মেঘবিলাসী পর্ব ২০+২১+২২

#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_20

সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় তার নিজস্ব গতিতে প্রবাহমান চলতে থাকে। কক্সবাজার থেকে আসার পর তিন্নি এবং জিসান দুজনেই ব্যস্ত সময় পার করছে। তিন্নির ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। নতুন পরিবেশ আর নতুন বন্ধু-বান্ধবের মাঝে সে এখন মহাব্যস্ত। আর জিসান ও বেশ কয়েকটা কেস নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ততার মধ্যে আছে।
মেডিকেল কলেজে এসে সবার আগে তিন্নির যার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে সে হলো সীমা। তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে মূলত সীমার কারণে। সীমা সবার সাথে খুব সহজেই মিশতে পারে। তা না হলে তিন্নির মতো গম্ভীর মেয়ে এত সহজে কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না। এছাড়াও আরো দুটো মেয়ের সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে। একজন হচ্ছি সুমাইয়া আর আরেকজনের নাম হচ্ছে রত্না। সুমাইয়া ও ম্যারিড। সুমাইয়া কে দেখে ধারণা করা যায় সে তার দাম্পত্য জীবনে অনেক বেশি সুখী। সুখী হবে নাই বা কেন তাদের তিন বছরের সম্পর্কের পূর্ণতা যে পেয়েছে। সুমাইয়ার হাসবেন্ড আদনান তাকে যে খুব চোখে হারায়। তিন্নির সাথে দু’একবার দেখা হয়েছিল আদনান এর। আদনানকে এক ঝলক দেখে তিন্নি বুঝে গিয়েছিল এই লোক বউ পাগল।

তিন্নিও ম্যারিড একথা তারা সকলেই জানে। এ কথা অবশ্য তিন্নি তাদের জানায়নি। একথা জানিয়েছে তিন্নির বাবা আনিসুর রহমান। একদিন তিন্নিকে কলেজের ড্রপ করতে এসে তিনি সকলের সাথে দেখা করেন। কথার মাঝে তিনি সকলকে এই কথাটা জানিয়েছে। সবাই অবাক চোখে কিছুক্ষণ তিন্নির দিকে তাকিয়ে ছিল। বাবার আকস্মিক এই কথাটা জানানোতে তিন্নিই কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলো। অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।

তিন্নির বাবা বাড়িতে এসে মেয়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে বলেছিলেন

-“মা এ কথা কিন্তু তোমার তাদের জানানো উচিত ছিলো।”

-“পাপা তুমিতো জানো কেন আমি আমার বিয়ে সম্পর্কে সবাইকে জানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না।”

-“তুমি এত ভয় কেন পাচ্ছো? জিসান খুবই ভালো ছেলে। দেখো মা, সে কখনো তোমার অসম্মান করবে না।”

-“আমি জানি পাপা। এই কয়েকদিনে আমি বুঝতে পেরেছি তিনি মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করেন। তার সাথে আমার সময়টা ভালই কাটে। কিন্তু কারো স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। প্লিজ পাপা আমাকে কোন কিছুতে জোর করোনা।”

আনিসুর রহমান মেয়ের দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকালেন। তার সামনে বসা অতি সুন্দরী মায়াবতী মেয়েটা যে কতটা কঠোর মনের অধিকারী সেটা কি সবাই জানেন? আর কেউ জানুক বা না জানুক জিসান নিশ্চয়ই এতদিনে এটা বুঝে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিন্নির বাবা তিন্নির রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন।

জিসান আজ প্রায় 25 দিনের মত হলো রাজশাহী এসেছে। কয়েকটা দিন ধরে সে কাজে একদম মন বসাতে পারছে না। তিনদিন ধরে তিন্নি তার কল রিসিভ করছে না। সবকিছু তো ঠিক ঠাকই চলছিলো। তাহলে হঠাৎ তিন্নির কি হলো। তাই সে বাধ্য হয়ে তিন্নির বাবাকে কল করলো।

-“জিসান কেমন আছো বাবা?”

-“আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি। বাসার সবাই ভালো আছে?”

-“হ্যাঁ বাসার সবাই ভালো আছে। তোমার কাজ কতদূর এগুলো?

-“শেষের দিকে। চলে আসবো খুব জলদি ঢাকাতে।বাবা তিন্নি ভালো আছে?আসলে ওকে কল করছিলাম কিন্তু রিসিভ হচ্চে না।”

আনিসুর রহমানের মুখটা মলিন হয়ে গেলো।মেয়েটা এত জেদি কেনো?জিসানের জন্য খুব খারাপ লাগলো।সে কি ছেলেটার জীবনটা কোনো জটিল গোলক ধাঁধায় ফেলে দিলো?
তিনি বললেন

-“তিন্নি ভালো আছে বাবা।আসলে নতুন ক্লাস তো তাই অনেক টায়ার্ড হয়ে যায়।তুমি কিছু মনে করো না।আমি ওকে বলছি।”

-“না বাবা সমস্যা নেই।আমি জাস্ট টেনশনে পড়ে গেছিলাম তাই। ওকে কিছু বলা লাগবে না।”

অবনী রহমান রুমে এসে দেখে আনিসুর রহমান চিন্তিত মুখে বসে আছে।তিনি বললেন

-“তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেনো?কি হয়েছে?”

-“তিন্নি আর জিসানের বিয়ে দিয়ে কি আমি কোনো ভুল করেছি?”

-“কি বলছো এসব?ভুল কেনো করবে?বরং তুমি ঠিক করেছ।”

-“আমারও তাই মনে হয়।”

-“বরং তোমার মেয়ের বেশি জেদি।মেয়েটা এত শক্ত মনের কেনো?”

-“তুমি যাই বলো।আমি জানি আমার মেয়েটার ভেতরটা তুলোর মত নরম।”
____________________
তিন্নি আর তার ফ্রেন্ডরা ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছে।রত্না বললো
-“তিন্নি এটা কিন্তু ঠিক না?”

-“কেনো কি হয়েছে?”

-“আমরা সুমাইয়ার হাজবেন্ডকে দেখেছি।কিন্তু তুই একজন তোর জামাইকে দেখতে দিলি না।”

-“সে তো ঢাকাতে নাই।আসলে দেখিস।”

এমন সময় একটা ছেলে এসে তিন্নির পাশের চেয়ারটাতে বসলো।এতে তিন্নি অবাক হলনা। এটা তাদের সিনিয়র ভাই। কলেজ ভর্তি হবার পর থেকে সে খেয়াল করেছে এই ছেলেটা তাকে ফলো করে।তবে কখনো সামনে আসে না।ছেলেটা যে তাকে পছন্দ করে টা তিন্নি আগেই বুঝতে পেরেছে।ছেলেটা বললো

-“হাই গার্লস!!আমি রাব্বি।তোমাদের সিনিয়র।”

রত্না হেসে সালাম দিলো। ছেলেটা তিন্নিকে উদ্দেশ্য করে বললো
-“তোমাদের কোনো অসুবিধা বা কোনো হেল্প লাগলে আমাকে বলতে পারো।আমি সব সময় তোমাদের হেল্প করবো।সিনিয়র হিসেবে কিছু দায়িত্ব আছে আমাদের।”

তিন্নি মুচকি হেসে বললো
-“আপনি একদম চিন্তা করবেননা ভাইয়া।আমরা মেনেজ করতে পারবো। আর বিশেষ সমস্যা হলে আপনারা আছেন ছোট বোনদের হেল্প করতে।”

ছেলেটা অনেকটা থতমত খেয়ে গেলো।এই মেয়েটা তাকে এতো ভাইয়া ভাইয়া ডাকছে কেনো?কিছুটা কষ্ট নিয়ে ছেলেটা চলে গেলো।
সুমাইয়া বললো

-“এটা কি হলো?ছেলেটা এসেছে তিন্নিকে সাইয়া বানাতে।আর তিন্নি ভাইয়া বানিয়ে দিলো?”

সবাই এক সাথে হেসে উঠলো।
এমন সময় সীমা আসলো।সে মুচকি মুচকি হাসছে।
রত্না বললো

-” কীরে এতো ব্লাস করছিস কেনো?”

সীমা মুচকি হেসে বললো আমার ক্রাশ বয়কে দেখেছি।
রত্না বললো
-” কে তোর ক্রাশ বয়?”

আরে তোদের বলেছিলাম না আমাদের পাশের বাসায় এক আংকেল ড্রাগ নিতো।তার বাসায় ইনভেস্টিগেশন এর সময় একটা অফিসারকে দেখে ক্রাশ খাইছি। এর পর আর দেখিনাই।আজ দেখি আমাদের কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে।
সুমাইয়া বললো

-“একাই দেখবি?আমাদের দেখাবিনা?”

রত্না বললো “ওই আমিও দেখবো?”

তিন্নি বললো “ক্রাশ বয়কে দেখেছিস ভালো কথা।যা প্রেম কর। এখানে বসে রয়েছিস কেনো?”

রত্না বললো “মোটেই না।আগে আমরা দেখবো পছন্দ হলে তবে ও প্রেম করতে পারবে।তার আগে না।”

সীমা বললো ” এক্ষনি চল।না হলে আবার কোথাও হারিয়ে যাবে।”

তিন্নি বললো

-“আমি এসবে নেই।তোরা যা।”

সুমাইয়া বলে উঠলো

-“এই আমরা ম্যারিড বলে কি এদের কোনো গতি করে দিবো না।চল ওর একটা লাইন করিয়ে দেই।”

তারা সবাই চলে গেলো কলেজ গেট। গেট এর সামনে একটা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে একটা অতি সুদর্শন ছেলে।রত্না ছেলেটাকে দেখে বলে

-“সীমা বোন আমার।তুই এই ছেলেকে একজন থেকে দুলাভাইয়ের নজরে দেখবি।এই আগুনটা আমার।”

সীমা রেগে রত্নার দিকে তাকালো।আর বললো

-” খবরদার তুই এর দিকে নজর দিবিনা।এটা তোর দুলাভাই।ইসস!! কেনো যে এই পেত্নীকে দেখাতে গেলাম?”

সুমাইয়া বললো

-“ইসস!! তিন বছর আগে কেনো দেকলাম না।তাহলে আদনানকে ক্যান্সেল করে দিতাম।”

তিন্নি অবাক হয়ে এদের কথা শুনছে।এই পাগল গুলা কিনা তার ফ্রেন্ড?তিন্নি আর চোখে একবার সামনে তাকালো।এইরকম হিরো সেজে এইখানে আসার মানে কি?আমার ফ্রেন্ডদের ইমপ্রেস করতে চাইছে?কিন্তু আমার এমন খারাপ লাগবে কেনো?

হঠাৎ রত্না বলে উঠলো
-“ছেলেটা তো মনে হয় আমার দিকেই আসছে।”
সীমা রেগে বললো

-“মোটেই না।সে আমার দিকে আসছে।”

সুমাইয়া বিরক্ত হয়ে বললো

-“এই তোরা থামবি?”

এমন সময় ছেলেটা এসে তিন্নিকে উদ্দেশ্য করে বললো

-” কি সমস্যা কল রিসিভ করনা কেনো?”

তারা সবাই অবাক হয়ে একবার তিন্নির দিকে তো আরেকবার সামনের ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছে।
এবার ছেলেটা তাদের উদ্দেশ্য করে বললো

-” হেলো!! আমি আবরার জাওয়াদ জিসান।তিন্নির হাসবেন্ড।”

তারা সকলে বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌছে গেছে।সীমা আর রত্নার মুখের অবস্থা দেখে সুমাইয়া হেসে দিলো।#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_21

তিন্নি ভীষণ অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে গেলো। তার মানে এতক্ষণ তার দুই বান্ধবী এই এসিপি কে নিয়ে টানাটানি করছিলো? সুমাইয়া এই সিচুয়েশনে মজা নিচ্ছে। সীমা এবং রত্না মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে রেখেছে। এই মুহূর্তে তাদের দুজনেরই ভীষণ লজ্জা লাগছে। দুই বান্ধবী মিলে আরেক বান্ধবীর জামাই নিয়ে টানাটানি করছিলো ওরা। লজ্জায় সীমা কথাই বলতে পারছেনা।
তিন্নি জিসানের সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দিলো।
জিসান তাদের উদ্দেশ্য করে বললো

-“ডিয়ার শালীকারা, এখন কি আমি আমার বউকে একটু নিয়ে যেতে পারি?”

সুমাইয়া হেসে বললো

-“জি ভাইয়া অবশ্যই নিয়ে যেতে পারেন।”

জিসান তাদের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিন্নিকে নিয়ে গাড়িতে বসলো।
তিন্নি আড়চোখে একবার জিসানকে দেখলো। বুঝতে পারল জিসান কিছুটা রেগে আছে। কিছুদুর যাওয়ার পর জিসান একটা নিরব জায়গায় গাড়ি থামিয়ে দিলো।
তিন্নির এবার কিছুটা ভয় হচ্ছে। হঠাৎ জিসান তিন্নির দিকে ঝুঁকে কাছে চলে আসলো।তিন্নির কেমন দম বন্ধ করা অনুভূতি হলো।জিসান শান্ত সরে বললো

-“তিন্নি তুমি কি ঠিক আছো? কিছু কি হয়েছে।আমাকে ইগনোর কেন করছো?”

তিন্নি ভীষণ অবাক হলো। সে তো ভেবেছিল জিসান হয়তো রাগারাগি করতে পারে। কিন্তু কত শান্তস্বরে তার সাথে কথা বলছে।
তিন্নি বললো

-“আমি ঠিক আছি। আর আমি মোটেও আপনাকে ইগনোর করছি না।”

-“তাহলে আমার কল রিসিভ করছো না কেনো, তোমার মোবাইল বন্ধ কেনো?”

-“আসলে মোবাইলটা আমার হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে।”

-“তাহলে অন্য কারো মোবাইল দিয়ে আমাকে একটু জানাতে পারতে? আমি কত টেনশনে ছিলাম।”

হঠাৎ তিন্নির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই মানুষটা তাকে নিয়ে এত চিন্তা কেনো করে? সেকি আসলে এই মানুষটার যোগ্য।
তিন্নি বললো

-“আমি আসলে অন্য কারো মোবাইল কখন ইউজ করিনা। আর তাছাড়া আমি কয়েকদিন অনেক ব্যস্ত ছিলাম।”

জিসানের এখন কিছুটা রাগ হচ্ছে। এত কিসের ব্যস্ততা তার যে একটা কল করতে পারলো না। এই মেয়েটাকে সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা।
পরিবেশ কিছুটা ঠান্ডা করতে তিন্নি জিসানকে জিজ্ঞাসা করলো

-“আপনি ঢাকায় কবে এসেছেন?”

-“মাত্র আসলাম।সোজা তোমার কাছেই চলে এসেছি। কিন্তু তুমি এগুলা বুঝবেনা।”

তিন্নি ভাবছে আসলেই হয়তো সে বোঝবেনা। নাকি সে বুঝতে চায় না?
জিসান তিন্নিকে নিয়ে শপিং মলে ঢুকলো। তিন্নী বললো

-“আমরা এখানে কেন এসেছি?”

-“মোবাইল কিনতে?”

-“আপনার কেনার কোন প্রয়োজন নেই। পাপা অলরেডী আমাকে টাকা দিয়ে রেখেছেন। আমি এতদিন সময় করে বের হতে পারিনি।”

-“বাবার টাকা তুমি বাবাকে ব্যাক করে দিও। এখন আর কোনো কথা না। চলো।”

জিসান তিন্নিকে iPhone 12 pro কিনে দিলো। তিন্নি কিছুতেই এটা নিতে চাইছিলো না। কিন্তু জিসান জোর করেই তিন্নির হাতে তা ধরিয়ে দিলো।
জিসান তিন্নিকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।
সূচনার বাসায় বসে আছে জিসান। সূচনা বললো

-“কিরে সমস্যা কি? এতদিন পর ঢাকায় এসে বউয়ের কাছে না যেয়ে আমার কাছে কেন এসেছিস?”

জিসান রাগান্বিত চোখে সূচনা কে দেখলো। সূচনা হেসে বললো

-“তোরা কি ঝগড়া করেছিস? দেখ বউরে সাথে ঝগরা করে এসে আমাকে রাগ দেখাবি না।”

-“আমি তিন্নির সাথে ঝগড়া করিনি। মাথাটা একটু গরম ছিল তাই ওর বাসায় যায়নি?”

-“তিন্নি তোকে ভালোই নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছে।”

-“আমি না ওকে ঠিক বুঝতে পারছিনা। মাঝে মাঝে আমার সাথে খুব ফ্রেন্ডলি বিহেভ করে। আবার মাঝে মাঝে ওকে খুব এলোমেলো লাগে।”

-“প্যারা নিসনা। ওর সাথে সরাসরি কথা বল।”

অনেকক্ষণ সূচনার সাথে কথা বলে জিসান বাসায় ফিরে আসলো। তিন্নির এই খামখেয়ালিপনা জিসানকে মাঝে মাঝে খুব কষ্ট দেয়। তিন্নি কি কখনো এই সম্পর্ককে সিরিয়াসলি নিবেনা?
আজ কলেজ থেকে বাসায় ফিরেই তিন্নি দেখলো তাদের বাসায় তার ফুপা আর রাতুল ভাইয়া এসেছে।
তিন্নিকে দেখে তার ফুপা বললো,

-“তিন্নি মা কেমন আছো তুমি?”

-“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন?”

-“আমিও ভালো আছি।”

তারপর তিন্নির ফুফা আনিসুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-“আমার ওই গর্ধব ছেলেটা তো একা একাই বিয়ে করে ফেলেছে। তাইতো অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি এখন। সামনে 15 তারিখে রিসেপসনটা করবো। তোমরা সবাই তিন দিন আগেই চলে আসবে।”

রাতুলের আর তিন্নি বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। রাতুল বললো
-“আব্বুর কোনো কমনসেন্স নাই বুঝলি? কেমন সবার সামনে আমাকে গর্ধব বলে দিলো। একদিন তো আমার বউয়ের সামনে একী কাজ করেছে।”

-“সমস্যা নেই,ফুপা না বললেও একদিন তোমার বউ ঠিকই বুঝত।”

-“কি? তুই বলতে চাইছিস আমি গর্ধব?”

-“সেটা আমি কিভাবে বলবো, এটা তো তোমার বউ ভালো বলতে পারবে।”

-“তোর মত জটিল পদার্থকে জিসান হ্যান্ডেল কিভাবে করে?”

-“আমার হাজব্যান্ড এর মধ্যে কোয়ালিটি আছে। সবার দ্বারা সব কিছু সম্ভব নয়।”

-“বা!বা! তুইতো ভালই জামাই পাগলি মেয়ে দেখা যায়। দেখে তো বোঝা যায় না।”

-“দেখে অনেক কিছুই বোঝা যায় না ভাইয়া।”

-“যাই বলিস আমাদের আত্মীয় মহলে তোর বাবার পর তুই ডাক্তার হবি। আমরা তো ফ্রিতে চিকিৎসা করাব।”

তিন্নি হেসে দিলো। তিন্নি আজ একটা জিনিস খেয়াল করলো। রাতুলকে দেখে তার আগের মত অস্থির ফিল হয় না। আজ রাতুলের রিসেপশনের কথা শুনে তার খারাপ লাগেনি। বরং সে ডিসাইড করে ফেলেছে কোন দিন কোন ড্রেসটা পড়বে।
তিন্নির ফুপা আলতাব মাহমুদ জিসানকে পার্সোনালি দাওয়াত দিলেন।সাথে তিন দিনের ছুটি।জিসানকে তিনি ভীষণ পছন্দ করেন।মনে মনে তিনি রাতুলের জন্য তিন্নিকে পছন্দ করে রেখেছিলেন।কিন্তু তার ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে।তবে যা হয় ভালোর জন্য হয়।তিন্নির জন্য জিসান বেস্ট।দুজনকে একসাথে ভীষণ মানায়।
________________________
তিন্নিরা আজ বিকেলে তার ফুপির বাসায় পৌঁছেছে।তার সকল কাজিনরা অলরেডী চলে এসেছে।বলে রাখা ভালো তিন্নির ফুপা কিন্তু তিন্নির মামাও হয়।মূলত তিন্নির মামা আর ফুপির বিয়ের পর আনিসুর রহমান তার বোনের ননদ অবনি রহমানের প্রেমে পরে যান।তিন্নি তার ফুপিকে ভীষণ ভালোবাসে।দুজনকে ফুপি আর মামা ডাকলে সম্পর্ক কেমন উলটপালট হয়ে যায়।তাই সে ফুপির সাপোর্টে চলে এসেছে।রাতুলের প্রতি তার মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ লাগতো।এই রাতুল তার এক দিক থেকে ভাই না,দুই দিক থেকেই ভাই।
রাইমা তিন্নিকে দেখে ভীষণ খুশি।সে তিন্নিকে টেনে সবার আগে নানুর কাছে নিয়ে যায়।তিন্নির নানু অনেকটাই অসুস্থ। হাঁটা চলাফেরা করতে পারে না।
তিন্নি নানুর রুমে এসে নানুকে জরিয়ে ধরলো। তিন্নির নানু অভিমান করে বললো

-“নাত জামাইকে পেয়ে এই বুড়িকে ভুলে গেলি?”

-“নানু তুমিওনা কি যে বলো?আমি সবাইকে ভুলতে পারি but তোমাকে মোটেও না।”

-“হয়েছে আর নাটক করা লাগবে না। নায়কের মত সুন্দর জামাইয়ের আদর সোহাগ পেয়ে তুমি দিন দুনিয়া ভুলে গেছো।”

তিন্নি বেশ লজ্জা পেলো।আর সে আগে এই বাসায় আসতো রাতুলের জন্য।কিন্তু রাতুলের বিয়ের পর থেকে সে আর এই বাসায় আসেনি।কারণ তার রাতুলের বউয়ের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা ছিলো না।কিন্তু আজ এই বাসায় আসতে তার মোটেও খারাপ লাগেনি।আর সে এই মুহূর্তে ভীষণ এক্সাইটেড রাতুলের বউ দেখতে।
নানু আবার বললো

-” কীরে তোর হিরো কই?”

তিন্নি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নুনুর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
তার নানু বিরক্তি নিয়ে বললো

-“আরে তোর জামাইকে কেউ খেয়ে ফেলবে না। কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?”

-“নানু সে কাল একেবারে হলুদে আসবে।”

-“শোন,তোর জামাই আসলে আমার সাথে সবার আগে দেখা করতে বলবি।”

রাইমা হেসে বললো
-“দাদী তুমিও না! ভাইয়া আসলে আগে তুমাকে কেনো দেখবে?তার সুন্দরি শালীকা দের সাথে দেখা করবে।”

-“তুই কি আমার চাইতে বেশি সুন্দর নাকি? যৌবন কালে তোর দাদা আমাকে দেখে পাগল হইয়া গেছে।আর তুই আমার সাথে তুলনা দেস?”

রাইমা রেগে বললো
-“দাদী তুমি আমাকে অসুন্দরি বললা?”

-“তুইতো পেত্নী।সারাদিন আমাকে জ্বালাস।”

তিন্নি হাসে তাদের দুইজনের ঝগড়া দেখে।
তিন্নির ছোটো মামা ,মামী এসেছে।তাদের দুই মেয়ে মুন ও মুনা আর এক ছেলে মাসুদ।মাসুদ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।মুন ও মুনা টুইন্স।তারা এইবার এইচ এস সি দিবে।
মুন ও মুনা তিন্নিকে দেখে জড়িয়ে ধরলো।মুনা বললো

-“আপু তোমাকে অনেক মিস করি।তুমি পড়াশোনা নিয়ে এতো বিজি যে কারো বাসায় আসো না।”

-“তেমন কিছু না।এইযে দেখ চলে আসছি।”
মুন বললো

-“তুমি আসছ বুজলাম।কিন্তু আমাদের দুলাভাই কই?”

-“আমি আসছি চলবে না?আরো কাউকে লাগবে?”

-“অবশ্যই লাগবে।বিয়ে বাড়ীতে জোড়া পাখিদের আলাদা হতে নেই।”

-“এই !!এতো পাকা পাকা কথা কোথা হতে শিখেছো?”

-“আমি সব জানি।”

সারাদিন তাদের অনেক আড্ডা চললো।কাজিনদের সাথে অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলছে।আগেতো শুধু রাতুলের দিকে তার নজর থাকতো।কিন্তু আজ সে মোটেও রাতুলকে মিস করছে না।#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#part_22

আজ খুব সকালেই ঘুম ভাঙলো তিন্নির। চারপাশের মানুষের চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। তিন্নি মাঝে মাঝে বুঝতে পারে না সারা বছর এই আত্মীয়-স্বজন গুলা থাকে কোথায়? প্রয়োজনের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ডুপ্লেক্স বাড়ি টা অনেক শখ করে বানিয়েছিলো তিন্নির নানাভাই। বর্তমানে তিন্নির দুই মামাই এখানে থাকেন। রাতুল ভাই হচ্ছেন তাদের কাজিন ব্রাদার্স এর মধ্যে সবচেয়ে বড়। হলুদের প্রোগ্রাম টা বাড়ির ছাদে করা হয়েছে। সকাল থেকেই তাই সবাই কাজে অনেক ব্যস্ত। কিন্তু তিন্নি একদম ফ্রি। মামাদের অতি আদরের ভাগ্নি সে।তাই তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
সকাল সকাল তিন্নির রুমে হানা দিলো তামিম। এসেই তামিম বললো

-“আপু দেখিস নেক্সট আমরা রাইমা আপুর বিয়ে খাব।”

তিন্নি ভাবল তামিম কি কোনভাবে তিন্নির বয়ফ্রেন্ডের বিষয়ে জেনে গেলো? এমনিতেই যে বুদ্ধি তার মাথায়। এ বাসায় আসতে না আসতেই রাইমা ধরা খেয়ে গেলো এই তামিমের কাছে?

-“কেন তোর এমন কেন মনে হচ্ছে?”

-“বুঝলি আপু!!! সবাই আমাকে ছোট ভেবে অনেক ভুল করে। এই পাশের বাসায় সায়েদ ভাইয়া আছে না?
রাইমা আপু তার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে।”

সে যা সন্দেহ করেছে তাই। তার পিচ্চি ভাই রাইমা আর সায়েদ কে ধরে ফেলেছে।তারা প্রায় দেড় বছর ধরে রিলেশনে আছে। তিন্নি এ বিষয়ে আগে থেকেই জানে। ভাবনা থেকে ফিরে তিন্নি বললো

-“তুই কোথায় দেখেছিস তাদের?”

-” আমরা কাল সন্ধ্যা এখানে আসার পর রাতে যখন ছাঁদে গিয়েছিলাম। দেখি দুই জন দুই ছাদে দাঁড়িয়ে প্রেম করছে।”

-“প্রেম করছে তোকে কে বললো? এমনও তো হতে পারে তার নরমাল কথা বলছিলো।”

-“আপু তুইও আগে থেকে জানতিস তাই না?”

তিন্নি এখন বেশ অবাক হলো। তামিম এটা কিভাবে আইডিয়া করলো যে সেটা সে জানে। বড় হয়ে নিশ্চিত তার ভাই আইনস্টাইন হবে। এই ছেলের মাথায় বুদ্ধি খালি গিজগিজ করে।
তিন্নি কিছুটা রেগে বললো

-“তোর ফালতু কথা শুনতে আমার একদম মন চাইছে না তাই বের হ রুম থেকে।”

-” একদিন সত্যি সত্যি জিসান ভাইয়ের বন্দুক দিয়ে তোকে আমি শুট করে দিব।”

-“দাঁড়া মামনি কে বলে তোর সব পাকামো আমি বের করছি।”
_______________
সব কাজিনরা মিলে সকাল থেকে আড্ডায় মেতে আছে। এমন সময় ছোট মামী এসে বললো

-“এই তিন্নি,জামাই কখন আসবে?”

হঠাৎ জামাই শব্দটা শুনে তার অন্যরকম অনুভূতি হলো। চোখের সামনে জিসানের মুখটা ভেসে উঠলো।
সে তার মামী কে বললো

-“উনি সন্ধ্যের দিকে আসবেন বলেছিলেন।”

-“সন্ধ্যা হতে আর কতক্ষণ বাকি তোরা এখনো বসে আছিস কেনো।সবাই যা রেডি হয়ে নে।”

তিন্নি রুমে আসতেই অবনী রহমান ও তার পিছনে রুমে আসলো। সে তিন্নি দিকে একটা ব্যাগ বাড়িয়ে দিলো।আর বললো

-“তুই কি এই বিয়ে বাড়ীতে টপস আর জিন্স পরে ঘুরে বেরাবি? খবরদার আজও যদি এগুলো পড়েছিস তো খবর আছে। এই ব্যাগে যা আছে চুপচাপ সেটা পরে নিচে আসবি।”

তিন্নি ভীষণ বিরক্ত হলো তার মায়ের উপর। সে বললো

-“প্লিজ মামণি, আমি কোনো শাড়ি পড়তে পারব না তুমি জানো আমি এইসব ক্যারি করতে পারিনা।”

অবনী রহমান চোখ গরম করে চলে গেলেন।
তিন্নি ব্যাগ টা খুলে দেখলো তাতে একটা লেহেঙ্গা রয়েছে। অলিভ কালার এর লেহেঙ্গা। মায়ের মন খুশি করতে সে লেহেঙ্গা টা পড়ে নিলো।
সন্ধ্যার দিকে সকলে রেডি হয়ে গেছে।কিন্তু যার বিয়ে তার খবর নেই।রাতুল ভাইয়া গেছে তার শশুর বাড়ী।পাশের এলাকায় তার শশুর বাড়ী।রাতুলের বউয়ের শখ হলুদে খোঁপায় শিউলী ফুলের মালা পড়বে।আর তা রাতুলকে এনে দিতে হবে।তাই সে গেছে বউয়ের কাছে।
এই বাসায় আসার পর থেকে আনিসুর রহমান মেয়েকে কাছেই পাচ্ছে না।তাই তিনি মেয়ের খুজে চলে আসলো।
তিন্নির রুমে নক করতেই তিন্নি দরজা খুলে দিলো। বাবাকে দেখেই সে বিরক্তি নিয়ে বললো

-“দেখো পাপা।মামণি আমাকে দিয়ে কি কি করাচ্ছে।আমি একদম এইগুলোতে কমফোর্ট ফিল করি না।”

সে তার পাপাকে এসব বলছে আর বার বার কোমরের সাইডে লেহেঙ্গা ঠিক করছে।আসলে লেহেঙ্গা কোমরে বাঁধার পর থেকেই তার ভীষণ চুলকাচ্ছে।তাই সে বার বার সেটা ঠিক করছে।লেহেঙ্গা, শাড়ি এইসব তার একদম পছন্দ না।
আনিসুর রহমান মেয়ের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। এতটা স্নিগ্ধতা তিনি আর কোথাও দেখেনি।মেয়েটা অসীম সৌন্দর্যের অধিকারী না হলেই ভালো হতো।কারণ অনেক সময় এই সৌন্দর্যই জীবনের কাল হয়ে দাড়ায়।আসে পাশে তাকিয়ে তিনি কিছু খুঁজলেন আর সেটা পেয়েও গেলেন।তিনি দ্রুত কাজলটা হতে নিয়ে মেয়ের কানের নিচে বৃত্ত একে দিলেন।এসব তিনি মোটেও বিশ্বাস করেনা।কিন্তু মেয়ের বিষয়ে তিনি তিল পরিমাণ রিস্ক নিতে চাননা।ছোট বেলায় তিন্নি যখন এক জাপা দু পা হাঁটতে হাঁটতে তার দিকে আসতো।তখন তার নিজেরই নজর লেগে যেতো।তিন্নির নানু সব সময় তার মেয়ের কানে কালি দিতে বলতেন। আজও তার নজর যেনো মেয়ের না লেগে যায় তাই কাজল দিয়ে দিলো।
তিন্নি অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালো।সে তার পাপাকে বললো

-“প্লিজ পাপা!তুমি অন্তত মামনির মতো করো না।”

আনিসুর রহমান মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।আর বললেন

-“আমার মা যাই পড়ুক। তাতেই অপ্সরী লাগে।আমি শুধু আমার মা কে সব সময় খুশি দেখতে চাই।”

-“হয়েছে এতো প্রশংসা করার কিছু নেই।আমি জানি লেহেঙ্গা টা সুন্দর।”

মেয়ের কথা শুনে তিনি উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন।বাবার এই হাসিতে তিন্নিও যেনো সুখ পেলো।
কিছুক্ষন পর রাইমা দৌড়ে রুমে আসলো।তিন্নিকে দেখেই বললো

-“এইযে মেডাম জলদি নিচে আস।তোর হিরো সাহেব এসেছে।”

তিন্নির হঠাৎ বুকটা ধক করে উঠল।নিজের অজান্তেই একবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো।কিছু একটা ভেবে রাইমাকে বললো

-“ওই ACP এসেছে তো আমি কি করবো?আমি এখন সোজা ছাদে যাবো।এমনিতেই এইসব পড়ে হাঁটতে পারছি না।”

-“এই তুই এমন কেনো? হিরোর মতো জামাই পেয়েছো তাই দাম দাওনা।যখন অন্য কেউ তোমার হিরোকে নিতে আসবে তখন বুজবা।”

জিসান অনেকক্ষণ যাবত ড্রয়িং রুমে বসে আছে।তাকে ঘেরাও করে রেখেছে অনেক মানুষ।তিন্নির বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হাওয়ায় অনেকেই জিসানকে দেখেনি।সকলেই জিসানের ভীষণ প্রশংসা করলেন।জিসান বার বার আশেপাশে দেখছে।কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে সে কোথাও দেখতে পেলো না।
তিন্নি দোতলা থেকে নিচে উকি দিলো।জিসান একটা সোফায় বসে আছে।আর তার আসে পাশে তার সকল কাজিনরা বসে আছে।জিসান পাঞ্জাবি পড়েছে।জিসানকে ভালো ভাবে দেখে তিন্নি কিছুটা অবাক হলো।তার লেহেঙ্গা আর জিসানের পাঞ্জাবির কালার এক।এটাকি কোনো কোইন্সিডেন্স?

বেশ কিছুক্ষণ পর সবাই জিসানকে নিয়ে ছাদে আসলো।তার চোখ শুধু একজনকে খুঁজছে। হঠাৎ তার পাশে একটা মেয়ে আসে দাড়ালো।মেয়েটা বললো

-“হেলো!!”

-“হেলো!!

-“আমি তুবা।আপনি নিশ্চই রাতুল ভাইয়ের ফ্রেন্ড।”
জিসান কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বললো

-“না আমি রাতুলের না,তার বাবার ফ্রেন্ড।”

-“মনে??”

পরে কিছু একটা ভেবে খুব এক্সাইটেড হয়ে বললো
-“আপনি আংকেলের সাথে এক অফিসে কাজ করেন?মনে আপনি ACP?”

জিসান বেশ আশ্চর্য হলো।সে ভেবেছিল মেয়েটা এটা ধরতে পারবে না।
মেয়েটা বললো

-“আপনাদের প্রফেশন আমার অনেক ভালো লাগে।অল টাইম অ্যাকশন।”

জিসান ভাবছে যার পছন্দ হওয়া প্রয়োজন তার হয়না।বাকি সবার হয়।
মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তার চোখ গেলো দরজার দিকে।কয়েক মুহূর্তের জন্য সে সব ভুলে গেলো।পাশে যে একটা মেয়ে অনবরত কথা বলছে সেটা সে বেমালুম ভুলে গেলো।কারণ এখন সে সামনের পরীটাকে দেখতে ব্যস্ত।কপাল কুঁচকে সে বার বার লেহেঙ্গা ঠিক করছে।জিসান তার চোখ ফেরাতে পারছে না। হে আজ এই পরীকে বউ বউ লাগছে।তার বউ।
তিন্নি রাইমার সাথে কথা বলতে বলতে ছাদে চলে আসলো। আবারও সেই একই সমস্যা। কোমরের সাইডে চুলকাচ্ছে তার। আর বারবার মনে হচ্ছে এখনই লেহেঙ্গা খুলে যাবে। আজ সারা সন্ধ্যা তারা লেহেঙ্গা টানতে টানতে যাবে। মায়ের ওপর তার ভীষণ রাগ হচ্ছে।

হঠাৎই তার চোখ পড়ল সামনে থাকা ব্যক্তির ওপর। তাকেই দেখছে জিসান।কিন্তু তার চাহুনি অন্যরকম। তিন্নি কিছুটা নড়ে চরে দাড়ালো।
কিন্তু জিসানের পাশে তুবাকে দেখে তিন্নির কেনো জানি মেজাজ গরম হয়ে গেলো।তুবা মেয়েটাকে তার মোটেও পছন্দ না।ছেলেদের গায়ে পড়া সভাব আছে।ছোট মামীর ভাইয়ের মেয়ে।এই মেয়েটা জিসানের পাশে কেনো?কে বলেছে এতো সেজে আসতে?নিশ্চয়ই মেয়েদের ইমপ্রেস করতে চাইছে। অসভ্য লোক একটা। এত হ্যান্ডসাম সাজার কি দরকার ছিলো। আর পাঞ্জাবিতে মনে হয় লোকটাকে একটু বেশি কিউট লাগছে। তুবাকে দেখেই বোঝা যায়, সে তো এই লোকটার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।
আর কিছু না ভেবেই জিসান সোজা তিন্নির দিকে চলে গেলো। তুবা অবাক হয়ে জিসানের চলে যাওয়া দেখলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here