মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২৩

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২৩
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

তানিশার মুখে বৃষ্টির নাম শুনে মেঘের মা কিছুটা অবাক হলো

——-তানিশা তুমি কি আগে থেকে বৃষ্টিকে চিনো,নাহলে তুমি কীভাবে জানলে ওর নাম বৃষ্টি

তানিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে মেঘ বলে উঠে,

——–আমি বলেছি মা। আসলে অফিসে আমি তানিশাকে বৃষ্টির ব্যাপারে সব বলেছিলাম আর তাই বৃষ্টিকে দেখেই তানিশা বুঝতে পেরেছে যে ওই বৃষ্টি, কি তানিশা ঠিক বলিনি

মেঘের কথায় তানিশা কিছু টা ইতস্তত হয়ে জবাব দিল।

——–কি মা দেখছো ও কতোটা ক্লান্ত তুমি কোথায় ওকে রেস্ট নিতে বলবে তা না করে এখানে দাড় করিয়ে রেখেছো।তানিশা আই তোকে আমি তোর রুম দেখিয়ে দিচ্ছি
,
,
,
,
,
,
তারপর দ্রুত গতিতে মেঘ তানিশাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে গেল। বলতে গেলে একপ্রকার আড়াল করে ফেললো।এতোক্ষণ বৃষ্টি ওদের দুজনের কথা দেখছিল। ওরা যাওয়ার পর নিজেও চলে গেল রুমে।মেঘ তানিশাকে রুমে নিতেই তানিশা মেঘের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো।মেঘ সেটা বুঝতে পেরে

——-তানিশা অফিসে আর বাসায় তুই যা দেখেছিস বা যা বুঝেছিস তা নিয়ে এই বাড়িতে কোনো কথা বলবি না পরে আমি তোকে বলবো।তুই ফ্রেশ হয়ে নে।তারপর নিচে খেতে আই





বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর তানিশা এখনো ওভাবে দাঁড়িয়ে রইল।আসলে ও বুঝতে পারছে না বৃষ্টি মেঘের অফিসে কাজ করে আবার মেঘর ওয়াইফ।কেমন জানি এলোমেলো হঠাৎ করে তার চোখে মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠল,

——–তুমি কি বলবে মেঘ আমি নিজেই এর রহস্য বের করবো।আমার দেশে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তোমার কাছে সাধু সেজে তোমায় নিজের করা। কিন্তু এখানে তো দেখছি অন্য কিছু। তার মানে তোমাদের মাঝে নিশ্চয় কোনো ঘাবলা আছে। শেষে কিনা বৃষ্টি তোমাকে হাত করলো।আমি ভাবতেই পারিনি আমার শএু আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিবে,তা কি করে হয়। তোমার জন্য আমাকে এই দেশ, আমার ভালোবাসা ছেড়ে দূরে যেতে হয়েছে, তেমাকে তো আমি ছাড়ব না মিস নো নো মিসেস মেঘ।
.
.
.
.
.
.
.
বলে হো হো করে হেসে উঠলো। এদিকে রোদ রোদেলার বৃষ্টির এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল।কিন্তু রোদের পরিবারের সাথে রোদেলার এখনো তেমন ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠে নি।যদি ও রোদের বাবা রোদেলাকে মেনে নিয়েছে কিন্তু তার শ্বাশুড়ি তাকে তো দুচোখে সহ্য করতে পারেনা।উঠতে বসতে কথা শুনায় তবুও রোদেলা চুপ থাকে।বড্ড বেশি মনে পরছে তার মায়ের কথা কিন্তু কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছে না। একদিন মধ্যরাতে হঠাৎ করে রোদেলা চিৎকার দিয়ে উঠে রোদ দৌড়ে কাছে আসতেই রোদেলা রোদকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

——-কি হয়েছে তোমার কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছো এভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলে কেন।

——–রোদ আমি মাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি মা খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে, আমার না মায়ের কথা খুব মনে পরছে প্লিজ আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও প্লিজ

বলে কাদতে থাকে আর রোদ তাকে সান্ত্বনা দেয় কিন্তু রোদেলার কোনো পরিবর্তন না দেখে রোদ রোদেলাকে বলে,

——–ঠিক আছে আর কান্না করো না তুমি শুয়ে পরো আমি তোমায় কাল বাড়ি নিয়ে যাবো।

রোদের কথায় রোদেলা কিছু টা শান্তি পেল তারপর ঘুমিয়ে পরলো।পরের দিন সকালে রোদ রোদেলাকে বাসায় নামিয়ে দিলে

——–কি হলো তুমি কোথায় যাচ্ছো ভেতরে যাবে না।

——-না আমার কাজ আছে আমাকে ফোন করে জানাবে কখন যাবে আমি তোমায় নিতে আসবো,
,
,
,
,
,
বলে রোদেলাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। রোদেলা সেদিকে তাকিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল। বাসায় ঢুকেই দেখতে পেল তার মা টেবিলে কাজ করছে রোদেলা মা বলে ডাক দিতেই তিনি দৌড়ে চলে আসলেন।তারপর চোখে মুখে চুমু দিয়ে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলেন।বাইরের আওয়াজ পেয়ে তানিশা রুম থেকে বেরিয়ে দেখে রোদেলা আর তার মাকে

——-আরে রোদেলা কেমন আছো কখন এলে।

তানিশার কথা শুনে রোদেলা তানিশার কাছে গিয়ে

——–তানিশা আপি তুমি। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি তা তুমি কেমন আছো কোথায় ছিলে এতো বছর, সেই যে কলেজে থাকতে আমাদের বাসায় আসতে তার পর তো আর দেখাই মিলেনি।কোথায় চলে গিয়েছিলে।

——–আর বলো না। বাইরে চলে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম আর আসবো না কিন্তু নিয়তি ঠিকি নিয়ে এলো।তো তোমার নাকি বিয়ে হয়েছে তোমার বর কই।

——-আসলে ও অফিসেের কাজ নিয়ে এতো বিজি নাওয়া খাওয়ার সময় পায়না তবুও আমাকে দিয়ে গেছে। আবার নিয়ে যাবে তখন পরিচয় করে দিবো।
,
,
,
,
,
এভাবে আরো কিছুক্ষন কথা বলার পর রোদেলা ফ্রেশ হয়ে নেয়।সন্ধ্যার পর মেঘ বৃষ্টি বাসায় ফিরলে হঠাৎ দরজার কাছে আসতেই হাসির শব্দে মেঘ থেমে যায়। এই হাসি তার কাছে খুব চেনা কারন বিগত ২০ বছর ধরে এ মানুষটার সাথে তার সময় কেটেছে। তার মানে……
.
.
.
.
.
মেঘ বাসায় ঢুকতেই দেখলো রোদেলা সোফায় বসে কথা বলছে মা আর তানিশার সাথে। মেঘকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেল।মেঘের মা কিছু বলতে যাবে তার আগে মেঘ থামিয়ে রোদেলার সামনে গেল।রোদেলা নিজের ভাইকে দেখে কিছু টা ভয় পেল।মেঘের মা বলে উঠল,

——–মেঘ বাবা যা হয়েছে ভুলে যা দেখ আমি তো মা নিজের সন্তানকে আর কতো দূরে দূরে রাখবো ভুল যখন করেই ফেলেছে আমাদের তো উচিত ওকে ক্ষমা করে দেওয়া, বাবা আর রাগ করিস না ওকে ক্ষমা করে দে।

বলে ওনি আঁচলে মুখ গুজে কেদে দিলেন। মেঘ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না করে আবারও রোদেলার দিকে তাকালো। রোদেলা কিছু টা ভয় পেয়ে কান্না জরিত কন্ঠে বলল

——-ভাইয়া আমাকে মাফ করে দাও আসলে মায়ের জন্য খুব খারাপ লাগছিল তাই মাকে দেখতে চলে এসেছিলাম।আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি

বলে বেরোতে গেলে পেছন থেকে মেঘ হাত ধরে নেয় রোদেলা তা দেখে ভাইয়ের বুকে ঝাপটে পরে কেদে দিলো

——–ভাইয়া আমি না জেনে তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি প্লিজ আমায় মাফ করে দাও। আমি রোদকে খুব ভালোবাসি তুমি যখন বিয়ের কথা বললে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারিনি তাই ওমন কাজ করছি প্লিজ ভাইয়া মাফ করে দাও।

——–আমি জানি তুই ভালোবেসেছিস রোদকে কিন্তু আমার ভয় তো সেখানে না আমার ভয় হচ্ছে যদি ও আমার রাগ, জেদ,শোধ তোর ওপর তুলে।আমার যে বড্ড ভয় হচ্ছে। ও বলেছিল ও আমার প্রিয় জিনিসে হাত দিবে কিন্তু এভাবে যে তোকে হাত করবে সেটা ভাবতে পারি নি।(মনে মনে) নারে আমি তোকে আগেই মাফ করে দিছি তুই যেটাতে খুশি আমি সেটাই মেনে নিবো।
.
.
.
.
.
.
.
রোদেলার পরিবার রোদেলার বিয়ে মেনে নেওয়ায় সবাই অনেক আনন্দিত হয় কিন্তু একজনের মনে এখনো ভয় কাজ করছে আদো সব ঠিক হবে তো, রোদ কেন এমন কাজ করল এটা তো জানতেই হবে।এভাবে রোদেলার দুদিন কেটো গেল পরিবারের সাথে। দুদিনের মাথায় রোদেলা চলে যাবে বিকেলে।রোদ আসবে নিতে।তাই মেঘ বৃষ্টি কেউ অফিসে যায়নি।তারা প্ল্যান করেছে আজ সারাদিন তারা রোদেলার সাথে কাটাবে।সারা সকাল অনেক মজা সাথে অনেক রান্না বান্না করলো।,
,
,
,
,
,
,
দুপুরে রোদ আসতেই রোদেলা তানিশার সাথে রোদকে পরিচয় করে দেয়। রোদ তানিশাকে দেখার সাথেসাথে চিনতে পারলেও তানিশা রোদকে ভালো করে চিনতে পারেনি। কেননা কলেজে রোদ তানিশাকে মেঘের সাথে অনেকবার দেখেছে ইভেন তানিশার সাথে বৃষ্টির যে ঝামেলা হয়েছিল তাও জানে কিন্তু তানিশা রোদের নাম শুনলেও ওর সাথে তেমন একটা দেখা বা কথা কখন হয়নি।যেহেতু একি কলেজে পরতো সেহেতু কিছু টা মাথায় আসছে কিন্তু পুরোপুরি নয়।রোদেলা পরিচয় শেষ করে রোদকে রুমে নিয়ে গেল ফ্রেশ হতে।এদিকে তানিশা রুমে গিয়ে স্থির থাকতে পারছে না তার সামনে বারবার রোদ নামটা আর ওর চেহারাটা ভাসছে।কিন্তু কোনোভাবে মনে মনে করতে পারছে না। হঠাৎ করে তানিশার মুখে হাসি ফুটে উঠল,

——–যদি আমার সন্দেহ ঠিক হয় তবে আর আমি যা চিন্তা করছি তা যদি বরাবর হয় তবে আমার কাজটা আরো সহজ হয়ে যাবে।
,
,
,
,
,
,
বলেই মুখে আরও ভয়ানক হাসি ফুটে উঠল। এমন সময় ডাক পরল খাবার টেবিলে যাওয়ার।টেবিলে পৌঁছাতে দেখলো রোদেলা আর রোদ একসাথে বসেছে মেঘ তাদের বিপরীত চেয়ারে একদম রোদের মুখ বরাবর আর বৃষ্টি সবাইকে সার্ভ করছে।খেতে খেতে অনেক কথা বললো।কিছু কথা এমন ছিল যে রোদ বৃষ্টিকে টার্গেট করে বলছিল যার অর্থ বৃষ্টি, মেঘ আর আরেকজন ভালো করেই বুঝতে পারল।।







বৃষ্টি রোদকে সার্ভ করতে গেলে রোদ হঠাৎ করে বৃষ্টির হাত ধরে ফেলে,বৃষ্টি কিছু টা হতচকিত হয়ে যায়। রোদ মুঠোবদ্ধ করে বৃষ্টির সাথে কিছু একটা ঢুকিয়ে দেয়, যা কেউ না দেখলেও একজনের চোখে ঠিকি পরে।বৃষ্টি তাড়াতাড়ি করে সেটা লুকিয়ে ফেলে আর ওপাশে তাকা মানুষটি বাকা হাসি দিয়ে উঠে।
,
,
,
,
,
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here