যখন এসেছিলে অন্ধকারে পর্ব ১৬

যখন এসেছিলে অন্ধকারে
১৬।।

অনি হতচকিত হলেও উপস্থিত বুদ্ধি হারালো না। এরকম পরিস্থিতি ওর জন্য নতুন না। বিনোদন দুনিয়ার বিভিন্ন পার্টিতে অযাচিত স্পর্শ পায়নি এমন কোনো মেয়েকে খুজে পাওয়া যাবে না। মদ্যপ কেউ কেউ হুট করে এসে জড়িয়ে ধরে, কেউ থ্যাবড়ানো চুমুর লালায় মুখ ভরিয়ে দেয়, কেউ টেনে নিয়ে যেতে চায় আঁধার কোণায়। এইসব ভালোমতোই সামাল দিতে জানে অনি। পা-টা বাঁকিয়ে এনে হাঁটু পর্যন্ত উঁচু করে সর্বশক্তি দিয়ে পেন্সিল হিলের গুঁতো দিলো ইমরানের জুতোর উপর। ফরমাল শু দেবে গিয়ে ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল ইমরান। একপায়ে খুঁড়িয়ে কোনোরকমে টেবিলের এইপাশে রাখা নরম সোফাটায় বসে পড়ল। হঠাৎই কান গরম হয়ে উঠেছে, বেশ গরমও লাগছে। চিকন ঘামের স্রোত নেমে যাচ্ছে কপাল দিয়ে। বেশ ভালোরকমই লেগেছে। ব্যথায় চোখে অন্ধকার দেখছে ও। কী হলো সেটাও বুঝতে পারছে না। যতই অনির খেয়াল মাথা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুক না কেন কল্পনায় অনি অনেকরকম করেই ওর কাছে এসেছে। এরকম আদর করাটাও নতুন না ইমরানের। স্বপ্ন বা কল্পনায় কি ব্যথার অনুভূতি হয়? ইমরান দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল৷ নিজের মানসিক স্থিতি সম্পর্কেও সন্দিহান হলো। হ্যালুসিনেশন হচ্ছে না তো! অনিকে পাওয়ার তীব্র আগ্রহ কল্পনায় রক্তমাংসের আরেকটা অনি তৈরি করে নিয়েছে কি? স্বপ্নের সেই অনিকে স্পর্শ করলে কোনো অনুভূতি হয়নি কোনোদিন, কিন্তু আজকে তো উষ্ণতার সাথে সাথে অনির পেলবতাও ওকে ছুঁয়ে গেছে। স্বপ্ন বা কল্পনা কি এতটাও বাস্তব মনে হয়?

হতচকিত আর বিভ্রান্ত ইমরান তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করল। অনিকে সামনাসামনি পেলেই শুধু এই ধাঁধাঁ থেকে বেরোতে পারবে ও।

*****

বিস্মিত সামাদকে প্রায় ঠেলে নিয়ে, জুতোজোড়া হাতে তুলে অনি দৌঁড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে পরশের কাছে এসে ওর হাত ধরে টানল।
‘ভাইয়া, চল এখান থেকে।’

একটুখানি সময়েই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে অনিকে। পরশ অবাক হয়ে জানতে চাইল ‘যাব মানে? হয়ে গেছে তোর?’

‘হ্যাঁ। চল আগে।’

‘কন্ট্রাক্ট পেপার কই? পড়েছিস ভালো করে?’

‘ভাইয়া আগে বেরো। বলছি সব।’

অনির চোখ পড়তে পারল না পরশ, শুধু বুঝল এতবড় কাজ পাওয়ার আনন্দটা মিলিয়ে গেছে। ‘সমস্যা কী অনি? ওরা তোকে বাদ দিয়েছে?’

অনি কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল ‘ভাইয়া চল না? না হয় আমি একাই যাচ্ছি।’

‘কী হয়েছে সেটা তো বলবি আগে।’

ভাগ্যিস এখানে উপস্থিত অন্যরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত নইলে ঠিক দেখে ফেলত তিরতির করে কাঁপছে অনি। ওর ঠোঁট ফুলছে। পরশ ওকে জোর করিয়ে বসালো। ঠান্ডা হাতদুটো নিজের মুঠোয় নিলো। তারপর আদর করে জানতে চাইল ‘কী হয়েছে অনি? কেউ অসম্মান করেছে?’

অনির চোখভরা পানি। ভাষাহীন চোখদুটো টলটল করছে। যেকোনোসময়েই ছাপিয়ে উঠবে। ঠোঁট কামড়ে ধরে ও শুধু বলল ‘ইমরান!’

‘ইমরান?’ অবাক হলো পরশ ‘এখানে? একজন্য চলে যেতে চাইছিস তুই? কিন্তু কাজটা তো তুই নিজের যোগ্যতায় পেয়েছিস।’

‘ভাইয়া সেসব পরে হবে, এখন চলো।’

‘অনি এভাবে চলে গেলে তুই তো হেরে যাবি।’

‘ভাইয়া প্লিজ!’

অনি প্রায় ছুটে অফিসটা থেকে বেরিয়ে গেলো। পরশও পেছন পেছন ছুটল।

*****

ইমরানও প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফিরল। পারলে গাড়িটাকে উড়িয়েই নিয়ে আসত। পারেনি, তাই যা একটু দেরি হয়েছে। সাইদা পলাশডাঙা থেকে ফিরেছেন। আরো আরো অনেক লোকে বাড়ি ভরে আছে। হাসি আর গল্পের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
বাসায় ঢুকেই বসার ঘরে অনির ছোটোচাচিকে দেখল ইমরান। সাইদার সাথে বসে কথা বলছে। ইমরান একটু দ্বিধাগ্রস্ত হলো, মুখে সালাম বলবে নাকি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবে। বিয়ের পরপর কাউকেই পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা হয়নি, এখনও বোকা বোকা লাগল, তাই হাত কপালে উঠিয়ে বলল ‘আসসালামু আলাইকুম।’

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’ ভদ্রমহিলা ভুঁরু কুঁচকে এত আস্তে করে সালামের উত্তর দিলেন যে কানে এসে পৌঁছলো না, ঠোঁট নাড়তে দেখে বুঝে নিলো ইমরান। ও আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। ভেতরের উত্তেজনা চেপে রেখে ছোটো ছোটো পা ফেলে এগোলো৷ বুকের ভেতর ড্রাম বাজছে, অনি নিশ্চয়ই ঘরে আছে।

অনিকে না পেয়ে যারপরনাই আশাহত হলো ইমরান। মেজাজও খারাপ হলো অনির উপর। নিশ্চয়ই সেইদিনের বাচ্চা মেয়েটি নেই আর ও। এই সময়ের কর্তব্যজ্ঞানটুকু তো করা উচিত ছিলো ওর। কল্পনার মতো করে কাছে নাইবা আসত, ইমরানের নয়নের তৃষ্ণাটুকুই না হয় মিটিয়ে দিয়ে যেত। চিন্তায় চিন্তায় এই বয়সেই কি হার্টফেইল হবে নাকি ওর? আচ্ছা, টেনশনে কি সত্যিই হার্টফেইল করে? টার্মটা কি আসলেই হার্টফেইল? নাকি অন্যকোনো কারণে হার্টফেইল হয়? চিন্তা করলে পায়ে ব্যথা করে কি? ইমরানের হৃদয়ের যন্ত্রণা যেন পায়ে এসে ঠেকেছে। ব্যথা ক্রমশ বাড়ছে। ইমরান হাসল। কল্পনার ব্যথা বাস্তবেও যন্ত্রণা দেয় তবে, মনে মনে ভাবল।

দরজার আড়ালে উঁকিঝুঁকি দিতে থাকা মুখটা দেখে ইমরান ডাকল।
‘এদিকে এসো? আমাকে চেনো তুমি?’

আট বছরের ছেলেটা মাথাটা উপর -নিচ করল। আস্তে করে বলল ‘বড়মামা।’

‘কোন ক্লাসে পড় তুমি?’

‘কেজি টু।’

‘বাহ! পড়াশুনা করা অনেক ভালো।’

‘না। আমি পড়াশুনা করব না।’

‘কেন?’

‘মা বলেছে বেশি বেশি পড়লে আমি তোমার মতো হতে পারব। কিন্তু তোমার মতো হতে চাই না আমি।’

‘আমার মতো? আমি কেমন?’

‘তুমি নানুকে কষ্ট দাও। নানুকে রেখে চলে গেছ। আমি কখনো আমার মাকে ছেড়ে যাব না। মাকে ছাড়া আমার ঘুমই হয় না।’

‘ঠিক। আমি খুব পচা। আমি তো ইরাজের জন্য চকলেট আনতেও ভুলে গিয়েছি।’

‘নো প্রব্লেম। মামি আমাকে খুব অনেকগুলো চকলেট দিয়েছে। এগুলো শেষ হলে তুমি কিনে দিও।!’

‘মামি কে?’

‘আরে তুমি এটাই জানো না? মামার বউই তো মামি হয়! মা বলেছে আমাকে।’

ইমরানের পালসরেট আবারও বেড়ে গেল। অনি! সবার সাথেই খাতির, চকলেটের লোভ দিয়ে বাচ্চাটাকেও হাত করা হয়ে গেছে, শুধু ওর সামনেই আসছে না।

‘নানুভাই, মা ডাকছে তোমাকে।’ বলতে বলতে ঘরে ঢুকলেন সাইদা। হাতে একটা গ্লাস। ইমরানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন ‘বেলের শরবত। এত রাতে আর কী খাবি? পিঠা আনছিলাম। এখন খেলে তো খিদা মরে যাবে। শরবত খা। একটু পরেই ভাত দিয়ে দেবো। পলাশডাঙা থেকে বেল আনছি। বেয়াইদের গাছের বেল। খুব মিষ্টি। দুধ-চিনি ছাড়াই শরবত বানিয়েছে বৌমা। খেয়ে দেখ, খুব মজা।’

একটানে শরবতটা খেয়ে নিলো ইমরান। বেশ খেতে। মুখ মুছে বলল ‘তোমার বৌমাকে তো দেখলাম না। আমার সামনে আসা বারণ নাকি?’

সাইদা হেসে ফেললেন ‘তুই তো পছন্দ করিস না। বিরক্ত হোস। এইজন্যই তো আমি বারবার সাবধান করে দিয়েছি, তোর সামনে যেন না আসে। ডাকছি এখনি।’ বলেই বাইরের দিকে মুখ করে ডাকলেন ‘বৌমা? এইদিকে এসো?’

ইমরানের চোখ আর হৃদপিণ্ড দুটোই যেন দরজার চৌকাঠে আটকে রইল। একটা হলদে কমলা শাড়ির আঁচলের প্রান্ত গোচরে এলো, ইমরান চোখ বন্ধ করে ফেলল সাথেসাথে।

সাইদা বললেন ‘সালাম করো। পায়ে হাত দিয়ে সালাম করো ‘

মেয়েলি হাতের স্পর্শ লাগল পায়ে। ইমরান চোখ খুলতেই ওর পায়ের কাছে নিচু হয়ে বসা মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলিয়ে ইমরান আবিষ্কার করল এটা অনি না, অনির বড়চাচার মেয়ে সীমা। অনির চাইতে বছর দুইয়ের বড় জমজদের একজন।

‘এ কে?’ বিস্ময় চেপে রাখতে পারল না ইমরান।

‘ওই তো বৌমা। ইকরামের বউ।’

‘ইকরাম বিয়ে করেছে? আমাকে বলোনি তো!’

‘বলেছি। তুই খেয়াল করিসনি নইলে গুরুত্ব দিসনি। আর তুই ফোনও করতি তিনমাসে ছয়মাসে। ভালো আছো মা? আমি ভালো আছি। এইটুকু বলেই শেষ। বেঁচে আছিস, এইটুকু ভেবেই স্বান্তনা নিয়েছি আমি।’ অভিমানে চোখ ভিজে উঠল সাইদার।

কথাগুলো মিথ্যে নয়। ইমরানের আসলেও সময় ছিলো না।

‘কবে বিয়ে হলো?’

‘গতমাসে। ইকরাম পছন্দ করেছে। আর আমরা প্রস্তাব দিলে ওরাও রাজি হলো।’

কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। ইমরান, অনির সাথে যে ব্যবহার করেছে তারপরে বাপের বাড়ি, পলাশডাঙায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সাইদার। বেলায়েত মুন্সিরা এলাকায় প্রভাবশালী। অনির জন্য তারা সাইদার ভাইদের সাথে সবরকম মেলামেশা বন্ধ করে দেন। এতে করে ব্যবসায়ীক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যেমন হচ্ছিল, তেমনি গ্রাম্য শালিস বিচারেও মাতব্বর বেলায়েত মুন্সি অকারণেই সাইদার বাপের বাড়ির লোকেদের নাজেহাল করছিলেন। সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে এবারে সাইদা ইকরামকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে বেলায়েত মুন্সি এবারে ভুল করেননি। ইকরামকে বেশ ভালোরকম জিজ্ঞাসাবাদ করেই বিয়েতে মত দিয়েছেন। ইকরাম আপত্তি করেনি, সীমাকে বেশ পছন্দই হয়েছে ওর!

কথা ওঠায় সংকোচ ছেড়ে মরিয়া হলো ইমরান, ‘আর অনি?’

ইশারায় সীমাকে চলে যেতে বললেন সাইদা। তারপর ইমরানের প্রশ্নের উত্তর করলেন, ‘অনি? সে মেয়ে তো একেবারে উচ্ছন্নে গেছে। বেশ হয়েছে, আমার শিক্ষা হয়েছে। অমন হস্তিনী মেয়েমানুষ আমি কীভাবে পছন্দ করেছিলাম কে জানে। আমার আক্কেল হয়েছে বাপ। এবারে তুই যাকে পছন্দ করে দিবি, তাকেই নিয়ে আসব আমি।’

‘নিয়ে আসবা মানে?’

‘বিয়ে করাবো তোকে।’

‘কেন?’

‘কেন আবার? বিয়ে করবি না তুই? দেখ এখনি বিয়ের কথা তুলতে চাইনি আমি। এত তাড়া নেই আমার তোকে বিয়ে দেওয়ার। তুই কথা তুললি তাই বললাম। তুই আবার এই কথা ধরে পালাসনে যেন। তুই না চাইলে আমি তোর বিয়ে ভুলে যাব।’

‘কিন্তু আমার বিয়ে কী করে হবে?’

‘সে কী কথা। অন্যদের বিয়ে যেভাবে হয়। যেভাবে ইকরামের বিয়ে হলো।’

‘সে ঠিক আছে। কিন্তু আমি তো বিয়ে করেছি।’

সাইদা আঁতকে উঠলেন ‘বিয়ে করেছিস, মানে? ওইদেশে? জাপানি নাকি বাংলাদেশি? দেশে আসবে? নাকি ওইদেশেই থেকে যাবি? এইদেশে আসছে নাকি?’

‘মা, ও মা, আমি অনির কথা বলছি।’

‘অনি?’ শান্ত হলেন সাইদা। ‘অনিরে দিয়ে কাজ কী? তালাকফালাক দিয়ে গিয়েছিস। জেদ করেই হোক, বা যাই হোক, তালাক তো দিয়েছিস। ওর কথা ভেবে আর লাভ নেই।’

‘না, মা। তালাক হয়নি।’

‘তালাক হয়নি?’ তারস্বরে চেঁচালেন সাইদা। ‘তালাক হয়নি মানে কি? ওই মেয়ে নিজে বলল, তুই রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তালাক দিয়েছিস! ওইটুকু মেয়ে বানিয়ে বানিয়ে এতবড় মিথ্যে বলল?’ মাথায় হাত দিয়ে বসলেন সাইদা।

‘না মা, ভুল আমি করেছি। আমার ভুল হয়েছিল মা। তালাক দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তালাক হয়নি। আমি কাগজটা ফিরিয়ে এনে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। অনি এখনো আমার স্ত্রী। ওকে নিয়ে এসো মা।’

সাইদা সব বুঝলেন। কিন্তু বিস্ময়ের রেশ কাটল না। বিড়বিড় করে বললেন ‘কী করে আনব ওকে? ও তো নাগালের বাইরে এখন। ও এখন নায়িকা। কোন নায়কের সাথে প্রেম আছে, সবাই বলে। দিনকয়েকের ভেতর বিয়েও নাকি হবে…। আরও কত কথা। ওই মেয়ের বদনাম হয়ে গেছে, বাপ। কারো ঘরে তোলার মতো নেই আর।’

‘বিয়ে কীভাবে হবে? ওর সাথে আমার তালাক তো হয়নি, মা? কী পাগলের মতো বলছ?’

‘কিন্তু অনি তো বলেছে, তালাক হয়েছে।’

‘সে তো, আমি ওকে বলিনি যে তালাকের কাগজ ফিরিয়ে এনেছি।’

‘এই পাঁচটা বছরেও বললি না?’

‘আমার ভুল হয়েছে মা। আমি বুঝতে পারিনি।’

‘আমি বুঝেছি। আর তুইও পরিষ্কার বুঝে নে, ওই মেয়ে আমি আর ঘরে তুলব না। ও একেবারে বখে গিয়েছে। অলক্ষী একটা। যা আমাকে বললি এখনি ভুলে যাবি। পেটের ভিতর দাফন করে দিবি। এসব কথা আর কেউ যেন না শোনে। সবাই যেমন জানে তালাক হয়ে গিয়েছে, এখনও তাই জানবে…’

চলবে…

Afsana Asha

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here