মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৬
❤❤
রোদ_রোদেলা
#তানিয়া_আনিতা
রোদ রোদেলার যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে কারণ তার মাথায় এখনো কিছুই ঢুকছে না যে রোদেলা কি বলে গেল।একটা মেয়ে নিরবে এতোকিছু সহ্য করে গেছে কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করে নি।তার মানে বৃষ্টির কথায় ঠিক। ও না জেনে না বুঝে এতো কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। না আর সে এমন ভুল করতে চাই না বরং এতোদিন যা করেছে তার প্রতিদান সে দিবেই। এসব ভেবে রোদ নিচে চলে যায় গিয়ে দরজা খুলতে দেখে তার মা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আচমকা তার মাকে দেখে রোদ জিজ্ঞেস করে,
———-মা তুমি? এখনো ঘুমাওনি, এতো রাতে কি করছো, কিছু কি বলবে?
———রোদ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে আমার সাথে আয়।
বলে রোদকে নিয়ে নিজের রুমে গেল তারপর বসে বলতে থাকে,
———-দেখ রোদ আমি জানি বৌমার ভাই আমাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছে আমাদের অনেক অপমান ও করেছে। তার জন্য আমরাও কিন্তু বৌমাকে কম অপমান করিনি,কম কষ্ট দিই নি মেয়েটাকে। কিন্তু মেয়েটা এতো কষ্ট পাওয়ার পরও একটা শব্দ করেনি,বরং আমি যা বলেছি তা চুপচাপ করে গেছে এমনকি আমাদের এতো অবহেলার পরও আমাদের সেবা করে গিয়েছে।
ওদের যথেষ্ট টাকা আছে চাইলে ও আমাদের এতো অত্যাচারকে দূরে ঠেলে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারতো কিন্তু তা করেনি।মুখ বুঝে সব সইয়ে নিয়েছে কারণ কেন জানিস বৌমা তোকে ভালোবাসে। মেয়েটার চোখে আমি তোর জন্য অজস্র ভালোবাসা দেখেছি।শুধু তোকে ভালোবেসে বলে মেয়েটা কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই এ বাড়িতে রয়ে গেছে।
আমি জানি তুই বৃষ্টিকে ভালোবাসিস কিন্তু ভাগ্য বলেও একটা কথা আছে আল্লাহ হয়তো তোর জন্য বৃষ্টিকে নয় রোদেলাকে ঠিক করে রেখেছেন তাই তুই বৃষ্টিকে পাসনি।তাই আমি বলি কি তুই আগের সব কথা, কষ্ট ভুলে রোদেলাকে নিয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু কর হয়তো ওর সাথেই তুই তোর জীবনে সবচেয়ে বেশি সুখী থাকবি।আমি মা, রোদেলাকে প্রথমে অপছন্দ করলেও মেয়েটার ভক্তি শ্রদ্ধা আর ধৈর্য্য দেখে আমি আর মেয়েটাকে দূরে রাখতে পারিনা।যেকিনা আমার দেওয়া এতো কষ্ট মেনে নিতে পারে তাকে কীভাবে দূরে রাখি।আমি চাই তুই ওকে ওর সম্মান, মর্যাদা দে।ওর প্রাপ্যটুকু ওকে দে নাহলে আমি কখনো তোর এ কাজের জন্য ক্ষমা করবো না।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
বলে ওনি রুম থেকে চলে যান আর রোদ এখনো একি ভাবে বসে আছে কারন তার জানা আছে এখন থাকে কি করতে হবে।সে বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে রুমের দিকে যায়। রুমে ঢুকে দেখে রোদেলা লাগেজ গুছাচ্ছে। রোদ আস্তে করে রোদেলার সামনে গিয়ে দাড়ায়। রোদেলা রোদকে দেখে চোখ তুলে তাকায়,সাথে সাথে তার অবাধ্য চোখের জল পরতে থাকে,
———কি হলো তুমি দাঁড়িয়ে আছো যে ঘুমিয়ে পরো,আমি কাপড় গুলো গুছিয়ে নি।ও তোমার তো আবার আলোতে ঘুম আসে না। একটু অপেক্ষা করো আর কয়েকটা কাপড় গুছিয়ে তারপর আলো নিভিয়ে দিবো। আচ্ছা একটা অনুরোধ করবো তুমি বলেছো তুমি আমায় ডিভোর্স দিবে, তোমার কাছে কখনো কিছু আবদার করি নি শুধু এটাই বলবো তুমি আমায় ডিভোর্স দিও না, কারণ তুমি আমায় ভালো না বাসলেও আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলে তুমি, তাই আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কাউকে আমি কল্পনা ও করিনা।আমি কখনো তোমার কাছে স্ত্রীর দাবী করবো না কিন্তু সারাজীবন যাতে তোমার পরিচয় নিয়ে বেচে থাকতে পারি তার পরিচিতি হিসেবে হলেও তুমি আমায় ডিভোর্স দিও না প্লিজ।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
রোদেলা যতগুলো শব্দ বলছিল ততটা চোখের জল তার চোখ থেকে ঝরছিলো।আর রোদেলার কান্না দেখে রোদের বুকটা কেন জানি দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। এবার রোদ রোদেলার দুবাহু শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলতে থাকে,
———–তুমি তো তোমার কথা বললে আমাকে কিছু বলার সুযোগ দাও।হুমম এটা সত্যি যে আমি বৃষ্টিকে ভালোবাসি কারণ ও ছিল আমার প্রথম ভালোবাসা। তাই আমি চাইলেও কখনো ওকে ভুলতে পারবোনা।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তুমি আমার ভালো লাগা আর,অভ্যাসে পরিনত হয়েছো যা আমি চাইলেও দূরে রাখতে পারবোনা। তাই তোমাকে আমি বৃষ্টির জায়গা দিতে না পারলেও তোমার জন্য আমার মনের গহীনে অন্য রকম জায়গা সৃষ্টি করিছি হয়তো এটা একরকম অনুভূতি যাকে ভালো লাগা বললেও হয়তো এর আড়ালে রয়েছে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা। যদি বলি তোমায় আমি ভালোবাসি তাহলেও কি ছেড়ে যাবে।
.
..
.
.
.
.
.
.
রোদের প্রতিটা কথা রোদেলার কেন জানি অন্য রকম লাগছিলো আর রোদের শেষের কথা টা রোদ রোদেলার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে যা শুনে রোদেলা কেমন জানি পাথরে পরিনত হয় যে আদো রোদ যা বলেছে তা কি সত্যি কিনা কিন্তু যখন বুঝতে পারল তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না ঝাপটে রোদের বুকে পরে কান্না করতে লাগলো আর নিজের ভেতরের সকল কষ্টের কথা,আর সকল অভিযোগ বলতে লাগলো যদি ও অতিরিক্ত কান্নার শব্দে কোনো কথায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না শুধু এতোটুকু বোঝা যাচ্ছে,
———-তুমি খুব খারাপ, কেন আমায় এতো কষ্ট দিলে, কেন আমায় দূরে রাখলে,কেন আমায় ডিভোর্স দিবে বলেছিলে বলো বলো না
রোদ রোদেলার থুতনিটা তুলে,
———-আমি জানি তো খারাপ কিন্তুু কি করবো বলো আমার কষ্টটাও তো তোমার বোঝা উচিত, আমার ভেতরে যে এতো যন্ত্রণা সেটা তো তোমার উপলব্ধি করতে হবে আরেরটা বিষয় তো ভালো লাগছে আমি যদি তোমায় কষ্ট না দিতাম তবে কি করে বুঝতাম যে আমার বউ আমাকে এতে ভালোবাসে।
কথা টা বলেই চোখ টিপুনি মারে আর রোদেলা আবারও কান্না করে বলে,
———– থাকবো না আমি তোমার সাথে, চলে যাবো আর এমন জায়গায় যাবো যে তুমি কখনো খুজেও পাবেনা।যখন তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছিলে তখন আমার যে কি অবস্থা হয়েছে আমি বলে বুঝাতে পারবো না।তুমি যদি সত্যি আমায় ডিভোর্স দিতে তবে হয়তো আমি মরেই……..
।
।
।
।
।
।
।
।
আর বলার কোনো সুযোগ দিলো না রোদ তার আগেই রোদেলার ঠোঁট জোরা নিজের আবদ্ধে নিয়ে নিলো।রোদেলা প্রথমে ছাড়ার জন্য ছোটাছুটি করলেও পরে শান্ত হয়ে যায়। ১৫ মিনিট পর রোদ ঠোঁট ছেড়ে রোদেলাকে পাজকোলা করে নেয়।রোদের এহেন কান্ডে রোদেলা রেগে গিয়ে,
———-কি করছো কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ছাড়ো আমায় থাকবো না আমি চলে যাবো,তুমি তো বলেছো আমায় ডিভোর্স দিবে তাহলে ছাড়ো বলছি,
———উসসস চুপ আমাকে ছেড়ে যাবে তাই না, আজ তোমার এমন কিছু করবো কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ও ভাববে না।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
বলে রোদেলার শাড়ির আঁচলটা টেনে ফেলে দিল। রোদেলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবারও ঠোঁট জোরা চলে গেল রোদের দখলে।রোদেলাও আর বাধা দিলো না। নিজেও ডুব দিলো রোদের সাড়ায়। থাক না কিছু অভিমান জমে।হোক না ভালোবাসার জয়।কেননা একমাত্র ভালোবাসায় পারে সকল অভিমানের পরাজয় ঘটিয়ে সুন্দর একটা ভালোবাসার ঘর বাধতে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দেখতে দেখতে কেটে যায় ৯ মাস।বৃষ্টি দিনকে দিন মেঘের ওপর দুর্বল হয়ে পরছে কিন্তু মেঘ আগে যেভাবে বৃষ্টির প্রতি আবেগময়ী ছিল এখন সেটা কমে গেছে। বরং নিজেকে আগে থেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে সে কোনোভাবে চাই না আর বৃষ্টির মায়ায় জড়াতে কারণ খুব শীঘ্রই তাদের সম্পর্কের অবসান ঘটবে যার জন্য মেঘ বৃষ্টিকে এড়িয়ে চলে কিন্তু মেঘের এমন উদাসীনতা বৃষ্টি কেন জানি মানতে পারছে না।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
অন্য দিকে রোদ রোদেলার সম্পর্ক যেন মধুর চেয়ে আরও মধুময় হয়ে উঠেছে।রোদের ভালোবাসায় রোদেলা যেন আবারও নতুন ভাবে জন্ম নিয়েছে। এ যেন এক নতুন প্রেমময় সময়।রোদের মা তো রোদেলাকে চোখে হারায় সর্বক্ষণ সব জায়গায় তিনি রোদেলার প্রসংশায় যেনো মেতে থাকে।যে কোনো কাজে তার সঙ্গী ।মাঝে মাঝে দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়। রোদ দাবী করে যে রোদের চেয়ে রোদেলা সবচেয়ে বেশি আদর পায় রোদের মা বাবার কাছে এতে রোদ কিছু টা অভিমান করে দুষ্টমির ভঙ্গিতে যা দেখে রোদের মা আর রোদেলা দুজনি হেসে উঠে। খুব ভালো আর আনন্দের সাথে চলতে থাকে রোদ রোদেলার সংসার।
,
,
,
,
,
,
,
চলবে……….