মেঘে ঢাকা আকাশ পর্ব -২২+২৩ ও শেষ

#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
পর্ব_২২
কলমে রোকেয়া পপি

টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ মেঘে ঢাকা। মেঘের রঙ ক্রমেই কালো হচ্ছে। মনে হচ্ছে সারা দিনই বৃষ্টি হবে। পলির খুব টেনশন হচ্ছে। আজকের মতো শুভ দিন শুরু হলো বৃষ্টি দিয়ে! বিয়েতে হয়তো অনেকেই আসবে না বৃষ্টর জন্য। তাছাড়া বাসা থেকে সাজুগুজু করে কমিউনিটি সেন্টারে যেতে হবে। রিকশায় করে যেতে হয়তো পুরো শরীর ভিজে যাবে। ভেজা শাড়ি গায়ের সাথে লেপ্টে থাকবে। আর ওরা দু বোন নামবে রিকশা থেকে! সবাই তখন হা করে গিলবে বিয়ের কনে দ্বয়কে দেখে। নিজের মনেই এসব ভাবতে ভাবতে পলি ফিক করে হেসে দিলো।

মলি পাশে এসে বসতে বসতে বললো, কিরে আপা একা একা হাসছিস দেখি। ঘটনা কি?

নারে তেমন কিছু না। বৃষ্টিতে ভিজে রিকশায় করে বিয়ের কনে যাবে কমিউনিটি সেন্টারে। এটা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে। দেখছিস না কিভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

আপা একটা কথা রাখবে?

ওমা ভনিতা করছিস কেন? যা বলবি ঝটপট বলে ফেল।

বলছিলাম কি চলো না পার্লারে যাই। বিয়ে তো জীবনে একবারই করব। জীবনে তো কখনো মেকআপ করলাম না। চলো আজ পার্লারে সেজে সবাইকে চমকে দেই।

তোর মাথা খারাপ হয়েছে! এই বৃষ্টিতে কমিউনিটি সেন্টারে কিভাবে যাব, সেই টেনশনে বাঁচি না। তুই আসছিস পার্লারে যাওয়ার আব্দার নিয়ে!

আপা প্লিজ প্লিজ। বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না। শুদ্ধ ওদের একটা গাড়ি পাঠায় দিছে। আজ সারাদিন আমাদের আসা যাওয়া সব কাজ ঐ গাড়িতে হবে।

না না তারপরও, আমার অতো সাজগোজ ভালো লাগে না। ও বাড়ি থেকে তো সবকিছু পাঠায় দিছে।
ওগুলো দিয়ে সাজলেই হবে। তাছাড়া পার্লারে বউ সাজতে অনেক টাকার ব্যাপার।

আপা টাকা নিয়ে ভেবো না তো। শুদ্ধ বুকড করে রেখেছে আমাদের তিন বোনের জন্য। এখন না গেলে ও খুব মন খারাপ করবে।

বাব্বাহ্ তলে তলে এতো কিছু!
দুজনে মিলে কখন এতো প্লান করলি?

আপু ও তো প্রতিদিন রাতে ফোন দেয়। ওর যে কতো শতো প্লান। শুনলে তোমার মাথা ঘুরাবে।
চলো আপা আর‌ দেরি করা ঠিক হবে না।

জলি হাল্কা পার্টি মেকআপ দিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে চলে এসেছে। বউ সাজানো শেষ হতে এখনো দেরি আছে। মেহমান দের সাথে কথা বলার মতো তেমন কেউ নেই, বিধায় ও আগেই এসে পড়েছে।

আজকে ও মেরুন কাতান শাড়িটা পরেও খুলে ফেলেছে। মনে হচ্ছিল খুব বেশি সাজা হয়ে‌ গেছে। শাড়িটা এতো বেশি গর্জিয়াস! শেষ পর্যন্ত কাতান চেন্জ করে জামদানী শাড়ি আর কানে ঝুমকা পরেছে। ও এমনিতেই সুন্দরী, পার্লারে সাজার পর ও নিজেই নিজেকে চিনতে পারছেনা। এতো হালকা সেজেও কেমন যেন অন্য রকম এক দ্যুতি ছড়াচ্ছে ওর চেহারা থেকে।

অধিকাংশ মেহমান দের ও চেনে না। ওদের পক্ষে হাতে গোনা দশ বারো জন নিকট আত্মীয়। আর বাকি সব বর যাত্রী।

এর মধ্যে পলি আর মলিও চলে এসেছে। ওরা ওদের নিদৃষ্ট আসনে বসেছে। সবার চোখ ওদের তিন বোনের ওপর। সবাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এতো সুন্দর ও মানুষ হয়! কেউ যেন কারো চেয়ে কম সুন্দর নয়। অনেক অভিভাবকের মধ্যে জলিক নিয়ে ফিসফিসানি শুরু হয়ে গেছে। যাদের ঘরে যোগ্য ছেলে আছে তাদের মায়েরা মনে মনে ছক কষছে এই মেয়েকে তাদের চাই ই চাই।

জলি অনেক সময় ধরে অনুভব করছে, দুটো চোখ ওকে ফলো করছে। কিন্তু পেছন ফিরলে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। ওর বেশ অসস্তি হচ্ছে।
ও মনের মধ্যে খচখচানি নিয়েই মেহমান দের খাওয়া দাওয়া তদারকি করছিল। হঠাৎ করে ও খেয়াল করলো ওর পাশে দাঁড়িয়ে কলেজের সেই বড়ো ভাইয়াটা মিটমিট করে হাসছে, আর বলছে এতো সুন্দর হাত দুটো খালি কেন? দুহাত ভরে রেশমী চুড়ি পরলে আরো বেশি সুন্দর লাগতো।

সাবাজের কথা শুনে,ওর গাল দুটোতে রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে। ও এতোক্ষণে বুঝতে পারলো, তাহলে এই চোখ জোড়া ওকে ফলো করছিল।

ও একটু রাগ দেখিয়ে বললো, কি ব্যাপার আপনি এখানে? আমার পিছু নিতে নিতে এখানে চলে এসেছেন! আশ্চর্য তো!

সাবাজ হতভম্ব ভাব কাটিয়ে বললো, আরে থামুন থামুন। নিজেকে কি ভাবেন তাই শুনি?
আমি বরযাত্রী। শুদ্ধ ভাইয়ার কাজিন। সো নিজেকে এতো মহা সুন্দরী ভাবা বন্ধ করুন। আপনার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরীরা এই সাবাজ খানের পেছন পেছন ঘুরে।

জলির চোখ ভিজে উঠতে চাইছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে এভাবে ওকে কেউ এতো কঠিন কঠিন কথা শুনাতে পারে! ও এক্সকিউজ মি বলে সরে আসলো। ও চায় না ওর চোখের পানি কেউ দেখে ফেলুক। বাইরে এসে ও বড়ো করে একটা শ্বাস নিলো।
বাইরের জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর। হরেক রকম গাছ গাছালিতে ভরা। একটা দোলনা ও আছে।
ও গিয়ে দোলনায় বসে আনমনে দোল খেতে শুরু করলো।

হঠাৎ করে ও অনুভব করলো, ওর পেছনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। এবং ওকে প্রশ্ন করছে ছেলেটা কে?

ও এতোটাই আনমনা ছিল যে, কন্ঠস্বর না শুনলে বুঝতেই পারতো না যে, কেউ ওর পেছনে। তবে কন্ঠটা খুব পরিচিত। ও চমকে পেছন ফিরে তাকালো।

ওর চেহারা মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ও তোতলাতে তোতলাতে বললো, তুমি?

হ্যা আমি। আমি সজীব। তুমি এখনো আমায় বিবাহিতা স্ত্রী। তুমি চলে এসেছো মানে এই নয় যে, সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেদের সাথে টাংকি মেরে বেড়াবে। এই জন্যই আমি তোমাকে পড়াশোনা করতে নিষেধ করেছিলাম। যে ভয়টা পেয়েছিলাম, এখন দেখছি সেটাই সত্যি!

সজীবের সাহস দেখে জলি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ও রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো, তুমি এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে থেকে দূরে সরে যাবে। তা না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।

কি খারাপ হবে শুনি?

জলি দাঁত কিড়মিড় করে বললো, খবরদার এখানে সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করবে না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে কালকেই তোমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিব। আর ভুল করেও কখনো আমার ওপরে খবরদারি করতে আসবে না।

ও রাগে গটগট করে হেঁটে গিয়ে সাবাজের সাথে হাসি মুখে গল্প করা শুরু করলো ইচ্ছে করে। ও চাইছে সজীব দেখুক ও ভালো আছে। খুব বেশি ভালো আছে ওকে ছাড়াও।

সাবাজ হতভম্ব! হঠাৎ করে জলির এমন পরিবর্তন দেখে। আনন্দে গদগদ হয়ে এইটুকু সময়ের মধ্যেই দুজন দুজনের ফোন নাম্বার এবং ফেসবুক আইডিতে এ্যাড হয়ে গেল।

আর দুটো চোখ দূর থেকে ওদের আনন্দ দেখে ক্রোধে ফেটে পরতে চাইছে।

খাওয়া দাওয়ার মাঝেই দুই বোনের বিয়ে পড়ানো শেষ। আর বিয়ে পড়ানোর আগেই দুই জামাইয়ের খাওয়া পর্ব শেষ করে ঐ ডিশেই কনেদের ও খাওয়ানো হয়েছে।

দুজনকেই এখন বরের পাশে বসানো হয়েছে। দুজনের মুখেই বড়ো ঘোমটা।

মলি আর শুদ্ধ পাশাপাশি বসে হেসে হেসে গল্প করলেও, মারুফ আর পলি একদম চুপচাপ।
ওদের দুজনের মাঝখানে টুকটুক বসা। টুকটুক বার বার ওর মাম্মামকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে আর হাতে চুমু খাচ্ছে।

যেহেতু বর কনের জন্য দু-দুটো স্টেজ করা হয়েছে আলাদা ভাবে এবং একটু দূরত্ব রেখে। আর বিয়ে পড়ানোও হয়েছে ভালো নামে।
পলির ভালো নাম ইসরাত জাহান আর মলির নুসরাত জাহান। তাই বিয়ে পড়ানোর সময় বা পাশে এসে বসার পর ও মারুফ অনুভব করতে পারছে না এটা মলি নয়, পলি।
যেহেতু মলির সাথে ওর সম্পর্ক তেমন সহজ নয়। তাই সে ইচ্ছে করলেও কথা বলতে পারছে না। আবার কথা বলার জন্য তর ও সইছে না। ওর শুধু মনে হচ্ছে কখন এইসব ঝামেলা শেষ হবে, আর কখন ও একটু নিরিবিলি ভাবে মলিকে পাশে পাবে। মন খুলে দুটো কথা বলবে প্রিয় মানুষটির সাথে।

ও ওর মাকে ইশারায় ডেকে কানে কানে ফিসফিস করে বললো, এখানে আর বেশি দেরি করার প্রয়োজন নেই মা। দেখছো ওয়েদারের কি হাল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এবার দ্রুত বিদায় পর্ব শেষ করো।

ছেলের অস্থিরতা দেখে তিনি ঠোঁট টিপে হেসে বেয়াইনের দিকে এগিয়ে গেলেন।

চলবে…#মেঘে_ঢাকা_আকাশ
পর্ব_২৩ ( অন্তিম পর্ব)
কলমে রোকেয়া পপি।

বাসর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে রাত বারোটা বেজে গেল। মারুফের বন্ধুরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ভেতর থেকে অস্থিরতা বোধ করলেও ও উঠে আসতে পারছে না লজ্জায়।

এর মধ্যে কতো ঘটনা যে ঘটে গেছে। মারুফের কাজিনরা তাজা গোলাপ ফুল আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে অসম্ভব রকমের সুন্দর করে বাসরঘর সাজিয়েছে। বিছানায় বেলি ফুল দিয়ে হার্ট সেপ করে রুমের মধ্যে ঘিয়ের প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে ইলেকট্রিক লাইন অফ করে দিয়েছে।

টাকা ছাড়া কিছুতেই ওরা নতুন ভাবিকে রুমে ঢুকতে দিবে না। পলির শাশুরির কপট ধমক খেয়ে সবাই হাসতে হাসতে সরে গেছে। তবে ফিসফিস করে বলে গেছে, আমাদের ট্রিট না দিয়ে তুমি ছাড় পাবে না ভাবি। আমরা কিন্তু তোমাকে জ্বালিয়ে মারবো।

টুকটুক কিছুতেই তার মাম্মামকে ছাড়বে না। আসার পর থেকেই টুকটুক আঠার মতো ওর মাম্মামের সাথে লেপ্টে আছে। পলির শাশুরি কয়েক বার এসেছে নাতিকে নিতে। কিন্তু দীদাকে দেখলেই টুকটুক পলিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে মাম্মাম টুকটুক তোমার সাথে ঘুমাবে। টুকটুক কে বাঁচাও।

পলি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, অবশ্যই তুমি আমার সাথে ঘুমাবে বাবাই। পলি আদর করে টুকটুককে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো, থাক না মা ও আমার কাছে।

কি বলো তুমি! বাসর রাতে কি কেউ বাচ্চা সাথে রাখে! দিনের বেলায় সারাদিন তোমার কাছে থাকবে। এখন আমি নিয়ে গিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই। তাছাড়া ও তো প্রতিদিন আমার সাথেই ঘুমায়।

দীদার কথা শেষ হবার আগেই টুকটুক জিহ্বা ভেঙিয়ে বললো, টুকটুক আর তোমার সাথে ঘুমাবে না।
টুকটুকের মাম্মাম চলে এসেছে। এখন থেকে টুকটুক ওর মাম্মামের সাথে ঘুমাবে।

পলি স্মিত হেসে বললো, থাক মা ও আমার কাছেই থাক। আমার কোন অসুবিধা হবে না।

ঠিক আছে তাহলে তুমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। ঘুমালে আমি এসে নিয়ে যাব।

আচ্ছা ঠিক আছে মা।

সারে এগারোটার দিকে টুকটুক কে পলির শাশুরি এসে নিয়ে গেল। আর স্নেহ মাখা কন্ঠে বললেন, তোমার একা থাকতে খারাপ লাগবে না তো? সোমাকে পাঠাব গল্প করতে?

পলি আৎকে উঠে বললো, না না মা কাউকে পাঠানোর দরকার নেই। আমি একটু একা থাকতে চাই।

আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি একটু রেস্ট নাও। মারুফ চলে আসবে এখনি। ওর বন্ধুরা সবাই বিদায় নিচ্ছে।

পলির শাশুরি চলে যাওয়ার পর পলি বড়ো করে একটা শ্বাস নিলো। মনে বললো বাব্বাহ্ বাঁচা গেল সোমা ভাবি যে দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে। এই রুমে ঢোকার পর যে অসভ্য মার্কা কিছু কথা বলেছে, পলি মরে গেলেও কারো সাথে শেয়ার করতে পারবে না। যাওয়ার আগে আবার বিছানার নিচে একটা প্যাকেট ও রেখে গেছে।
মনে পড়লেই এখনো কান ঝাঁ ঝাঁ করছে লজ্জায়।

সোমা ভাবির কথা ভাবতে ভাবতেই উনি এসে হাজির! সাইড টেবিলে চায়ের দুটো কাপ, ফ্লাক্স ভর্তি চা, কিছু মিষ্টি আর স্নাক্স রেখে বললেন এই যে সুন্দরী রাতে দেবরের সাথে ভালোবাসা বাসী করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যদি ক্ষুধা লেগে যায়, তখন খেও। তারপর এমন দুষ্টু মার্কা হাসি হাসলো পলির দিকে তাকিয়ে যে, পলির গাল দুটো লজ্জায় বেগুনি রং ধারণ করলো।

মারুফ রুমে ঢুকেই আগে দরোজায় সিটকিনি তুলে দিয়ে পলির পাশে এসে বসলো। মারুফ কে ঢুকতে দেখেই পলি বড়ো করে ঘোমটা টেনে মুখ ঢেকে ফেলেছিল। ঘোমটার ফাঁক দিয়ে দেখলো, সৌম্য সুদর্শন এক যুবক ওর পাশে এসে বসেছে।
পাশে বসার সাথে সাথে ওর শরীরটা কেমন কেঁপে উঠলো।

ঠিক এই সময় বাইরে জানালার কাছে মারুফের কাজিনরা শব্দ করে হেসে উঠলো। পলি আরেকটু গুটিয়ে গেল।

মারুফ ঘোমটা তোলার জন্য হাত উঠাতে গিয়েও নামিয়ে নিল। হঠাৎ করে ওর মনে পড়ে গেল যে, বন্ধুরা বারবার বলে দিয়েছে গিফট না দিয়ে ভাবির মুখ দেখবি না। মনে পড়ে যাওয়াতে স্মিত হেসে পকেট থেকে এক জোড়া নূপুর বের করে বললো, ইসরাত দেখি তোমার পা টা এগিয়ে দাও তো।

পলির খুব হাসি পাচ্ছে এই ভেবে যে, বাসর রাতে ওর স্বামীর প্রথম কথা হলো, দেখি তোমার পা টা এগিয়ে দাও তো! ওর লজ্জা পাওয়ার কথা। কিন্তু ও আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলো ওর লজ্জা লাগছে না। ও খুব স্বাভাবিক ভাবেই শাড়িটা সামান্য সরিয়ে পা বের করে দিলো।

মারুফ খুব যত্ন করে পলির পা নিজের হাঁটুর ওপর তুলে নূপুর পরিয়ে দিলো। তারপর আলতো করে একটা চুমু খেয়ে আরেক পা টেনে নিয়ে পরিয়ে দিলো অন্যটা।

পলির পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। ও ভেবে পাচ্ছে না ছোট্ট একটা চুমু, তাতেই ওর পুরো শরীর শিরশির করছে!

পায়ের নূপুর টাও পলির খুব পছন্দ হলো। মিনা করা অনেক সুন্দর একটা ডিজাইন। নূপুর যে এতো সুন্দর হতে পারে এটা ওর ধারণার বাইরে ছিল।

মারুফ খুব আবেগীয় কন্ঠে বললো, নূপুরটা তোমার পায়ে খুব মানিয়েছে ইসরাত। এটা যেন তোমার এই সুন্দর পায়ের জন্যই তৈরি হয়েছে। ঘোমটা তুলতে তুলতে বললো, তোমার পছন্দ হয়েছে?

পলি মাথা নিচু করে ইশারায় জানালো ওর খুব পছন্দ হয়েছে।

মারুফ ঘোমটা তোলার সাথে সাথে ওর পুরো শরীর যেন বিদ্যুত খেলে গেল। ওর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো বুঝতে যে এটা ওর স্বপ্নের রাজকন্যা মলি নয়। যাকে নিয়ে ও শয়নে স্বপনে স্বপ্নের জাল বুনছিল এ তো সে নয়!

কিছুটা সময়ের জন্য ওর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলেও, খুব দ্রুত ও নিজেকে সামলে নিল। ওর কাছে এখন সবকিছু জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেছে। ওর মা ওকে বলেছিলো, একসাথে দুই বোনের বিয়ে। একজনের নিজের পছন্দে।

মানে মলির নিজস্ব পছন্দ ছিল। হাজার চেষ্টা করলেও মলিকে সে কখনো আপন করে পেতো না।

তাছাড়া টুকটুকের মাম্মাম যদি ইসরাত হয়, তাহলে তো ওর আপত্তি থাকার কথা নয়। নিজেই নিজেকে স্বান্তনা দিলো এই বলে যে, বিয়েটা করা হয়েছে তো টুকটুকের একটা মা দরকার জন্য। তাছাড়া মা ও ইসরাত কে খুব পছন্দ করে।

ও পলির কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে মনে মনে বললো, এই মিষ্টি নিঃস্পাপ চেহারার মেয়েটাকে আমি খুব ভালোবাসবো। কখনো বুঝতে দিবনা আমার পছন্দ তুমি ছিলে না, ছিলো অন্য কেউ। তুমি আমার টুকটুক কে যে মমতা দেখিয়েছো, আমি তার যথাযথ মূল্যায়ন করবো। আমি সজ্ঞানে কখনো তোমাকে কষ্ট দিব না।

পলির পুরো শরীর শিরশির করছে। এই প্রথম কোন ছেলের এতো কাছাকাছি ও। নিজের চেনা জানা শরীর টা কেমন যেন অন্য রকম লাগছে। অপরিচিত এই মানুষ টাকে এতো অল্প সময়ের মধ্যে কেমন আপন আপন লাগছে।
কি মিষ্টি করে কথা বলছে মানুষটা।
তোমাকে মনে হয় টুকটুক খুব জ্বালিয়েছে আজ তাই না?

পলি রিনরিনে মিষ্টি কন্ঠস্বরে বললো, না না একদম না। টুকটুক খুব মিষ্টি একটা বাচ্চা। আমার ওকে খুব ভালো লাগে।

মারুফের এই কথাটা শুনেও খুব ভালো লাগলো। এইটুকু সময়ের মধ্যে কেমন যেন একটা মায়া পরে গেছে। মেয়েটা যা বলছে তাই শুনতে ভালো লাগছে।
শুধু কন্ঠস্বরে যে মিষ্টি ভাব, তাই নয়। কথা বলার ভঙ্গি ও খুব সুন্দর। মনে হচ্ছে কতো আপন, কতো জনম জনম ধরে চেনা।

এই পর্যায়ে দরোজায় ছোট ছোট টোকা। টুকটুক ঘুম থেকে উঠে চলে এসেছে। সে কাতর স্বরে তার মাম্মামকে ডাকছে, মাম্মাম দরোজা খোলো। টুকটুক তোমার সাথে ঘুমাবে।

মারুফ বিস্মিত হয়ে দেখলো, মায়াবতী মেয়েটা উঠে গিয়ে দরজা খুলে টুকটুক কে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বলছে, তুমি অবশ্যই মাম্মামের সাথে ঘুমাবা বাবাই। এসো আমি ঘুম পাড়িয়ে দেই।

এরমধ্যে মারুফের মা ও চলে এসেছে। টুকটুক কিছুতেই যাবে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে টুকটুক মাম্মামের কাছে ঘুমাতে চায়।
দীদা‌ পচা।

টুকটুকের কথা শুনে সবাই ফিক করে হেসে উঠলো।
মারুফের মা হাসতে হাসতে বললো, ও আমি এখন পচা তাই না! ঠিক আছে তোমার সাথে আমার আড়ি।

মারুফ মুগ্ধ দৃষ্টিতে এই মায়াবতীর কান্ডকারখানা দেখেছে। প্রতিটা মেয়ের বাসর রাত নিয়ে কতো স্বপ্ন থাকে। আর এই মেয়েটা নিজের ইচ্ছায় বাচ্চাকে সাথে রাখতে চাইছে! একটু ও বিরক্তি নেই চেহারায়!

পলি এতো স্বাভাবিক ভাবে বললো, মারুফ সাহেব টুকটুক আমাদের সাথে ঘুমালে আপনার কোন আপত্তি আছে?

মারুফ এক রাশ ভালো লাগা নিয়ে বললো , না না আমার আপত্তি নেই। মা টুকটুক এখানেই থাক। রাত অনেক হয়েছে। তুমি ঘুমাও। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। এখন রাত জাগলে শেষে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

খাটের এক কিনারে টুকটুক। মাঝখানে পলি টুকটুক কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। সামনের দিকে মারুফ শুয়ে আছে। ওর চোখে ঘুম নেই। ও মুগ্ধ নয়নে পলির মুখের দিকে চেয়ে আছে। কি মিষ্টি লাগছে হালকা আলোয় মেয়েটাকে। বাহিরে শো শো শব্দ করে বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। হাতের কাছেই পলি। চাইলেই মেয়েটাকে ও কাছে টেনে নিতে পারে।

কিন্তু ওদের সম্পর্কটা এখনো‌ তেমন সহজ হয়নি। ও খেয়াল করলো, ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটাকে নিঃস্পাপ লাগছে খুব। সব মায়া যেন এই মেয়েটার চেহারার উপচে পড়ছে। পায়ের কাছে শাড়ীটা একটু ওপরে উঠে গেছে। নূপুর পায়ে ফর্সা পা দুটো আরো বেশি সুন্দর লাগছে। কেমন গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। নিশ্চয় শীত করছে।

মারুফ আলমারি থেকে একটা ডাবল কম্ফোটার বের করে ওদের তিনজনের গায়েই দিয়ে দিলো।

পলি হঠাৎ করে ঘুরে মারুফকে জড়িয়ে ধরলো। মারুফ বুঝতে পারলো মেয়েটা ঘুমের মধ্যে ওকে জড়িয়ে ধরেছে। তারপরও খুব ভালো লাগলো। ও পলিকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে প্রথমে কপালে তারপর ঠোঁট দুটো নিজের ঠোটে পুরে নিলো।

পলির ঘুম ভেঙে গেছে। ওর খুব অবাক লাগছে । আবার এই অপরিচিত ছেলেটার আদর নিতেও ওর খারাপ লাগছে না একটুও। খুব ভালো লাগছে মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। ও নিজেও মারুফকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নিজেকে সঁপে দিলো মারুফের হাতে।

মারুফ পলির চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললো, আদর নিবে ইসরাত?

পলির কান দুটো ঝাঁ ঝাঁ করছে। এ এক অন্য রকম অনুভূতি। এমন অনুভূতি এর আগে ওর কখনো হয়নি। ও মারুফের বুকে মুখ লুকালো লজ্জায়।

মারুফ আবেগীয় কন্ঠে বললো চলো সামনের রুমটায় যাই। টুকটুক যে কোন সময় উঠে যেতে পারে।

মারুফের রুমটার সামনে ছোট্ট একটা বসার রুম। তারপর ওদের বেডরুম। বসার রুমের ফ্লোরে এক পাশে সোফা, অন্য পাশে ম্যাট্রেস সুন্দর সুন্দর কোশন দিয়ে সাজানো। এখানে বসে ওর বন্ধুরা আসলে জমিয়ে আড্ডা হয়।

মাঝের দরোজা আটকে দিয়ে মারুফ পলিকে হাত ধরে ম্যাট্রেসে নিয়ে এসে বললো, তুমি খুব বেশি সুন্দর। আরেকটু কম সুন্দর হলে ভালো হতো।

পলি মুখ তুলে বললো, কেন আপনার সুন্দর মেয়ে পছন্দ না?

খুব পছন্দ।

তাহলে এ কথা বললেন যে?

এমনি বললাম। কথার কথা। মারুফ আর কথা না বাড়িয়ে পলিকে আবারো জড়িয়ে ধরলো। মাথা ভর্তি ঘনো কালো রেশমী চুল। চুল থেকে পাগল করা এক মিষ্টি গন্ধ নেশা জাগিয়ে দিচ্ছে। মারুফ আলতো করে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে পলিতে নিমজ্জিত হলো একটু একটু করে।

পলিরও খুব আদর নিতে ইচ্ছে করছিল। ও মারুফকে জড়িয়ে ধরে ফেললো নিজের অজান্তেই। ঝড় বৃষ্টির রাতে দুজনে মেতে উঠল এক স্বর্গীয় আনন্দে।

সমাপ্ত।

কিছু কথা না বললেই নয়।
পাঠকের আগ্রহ ছিল পলিকে নিয়ে। নিজের ব্যাস্ততার জন্য পলিকে দিয়েই সমাপ্তি টানলাম।
তবে গল্পের দ্বিতীয় সিকোয়েন্স আসবে খুব শীঘ্রই।

আমার গল্পের মূল নায়িকা পলি নয় জলি।

জলিকে নিয়েই হবে পরবর্তী আকর্ষণ।
বর্তমান সময়ে মেয়ে গুলো কি ধরনের বোকামি করে প্রেমের ফাঁদে পড়ে। আর তার পরিনতি হয় কতোটা করুন। সেটাই আমার গল্পের মূল থিম।

ধন্যবাদ যারা আমাকে প্রতি মুহূর্তে উৎসাহ মূলক মন্তব্য করে লেখার আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ধন্যবাদ তাদেরকেও যারা সমালোচনা করে গঠন মূলক মন্তব্য করেছেন।

যারা প্রথম থেকে এই গল্পটার সাথে আছে তাদের কাছে অনুরোধ করবো গঠন মূলক মন্তব্য করার জন্য।
ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here