মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =২৮
❤❤
রোদ-রোদেলা
#তানিয়া_আনিতা
মেঘ রুমে ঢুকতেই দেখে পুরো রুম অন্ধকার। মেঘ গিয়ে লাইট অন করে আর অন করতেই দেখে রুমে কোথাও বৃষ্টি নেই, রুমের সবকিছু এলোমেলো হঠাৎ খাটের কোণায় কেউ একজনকে বসে থাকতে দেখে। মেঘ ধীর পায়ে সামনে যেতেই দেখে বৃষ্টি মেঝেতে বসে আছে হাঁটুতে মুখ গুজে আর বৃষ্টির ওদিক থেকে রক্ত গরিয়ে অনেকটা মেঘের পায়ের কাছাকাছি।
।
।
।
।
।
।
।
রক্ত দেখেই মেঘ অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকতে থাকে আর বৃষ্টি মুখ তুলে তাকাতেই মেঘের বুক ছ্যাত করে উঠে কারন বৃষ্টির চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে সাথে অনেকটা ফুলে গেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারাদিন কান্না করছে। হঠাৎ হাতের দিকে চোখ যেতেই মেঘ আতকে উঠলো কারন বৃষ্টির হাত থেকে গরগর করে রক্ত বের হচ্ছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ধারালো কিছু দিয়ে পোঁচ দিছে। মেঘ সাথে সাথে বৃষ্টির হাত ধরতে যাবে ওমনি বৃষ্টি এক ধাক্কা দিয়ে মেঘকে সরিয়ে দেয় আর মেঘ ছিটকে মেঝেতে শুয়ে পরে তারপর বৃষ্টি দিকে করুন চোখে চেয়ে থাকে।
———একদম ছোঁবেন না আমায় আপনার স্পর্শ আমার গায়ে কাঁটার মতো বিঁধছে। এখনো কি আপনি শান্ত হননি।কাল সারারাত আমার আর আমার দেহের ওপর তো অনেক
অত্যাচার করেছেন তাতেও কি আপনার স্বাধ মেটে নি এখন কেন এসেছেন আমার কাছে।
———প্লিজ বৃষ্টি একটিবার আমার কথা শুনো কাল যা হয়েছে তা সত্যি আমার অনিচ্ছায় হয়েছে। আসলে কালকে এতোটাই ড্রাংক ছিলাম যে আমি বুঝতে পারিনি আমি কি থেকে কি করে ফেলেছি।সত্যি কাল যা হয়েছে তা শুধু মাএ একটা এক্সিডেন্ট ছিল যা সম্পূর্ণ অনিচ্ছায় হয়েছে। তুমি বলো এই সাতমাসে আমি কখনো এসব বিষয়ে জোর করছি বা এসব নিয়ে কথা বলেছি তাহলে।
——–জোর বা কথা বলার মতো সুযোগ পেলেই তো করবেন।এতোদিন তো আমি আপনাকে সেই সুযোগটাই দি নাই আর তাই আপনি চতুরতার সাথে কালকে সেই সুযোগটা নিলেন আর আমার সাথে……
কথা টা বলেই শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে কান্না করে দিল।তারপর আবারও বলতে – থাকে
——–আর বলছিলেন এক্সিডেন্ট, আপনার কাছে হয়তো এটা এক্সিডেন্ট ছিল কিন্তু আমার জন্য এটা আমার সতিত্ব হরন যেটা আমি চাইলেও আর ফিরে পাবো না।কেন করলেন এটা কেন।
———দেখো আমাদের মাঝে যা হয়েছে তা তো আর অবৈধ নয়, আমরা স্বামী স্ত্রী, এটা তো হওয়ার কথা আর স্বামী হিসেবে কি এটা আমার অধিকার নয়।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
——–স্বামী কিসের স্বামী, মানিনা আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে সেটা আমি বিয়ের রাতেই বলেছি তাহলে কোন মুখে স্বামী বলে দাবি করেন, শুধু মাএ কালেমা পড়েছিলাম বলে আপনার সাথে একছাদের নিচে থাকতে হচ্ছে নাহলে আমি কখনো আপনার মুখ ও দেখতাম না।শুধু মাএ আপনার জন্য আমাদের ৩ টা জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। যদি সেদিন আপনি এমন জঘন্য কাজ না করতেন তাহলে না আমাকে আর রোদের পরিবারকে অপমান হতে হতো আর না আজ রোদেলার জীবনে কোনো সমস্যা হতো।আপনি নিজের জেদকে বাচাতে গিয়ে আমাদের ঠকিয়েছেন শুধু আমাদের নয় নিজের মাকেও ঠকিয়েছেন, মিথ্যা বলেছেন ওনাকে।
——–হুমম বলেছি মিথ্যে, ঠকিয়েছি তোমাদের কিন্তু শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য, ভালোবাসি তোমায়, এটা কি আমার অন্যায়। ঠিক আছে কালকের ঘটনার জন্য তুমি আমাকে যা শাস্তি দাওয়া না কেন আমি মাথা পেতে নিবো, কোনো প্রতিবাদ করবোনা।বলো তুমি কি শাস্তি দিবে।
——–আমি ডিবোর্স চাই, আপনার কাছ থেকে মুক্তি চাই, মুক্ত নিশ্বাসে বাচতে চাই, আমি পারছি না আপনার সাথে থাকতে, পারছি না আর আপনার সঙ্গ নিতে, আপনার ছোয়া, আপনার শ্বাস প্রাশ্বাসের সাথে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।আমি মুক্তি চাই, দিননা আমায় মুক্তি, আপনি কিন্তু বলেছিলেন আমি যা শাস্তি দিনা কেন আপনি কোনো প্রতিবাদ করবেন না।শাস্তি হিসেবে আমি আমার মুক্তি চাইছি, ডিবোর্স চাইছি প্লিজ,প্লিজ…..
.
.
.
.
.
.
.
কথা গুলো বলছে আর কাদছে।এদিকে বৃষ্টির কথা শুনে মেঘের হৃদপিণ্ড যেন বন্ধ হয়ে গেল। মেঘ হয়তো ভেবেছিলো বৃষ্টি তাকে শাস্তি দিবে কিন্তু এমন কিছু চাইবে সেটা মেঘ কখনো ভাবতে পারেনি।বৃষ্টির কথা শুনে মেঘ কিছুটা নিরব হয়ে রইলো তারপর বলল
——–ঠিক আছে আমি তোমায় ডিবোর্স দিবো খুব শীঘ্রই দিবো কিন্তু মনে রেখো আজ যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমি আমায় শাস্তি দিলে একদিন সেটার জন্যই তুমি আফসোস করবে,শুধু তাই নয় আজ আমার ছোয়া তোমার কাছে কাটা মনে হচ্ছে একদিন তুমি নিজেই এসে আমার কাছে এটার জন্য আবদার করবে সেদিন হয়তো তোমাকে ফিরে যেতে হবে।
।
।
।
।
।
।
।
কথা গুলো বলতে বলতে মেঘের গলাটা শুকিয়ে আসছিলো মনে হচ্ছে আর কোনো শব্দ বের হচ্ছে না, চোখ থেকে টপটপ করে জল পরছে,তবুও কথা গুলো বলতে থাকে,তারপর রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতেই মেঘ পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়।,
,
,
,
,
,
,,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
কারণ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে মেঘের মা। ওনি এখন এসময় এখানে আসবেন সেটা মেঘ কখনো ভাবতে পারেনি।মেঘের স্তব্ধতা দেখে বৃষ্টি এগিয়ে এসে দরজার দিকে তাকায় আর সেও অবাক হয়ে যায়। আসলে ওনি বলেছিলেন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবেন কিন্তু সেটার কোনো নিশ্চয়তা দেননি। কিছুদিন ধরে ওনার মন কেন জানি খুব অস্থির হয়ে আছে,কেন জানি মনে হচ্ছে কোনো খারাপ কিছু হতে চলেছে আর মেঘের মামা সুস্থ হয়ে গেছেন তাই তিনি বাসার কাউকে কিছু না বলে বাসায় চলে আসেন ওদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কিন্তু নিজেই যে এভাবে সারপ্রাইজ হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। ওনি বাসায় ঢুকেই মেঘের রুমে গেলে দুজনের কথা শুনে আর একপর্যায়ে সকল সত্যি টা ওনার সামনে বেরিয়ে আসে। এসব কথা শুনে ওনি ওখানেই কাদতে থাকে আর বাকিটা তো দেখলেন।মেঘ মায়ের কাছে এগিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই থাপ্পড় পরে মেঘের গালে।মেঘ একহাত দিয়ে মুখ ঢেকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
——–ছিঃ ছিঃ তুই কি সত্যি আমার ছেলে যাকে আমি দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করেছিলাম, তুই কি সেই ছেলে যাকে নিয়ে আমি গর্ব করতাম।এমনভাবে তুই আমাকে ঠকালি, এমন করে মিথ্যা বললি।তোর বুক একটু কাঁপলো না। আমি তোকে বিশ্বাস করতাম ভালোবাসতাম সবকিছুর এমন প্রতিদান দিলি।কীভাবে পারলি মেঘ,কীভাবে আমাকে ঠকাতে তোর একটু বাধলো না।এত্তো গুলো মানুষকে তুই কেন ঠকালি কেন।
মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘের মা মেঘকে থামিয়ে দিয়ে
——-খবরদার আমায় মা বলে ডাকবি না তোর মতো প্রতারক,মিথ্যুক কখনো আমার ছেলে হতে পারে না, আমি যাকে ছেলে মনে করতাম সে কখনো আমার সাথে এমন করতে পারতো না।আজ থেকে তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
বলে পাশ কাটিয়ে বৃষ্টির কাছে যায় তারপর ভালো করে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে দেয়।
——–আমাকে ক্ষমা করে দিস মা আমি সত্যিটা জানতাম না, তাই এসব বুঝতে পারিনি।আমার ছেলে এতো নোংরা কাজ করবে আমি কল্পনাও করতে পারিনি।যদি ও এমন কিছু করছে জানতাম তাহলে আমি তোর সাথে এই অন্যায় করতে দিতাম না।জন্মের পর সন্তানরা বাবা-মার কাছে নিরাপদ আর বিয়ের পর স্বামী কিন্তু তুই তো তার কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে করিস না। আমি তোর মাকে কথা দিয়েছিলাম যে তোকে নিজের মেয়ের মতো করে দেখবো কিন্তু আমি ব্যর্থ, তাই তোর সামনে আসার কোনো মুখ নেই, পারলে আমায় ক্ষমা করিস।
বলে বেরিয়ে যান। মেঘও পেছন পেছন গিয়ে পথ আটকায়
——–মা কোথায় যাচ্ছো,আমাকে একা রেখে যেওনা, মা আমি ভুল করেছি আমায় ক্ষমা করো কিন্তু আমায় ফেলে যেওনা প্লিজ মা প্লিজ।
———-আমি এবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোর এ অপরাধের কোনো ক্ষমা হয়না।তুই আমাকে ঠকিয়েছিস, ছোট করেছিস বৌমার কাছে,ওর সামনে মুখ নিয়ে দাঁড়ানোর সাহস আমার নেই। তাই আমি চলে যাচ্ছি।আর তুই যদি আমায় বাধা দিস তবে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।
।
।
।
।
।
।
শেষের কথা শুনে মেঘ দুর্বল হয়ে গেল আর পারলো না সে নিজের মাকে আটকাতে।চোখের সামনে বেরিয়ে গেল ওনি আর মেঘ ওখানে দাঁড়িয়ে কান্না করতে লাগলো। সেদিনের পর থেকে ওদের রুম আলাদা হয়ে গেল। কেউ কারো সাথে কথা বলেনা।দেখাও হয়না খুব একটা। প্রায় এক সপ্তাহ পর বৃষ্টি অফিসে গেল। আর গিয়ে তৃনার সাথে দেখা।
——–কীরে বৃষ্টি সেদিন কোথায় চলে গিয়েছিলি আমি তোকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু পায়নি আর এই এক সপ্তাহে তো অফিসে আসলি না। কি হয়েছে বলতো।তুই এভাবে হুটহাট কই যাস।আর জিজ্ঞেস করলেও বলিস না।
——–আরে তেমন কিছু না আসলে ওদিন একটু অসুস্থ হয়ে পরছিলাম তাই তোদের না জানিয়ে চলে যায়, আমি চাই নি আমার জন্য তুই টেনশন করিস আর এতো বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন যার জন্য ভিজে যায় আর আরো অসুস্থ হয়ে পরি তাই আসিনি।
বৃষ্টি কথা বলছে হঠাৎ তৃনা বৃষ্টির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে
——–কীরে বৃষ্টি তোর ঠোঁটে ওদিকে এতো কালচে হয়ে আছে কেন মনে হচ্ছে কিছুতে ব্যাথা পেয়েছিস।
তৃনার কথায় বৃষ্টি থতমত খেয়ে গেল আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই
——–আরে বলিস না সেদিন দরজায় একটু বারি খেয়েছিলাম তারপর কয়েকবার কামড় পরেছে দাঁতের তাই আরকি।
———সত্যি তো????আমার তো মনে হচ্ছে কেউ তোর ঠোঁটের স্বাধ নিয়ে এ হাল করেছে
বলে হো হো করে হেসে উঠলো আর বৃষ্টি কিছু টা বিরক্ত হয়ে
——–তুই কি থামবি নাহলে আমি যাচ্ছি।
——–আরে আরে কই যাস ওকে যা আর বলবো না।
———আচ্ছা আমার কথা বাদ দে তোর কথা বল।শ্রাবনকে কখন বলছিস নিজের মনের কথা। আর কতো সময় নিবি।
——-হুমম রে চিন্তা করছি খুব তাড়াতাড়ি বলে ফেলবো কিন্তু ভয় লাগছে আমার পরিবার নিয়ে আবার ওকেও নিয়ে
——-দূর বোকা ভয়কে আর পরিবারকে একপাশে রেখে নিজের মনের কথা বলে দে দেরি করিস না।
তৃনাও আর কিছু না বলে দুজনে চলে গেলো যার যার কাজে।কেটে গেলো আরো ৭ মাস।,
,
,
,
,
,
,
চলবে………