#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_10
-খুব সকালে সাদিক আর রিয়ানা বাড়িতে ফিরে আসে।
রিয়ানা লজ্জায় সাদিকের দিকে তাকাতেই পারছে না। কারণ কাল রাতে এমন কিছু হয়ছে যার জন্য সে সাদিকের চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছে না।
রিয়ানা চুপচাপ রোদের বাড়িতে প্রবেশ করে। নিজের রুমে এসে সোজা বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার অন করে দেয়। ইশশ আজকের পর আর সাদিকের সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রিয়ানার নেই।
”রিয়ানা শাওয়ারের নিচে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পরে। কি করতে আসছিলাম আর কি করছি আমি। এখানে আশার উদ্দেশ্য ভুলে বসে আছি আমি। আমি নিজেকে নিজে ক্ষমক করতে পারবো না কখনে। রিয়ানা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? নিজের উদ্দেশ্য কি করে ভুলে গেছিস? অন্যায়কারীরে শাস্তি দিতে এসে নিজেই অন্যের সাথে এতো বড় পাপ করতে পারিস না।
রিয়ানা কি করে ভুলে যাচ্ছিস তোর উদ্দেশ্যের কথা?
___সাদিক নিজের ঘরে এসে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর আয়নার সামনে একভাবে তাকিয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। আমার মনের মধ্যে একজনের জন্য সুপ্ত ভালোবাস লুকিয়ে রাখা আছে। আর আমি কিনা নিজের ভালোবাসকে আজ নিজের হাতে কবর দিলাম। নিজের অনুভূতি গুলো কি করে এমন বিষাদে জর্জরিত হয়ে গেছে? আমি কি করে কাল রাতে এতো দূরে চলে গেছিলাম। জানতাম ঐ এলাকার মানুষেরা পাপী। আমিও ওদের সাথে পাপের ভাগিদার হয়ে গেলাম। আজকের পর কি ভাবে রিয়ানার সামনে দাঁড়ায়? নিজেরি বিবেকের কাছে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। বাড়ির কেউ যদি জানতে পারে এই ঘটনা তখন কি হবে? পরিবারের সম্মান কোথায় যাবে? রিয়ানা! ওর সম্মান তো ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। রোদ ভাইয়া রিয়ানাকে পছন্দ করে। কিছুদিন পর তাদের বিয়ে হবে। আর ভাইয়ের বউয়ের সাথে আমার এমন একটা সম্পর্ক। ছিঃ ছিঃ ছিঃ সাদিক তোর লজ্জা হওয়া উচিৎ।
___এদিকে রিনি ভার্সিটিতে প্রবেশ করার সময় দেখে সবাই ওর দিকে কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অন্যদিকে তাকিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময় সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়।
রিনি- সামনে তাকিয়ে দেখে সে বিহানের উপরে পরেছে। রিনি দ্রূত উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে বলে,”দুঃখিত স্যার আমি বুঝতে…..
কথাটা সম্পন্ন করার আগেই বিহানের হাতে থাপ্পড় থেকে রিনি চোখে অন্ধকার দেখছে।
বিহান আজও রিনিকে চরমভাবে অপমানিত করে।
বেয়াদব, বেহায়া মেয়ে ভার্সিটিতে আসো পরপুরুষের সাথে ঢলাঢলি করতে? প্রথম দিন চুমা,আজ তো সোজা গায়ের উপর উঠে আসছো। না জানি কোন দিন বিছানাতে চলে আসো।”
রিনি- কঠোর কন্ঠে বলে,”স্যার, এতোবড় কথা বলতে আপনার বাধছে না?”
বিহান – আরে কেমন মেয়ে তুমি? যে নিজের সম্মান নিজে বাঁচাতে জানো না? বার বার একটা পুরুষের সাথে এতোটা ক্লোজ হতে শরম করে না? না কি লাজ-লজ্জা বেঁচে দিয়েছো। নয়তো জানো এখানে পুরুষের অভাব নেই। তারপর ও এতো ডোন্ট কেয়ার ভাব। আরে এতো পুরুষের মাঝে তুমি মরতে আমার পিছনে কেন পরছো? আমাকে নিজের জালে ফাঁশাতে চাইছো? তোমাদের মতো মেয়েদের একটায় কাজ।
আশেপাশে প্রচুর মানুষের ভীর জমেছে।
তারা সবাই ফ্রী তে বিনোদন নিচ্ছে।
—রিনি একবার চারিদিকে দৃষ্টিপাত করে সবাইকে দেখে মাথা নিচু করে রাখে। জীবনে এতো অপমানিত কখনো হতে হয় নি তাকে।
আল্লাহ জানে এই লোকটার মুখে কোনো কথা আটকাই না কেন। একটা মেয়েকে সবার সামনে এভাবে কথা বলতে তার মুখে বাধে না।
ছিঃ এই লোকটার সাথে কথা বলাই উচিৎ না।
এই লোকের জন্য আমি কেনো এতো অপমান সহ্য করবো। আজকের অপমান তুলে রাখলাম স্যার। কোনোদিন সুযোগ পেলেই সুদেআসলে সবটা ফেরত দিবো। মনে মনে কথা গুলো বলে কান্না করতে করতে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসে।
রিনি বাড়িতে আশার পর ওর মা প্রশ্ন করে! কি রে তুই এতো তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসলি কেন?
রিনি মায়ের দিকে না তাকিয়ে উওর দেয়।এমনি ভালো লাগছিল না তাই চলে আসছি। এটা বলে সোজা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।
-”- রোদ হসপিটালে এসে বৃষ্টির সাথে দেখা করে প্রথমে। বৃষ্টির কেবিনে এসে দেখে জানালার বাহিরে একদৃষ্টি তাকিয়ে আছে ঐ দূর আকাশের দিকে।
রোদ যে এসেছে কেবিনে সেদিকে বৃষ্টির কোনো খেয়াল নেই। উদাসীন হয়ে দূর আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির।
রোদ তার উপস্থিতি জানাতে গলাটা একটু ঝেড়ে কাশি দেয়। রোদের কাশির শব্দে বৃষ্টির হুশ ফিরে আসে। সে শব্দের দিকে তাকাতেই দেখে রোদ দাঁড়িয়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসি মাখা। যে কোনো মেয়ে তার এই মিষ্টি হাসিতে মন হারাতে পারে। সত্যি কিছু মানুষের হাসি অনেক সুন্দর মনোমুগ্ধকর হয়। রোদের হাসিটাও ঠিক সেই রকমের।
বৃষ্টি রোদের সামনে এসে “আসসালামু আলাইকুম ” বলে।
রোদ- ওয়া আলাইকুমুস সালাম বলে প্রশ্ন করে কেমন আছেন এখন?
বৃষ্টি – আলহামদুলিল্লাহ্! আপনি কেমন আছেন ডাক্তার সাহেব।
রোদ- আলহামদুলিল্লাহ্! আমাকে প্লিজ ডাক্তার সাহেব বলবেন না। আমার নাম আছে তো। আপনার ইচ্ছা হলে রোদ বলে ডাকতে পারেন।
বৃষ্টি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”আপনি অনেক বড় আর সম্মানের অধিকারী। আপনার নাম ধরে ডাকাটা বেয়াদবি হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ আপনাকে রোদের ডাক্তার রোদ বলে ডাকতে পারি।”
রোদ ভ্রু কুঁচকে বলে,”রোদের ডাক্তার রোদ মানে?”
বৃষ্টি বলে,”আপনি অনেক স্মার্ট আর দেখতে মাশাআল্লাহ। যে কেউ আপনার এই চেহারার উত্তাপ সহ্য করতে পারবে না।এতো সুন্দর মানুষের ডাক্তার হওয়া উচিৎ হয়নি। তাছাড়া নামটাও রোদ। মানেই কড়া উত্তাপ। আমি তো ডাক্তার রোদ বলে ডাকবো।”
রোদ মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই। তা আপনি এখানে একা একা কি করছেন? পরিবারের সদস্যদের সাথে আড্ডা দিতে পারতেন। ওখানে তো সবাই নতুন বেবি নিয়ে খুব খুশি।”
বৃষ্টির মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়। চেহারার রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে রোদের কথার কোনো উওর দেয় না। শুধু তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,” পরিবারের ভালোবাসা সবার কপালে সহ্য হয় না।”
রোদ ভ্রূ কুঁচকে কিছু জানতে চাই- বে ঠিক তখুনি নার্স এসে রোদ কে ডাক দেয়। স্যার একজন পেশেন্ট এর অবস্থা ভালো না দ্রুত চলুন।
রোদ বৃষ্টির কে কিছু না বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। বৃষ্টির প্রশ্নের উওর সে পরেও জানতে পারবে। তবে সে পছন্দের মানুষের জন্য নিজের দায়িত্বে অবহেলা করবে না কখনো।
বৃষ্টি একভাবে রোদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
(ভুল ত্রুটি থাকলে বলবেন সংশোধন করবো। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)
‘
‘
‘
চলবে….