#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#Part_5
৫
সকাল সকাল অফিসে ঢুকলো জিসান। সামনে দেখা হলো তার সিনিয়র অফিসার রিয়াজুল করিম এর সাথে। প্রথমেই তাকে স্যালুট জানালো জিসান। তাকে সবাই রিয়াজ ভাই নামেই ডাকে।
-কিরে কি অবস্থা তোর?
-এইতো রিয়াজ ভাই ভালো। সূচনার কি অবস্থা?
-তোর বান্ধবী তো আমার জীবনটা তেজপাতা বানাই রাখছে।
জিসান হেসে বললো”কেন ভাই কি হয়েছে?
-আর বলিস না, সেতো জানে আমাদের এই প্রফেশনে কতটা ব্যস্ত থাকতে হয়। তবুও একটু দেরি হলে আমার সাথে সেই ঝগড়া তার। বিয়ে তো এখন করেছিস, দেখবি বউয়ের প্যারা কাকে বলে। তবুও তিন্নিকে দেখে আমার যথেষ্ট ম্যাচিওর মনে হয়।
-আমারও তাই মনে হয়। তবুও মেয়েদের বিষয়ে আমি অনেক কাঁচা। মেয়েরা বেশ জটিল বিষয়। এত জটিল বিষয় বোঝা আমার জন্য একটু টাফ। আর তিন্নি হচ্ছে মহা জটিল সাবজেক্ট। বুঝে উঠতে পারছি না তাকে।
-আরে মেয়েদের বোঝা কখনোই সম্ভব না। আমাকে দেখ, এত বছরেও আমি সূচনাকে বুঝতে পারলাম না। কলেজ লাইফ থেকে তার সাথে প্রেম করছি তবু তো বুঝতে পারছি না। কলেজের জুনিয়র মেয়েকে দেখে ফেঁসে গেছিলাম। তোরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। বিয়ের পর থেকে মনে হচ্ছে সূচনা আমাকে বুঝতেই চায় না।
জিসান হেসে উঠলো।
-আচ্ছা শোন জিসান, সূচনা তোকে দেখা করতে বলছে। ডিউটি শেষ করে একবার ওর সাথে দেখা করিস। আর বলিস আমার সাথে যেন ঝগড়া একটু কম করে।
-আচ্ছা ভাই দেখা করবো। গতকালকের কেসটার কি অবস্থা।
-হ্যাঁ ভিতরে চল, ওই বিষয়ই জরুরি কথা আছে তোর সাথে।
আজকাল তিন্নি লেখাপড়া নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত। সামনের মাস থেকে তার এইচএসসি এক্সাম শুরু। কেমিস্ট্রি সাবজেক্ট টা নিয়ে বেচারী একটু চিন্তায় আছে। তাইতো এই সাবজেক্টে অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে তাকে।
এখন বাজে রাত ১২ টা। সন্ধ্যা থেকে পড়তে পড়তে তার মাথা এখন বেশ গরম। পাশেই তার মোবাইলটা বেজে যাচ্ছে। Unknown নম্বর থেকে তার মোবাইলে কল আসছে। সাধারণত সে Unknown নাম্বারের কল রিসিভড করেনা। অনেকটা বিরক্ত হয়েই সে কলটা রিসিভ করলো।
-হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-কে আপনি!বারবার কল দিচ্ছেন কেন?
-আমি খুবই দুঃখিত! কিন্তু আপনি যদি প্রথমবারই কল রিসিভ করতেন, তাহলে হয়তো আর বার বার কল দিতে হতো না।
তিন্নি বুঝতে পারলে এটা জিসান। কিন্তু এই লোক তার নাম্বার পেলো কিভাবে? পরে ভাবল তার নাম্বার পাওয়া এই লোকের কাছে কোন ব্যাপারই না।তাই সে বললো” আমিতো “৯৯৯” এ কল বা মিসডকল করিনি। পুলিশরা কি আজকাল গণহারে সবাইকে কল দেওয়া শুরু করেছে নাকি?
জিসান মনে মনে ভাবছে”এই মেয়েটা কি সারা জীবন আমাকে এভাবেই জব্দ করবে নাকি।”
-পুলিশরা গণহারে সবাইকে কল না দিলেও যার যার বউকে ঠিকই দেয়।
তিন্নি ভাবছে এই লোকটা এত বউ বউ করে কেনো? এই প্রফেশনে থেকে সারাদিন মাথায় শুধু মার্ডার কেস থাকারই কথা! এই লোক নির্ঘাত কাজে ফাঁকিবাজি করে।
তিনি বললো” কি বলবেন একটু জলদি বলেন, কারণ আমার সময় নেই।
-হ্যাঁ! নেক্সট মান্থ থেকেতো তোমার পরীক্ষা শুরু? তো প্রিপারেশন কেমন?
তিনি ভাবছে, আপনি থেকে সোজা তুমিতে চলে এসেছে এই লোক?
-প্রিপারেশন ভালো। তবে কেমিস্ট্রিতে একটু সমস্যা আছে।
-আমারও তাই মনে হয়। আমাদের কেমিস্ট্রিতে ওতো একটু সমস্যা চলছে। তাই আমাদের কেমিস্ট্রিটা একটু সহজ করতে তুমি তো চলে আসলাম। তাছাড়া বয়সে তুমি আমার থেকে অনেক ছোট। I hope you don’t mind!!
-no, it’s ok.
-ঠিক আছে আমি এখন রাখছি। তুমি বরং কেমিস্ট্রিতে আরো মনোযোগী হও। Bye.
তিন্নির এখন নিজের উপরই রাগ লাগছে। কি দরকার ছিল এই লোকটার কাছে বলার যে তার কেমিস্ট্রিতে সমস্যা আছে। সুযোগ পেয়ে লোকটাও তাকে খোঁচা মারলো।
মৌমিতা ,শামীম, নীলিমা, আমরিনএরা হলো তন্নির বেস্ট ফ্রেন্ড। তবে নীলিমার সাথে তন্বীর সম্পর্কটা একটু বেশি গভীর। নীলিমা সবসময়ই তিন্নির না-বলা কথাগুলো কেও বুঝে নেয়। তিন্নি ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। কিন্তু শামীম অন্য সবার চাইতে আলাদা। তার মনটা খুব ভালো আর মানুষকে হাসাতে খুব পছন্দ করে। তাকে ছাড়া তো তাদের আড্ডা জমে না।
আনিসুর রহমান সকালে বাজার থেকে একগাদা ছোট মাছ কিনে নিয়ে এসেছেন। এত মাছ দেখে তিন্নিদের বাসার কাজের মেয়ে বিথীর মাথায় হাত। বিথীর সবসময়ই দুই লাইন বাড়িয়ে বলার অভ্যাস আছে।
সে তিন্নির মাকে বললো”খালাম্মা খালুজানতো এত্তোগুলা মরা আর ফচা মাছ লোইয়া আইছে।”বিথীর কথা শুনেই তিন্নির মায়ের মেজাজ গরম। সকাল থেকেই তিনি সবার ওপর রাগ ঝারছেন। তিন্নির বাবাকে আজ চা দেবে না বলে ঠিক করেছেন। তিন্নির বাবাও ভয়ে আর চা চায়নি তার কাছে।#মেঘবিলাসী
#israt_jahan_arina
#Part_6
৬
জীবনের একাকীত্ব সময়কে দূর করতে বন্ধু-বান্ধবের কোন তুলনা হয় না। একজন প্রকৃত বন্ধু পারে আপনার জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কে সুন্দর এবং খুব সহজ করতে।
জিসানের লাইফের বন্ধু বান্ধবদের অবদান অনেক বেশি। সে তার জীবনের খারাপ মুহূর্তগুলোতে তাদের সব সময় পাশে পেয়েছে। তার মধ্যে সূচনা ছিল তার বেস্ট ফ্রেন্ড। জিসানের তো মনে হয় একমাত্র সূচনা আছে যে তাকে সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে।
সূচনা আর রিয়াজ ভাইয়ের সম্পর্ক সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে। রিয়াজ ভাই ছিল তাদের সিনিয়র। কর্মজীবনে এসেও সে রিয়াজ ভাইকে পেয়েছে তার পাশে। জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ বলতে সে এই দু’জনকেই বোঝে।
অনেকদিন পর জিসানকে পেয়ে সূচনা আজ অনেক খুশি।
-বুঝলি সূচনা, তোর হাতের বিরিয়ানী টা প্রচন্ড মিস করছিলাম।
-সমস্যা নেই এখন আর মিস করতে হবে না তোকে। বউয়ের হাতের বিরিয়ানী খাওয়ার পর এই সূচনাকে আর মনে থাকবে না তোর।
-আমার ভাগ্য এতো ভালো হবে বলে তোর মনে হয়?
-অবশ্যই হবে। তিন্নি অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। I am sure ও একটা লক্ষী বউ হবে।
– জানিস আমার আজকাল খুব ভয় হয়।
-কি বলিস? আমাদের সেই fearless, angry young man জিসানের ভয় হয়?
-তুই তো জানিস আমাদের প্রফেশনটা কেমন? আগে আমার কোনো weakness ছিল না। আমার কাজের প্রতি আমি always dedicated ছিলাম।ঠিক এই কারনেই আমি কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাইনি। বিয়ে করার খুব একটা ইচ্ছা আমার ছিল না। তোদের চাপে পড়েই তিন্নিকে আমি দেখতে গিয়েছিলাম।
আমি তো ভেবেছিলাম মেয়ে দেখে না করে দেব। কিন্তু তিন্নিকে দেখার পর সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।
-তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস। ACP দের কি ফ্যামিলি হয় না? এই লাইফে রিক্স আছে বলে কোন সম্পর্কে না জড়ানো নিতান্তই বোকামি। সবারই ফ্যামিলি থাকে, তো এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর তিন্নি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে।
-আজকাল কাজে মন দিতে পারছিনা। সারাক্ষণ তিন্নি মাথার মধ্যে ঘুরছে।
-প্রেমে পড়লে এমনই হয় বন্ধু!! এখন তো তোর একটা ফ্যামিলি হয়েছে। তো নতুন পরিবারের এক্সপেরিয়েন্স বল?
-সবাই খুবই ভালো। তারা আমাকে নিজের ছেলের মত ভালোবাসে। তামিমকে আর তিন্নিকে দেখে আমি ফিল করতে পেরেছি ভাই বোনের ভালবাসা ঠিক কেমন হয়।
-আর তিন্নি?
-এখনো আমার সাথে খুব একটা সহজ হতে পারেনি। তাছাড়া সামনে ওর এক্সাম। তাই আমিও তাকে একটু স্পেস দেওয়ার চেষ্টা করছি।
তিন্নির মাথায় এখন একটাই চিন্তা তাকে অনেক ভাল রেজাল্ট করতে হবে। মেডিকেলে পড়াটাই তার লক্ষ্য। মূলত বাবাকে দেখেই তার এই স্বপ্ন জেগেছে। তিন্নির বাবা একজন ডক্টর। মানুষের সেবা করার পিছনে এতটা আনন্দ পাওয়া যায় সেটা তিন্নি তার বাবার কাছ থেকেই জেনেছে।
অবণী রহমান রান্নায় ব্যস্ত।তিন্নি তার মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
-মামনি তুমি আমার সাথে কয়েকদিন ধরে রাগ করে আছো কেনো? ঠিকমতো কথা বলছো না।
-আমি কেন রাগ করবো? তোরা সবাই তো এখন বড় হয়ে গেছিস। নিজেদের ভালো নিজেরাই বুঝিস।
-এভাবে কেন বলছো মামনি?
-তুই জিসানের সাথে ঠিকমত কথা বলছিস না কেনো? তোরা বাবা মেয়ে হচ্ছিস একরকম। অন্যদের বোঝার চেষ্টা করিস না তোরা।
-আচ্ছা তোমার সব কমপ্লেন মেনে নিলাম। সামনে আমার পরীক্ষা। এখন তুমি মন খারাপ করে থাকলে আমার এক্সাম কি ভালো হবে বলো?
-হয়েছে এত আল্লাদ দেখাতে হবে না। আর আমি জানি আমি মেয়ে অনেক ভাল রেজাল্ট করবে।
-দেখতে হবেনা কার মেয়ে।
মা আর মেয়ের এত ভালোবাসা দেখে তামিম বললো
“আগে এক সময় ছিল যখন ছেলেদের সবাই মাথায় তুলে রাখতো, আর এখন ছেলেরাই পরিবারের সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।আমাকে তো কেউ ভালোবাসে না।”
-শোন তোদের রাজত্বের দিন এখন শেষ। এখন আমরা মেয়েরাই সব জায়গায় রাজত্ব করবো।
-জিসান ভাই কে বলে তোমাকে আমি রিমান্ডে পাঠাবো। তখন বুঝবে মজা।
-আমি কি তোর ওই জিসান ভাইকে ভয় পাই নাকি। ওই ACP কে উল্টো আমি রিমান্ড দিব।