মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৭

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব =৩৭
❤❤
রোদ_রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

বৃষ্টি মেঘের রুম গুছাচ্ছিল পুরো রুম পরিষ্কার করে যেই না আলমারিতে হাত দিবে এমন সময় কিছু জিনিস নিচে পরে যায়। বৃষ্টি সেগুলো তুলতে যাবে ঠিক তখনি জিনিস গুলো ভালো করে নোটিশ করে।দেখে সেখানে কিছু কাগজ, ডায়রি আর একটা বাক্স যেটা গিফট পেপার দিয়ে মোড়ানো।বৃষ্টি কাগজ গুলো খুলে দেখে সেগুলো সাধারণ কিছু কাগজ।তারপর ডায়রিটা খুলতেই বৃষ্টির চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বৃষ্টি একের পর এক পাতা উল্টাচ্ছে আর বারবার চোখের জল মুচ্ছে।কারণ এমন কিছুর জন্য বৃষ্টি মোটেও প্রস্তুত ছিল না।








ডায়রির কিছু পাতা উল্টাতেই দেখে সেখানে বৃষ্টির কিছু ছবি যেগুলো বিভিন্ন স্টাইলে তোলা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছবি গুলো সম্পূর্ণ বৃষ্টির অগোচরে তোলা হয়েছে যেখানে কিছু ছবিতে বৃষ্টি হাসছে খিলখিল করে, কোনোটাতে মুচকি,আবার কিছু কিছু ছবিতে বৃষ্টির রাগান্বিত ভাব ফুটে উঠেছে। বৃষ্টি আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে এসব স্টাইল সে কখন করেছে তার মনেই পরছে না কিন্তু প্রতিটা ছবি দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। বৃষ্টি ডায়েরিটা বন্ধ করে বাক্স টা খুললো, খুলতেই তার চোখ যেন আরও বড় হয়ে গেল। কারণ বাক্স টার ভেতরের রয়েছে ডায়মন্ডের ছোট নোজপিন।হঠাৎ করে তার ডায়েরির কথা মনে পরে যায় যেখানে এ নোজপিনটার কথা লেখা ছিল। বৃষ্টি বুঝতে পারে এটাই সে নোজপিন যেটা মেঘ বৃষ্টিকে ফুলসজ্জার রাতে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আফসোস পরিস্থিতি এমন ছিল যে বৃষ্টি মেঘকে ইগনোর করে।বিষয় টা ভাবতেই বৃষ্টির খুব খারাপ লাগছিলো।কিন্তু পরক্ষণেই বৃষ্টির মুখে হাসি ফুটে উঠল,

———-আপনি আমার জন্য এই নোজপিনটা এনেছিলেন কিন্তু আমি তখন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এখন আমি নিজেই এটা পরবো তবে এখন নয় সময় আসুক বলে আবারও হাসতে থাকে।
,
,
,
,
,
,
,,
,
,
,
,
রাত ১০ টা। মেঘ নিজের কাজ সেরে রুমে যাচ্ছিল এমম সময় বৃষ্টির রুম থেকে ফিসফিস কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো। মেঘ দরজার কিছুটা কাছে যেতেই বৃষ্টির কথা শুনতে পাই,

———- কি বলছিস তুই, তুই কি জানিস এ কাজটা করলে কতো বড় বিপদ হতে পারে দেখ তুই আরেকবার পুরো ব্যাপারটা ভেবে নে তারপর না হয় আমাকে জানাস।

———————-

———–ওকে তুই যখন চাইছিস তবে আমি বাধা দিবো না। তুই কাল ১২ টায় চলে আসবি কাজী অফিসের সামনে। আমিও চলে যাবো।তারপর যা হওয়ার হবে এখন রাখছি।






বলে ফোনটা কেটে দিল আর মুখে একপ্রকার চিন্তা নিয়ে শুয়ে পরল। মেঘ রাগে ঘটঘট করে নিজের রুমে গিয়ে খাটের কোণায় একটা লাথি দিলো।

———–তোমায় দেখছি কোনোভাবে সোজা করা যাবে না।সেদিন তোমাকে এতো শাস্তি দেওয়ার পরও তুমি রোদের সাথে কাজী অফিসে যাবে।ছিঃ তোমার ভেতর নূন্যতম লজ্জাটুকুও নেয়। তুমি বিবাহিত হওয়ার পর ও……..।কাল তোমাদের দুজনকে হাতেনাতে ধরবো তারপর দেখো দুজনের কি হালটায় না করি।বলে আবারও রাগে ফুঁসতে লাগলো।

কিছুক্ষন আগে,
,
,
,
,
,
,
,
বৃষ্টি ডিনার করে নিজের রুমে বই পরছিল এমন সময় তার রিংটোন টা বেজে উঠলে সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তৃনা কল করেছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ শুনে বৃষ্টি ভয় পেয়ে যায় তারপর তৃনাকে শান্ত করে,

———-আরে কি হয়েছে সেটা তো বল আর এভাবে কল করে কিছু না বলে কান্না করছিস কেন। কি হয়েছে বল আমায়।

তৃনার কান্না যেন থামছেই না এবার বৃষ্টি ধমকের স্বরে বললো,

———–দেখ তুই কিছু না বললে আমি লাইন কেটে দিচ্ছি তোর কান্না শোনার ইচ্ছে আমার নেয়।

———-কাটিস নারে দোস্ত।তোর সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আমার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে।

———-কিকককককক?হঠাৎ আর শ্রাবনকে কি বলেছিস?

———-হুমম ওকে বলেছি।জানিনা হঠাৎ করে বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে আর পরিবার ভালো হওয়ায় আমার ফেমিলিও রাজি হয়ে গেছে তার ওপর আমি শ্রাবনের কথা যখন বলেছি ওনারা আরো রেগে গেছেন। তাই আমার বিয়ের জন্য আরো তাড়াহুড়া করছেন।তোকে তো বলেছিলাম আমার পরিবার এসব বিষয়ে কতোটা কনর্জাভেটিভ।

———–আমার মনে হয় তোর পরিবারকে আরো ভালোভাবে বোঝাতে হবে তুই চাইলে আমি কথা বলতে পারি। আর শ্রাবন কি বলেছে

————নারে আমার বাবা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন ওনি কারো কথা শুনবেন না।তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা কালি বিয়ে করবো।আর আমাদের সাক্ষী থাকবি তুই। কারণ তুই জানিস আমি শ্রাবনকে কতো ভালোবাসি, আমি ওকে হারাতে চাই না। আর ও আমাকে না পেলে বাচবে না বলেছে। তাই আমরা কালকেই বিয়ে করবো।আর তোকে জানাতেই কল করলাম।কাল ১২ টায় আমরা কাজী অফিসে আসবো কারণ বিয়ের আগ পর্যন্ত আমাকে বাসা থেকে বের হতে দিবে না তাই পালিয়ে আসবো।শ্রাবন ও চলে আসবে আর তুই ও।
.
.
.
.
.
.
.
.
তৃনার কথা শুনে বৃষ্টি তখন শেষের কথা গুলো বলে আর মেঘ এবারও পুরো কথা না শুনে শেষের কথা গুলো শুনেই সন্দেহ করে যে বৃষ্টি কাল কাজী অফিসে যাবে রোদের সাথে দেখা করতে।তাই সেও প্ল্যান করে ফেলে।কিন্তু মেঘ নিজেও জানেনা কাল সে কীসের সম্মুখীন হচ্ছে।







বৃষ্টি নিজের ডেক্সে বসে কাজ করছে ঠিকি কিন্তু তার চিন্তা হচ্ছে আজ তৃনার বিষয়টা নিয়ে। কেমন জানি ভয় করছে আজ যা হবে তা ভালো হবে তো।তবুও সাহস নিয়ে যা হবার হবে তবুও দুজনকে আলাদা করা যাবে না।অন্য দিকে মেঘ নিজের কেবিনের গ্লাস থেকে বৃষ্টির ওপর নজর রাখছে।যে করেই হোক দুজনকে ধরতে হবে।তাছাড়া বৃষ্টিকে কেমন জানি আজকে বেশি উদ্বিগ্ন আর চিন্তিত লাগছিল যা মেঘের নজর এড়ায়নি।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
দুপুর ১২ টা বাজতেই বৃষ্টির ফোনে কল এলো।বৃষ্টি সাথে সাথে বেরিয়ে গেলো।বৃষ্টির পেছনে পেছনে মেঘও বেরিয়ে গেল। বৃষ্টি এসে কাজী অফিসের সামনে নেমে ভাড়া দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।আর মেঘও গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যেতেই চমকে যায়। কারণ ভেতরে রয়েছে বৃষ্টি, তৃনা আর শ্রাবন।মেঘের এমন উপস্থিতিতে সবাই ভয় পেয়ে যায়, বৃষ্টি তো সবার আগে কারণ বৃষ্টি এখানে আসবে সেটা মেঘ কীভাবে জানলো, মেঘ ভাবতে পারেনি এখানে তৃনা আর শ্রাবন থাকবে সেতো রোদকে আশা করছিলো তার মানে কি সে কাল ভুল শুনেছিলো।মেঘকে দেখে বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে,

———-স্যার আপনি এখানে কি করছেন আর জানলেন কি করে যে আমরা এখানে এসেছি

———-না মানে আমি এদিকে কাজে যাচ্ছিলাম তোমাদের দেখে চলে আসলাম।তো তোমরা কি করছো এখানে








বৃষ্টি মেঘকে সব কিছু খুলে বললো।মেঘ সব শুনে বুঝতে পারল সে কতো বড় ভুল করতে যাচ্ছিলো।কাজী সাহেব তাড়া দিচ্ছে যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে পরানো হয় কিন্তু বিপত্তি লাগলো এক জায়গায় বৃষ্টি তৃনার সাক্ষী হয়ে কাজ করলেও শ্রাবনের কোনো সাক্ষী ছিলো না। শেষে মেঘ নিজেই শ্রাবনের সাক্ষী হয়।অবশেষে তাদের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।চারজনি যখন বের হলো তখনি বাইরে তৃনার বাবা কাকা দাঁড়িয়ে থাকে।তৃনাসহ সবাই ওদের দেখে ভয় পেয়ে যায়। পরে ওনারা তৃনাকে নিজেদের মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে বরং অনেক কথা শুনিয়ে সেখান থেকে চলে যায় আর বৃষ্টি মেঘ ওকে সান্ত্বনা দেয়। দুজনকে গাড়ি ঠিক করে দিয়ে মেঘ বৃষ্টি দুজনে গাড়ি করে চলে যায়। গাড়িতে দুজনে নিরব।বৃষ্টি বলে উঠে,

———- আপনি কী করে জানলেন আজ তৃনার বিয়ে আর আমি ওখানে যাচ্ছি।

——— আজ তৃনার বিয়ে কিনা জানিনা তবে তুমি যে এখানে আসবে সেটা জানতাম।কাল যখন তুমি ফোনে কথা বলছিলে তখনি আমি কিছু কথা শুনতে পাই। আর যখন তুমি এই ঠিকানা টা তুলছিলে তখন আমিও নোট করেনি।কাজী অফিসের নাম শুনে আমি ভেবেছিলাম হয়তো……..

———-কি ভেবেছিলেন বলুন কি হলো চুপ করে আছেন কেন বলুন না।বুঝতে পেরেছি আর বলতে হবে না আপনি ভেবেছিলেন হয়তো আমি কাজী অফিসে রোদকে নিয়ে এসেছি বিয়ে করতে। আপনার বোঝা উচিত ছিল যে আমি বিবাহিত আর রোদ ও। আর বিবাহিত হয়ে কখনো অন্য কাউকে বিয়ে করা যায় না যতোক্ষণ না ডিভোর্সী হয় তাহলে। আপনার নিরবতায় বলে দিচ্ছে আপনি আমার সম্পর্কে এসব ভেবেছিলেন আর তাই হয়তো আমাকে সন্দেহ করে……
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই বৃষ্টির গলা ধরে এলো।বৃষ্টি বাইরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।হঠাৎ কান্নার শব্দ কানে এলো মেঘের। মেঘ বুঝতে পারল বৃষ্টি কান্না করছে। মেঘ আবারও না জেনে বৃষ্টিকে কষ্ট দিয়ে ফেললো।মেঘ আর বৃষ্টিকে ডাকলল না কারণ মেঘ জানে এখন সে বৃষ্টিকে ডাকলেও কোনো রেসপন্স পাবে না বরং আরো তীব্র সমস্যা হতে পারে। মেঘ বৃষ্টিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজে চলে গেল অন্য কাজে।

.
.
.
.
.
.
.
.
বৃষ্টি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় যায়। বাইরের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি ভাবতে থাকে কেন হচ্ছে তার সাথে এমন। যখন সে নিজেই মেঘ থেকে দূরে যেতে চেয়েছিলো তখন তো তাদের মাঝে এতো ভুল বোঝাবুঝি হয়নি।সব তো ঠিক ছিল। তাহলে এখন কেন মেঘ তাকে ভুল বুঝছে, শুধু কি তাই তার সম্পর্কে এমন কিছু ভাবছে যা বৃষ্টির কল্পনার বাহিরে।।







আচ্ছা মেঘের নজরে কি বৃষ্টি সত্যি এতোটাই খারাপ হয়ে গেছে যার জন্য মেঘ তাকে নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর বিষয়ে চিন্তা করছে। কিন্তু এতোদিন তার সাথে থাকার পরও কি বৃষ্টি মেঘের এতোটুকু বিশ্বাস এখনো অর্জন করতে পারেনি নাকি এতোদিন বৃষ্টির অবহেলায় আজ মেঘ তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বৃষ্টি যখন এসব সাত পাঁচ ভাবছে তখনি বৃষ্টির ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রীনে দেখে খুব পরিচিত একজন মানুষ। রিসিভ করতেই,

———-কেমন আছো

বৃষ্টি প্রশ্নটা করেছে ঠিকই কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না বরং কান্নার শব্দ ভেসে এলো যা শুনে বৃষ্টির মনে একটা অজানা ভয় দেখা দিলো।তারপর নিজেকে ঠিক করে,

———-হ্যালো কি হলো কথা বলছো না কেন কি হয়েছে তুমি কাদছো কেন।বলো না প্লিজ আমার খুব টেনশন হচ্ছে বলো প্লিজ।

————————————————————–

———কিইইইইইই?সত্যি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, তুমি কি জানো আজ তুমি আমায় কতো বড় সুসংবাদ দিলে আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।ধন্যবাদ মেঘ আসলে ওকে আমি জানাবো।ঠিক আছে আমি রাখছি।












ফোনটা কেটে বৃষ্টির মুখে আজ এক বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠল। কারণ আজ তার দুজন কাছের মানুষের সুখের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে যা বৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি সুখকর।বৃষ্টির মনে এক প্রশান্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে হয়তো চাইলেও সে এর অনুভূতি কাউকে প্রকাশ করতে পারবে না। এতোক্ষন তার মনে যে কষ্ট ছিলো একটু আগের সে খুশির সংবাদে তা উবে গেছে। যাক রোদ তার বন্ধুত্বের মর্যাদা রেখেছে।তাকে দেওয়া কথার গুরুত্ব সে রেখেছে।বৃষ্টির কেন জানি মনে হচ্ছে সেদিন বলা কথা গুলো আসলে কাজে এসেছে নাহলে হয়তে সে কখনো এমন একটা বিষয় জানতে পারতো না।এসব কথা চিন্তা করতে সে চলে যায় সেদিনটাতে যেদিন তার সাথে রোদের কথা হয়েছিলো রেস্টুরেন্টে ………

রোদের সব কথা শুনে বৃষ্টি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলতে থাকে,

———-দেখ রোদ তুই যা বলেছিস আমি শুনেছি এখন আমি যা বলবো তুই শুনবি কোনো কথা বলবিনা।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
আমি জানি আমাদের সম্পর্কটা যেভাবে শুরু হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি।মেঘের জন্য হয়তো আজ আমাদের চারজনকে এ অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু চাইলেও আমরা কেউই এখন এসবের কিছুই পরিবর্তন করতে পারবো না। কেননা সময় এখন অনেকটা পেরিয়ে গেছে। তুইও কিন্তু রোদেলাকে বিয়ে করে ফেলেছিস।হ্যা তুই হয়তো এটা বলবি তুই রোদেলাকে ভালোবাসিস না কিন্তু কি বলতো এমন অনেক সময় থাকে যখন আমরা না চাইলেও আমাদের কিছু মানুষের সাথে সারাজীবন থাকতে হয়, প্রথমে হয়তো মানুষটাকে বিরক্ত লাগে কিন্তু এক ছাদের নিচে থাকতে থাকতে মানুষটার প্রতি একধরনের মায়া কাজ করে যার জন্য আমরা চাইলেও তাদের ছেড়ে যেতে পারিনা।আর কি জানিস তো আমি যখন ও বাড়িতে যায় মেঘের সাথে আমার বিরোধিতা থাকলেও আমার শ্বাশুড়ি মা আর রোদেলা ছিলো আমার আপনজন। তারা সবসময় আমার খেয়াল রাখতো। শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর আমার কখনো মনে হয়নি আমি নতুন পরিবেশে ছিলাম।আমার শ্বাশুড়ি আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো আর রোদেলা ওর মতো মিষ্টি মেয়ে আমি কখনো দেখিনি।ওকে আমি আমার ননদ না, মনে হয়েছে ছোট একটা বোন পেয়েছি। আমি চাই না মেঘের অন্যায়ের শাস্তি রোদেলা পাক। আর আমি তা হতেও দিবো না।তুই কি জানিস বিয়ের পর যেদিন রোদেলা বাড়িতে গিয়েছিল সেদিন থেকে যতোদিন ছিল মেয়েটা শুধু তোর কথাই বলতো এমনকি তুই কি চাস,কি পছন্দ করিস,তোর সবকিছু ও আমার থেকে জেনে নিয়েছিলো।এমন একটা মূহুর্ত ছিল না যখন ও তোর জন্য চিন্তা করতো না।আমি ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম যে এই মেয়ে তোকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবেসে যা হয়তো আমি কখনো পারতাম না।তোকে শুধু এই অনুরোধ করবো,তোর কাছে রোদেলা শুধু তোর স্ত্রী নয় আমার বোনও, আর আমি বোন হয়ে আমার বোনের সংসার ভাঙতে পারবোনা।তাই ওকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা কখনো চিন্তা ও করবি না।কিছুক্ষণ থেমে,আচ্ছা তুই তো আমায় ভালোবাসিস আমি কখনো তোর কাছে কিছু আবদার করিনি,আজ তোর কাছে বন্ধুত্বের দাবী করছি, তুই রোদেলাকে নিয়ে সবকিছু আবারও নতুন করে শুরু কর ওকে ওর প্রাপ্যটুকু দে, ওর প্রতি কোনো অন্যায় করিস না, আমি মনে করি আমার চেয়ে তুই ওর সাথে সবচেয়ে বেশি সুখী হবি।আরেকটা কথা একজীবনে আমরা চাইলেও সব পাই না তাই যা পায় তা নিয়ে মানিয়ে চলতে হয়।আল্লাহ হয়তো আমাদের একে অপরের জন্য সৃষ্টি করেনি তাই আমরা এক হতে গিয়েও হতে পারলাম না। আমাদের জোরা যার সাথে আল্লাহ ঠিক করেছেন তাদের সাথেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। তাই আর কোনো পাগলামি না করে তুই রোদেলাকে আপন করেনে।

————–আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি সত্যি করে বলবি তুই কি কখনো আমাকে ভালোবেসেছিলি।

———–আসলে সত্যি বলতে আমি তোকে সারাজীবন আমার ভালো বন্ধু হিসেবে জানতাম তাই তুই যখন আমায় বিয়ে করতে চেয়েছিলি আমি অমত করিনি।কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে আমার মনে কখনো তোকে নিয়ে ভালোবাসার কোনো অনুভূতি কাজ করেনি।কেননা আমার মন হয়তো কখনো তোকে ভালোবাসে নি,শুধু বন্ধু মনে করছি।

বলে বৃষ্টি উঠে যেতে নিলে রোদ আবারও হাত ধরে নেয়।বৃষ্টি পেছনে ফিরে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে,

———-তার মানে তুই বলতে চাইছিস তুই কখনো আমায় ভালোবাসিস নি।ওকে আরেকটা প্রশ্ন করবো তুই কি কোনোভাবে মেঘকে ভালোবেসে ফেলেছিস।কারন এতোদিন আমি যে বৃষ্টিকে চিনতাম তার চোখে আমি মেঘের জন্য শুধু ঘৃণা দেখছিলাম আর আজ তার চোখ অন্য কথা বলছে সত্যি করে বলতো তুই মেঘকে ভালোবেসে ফেলেছিস তাই না???

————আসলে এর উওর আমার ও জানা নেই। ওই যে বললাম একসাথে একছাদের নিচে থাকতে থাকতে কিছু মানুষের প্রতি মায়া জন্ম নেয়।হয়তো এমনটাই হয়েছে আমার সাথে। কিন্তু সত্যি টা কি জানিস তো আমি না চাইতেও ওর মায়ায় জড়িয়ে গেছি এখন কেন জানি আমি ওর অস্তিত্ব অনুভব করি,ওর জন্য আমার মনে এমন কিছু ফিল করি যা আমি আগে কখনো কারো জন্য ফিল করি নি।জানিনা এই অনুভূতির নাম কি হয়তো এরই নাম ভালোবাসা। যদি সত্যি এমন কিছু হয় তবে ভেবে নিস আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।আর আমার মনের এ অনুভূতির কথা ও নিজেও জানেনা।আজ তোকে জানালাম।তাই বলছি অতীতকে পেছনে রেখে বর্তমানে যে আছে তাকে নিয়ে নতুন করে সব শুরু কর দেখবি জীবনের মানে কি তার সাথে থেকে বুঝে যাবি।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কথা গুলো বলে বৃষ্টি আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।একটিবারের জন্য পেছনেও ফিরলো না হয়তো সে চাই না রোদের অশ্রু মাখা মুখটা দেখতে।কেননা ওর মুখটা দেখলে বৃষ্টির হয়তো খারাপ লাগবে কিন্তু তার মনে মেঘের জন্য যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তা হয়তো কোনোদিন ও পরিবর্তন হবে না।আর বৃষ্টি নিজেও চাই না সে অনুভূতি নামক ভালোবাসা পরিবর্তন করতে।কারণ সে নিজেই যে আটকে গেছে এই ভালোবাসায়।হুমম ভালোবাসে, বৃষ্টি মেঘকে ভালোবেসে আর খুব শীঘ্রই সে জানাবে তার এই ভালোবাসার কথা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here