মেঘবিলাসী পর্ব ২৩+২৪+২৫

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_23

জিসান এখন নিজের মধ্যে নেই। তার চোখ আটক আছে সামনে দাঁড়ানো নারীসত্তা টির উপর। এই নারী যে সে নারী নয়। এই নারীর ক্ষমতা অনেক। সে যেমন তাকে ক্ষতবিক্ষত করতে পারে। তেমনি তার একটা মিষ্টি হাসি জিসানের বুকে সুখের ঢেউ তুলতে পারে।

আর এখন যে রূপে দাঁড়িয়ে আছে,এতে তার বুকে অসীম সুখের সাথে বুকের বা পাশে তীক্ষ্ণ ব্যাথাও অনুভব করছে।এই নারীর ধারা সব সম্ভব।সে জিসানকে নানা অনুভূতির জালে ফাঁসাতে পারে।তার জীবনের সকল এক্সপেরিয়েন্স এই জায়গাতে আসে শূন্যে।

তিন্নি জিসান কে দেখছে। জিসানের চোখের ভাষা আজ অন্যরকম। তিন্নিকে দেখে জিসান বরাবরই মুগ্ধ হয় সেটা ও জানে। কিন্তু আজকে তার চোখের ভাষাটা তিন্নি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। জিসান যতই তিনি দিকে এগুচ্ছে ততই তার বুকের দুক দুক শব্দ টা বেড়েই চলছে। নিশ্চয়ই আশেপাশের সবাই এই শব্দটা শুনতে পাচ্ছে।
জিসান তিন্নির পাশে এসে দাঁড়াল। রাইমা কে উদ্দেশ্য করে বললো

-“এই যে মিস শালিকা, পরিবেশটা হঠাৎ করে একটু গরম হয়ে গেল না? কেমন গরম গরম লাগছে।”

তিন্নি বিস্মিত চোখে জিসানের দিকে তাকালো। ছি! ছি! কথার কি ছিরি।এই লোকটা আসলেই অসভ্য।
জিসানের কথার মানে তিন্নি বুঝতে পারলেও বেচারী রাইমা বুঝতে পারলো না।সে বললো

-“কি বলেন ভাইয়া গরম লাগছে?আমার রুমে চলেন,সেখানে এসি আছে।”

তিন্নি রাগী চোখে রাইমাকে দেখলো।জিসান বললো
-“আরে শালীকা,এই গরম এসির বাতাসে যাবে না।”

-“তাহলে কিভাবে যাবে?”

-“সেটা তুমি এখন বুঝবে না শালিকা। বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে কিন্তু অসম্ভব সুন্দর লাগছে চোখ ফেরানো দায়।”

রাইমা জিসানের কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেলো।রাইমাকে লজ্জা পেতে দেখে জিসান বললো

-“তোর শালিকে কাহিনী কি বলতো? এমনভাবে লজ্জা পাচ্ছো যেন আমার আগেও কেউ তোমাকে একই কথা বলেছে।”

এবার রাইমা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ঠিক তখনই পেছন থেকে তামিম এসে বললো

-“আরে ভাইয়া তুমি আর সায়েদ ভাইয়া তো দেখি একই ডায়লগ দিলে। কিছুক্ষণ আগেই তো তারা রাস্তার মরে দেখা করে এসেছে।”

-“কি শালিকা কাহিনী এত দূর গড়িয়েছে?”

রাইমার এখন মনে হচ্ছে দৌড়ে পালাতে। কিছু না ভেবে সে তাই করলো। জিসান আর তামিম একসাথে হেসে উঠলো। তিন্নি তাদের দুজনের দিকেই চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
এমন সময় তিন্নির মা জিসান এবং তিনি কে ডেকে নিয়ে গেলেন। তিন্নির নানু এতক্ষণ ঘুমোচ্ছিলেন।
তাদেরকে দেখে তিন্নি নানু বললেন

-“কি নাত জামাই খালি বউয়ের আঁচলের ধরেই ঘুরলে চলবে? আমরা কি কোন সুন্দরী নাকি?”

-“কি যে বলেন নানু। আপনি এত সুন্দরী বলেই তো ভাগ্যক্রমে আমিও সুন্দরী বউ পেয়েছি। নানা ভাই আপনাকে দেখে এমনি এমনি পাগল হয়নি। আগুনঝরা সুন্দরী আপনি। আমার তো আফসোস হচ্ছে আপনাকে আমি আগে কেন পাইনি? তাহলে তো আপনাকে বিয়ে করে ফেলতাম?”

-“আমাকে আর বুঝ দিতে হবে না? তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় আমার নাতনির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ। খালি বউকে আদর সোহাগ দিলে চলবে আমাদেরকে একটু দেখবে না? যাইহোক মরার আগে নাতির ঘরে পতি দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হবে কি আমার?”

এই দুজনের কথা শুনে তিন্নি ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। সে লজ্জায় এখানে দাঁড়াতে পারছে না।
জিসান ভাবছে, নাতির ঘরে পতি কিভাবে দেখবেন নানু, বউ তো আমার কাছ থেকে 10 হাত দূরে দূরে চলে। আর আপনার নাতনি তো আমাকে নাকানি-চুবানি খাওয়ায়। মাঝে মাঝে তো মন চায় আপনার নাতনির মাথায় বন্ধু ঠেকিয়ে একটা চুমু খেয়ে ফেলি।
তিন্নি এবার বলে উঠলো

-“নানু এসব কি হচ্ছে? তুমি এমন করলে কিন্তু আমি আর কখনোই বাসায় আসব না।”

-“আমি খারাপ কি বললাম। আরে তোর রাগ দেখাচ্ছিস কেনো? আমি কি তোর জামাইকে খেয়ে ফেলবো নাকি?”

-“যা খুশি তাই করো। মন চাইলে খেয়ে ফেলতে পারো। যত্তসব।”

তিন্নি একথা বলেই রাগে হনহন করে চলে গেল রুম থেকে। এবার নানু বললেন

-“এইযে নাতজামাই, এই বাঘিনী কে বশে আনতে পেরেছো তো?”

-“কি করবো নানু আমার বাঘিনী তো ভীষণ ডেঞ্জারাস। কিছুতেই বশে আনতে পারছি না।”

-“আরে নাতজামাই শোনো, তোমাকে কিছু টিপস দেই। এই বাঘিনী গুলা যতই ডেঞ্জারাস হোক। ভালোবাসা পেলে ঠিক তোমার কোলে উঠে বসে থাকবে।”

-“সমস্যা তো সেখানেই নানুর।”

-” শোনো তোমার বাঘিনী এমনে না মানলে জোর করে মানাও। ছোটবেলা থেকে চিনি ওকে। ভীষণ জেদি। কিন্তু একটু আদর পেলেই মোমের মতো গলে যায়।”

-“দোয়া করবেন আমাদের জন্য।”

-“হ্যাঁ তা তো অবশ্যই করবো ।ভালো থাকো তোমরা।”

জিসান ছাদে উঠে দেখলো সবাই রাতুলকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে।পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো তিন্নি, রাইমা আরো কয়েকজন কাজিন মিলে ছবি তুলছে। জিসান সামনে যেতেই মুনা বললো

-“ভাইয়া আপনি তিন্নি আপুর সাথে দাড়ান তো, আপনাদের কাপল পিক তুলবো।”

মুন একপ্রকার জোর করেই জিসানকে তিন্নির পাশে দাঁড় করালো। এবার দুজনেই ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। ফটোগ্রাফার দুজনকে একটু ক্লোজ হয়ে দাড়াতে বললো। জিসান কিছুটা ভয় নিয়েই তিন্নির কাঁধে হাত রাখলো। কিন্তু তিন্নি কিছুই বললো না। সে সুন্দরভাবে স্মাইল করে পিকচার তুলছে। জিসান কিছুতেই এই রহস্যময়ী নারী কে বুঝতে পারে না। কখনো সে খুব রেগে যায় আবার কখনো খুবই স্বাভাবিক।
কিছুক্ষণ সবাই যে যার মত মজা করছে। হঠাৎ দিল্লির পাশের চেয়ারে একটি ছেলে এসে বসলো। ছেলেটাকে তিন্নি খুব ভালো করেই চেনে। রাতুল ভাইয়ের ফ্রেন্ড রিফাত। তিন্নিকে দেখেই রিফাত বললো

-“কেমন আছো তুমি? অনেকদিন পর দেখা।”

-“জ্বী ভাইয়া ভালো আছি আপনি ভালো আছেন?”

-“হ্যাঁ ভালো আছি। তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল? অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম বলবো বাট তোমার সাথে দেখা হয়নি আর।”

রিফাত কি বলতে চাই সেটা তিন্নির মতো মেয়ের বোঝা কোন ব্যাপারই না। সে ভালোভাবেই জানে রিফাত তাকে কি বলতে চায়। আগেও রিফাতের সাথে তিন্নির দেখা হয়েছে।
দূরে দাঁড়িয়ে জিসান তিন্নির দিকেই নজর রেখে চলছে। আজ তো সে তার বউকে এক মিনিটের জন্যও চোখের আড়াল করতে চায়না। এই পরী টা কে কখন কে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় বলো তো জায়না। কিন্তু তিন্নির পাশে এই ছেলেটাকে জিসানের ভালো লাগছে না।
তিন্নি রিফাতকে বললো

-“আসলে ভাইয়া এক্সাম নিয়ে আমি ব্যস্ত ছিলাম তো তাই এই বাসায় বেশি একটা আসা হয়না।”

-“আসলে আমি তোমার বাবা-মায়ের সাথে আগে কথা বলতাম।কিন্তু পরে ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলি।”

তিন্নি কিছু বলতে যাবে তার আগে জিসান রিফাতের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো

-“হ্যালো ব্রাদার!”

-“হ্যালো! আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না?”

-“জি আমি এসিপি আবরার জাওয়াদ জিসান। তিন্নির হাসবেন্ড।”

রিফাত ভীষণ অবাক হল জিসানের কথা শুনে। সে বললো
-“তোমার বিয়ে কবে হলো তিন্নি?”

জিসান মুচকি হেসে বললো
-“এইতো কয়েক মাস হলো। ঘরোয়াভাবে হয়েছে তো তাই সবাই এখনো জানেনা। আপনি নিশ্চয়ই রাতুলের ফ্রেন্ড?”

-“জি!”

-“কিছু মনে করবেন না। আমি কি আমার বউকে নিয়ে যেতে পারি?”

তিন্নি কিছুটা অবাক হচ্ছে জিসানের এতটা অধিকারবোধ দেখে। তারও কি এতটাই অধিকার আছে মানুষের ওপর? তিন্নির অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করছে।
জিসান তিন্নিকে নিয়ে পাশের একটা টেবিলে বসলো।

–“তুমি দুই মিনিট বসো আমি এক্ষুনি আসছি।”

জিসান চলে যেতেই তিন্নি তার হাতের দিকে চোখ বোলালো। দুই হাত ভর্তি মেহেদি তার। এই মেহেদী তার একদম পছন্দ না।মুনা জোর করে দু হাত ভরে মেহেদি লাগিয়ে দিয়েছে। তার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। এখন সে খাবে কিভাবে?
হঠাৎ পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো

-“সমস্যা নেই রাতে আমি নিজ দায়িত্বে আমার নাম খুঁজে নিবো। এখন জলদি খেয়ে নাও।”

তিন্নি দেখতে পেলো জিসান তার মুখের সামনে খাবার নিয়ে বসে আছে। এই লোকটা কিভাবে বুঝলো আমার এখন খিদে পেয়েছে? এক মিনিট,একটু আগে লোকটা কি বললো? আমার হাতে এই লোকের নাম লিখেছি? কি মনে করে নিজেকে?
তিন্নিকে ভাবতে দেখে জিসান বললো

-“চিন্তাভাবনা পরে করো, আগে খেয়ে নাও।”

-“আমি আপনার হাতে খাব?”

-“হ্যাঁ!!কেন কোন সমস্যা? আমার হাত কিন্তু একদম পরিষ্কার।”

-“আপনি মামনি কে ডাকুন। আমি মামনি হাতে খাবো।”

-“মামনি এখন অনেক ব্যস্ত তাই চুপচাপ আমার হাতে খেয়ে নাও, যদি হা করো।”

তিন্নি আর কোন উপায় না পেয়ে জিসানের হাতেই খেয়ে নিলো।
হাতে মেহেদি পরে তিন্নি বেচারী আছে মহা সমস্যায়। পেটের সাইডে ভীষণ চুলকাচ্ছে। সে সোজা তার রুমে চলে গেলো। এই মুহূর্তে লেহেঙ্গা টা চেঞ্জ করতে হবে। সে দ্রুত গা থেকে ওড়না টা খুলে ফেললো।

বাড়িতে চারিপাশের গানের মিউজিক বাজছে ভীষণ জোরে। জিসান ইম্পর্টেন্ট একটা কল এসেছে। তাই সে কথা বলতে তিন্নির রুমের বারান্দায় চলে এসেছে। রুমে আলো জ্বলছে তাই রুম থেকে বারান্দার কিছু দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ শব্দ পেয়ে জিসান পিছনে তাকালো। তিন্নি রুমে এসেছে। জিসান রুমের দিকে এগোতে যেয়েও হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। জিসানের কেমন গলা শুকিয়ে আসছে। প্রিয় মানুষটিকে কখনো এভাবে দেখা হয়নি তার। জিসান চোখ নামিয়ে নিলো। কিন্তু তাঁর অবাধ্য চোখ বারবার প্রিয় মানুষটার দিকে পড়ছে। এবার যেন জিসানের দমবন্ধ হয়ে আসছে। তিন্নি এবার তার নীচে স্কার্টের খোলার চেষ্টা করছে। হাতে মেহেদি থাকায় বেশি একটা সুবিধা করতে পারছে না। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর সে সেটা খুলতে পারলো। জিসান তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। এই মেয়েকে আশেপাশে একবারও খেয়াল করেনা? আমার জায়গায় যদি অন্য কে আসত?

নিচের স্কার্ট টা খুলে তিন্নি ভীষণ আরাম পাচ্ছে। জিসান ভয়ে ভয়ে এক চোখ খুলে তাকালো। তিননি এখন লেহেঙ্গার শর্ট টপ আর নিচে জিন্স পরে আছে। তার বউ কখনো জিন্স পরা ছাড়তে পারবে না। দেখা যাবে শাড়ির নীচে জিন্স পড়ে বসে আছে। তবে এই মুহূর্তে তাঁর সামনে দাঁড়ানো রমণীকে ভীষণ আবেদনময়ী লাগছে। আর এক মিনিটও দাঁড়ানো যাবেনা। দেখা যাবে এই মেয়ে উপরে টপ্স খুলতে শুরু করেছে। সে বারান্দার দরজায় টোকা দিলো?
হঠাৎ শব্দ শুনে তিন্নি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো। দ্রুত তার চোখ গেল বারান্দার দিকে।#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_24

বারান্দার কাচের গ্লাসটি খুলে জিসান ভেতরে আসলো। জিসান কে দেখামাত্র তিন্নির দ্রুত ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিলো। তিন্নির মেজাজ এখন ভীষণ গরম। কত বড় অসভ্য এই লোক। এতো সময় বারান্দায় লুকিয়ে ছিলো?চোখ গরম করে চেচিয়ে তিন্নি বললো

-“আপনি এখানে কি করছেন? ভীষণ অসভ্য মানুষতো আপনি? বারান্দায় লুকিয়ে আপনি আমাকে এই অবস্থায় দেখেছিলেন?ছি! ছি!

তিন্নি কিছু বুঝে উঠার আগেই জিসান এক হাতে তিন্নির উন্মুক্ত কোমর জরিয়ে ধরলো।আর অন্য হাতে তিন্নির মুখ চেপে রাখলো।জিসান তিন্নির কানে ফিস ফিস করে বলতে লাগলো

-“হিসস!! এতো চেচাও কেনো?আমি কি কিছু ইচ্ছে করে দেখেছি নাকি?তুমিই তো সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছ।চেঞ্জ করার আগে আসে পাশে দেখে নেওয়ার দরকার ছিলো।আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে?

তিন্নি ছটফট করতে শুরু করলো। জিসান তিন্নির মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো।তিন্নি বললো
-“আপনি একটা অসভ্য।আমাকে রুমে আসতে দেখে আপনি কিছু বলেননি কেনো?”

-“বলার কোনো সুযোগ দিয়েছো?এসেই সব খুলতে শুরু করে দিয়েছো।”

-“অসভ্য লোক।ছাড়ুন আমাকে।”

-“তুমি জানো অসভ্য কাকে বলে?তুমি চাইলে আমি উদাহরণ সহ বুজিয়ে দিতে পারি।”

-“আপনি তো ভীষণ ফাজিল। আমিতো আপনাকে ভালই মনে করেছিলাম।”
-“এখানে ফাজলামির কি দেখলে?আর সকল মহাপুরুষরা তাদের বউদের কাছে অসভ্য হয়।”

তিন্নি ভাবছে এই লোকটার আজ হলো কি?ড্রিংস করেনি তো?এমন পায়ে পা ফেলে ঝগড়া করছে কেনো?”
-“আপনি কি নিজেকে মহাপুরুষ মনে করেন?”

-“মনে করার কিছু নেই।আমি মহাপুরুষই।কেনো তোমার কোনো সন্দেহ আছে?”

তিন্নি চোখ কুচকে তাকালো।
-“আমি যদি মহা পুরুষ না হতাম তাহলে তোমার এমন আবেদনময়ী রূপ দেখে এখানে দাড়িয়ে থাকতাম না।”

তিন্নি এবার ভীষণ লজ্জা পেলো।ওড়নাটা গায়ের সাথে ভালো করে জড়িয়ে নিলো।জিসানের একটা হাত এখনো তিন্নির কোমরে বিচরণ করছে।তিন্নি দুই হাতে জিসানের বুকে হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে।

-“আরে বাবা!!আমার বউ দেখি লজ্জাও পায়। এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।”

-“আমার ভীষণ অস্থির লাগছে।প্লীজ সরে দাড়ান।”

জিসান এবার তিন্নিকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো।তিন্নির ফর্সা মুখটা একদম লাল হয়ে গেছে।লজ্জায় নাকি রাগে বুঝা যাচ্ছে না।

-“নেক্সট টাইম যদি কখনো এমন করেছেন না, আপনার নামে মামলা করে দিব।”

-“সরি টু সে, তোমার মামলা রেজিষ্টারে হবে না। আর তাছাড়া পুলিশ তো তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।”

-“আমি ওই রিয়াজ ভাইয়ের কাছে আপনার নামে মামলা করব।’

-“ওকে মামলা করো, বাট আমার অপরাধ টা কি?”
এবার তিন্নি কিছুটা দমে গেলো। বোকার মত শুধু শুধু ঝগড়া করছিলো। এই লোকটা তার স্বামী সেটা তো সে কয়েক মিনিটের জন্য ভুলেই গিয়েছিলো।

-“আপনি রুম থেকে বের হন তো আমি চেঞ্জ করব।”

জিসানের হঠাৎ চোখ পরল তিন্নির কোমরের দিকে। একদম লাল হয়ে আছে। সে দ্রুত তার ব্যাখ্যা খুজেঁ সেখান থেকে স্যাভলন ক্রিম বের করলো।

-“এটা তোমার দরকার হতে পারে।”

তিন্নি আবারও অবাক হয়ে জিসানকে দেখছে। এই লোকটার চোখ এখানেও পড়েছে। অথচ চেহারা দেখলে তো মনে হয় কতো ইনোসেন্ট।
জিসান আর কিছু বলল না মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আবারও সেই হাসি।অসভ্য লোকটার হাসিটা এতো সুন্দর কেনো? প্রত্যেকবার এই হাসিতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। নিশ্চয়ই তুবা এই লোকের হাসি দেখেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। আর কিছু ভাবতে পারল না তিন্নি। তার মনে হচ্ছে এখনই তার ছাদে যাওয়া উচিত। না জানি এই তুবা আবার কি নাটক শুরু করলো। কিন্তু সবার আগে এই হাতের মেহেদি উঠাতে হবে। ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে মেহেদী ওঠাতে যেয়ে তিন্নি বেশ অবাক হলো।এই ফাজিল মুনা কি কাজটা করেছে।খুব ছোট করে জিসান নামটা লেখা। জিসান দেখলে তার আর মান সম্মান থাকবে না। সে দ্রুত চেঞ্জ করে ছাদের দিকে রওনা হলো।
জিসান ছাদে আসতেই তুবা তার দিকে এগিয়ে আসলো। হাসিমুখে তুবা বললো

-“আপনি কোথায় ছিলেন?”

-“আপনি কি আমাকে খুঁজছিলেন?”

-“না আসলে তেমন কিছু নয়। আসলে আপনার সাথে কথা বলে ভালই লাগছিল।”

হঠাৎ জিসানের চোখ পরলো দরজার দিকে। হন্তদন্ত হয়ে তিন্নি ছাদে উঠেছে। জিসান খেয়াল করলো তিন্নি তাদের দিকেই কেমন শুরু চোখে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা ভেবে জিসান তুবার সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলতে শুরু করলো। ওইদিকে তিন্নির মনে হচ্ছে, জিসান আর তুবার মাথা ফাটিয়ে দিতে।কি গায়ে পড়া মেয়েরে বাবা। ঠিক এমন সময় রাতুল আসলো তিন্নির পাশে। রাতুল বললো

-“কীরে তোর এই অবস্থা কেনো? কিছুক্ষণ আগেও সুন্দর সেজে এসেছিলি।”
তিন্নির এবার বেশ মেজাজ খারাপ হচ্ছে। তাই মনে হচ্ছে সকল নষ্টের গোড়া এই রাতুল ভাই। তার নিজের অবাক লাগছে কোন এক সময় সেই লোকটাকে সে পছন্দ করতো। তার এখন মন চাচ্ছে ছাদ থেকে রাতুলকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে। তিন্নি বললো

-“রাতুল ভাই আমার মেজাজ এখন প্রচন্ড গরম আছে। প্লিজ এখনই আমার সামনে থেকে যান।”

-“তোর মেজাজ সবসময় গরম থাকে। এ আর নতুন কি? বেচারার জিসানের কপাল পুড়েছে।”

তিন্নির রাগে পাশের একটা ফুলের টব ভেঙে ফেললো।
রাতুল বললো

-“এই আমাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙতেছিস কেনো?
তোর জামাইয়ের বিশাল বড় ফ্ল্যাট আছে। সেখানে যেয়ে যা খুশি ভাঙতে থাক।”

তিন্নি রেগে রাতুলের দিকে তাকাতেই সে দৌড়ে চলে গেলো।সে এবার নজর দিলেও জিসানের দিকে। এমন সময় রাইমা এসে তিন্নিকে বললো

-“এই রাতুল ভাইয়ের কি হয়েছে? দেখলাম দৌড়ে নিচে নামছে। ঠিকই আছে, এমন মেয়ে বিয়ে করছে সারাদিন দৌড়ের উপরে রাখে। কিন্তু তুই এমন রেগে আছিস কেনো?”
রাইমা খেয়াল করলো তিন্নি জিসান আর তুবাকে দেখছে আর রাগে ফেটে পড়ছে। মুচকি হেসে সে তিন্নিকে বললো
-“এই তুবা জীবনে শোধরাবে না। এবার সে তোর জামাইয়ের দিকে নজর দিছে। সময় থাকতে জামাইকে সামলা।”

তুবা খেয়াল করলো জিসান বারবার তিন্নিকে দেখছে। সে জিসানকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“তিন্নিকে কি আপনি চেনেন?”

-“হ্যাঁ চিনি, খুব ভালো করে চিনি।”

-“তিন্নি মেয়েটা দেখতে সুন্দর কিন্তু বেশ গম্ভীর। কারো সাথে তেমন মিশতে চায়না। তার আবার রূপের অহংকার অনেক।”
জিসান বেশ বিরক্ত হলো তুবার কথায়। সে বললো

-“আমিতো কখন তার মধ্যে কোন অহংকার বোধ দেখি নি। আসলে তুমি ওর সাথে কখনো মিশে দেখনি তাই ওকে ঠিক চিনতে পারোনি।”

তুবা এবার কপাল কুঁচকে বললো

-“আপনার সাথে কি তিন্নির কোনো রিলেশন আছে?”

-“আছে তো! গভীর রিলেশন আছে আমাদের মধ্যে।”

-“বাসার সবাই কি জানি আপনাদের রিলেশনের কথা?”

জিসান এবার হেসে দিলো। আর বললো

-“অবশ্যই জানে। আমিতো তিন্নিকে লুকিয়ে বিয়ে করিনি। তার পরিবারের উপস্থিতিতেই বিয়ে করেছি।”

তুবা এবার বেশ শকড হলো। আরশি মনে মনে খুব জেলাস ফিল করলো। তিন্নির মধ্যে এমন কি আছে যা ওর মধ্যে নেই। সে রিফাত ছেলেটাকে পছন্দ করত। এমনকি প্রপোজ করেছিল। কিন্তু সে জানালো তিন্নিকে পছন্দ করে।আর আজ এই জিসান। তিন্নি কিনা এই ছেলেটাকে বিয়ে করে নিল।
_________________________
সকল অনুষ্ঠান আর আড্ডা শেষ করে জিসান তিন্নির রুমে আসলো। আসলে তার এখন ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। সে দেখতে পেলো বিছানায় এলোমেলোভাবে তিন্নি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। জিসান ভীষণ অবাক হলো। কারন সে কখনো তিন্নিকে এতটা এলোমেলো অবস্থায় দেখেনি। সে দ্রুত তিন্নির কাছে গেলো এবং ডাকলো। জিসানের ডাকে তিন্নি উঠে বসলো। জিসান বললো

-“তুমি ঠিক আছো? এমন লাগছে কেন তোমাকে?”

-“আমি ঠিক আছি। একদম ঠিক আছি।”

-“কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছেনা। তুমি কি অসুস্থ?”

-“আমি একদম সুস্থ, বরং আপনি অসুস্থ?”

-“কি বলছো তুমি?”

-“আমি একদম ঠিক বলছি। আমার মনে হয় আপনার চোখে সমস্যা আছে। তা না হলে আপনি ওই তুবাকে দেখতেন না। আমি কি কম সুন্দরী যে আপনার ওর দিকে তাকাতে হবে।”

-“আর ইউ ড্রাংক তিন্নি?”

-“আমি মোটেও ড্রাংক না।”

জিসান বুঝতে পারলো তিন্নি ড্রাংক। এই ঘটনা কখন ঘটলো? এই মেয়ে তো পুরাই মাতাল হয়ে আছে। জিসান হঠাৎ কিছু একটা ভাবলো। আর তিন্নি কে উদ্দেশ্য করে বললো
-“আর ইউ জেলাস?”

হঠাৎ তিন্নি জিসানের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরলো।

-“আপনি কোন সাহসে তুবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলেন? ওই তুবা ফাজিল কি জানেনা আপনি আমার হাসবেন্ড?

-“তুমি কি আমাকে হাজবেন্ড মনে করো?”

তিন্নি জিসানের কলার থেকে হাত নামিয়ে নিলো। আর বললো

-“জানিনা! আমার কোন যোগ্যতা নেই আপনার স্ত্রী হওয়ার।”

জিসান হঠাৎই তিন্নিকে জড়িয়ে ধরলো। সে নিজেকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিল না। জিসান বললো
-“কে বলেছে তোমার যোগ্যতা নেই। তুমি তো একদিন আমার মিষ্টি বউ হবা।”

-“আমার না ভীষণ ঘুম পাচ্ছে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিন না?”

-“তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

তিন্নি জিসানের কোমর জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। তিন্নির এই রূপ দেখে জিসান বেশ অবাক হলো। তার বউ টার মধ্যে এত বাচ্চামী আছে টা সে আজ বুঝতে পারলো।#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_25

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে তিন্নির মাথা ব্যাথা করছে। কাল ড্রিংক করাটা একদম উচিৎ হয়নি।জিসানের উপর রেগে আর রাইমার পাল্লায় পরে এই কাজ করেছে।পুরো মেয়ে গ্রুপ আলাদা এই বেবস্থা করেছে।তিন্নি একটু বেশি ড্রাংক ছিলো বলে মুন তাকে রুমে দিয়ে গেছে।

সকাল থেকে রাইমা ভয়ে আছে।গতকাল রাইমাই সব চেয়ে বেশি ড্রিংক করেছে।ছাদে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে সাঈদকে ডেকে আই লাভ ইউ বলেছে।সব কাজিনরা তো জেনেছে, সাথে রাইমার মাও শুনেছে।মেয়েকে সকাল থেকে ঝারির উপর রেখেছে।এটাও বলেছে বিয়ের ঝামেলা শেষ হলে তার ক্লাস নিবে।বেচারী এখন ভীষণ ভয়ে আছে। অপর দিকে সায়েদ কল করে এতো গুলা ধমক দিয়েছে।বেচারীর পুরো দিনটাই মাটি।

রাতুল আজ ভীষণ এক্সাইটেড। আলিফার সাথে তার 2 বছরের সম্পর্ক। আলিফার পাগলামি জন্য হুট করে বিয়ে করে বাসায় চলে এসেছে।তবে অবশেষে দুই পরিবারের ইচ্ছায় রিসেপশনের অ্যারেঞ্জ করাহয়।

তিন্নি ভীষণ চিন্তায় আছে।কারণ গত রাতের কথা তার পুরো মনে পড়ছেনা।তবে তার এটা মনে আছে সে জিসানের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরেছিলো। এর পর কিছুই মনে পড়ছেনা।মানুষটা গেলো কোথায়?
জিসান রুমে এসে দেখে তিন্নি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।সে তার হাতের লেবুপানি তিন্নির দিকে বাড়িয়ে দিলো আর বললো

-“এই পানিটা খাও।মাথা ব্যাথা কমে যাবে।”

তিন্নির মাথা তুলে দেখলো জিসান দাঁড়িয়ে আছে।
-“কি হলো নাও?”

তিন্নি কিছু না বলে আগে পানিটা খেয়ে নিলো। তারপর সে জিসানকে উদ্দেশ্য করে বললো

-“গতকাল রাতে কি আমি আপনার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেছি?”

জিসান মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসলো।সে বললো
-” মাতাল হয়ে কেয়ামত করেছো।”

তিন্নি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।সে বললো
-“মানে কি করেছি আমি?”

-“আমার লজ্জা লাগছে বলতে।”

-“আপনি আমার সাথে মজা করছেন?”

-“আমি মজা করবো কেনো? তুমিই তো জোর করে আমাকে চুমু খেয়েছো।”

তিন্নির চোখ কপালে উঠে গেলো।সে দ্রুত বললো
-“আমি মোটেও এমন কিছু করিনি।”

-“তুবার সাথে কথা বলেছি বলে কত হুমকি-ধামকি দিলা।”

এবার তিন্নির কিছুটা মনে পড়ছে। কিন্তু সে এটা সিওর যে কোনো চুমু টুমু খায়নি। এটা বানিয়ে বলছে অসভ্য লোকটা। এমন সময় জিসান উঠলো

-“আচ্ছা তুমি কি জেলাস?”

-“আমি কেনো জেলাস হব? আপনার যার সাথে খুশি তার সাথে কথা বলতে পারেন। আমার তাতে কিছুই আসে যায়না।”

-“কিন্তু আমি তো কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি?”

-“বাইরে যেয়ে চেক করুন। এখানে কিছু পুড়ছে না।”

জিসান মুচকি হেসে চলে গেলো।
সকল মেয়েরা চলে গেলো পার্লারে।আর জিসান বেচারার উপর চলছে জামাই আদরের অত্যাচার।তিন্নির মা এবং তার দুই মামী জিসানকে নানা রকম খাবার খাওয়াতে ব্যাস্ত।
দুপুরে জিসান রেডি হয়ে রাতুলকে দেখতে গেলো।বেশ কিছুক্ষন পর সে রুমে আসতেই দেখতে পেলো তিন্নি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুড়ি পড়ছে।তিন্নি নেভি ব্লু কালারের গাউন পড়েছে।এমন কোনো কালার মনে হয় নেই যা তার বউকে মানায় না।জিসান কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছে না।

দরজায় শব্দ পেয়ে তিন্নি ফিরে তাকালো।জিসান এসেছে।কে বলেছিলো এতো মাঞ্জা মারতে।দেখলেই কেমন চোখ জ্বলসে যায়।ওই ফালতু তুবার জন্য এতো সাজার কি আছে?আচ্ছা উনি আজও আমার সাথে ম্যাচিং করে কি ভাবে পড়লো?এক মিনিট উনার পাঞ্জাবীর গলার কাজ আর তার জামার গলার কাজ এক কেনো?তিন্নি বললো

-“আমার এই ড্রেস গুলি আপনি কিনে মামনিকে দিয়ে পাঠিয়েছেন তাই না?”

-“যা ভাবো তাই।কেনো পছন্দ হয়নি?”

-“আমার এইসব পছন্দ না। নেক্সট টাইম এমন করবেন না।”

জিসান ভাবছে”আমার বাসায় যাওয়ার পর তোমাকে শাড়ি ছাড়া আর কিছুই কিনে দিবো না।কি কপাল আমার বউকে শাড়ি পরা দেখলাম না।জিন্স আর টপস পরা একদম নিষেধ।অন্তত আমার সামনে না। এখন শাড়ি দিলে পড়তে না।তাই দেইনি।

-“সেটা পরা দেখা যাবে। এখন চলো। সবাই অপেক্ষা করছে।”

কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে সবাই নিজেদের মতো মজা করছে।রাতুলের আবার কবুল পড়ানো হবে।যেহেতু আগের বার পরিবারের কেউ ছিলো না।রাতুলকে কবুল বলানো হচ্চে,আর তিন্নি অপলক তাকিয়ে আছে। হঠাৎ জিসান তিন্নির কাছে এসে বললো

-“ওইটা জাস্ট ইনফ্যাচুয়েশন ছিলো।”

জিসানের কথায় তিন্নির ধ্যান ভাঙ্গলো।সে বললো
-“মানে?”

-“মানে রাতুলের প্রতি তোমার যা ছিলো সেটা ইনফ্যাচুয়েশন ছিলো।”

তিন্নি বেশ অবাক হলো।কাউকে সে রাতুলের বিষয়টা বলেনি।তাহলে উনি বুজলো কি ভাবে?সে বললো
-“আপনার এমন কেনো মনে হলো?”

-“কারণ সেটা যদি ভালোবাসা হতো তা হলে তুমি এই জায়গাতে এতো ইস্থির ভাবে থাকতে পারতে না।তোমাকে মোটেও অস্থির লাগছে না।”

-“আপনি ঠিক বলেছেন।ভালোবাসা জিনিসটা আমার সাথে ঠিক যায় না।এইগুলা আমার জন্য না।”

-“কে বললো ভালোবাসা তোমার জন্য না?ভালোবাসা সবার জন্য।তুমিও একসময় গভীর প্রেমে পড়বে।”

তিন্নি একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিলো।
কয়েকটা দিন তিন্নি এবং জিসান খুব ভালো সময় কাটিয়েছে।তিন্নির পুরো পরিবার জিসানকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে।

আরো দুইদিন পর তারা সকলে বাসায় ফিরে এলো।তিন্নিও নিয়মিত ক্লাস শুরু করেছে।সকল প্রফেসরই তিন্নিকে ভীষণ পছন্দ করে।কারণ তিন্নি অনেক মেধাবী একজন স্টুডেন্ট।
রাত 12টার দিকে তিন্নি বসে পড়ছিলো।সামনে তার এক্সাম।এমন সময় তার ফোন কল আসলো।জিসান কল করেছে।তিন্নির ফোন জিসানের নম্বরটা ACP সাহেব দিয়ে সেভ করা।তিন্নি কলটা রিসিভ করতেই জিসান বললো

-“একটু নিচে আসো।”

-“এই সময় নিচে কেনো যাবো?এক মিনিট আপনি নিচে এসেছেন?”

-“হে। এখন দ্রুত আসো?”

-“আপনি এতো রাতে নিচে কি করছেন?বাসা আসুন।”

-“এতো কথা কেনো বলো বউ?নিচে আসো না?”

‘বউ’ শব্দটা শুনে তিন্নি কয়েকবার তার হার্টবিট মিস করলো।এতো মিষ্টি করে কেনো ডাকে?তিন্নি কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলছে।সে তার মনের গহীনে শীতল অনুভব করলো। তিন্নি আর কিছুই বলতে পারলো না।কলটা কেটে দিলো।
পাঁচ মিনিটের মাথায় তিন্নি নিচে নামলো।নিচে এসে দেখলো জিসান বাইকের হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ফোন টিপছে।তিন্নিকে দেখেই সে সামনে আসলো। হাতে বড় একটা ব্যাগ।তিন্নি বললো

-“এতো রাতে এখানে কি করছেন?”

-“কয়েকদিন ধরে সমস্যায় আছি।তাই ভাবলাম ডক্টর বউকে দেখিয়ে আসি।”

আবার বউ?এই লোকটার আসলেই সমস্যা আছে।ইদানিং বেশি বউ বউ করে।
-“কি সমস্যা?”

-“ইদানিং রাতে ঘুম হয় না।কি করা যায় বলোতো?”

তিন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না।আজকাল জিসানের সামনে আসলে সে খুব নার্ভাস ফিল করে। মানুষটা তাকে কেমন দুর্বল করে দিচ্ছে।সে বুঝতে পারে জিসান তার প্রতি দূর্বল।কিন্তু সে কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না।

-“আপনি একজন ভালো বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারেন।”

জিসান হঠাৎ তিন্নির কাছে এসে এক হাত তিন্নির কোমল গালে রাখলো।আর বলতে শুরু করলো

-“আমার এই অসুখ একমাত্র তুমি সারাতে পারবে।”

তিন্নির নিশ্বাস ঘনো হতে শুরু করলো।তার হাত পা কাপছে।জিসান বুঝতে পেরে দূরে এসে হেসে বললো

-“আরে জাস্ট মজা করছিলাম।এইদিকে কাজ ছিলো।তাই ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই।”

তারপর সে তিন্নির হাতে ব্যাগটা দিয়ে দিয়ে বললো
-“এখানে তোমার আর তামিমের পছন্দের আইসক্রিম আছে।”

তিন্নি কিছু না বলে ব্যাগটা হতে নিলো।জিসান বললো
-“এতো রাত জেগে লেখাপড়া করোনা।অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

তিন্নি শুধু মাথা নেড়ে হ্যা বললো।জিসান বললো
-“অনেক রাত হয়েছে, এখন বাসায় যাও।”

-“আপনিও চলুন।”

-“আজ না, আরেক দিন আসবো।”

জিসান আর কিছু না বলে তিন্নির কপালে তার ওষ্ঠ জোড়া ছুয়ে দিলো।

মুহূর্তেই তিন্নির পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। এ কেমন অনুভূতি?তিন্নির মন চায়ছে জিসানকে ঝাপটে ধরতে।কিন্তু সে এমন কিছু করলো না।জিসান তার বাইকে উঠে তিন্নিকে বাসায় যেতে ইশারা করলো।তিন্নি চলে যেতে নিলেই জিসান বললো

-“বউ উপরে উঠে একটু বারান্দায় এসো?”

তিন্নি কিছুক্ষণ থমকে দাড়িয়ে পরে চলে আসলো।তার চোখ জোরা অজানা কারণে ভিজে উঠলো।সে দ্রুত বারান্দায় আসলো।তিন্নিকে দেখেই জিসান মুচকি হেসে চলে গেলো।তিন্নি অপলক সেই দিকে তাকিয়ে থাকলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here