রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -১৫

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_15

এদিকে একদিন রিনি কি যেনো হয়। ভার্সিটি থেকে ফিরে এসে সোজা তার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জড করে।

তারপর নিচে তার বাবা-মা বসে গল্প করছিল সেখানে এসে সোজা কঠোরতার সাথে বলে,”প্লিজ দ্রুত তোমরা আমার বিয়ের ব্যবস্থা করো। কালকের মধ্যে আমার বিয়ে দিবে নয়তো আমাদের কালকের মধ্যেই বিদেশে পাঠিয়ে দিবা।”

মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে বাবা-মা স্তব্ধ হয়ে যায়।

মিসেস খান বলে,”রিনি এসব কেমন ফালতু কথা। তোমার লজ্জা করছে না আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে এমন কথা বলতে?”

রিনি চেঁচিয়ে বলে,”কেনো? কিসের জন্য লজ্জা করবে আমার? আজ না হয় কাল তো আমার বিয়ে দিবেই তোমরা। তাহলে নিজের বিয়ের কথা নিজে বলতে লজ্জা কেনো পাবো আমি?”

মিস্টার খান- রিনি মা! তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? না মানে কেউ কিছু বলেছে? যদি কারো ভয়ে এমন কাজ করো তাহলে আমাকে বলতে পারো।”

রিনি- নাহ আমার কোনো সমস্যা হয় নি। আমি বিয়ে করতে চাই এবং তা ইমেডিয়েট ভাবে। আমি সিঙ্গেল কেনো থাকবো? দেখো তোমরা আমার বাবা-মা! তোমাদের আমার মতামত জানানোর প্রয়োজন ছিলো। নিজের মতামত জানিয়ে দিয়েছি। এবার তোমরা আমার মতামত কে সম্মান জানিয়ে বিয়ে দিলেই খুশি হবো। ”

রোদ হসপিটাল থেকে বাড়িতে ফিরে এসে বোনের মুখে এতো কথার ঝুড়ি দেখে অবাক। তার বোন কতোটা বেহায়া হয়ে গেছে। বাবা-মা’র সামনে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জ বেহায়াপনা করতে একটু বুক কাঁপছে না।

রোদ এসে সোজা রিনির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

রোদের আচমকা এমন কান্ডে সবাই অবাক হয়ে যায়।
রোদের যা ইচ্ছা হয়েছে করেছে।

তবে আজ রোদের বাবা-মা’র মনে হচ্ছে তারা ভুল।তাদের মেয়ের বিয়ের কথা আগেই ভাবা উচিৎ ছিলো। তারা ছেলের পেছনে বিয়ের কথা নিয়ে পরে ছিল। কিন্তু এদিকে যে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে সে কথা ভুলেই গেছিলো। তবে তাদের দ্বারা ভুল যখন হয়েছে তখন তার সংশোধন ও তারাই করবে।

রিনি রোদের থাপ্পড় খেয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। আজ বাবা-মা’র সাথে যে কড়া ভাষাতে কথা বলেছে তারপর ভাইয়ের হাতে থাপ্পড় খাওয়াটা স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি কিছুই তার প্রাপ্য ছিল।

রিনি রুমের দরজা বন্ধ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
আমি কখনো নিজের বাবা মা কে এভাবে অপমান করতে চাই নি। তবে আমি বাধ্য এমনটা করা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। আমি তোমাদের জন্য এমন কঠোর ব্যবহার করেছি। প্লিজ তোমরা আমাকে মাফ করে দিও।

রোদ তার বাবাকে বলে,”রিনির এতোটা অধঃপতন হয়েছে তা তোমরা আগে বুঝতে পারো নাই? ছিঃ ছিঃ ছিঃ বাহিরের মানুষেরা যদি এসব কিছু জানতে পারে তাহলে আমাদের মান সম্মান কোথায় যাবে ভাবতে পারো?”

মিস্টার খান বলে,” রিনির বিয়ের জন্য প্রায় মাস খানেক আগে তোর ছোট চাচ্চু বিয়ের প্রপোজাল আনে। তবে আমরা তোর আগে রিনির বিয়ে দিবো না বলে সে বিষয়ে নাক গলাতে যায় নি।”

রোদ- আমি তাহলে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করি। তাকে বলি সে যেনো পাত্র পক্ষকে নিয়ে দ্রুত আমাদের বাড়িতে আসে।

মিস্টার খান- রোদ রিনির জন্য তোর চাচ্চু সাদিকের কথা বলেছিল। সে রিনিকে সাদিকের বউ বানিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

রোদ- তাহলে তো ভাল কথা। রিনির যখন এতোই বিয়ে করার শখ আর চাচ্চুদের যখন ইচ্ছা তাহলে শুভ কাজে দেড়ি কিসের।

মিস্টার খান দ্রুত তার ছোট ভাইয়ের সাথে রিনি আর সাদিকের বিয়ের বেপারে আলোচনা করে। রোদের চাচ্চুর কোনো সমস্যা নেই।

সাদিকের বাবা সাদিকের সাথে কথা বলে। সে সাদিক কে বলে,”সামনে শুক্রবার তোমার সাথে রিনির বিয়ে দিতে চাইছি। তোমার কি এই বিয়েতে কোনো আপত্তি আছে?”

সাদিক – বাবা আমি স্টাবলিশ না হয়ে এই মূহুত্বে বিয়ে করতে চাইছি না। রিনির লেখাপড়া এখনো কমপ্লিট হয় নি। ওর লেখাপড়া কমপ্লিট হতে হতে আমিও যোগ্যতা অর্জন করবো। তখন না হয় বিয়ের বেপারে আলোচনা করবো।

সাদিকের বাবা- তোমার কি রিনিকে পছন্দ না?

সাদিক- রিনি অনেক ভালো মেয়ে। রিনিকে অপছন্দ করার মতো কিছুই নেই।

সাদিকের বাবা- তাহলে তোমার কোনো কথা শুনতে চাইছি না। বিয়ের পরেও লেখাপড়া কমপ্লিট করে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।

সাদিক- বাবা এতো তাড়াতাড়ির কি খুব দরকার?

সাদিকের বাবা- শুভ কাজে দেড়ি করতে চাইছি না। বিয়ের কথা যখন উঠেছে তখন শুক্রবার তোমার আর রিনির বিয়ে। সেহেতু যাও সময় বেশি হাতে নেই। তোমার যাদের ইচ্ছা দাওয়াত দিতে শুরু করো।

সাদিক জানে তার বাবার কথার উপর দিয়ে সে যেতে পারবে না। বাবা যখন একবার ঠিক করেছে সে রিনির সাথে শুক্রবার বিয়ে দিবে তখন বিয়ে দিয়ে দম ছাড়বে। তার বাবা যে নাছোড়বান্দা মানুষ। তাই সাদিকের আর আপত্তি করার কোনো চান্স নেই।

সাদিকের মা নিরব দর্শকের মতো বাবা ছেলের আলোচনা শুনছিল।

একটুপর সে গলা খাড়কিয়ে বলে,”এই যে, ছেলের বাবা আপনার ছেলে এতিম নয় তার মা জীবিত আছে। আমার ছেলের বিয়ে আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করছেন না আপনারা?”

সাদিকের বাবা- আহ সাদিকের মা! প্লিজ তুমি এখন ছেলে মানুষি শুরু করো না। সবটাই যখন জানতে পারলে তখন দ্রুত তোমার আত্মীয়দের দাওয়া দিতে শুরু করো। ছেলের বিয়ে বলে কথা। বিয়ে বাড়িতে মানুষের আনাগোনা না থাকলে তো বিয়ে বাড়ি বলে মনেই হবে না।

সাদিকের মা নাক শিটকে বলে,”হ্যাঁ দাওয়াত তো দিতেই হবে। তাছাড়া এখন তো আর গতি নেই। তা তোমার আত্মীয়রা কেমন করে দাওয়াত খাবে?”

সাদিকের বাবা- কেনো? যার যে বাড়িতে ইচ্ছা আসবে। দুই বাড়ি তো আমাদের।

সাদিকের মা- আত্মীয়ের মধ্যে আত্মীয়তা না করলে কি হতো?

সাদিকের বাবা- তুমি খুব ভালো করে জানো রিনি কে সেই ছোট থেকে সাদিকের বউ বানাবো এটা আমার স্বপ্ন।

সাদিকের মা- ভাইয়ের মেয়েকে পছন্দ। তাহলে রিয়ানা কে কেন পছন্দ করতে পারো নাই?

সাদিকের বাবা- তুমি জানো রিনির বাবা কেমন পরিবারের সদস্য। তাছাড়া রিয়ানা বিদেশে থেকে বড় হয়েছে। কেমন চরিএ তার ঠিক নেই। বোনের মেয়ে বলে যে বাড়ির বউ করতে হবে এমনটা নয়। তাছাড়া রোদের সাথে রিয়ানার বিয়ের কথা চলছে।

সাদিকের মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্থান ত্যাগ করে।

এদিকে সাদিকের বাবা রোদের বাবাকে বলে সামনে শুক্রবার সাদিক- রিনির চার হাত এক করে দিবে।
সে কথা শুনে মিস্টার খান টেনশন মুক্ত হয়।

()



চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here