মানুষ ভর্তি বিয়ের অনুষ্টানে আহান ভাই আমার চুলের মুঠি ধরে মুখের সামনে মুখ নিয়ে এসে বলে,
–” আই ডোন্ট লাভ ইউ,আই লাভ ইউর সিস।সো, তোর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাসর হবে তোর বোনের সাথেই।মাইন্ড ইট ”
কথাগুলো বলে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান।আমি তার কথা শুনে হাসবো নামি কাদবো ডিসাইড করতে পারছি না।অবশেষে পাশ থেকে নড়ে চড়ে বসে আমার বেষ্টু মিথিলা আমাকে বলে দেয় আমার এখন কি করা উচিত?
সে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
–” দোস্ত কান্না কর,কান্না কর তারাতারি? ”
এদিকে যেসব লোককে ইনভাইট করা হয়েছে অধিকাংশ লোকই চলে যাচ্ছে।তবে যাওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে,
–” ভালোই হলো,একজনের কাছে দুই মেয়ে বিয়ে দিল ”
কথাগুলো বলে তারা নিজেরাই হাসতে থাকে,যেন কৌতুকটা পছন্দ হয়েছে।এদিকে কিছু ফেসবুকার তো লাইভে পর্যন্ত চলে গেছে।অনেকে পিক তুলে সুন্দর সুন্দর ক্যাপশন দিয়ে পোষ্ট করছে।
🍁
🍁
( আমি উষা,বাবা মায়ের দুইমাত্র সন্তানের সবার ছোট।আমার বড় বোন এশার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আহান ভাইয়ের।কিন্তু সে এই অত্যাচারী মানুষটার সাথে সংসার করবে না ভেবে বিয়ের দিন সকালে পগার পাড় হয়ে যায়।ফলস্বরূপ কনে বদল করে আমাকে বিয়ে দেয়া হয় আহান ভাইয়ের সাথে।আবার তার ফলস্বরূপ থাপ্পড় খেয়ে একটা দাঁত হারাতে হয় নিজেকে।উহু,কি ব্যাথা? )
🍁
🍁
একপর্যায়ে আমাকে বসিয়ে রাখা হয় বাসরঘরে।দীর্ঘ ৩ঘন্টা বসে বসে মশা মারার পর রুমের মধ্যে আগমন ঘটে রাজকুমারের।তিনি রুমে প্রবেশ করে আমার দিকে বেশ রাগী দৃষ্টিতে তাকান।আমি তার তাকানো দেখে খানিকটা ভয় পাওয়ার ভান করি।তিনি এবার ইয়া বড় করে দুই পা সড়িয়ে সোফায় বসে পড়েন।তারপর আমার দিকে তির্যক দৃষ্টি হেনে আহত করার চেষ্টা করেন।আহত করতে না পেরে বেশ রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–” উষু তুই নাকি তোর বোনকে পালাতে সাহায্য করেছিস?কথা কি সত্য? ”
দোষের তীর আমার দিকে আসছে দেখে আমি বেশ তারাহুরো করে বলি,
–” একদমি না।আমি যদি জানতাম ওর মনে এরকম ভাবনা চলছে তাহলে ওকে নিজের ওরনা দিয়ে বেধে রাখতাম ”
আহান ভাই এবার আমার দিকে পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি স্থানপ করেন।তিনি দৃঢ়ভাবে বোঝার চেষ্টা করেন মেয়েটা সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা?অথঃপর জিজ্ঞাসা করেই বসেন,
–” সত্যি বলছিস তো? ”
আমি উত্তর না দিয়ে শুধু মাথা দোলাই।তিনি এবার উঠে দাঁড়িয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ান।তারপর খানিকটা ঝুঁকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–” ইচ্ছা ছিল তোকে সারারাত ব্যালকনিতে রাখবো,কিন্তু তোর মধ্যে একপ্রকার সৎ চিন্তাভাবনা ছিল ওই মুহুর্তে।তাই তোর শাস্তিটা কমিয়ে দিলাম।এখন তুই মেঝেতে ঘুমাবি ওকে ”
ওই মুহুর্তে আমার মাথার বা সাইটের তারটা নড়ে উঠলো।ইচ্ছা করতেছিলো সামনের মানুষটার হাতটা কামড়ে ছিড়ে দেই।যেই ইচ্ছা সেই কাজ,চোখ বন্ধ করে ধরলাম তার হাতটা কামড়ে।একেতো দাঁত ভেঙ্গে দিছে তার ব্যাথা তার ওপর আবার আমাকে মেঝেতে শুতে বলে,সাহস কত।
ঠিক কত সময় কামড়ে ধরেছিলাম জানিনা।কিছুক্ষন পরই অনুভব করি আমি কাপড়ের উপরে কামড়ে ধরেছি।মনে মনে ভেবে ফেললাম হয়তো এটা কোর্টের হাতা।তাই চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে সেই কামড় দেয়া অবস্থাতেই অটল রইলাম।তবে মানুষকে কামড়ানোর পর যে একপ্রকার আর্তনাদ করে আহত ব্যাক্তি সেই আর্তনাদ শুনতে পেলাম না।আমার ১৭বছরের কামড়ে ধরার অভিজ্ঞতা বলছে বেশ বড়সড় একটা ভুল করেছি আমি।
ভুলটা কি দেখার জন্য মাথা তুলে তাকিয়ে যা দেখি তা দেখে ইচ্ছা করে নিজে নিজে গলা টিপে নিজেকে মেরে ফেলি।আমি আহান ভাইয়ের হাতে কামড়ে না দিয়ে কামড়ে দিয়েছি তার পচ্যাৎদেশে।
আহান ভাইয়ের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝড়ছে।আমি সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ না করে উসাইন বোল্টের মত বেশ হোমড়া-চোমড়া ভাব নিয়ে একটা দৌড় দেই ওয়াসরুমের উদ্দেশ্যে।নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে বমি করার চেষ্টা করি।কারন এমন এক জায়গায় কামড় দিয়েছি যা ভাবতেও পারছি না এখন।এজন্য বোধহয় কাপড় ঠেকেছিল আমার মুখে..
এদিকে কাহিল হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হই আমি।বের হতেই আহান ভাই বেশ জোড়েই আমার পিঠে বসিয়ে দেন তার ৪মণ ওজনের হাতের একটা বারি।আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি আমি বাসরঘরে নাকি রেসলিং ময়দানে।লক্ষ করি আহান ভাইয়ের চোখ থেকে রাগ এখনো যায় নি।
আমি সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ না করে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ি।ঠিক এই সময়ে দরজায় কেউ অনবরত বারি মারতে থাকে।আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকাই তিনিও তাকান আমার দিকে।অথঃপর আমি বিছানা থেকে উঠে খানিকটা কৌতুহল নিয়ে এগোতে থাকি দরজার দিকে।দরজাটা খুলে দেয়ার সাথে সাথে ঘরে প্রবেশ করে আমার বোন এশা।
আমি তারাহুরো করে দরজা দিয়ে দেই।আপুকে দেখে আমি অজ্ঞান হব হব পর্যায়ে চলে যাই।এই মুহুর্তে এখানে তাকে আশা করিনি আমি।আপুকে দেখে আহান ভাই উঠে দাড়ান।তার চোখের মধ্যে এখন আগের মত রাগ নেই সেই জায়গায় বাসা বেধেছে অবাক।মানে তিনি অবাকের ৪র্থ ধাপও অতিক্রম করে গেছেন।
আপু তারাতারি বিছানায় বসে পড়ে।আমি গিয়ে তার পাশে বসে পড়ি।ঠিক তার সামনেই চেয়ার টেনে বসে পড়েন আহান ভাই।তিনি আপুর দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলেন,
–” পালিয়েছিলে কেন? ”
উত্তরের আশায় দীর্ঘক্ষন তিনি তাকিয়ে থাকেন আপুর দিকে।আমি আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।আমাদের তাকানো দেখে আপু বলে ওঠে,
–” কিডন্যাপ করেছিল আমাকে।আহান তোমার বন্ধুরা ”
আপুর কথা শুনে আহান ভাই আরো অবাক হয়।তিনি খানিকটা জোড়েই বলে ফেলেন,
–” কেন? ”
–” মজা করার জন্য কিংবা বলতে পারো তোমার কাছ থেকে কিছু টাকা নেয়ার জন্য।কিন্তু ওরা যখন দেখলো পরিস্থিতি হুট করেই পাল্টে গেল তখন আমাকে ছেড়ে দিল এবং অনেকবার সরিও বলছে।তবে ততক্ষনে তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে। ”
আহান ভাই দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নেয়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।আমি এশাকে আর বিয়ে করতে চাই না।আমি উষার সাথেই সংসার করবো ”
আহান ভাইয়ের কথা আমার আর আপুর শরীরে কম্পন তৈরি করে।আমি আপুর দিকে তাকাই আর আপু আমার দিকে তাকায়।আহান ভাই একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আপু কি বলবে বুঝতে পারছে না?
শেষ পর্যন্ত সে উঠে দাঁড়ায়।তারপর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে।তারপর একসাথে তাকায় আমার আর আহান ভাইয়ের দিকে।আমার দিকে তাকিয়ে আপু বলে,
–” আহান ঠিকই বলেছে।আমার জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করিস না।তোরা দুজন একসাথে থাক।আমি অমত করতাম না,এখনো করবো না।কিন্তু আমার পেটের মধ্যে আহানের বাচ্চা আছে যে..”
এই কথাটা বলে কাঁদতে শুরু করে আপু।আহান ভাই অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকায়।তার সম্পুর্ন মুখ রাগে বিকৃত হয়ে গেছে।তিনি আপুর দিকে তাকিয়ে বলেন,
–” কি বললে আবার বলোতো? ”
আপু আহান ভাইয়ের রাগ দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে পুনরায় বলে,
–” তোমার বাচ্চা আমার পেটের মধ্যে। ”
আহান ভাই রেগে বলে,
–“কেমনে”
আপু এবার তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
–” কেন ভুলে গেছ সেই বিয়ের কথা ”
চলবে..ইনশাআল্লাহ
রৌদ্রবিলাসী
প্রথম পর্ব
লেখক-#নিয়াজ_মুকিত