মিঠা প্রেম পর্ব -০৭

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

আনান আধ ঘন্টা আগেই রেস্ট্রুরেন্টের সামনে যায়।কিন্তু ভেতরে ঢোকে না।পাশে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করতে লাগে।ভীষণ টেনশন হচ্ছে তার।আনানের কথা শোনার পর কিভাবে না কিভাবে রিয়াক্ট করবে জুঁই।ডিউটি আওয়ার শেষ হলে জুঁই বের হয়।বের হয়েই সে আনানকে দেখতে পায়।আনান জুঁইকে দেখে সিগারেট ফেলে দেয়।ভিতরের নার্ভাসনেসকে চাপা দিয়ে একটা হাসি দেয় আনান।জুঁইও ফর্মালিটি রক্ষার্থে হাসি দেয়।

” জ্বী বলেন কি বলবেন।”

ভাবলেসহীন ভাবে বলে জুঁই।আনান শুকনো গলায় বলে,,,,

” কোথাও বসে কথা গুলো বলি?চলেন ভেতরে যাই।”

” না না।এই রেস্ট্রুরেন্টে যাওয়া যাবে না।অন্য কোথাও চলেন।”

পাশেই একটা ছোট্ট কফিশপ ছিলো।হেঁটে যেতে মিনিট পাঁচেকের মতো লাগবে।আনান জুঁই সেখানে যায়।প্রচন্ড গরম পরেছে।আনান দুইটা কোল্ড কফি অর্ডার করে।স্ন্যাকস আইটেমের মধ্যে ডোনাট।

” এবার বলেন।”

” কিভাবে বলবো বুঝছি না।”

শুকনো গলায় বলে আনান।হাত পা কাঁপছে তার।এসির নিচে বসেও অনবরত টিস্যু দিয়ে কপালে ঘাম মুছছে সে।জুঁই সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়।

” স্কিউজমি।আর ইউ ফিলিং ব্যাড?”

” নার্ভাস লাগছে আসলে।কখনো কাওকে এই কথা বলতে হবে স্বপ্নেও ভাবি নি তো।”

” কোন কথা?”

আনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তারপর শুরু করে বলা,,,

” আমি শেহজাদ আনান।”

” জ্বী।”

আড়চোখে তাকিয়ে বলে জুঁই।

” আমি ছোট থাকতে আমার বাবা মারা গেছেন।আমার বাবার বড় ভাই প্রবাসী হওয়ায় সে বিয়ে করেছিলেন না।ফ্যামিলির সম্মতিতেই বাবা মারা যাওয়ার পর আমার চাচার সাথে আমার মায়ের বিয়ে হয়।বলতে গেলে আমি এতিম।”

” আপনার ফ্যামিলি হিস্ট্রি শুনতে আমায় ডেকেছেন?”

” না।আমার কাছে আমার ফ্যামিলি হিস্ট্রি অত্যন্ত লজ্জাজনক।মানুষকে বলে বেড়ানোর মতো না।কিন্তু আমার মনে হলো আপনাকে বলা উচিত।তাই আর কি….”

” আমায় বললেন।তাই তো?”

এরই মধ্যে ওয়েটার অর্ডারকৃত খাবার নিয়ে আসে।আনান কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।ওয়েটার চলে গেলে আনান বলতে শুরু।

” আমার কোনো মেয়ে বন্ধুবান্ধব নেই আর আমি খুব অসামাজিক টাইপের।”

” আপনার এগুলো কথা শুনে আমি কি করবো।”

কফি খেয়ে বলে জুঁই।আনান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,,,

” আমার মনে আপনাকে নিয়ে কিছু অনুভূতি সর্বক্ষণ আমায় পীড়া দেয়।প্রথমে বয়সের আবেগ ভাবলেও পরে বুঝতে পারি এটা আবেগ না।যদিও অনুভূতিও আবেগের একটা অংশ।”

আনানের কথা বলার সময় ডোনাট খাচ্ছিলো জুঁই।আনানের কথা শুনে সে বিশম খায়।আনান জলদি করে ওয়েটারকে বলে পানি আনায়।জুঁই পানিটা খেয়ে বলে,,,,

” আর ইউ সিরিয়াস?”

” মেইবি।মিথ্যা দিয়ে কোনো কিছু শুরু করতে চাই না।তাই অতীতের সব বলে ফেললাম।”

” আমি যদি বলি আমার অতীত আপনার অতীতের থেকেও জঘন্যতম?”

” সরি?”

” আপনার তাও মা আছে।আমার কেউ নেই।জন্মের আগেই আমার বাবা মা*রা গেছেন আর জন্মের পর মা।ছোটবেলায় দাদা-দাদির কাছেই ছিলাম।তারা গত হওয়ার পর মামা-মামী সম্পত্তির জন্য আমায় নিয়ে আসেন।শুধু মাথার ওপর ছাদ আর খাওয়াটুকুই।পড়াশোনা,জামা কাপড় এগুলোর নিজের খরচ আমার নিজের ইই জোগাড় করতে হয়।”

” আমার আপনার অতীত নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।”

” আপনার না থাকলেও আপনার ফ্যামিলির থাকতে পারে।নিশ্চয়ই কোনো ভালো ফ্যামিলির লোকজন৷ একজন এতিম মেয়েকে তাদের পুত্রবধূ করবেন না!”

” সংসার আপনি যাকে বিয়ে করেছেন তার সাথে করবেন।তার সাথে ভালো থাকলেই হলো।যুগ পাল্টেছে মেডাম।এখন আর চৌদ্দ গুষ্টির ওপর একটা ছেলে বা মেয়ের সাংসারিক বা বৈবাহিক জীবন নির্ভর করে না।”

কথাটা বলে একটা টিস্যু পেপার নেয় আনান।সেখানে নিজের ফোন নাম্বার লিখে জুঁইকে দেয়।জুঁই সেটা হাতে নিয়ে অবুঝ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।

” এটা আমার নাম্বার।আপনি সময় নিন।সময় নিয়ে ভাবুন যে আমাকে গ্রহণ করা যায় কি না।নেগেটিভ বা পজেটিভ যেটাই হোক আপনার মতামত প্লিজ আমায় জানিয়েন।”

______💗

পরীক্ষা শেষ হয়েছে শালিকের সপ্তাহ খানেক হলো।পড়ার টেবিলটা বড্ড অগোছালো হয়ে আছে।শালিক টেবিল গুছাতে যায়।গুছাতে গিয়ে পুরোনো ডায়েরী পায়।যদিও ডায়েরীটা অতটাও পুরোনো না।দুই তিন বছর আগের হবে।চিনতেও দেরি হয় নি শালিকের।ডায়েরীটা তার ইই।কৌতুহল বশত ডায়েরীটা খোলে সে।একটা শুকনো গোলাপ পায় শালিক।লাল গোলাপ।যদিও সেটা শুকিয়ে কালচে লাল বর্ণ ধারণ করেছে।কিন্তু চিনতে ভুল হয়নি তার।এটা তামিমের দেওয়া গোলাপ। ইংলিশ প্রাইভেট থেকে আসার সময় কুয়াশাজড়ানো ফাঁকা রাস্তায় এই ফুল দিয়েই তামিম প্রপোজ করেছিলো শালিককে।শালিকের মনের অন্তরালে থাকা দগদগে ঘা তে নুনের ছিটা পরে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। না চাইতেও চোখের দৃষ্টিসীমানা ঝাপসা হয়ে আসে শালিকের।চোখের ওপরিভাগের আই লিডের ক্ষুদ্র ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি হতে নির্গত নোনা জল অনাদরে শুকনো গোলাপটার ওপর পরে।শালিকের জীবনে তামিমের অবর্তমানে শালিকের জীবন থেমে নেই ঠিক ইই কিন্তু কখনো কখনো অতীতের সুন্দর মুহুর্তগুলো শালিকের মনটাকে থামিয়ে দেয়।কারও অবর্তমানে কারও জীবন থেমে যায় না।কিন্তু সেই মানুষটার স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে মনটাকে থামিয়ে দেয়।

শালিক আর পাতা উল্টায় না।সাহস পায় না।বর্তমানের সুন্দর মুহুর্তগুলো ভবিষ্যতে মাঝে মাঝে যন্ত্রণাদায়ক অতীত হয়ে দাঁড়ায়।যেমনটা হয়েছে শালিকের ক্ষেত্রে।আগে জানলে শালিক কখনোই তামিমকে তার জীবনে গ্রহণ করতো না।আচ্ছা?তামিমও কি এখন কষ্ট পায় শালিকের কথা ভেবে?হয়তো না।সে তো নিজের মুখেই স্বীকার করেছে শালিকের প্রতি তার ভালোবাসা মিথ্যে আর কৃত্রিম ছিলো।তাই তার কষ্ট পাওয়ার কথা না।কিন্তু শালিক তো জান প্রান দিয়ে তামিমকে ভালোবেসেছিলো।আদোও কি ভোলা সম্ভব প্রথম প্রেমকে?শালিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পুরোনো বই গুলোর পাতার মাঝে,তোষকের নিচে,ওয়ারড্রবের কাপড়ের ভাজেও তামিমের দেওয়া কিছু প্রেম পত্র পায় শালিক।এর মধ্যে একটা ছিলো রক্তে লিখা।কিন্তু এটা আসলেও রক্তে লিখা কিনা এ নিয়ে শালিকের সন্দেহ আছে।শুভ্র পাতায় লিখা রক্তাক্ষর গুলো কালচে রঙ ধারণ করেছে।শালিকের এর জন্য মায়াও হচ্ছে আবার সন্দেহও হচ্ছে।সবগুলো লাভ লেটারকে এক করে একটা ছেঁড়া শপিং ব্যাগে ভরে রাখে শালিক।

_______💗

বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে শালিক।পুরো ঘর অন্ধকার।ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি হতে নির্গত নোনা জল যেন বন্ধ হওয়ার নাম ইই নিচ্ছে না।আগে তাও সবার সামনে কেঁদে দিতো।এখন শালিকের কান্না এই অন্ধকার ঘর ছাড়া কেউ দেখে না, কেউ না।কত কি ইই না করেছিলো শালিক তামিমের জন্য।ভাগ্যিস সেদিন সেদিন আহান এসেছিলো।তা না হলে সেই পাগলামিটার জন্য শালিকের পুরো জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেত।

জীবনে চলার পথে ভালোবাসার জন্য পাগলামি করা নিতান্তই বোকামি ছাড়া অন্য কিছু না।লায়লা-মজনু ভালোবেসে ম*রেছে অন্যের হাতে নির্যা*তিত হয়ে আর রোমিও জুলিয়েটকে ছু*রির আঘাতে হত্যা করা হয়েছে।।যাদের ভালোবাসা ইতিহাসে লেখা হইছে তাদের এই অবস্থা হলে আমাদের কি হবে?
–আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ [ তিনি ছিলেন আমার খুব কাছের একজন বড় ভাই আর আমার জীবনের একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড।১১ই এপ্রিল বাইক এক্সিডেন্টে সে না ফেরার দেশে চলে যান।তার এভাবে চলে যাওয়ায় আমি বেশ বড়সড় ধাক্কা খাই।এখনো তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারিনি।এমন কোনো দিন নেই তার কথা ভেবে কান্নাকাটি করি না।ইদানীং বেশি ভেঙে পরেছিলাম তাকে নিয়ে যার কারণে গল্প দিতে পারি নাই।জোর করে তো আর লেখালেখি হয় না।সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।আল্লাহ যেন তাকে ওপারে ভালো রাখেন আর তাকে উছিলা করে তার সাথে থাকা বাকীদেরও ভালো রাখেন ]

শুক্রবার। ছুটির দিন।দুপুরের পরে শালিককে আহান কল দেয়।শালিক যেন এই সুযোগের ইই অপেক্ষা করছিলো।সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থাকতে বলে।ঘুরতে নিয়ে যাবে শালিককে। আহানের কথামতো শালিক রেডি হয়ে নেয়।ঠোঁটে হাল্কা ন্যুড কালারের লিপস্টিক,চোখে চিকন করে কাজল আর কপালে ছোট্ট কালো টিপ।লম্বা বেণুনী করে চুলগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নেয় সে।কিন্তু সামনের চুল গুলো যে বড্ড অবাধ্য।কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না এদের।ফ্যানের বাতাসেই এগুলো শালিককে বারবার বিরক্ত করতে লাগে।এরই মধ্যে বাইকের হর্ণের শব্দ পায় শালিক।ছুটে যায় বাইরে।যাওয়ার সময় পুরোনো চিঠির ব্যাগটাও নিয়ে নেয় সে।গিয়ে দেখে আহান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” উঠ।”

শালিক বাইকে উঠে বসে।আহান বাইক চালানো শুরু করে। কিছু দূর যাওয়ার পর আহান শালিককে ডাক দেয়।

” শালিক শোন।”

” হু বলো।”

” তোকে আজকে সুন্দর লাগছে।”

” খোঁচা দিও না তো।মানুষ কত কি দেয় আর আমি এই লিপস্টিক কাজল টিপ ছাড়া কিচ্ছু দিতে পারি না।”

” এগুলোই তোকে সাধারণের মাঝে অসাধারণ করে তোলে।”

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

পূর্বের পার্ট-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here