#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_1 4
বৃষ্টির বাড়িতে বহুত কাজ। সে এখন তাদের সংসারে মনোযোগ দিয়েছে। সে ঐ এক্সিডেন্টের ঘটনার পর থেকে আর কখনো ভার্সিটিতে যায় নি।
তবে বাড়িতে একদম সারাবেলা ঘরে বসে থাকে না। শিকদার মির্জার সাথে আজকাল সে নানারকম পার্টিতে যাচ্ছে। লোকজন দের সাথে মেলামেশা করছে। রাজনীতির মাঠে নামার আগে সে সব কিছু ভালোভাবে বুঝে নিচ্ছে। যাতে করে ভবিষ্যৎ এ তার এই ক্ষেত্রে নামার পর সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়। আর সমস্যা সৃষ্টি হলেও যেনো তা মোকাবেলা করতে পারে।
তাছাড়া নানারকম সমাজ সেবা মূলক কাজে অংশগ্রহণ করে। কখনো বন্যার্তদের সাহায্য করতে ভলেন্টিয়ারের কাজ করে। কখনো গরীবদের অধিকার আদায়ে সহায়তা করে। এসব কাজের জন্য বৃষ্টি মাঝে-মধ্যে শিকদার মির্জার নাম ভাঙ্গিয়ে গরীবদের সাহায্যদান করে। এতে বৃষ্টির কোনো কিছুই মনে হয় না। সে তো পরের কষ্ট লাঘব করতে পেরে খুশি।
বৃষ্টির এমন কাজ সম্পর্কে শিকদার মির্জা অবগত হয়।তারপর ও সে বৃষ্টিকে কোনো কিছুই বলে না।
এদিকে রোদ নিজের কাজের মাধ্যে ডুবে থাকে।
তবে আজকাল তার কাজের সাথে আরেকটা বিষয় যোগ হয়েছে। রোদ প্রতিদিন বৃষ্টির সাথে ফোনে আলাপ-আলোচনা করে। বৃষ্টি নিজের দরকারে ফোন করে। তবে রোদের কাছে এই বিষয়টা একদম অন্যরকম।
বৃষ্টির সাথে কথা বলাটা রোদের কাছে এমন। তার প্রিয়তমা যে দরকারে তাকে কল করুক তা বিষয় না। রোজ রোজ যে প্রিয়তমার সাথে কথা বলতে পারে এটাই অনেক। রোদ বৃষ্টি নানারকম কাজের কথা আলোচনা করে। তার ফাঁকেফাঁকে রোদ-বৃষ্টি নিজেদের পারোসোনাল বেপারেও টুকটাক খোঁজ খবর নেয়। এটাই তাদের এই অচেনা সম্পর্কে জন্য অনেক বড় বেপার।
রোদ ভাবে,আমি যে ব্যস্ত মানুষ প্রেম করতে গেলে তো প্রেমিকাকে সঠিক ভাবে সময় দিতে পারবো না। আমার ব্যস্ততা দেখে বেচারি অন্য কারো প্রতি আসক্ত হবে। আমি তার মনের মতো সব সময় লুতুপুতু আলাপআলোচনা করতে পারবো না। রোজ রোজ সময করে তার সাথে দেখাও করিতে পারবো না। প্রেমিকের যা কর্তব্য তা ঠিকমতো পালন করতে পারবো না। কি দরকার অযথা প্রেমিকার প্যাড়া নেওয়ার। বৃষ্টির সাথে যে ভাবে সম্পর্কটা এগিয়ে যাচ্ছে এভাবে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাক। একদিন না হয় সম্পর্কের গভীরতা বুঝে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিবো। ততোদিনে বৃষ্টিকে আমি আমার প্রতি আসক্ত করে নিবো যাতে করে সে আমাকে রিজেক্ট করতে না পারে। রোদ কি স্মার্ট কম না কি যে বৃষ্টি তাকে রিজেক্ট করবে?
মেয়র মানুষের মন বলে কথা। জিলাপির থেকে বেশি প্যাঁচানো। বলা যায় না তাদের মুখে এক কথা মনে আরেক কথা। তাদের মুখের কথা শুনে ভরসা নেই। যদি মনের মধ্যে অন্য প্লানিং থাকে।
রোদ বেচারা কাজের ফাঁকেফাঁকে প্রতিদিন বৃষ্টিকে নিয়ে নানারকম চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে।
এদিকে বৃষ্টি নিজেে স্বার্থ পূরণের জন্য প্রতিদিন রোদের সাথে কথা বলে। রোদ একজন ডাক্তার। বৃষ্টি তার কাছে গরীবদের নিয়ে আসে যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না। রোদ সেই সমস্ত ব্যক্তিদের ফ্রী তে চিকিৎসা করে। এতে করে রোদ মানবিক কাজ করছে আর বৃষ্টি তাদের সাহায্য করে নিজের সামাজিক স্ট্যাটাস বাড়াচ্ছে। সে রোদের থেকে সাহায্য নিয়ে নিজের পরিচিতি বাড়াচ্ছে।
এদিকে রিনি ভার্সিটিতে গিয়ে আজও বিহানের সাথে ঝগড়া লাগে। বিহানের জন্য এমনিতে সে জোকার হয়ো গেছে। সবাই তার দিকে কেমন খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এদিকে সে বাড়িতে এসব কথা বলতে পারে না। আবার ভার্সিটির পোলাপানদের এসব নেকামি সহ্য হয় না।
রিনি তার বান্ধবীর সাথে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ করে রিনি ক্যান্টিন থেকে কফি আনার সময় পেছনে ঘুরতে কারো সাথে ধাক্কা খায়।
সামনে তাকিয়ে দেখে বিহান!
রিনির চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে যায়।
বিহানের গায়ে গরম কফি পড়াতে সে আত্মনাদ করতে থাকে। দ্রুত নিজের শার্টের বোতাম খুলে ফেলে।
রিনি বিহানের উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। ফর্শা বুকের মাঝে লাল টকটকে হয়ে গেছে।
রিনি নির্বাক! আজও নে বিহানের কাছে নির্ঘাত বকা খাবে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে বিহানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে বকা খাবার জন্য।
তবে তাকে অবাক করে দিয়ে বিহান স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।
রিনি আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে বিহানের চলে যাওয়াটা দেখতে থাকে।
আসলে রিনি যদি একটু সাবধানতা অবলম্ব করতো তাহলে তার হাতে থাকা কফিটা কখনো বিহানের শরীরের উপর পরতো না। তবে সত্যি রিনি খেয়ার করে নাই। যে তার পাশে বিহান এসে দাঁড়াবে। একটু সাবধান হলে এই ধাক্কাটা লাগতো না।
বিহানের শরীরে গরম কফি পড়াতে রিনির খুশি হবার কথা ছিলো।কিন্তু অন্যের আত্মনাদ দেখে কেনো জানি সে খুশি হতে পারছে না। আসলে বেচারাকে ঐ অবস্থায় তার মুখ চোখের অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছিল।যতো যাই হোক সে তো রিনির গুরুজন। আর গুরুজনের কষ্ট দেখে খুশি হতে নেই। অন্যের কষ্টে দেখে যদি আপনি মনে শান্তি অনুভব করেন তাহলে পরে দেখবের কতোটা অশান্তি ভোগ করতে হয়।
রিনি ভাবতে থাকে স্যার কে দুঃখিত বলতে হবে। যতো যাই হোক আমার কারণে বেচারাকে এতোটা কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
তবে রিনি নিজের ইগোর কারণে আর বিহানের কাছে যায় না। সোজা নিজের বাড়িতে চলে যায়।
এদিকে বেশ কিছুদিন যাবৎ রিয়ানার ব্যবহার বদলে গেছে। আগের সেই চঞ্চল রিয়ানা নেই। দেশে আসবার পর থেকে সে মামার বাড়িতে ছিলো। তবে সেই রাতের।ঘটনার পর দিন রিয়ানা নিজের বাড়িতে ফিরে যায়। আর সাদিক অথবা রোদদের বাড়িতে আসে না। যদিও আসে তবে রোদদের বাড়িতে তাও ওর বাবা-মা জোড় করে সাথে আনে বলে আসে নয়তো কখনো আসতো না। এদিকে রিয়ানা যতোটা সম্ভব সাদিকে ইগনোর করে চলতে চেষ্টা করে।
তবে সেদিন অনেক রাত হয়ে যাবার কারণে রিয়ানার পরিবার কে রোদদের বাড়িতে থাকতে হয়। সাদিকের বাবা-মা চলে আসে বড় ভাইয়ের বাড়িতে। তিন ভাই-বোন আড্ডা দিবে মনের সুখে।
তবে রিয়ানার প্রচুর বিরক্তিকর লাগছিল। সে যতোটা সম্ভাব নিজেকে সাদিকের থেকে আড়ালে রেখেছিল।
রিয়ানা আর রিনি দাঁড়িয়ে ছিলো তখন সাদিক রিনির সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসে। রিনির সাথে সাদিককথা বলতে এগিয়ে আসাতে রিনি তো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি হয়।
সাদিক কে রিনি সাথে কথা বলতে দেখে রিয়ানা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে ছাদে চলে যায়। কারণ সে সাদিকের সামনে থাকতে চাইছে না। তাকে যতোটা সম্ভব ইগনোর করা উচিৎ।
সাদিক বেশ বুঝতে পারে রিয়ানা তাকে ইগনোর করে চলে গেছে। রিয়ানা চলে যাওয়াতে সাদিকের বেশ ভালোই লাগছিল। এই বেয়াদব মেয়েটাকে আর সহ্য হয় না সাদিকের। আগে যাও বা ভালো মনে করতো তবে সেই রাতে তার রিয়ানার ব্যবহার আর কাজ দেখে এখন ওর উপর ঘৃণা লাগে। তবে তা সবার সামনে সে প্রকাশ করতে পারে না। আপন ফুফাতো বোন বলে কথা। রিয়ানার নামে কোনো বাজে কথা বললেই তো তাদের পারিবারিক সম্পর্ক গুলো নষ্ট হয়ে যাবে।
এদিকে রিয়ানা ছাঁদের এসে মেঝেতে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আসলে সত্যি কি সে খুব খারাপ মেয়ে?
(
:চলবে…..