মেঘের আড়ালে চাঁদ পর্ব ৩৩

#মেঘের আড়ালে চাঁদ ❤
#writer: মহসিনা মুক্তি
#পর্বঃ তেত্রিশ

রাফসান গোডাউনের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনের দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে। হাতে সিগারেট, সে ধোঁয়া নাক, মুখ দিয়ে ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। চেয়ারের সাথে বাঁধা লোকটির পুরো মুখের ওপর দেওয়া কালো কাপড় সরিয়ে নেয়। কাপড় সরাতেই রুশানের মুখ দেখা যায়। রুশান রাগী ভাবে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখ বাঁধা রয়েছে। রাফসান পকেটে হাত দিয়ে রুশানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, রুশানের রাগী ভাবে তাকানো দেখে সে একটু হাসে। তারপর মূহুর্তের ভেতর রুশানের চুল ধরে চেয়ারের সাথে মাথা ঠেকিয়ে গলায় ছুরি ধরে। চেয়ার রুশানের থেকে একটু নিচু হওয়ায় তার ঘাড় বেঁকে রয়েছে, গলায় টান লাগছে সে কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু তার মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হচ্ছে না। রাফসান চিৎকার করে করে বললো

-” তুই আমাকে চোখে রাঙানি দিস? এতো সাহস তোর?” বলে ছুরি রুশানের গলায় একটু চেপে ধরলো, তাতে রুশানের গলার চামড়া কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে গলা দিয়ে। কিন্তু রাফসানের তাতে খেলায় নেই সে চেপেই ধরে আছে।

-” মনে আছে তোকে আমি একদিন বলেছিলাম, রুশান যদি ওই ঘটনার সাথে তোর কোনো সম্পর্ক থাকে আই সোয়ার তোকে আমি এমন কষ্ট দেব যে তুই নিজেই মরতে চাইবি কিন্তু আমি এতো সহজে তোকে মারবো না? মনে আছে? নিকৃষ্ট ভাবে মারবো তোকে! আমার ধারণা সঠিক তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিলি। কেড়ে নিয়েছিলি আমার থেকে সবাই মিলে। এর মূল্য তো চোকাতে হবে তোদের। তোর কি মনে হতো আমি কখনোই তা জানতে পারবো না? ভুল ভাবতি! রাফসানের সাথে টক্কর দিয়ে পারবি না বলে তোরা সবাই জোট হয়ে আমার দূর্বল জায়গায় হাত দিয়েছিস। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আমার জীবনের সব হারানো। এতো সহজে কিভাবে ছেড়ে দেই তোদের? সবাই কে মেরে দিয়েছি শুধু কয়েকটা আড়ালের মুখ বাকি। ভেবেছে আমি কোনদিন জানবো না। কিন্তু তারা ভুল ভেবেছে। প্রত্যেক টাকে আমি এমন ভাবে মারবো যাতে তাদের আত্মা চিৎকারেও মানুষ শিউরে ওঠে।” বলে রাফসান রুশানের গলা থেকে ছুরি সরিয়ে মাথা ধরে সামনে এনে পেছনের চেয়ারের সাথে জোরে বারি দেয়। মাথার পেছনে দেওয়ার আঘাত লাগে প্রচুর এতে রুশান ব্যালেন্স হারিয়ে মাথা এদিক ওদিক নাড়ায়। আর রাফসান ওর থেকে একটু সরে দাঁড়ায়। রুশানের মাথা এখনো ঘুরছে, মাথার ভেতর ভনভন করছে যেনো এখনি জ্ঞান হারাবে এতো জোরে চেয়ারের সাথে বারি দিয়েছে। একটুর জন্য হয়তো তার মাথা ফেটে যায় নি।

রাফসান রুশানের চেয়ারে বেঁধে রাখা একহাতের ওপর ছুরি ঘুরায়।

-“যদি আমি এখানে একটা পোঁচ দেই তাহলে তো রক্ত বের হবে তাই না? না, না! রক্ত কেন হবে? ওটাতো তোদের কাছে লাল রঙ তাইনা?” বলে সেখানে একটা পোঁচ দেয়, আর রক্ত গড়গড়িয়ে পড়তে থাকে। রুশান আর্তনাদ করে কিন্তু তার শব্দ কেউ শুনতে পারে না শুধু অস্পষ্ট আওয়াজ ছাড়া।

-” আরে মামা চাপ নেও ক্যান? আমরা তার সাথে একটু মজা নিতেছি। আরে এইটা তো রক্ত না এইটা হলো লাল রঙ।” মনে পড়ে কথাটা, ফোনের ওপাশ থেকে তুই বলেছিলি? পড়ে মনে?”বলে সে আরেকহাতে আরেকটা টান মারে একই ভাবে কেটে রক্ত বের হয়। রাফসান এবার রুশানের মুখে বাঁধা কাপড়টা সরিয়ে দেয়। আর রুশান জোরে শ্বাস নিয়ে জোরের সাথে রাফসানকে বলে

-” ভালো হবে না কিন্তু রাফসান। আমাকে ছেড়ে দে। নাহলে আমার ভাই তোকে ছাড়বে না শালা।” রুশানের একথা শুনে রাফসানের দলের কিছু লোক হেসে দেয়। রুশান ঘাড় ঘুরিয়ে রাগী চোখে ওদের দিকে তাকায় তারপর আবার রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসানও মুচকি হাসছে।

-” তুই তোর ভাই নাঈমের কথা বলছিস? সিরিয়াসলি? কোন দুনিয়ায় থাকিস? যে ভাই তোর নিখোঁজ হয়েছে তিনদিন আগে তুই তার কথা বলছিস সে তোকে বাঁচাবে? আরে তোর ভাই নিজে বাচতে তোরে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তোর কর্মকাণ্ড আমার কাছে ফাঁস করে দিয়েছে। কিন্তু আদৌও কি বাঁচতে পেরেছে?” রাফসান তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলায়। তারপর হাত পেছনে নিয়ে একটু ঝুঁকে বলে

-” তোর ভাইরে আমি তো চাপা দিয়ে দিছি। ভালো হয়েছে না? এখন কথা হলো তোকে কি করবো!” বলে রাফসান একটু ভাবুক হওয়ার ভান করলো। কিন্তু রুশান যখন দেখে বাঁচার আর কোনো পথ খোলা নেই তখন রাফসানকে বলে

-” ভাই আমারে ছেড়ে দেন। ভুল হয়ে গেছে আমার। জীবনে আর কাউরে মারবো না আমি। একদম ভালো হয়ে যাবো। আমারে ছেড়ে দেন।” রুশানের কথা শুনে রাফসান ভ্রু উচিয়ে বলে

-” বাহ্! মরার কথা শুনে শালা থেকে ভাই হয়ে গেলো, আর তুই থেকে আপনি হয়ে গেলো?” বলে রাফসান জোরে জোরে হাসতে লাগলো। যা মেরে ফেলার ঘোষণা দেওয়া ব্যাক্তির কাছে নিঃসন্দেহে ভয়ংকর। রুশানেরও এখন এই হাসি ভয়ংকর লাগছে। রাফসান হুট করে হাসি থামিয়ে কঠোর ভাবে রুশানের দিকে তাকায়। রাফসানের এভাবে তাকানো দেখেই রুশানের গলার পানি শুকিয়ে যায়। এমনিও তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। মাথায় বারি দেওয়ার কারনে এখনো ঝিম ধরে আছে, গলা দিয়ে রক্ত পড়ছে, হাত দিয়েও পড়ছে। রাফসান ইশারা করে আবিরকে। রাফসানের দুইজন লোক এগিয়ে এসে রুশানের হাতের আঙুল থেঁতলে দিয়ে তার নখগুলো তুলে নেয়। এর আগে তারা রুশানের মুখ বেঁধে নেয়। একে একে হাতের আঙুল গুলোও কেটে ফেলছে। আর রাফসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তা দেখছে। তার চোখের সামনে একটা রক্তাক্ত কান্নামাখা চেহারা ভেসে ওঠে। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে সে। মায়া দয়ার ছিটেফোঁটাও এখন তার চোখে নেই। সে চোখ খুলে ভয়ংকর ভাবে তাকায় রুশানের দিকে যে ইতোমধ্যে মাথা নাড়ছে আর যন্ত্রণায় মুখ দিয়ে অস্পষ্ট আওয়াজ করছে। রাফসান ওদের থামতে বলে সে এগিয়ে যায় লাইটার নিয়ে।

-” চেহারা নিয়ে খারাপ কথা বলেছিলি তাইনা? এই মুখ দিয়ে টিটকারি করেছিলি তাইনা?” বলে সে রুশানের চেহারার ওপর লাইটারের আগুন জ্বালিয়ে ধরে। রুশান মাথা পেছেন নিতে গেলে রাফসান ঘাড় চেপে লাইটারের আগুনের ওপর চেপে ধরে। তার মুখের চামড়া জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কিন্তু রাফসান তা দেখে পৈশাচিক ভাবে হাসে। কিছুক্ষন পরে সে রুশানকে ছেড়ে দেয়। যে নিজের আঙুল ছাড়া হাত ছুটানোর চেষ্টা করছে, মুখের একপাশ পুড়ে গেছে, একপাশ ঠিক আছে। পুড়া অংশের চামড়া কালো হয়ে উঠে উঠে আছে। যন্ত্রণায় দগ্ধ সে। এরপরও রাফসানের মুখে নেই কোনো সমবেদনা, সহানুভূতির ছাপ। সে একে আরো কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলতে পারলে শান্তি পায়। কিন্তু সে মারবে না। এতো তাড়াতাড়ি রাফসান কাউকে ছাড়ে না।

-” কষ্ট হচ্ছে? ঠিক এরচেয়ে বেশি আমার হয়েছিল যখন তোরা…” রাফসান আর বললো না। হাত মুঠ করে দরজায় জোরে লাথি দিয়ে গোডাউন থেকে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে তার লোকেদের বলে যায় ওর নোংরা কথা বলার জিহবা যেনে কেটে ফেলে। সে গাড়িতে গিয়ে বসে। আর আবির গাড়ি স্টার্ট দেয়।

.

তিয়াস সামনের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জিয়ারত করতে এসেছিল সে। সে এগিয়ে গিয়ে বাঁধানো করবটির দেয়ালে হাত দিল। ভেতরে আগাছা হয়েছে ছোট ছোট। দেয়ালে শেওলা পড়েছে। তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। তারা কোথায় আছে আর তার বোন এই নির্জন জায়গায় কোথায় পড়ে আছে! যে অন্ধকারে ভয় পেত সে আজ সম্পূর্ণ একা মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে মাসের পর মাস বছরের পর বছর। হয়তো এতোদিনে তার সব অস্তিত্ব মাটির সাথে মিশে গেছে। কিন্তু তার স্মৃতি মন থেকে এতোটুকুও মোছে নি। তার কথা, হাসি, চেহারা, আবদারগুলো এখনো স্পষ্ট কিন্তু মানুষটা কোথায় হারিয়ে গেছে। তিয়াস দেওয়ালে মাথা রাখলো।

-” খুব ভালো আছিস তাই নারে একা একা এখানে? কিভাবে ছেড়ে গেলি আমাদের তুই? একটুও আমাদের কথা মনে পড়ল না তোর। তোকে খুব মনে পড়ে রে? মনে আছে তোর কিছুক্ষণ পর পর তুলতুলকে সাথে নিয়ে গিয়ে আবদার করতি ভাইয়া এটা লাগবে ওটা লাগবে না দিলে আমরা তোমার সাথে কথা বলবো না। খুব মিস করিরে সেই দিনগুলো। জানিস তো তুই চলে যাওয়ার পরে কখনো তুলতুল কোনো বায়না, আবদার করে না। মাঝরাতে ওঠে তোর জন্য চিৎকার করে কাঁদে। তখন আমি পারি না ওর কাছে যেতে, পারিনা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্তনা দিতে। যদি আবদার করে বসে যে তোকে চাই তাহলে আমি কিভাবে তা পূরণ করবো। তাই চুপচাপ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনি চিৎকার গুলো। জানিস তখন আমার ভেতর টা ফেটে যায়, কিন্তু শান্ত হয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এই শুনছিস আমাকে? তোর কি মায়ের কথা মনে পড়ে না? জানিস কেউ তোকে ভোলেনি। মা কিছুক্ষণ পর পর চোখের পানি ফেলে তোকে মনে করে, বাবা কান্না করতে পারে না কিন্তু কখনোই হাসে না সে মন থেকে। প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তোর কথা মনে পড়ে। আর আমি? আমি নির্বাক হয়ে দেখি সব। ব্যর্থ মনে হয় নিজেকে৷ কিছুই করতে পারি নি আমি, হাসি ফুটাতে পারিনি তাদের মুখে, দূর করতে পারিনি তাদের কষ্ট। কেন চলে গেলিরে তুই? আমার জন্য তোকে চলে যেতে হলো, আমার সাথেই শত্রুতা করে হয়তো তোকে আমার থেকে কেড়ে নিল। নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করবো আমি? সবছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু সম্ভব নয় আর আমাকে আবার ফিরতে হয়েছে সবাইকে রক্ষা করার জন্য। তুই রাগ করিস নি তো? রাগ করিস না আমি কথা দিচ্ছি আর কারো কোন ক্ষতি হতে দেব না আমি।” তিয়াস আরো কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। তার গলা কাঁপছে। কান্নারা সব দলা পাকিয়ে যেনো গলার কাছে আটকে আছে, কষ্ট হচ্ছে খুব,চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু সে অপারগ। সে কোনরকমে বললো

-” তুই ভয় পাস না ঠিকাছে? আমি আবার আসবো।” বলে তিয়াস সামনে আগায় চোখের কোণের পানি মুছতে মুছতে। আর একবারও সে পিছনে ফিরে তাকায় না। তাহলে আর নিজেকে সামলাতে পারবে না। তার আদরের বোনকে কোন নির্জন জায়গায় পোকা মাকড়ের ভেতর ফেলে রেখে যাচ্ছে সে।

তিয়াস বাইক উঠে চলে যায়। কিছুদূর যেতেই সে দিয়াকে দেখে। বাইক থামায় সে। দিয়া রেস্টুরেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে কিছু করছে। তিয়াসকে খেয়াল করেনি। তিয়াস ওর কাছে যেতে গিয়ে কিছু দেখে থমকে দাঁড়ায়। দিয়াকে রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে একটা ছেলে এসে ওর হাত ধরে নিয়ে যায়। তিয়াসের কেন জানি রাগ হয়। কাছে যেতে গিয়েও যায় না। যাকে সে তার জীবনের সাথে জড়াবে না তাহলে তাকে অন্য করো সাথে দেখে তার রাগ হয়ে কি লাভ? কিন্তু তারপরও তার রাগ হচ্ছে। তিয়াস চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে দমায়, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইকে ওঠে টান দেয়। আর ভাববে না সে কাউকে নিয়ে। তার যে দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসা বারণ। সে আবার পুরোনো পথে ফিরে গেছে যেখানে তার পদে পদে বিপদ। তার সাথে আরো একটা নিষ্পাপ জীবনকে জড়াবে না যার পরিণতি তার বোনের মতো হবে। তিয়াস মনে মনে দিয়াকে শুভকামনা জানায়৷ ভালো থাকে যেনো ও। তিয়াস নিজেকে বুঝ দেয়, তুই তিয়াস আহমেদ। তিয়াস কখনো পিছনে ফিরে তাকায় না। যা চলে গেছে তা গেছে। আর পিছনে তাকাবি না এতেই তোর আর সবার জন্য মঙ্গল। সে আর না তাকিয়ে চলে যায়।

.

হঠাৎ করেই রাফসানের গাড়ি থেমে যায়। সে বিরক্ত হয়ে আবিরকে জিজ্ঞেস করে

-” কি হয়েছে? গাড়ি থামিয়েছিস কেন?”

-” ভাই জানি না কি হয়েছে। দেখতে হবে।” বলে আবির গাড়ি থেকে নেমে যায়। রাফসান সিটে হেলান দিয়ে বসে। ফোন বের করে তা টিপতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আশেপাশে তাকাতেই একজনের ওপর নজর পড়ে, সে চোখ ফিরিয়ে নেয়। চোখে সানগ্লাস পরে নেয় সে।

তুলতুল দোকানের উদ্দেশ্য বের হয়েছে। আনমনা হয়ে হাঁটতে হাঁটতে তার একটা গাড়ির ওপর চোখ পড়ে। এটা তো রাফসানের গাড়ি মনে হচ্ছে। সে একটু সরে ভেতরে তাকায়। দেখে রাফসান সানগ্লাস চোখে দিয়ে ভেতরে বসে আছে ফোন হাতে। তুলতুলের কালকের ঘটনা মনে পরে গেলো। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠে সে ঠিক নিশ্চিত হতে পারলো না, যে সে স্বপ্ন দেখেছে নাকি কল্পনা করেছে নাকি বাস্তবই হয়েছে। তার একবার মনে হচ্ছে সে ঘুম থেকে ওঠেই নি, ঘুমিয়েই স্বপ্ন দেখছে, আবার মনে হচ্ছে সে উঠেছিল কিন্তু সে ঘুমের ঘরে থাকার কারনে ভ্রম হয়েছে, আবার মনে হচ্ছে বাস্তবই ঘটেছে। তুলতুল রাফসানের দিকে ভ্রু কুচকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে কোনটা ঠিক।

এদিকে রাফসান না তাকিয়েও বুঝতে পারছে তুলতুল তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে তাকাবে না। সে ভুলে গিয়েছিল মেয়েটির পরিচয়। সে কখনোই এ অন্যায় আর করবে না। আবেগের বশে কোনো ভুল করে বসবে সে বয়স আর তার নেই। কাল তুলতুলের রুমে তার ফ্যামিলি ফটো দেখে সে কিন্তু তখন পাত্তা দেয় নি। পরে তার মনে পরে সে কি করছিল। এমন নয় যে সে কিছু জানে না। সে জানে সবটাই কিন্তু কিভাবে নিজের মন এতো বেশামাল হয়ে গেলো কিভাবে কাল সে অন্যায় টা করলো বুঝতে পারছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনকে কখনোই প্রশ্রয় দিতে হয় না। রাফসান যে মিনিকে ভুলে গেছে বা তার অস্তিত্ব মুছে গেছে তার মন থেকে তা নয় সে এখনো ঠিক সেরকম অনুভব করে যা আগে করতো। কিন্তু এটাও সত্য যে সে তুলতুলকে পছন্দ করে হয়তো ভালোওবাসে। না চাইতেও হয়ে গিয়েছে তা। কিন্তু কিছু সময় লাগাম টেনে ধরতে হয়। সেটা নিজের জন্য ও অপর মানুষের জন্য ভালো।

ইদানীং তার তুলতুলকে সময়ে অসময়ে দেখতে মন চায়, সে দূরে গেলে অজানা কষ্ট হয়, মনে হয় সবসময় সামনে বসিয়ে রাখতে। কিন্তু তা অসম্ভব! মেয়েটি তাকে পছন্দ করে না ততটা, আর সত্যি জানলে হয়তো তাকে ঘৃণা করবে তার মুখও হয়তো কোনোদিন দেখতে চাইবে না। তারও নিজের ওপর রাগ হয় কিভাবে সে একটা পিচ্চি মেয়েকে ভালোবাসতে পারে? যে তার থেকে কত ছোট। সে সবসময় খারাপ ব্যবহার করেছে ভয় দেখিয়েছে তুলতুলকে যেনো তার কাছে না আসে। কিন্তু নিয়তিতে বুঝি অন্য কিছুই ছিল। কারনে অকারণে তার কাছাকাছি এসে পরেছে। আর যখন জেনেছে মেয়েটির যেকোন সময় সকল বিপদ হতে পারে তখন তাকে দেখার জন্য তার পিছনে লোক লাগিয়েছে। না চাইলেও তাকে তুলতুলের কথা জানতে হতো তার কথা ভাবতে হতো আর এটাই রাফসানকে দূর্বল করেছে তার ওপর। রাফসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে তুলতুলকে ভালোবাসলেও তার জীবনে চায় না। এতে কিছু সম্পর্ক, কিছু ভালোবাসা, কিছু মানুষ ভালো থাকবে। তাদের পথ আলাদা, যা কখনো এক হবার নয়। আবির এসে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। রাফসান সাইড মিররে ভেসে ওঠা তুলতুলের মুখ দেখে। আস্তে আস্তে তা বিলিন হয়ে যায়। সে মিরর টা হাত দিয়ে স্পর্শ করে। তারপর আবিরকে বলে গাড়ি তার ফার্মহাউসে নিতে। রাফসান সানগ্লাস খুলে বাইরের দিকে তাকায়। তার জীবনটা সাদা কালোর ভেতর হারিয়ে গেছে। জীবনে নেই কোন রঙ, কিছুদিনের জন্য মেয়েটা তার জীবনে আসায় তার প্রতিদিনের নিত্যকার কাজকর্মের এমনকি তার মনেও প্রভাব ফেলছে। কিছুটা রঙিং হয়ে উঠছিল ঠিক আগের মতো। অনুভূতি গুলোও জীবন্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু আজকে থেকে তা সে নিজেই চাপা দিয়ে দিল তার সাদাকালো রঙহীন জীবনের ভীড়ে। এইতো একটু আগেও মেয়েটা তার সামনে ছিল, কিছুটা কাছে ছিল তার। কিন্তু কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে যেন শত শত মাইল দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। যা কখনো কমার নয়।

চলবে….

ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আজকের পার্ট পরে রাফসানকে কার কেমন মনে হয়েছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here