড়ে পড়ছে। তুরানের দৃষ্টিও আয়না। আয়নাকে সাক্ষী রেখেই দুজন দু’জনের পানে চেয়ে আছে অপলক। মনে হচ্ছে কোনো চোখাচোখি প্রতিযোগিতা চলছে। যার প্রতিযোগী স্বয়ং তারা দুজন।

.
চলবে,
®অহমিকা মুনতাহাজ নিশি#মায়ার_বাঁধন
২০.
চুপিসারী অনুভূতিতে ডুবে থেকে ভালোই কাটছে তুরান, নীরার জীবন। কেটে গেছে দুটো সপ্তাহ। বাড়িতে শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, তুরান আর ভার্সিটিতে অতশী, সীমা, রুহি এদেরকে ঘিরেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন উপভোগ করছে নীরা। তুরানের দিন কাটে ভার্সিটিতে নানারকম ব্যস্ততায় আর রাত কাটে বউয়ের সঙ্গে প্রাণোচ্ছল সময় কাটিয়ে। ভার্সিটিতেও চোখাচোখি হয় তাদের কিন্তু মত বিনিময় হয় খুব কম। সবকিছু ঠিকঠাক চললেও তাদের সম্পর্কের ভেতরকার দুরত্ব এখনো আগের মতোই স্থিতিশীল।

এরই মধ্যে তুরান ভার্সিটিতে ফ্রেশার পার্টির আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে। আজ সেই কাঙ্খিত দিন। নীরা বেশ এক্সাইটেড। নবীনদের তালিকায় সে ও রয়েছে। অতশী সেই এক ঘন্টা আগে থেকে তাকে তাড়া দিচ্ছে ফোনে। ভার্সিটিতে তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্য। কিন্তু নীরা শাড়ী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বেবি পিংক কালারের নেটের ওপরে ব্ল্যাক সুতার কারুকার্যপূর্ণ শাড়ি। শরীরের উন্মুক্ত অংশ ঢেকে রাখতে বেশ কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে নীরাকে। তুরান অনেক আগেই চলে গেছে। তার ওপরে অনেক দ্বায়িত্ব। নীরাকে বলে গেছে ড্রাইভারের সঙ্গে চলে যেতে।

শ্বাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয় নীরা। অতি সাবধানতার সহিত কদম ফেলছে সে। কোন মতে গাড়িতে গিয়ে চুপটি করে বসে পড়ে। সে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। পরপরই বেজে ওঠে নীরার ফোন। তুরান কল করেছে। নীরা বিস্মিত হয় না। ইদানীং প্রায়ই তাদের মধ্যে কথোপকথন চলে। প্রয়োজন, কখনো কখনো অপ্রয়োজনে। নীরা কল রিসিভ করে কানে তোলে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে তুরানের ব্যস্ত কন্ঠ,

-“কোথায় তুমি? এখনো এসে পৌঁছতে পারোনি?”

নীরা অসহায় কন্ঠে বলে,
-“কী করব বলুন সব দোষ এই শাড়ির। কিছুতেই ঠিক থাকতে চাইছে না।”

-“এক মিনিট এক মিনিট তুমি শাড়ি পড়েছ?”
-“হুমম৷”
-“কিন্তু কেন?”
-“আমার ফ্রেন্ডরা সকলে পড়ছে তাই। ওরা বলেছে শাড়ি না পড়লে রাগ করবে।”
-“কিন্তু এবার যে আমি রেগে যাচ্ছি।”
-“ওমা,কেন?”

তুরান নিরব রয় সেকেন্ড খানেক। পরপরই নিরেট কন্ঠে সতর্কতা জানায়,
-“এখানে বাজে মন্তব্য করার মতো লোকের অভাব নেই। শাড়ি যখন পড়েছ তা সামলে রাখার দ্বায়িত্বও কিন্তু তোমার। মনে রেখ তোমার সম্মানের সঙ্গে জড়িত আমার সম্মান।”

নীরা কিছু বলতে নেয় কিন্তু তার আগেই লাইন কেটে গেছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মন খারাপ করে বসে থাকে নীরা। সে পড়েছে এখন মহা চিন্তায়।

—–
কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ভার্সিটির ক্যাম্পাস জুড়ে আয়োজিত প্রোগ্রাম। বিশালাকৃতির স্টেজ। সারিবদ্ধ ভাবে নবীনরা গেট দিয়ে প্রবেশ করছে। একপাশে ছেলেরা আরেক পাশে মেয়েরা। তাদেরকে ফুল, চকলেট দিয়ে বরণ করে নিচ্ছি সিনিয়ররা। বেশ রমরমা আয়োজন। ক্যামেরা এনে এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করা হচ্ছে।

নীরা গাড়ি থেকে নেমে খুব যতনে শাড়ি সামলে এগিয়ে চলেছে। তার পূর্ণ দৃষ্টি শাড়ির কুঁচিতে। চিন্তিত ভ্রু যুগল কুঁচকে আছে। গুণে গুণে পা ফেলছে। অকস্মাৎ গায়ের ওপর কিছু পড়তেই সামনে তাকায় সে। হতভম্ব হয় মুহুর্তেই। ফুলের পাপড়ি ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে তার গায়ে। একইভাবে অন্য পাশে একটি ছেলেকেও একই ভঙ্গিতে বরন করা হচ্ছে। নীরা এগিয়ে যায় ভেতরে। অকল্পনীয় ভাবে তার হাতে ফুটন্ত টকটকে লাল গোলাপ ও চকলেট তুলে দেয় তুরান। নীরা প্রস্বস্থ হাসে। তুরানের চোখের ইশারায় ওয়েলকাম জানায়। নীরাও একইভাবে চোখের ইশারায় জানায় ধন্যবাদ। সকলের করতালিতে হুঁশ ফিরে দুজনার। নীরা লজ্জান্বিত দৃষ্টি লুকিয়ে ঢুকে পড়ে ভার্সিটির মধ্যে তার বান্ধবীদের কাছে। পেছন পেছন তুরানও চলে যায় নিজের কাজে।

—–
-“ওয়াও! তোকে তো পরী লাগছে মাই জান।”
-“হুম ঢং, তোর চেয়ে কম।”
-“ধুর কোথায় আমি আর কোথায় তুই।”

নীরা আর অতশীর কথার মধ্যে বাম হাত ঢুকিয়ে দেয় সীমা। দুজনকে থামিয়ে বলে,
-“আরেহ তোদের দুজনকেই ডানা কাটা পরী লাগছে মাঝখান থেকে পে’ত্নী হলাম আমরা দুজন।”

সীমার কথায় রুহি সায় দেয়। বলে,
-“হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস।”

সীমা, রুহির কথায় ঘোর বিরোধিতা করে অতশী, নীরা। দুজনেই বলে ওঠে,
-“একদমই নয়। তোদেরকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে।”

-“তাই বুঝি তাহলে চল চারজন চারটে বয়ফ্রেন্ড পাকড়াও করে পালিয়ে যাই।”

রুহির এমন কথায় অতশী তটস্থ হয়ে বলে,
-“যেতে তো চাই কিন্তু শুধু ওনাকে নিয়ে।”

নীরা ভ্রু কুঁচকায়। সন্দিহান কন্ঠে বলে,
-“এই উনি টা আবার কে? বল বল।”

অতশী জিভে কামড় বসায়। লজ্জামাখা দৃষ্টি এদিক ওদিক ঘোরাতে থাকে। নীরা অতশীর কাঁধে আলতো ধাক্কা মে’রে বলে,
-“কী রে বল কে’স টা কী? তলে তলে টেম্পু চালাও?”

সীমা, রুহি হু হা করে হেসে দেয়। নীরার দৃষ্টি অতশীর দিক থেকে সরে ওদের দিকে যায়। জোরালো কন্ঠে বলে,
-“ও তো মুখে তালা ঝুলিয়েছে তোরা অন্তত বল।”

সীমা হাসতে হাসতে খোঁচা মে’রে বলে,
-“আরেহ আছে আছে আশেপাশেই আছে। একটু ভালো ভাবে দেখলেই পেয়ে যাবি।”

নীরা বিরক্ত হয়। রেগে বলে,
-“পরিষ্কার করে বলবি তোরা?”

রুহি এবার সিরিয়াস হয়ে কিছু বলতে নেয়। কিন্তু তার আগেই অতশী মুখ খুলে। সে তার লজ্জারাঙা মুখশ্রী তুলে অবাধ্য লোচনে বলল,

-“আজ থাক। একেবারে সামনাসামনি দেখাব তোকে।”

-“কেন? আজ নয় কেন?”

-“বললাম যে সামনাসামনি দেখাব৷”

-“সত্যি তো? এখন মেনে নিলাম তবে।”

-“সত্যি সত্যি তিন সত্যি।”

কিছুক্ষণ চারজন চোখাচোখি করে। অতঃপর একসঙ্গে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

—–
নানারকম কার্যক্রমের মাধ্যমে শেষ হয়েছে ফ্রেশার’স পার্টি অর্থাৎ নবীন বরন উৎসব। সমগ্র আনুষ্ঠানিক সময়টায় নীরার অবাধ্য দৃষ্টি কেবল তার স্বামী নামক সুপুরুষটির দিকেই ছিল। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখেছে তুরানের ছোটাছুটি। কখনো কখনো দৃষ্টি মিলেছে দু’জনার। ইশারায় হয়েছে মত বিনিময়।

সুন্দর একটি দিনের ইতি টেনে কেবলই ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে উদ্ধৃত হচ্ছিল নীরা। তার সঙ্গে আছে তার তিন বেস্ট ফ্রেন্ড। এমন সময় ক্যাম্পাসের মাঝে বিরাট বড় জটলা নজরকারে তাদের।

-“এই ওখানে কী হয়েছে রে? কোনো ঝামেলা নয়তো?”

নীরার কথায় সাড়া দিয়ে অতশী বলল,
-“হতেই পারে। চল তো গিয়ে দেখি।”
-“হ্যাঁ চল।”
-চল
-চল

চারজন একত্র হয়ে এগিয়ে গেল সেদিকটায়। ঠেলেঠুলে কোনো মতো একটু আধটু জায়গা করে নিল ওরা। একটু জায়গা পেয়ে একটু পর আরও একটু প্রচেষ্টা চালিয়ে ঢুকে গেল একেবারে ভেতরে। তারপর যা দেখল তা দেখে তারা তিনজনই বিস্মিত। সবথেকে বেশি বিস্মিত নীরা। কী চলছে এখানে? অতশীর মনেও তীব্র শঙ্কা জেঁকে বসেছে? আসন্ন বি’প’দের সংকেত কড়া নাড়ছে তার অন্তঃকোণে। সীমা,রুহি একে অপরের দিকে চোখাচোখি করছে আর ক্ষণে ক্ষণে অতশীর দিকে তাকিয়ে শুকনো ডোক গিলছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যার মনের অবস্থা সবথেকে করুণ তার কথা কেও জানতেও পারছে না। হ্যাঁ, সে হলো নীরা। ভরা ক্যাম্পাসে নিজের স্বামীর সম্মুখে অন্য কোনো নারী যদি ফুল হাতে নিয়ে প্রপোজালের উদ্দেশ্যে তৈরি থাকে সেই মুহূর্তে একটি স্ত্রীর মনে ঠিক কী রকম প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে তা মূল্যায়ন করা আদৌ কী সম্ভব? হুম, এখানে এই মুহুর্তে সেটাই হচ্ছে। সকলকে সাক্ষী রেখে তুরানকে প্রপোজ করছে জেরি। ওয়েস্টার্ন ড্রেসে, জাঁকজমকপূর্ণ সজ্জায় নিজেকে সজ্জিত করে ছিনিয়ে নিতে এসেছে তুরানের হৃদয়। কিন্তু আদোতে কী তা সম্ভবপর হবে কস্মিনকালেও?

.
চলবে,
®অহমিকা মুনতাহাজ নিশি

গ্রুপ –

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here