মেঘে ঢাকা আকাশ পর্ব -১৮+১৯

#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব_১৮
কলমে রোকেয়া পপি।

বিয়ের কনে থাকবে ঘরে। এই ভর দুপুরে তুই খেয়ে উঠেই সাজুগুজু করে যাচ্ছিস কোথায় শুনি?

মায়ের কথা শুনে মলি থমকে দাঁড়ালো। সত্যি কথাটা বলে দিবে কিনা বুঝতে পারছেনা। ও একটু ইতস্তত করে বললো, মা সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। একটু কাজ ছিল।

সেটাই তো জানতে চাইছি, কাজটা কি যে ভর দুপুরে তোর বাইরে যাওয়া লাগবে!

মা শুদ্ধ চাইছে আমার বিয়ের গয়না গুলো আর শাড়িটা আমার পছন্দে কিনতে। ও অপেক্ষা করছে বাইরে। আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবে। তুমি টেনশন করো না। আর একটু পরেই তো আপাও অফিস থেকে ফিরে আসবে। আসতেছে জলিও।

আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। যা। এতো কৈফিয়ত দিতে হবে না। জলির সাথে ওর শশুর আসবে। আমি কি পারবো গুছিয়ে নাস্তা দিতে?

মা আমি টেবিলে সবকিছু সাজিয়ে ঢেকে রেখেছি দেখো। ফ্রিজে লেবুর সরবত বোতলে ভরে রাখছি। জলিকে শুধু বলবে সুন্দর করে পরিবেশন করতে। আর ফল গুলো কেটে দিতে বলো।
আসি মা। শুদ্ধ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।

মলি চলে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই জলি ওর শশুর কে নিয়ে হাজির। মাকে জড়িয়ে ধরে চলছে নিরবে অশ্রু বর্ষণ। জলির মা জলিকে ছাড়িয়ে বললো, তোর শশুরকে দাঁড় করিয়ে রেখে কি শুরু করলি! ছাড় আমাকে। কান্নাকাটি যা করার পরে করিস।

জলি অপ্রস্তুত হয়ে চোখের পানি মুছে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো বাবাকে কোথায় বসতে দিবে। কি খাওয়াবে।

সরফরাজ খান স্মিত হেসে বললেন, মা জলি এতো ব্যাস্ত হোস না তো। যা ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নে। আমি বেয়াইন সাহেবার সাথে এখানে বসেই গল্প করি। তুই তো জানিস আমার পেট ভরা। যাওয়ার আগ দিয়ে একটু চা করে দিস, তাহলেই হবে।

জলি ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে মাকে বললো, মা মেজপা কোথায়? এতো চুপচাপ কেন ঘরবাড়ি!

মলি এইমাত্র বের হলো। দেখ ফ্রিজে লেবুর সরবত করে রেখে গেছে। ভাইজান কে সরবত দে। আর ফ্রিজ ভর্তি মিষ্টি, ফলমূল আছে। ফল কেটে দে। আমরা দুই ভাই বোন ফল খেতে খেতে জরুরী কিছু কথা বলি।

এরমধ্যে ড্রাইভার এসে খাবারের প্যাকেট আর ফলমূলের কার্টুন রেখে গেছে। সেগুলো দেখে জলির মা কপট রাগ দেখিয়ে বললো, এইসব কি ভাইজান! আপনি বোনের বাসায় আসবেন যখন মন চায়, তখন। কিন্তু তাই বলে সবসময় এতো কিছু আনতে হবে নাকি!

বোনের কাছে ভাই আসবে, যা মন চায় আনবে। এগুলো নিয়ে কোন কথা হবে না আপা।
এখন বলেন দুই মেয়ের বিয়ে, হাতে তেমন সময় ও নেই। কিভাবে কি করতে চাইছেন?

গরীবের আবার কিভাবে কি? ছেলে পক্ষের লোকজন খুব কাছের চার পাঁচ জন সাথে নিয়ে আসবে। কাজি বিয়ে পড়াবেন। ওরা মেয়ে নিয়ে চলে যাবে।
বাসায় বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। আমাদের ও সামান্য কিছু আত্মীয়-স্বজন আসবে। সব মিলিয়ে ত্রিশ, পঁয়ত্রিশ জন লোকের খাবার রান্না হবে।
আপনার একটু সময় দিতে হবে ভাইজান। আমি তো একা পারবো না এতো কিছু সামলাতে।

কি বলেন আপা। আপনি এসব নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। এগুলো সব আমার লোক দিয়ে করায় ফেলবো। বলছিলাম কি একসাথে দুই মেয়ের বিয়ে। বাসায় না করে যদি কনভেনশন হলে করা হয়, তাহলে খুব ভালো হয়। আপনার টেনশন করার কিছু নেই।
আমার খুব ছোট একটা কনভেনশন হল আছে ধানমন্ডি তে। আমার মেয়েদের বিয়েতে তো আর ভাড়া লাগবে না।
আমি চাই ওখানে হোক অনুষ্ঠান। আর ছেলে পক্ষের লোকজন এতো কম আসবে কেন। ওদের কে সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে বলুন।

বাকিটা আমি দেখছি।

না না ভাইজান। তার কোন দরকার নেই। পলি রাজি ও হবে না মনে হয়। তাছাড়া আমার কাছে সত্তুর হাজার টাকা আছে। এরমধ্যে দুই জামাইয়ের জন্য দুটো পাঞ্জাবি সেট কিনতে হবে। খাওয়ার খরচ। কিছু টাকা যদি বাঁচানো সম্ভব হয় তাহলে ঘড়ি ও কিনে ফেলবো।

সরফরাজ খান জানেন এই টাকা কিছুই না। তারপরও বললেন আপা এটাতো অনেক টাকা।
আমি পঞ্চাশ হাজার টাকার মধ্যে কনভেনশন হলে একশ লোকের খাবারের ব্যাবস্থা করবো।

আর আমার মেয়ের জামাইদের তো আমাকে কিছু উপহার দিতে হবে তাই না?
আমি দুই জামাইকে কমপ্লিট স্যুট, জুতা আর ঘড়ি দিব বিয়ের উপহার হিসেবে। সুতরাং জামাই পোশাক নিয়ে আপনার চিন্তা বাদ।

সরফরাজ খান জানেন, টাকা না নিলে এরা তার প্রপোজাল মেনে নিবে না। তাই সে বুদ্ধি করে বললো, আপা আপনি আমার হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা গুনে গুনে দিবেন। মেয়েদের সাজিয়ে গুছিয়ে কনভেনশন হলে চলে আসবেন। বাসায় কোন ঝামেলা করার দরকার নেই।

না না ভাইজান। পলি শুনলে খুব রাগ করবে। আপনি কেন জামাই পোশাক দিবেন? আমার যা সামর্থ্য আছে তার মধ্যেই দিব। তবে আপনার কনভেনশন হলে বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারে।

জলি এর মধ্যে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি, ফলমুল সব গুছিয়ে নাস্তা সামনে দিয়ে চা বানিয়ে এনেছে।

সরফরাজ খান চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন, মাগো আমি শুধু চা খাব। আর শোন কাল কলেজ ছুটির পর আবার বাসায় চলে আসিস না যেন। আমি আসব তোর কলেজে। দুপুরে বাপ বেটিতে মিলে বাইরে খেয়ে শপিং মলে যাব।

শপিং মলে কেন বাবা?

বোকা মেয়েটা বলে কি! তোর বোনদের বিয়েতে তুই শপিং করবি না। পরবি কি তাই শুনি?
তোর যা যা দরকার রাতেই লিস্ট করে রাখিস। আর হ্যা, আরেকটা কাজ করবি। জামাই বাবাজি দের ফোন করে বলবি, আমরা ফোন করলে, কাল তারা যেন বসুন্ধরায় এসে স্যুটের মাপটা দিয়ে যায়। স্যুট, জুতা এগুলো তো মাপ ছাড়া হবে না। তোর জিজুদের নাম্বার সেভ করে রাখিস।

আমি তাহলে এখন উঠি আপা। আপনি পলি মামমনির সাথে আলাপ করে কাল জানান কিভাবে কি করব।

ঠিক আছে ভাইজান।

জলি নিঃশব্দে পড়ছে। মলি ঘরে ঢুকতেই সে বই থেকে মাথা না সরিয়ে বলল, কখন আসলে মেজপা?

এই তো এখনি আসলাম। মা কি রাগ করেছ দেরি করে ফিরলাম জন্য?

জলি বই থেকে মুখ ঘুরিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে হাসল। তার হাসিই বলে দিচ্ছে বাসায় সবকিছু ঠিকঠাক আছে।

মলি খুবই আনন্দিত। আজ ওর নিজের পছন্দে বিয়ের সব কেনাকাটা করছে। ও কখনো ভাবতেই পারেনি নিজের বিয়ের কেনাকাটা নিজে পছন্দ করে কিনতে পারবে! বিয়ের শাড়ি আর বৌভাতের লেহেঙ্গা মিলে আশি হাজার টাকা বিল এসেছে। ও তো দাম দেখে কিছুতেই এই পোশাক নিবে না।
আর শুদ্ধ ভাবছে আরো দামি হলে মনে হয় ভালো হয়।

কিরে মেজপা একা একা হাসছিস যে?

শুনবি?

বললে শুনবো।

আয় তবে তোকে খানিকক্ষণ বিরক্ত করি?

করো। কিন্তু মেজপা বেশিক্ষণ না। আমার অনেক পড়া আছে।

দিনরাত যে এত পড়িস তোর ভালো লাগে?

হুঁ লাগে তো।

যে হারে পড়াশোনা করছিস, সব বই তো তোর মুখস্থ হয়ে যাবে রে।

জলি লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে বললো, আমি তো সেটাই চাই। যেদিন যে ক্লাস হয়, সব নোট করে মুখস্থ করে ফেলি।

মুখস্থ! তাহলে আর পড়ার দরকার কী?

না পড়লে ভুলে যাব না?

তাও তো ঠিক।

এখন যাও। তোমাকে আর সময় দেয়া যাবে না।

আচ্ছা ঠিক আছে পড়। আমি গিয়ে দেখি রাতে কিছু রান্না করতে হবে কিনা। আপা দেখলাম মায়ের সাথে মিটিং করছে।

মেজপা রেস্ট নাও। রান্না করতে হবে না।
আমার শশুর কাচ্চি দিয়েছে। খাওয়ার আগে গরম করে খেতে বসলেই হবে।

ওয়াও। তাহলে তো খুব ভালো হলো। এমনিতেই খুব ক্লান্ত লাগতেছে। অনেক হাঁটাহাঁটি করছি আজ। আর পেট ও ভরা। বাইরে নাস্তা খেয়ে আসছি। যাই মায়ের কাছে বসি তাহলে। তুই পড়।

আজ রাতে তিন বোন একসাথে শুয়েছে। অনেক রাত জেগে তিন জন গল্প করছে। পলি অফিস করে ক্লান্ত। গল্পের মাঝে সে ঘুমিয়ে কাদা কাদা।

মলি জলির মাথায় হাত বিলি কেটে দিতে দিতে বললো, তোর কি হয়েছে জলি? আমি যখন বাসায় ফিরলাম তখন দেখি তুই বই সামনে নিয়ে কাঁদছিলি।

কিছু হয় নি মেজপা।

আমাকে বলতে কোনো অসুবিধা আছে?

না খুবই তুচ্ছ ব্যাপার মেজপা। এই জন্যে বলতে ইচ্ছে করছে না।

কাউকে কিছু বলবি না–আবার ফিঁচ, ফিঁচ করে কাঁদবি এটা কেমন কথা?

আর কাঁদব না।

আমরা তিন বোনের কেউ কাঁদলে মা মনে খুব কষ্ট পায়। কি জন্যে কাঁদছিস সেটা আমার জানা দরকার। তোকে কি সজীব ডিস্টার্ব করে?

আপা এখন ঘুমাও। সজীবের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমি চাই ও না যোগাযোগ হোক নতুন করে।
তবে মানুষ টাকে খুব মিস করি। আর নিজের ওপর খুব রাগ হয়, আমি কিভাবে এমন অযোগ্য একটা ছেলের হাত ধরে বের হয়ে গেলাম! এসব যখন ভাবি, তখন একাই চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
আর কিছু না।
মেজপা শোন, মাকে কিছু বলার দরকার নেই। মা অকারণে টেনশন করবেন।

আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না। কিন্তু তুই আমাকে কথা দে, এসব আর ভাববি না। শুধু শুধু কান্না করবি না।

জলি হাসল। এত সুন্দর করে হাসল যে মলির ইচ্ছে করছে বোনকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে। কিন্তু তা করা যাবে না। কারণ জলি একদম পছন্দ করে না জড়াজড়ি।
আচ্ছা জলি কি জানে যত দিন যাচ্ছে দিনকে দিন ততোই ওর রুপ খুলছে! মলির ধারণা ওর বোনটা কিছুই জানে না। আয়নায় সে মনে হয় না নিজেকে কখনো দেখে। ওর সমস্ত জগৎ পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ।
পড়াশোনা সে আগেও করতো। কিন্তু একটা ভুল ওর জীবনকে আমুল পরিবর্তন করে দিয়েছে।
চলবে…..#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
পর্ব_১৯
কলমে রোকেয়া পপি

সাবাজ তার বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছে, মেয়েটার সাথে আজ কথা বলবেই, শুধু কথা বলবে তাই নয় প্রেমের অভিনয় করে মেয়েটিকে ওর প্রেমে ফেলবে।
ওর বন্ধুরা এর আগে অনেকেই চেষ্টা করছে সুন্দর মেয়ে দেখে ভাব জামানোর। কিন্তু কেউ পাত্তা পায়নি।

সাবাজ ফাইনাল ইয়ারের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। হ্যান্ডসাম, জিম করা আকর্ষণীয় ফিগার। বাবার টাকা আছে, লেটেস্ট মডেলের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে কলেজে আসে। মেডিকেল কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েরা‌ সাবাজের জন্য পাগল।

আর ফাস্ট ইয়ারের নতুন এই মেয়েটা কখনো ওর দিকে চোখ তুলে তাকায় ও না! ও আস্তে করে মেয়েটার পেছনে এসে দাড়ালো। ওকে মনে মনে স্বীকার করতেই হলো যে,
মেয়েটির মধ্যে অন্য রকম কিছু-একটা আছে যা পুরুষদের অভিভূত করে দেয়। রূপের বাইরেও অন্যকিছু।

মেয়েটি অসামান্য রুপবতী তাতে ওর কোন সন্দেহ নেই। কলেজে সুন্দরী মেয়ের অভাব নেই। অতি রুপসি মেয়েদেরকেও প্রায় সময়ই বেশ সাধারণ মনে হয়। কিন্তু এই মেয়েটি সেরকম নয়। এবং ওর ধারণা মেয়েটি নিজেও তা জানে।

মাথা ভর্তি ঘনো কালো চুল টেনে খোঁপা করে রেখেছে। মুখে নেই কোন প্রসাধনী! তারপরও কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে দেখতে! কী মোহময়ী!

পরনে সাধারণ সুতির একটি কালো রঙের থ্রিপিস তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে যেন বহুগুণ। মেয়েটির গায়ের রং কাঁচা হলুদের মতো। হাত পায়ের স্কিন মাখনের মতো। ওর ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে।

মেয়েটি কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়ে ছিল। তাকে দেখে বোঝায় উপায় নেই সে কিছু ভাবছে কি না। এইজাতীয় মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুই বোঝা যায় না। এদের চোখ সাধারণত ভাবলেশহীন হয়ে থাকে।

এক্সকিউজ মি।

জলি চমকে ঘুরে তাকালো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো আমাকে কিছু বলছেন?

এই মেয়ে তুমি ফাস্ট ইয়ারের না?

জি ভাইয়া।

নাম কি তোমার?

জলি।

শোন জলি সিনিয়র ভাইদের সন্মান দিতে হয় এটা জানো না? আমি খেয়াল করেছি আমরা তোমার সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করলেও তুমি সালাম দাও না।

সরি ভাইয়া।

সরি বললে তো হবে না। চলো সামনের ঐ হোটেল টাতে বসি। চা খেতে খেতে তোমার সাথে কিছু দরকারি কথা বলি।

সরি ভাইয়া। আমার বাবা আসবেন এখন। আমি তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। জলির কথা শেষ হবার আগেই জলি দেখলো ওর শশুরের গাড়ি এসে থেমেছে। ও এক্সকিউজ মি বলে পাত্তা না দিয়ে নেমে গেল।

আর সাবাজের বন্ধুরা এতোক্ষণ সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছিল, তারা সবাই মিলে হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে লুটিয়ে পড়ল। একজন তো বলেই বসলো, বলেছিলাম না পাত্তা পাবি না। এই মেয়ে আর দশটা মেয়ের মতো নয়।

সাবাজের খুব পেস্টিজে লেগেছে। ও দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বললো, আমি যদি তোমাকে আমার প্রেমে না ফেলতে পারি তবে আমার নাম ও সাবাজ খান নয়।
আমি তোমার এই রুপের অহংকার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিব। তবেই আমার নাম সাবাজ খান।

সরফরাজ খান জলিকে নিয়ে এসেছে কাতানপল্লী মিরপুরে। সিঁদুর রঙা মেরুন কালারের শাড়ির ওপর গর্জিয়াস সোনালী জড়ির কাজ করা একি রকম তিনটা শাড়ি পছন্দ করেছেন তিনি। ক্রিম কালারের শাড়ির ওপর সোনালী পাড়ের তিনটা শাড়ি পছন্দ করেছেন। জলি ভেবে পাচ্ছে না এতো শাড়ি দিয়ে কি হবে? আবার জোর করে একটা খুব কিউট পার্পেল কালারের লেহেঙ্গা ও কিনছে। লেহেঙ্গা ওর জন্য কিনছে সেটা ও বুঝতে পারছে। কিন্তু এতো গুলো শাড়ি! বিস্ময় গোপন না করে ও বলেই ফেললো, বাবা এতো শাড়ি দিয়ে কি হবে?

সরফরাজ খান গাড়িতে বসে এমন শব্দ করে হেসে উঠলেন যে ড্রাইভার পেছন ফিরে তাকাতে বাধ্য হলো।

তিনি হাসতে হাসতেই বললেন তোকে পছন্দ করতে বললে মুখ গোমড়া করে থাকিস, পছন্দ করিস না। ভাবখানা এমন করিস, যেন তোকে তোর বাবা বিষ খেতে বলেছে!
কি করবো বল? বাধ্য হলাম নিজের পছন্দে কিনতে। এখন বল শাড়ি গুলো কেমন হয়েছে?

শাড়ি তো খুব বেশিই সুন্দর হয়েছে। কিন্তু আমি মিলাতে পারছি না কার জন্য এতো শাড়ি!

মেরুন কাতান গুলো তোদের তিন বোনের জন্য।
ক্রিম কালারের শাড়ি তোর মা আর দুই বোনের শাশুড়ির জন্য। এখন যাব আড়ং। জামদানী কিনব তোর আর তোর মায়ের জন্য। আর তুই শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে কিছু গয়না কিনিস। তারপর সোজা বসুন্ধরা সিটি।

বাবা বলছিলাম কি আর কিছু দরকার নেই। আমি তো তেমন সাজগোজ করিনা। যা কিনছো তাই অনেক।

চুপ থাক। বিয়ে উপলক্ষে যা কেনাকাটা করার করে ফেল। তারপর শুধু পড়াশোনা আর পড়াশোনা। তুই চাইলে ও আর কোন কেনাকাটা হবে না।
কথা গুলো বলে যেভাবে দুলে দুলে হাসছেন তিনি, দেখে মনে হচ্ছে খুব মজার কোন জোকস বলেছেন তিনি।

সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আসার পথে পুরো রাস্তা জলি মন খারাপ করে বসে থাকলো। ওর সত্যি সত্যিই খুব খারাপ লাগছে বাবার এতো টাকা খরচ হলো জন্য।

সরফরাজ খান ও মন খারাপ করে বসে আছেন। তার ইচ্ছে ছিল গোল্ডের কিছু গয়না কিনে দিবে মেয়েকে কাতান শাড়ির সাথে পরার জন্য। কিন্তু জলি কিছুতেই গোল্ড নিবে না। জামদানী শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে এ্যান্টিক ঝুমকা নিয়েছে এক জোড়া আড়ং থেকে। তবে এবার শাড়িটা ও নিজেই পছন্দ করেছে দেখে তিনি খুব খুশি হয়েছেন।
আর বসুন্ধরা সিটি থেকে গোল্ড প্লেটেড একটা ঝুমকা। ওর নাকি জবর জং লাগে গাদা গাদা গয়না পরতে। তিনি মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভাবলেন আজকের যুগেও এমন মেয়ে আছে, দিতে চাইছি তবু ও নিচ্ছে না!
তার জানা মতে এ যুগের ছেলে মেয়েরা যতো পায় ততোই চায়। তার নিজের ছেলেকে দিয়েই তো তিনি দেখেছেন।

এই জীবনে সে যথেষ্ট টাকা পয়সা ইনকাম করছেন। কিন্তু দুঃখ একটাই, ছেলেটা কে মানুষ করতে পারেননি। ছেলের ভয়ে বাসায় তেমন টাকা পয়সা ও রাখতে পারেন না।
এতো ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করে ও ধরে রাখতে পারল না। যে লক্ষী কে মাথায় করে রাখার কথা । তাকে পায়ে ঠেলে দিয়ে এখন উনি দেবদাস সেজেছেন!

মেয়েটার অবর্তমানে এখন যদি এই মেয়েটার মর্ম বুঝে সঠিক পথে ফিরে আসে তাহলেই তার সব স্বপ্ন সত্যি হবে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here