মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২৪
❤❤
রোদ-রোদেলা
#তানিয়া_আনিতা
বৃষ্টি সব গুছিয়ে সোফায় হেলান দিবে হঠাৎ তার রোদের দেওয়া জিনিসটার কথা মনে পরল।তাই সে জিনিসটা খুলে দেখে একটা চিরকুট। চিরকুটটা খুলতেই দেখে
——-আমি ছাদে আছি তুই চলে আই জরুরি কথা আছে।
,
,
,
,
,
,
বৃষ্টি চিরকুটটা পরে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। এদিকে বৃষ্টির পেছনে পেছনে ও কেউ একজন ছাদে উঠল।ছাদের দরজা দিয়ে ঢুকতেই বৃষ্টি দেখে রোদ রেলিং ঘেসে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি গিয়ে রোদের পাশে দাঁড়ালো।
———কেন ডেকেছিস
বৃষ্টির এমন প্রশ্নে রোদ কিছু টা অবাক হয়ে গেল কেননা রোদ এটা আশা করে নি।সে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে
——–আমি তো ভেবেছিলাম তুই জিজ্ঞেস করবি আমি কেমন আছি তা না করে এমন প্রশ্ন করলি।
——–তুই কেমন আছিস সেটা আমার বলার কি খুব দরকার আছে ভালো থাকার জন্যই তো রোদেলাকে বিয়ে করেছিস তাহলে।নিশ্চয় ভালো আছিস।
——–তোর কি মনে হয় আমি ভালো থাকার জন্য বিয়েটা করেছি।আমি ওকে ভালোবাসি তুই কি সেটা আদো বিশ্বাস করিস।আমার ভালোবাসা একজন আর তাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে আমি কখন ভাবতে পারি না সেটা তুই ভালো করে জানিস।
রোদের কথা শুনে বৃষ্টি চুপ হয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি বলে উঠল
——-এটা কেন করলি রোদ। আমি তোর কাছে এমন কিছু কখন আশা করি নি।
——–তুই কিসের কথা বলছিস
——–আমি জানি তুই রোদেলা কে কেন বিয়ে করেছিস হয়তো পুরোটা জানি না কিন্তু কিছু টা হলেও আন্দাজ করতে পারছি।দেখ ওর তো কোনো দোষ নেই যা করেছে মেঘ করেছে, তুই চাইলে মেঘের সাথে এই নিয়ে সমস্যা করতি কিন্তু রোদেলা ও তো নিরপরাধ, তাহলে আমাদের তিনজনের সমস্যায় তুই ওকে কেন জরালি।
,
,
,
,
———নিরপরাধ হা হা বৃষ্টি তুই আমাকে হাসালি যদি তাই হয় তবে আমাদের কি দোষ ছিল, আমাদের পরিবারের কি দোষ ছিল, আমাদের ভালোবাসার কি দোষ ছিল বল তুই। ওই মেঘ আমার কাছ থেকে তোকে ছিনিয়ে নিয়েছে, আমাদের পরিবারকে সবার কাছে ছোট করেছে। এসব কে তুই কি বলবি।এখানে আমরা কেউ অপরাধী ছিলাম না তাহলে।আমরা যখন অপরাধ না করে আমাদের এতো কষ্ট পেতে হয়েছে তবে রোদেলাকেও বিনা অপরাধে শাস্তি পেতে হবে।
——–কিন্তু তুই চাইলেও তো অন্য ভাবে নিতে পারতি।
,
,
,
,
,
,
,
——-হুমম পারতাম হয়তো মেঘের ক্ষতি করে আর না হয় ওর কোম্পানির ক্ষতি করে, কিন্তু এতে করে ওর শাস্তি হতো খুব কম।ওর ক্ষতি করলে ও পরে সুস্থ হয়ে যেত, কোম্পানির ক্ষতি করলে পরে আবারও ঘুরে দাঁড়াতো।কিন্তু আমি চেয়েছিলাম ওকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে।ওর প্রিয় জিনিসে আঘাত করে ওকে বুঝিয়ে দিতে যে অন্যের জিনসে হাত বাড়ালে কতোটা যন্ত্রণা পোহাতে হয়।আর আমি এখন সাকসেসফুলি যে ওর বোনকে দিয়েই আমি ওকে বাজিমাত করবো তবেই আমার মনের জ্বালা মিটবে।
রোদ বৃষ্টির দুবাহু ঝাড়া দিয়ে কথা গুলো বলে ছাদ থেকে বের হয়ে গেল আর বৃষ্টি সেখানে দাঁড়িয়ে,
——–জানি না এই কোন গোলক ধাঁধাঁয় পরে গেলাম আজ আপনার ভুলের জন্য শাস্তি পেতে হচ্ছে আপনার বোনকে, আমাদের দুজনকে।আমি জানি না রোদ কি করবে কিন্তু এটা বুঝতে পারছি সামনে আমাদের চারজনের জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে যার পরিণাম খুব ভয়াবহ।
,
,
,
,
,
বলে কাদতে লাগলো।এদিকে রোদের নামার বিষয় টের পেয়ে অদৃশ্য থাকা মানুষটি সরে যায় আর রুমে গিয়ে রকিং চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে,
———-তার মানে তোমাদের তিনজনের মাঝে এসব রহস্য রয়েছে যা রোদেলা বা আন্টি কেউ জানে না।বাহ খুব সুন্দর খেলা খেলেছো এবার এই খেলায় আমিও অংশ নিবো।তারপর…….
বিকেলে রোদেলা আর রোদ চলে গেল।আর মেঘ বৃষ্টিদের ও সময় চলে যাচ্ছে ওদের মতো করে।
,
,
,
,
,
বৃষ্টি রুমে বসে কান্না করছে। কারণ একটু আগে সে যা দেখেছে বা শুনেছে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। মেঘ এমন কিছু করতে পারে তার কল্পনার বাহিরে। কথা গুলো মনে করতেই বৃষ্টি আবারও কান্না করতে লাগলো।.
.
.
.
.
.
কিছুক্ষন আগে……
মেঘ অফিসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল হঠাৎ সে অনলাইন শপিং এ একটা শাড়ি দেখে, সেটা দেখে মেঘের খুব পছন্দ হয় তাই সে বৃষ্টির জন্য কিনে নেয়।বাসায় পৌঁছে দেখে বৃষ্টি শাওয়ার নিচ্ছে তাই প্যাকিং করা শাড়ির সাথে একটা চিরকুট রাখে, তারপর এমন জায়গায় রাখে যাতে বৃষ্টির নজরে পরে।বৃষ্টি শাওয়ার নিয়ে বের হলে মেঘ যায়। বৃষ্টি নিজের কাজ সেরে নিচে চলে যায়।
,
,
,
,
,
,
মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্যাকেট খোলা, মেঘ খুব খুশি হয় যে বৃষ্টি হয়তো শাড়িটা পরেছে।তাই নিজেও কাপড় পরে ছাদে চলে যায়। গিয়ে দেখে তার দেওয়া শাড়িটা পরে কেউ উল্টো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ পেছনে গিয়ে,
———-তুমি যে শাড়িটা পরেছো তাতেই আমার অনেক খুশি লাগছে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তুমি পরবে না। জানো শাড়িটা দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এটা তোমাকে অনেক ভালো মানাবে।এটা আমি তোমার জন্য এনেছি, আমার ভালোবাসার উপহার হিসেবে। আসলে সত্যি বলতে আমি তোমাকে সেই কলেজ থেকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি তো আমাকে বুঝো না।আজ আমি আবারও বলছি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
কথা টা বলতেই উল্টো দিক থেকে ঘুরে মেয়েটি মেঘকে জরিয়ে ধরে
———আমি তো জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে এতো কষ্ট কেন দিলে,আমি জানি বৃষ্টি তোমার মোহ,তাই তুমি ওকে বিয়ে করেছো আর আমি এও জানি বৃষ্টি তোমাকে সুখী করতে পারেনি,তোমাদের মাঝে এখনো স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক হয়নি তাই তুমি বৃষ্টিকে ছেড়ে দাও প্লিজ।
.
.
.
.
.
.
এতোক্ষণ তানিশার কথা শুনে মেঘ পুরো স্তব্ধ কারন মেঘ ভেবেছিল হয়তো এটা বৃষ্টি আর তাই মেঘ কথাগুলো বলছে কিন্তু কখনো ভাবেনি এটা তানিশা হবে।মেঘ তানিশাকে ছাড়ার আপ্রান চেষ্টা করছে কিন্তু তানিশা মেঘকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে মেঘ তানিশাকে ধাক্কা মারে আর তানিশা ছিটকে পরে যায়।
———ছিঃ তানিশা তুই এসব কি করে ভাবতে পারলি আর তুই এখাবে কেন আমি তো এ শাড়ি বৃষ্টির জন্য এনেছি আর বৃষ্টিকে এখানে আসতে বলেছি তাহলে।
———আসলে আমি তোর সাথে কিছু কথা বলার জন্য তোর রুমে গেলে বিছানার উপর এসব দেখি, শাড়িটা দেখে আমার খুব পছন্দ হয় আর চিরকুটটা পরে আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো
আর বলতে না দিয়ে মেঘ নিজে বলে উঠল,
———কি ভেবেছিলি তোর ভাবা উচিত ছিল যে এটা আমাদের রুমে ছিল আর এও ভাবা উচিত ছিল এটা আমি বৃষ্টির জন্য এনেছি, শাড়িটা নেওয়ার আগে তোর ভাবা উচিত ছিল অন্যের ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া অন্যায় তাহলে।পরের বার যাতে আর এমন ভুল না হয় মনে রাখবি।
কথা গুলো বলে মেঘ চলে গেল আর তানিশা ওখানে বসে কাদতে লাগলো।.
.
.
.
.
.
.
চলবে…………….