রাজমহল পর্ব -১০

#রাজমহল
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১০

তারপর আপু যা বলল তা শোনে আমাদের চোখ কপালে উঠে গেল। কারণ আপু বলল যে আপুর শ্বশুড় বাড়ির এক পরিচিত লোক কল দিয়েছে। আর উনি বলছেন যে ভাইয়াকে কবর দেওয়ার সময় যখন লাশ নামাতে যাবে তখন দেখে ভাইয়ার লাশ খাটিয়াতে নেই। লাশটা উধাও হয়ে গেছে। সবাই এ বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত। হুট করে লাশটা কীভাবে উধাও হলো সেটাও কেউ বলতে পারছে না।

আপু কথা গুলো বলে জোরে জোরে দম নিচ্ছল। আপুর কথা গুলো শোনে বেশ অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। তবুও বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। কারণ এ কয়েকদিন যা হচ্ছে তারপর এসব অবিশ্বাস্য বিষয় বেশ বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আমি আপুকে ছটফট গলায় বললাম

– ভাইয়ার লাশ কোথায় গেল তাহলে?

আপু নিরাশ কন্ঠে কান্নাজড়িত গলায় জবাব দিল

– জানি না কী হচ্ছে এসব আর কেনই বা এমন হচ্ছে।

বলেই আপু হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদতে লাগল। আপুর কান্না দেখে আমার ভেতরের হাহাকার বাড়তে লাগল। কী হতে চলেছে কিছুই বুঝতেছি না। কেনই বা এমন হচ্ছে তার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। বিষয়টা যতই সামনের দিকে এগুচ্ছে ততই সব ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। সন্ধি আপুর কান্নার আওয়াজে ধপাস করে বসে পড়ল। বসে ঘরের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল। সন্ধির আচমকা চিৎকারে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। এদিকে সন্ধি চিৎকার দিয়ে দুহাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেলল।সন্ধির আচমকা চিৎকারে আমারা কেঁপে উঠে সন্ধির দিকে তাকালাম। সন্ধির কাঁধে হাত রেখে সন্ধির মাথাটা তুলে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে৷ সন্ধি কোনোরূপ কথা না বলে চোখ নীচে নামিয়ে হাতটা উপরের দিকে ঈশারা করে দেখাল। সবাই উপরের দিকে তাকিয়ে ভয়ে চুপসে গেলাম।কারণ অনিক ভাইয়ার লাশ উপরের সিলিং এ ঝুলছে। বড় আপু দেখে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগল। আপুর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল বারবার। আমার হাত পা কেঁপে অবশ হয়ে যাচ্ছিল। হার্টবিট প্রবল বেগে বড়তে লাগল। চারদিক নীরব। সবাই শুধু উপরের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। কী করব সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল ।পিনপনা নীরবতা বিরাজ করছে।হুট করে অনিক ভাইয়ার লাশটা উপর থেকে আঁচড়ে পড়ে দু ভাগ হয়ে গেল। কোমরে থেকে নীচের দিকে একভাগ আর কোমর থেকে উপরের দিকে আরেক ভাগ।

সারা শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে উঠল। এসব দেখার মতো ধৈর্য কুলাচ্ছে না তবুও দেখতে হচ্ছে অসহায়ের মতো।নিজের ভেতরেই অম্ভব খারাপ লাগছে। সায়রা আপু এসব দেখে চিৎকার দিয়ে পুনরায় অজ্ঞান হয়ে গেল। সন্ধি নীচের দিকে দম ধরে তাকিয়ে আছে। এদিকে আমার হাত পা কাঁপতে লাগল। হাসিব আমাকে শক্ত করে ধরে রাখল। নিজের ভেতরে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করতে লাগল।কী করব এসব ভেবে মন উদাস হচ্ছিল।

অপরদিকে লাশটা পুনরায় জোরা লেগে গেল। তারপর আবার শূন্যে ভেসে উধাও হয়ে গেল। সবকিছু কেন জানি অবাস্তব মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এটা আমার মতিভ্রম এটা আমার কল্পনা তবে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় মনে হচ্ছে যে আমি কোনো অন্ধকার জগতে আছি। যে জগতের যতই গভীরে যাচ্ছি ততই ধোয়াশা আর অন্ধকারে নিমগ্ন হচ্ছি।

তবুও নিজেকে সাহস করে স্থির করলাম। তারপর পানি এনে সায়রা আপুর মুখে ঝাঁপটা দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আপুর জ্ঞান ফিরল। তবে আপু স্তব্ধ হয়ে গেছিল পুরো। এদিকে সন্ধিও একদম স্তব্ধ হয়ে স্থির হয়ে বসে রইল। আমি চুপ করে বসে উপায় খুঁজছিলাম কী করা যায়।

সারাটাদিন এসব অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে পার করলাম। কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সবদিক দিয়ে ধোয়াশা ছিল। জানালার পাশে বসে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে লাগলাম। এমন সময় মনে হলো আকাশে কোনো সংখ্যার আগমণ ঘটল।আকাশের প্রথম সংখ্যাটি ছিল ২৭ তারপর ৯। বুঝতে পারছিলাম না হুট করে এমন কেন দেখলাম। এ সংখ্যা গুলো কিসের চিন্হ বহন করছে। এ সংখ্যাগুলো দ্বারা কী বুঝানো হচ্ছে। হতভম্ব হয়ে শুধু ভাবতে লাগলাম।

কিছু সময় পর টেবিলে বসে ডায়রি নিয়ে বসলাম। মন চাচ্ছে কিছু একটা ডায়রিতে লিখি। তাই আজকের তারিখটা দিয়ে ডায়রিতে লিখতে যেতেই মনে হলো যে তারিখের প্রথম টাতে কত তারিখ আজকে সে সংখ্যা লিখেছি তারপরের টায় মাসের সংখ্যা লিখেছি। যদি এরকম করে বিবেচনা করা যায় তাহলে ভাবতে পারি যে ঐ আকাশে দেওয়া প্রথম সংখ্যা তারিখ বুঝিয়েছে মানে ২৭ তারিখ। আর দ্বিতীয় সংখ্যাটা বুঝিয়েছে কত মাস মানে ৯ মাস৷ মূল তারিখটা দাঁড়ায় ২৭ সেপ্টেম্ব। তার মানে আর একমাস পর ২৭ সেপ্টেম্বর আসতেছে।

মনে মনে ভাবতে লাগলাম এ সংখ্যা দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে। আমাকে কী কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম সন্ধি পাশে দাঁড়িয়ে আছে।সন্ধির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার দিকে নিষ্পাপ চোখে তাকিয়ে আছে। বেশ সুন্দর করে সেজেছে ও। হুট করে সাজলো কেন সেটাও একটা রহস্যের বিষয়। চুলে খোপা কেরেছে। খোপা করে আবার বেলী ফুলের মালাও দিয়েছে৷ ফুল গুলোর গন্ধ বেশ প্রখর। বারবার আমার নাকের ডগায় যেন ফুলগুলোর গন্ধ ভাসতে লাগল। এমন সময় সন্ধির ঘাড়ের দিকে চোখ গেল সেখানে স্পষ্ট লেখা ২৭/৯। বুঝতে পারছিলাম না এ লেখা দ্বারা কী বুঝানো হচ্ছে। সন্ধির দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম

– কী হয়েছে তোর হুট করে এভাবে সাজলি কেন?

সন্ধি হালকা হেসে পরক্ষণে চেহারাটা গম্ভীর করে বলল

– ইচ্ছা হয়েছে। জানিস আপু আমাদের বাড়ির পেছনে বেলী ফুল গাছটায় এত ফুল ফুটেছে কী বলব। ঐখানের ফুলের গন্ধ যেন আমাকে আকুল করে টেনে নিয়ে গেছে। ফুলগুলো এতই সুন্দর যে খোপা করে মালা গেথে পড়ে ফেললাম।

সন্ধির কথা শোনে কিছুটা চমকালাম। কারণ আমাদের বাড়ির পেছনে কোনো বেলী ফুল গাছ ছিল না। সন্ধি বেলী ফুল গাছ কোথায় পেল বেশ ভাবাল আমায়।আর সন্ধির এলোমেলো কথাগুলোও আমাকে বেশ চিন্তিত করে তুলল। আমি চেয়ার থেকে উঠে সন্ধিকে কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে পাশের রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম হাসিব ঘুমাচ্ছে।তাই হাসিবকে ডাক দিয়ে বিরক্ত না করে একাই চলে গেলাম বাড়ির পেছনটায়।

বাড়ির পেছনে গিয়ে প্রথমেই আমার চোখ গেল বেলী ফুল গাছটায়। কিন্তু এ গাছটা তো আগে ছিল না।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে আমি বেলী ফুল গাছটার কাছে যেতেই তার সুগ্রাণে যেন আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছিল। কেন জানি না মনে হচ্ছিল ফুলগুলো আমাকে ডাকছিল তার কাছে যাওয়ার জন্য। আমি ব্যাকুল হয়ে গাছটার আরও কাছে গেলাম। কাছে যেতেই সবচেয়ে সুন্দর চকচকে ফুল আমার চোখে পড়ল। ফুলটা চোখে পড়ার পর হাতটা নিশপিশ করছিল তুলার জন্য। দেরি না করেই ফুলটা তুলতেই একটা বিষয় লক্ষ্য করে থমকে গেলাম।

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here