রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -১১

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_11

বেশ কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে যায়।
এই কয়েক সপ্তাহে সবার সম্পর্কের সমীকরণ বদলে গেছে। সবার জীবনের গল্পটাও কেমন যেনো হয়ে গেছে।
রিয়ানা সাদিকের সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই। ওদের মাঝে বেশ দূরত্ব এসেছে। রিনির ভার্সিটি লাইফটা বিষাক্ত হয়ে গেছে বিহান নামের মানুষের জন্য।
রোদ আর বৃষ্টির সম্পর্কটা নতুন ভাবে শুরু হয়েছে।

বৃষ্টির ভাবী হসপিটালে থাকাকালীন সময় রোদ প্রতিদিন তার খোঁজ নিতে একবারের জন্য হলেও যেতো। পাপিয়া তো রোদ কে নিজের ভাই হিসাবে মেনে নিয়েছে। সেদিন যদি রোদ সাহায্য না করতো তাহলে হয়তো পাপিয়া নিজের সন্তান কে আজ বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারতো না। আসলে পাপিয়ার বিয়ে হয়েছে অনেক বছর। বাচ্চা হওয়াতে সমস্যা ছিলো। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা করার পর এই বাবুকে পেয়েছে সে। কিন্তু সেদিনের ঘটনাতে রোদ সাহায্যদান না করলে হয়তো মাতৃত্বের স্বাদ হতে সে বঞ্চিত হতো। তবে কথায় আছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।
পাপিয়া কে মনুষ্যেতর খাতিরে সাহায্য করেছিল ঠিকি। তবে পাপিয়ার জন্য রোদ আজকাল বৃষ্টির সাথে অনেকটা ফ্রী হতে পারছে। সেদিনের ঘটনার পর থেকে রোদ শিকদার মির্জার বাড়ির একজন সদস্য হয়ে গেছে। রোদ তাদের বাড়িতে যাতায়াত করে।
যেহেতু শিকদার মির্জার বাড়িত তার যাতায়াত হয়। সেখানে যাবার পর বৃষ্টির সাথে সে কথা বলে। রোদ বৃষ্টির সাথে কথা বলাতে তারা কোনো আপত্তি করে না। রোদ মাঝেমধ্যে এখন বৃষ্টির সাথে বাহিরে দেখাও করে। এ খবর শিকদার মির্জা জানে। তবে এখানে সে কোনো খারাপ কিছু দেখে না। তাই শিকদার মির্জা নিজেই বৃষ্টিকে অনুমিত দিয়েছে। বৃষ্টির যখন ইচ্ছা রোদের সাথে কথা বলতে পারে।

রোদ বৃষ্টির বাড়িতে অনেকদিন ধরে যাতায়াত করে। তবে রোদের দৃষ্টিতে একটা বিষয়ে খটকা লাগে। তা হচ্ছে হসপিটালে পাপিয়া ভাবীর বাবু হবার পর একটি বারের জন্য বৃষ্টি বাবুটা কে কোলে নেই না। কেনো নেই না এই প্রশ্ন টা করতে গিয়েও তার বিবেকে বাধে। কেনো অন্যের পারিবারিক বেপারে নাক গলাতে যাব?

তবে হসপিটালের কাহিনীর পর থেকে আর বৃষ্টির ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয় না। পাপিয়া ভাবীর বাবু হয়েছে। ভাবী এখন বাবুকে নিয়ে ব্যস্ত। ডায়না মির্জা তো কোনো কালে সংসারের কাজ করে নাই। তাই সে সংসারের কাজ করতে পারে না। সংসারের হাল এখন বৃষ্টির হাতে। ডায়না মির্জা তো পারে শুধু পার্টিতে এটেন্ড করতে। বড় বড় লেকচার দিতে। সে কি জানে রান্নাতে কয় প্রকারের মশলাপাতি লাগে? উঁহু সে এসবের কিছুই জানে না। তার স্বামী সন্তানেরা বলতে পারবে না তার মায়ের হাতে কখনো কোনো রান্না খেয়েছে কি না? তবে তাদের ঘরের কথা বাহিরে কেউ জানে না। ঘরের কথা কি আর পরের কাছে বলতে আছে?

এদিকে একদিন সকালে বাড়ির কাজের মানুষের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বৃষ্টি হাফ ছেড়ে বাঁচে। আজ কোনো রান্নার ঝামেলা তে সে যাবে না। আজকের পুরোটা দিন সে বৃদ্ধাশ্রমে কাটাবে বলে ঠিক করেছে।

শিকদার মির্জার কাছ থেকে আগেই সে অনুমিত নিয়েছে। উনি না করেন নাই। এদিকে বাড়ি থেকে বাহিরে এসে রোদের ফোনে সোজা কল করে বৃষ্টি।

মোবাইলের স্কিনের উপর বৃষ্টির নাম ভেসে উঠতে দেখে রোদ দ্রুত ফোন রিসিভ করে।

ওপাশ থেকে বৃষ্টি দ্রুত বলে,”কি ডাক্তার সাহেব! আজকে না আমার সাথে একটা স্থানে যাওয়ার কথা ছিল আপনার?”

রোদ- জ্বি ম্যাডাম আমার মনে আছে সে কথা।

বৃষ্টি – সে কথা যখন এতোই মনে আছে তাহলে হসপিটালে কি করছেন?

রোদ- কিছু পেসেন্ট আছে যাদের রেগুলার চেকআপে দরকার ছিলো। এইতো তাদের চেকআপে শেষ করে মাএ চেম্বারে প্রবেশ করেছি আর ম্যাডামের কল।

বৃষ্টি – আচ্ছা আপনি হসপিটালে থাকেন আমি আপনাকে পিক করতে আসছি।

কিছু সময় পর বৃষ্টি রোদের হসপিটালের সামনে এসে মোবাইলে কল দিতেই রোদ বাহিরে চলে আসে। দ্রুত বৃষ্টির গাড়িতে বসে পড়ে। এরপর বৃষ্টি আর কোনো কথা না বলে সোজা গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। গাড়িতে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে না। অনেকটা সময় পরে বৃষ্টি তার গন্তব্যে পৌঁছে যায়।

রোদ বৃষ্টি গাড়ি থেকে নেমে বৃদ্ধাশ্রমের ভেতরে প্রবেশ করে। বৃষ্টি ভেতরে প্রবেশ করে একজন কে তার গাড়ি থেকে জিনিশ পএ গুলো নামিয়ে আনতে বল।

রোদ চুপচাপ বৃষ্টির পাশে হাটছে। বৃষ্টি বৃদ্ধাশ্রমের কেয়ারটেকারের সাথে দেখা করে। তাকে বলে,”সব কিছু রেডি আছে তো?”

উনি বলে,”জ্বি ম্যাডাম আপনার কথা মতো সব কিছু আমরা রেডি করে রেখেছি। ”

এরপর রোদ আর বৃষ্টি সেখানে উপস্থিত সকল বয়স্ক মুরব্বীদের সাথে দেখা করে তাদের সাথে বসে গল্পগুজব করতে থাকে। রোদ অবাক হয়ে বৃষ্টিকে দেখতে থাকে। মেয়েটা সব সময় এতো সিম্পল কেনো থাকে? আর যে মেয়েটার মাঝে গুন্ডি গুন্ডি ভাব সে মেয়ে যে এতোটা ধৈর্যশীল হয়ে এখানে উপস্থিত মানুষের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবে ভাবাই যায় না। একটুপর ম্যানেজার সাহেব এসে আমাদের সবাই কে সাথে করে বৃদ্ধাশ্রমের পেছনের বাগানের নিয়ে আসে। সেখানে এসে তো রোদের চোখ আকাশে উঠে যায়।
পুরোট খুব সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করা। বাগানের একটা জায়গাতে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা সামনে টেবিলের উপর অনেক বড় একটা কেক রাখা। আর সেখানে খুব সুন্দর করে বৃষ্টির নাম লেখা।
রোদ কোনো কিছু বোঝার আগেই সেখানে উপস্থিত সবাই বৃষ্টিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে থাকে।
বৃষ্টি সবাই কে ধন্যবাদ জানিয়ে রোদের হাত ধরে কেক কাটতে চলে আসে। বৃষ্টির এমন কান্ডে রোদ শকড।

বৃষ্টি কেক কাটিং করার পর প্রথম পিস টা রোদের মুখের সামনে ধরে। এতে করে রোদ আরো অবাক হয়ে যায়। বৃষ্টি জোর করে রোদ কে কেকের টুকরোটা খাওয়াই দেয়। এরপর রোদ ও বৃষ্টিকে একটু কেক খাওয়াই দেয়।

সেখানে উপস্থিত সবাই রোদ বৃষ্টিকে বলে তোমরা দুজনে সারাজীবন একসাথে এভাবে থেকে পাশাপাশি আমরা সবাই দোয়া করি।

সবার এমন কথা শুনে রোদ লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আর বৃষ্টির মুখের রংটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

কেকটা সরিয়ে রাখা হয়। এরপর রোদ বৃষ্টি খাবার টেবিলে বসে। আজকে বৃষ্টির জন্মদিন উপলক্ষে এখানে সবার জন্য খাবার আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে শিকদার মির্জা।

তাই বৃষ্টিও নিজে চলে আসছে সবার সাথে নিজের খুশির সময়টা ভাগাভাগি করে নিতে।

এরপর এখান উপস্থিত সবার সাথে বসে রোদ বৃষ্টি খাবার খাওয়াদাওয়া করে।

খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে বৃষ্টি একটা বড় অংকের চেক বাহির করে দেয়। তারপর আরো কিছু সময় তাদের সাথে আড্ডা দেয়। বিকাল বেলা রোদ বৃষ্টি সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।

আশার পথে রোদ বৃষ্টিকে বলে,”আজকে আপনার জন্মদিন ছিলো আমাকে তো বলেন নাই?”

বৃষ্টি- জন্মদিনের কথা কি মাইকিং করতে আছে? এইতো জানতে পারলেন আজকে জন্মদিন ছিলো আমার।

রোদ- আপনার জন্মদিনের গিফট তো পাওনা থেকে গেলো আমার কাছে।”

বৃষ্টি- এটা না হয় তোলা রইলো। আমার যখন দরকার হবে নিজে থেকে চেয়ে নিবো আপনার কাছে। তখন দিবেন তো আমার উপহার?

রোদ- জ্বি ওয়াদা রইলো। অবশ্যই দিবো।

বৃষ্টি রহস্যে ভরা একটা মুচকি হাসি উপহার দেয়।
রোদ জানে না বৃষ্টির হাসির পেছনে কি কারন আছে।
(
‘চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here